Ajker Patrika

স্বাস্থ্যের জাহিদ মালেক বিমা খাতেও খলনায়ক

  • বিমা কিনে প্রতারিত মানিকগঞ্জ, সাভার ও ধামরাইয়ের অন্তত ৪০ হাজার গ্রাহক
  • পলিসির মেয়াদ পূর্তির পরও বিমার টাকা ফেরত পাচ্ছেন না অনেকেই
অরূপ রায়, সাভার 
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ১৪
জাহিদ মালেক
জাহিদ মালেক

মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্থানীয় এমপির পারিবারিক বিমা কোম্পানি হওয়ায় সানলাইফ ইনস্যুরেন্সে গণহারে বিনিয়োগ করেছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যের মতো বিমা খাতেও খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি ও তাঁর পরিবার। হাজার হাজার মানুষের বিমা দাবি পরিশোধ না করে বিক্রি করে দেন বিমা কোম্পানিটির শেয়ার।

অধিক মুনাফার জন্য ২০০৯ সালে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে ১২ বছরমেয়াদি পলিসি কিনেছিলেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের সালেহা বেগম। কিন্তু ১২ বছরের মেয়াদ পেরিয়ে ১৬ বছর হতে চলল, এখনো আমানতের টাকা ফেরত পাননি তিনি।

সালেহা বেগম ২০০৯ সালে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির দড়গ্রাম কার্যালয় থেকে ৫০ হাজার টাকার পলিসি কিনেছিলেন। মেয়াদ পূর্তির এক মাসের মধ্যে তাঁকে লাভসহ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল।

সালেহা বেগম বলেন, ‘১৯৮৬ সালে আমার স্বামী মারা যায়। এরপর থিকা আমার কষ্টের জীবন শুরু হয়। মাটি কাটছি, সুযোগ পাইলে পিঠা বিক্রি করছি। এইভাবে সংসারের খরচ মিটাইয়া কিছু কিছু সঞ্চয় করছি। এলাকার এক নেতার কথায় হেই ট্যাকা সানলাইফে জমা করছি। আমার এত

কষ্টের ট্যাকা আমি পাইতাছি না। চাইর বছর ধইরা এই অফিস হেই অফিস ঘুইরা জুতার তলি শেষ কইরা ফালাইছি। তাও ট্যাকা তুলবার পারি নাই।’

শুধু সালেহা বেগমই নন, মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলাসহ পাশের ঢাকা জেলার সাভার ও ধামরাই উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার গ্রাহক সালেহার মতো সানলাইফের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে মানিকগঞ্জেই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক। এসব গ্রাহকের কয়েক বছর ধরে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়সহ প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করে তাঁদের আমানতের টাকা তুলতে পারছেন না।

সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিটি ছিল মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পারিবারিক বিমা কোম্পানি। কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তাঁর বোন রুবিনা হামিদ। ২০২৩ সালে গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স ও তাঁর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছে সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা তাঁদের সব শেয়ার বিক্রি করে দেন। কিন্তু এর আগে থেকেই সানলাইফ কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে নানা টালবাহানা শুরু করে।

এদিকে মালিকানা হাতবদল হওয়ার পর গ্রিন ডেলটা কর্তৃপক্ষ সানলাইফের নামেই ওই বিমা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিচ্ছে না।

সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ডিপোজিট পেনশন স্কিমে মাসে ৫০০ টাকা করে জমা রাখতেন সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের অমূল্য মণি দাস। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনিও কোনো টাকা পাননি।

অমূল্য মণি দাস বলেন, ‘সানলাইফের দড়গ্রাম অফিসের ম্যানেজার নবীনুর বক্স গোলামের কথায় ২০০৮ সাল থেকে আমি ডিপোজিট পেনশন স্কিমে টাকা জমা করি। ২০১৮ সালে মেয়াদ পূর্তির পর থেকে দড়গ্রাম অফিসসহ ঢাকার হেড অফিসে অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। কিন্তু কোনো টাকাই আমি পাই নাই।’

জানতে চাইলে সানলাইফের দড়গ্রাম কার্যালয়ের তৎকালীন ব্যবস্থাপক ও জাতীয় পার্টির সাটুরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি নবীনুর বক্স গোলাম বলেন, ‘মেয়াদ পূর্তির পর কিছু গ্রাহক তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পেলেও অধিকাংশ গ্রাহকই পাননি।’

নবীনুর বক্স গোলাম আরও বলেন,‘শুধু গ্রাহকদের আমানতের টাকাই নয়, আমাদের কমিশনের টাকাসহ কর্মচারীদের বেতন আর দড়গ্রাম কার্যালয়ের ভাড়াও দেয়নি সানলাইফ কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বছর চারেক আগে দড়গ্রাম কার্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

সানলাইফের পলিসি কিনে প্রতারিত হয়েছেন সাটুরিয়া উপজেলার পানাইজুরি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ আলী। ২০১৯ সালে মেয়াদ পূর্তি হওয়ার পর গত ৫ বছরেও তাঁর আমানতের টাকা ফেরত পাননি।

ওয়াহেদ আলী বলেন, ‘সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাটুরিয়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ বেগমের অনুরোধে ২০০৭ সালে আমি, আমার পরিবারের আরও তিন সদস্যসহ এলাকার অনেকে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পলিসি কিনেছিলাম। কিন্তু আমরা কেউ আমানতের টাকা ফেরত পাইনি।’

যোগাযোগ করা হলে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমি সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের একজন কর্মী হিসেবে পানাইজুরি ও পাশের কমলপুর গ্রামের প্রায় অর্ধশত লোককে পলিসি কিনে দিয়েছিলাম। মেয়াদ পূর্তি হওয়ার পর তাঁদের ২৭ জন এখনো আমানতের টাকা ফেরত পাননি।’

মমতাজ বেগম আরও বলেন, ‘আমি একাধিকবার কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোনো টাকা ফেরত দেন না।’

সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের সাভার শাখার ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমার মাধ্যমে ১ হাজারের বেশি লোক সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের কোম্পানির পলিসি কিনেছিলেন। মেয়াদ পূর্তির পর তাঁদের অধিকাংশই আমানতের টাকা ফেরত পাননি। প্রধান কার্যালয় থেকে টাকা না দেওয়ায় আমি গ্রাহকদের চাপের মধ্যে পড়ি। এ অবস্থায় বছর পাঁচেক আগে সাভারের কার্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে অনেক গ্রাহকের আমানতের টাকা আমাকে পরিশোধ করতে হয়েছে।’

সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা নবকুমার মিত্র বলেন, ‘একশ্রেণির কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীদের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বছর পাঁচেক আগে মানিকগঞ্জসহ পাশের ধামরাই ও সাভার উপজেলার সব কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। একই কারণে মেয়াদ পূর্তি হওয়ার পরও হাজার হাজার গ্রাহক তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এর মধ্যে মানিকগঞ্জেরই রয়েছে অন্তত ২০ হাজার গ্রাহক।’

নবকুমার মিত্র আরও বলেন, ‘যেসব গ্রাহকের টাকা যথাযথভাবে জমা হয়েছে এবং প্রধান কার্যালয়ে তাঁর প্রমাণ আছে তাঁরা পর্যায়ক্রমে আমানতের টাকা ফেরত পেতে পারেন।’

যোগাযোগ করা হলে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সদ্য সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম রেজা বলেন, ‘মেয়াদ পূর্তির পর অনেক গ্রাহকই তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তবে যেসব গ্রাহক আমানতের টাকা ফেরত পাননি, তাঁরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। এভাবে কেউ কেউ তাঁদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সানলাইফের বিরুদ্ধে অনেক গ্রাহকের বিমা দাবি পরিশোধ না করার অভিযোগ আইডিআরএতে এসেছে। তবে সাভার-মানিকগঞ্জ এলাকার কোনো গ্রাহকের অভিযোগ আসেনি। তারপরও আজ বিষয়টি শুনলাম, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরতের ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৯
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ভারত এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাঁকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে এক দিনে, সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কী আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এ রকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারেক সাহেব কখন আসবেন, এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্র্যাফট নিয়ে। সে ক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে।’

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি, সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এ ছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সব ক্ষেত্রে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবার রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এ ছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে শুরু হওয়া সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর দু’টি মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ নেতারা এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে’ রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। রোববার থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে।

এদিকে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের ‘হয়রানিমূলক’ বদলি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার তিনজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে নিজ জেলার বাইরে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এসব বদলিকে তাঁরা ‘হয়রানিমূলক বদলি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, ‘রেওয়াজ না থাকলেও নিজ জেলার বাইরে হয়রানি করতে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে।’

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এসব বদলির আদেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ জানিয়েছেন, তাঁকে নোয়াখালী সদর উপজেলার কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি জানিয়েছেন, তিনিসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অন্তত ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রথমে শোকজ ও পরে বদলি করা হলো। এটি হয়রানিমূলক বদলি, আমাদের শাস্তি দিয়েছে কারণ আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষক যাঁরা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না তবুও তাঁরা বদলি হয়েছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ অনুসারীরা সরকারের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন। সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কিছু স্কুলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তা বর্জন করে কর্মবিরতি চালিয়ে যান।

কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। পরে ১১ তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

গত ৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে সেদিন বিকেলে তাঁরা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন।

পরে ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা, যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকারে আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।

সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’

বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।

পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।

কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।

আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত