Ajker Patrika

স্বাস্থ্যের জাহিদ মালেক বিমা খাতেও খলনায়ক

  • বিমা কিনে প্রতারিত মানিকগঞ্জ, সাভার ও ধামরাইয়ের অন্তত ৪০ হাজার গ্রাহক
  • পলিসির মেয়াদ পূর্তির পরও বিমার টাকা ফেরত পাচ্ছেন না অনেকেই
অরূপ রায়, সাভার 
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ১৪
জাহিদ মালেক
জাহিদ মালেক

মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্থানীয় এমপির পারিবারিক বিমা কোম্পানি হওয়ায় সানলাইফ ইনস্যুরেন্সে গণহারে বিনিয়োগ করেছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যের মতো বিমা খাতেও খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি ও তাঁর পরিবার। হাজার হাজার মানুষের বিমা দাবি পরিশোধ না করে বিক্রি করে দেন বিমা কোম্পানিটির শেয়ার।

অধিক মুনাফার জন্য ২০০৯ সালে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে ১২ বছরমেয়াদি পলিসি কিনেছিলেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের সালেহা বেগম। কিন্তু ১২ বছরের মেয়াদ পেরিয়ে ১৬ বছর হতে চলল, এখনো আমানতের টাকা ফেরত পাননি তিনি।

সালেহা বেগম ২০০৯ সালে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির দড়গ্রাম কার্যালয় থেকে ৫০ হাজার টাকার পলিসি কিনেছিলেন। মেয়াদ পূর্তির এক মাসের মধ্যে তাঁকে লাভসহ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল।

সালেহা বেগম বলেন, ‘১৯৮৬ সালে আমার স্বামী মারা যায়। এরপর থিকা আমার কষ্টের জীবন শুরু হয়। মাটি কাটছি, সুযোগ পাইলে পিঠা বিক্রি করছি। এইভাবে সংসারের খরচ মিটাইয়া কিছু কিছু সঞ্চয় করছি। এলাকার এক নেতার কথায় হেই ট্যাকা সানলাইফে জমা করছি। আমার এত

কষ্টের ট্যাকা আমি পাইতাছি না। চাইর বছর ধইরা এই অফিস হেই অফিস ঘুইরা জুতার তলি শেষ কইরা ফালাইছি। তাও ট্যাকা তুলবার পারি নাই।’

শুধু সালেহা বেগমই নন, মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলাসহ পাশের ঢাকা জেলার সাভার ও ধামরাই উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার গ্রাহক সালেহার মতো সানলাইফের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে মানিকগঞ্জেই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক। এসব গ্রাহকের কয়েক বছর ধরে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়সহ প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করে তাঁদের আমানতের টাকা তুলতে পারছেন না।

সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিটি ছিল মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পারিবারিক বিমা কোম্পানি। কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তাঁর বোন রুবিনা হামিদ। ২০২৩ সালে গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স ও তাঁর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছে সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা তাঁদের সব শেয়ার বিক্রি করে দেন। কিন্তু এর আগে থেকেই সানলাইফ কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে নানা টালবাহানা শুরু করে।

এদিকে মালিকানা হাতবদল হওয়ার পর গ্রিন ডেলটা কর্তৃপক্ষ সানলাইফের নামেই ওই বিমা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিচ্ছে না।

সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ডিপোজিট পেনশন স্কিমে মাসে ৫০০ টাকা করে জমা রাখতেন সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের অমূল্য মণি দাস। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনিও কোনো টাকা পাননি।

অমূল্য মণি দাস বলেন, ‘সানলাইফের দড়গ্রাম অফিসের ম্যানেজার নবীনুর বক্স গোলামের কথায় ২০০৮ সাল থেকে আমি ডিপোজিট পেনশন স্কিমে টাকা জমা করি। ২০১৮ সালে মেয়াদ পূর্তির পর থেকে দড়গ্রাম অফিসসহ ঢাকার হেড অফিসে অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। কিন্তু কোনো টাকাই আমি পাই নাই।’

জানতে চাইলে সানলাইফের দড়গ্রাম কার্যালয়ের তৎকালীন ব্যবস্থাপক ও জাতীয় পার্টির সাটুরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি নবীনুর বক্স গোলাম বলেন, ‘মেয়াদ পূর্তির পর কিছু গ্রাহক তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পেলেও অধিকাংশ গ্রাহকই পাননি।’

নবীনুর বক্স গোলাম আরও বলেন,‘শুধু গ্রাহকদের আমানতের টাকাই নয়, আমাদের কমিশনের টাকাসহ কর্মচারীদের বেতন আর দড়গ্রাম কার্যালয়ের ভাড়াও দেয়নি সানলাইফ কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বছর চারেক আগে দড়গ্রাম কার্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

সানলাইফের পলিসি কিনে প্রতারিত হয়েছেন সাটুরিয়া উপজেলার পানাইজুরি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ আলী। ২০১৯ সালে মেয়াদ পূর্তি হওয়ার পর গত ৫ বছরেও তাঁর আমানতের টাকা ফেরত পাননি।

ওয়াহেদ আলী বলেন, ‘সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাটুরিয়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ বেগমের অনুরোধে ২০০৭ সালে আমি, আমার পরিবারের আরও তিন সদস্যসহ এলাকার অনেকে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পলিসি কিনেছিলাম। কিন্তু আমরা কেউ আমানতের টাকা ফেরত পাইনি।’

যোগাযোগ করা হলে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমি সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের একজন কর্মী হিসেবে পানাইজুরি ও পাশের কমলপুর গ্রামের প্রায় অর্ধশত লোককে পলিসি কিনে দিয়েছিলাম। মেয়াদ পূর্তি হওয়ার পর তাঁদের ২৭ জন এখনো আমানতের টাকা ফেরত পাননি।’

মমতাজ বেগম আরও বলেন, ‘আমি একাধিকবার কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোনো টাকা ফেরত দেন না।’

সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের সাভার শাখার ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমার মাধ্যমে ১ হাজারের বেশি লোক সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের কোম্পানির পলিসি কিনেছিলেন। মেয়াদ পূর্তির পর তাঁদের অধিকাংশই আমানতের টাকা ফেরত পাননি। প্রধান কার্যালয় থেকে টাকা না দেওয়ায় আমি গ্রাহকদের চাপের মধ্যে পড়ি। এ অবস্থায় বছর পাঁচেক আগে সাভারের কার্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে অনেক গ্রাহকের আমানতের টাকা আমাকে পরিশোধ করতে হয়েছে।’

সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা নবকুমার মিত্র বলেন, ‘একশ্রেণির কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীদের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বছর পাঁচেক আগে মানিকগঞ্জসহ পাশের ধামরাই ও সাভার উপজেলার সব কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। একই কারণে মেয়াদ পূর্তি হওয়ার পরও হাজার হাজার গ্রাহক তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এর মধ্যে মানিকগঞ্জেরই রয়েছে অন্তত ২০ হাজার গ্রাহক।’

নবকুমার মিত্র আরও বলেন, ‘যেসব গ্রাহকের টাকা যথাযথভাবে জমা হয়েছে এবং প্রধান কার্যালয়ে তাঁর প্রমাণ আছে তাঁরা পর্যায়ক্রমে আমানতের টাকা ফেরত পেতে পারেন।’

যোগাযোগ করা হলে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সদ্য সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম রেজা বলেন, ‘মেয়াদ পূর্তির পর অনেক গ্রাহকই তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তবে যেসব গ্রাহক আমানতের টাকা ফেরত পাননি, তাঁরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। এভাবে কেউ কেউ তাঁদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সানলাইফের বিরুদ্ধে অনেক গ্রাহকের বিমা দাবি পরিশোধ না করার অভিযোগ আইডিআরএতে এসেছে। তবে সাভার-মানিকগঞ্জ এলাকার কোনো গ্রাহকের অভিযোগ আসেনি। তারপরও আজ বিষয়টি শুনলাম, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা ও নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় বিপিজেএর নিন্দা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা ও নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় বিপিজেএর নিন্দা

দেশের পাঠকপ্রিয় দুই সংবাদমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং প্রবীণ সাংবাদিক ও দ্য নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে নাজেহাল ও হেনস্তা করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজেএ)।

আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি হারুন জামিল ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী লিথো এই প্রতিবাদ জানান।

বিপিজেএ নেতারা বলেন, সংবাদপত্রের ওপর যেকোনো ধরনের হামলা স্বাধীন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য।

বিবৃতিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, সমাজে ভিন্নমত থাকবেই এবং মতের ভিন্নতা একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে সহায়তা করে। সাংবাদিকতা কোনো অপরাধমূলক কাজ নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার দায় দুষ্কৃতকারীদের। নেতারা বলেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢালাওভাবে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করা চরম অন্যায়।

বিবৃতিতে নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশে যখন একটি সুস্থ ধারার রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার একটি অপচেষ্টা হতে পারে।

বিপিজেএ অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৬
প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব

দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ন্যক্কারজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে সংগঠন দুটি।

আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জ্ঞাপন ও শাস্তি দাবি করেন তাঁরা।

এতে বলা হয়, ‘এই হামলা শুধু গণমাধ্যমের ওপর নয়, এটা আমাদের সমাজের ওপর, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ। সর্বোপরি বাংলাদেশের ওপর আক্রমণ। গভীর রাতের ওই হামলায় প্রতিষ্ঠান দুটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সম্পদহানির পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায় এবং দায়িত্বহীনতারও স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব মনে করে, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শুরু থেকেই মব ভায়োলেন্স (সংগঠিত) প্রতিরোধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার যে ধারাবাহিকতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, সর্বশেষ ঘটনা তার আরেকটি ভয়াবহ উদাহরণ। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা প্রমাণ করে যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’

একই সঙ্গে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব ছায়ানটে হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে ফোন করে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন এবং পাশে আছেন বলে জানান। তবে এই হামলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে। বিবৃতি বা আশ্বাস নয়, অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারসহ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরকে হেনস্তায় ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব।

পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যুতে উদ্বেগ, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানালেন জাতিসংঘের ফলকার তুর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১৭
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হাদির মৃত্যুর ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করার জন্য আমি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দায়ীদের জবাবদিহি এবং আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি।’

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ফলকার তুর্ক সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধ কেবল বিভাজন বাড়াবে এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।’

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময়টিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল উল্লেখ করে ফলকার তুর্ক বলেন, ‘এই সময়ে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি, যেখানে জনজীবনে সবার নিরাপদ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনভাবে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকবে।’

ফলকার তুর্ক আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ অস্থিরতা যাতে আর না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকারকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যার প্রতিবাদে গণমাধ্যমের ওপর হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর সংঘটিত ও অভূতপূর্ব ধ্বংসাত্মক হামলার ঘটনাকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি, নাগরিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টার্গেটেড শুটিংয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতা এবং পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতারই প্রতিফলন। এর ফলে গণরোষ থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি আরও বেড়েছে, যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বিজয়ের দাবিদার কিছু শক্তির আক্রোশপূর্ণ ও প্রতিশোধপ্রবণ আচরণ রাষ্ট্র ও সমাজে নতুন ধরনের দমনমূলক প্রবণতা তৈরি করছে। এর সরাসরি শিকার হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কার্যকর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে; বরং অতীতে অনুরূপ সংকটে নতজানু অবস্থান গ্রহণ করে রাষ্ট্র নিজেই অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে।

টিআইবি জানায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে আক্রমণ এবং কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন নয়। বরং এসবই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও স্বাধীন মতপ্রকাশকে পরিকল্পিতভাবে দমনের জ্বলন্ত উদাহরণ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে যেভাবে মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত হয়েছিল, আজ সেই একই দমনমূলক বাস্তবতা নতুন রূপে ফিরে আসছে। যারা বিগত ১৬ বছর অধিকার হরণের শিকার হয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনের বিজয়ী হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন, তাঁদেরই একাংশের হাতে আজ মুক্ত গণমাধ্যম ও ভিন্নমতের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান সতর্ক করে বলেন, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও মূল্যবোধ চরম হুমকির মুখে পড়ছে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও বহু সংস্কৃতির সহাবস্থানের যে স্বপ্ন একাত্তর ও জুলাই ধারণ করেছিল, তা আজ গভীর সংকটে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের বিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল পতিত শক্তির ইন্ধনে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি এবং মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর, সমন্বিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং একাত্তর ও জুলাইয়ের মৌলিক আদর্শ আরও গভীর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত