Ajker Patrika

অন্তর্বর্তী সরকার

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অস্থিরতা

  • সরকারপ্রধানের সঙ্গে তাল-লয় ঠিক রেখে চলতে পারছে না মন্ত্রণালয়।
  • সুফিউর রহমানকে মন্ত্রণালয়ে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ায় অসন্তুষ্ট পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
  • পররাষ্ট্রসচিব পদে যেকোনো সময় পরিবর্তনের আভাস।
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা 
আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, ১২: ১৫
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অস্থিরতা

সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর দপ্তর মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন এবং সরকারপ্রধানের কাজের যে বৈচিত্র্য ও গতি, তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল-লয় ঠিক রেখে চলতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহরণ, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর সামনে রেখে টোকিওতে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরামর্শমূলক সভা (এফওসি) নিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্তে বদল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় কদিন পরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বদলানোর আওয়াজ ওঠে। মুহাম্মদ ইউনূস অবশ্য বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক দেখভাল করতে উচ্চপর্যায়ে নতুন নতুন মুখ যুক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছেন। এর মধ্যেও কিছু ঝামেলা তৈরি হওয়ায় অবশেষে সরকার পররাষ্ট্রসচিব বদলানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

পররাষ্ট্রসচিব বদলানো হচ্ছে কি না—প্রশ্নটি গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকা থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমকে করা হলে তিনি নিরুত্তর থাকেন। সেদিনই একই প্রশ্ন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অন্য এক কর্মকর্তাকে করা হলে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রসচিব বদলানোর কথা অনেক দিন থেকেই হচ্ছে।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে গত বছরের ৫ আগস্ট। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক মো. তৌহিদ হোসেনকে। তৌহিদ হোসেন ২০০৬ সালের শেষ দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ছিলেন। পরে তাঁকে পররাষ্ট্রসচিব করা হয়। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা কূটনৈতিক পরিসরে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ফরেন সেক্রেটারি’ হিসেবে পরিচিত।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তৌহিদ হোসেনের পছন্দেই পররাষ্ট্রসচিব করে চীন থেকে উড়িয়ে আনা হয় মো. জসীম উদ্দিনকে। তিনি তখন দেশটিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু নোবেল বিজয়ী ইউনূসের কাজের ধরন ও গতির সঙ্গে তাল মেলানোর ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই পিছিয়ে পড়ে। দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের নানা ঝামেলা সামাল দেওয়ার পাশাপাশি ইউনূসের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো হয়ে উঠছে না।

এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস নিজের আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত হিসেবে গত সেপ্টেম্বরের নিয়োগ দেন লুৎফে সিদ্দিকীকে। উপদেষ্টা পদমর্যাদায় নিয়োগ পাওয়া লুৎফে সিদ্দিকী বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা পেশাদারদের আন্তর্জাতিক সংস্থা সিএফএ ইনস্টিটিউটের অন্যতম সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে ড. খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৭৭ ব্যাচের কর্মকর্তা খলিলুর রহমান এর আগে কয়েক বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছিলেন। পরে তিনি লিয়েনে চলে যান জাতিসংঘের চাকরিতে। লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমান উভয়েই বসেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। এর বাইরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ ও বদলি তদারকির দায়িত্ব অন্য দুই উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও মাহফুজ আলমকে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

কূটনৈতিক কয়েকটি সূত্র জানায়, এত সব নিয়োগ সত্ত্বেও বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক ঠিকঠাক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা অসংগতি দেখতে পান প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর কার্যালয়। গত মার্চের মাঝামাঝি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর, একই মাসের শেষ দিকে ইউনূসের চীন সফর ও এপ্রিলের শুরুতে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের পাশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় অনেক অসংগতি বেশি করে চোখে পড়ে।

খলিলুর রহমানের অভিযোগ, রোহিঙ্গা বিষয়ে ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফরের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাননি তিনি। অনেক ক্ষেত্রে পুরোনো তথ্য দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

বিমসটেক সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কূটনীতিক বলেন, হাসিনার পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ব্যাংকক সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ। কিন্তু এই সাক্ষাৎটাই হবে কি হবে না, এমন একটা অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে গত ৩ এপ্রিল সেখানে নামে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। একই দিন ব্যাংককে নামা ভারতীয় প্রতিনিধিদলের গঠন থেকে বুঝতে পারার কথা ইউনূস ও মোদির সাক্ষাৎ হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগেও বিষয়টি হয়তো জানা যেত। ইউনূস এ বৈঠকের বিষয়ে বারবার জানতে চান। কিন্তু ভারতের তরফ থেকে ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় সরাসরি নিশ্চিত করার আগপর্যন্ত মোদি-ইউনূসের সাক্ষাতের বিষয়ে অন্ধকারে ছিল বাংলাদেশ।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ব্যাংককে নৈশভোজের সময় বাংলাদেশ ও মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে খলিলুর রহমানের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা বলেন। অন্যদিকে, ইউনূসের দলে উপযুক্ত লোক না পেয়ে পরদিন দুপুরে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নোট নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় এমন একজন কূটনীতিককে, যিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে যুক্ত নন। আবার কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত সুনামের ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে।

ব্যাংকক থেকে ইউনূস ঢাকা ফিরে খলিলুর রহমানের পদবি বদলে দেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয় তাঁকে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে উপদেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য গত ২০ এপ্রিল বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক কূটনীতিক সুফিউর রহমানকে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার পাশাপাশি তাঁকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়। সুফিউর জেনেভায় জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি, সুইজারল্যান্ড ও মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কায় হাইকমিশনার ছিলেন।

খলিলুর রহমান ও তৌহিদ হোসেন উভয়েই চেয়েছেন সুফিউর রহমান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বসবেন, দেখবেন রোহিঙ্গাসংক্রান্ত বিষয়াবলি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় চেয়েছে, করিতকর্মা ও দক্ষ হিসেবে পরিচিত এই কূটনীতিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আনতে মন্ত্রণালয়েই বসবেন।

সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমানের নিয়োগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ ও বদলি তদারকির দায়িত্ব অন্য দুই উপদেষ্টাকে দেওয়ার বিষয়টি তৌহিদ হোসেন শুরু থেকেই ভালোভাবে নেননি। রোহিঙ্গা বিষয় দেখতে সুফিউরকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি একমত ছিলেন। কিন্তু নিয়োগের আদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার উল্লেখ থাকায় বিগড়ে যান উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর জন্য একটি কক্ষ আছে। সুফিউরের নিয়োগের আদেশ জারি হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁর বসার জন্য কক্ষটি প্রস্তুত করতে শুরু করেন। কিন্তু তৌহিদ হোসেনের ইঙ্গিতে জসীম উদ্দিনের নির্দেশে কক্ষ প্রস্তুত করার কাজ থেমে যায় বলে জানা যায়। সুফিউর গতকাল বুধবার পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে যোগ দেননি।

নতুন সরকারের সময়কার কাজের ধরন, প্রয়োজনীয়তা ও মুহাম্মদ ইউনূসের গতির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল মেলাতে পারছে না, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে গত সপ্তাহে তাঁর কার্যালয়ে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হয়। সেটাই করে যাচ্ছি।’

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাধারণভাবে গতিশীল মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত। অন্য অনেক মন্ত্রণালয়ের চেয়ে কাজে ভালো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এসে এর কাজের গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ার বড় কারণ তৌহিদ হোসেন ও জসীম উদ্দিন উভয়েরই ধীরে চলার নীতি। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফাইল পড়ে থাকছে। অনেক সভায় পররাষ্ট্রসচিবেরই যোগ দেওয়া প্রয়োজন থাকলেও তিনি সভাগুলো এড়িয়ে চলছেন, অন্য কাউকে পাঠাচ্ছেন। সব মিলিয়ে সরকারের কাজকর্মে বেশ ঝামেলা হচ্ছে। ঢাকায় বিদেশি মিশন ও বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর কাজেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যে দক্ষ হিসেবে সুনাম নেই, এমন অনেকে পদপদবি বাগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় পররাষ্ট্রসচিবকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেক দিন ধরে বিবেচনায় রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এ মাসের শেষ দিকে জাপান সফরে যাবেন। ৩০ মে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক আছে। এর আগে আজ ১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বনির্ধারিত পরামর্শমূলক সভা (এফওসি) হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় প্রধান উপদেষ্টার সফরের প্রস্তুতি নিয়েও আলাপ হওয়ার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব এ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলমান পরিস্থিতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় পররাষ্ট্রসচিবের পরিবর্তে সচিব পর্যায়ের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে দলনেতা করার ইঙ্গিত দেওয়া হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রসচিব জাপানের সঙ্গে পরামর্শমূলক সভাটিই স্থগিত করে দেন। সভা স্থগিতের বিষয়টি ঢাকায় দেশটির দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে গত সোমবার জানিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিনই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে লুৎফে সিদ্দিকীকেই টোকিওতে পাঠানো হবে। এ অবস্থায় এফওসি ঠিক রাখতে তৎপর হন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত শিন-ইচি সাইদা। অবশেষে মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. নজরুল ইসলামকে দলনেতা করে টোকিওতে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। এফওসি স্থগিত না করে এ সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া যেত, এমনটা মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

এফওসি বাতিলের বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না, আজকের পত্রিকা থেকে সোমবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রসচিব নিরুত্তর থাকেন।

সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে বিদায় নিতে হবে, সরকারের এ নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জেনে জসীম উদ্দিন তাঁর সম্মানজনক প্রস্থান নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন। নিয়মিত চাকরি শেষে আগামী বছর (২০২৬) ডিসেম্বরে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, জসীম উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা কানাডায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু অসুবিধা হলো এই দুই দেশেই নতুন মিশনপ্রধান হিসেবে মাত্র কয়েক মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে আসাদ আলম সিয়াম ও নাহিদা সোবহানকে। এমন অবস্থায় বিদায়ী পররাষ্ট্রসচিবের জন্য আর কী বিকল্প হতে পারে, তা দেখা হচ্ছে। তৌহিদ হোসেন জার্মানি সফরে আছেন, তিনি ফেরার পর পররাষ্ট্রসচিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাড়ে চার বছর বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাবে দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। অথচ যে জেনারেটরের অভাবে উৎপাদন চালু করা যাচ্ছে না সেটি প্রতিস্থাপনে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় নতুন জেনারেটর ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুনরায় উৎপাদনে যেতে অন্তত আরও এক থেকে দেড় বছর লাগবে। এতে কেন্দ্রটির লোকসানের অঙ্ক আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

বিপিডিবি সূত্র জানায়, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্রটির গড় উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৫ মেগাওয়াট। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদন হয় প্রায় ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ, যা মাসে দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি ৪৪ লাখ ইউনিট। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ৫ টাকা ৪০ পয়সা। বিপরীতে বিদ্যুতের বর্তমান বিক্রয়মূল্য আবাসিক খাতে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা, ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ টাকা ৭৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিক খাতে ১৩ টাকা ১ পয়সা। সব মিলিয়ে গড় বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৭৭ পয়সা। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে কেন্দ্রটির গড় লাভ হয় ৫ টাকা ৩৩ পয়সা। এই হিসাবে কেন্দ্রটি চালু থাকলে মাসে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে লাভ হতো প্রায় ৫৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে গত সাড়ে চার বছরে বিপুল এই সম্ভাব্য আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সংশ্লিষ্ট হিসাব অনুযায়ী, এ সময় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি উৎপাদন শুরু করে। প্রায় ১৩ বছর নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জেনারেটর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশে গুরুতর ত্রুটি দেখা দেয়। একপর্যায়ে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রাথমিক মেরামতের পর উৎপাদনে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ২০২৩ সালের আগস্টে কেন্দ্রটির জেনারেটর আগুনে পুড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা মত দেন, জেনারেটর ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আর মেরামতযোগ্য নয়। নতুন যন্ত্রপাতি ছাড়া কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব নয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৯১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার একটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ কেনা হলেও জেনারেটর সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় সেগুলো এখনো স্থাপন করা যায়নি।

শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান প্রকৌশলী গোলাম হায়দার তালুকদার জানান, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২১০০তম সভায় নতুন জেনারেটর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন আরোপিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর), ২০২৫ অনুসরণ করে জেনারেটর ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জেনারেটর কেনায় বিলম্ব ও দীর্ঘদিন প্ল্যান্ট বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের আগস্টে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরপরই জেনারেটর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে জার্মানির সিমেন্সের বিশেষজ্ঞ দল আসতে দেরি হয়। পরবর্তীকালে তারা মত দেয়, জেনারেটরটি আর মেরামতযোগ্য নয়। এরপর বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে নতুন জেনারেটর কেনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পিপিআর-২০২৫ কার্যকর হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। এতে অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগছে।’

কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিডিউলভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে টারবাইন, কম্প্রেসার ও কম্বাশন চেম্বারের মেজর ওভারহোলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ ইতিমধ্যে কেন্দ্রের ভান্ডারে মজুত রয়েছে। তবে জেনারেটর সমস্যার কারণে টারবাইন অংশের ওভারহোলিং শেষ করা সম্ভব হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নতুন জেনারেটর কিনতে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। তবে জেনারেটর স্থাপন শেষে পুনরায় উৎপাদনে গেলে কেন্দ্রটি থেকে আগের মতোই বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।

১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্র বন্ধের প্রভাব ২২৫ মেগাওয়াট প্ল্যান্টেও বিপিডিবির অধীনে চট্টগ্রামে মোট সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্র কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায় অবস্থিত, যার দুটি ১৫০ ও ৬০ মেগাওয়াটের পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং একটি ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট। এর মধ্যে ৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এবং ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ আছে গত সাড়ে চার বছর ধরে। বর্তমানে শুধু কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দীর্ঘদিন ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় পার্শ্ববর্তী ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপরও চাপ বেড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওভারহোলিং প্রয়োজন হলেও বিদ্যুতের চাহিদার কারণে গত পাঁচ বছর কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে হয়েছে। ফলে ওভারহোলিং করা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট এড়াতে ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের ওভারহোলিং নিশ্চিত করতে হলে ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি দ্রুত উৎপাদনে আনা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৩৪
আজ শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক চিঠি পাঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক চিঠি পাঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে পদ থেকে ইস্তফা চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আজ শনিবার তিনি ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এক অব্যাহতিপত্র পাঠিয়েছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ইস্তফাপত্রটি আগামীকাল রোববার সকালে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ওই চিঠিতে অ্যাটর্নি জেনারেল লিখেছেন, যথাবিহিত সম্মানপূর্বক আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি বিগত ০৮ আগষ্ট ২০২৪ ইং তারিখ থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে কর্মরত আছি। বর্তমানে আমি ব্যক্তিগত কারণে উক্ত পদে দায়িত্ব পালনে অপারগ।

বিধায় আমাকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদ হতে অব্যাহতি প্রদানে মহোদয়ের মর্জি হয়।

গত ৫ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে ভোট করবেন। সেদিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আমি ভোট করব। আমি নমিনেশন ওখানে চেয়েছি। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে গিয়ে আমি ভোট করব। যখন সময় আসবে, তখন করব।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান দেশের ১৭তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে এ পদে নিয়োগ দেন। তিনি বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুমোদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানাল বিএনটিটিপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালী করতে অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শনিবার বিএনটিটিপি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, দীর্ঘ এক যুগ পর নেওয়া এই পদক্ষেপ দেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার করবে এবং কিশোর-তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ই-সিগারেট, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ নতুন প্রজন্মের তামাক ও নিকোটিন পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি যুগান্তকারী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

অনুমোদিত অধ্যাদেশে সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানসহ সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার পরিসর ৭৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, নিকোটিন পাউচসহ নতুন পণ্যকে তামাকজাত দ্রব্যের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তগুলোকে ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ বলে উল্লেখ করেছে বিএনটিটিপি।

তবে প্রস্তাবিত খসড়া থেকে খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ এবং তামাক বিক্রেতাদের লাইসেন্সিং বা নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার বিধান বাদ দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুচরা শলাকা বিক্রির কারণে শিশু-কিশোর ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে তামাক সহজলভ্য হয়ে থাকছে, যা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

বিএনটিটিপির মতে, তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি, অবৈধ বাণিজ্য এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে তামাক বিক্রি রোধে বিক্রেতা নিবন্ধন ও খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। সরকার এ বিষয়ে পরিপূরক আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ব্যয়, পরিবেশগত ক্ষতি ও উৎপাদনশীলতা হ্রাসের কারণে বছরে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে সরকার গৃহীত তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ শক্তিশালী ও তামাকমুক্ত ভবিষ্যতের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করে এই আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সংবাদমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় বিএনটিটিপি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর শপথ কাল

বাসস, ঢাকা  
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ফাইল ছবি
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ফাইল ছবি

দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে আগামীকাল রোববার শপথ নেবেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বিষয়টি আজ বাসসকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘কাল (রোববার) সকাল ১০টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।’

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ২৩ ডিসেম্বরে আইন সচিব লিয়াকত আলী মোল্লার সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

১৯৮৫ সালে জুবায়ের রহমান চৌধুরী জজ কোর্টে এবং ১৯৮৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট তিনি অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হন জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

২০২৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

জুবায়ের রহমান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত