অন্তর্বর্তী সরকার
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা

সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর দপ্তর মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন এবং সরকারপ্রধানের কাজের যে বৈচিত্র্য ও গতি, তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল-লয় ঠিক রেখে চলতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহরণ, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর সামনে রেখে টোকিওতে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরামর্শমূলক সভা (এফওসি) নিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্তে বদল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় কদিন পরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বদলানোর আওয়াজ ওঠে। মুহাম্মদ ইউনূস অবশ্য বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক দেখভাল করতে উচ্চপর্যায়ে নতুন নতুন মুখ যুক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছেন। এর মধ্যেও কিছু ঝামেলা তৈরি হওয়ায় অবশেষে সরকার পররাষ্ট্রসচিব বদলানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
পররাষ্ট্রসচিব বদলানো হচ্ছে কি না—প্রশ্নটি গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকা থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমকে করা হলে তিনি নিরুত্তর থাকেন। সেদিনই একই প্রশ্ন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অন্য এক কর্মকর্তাকে করা হলে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রসচিব বদলানোর কথা অনেক দিন থেকেই হচ্ছে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে গত বছরের ৫ আগস্ট। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক মো. তৌহিদ হোসেনকে। তৌহিদ হোসেন ২০০৬ সালের শেষ দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ছিলেন। পরে তাঁকে পররাষ্ট্রসচিব করা হয়। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা কূটনৈতিক পরিসরে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ফরেন সেক্রেটারি’ হিসেবে পরিচিত।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তৌহিদ হোসেনের পছন্দেই পররাষ্ট্রসচিব করে চীন থেকে উড়িয়ে আনা হয় মো. জসীম উদ্দিনকে। তিনি তখন দেশটিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু নোবেল বিজয়ী ইউনূসের কাজের ধরন ও গতির সঙ্গে তাল মেলানোর ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই পিছিয়ে পড়ে। দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের নানা ঝামেলা সামাল দেওয়ার পাশাপাশি ইউনূসের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো হয়ে উঠছে না।
এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস নিজের আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত হিসেবে গত সেপ্টেম্বরের নিয়োগ দেন লুৎফে সিদ্দিকীকে। উপদেষ্টা পদমর্যাদায় নিয়োগ পাওয়া লুৎফে সিদ্দিকী বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা পেশাদারদের আন্তর্জাতিক সংস্থা সিএফএ ইনস্টিটিউটের অন্যতম সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে ড. খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৭৭ ব্যাচের কর্মকর্তা খলিলুর রহমান এর আগে কয়েক বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছিলেন। পরে তিনি লিয়েনে চলে যান জাতিসংঘের চাকরিতে। লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমান উভয়েই বসেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। এর বাইরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ ও বদলি তদারকির দায়িত্ব অন্য দুই উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও মাহফুজ আলমকে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
কূটনৈতিক কয়েকটি সূত্র জানায়, এত সব নিয়োগ সত্ত্বেও বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক ঠিকঠাক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা অসংগতি দেখতে পান প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর কার্যালয়। গত মার্চের মাঝামাঝি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর, একই মাসের শেষ দিকে ইউনূসের চীন সফর ও এপ্রিলের শুরুতে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের পাশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় অনেক অসংগতি বেশি করে চোখে পড়ে।
খলিলুর রহমানের অভিযোগ, রোহিঙ্গা বিষয়ে ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফরের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাননি তিনি। অনেক ক্ষেত্রে পুরোনো তথ্য দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
বিমসটেক সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কূটনীতিক বলেন, হাসিনার পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ব্যাংকক সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ। কিন্তু এই সাক্ষাৎটাই হবে কি হবে না, এমন একটা অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে গত ৩ এপ্রিল সেখানে নামে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। একই দিন ব্যাংককে নামা ভারতীয় প্রতিনিধিদলের গঠন থেকে বুঝতে পারার কথা ইউনূস ও মোদির সাক্ষাৎ হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগেও বিষয়টি হয়তো জানা যেত। ইউনূস এ বৈঠকের বিষয়ে বারবার জানতে চান। কিন্তু ভারতের তরফ থেকে ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় সরাসরি নিশ্চিত করার আগপর্যন্ত মোদি-ইউনূসের সাক্ষাতের বিষয়ে অন্ধকারে ছিল বাংলাদেশ।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ব্যাংককে নৈশভোজের সময় বাংলাদেশ ও মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে খলিলুর রহমানের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা বলেন। অন্যদিকে, ইউনূসের দলে উপযুক্ত লোক না পেয়ে পরদিন দুপুরে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নোট নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় এমন একজন কূটনীতিককে, যিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে যুক্ত নন। আবার কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত সুনামের ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে।
ব্যাংকক থেকে ইউনূস ঢাকা ফিরে খলিলুর রহমানের পদবি বদলে দেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয় তাঁকে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে উপদেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য গত ২০ এপ্রিল বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক কূটনীতিক সুফিউর রহমানকে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার পাশাপাশি তাঁকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়। সুফিউর জেনেভায় জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি, সুইজারল্যান্ড ও মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কায় হাইকমিশনার ছিলেন।
খলিলুর রহমান ও তৌহিদ হোসেন উভয়েই চেয়েছেন সুফিউর রহমান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বসবেন, দেখবেন রোহিঙ্গাসংক্রান্ত বিষয়াবলি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় চেয়েছে, করিতকর্মা ও দক্ষ হিসেবে পরিচিত এই কূটনীতিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আনতে মন্ত্রণালয়েই বসবেন।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমানের নিয়োগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ ও বদলি তদারকির দায়িত্ব অন্য দুই উপদেষ্টাকে দেওয়ার বিষয়টি তৌহিদ হোসেন শুরু থেকেই ভালোভাবে নেননি। রোহিঙ্গা বিষয় দেখতে সুফিউরকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি একমত ছিলেন। কিন্তু নিয়োগের আদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার উল্লেখ থাকায় বিগড়ে যান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর জন্য একটি কক্ষ আছে। সুফিউরের নিয়োগের আদেশ জারি হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁর বসার জন্য কক্ষটি প্রস্তুত করতে শুরু করেন। কিন্তু তৌহিদ হোসেনের ইঙ্গিতে জসীম উদ্দিনের নির্দেশে কক্ষ প্রস্তুত করার কাজ থেমে যায় বলে জানা যায়। সুফিউর গতকাল বুধবার পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে যোগ দেননি।
নতুন সরকারের সময়কার কাজের ধরন, প্রয়োজনীয়তা ও মুহাম্মদ ইউনূসের গতির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল মেলাতে পারছে না, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে গত সপ্তাহে তাঁর কার্যালয়ে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হয়। সেটাই করে যাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাধারণভাবে গতিশীল মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত। অন্য অনেক মন্ত্রণালয়ের চেয়ে কাজে ভালো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এসে এর কাজের গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ার বড় কারণ তৌহিদ হোসেন ও জসীম উদ্দিন উভয়েরই ধীরে চলার নীতি। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফাইল পড়ে থাকছে। অনেক সভায় পররাষ্ট্রসচিবেরই যোগ দেওয়া প্রয়োজন থাকলেও তিনি সভাগুলো এড়িয়ে চলছেন, অন্য কাউকে পাঠাচ্ছেন। সব মিলিয়ে সরকারের কাজকর্মে বেশ ঝামেলা হচ্ছে। ঢাকায় বিদেশি মিশন ও বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর কাজেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যে দক্ষ হিসেবে সুনাম নেই, এমন অনেকে পদপদবি বাগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় পররাষ্ট্রসচিবকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেক দিন ধরে বিবেচনায় রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এ মাসের শেষ দিকে জাপান সফরে যাবেন। ৩০ মে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক আছে। এর আগে আজ ১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বনির্ধারিত পরামর্শমূলক সভা (এফওসি) হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় প্রধান উপদেষ্টার সফরের প্রস্তুতি নিয়েও আলাপ হওয়ার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব এ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলমান পরিস্থিতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় পররাষ্ট্রসচিবের পরিবর্তে সচিব পর্যায়ের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে দলনেতা করার ইঙ্গিত দেওয়া হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রসচিব জাপানের সঙ্গে পরামর্শমূলক সভাটিই স্থগিত করে দেন। সভা স্থগিতের বিষয়টি ঢাকায় দেশটির দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে গত সোমবার জানিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিনই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে লুৎফে সিদ্দিকীকেই টোকিওতে পাঠানো হবে। এ অবস্থায় এফওসি ঠিক রাখতে তৎপর হন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত শিন-ইচি সাইদা। অবশেষে মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. নজরুল ইসলামকে দলনেতা করে টোকিওতে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। এফওসি স্থগিত না করে এ সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া যেত, এমনটা মনে করছেন কূটনীতিকেরা।
এফওসি বাতিলের বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না, আজকের পত্রিকা থেকে সোমবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রসচিব নিরুত্তর থাকেন।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে বিদায় নিতে হবে, সরকারের এ নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জেনে জসীম উদ্দিন তাঁর সম্মানজনক প্রস্থান নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন। নিয়মিত চাকরি শেষে আগামী বছর (২০২৬) ডিসেম্বরে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, জসীম উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা কানাডায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু অসুবিধা হলো এই দুই দেশেই নতুন মিশনপ্রধান হিসেবে মাত্র কয়েক মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে আসাদ আলম সিয়াম ও নাহিদা সোবহানকে। এমন অবস্থায় বিদায়ী পররাষ্ট্রসচিবের জন্য আর কী বিকল্প হতে পারে, তা দেখা হচ্ছে। তৌহিদ হোসেন জার্মানি সফরে আছেন, তিনি ফেরার পর পররাষ্ট্রসচিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর দপ্তর মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন এবং সরকারপ্রধানের কাজের যে বৈচিত্র্য ও গতি, তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল-লয় ঠিক রেখে চলতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহরণ, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর সামনে রেখে টোকিওতে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরামর্শমূলক সভা (এফওসি) নিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্তে বদল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় কদিন পরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বদলানোর আওয়াজ ওঠে। মুহাম্মদ ইউনূস অবশ্য বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক দেখভাল করতে উচ্চপর্যায়ে নতুন নতুন মুখ যুক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছেন। এর মধ্যেও কিছু ঝামেলা তৈরি হওয়ায় অবশেষে সরকার পররাষ্ট্রসচিব বদলানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
পররাষ্ট্রসচিব বদলানো হচ্ছে কি না—প্রশ্নটি গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকা থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমকে করা হলে তিনি নিরুত্তর থাকেন। সেদিনই একই প্রশ্ন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অন্য এক কর্মকর্তাকে করা হলে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রসচিব বদলানোর কথা অনেক দিন থেকেই হচ্ছে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে গত বছরের ৫ আগস্ট। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক মো. তৌহিদ হোসেনকে। তৌহিদ হোসেন ২০০৬ সালের শেষ দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ছিলেন। পরে তাঁকে পররাষ্ট্রসচিব করা হয়। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা কূটনৈতিক পরিসরে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ফরেন সেক্রেটারি’ হিসেবে পরিচিত।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তৌহিদ হোসেনের পছন্দেই পররাষ্ট্রসচিব করে চীন থেকে উড়িয়ে আনা হয় মো. জসীম উদ্দিনকে। তিনি তখন দেশটিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু নোবেল বিজয়ী ইউনূসের কাজের ধরন ও গতির সঙ্গে তাল মেলানোর ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই পিছিয়ে পড়ে। দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের নানা ঝামেলা সামাল দেওয়ার পাশাপাশি ইউনূসের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো হয়ে উঠছে না।
এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস নিজের আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত হিসেবে গত সেপ্টেম্বরের নিয়োগ দেন লুৎফে সিদ্দিকীকে। উপদেষ্টা পদমর্যাদায় নিয়োগ পাওয়া লুৎফে সিদ্দিকী বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা পেশাদারদের আন্তর্জাতিক সংস্থা সিএফএ ইনস্টিটিউটের অন্যতম সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে ড. খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৭৭ ব্যাচের কর্মকর্তা খলিলুর রহমান এর আগে কয়েক বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছিলেন। পরে তিনি লিয়েনে চলে যান জাতিসংঘের চাকরিতে। লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমান উভয়েই বসেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। এর বাইরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ ও বদলি তদারকির দায়িত্ব অন্য দুই উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও মাহফুজ আলমকে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
কূটনৈতিক কয়েকটি সূত্র জানায়, এত সব নিয়োগ সত্ত্বেও বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক ঠিকঠাক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা অসংগতি দেখতে পান প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর কার্যালয়। গত মার্চের মাঝামাঝি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর, একই মাসের শেষ দিকে ইউনূসের চীন সফর ও এপ্রিলের শুরুতে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের পাশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় অনেক অসংগতি বেশি করে চোখে পড়ে।
খলিলুর রহমানের অভিযোগ, রোহিঙ্গা বিষয়ে ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফরের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাননি তিনি। অনেক ক্ষেত্রে পুরোনো তথ্য দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
বিমসটেক সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কূটনীতিক বলেন, হাসিনার পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ব্যাংকক সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ। কিন্তু এই সাক্ষাৎটাই হবে কি হবে না, এমন একটা অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে গত ৩ এপ্রিল সেখানে নামে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। একই দিন ব্যাংককে নামা ভারতীয় প্রতিনিধিদলের গঠন থেকে বুঝতে পারার কথা ইউনূস ও মোদির সাক্ষাৎ হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগেও বিষয়টি হয়তো জানা যেত। ইউনূস এ বৈঠকের বিষয়ে বারবার জানতে চান। কিন্তু ভারতের তরফ থেকে ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় সরাসরি নিশ্চিত করার আগপর্যন্ত মোদি-ইউনূসের সাক্ষাতের বিষয়ে অন্ধকারে ছিল বাংলাদেশ।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ব্যাংককে নৈশভোজের সময় বাংলাদেশ ও মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে খলিলুর রহমানের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা বলেন। অন্যদিকে, ইউনূসের দলে উপযুক্ত লোক না পেয়ে পরদিন দুপুরে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নোট নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় এমন একজন কূটনীতিককে, যিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে যুক্ত নন। আবার কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত সুনামের ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে।
ব্যাংকক থেকে ইউনূস ঢাকা ফিরে খলিলুর রহমানের পদবি বদলে দেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয় তাঁকে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে উপদেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য গত ২০ এপ্রিল বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক কূটনীতিক সুফিউর রহমানকে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার পাশাপাশি তাঁকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়। সুফিউর জেনেভায় জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি, সুইজারল্যান্ড ও মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কায় হাইকমিশনার ছিলেন।
খলিলুর রহমান ও তৌহিদ হোসেন উভয়েই চেয়েছেন সুফিউর রহমান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বসবেন, দেখবেন রোহিঙ্গাসংক্রান্ত বিষয়াবলি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় চেয়েছে, করিতকর্মা ও দক্ষ হিসেবে পরিচিত এই কূটনীতিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আনতে মন্ত্রণালয়েই বসবেন।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমানের নিয়োগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ ও বদলি তদারকির দায়িত্ব অন্য দুই উপদেষ্টাকে দেওয়ার বিষয়টি তৌহিদ হোসেন শুরু থেকেই ভালোভাবে নেননি। রোহিঙ্গা বিষয় দেখতে সুফিউরকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি একমত ছিলেন। কিন্তু নিয়োগের আদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার উল্লেখ থাকায় বিগড়ে যান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর জন্য একটি কক্ষ আছে। সুফিউরের নিয়োগের আদেশ জারি হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁর বসার জন্য কক্ষটি প্রস্তুত করতে শুরু করেন। কিন্তু তৌহিদ হোসেনের ইঙ্গিতে জসীম উদ্দিনের নির্দেশে কক্ষ প্রস্তুত করার কাজ থেমে যায় বলে জানা যায়। সুফিউর গতকাল বুধবার পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে যোগ দেননি।
নতুন সরকারের সময়কার কাজের ধরন, প্রয়োজনীয়তা ও মুহাম্মদ ইউনূসের গতির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল মেলাতে পারছে না, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে গত সপ্তাহে তাঁর কার্যালয়ে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হয়। সেটাই করে যাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাধারণভাবে গতিশীল মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত। অন্য অনেক মন্ত্রণালয়ের চেয়ে কাজে ভালো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এসে এর কাজের গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ার বড় কারণ তৌহিদ হোসেন ও জসীম উদ্দিন উভয়েরই ধীরে চলার নীতি। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফাইল পড়ে থাকছে। অনেক সভায় পররাষ্ট্রসচিবেরই যোগ দেওয়া প্রয়োজন থাকলেও তিনি সভাগুলো এড়িয়ে চলছেন, অন্য কাউকে পাঠাচ্ছেন। সব মিলিয়ে সরকারের কাজকর্মে বেশ ঝামেলা হচ্ছে। ঢাকায় বিদেশি মিশন ও বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর কাজেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যে দক্ষ হিসেবে সুনাম নেই, এমন অনেকে পদপদবি বাগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় পররাষ্ট্রসচিবকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেক দিন ধরে বিবেচনায় রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এ মাসের শেষ দিকে জাপান সফরে যাবেন। ৩০ মে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক আছে। এর আগে আজ ১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বনির্ধারিত পরামর্শমূলক সভা (এফওসি) হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় প্রধান উপদেষ্টার সফরের প্রস্তুতি নিয়েও আলাপ হওয়ার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব এ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলমান পরিস্থিতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় পররাষ্ট্রসচিবের পরিবর্তে সচিব পর্যায়ের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে দলনেতা করার ইঙ্গিত দেওয়া হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রসচিব জাপানের সঙ্গে পরামর্শমূলক সভাটিই স্থগিত করে দেন। সভা স্থগিতের বিষয়টি ঢাকায় দেশটির দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে গত সোমবার জানিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিনই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে লুৎফে সিদ্দিকীকেই টোকিওতে পাঠানো হবে। এ অবস্থায় এফওসি ঠিক রাখতে তৎপর হন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত শিন-ইচি সাইদা। অবশেষে মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. নজরুল ইসলামকে দলনেতা করে টোকিওতে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। এফওসি স্থগিত না করে এ সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া যেত, এমনটা মনে করছেন কূটনীতিকেরা।
এফওসি বাতিলের বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না, আজকের পত্রিকা থেকে সোমবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রসচিব নিরুত্তর থাকেন।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে বিদায় নিতে হবে, সরকারের এ নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জেনে জসীম উদ্দিন তাঁর সম্মানজনক প্রস্থান নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন। নিয়মিত চাকরি শেষে আগামী বছর (২০২৬) ডিসেম্বরে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, জসীম উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা কানাডায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু অসুবিধা হলো এই দুই দেশেই নতুন মিশনপ্রধান হিসেবে মাত্র কয়েক মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে আসাদ আলম সিয়াম ও নাহিদা সোবহানকে। এমন অবস্থায় বিদায়ী পররাষ্ট্রসচিবের জন্য আর কী বিকল্প হতে পারে, তা দেখা হচ্ছে। তৌহিদ হোসেন জার্মানি সফরে আছেন, তিনি ফেরার পর পররাষ্ট্রসচিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা

সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর দপ্তর মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন এবং সরকারপ্রধানের কাজের যে বৈচিত্র্য ও গতি, তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল-লয় ঠিক রেখে চলতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহরণ, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর সামনে রেখে টোকিওতে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরামর্শমূলক সভা (এফওসি) নিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্তে বদল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় কদিন পরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বদলানোর আওয়াজ ওঠে। মুহাম্মদ ইউনূস অবশ্য বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক দেখভাল করতে উচ্চপর্যায়ে নতুন নতুন মুখ যুক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছেন। এর মধ্যেও কিছু ঝামেলা তৈরি হওয়ায় অবশেষে সরকার পররাষ্ট্রসচিব বদলানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
পররাষ্ট্রসচিব বদলানো হচ্ছে কি না—প্রশ্নটি গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকা থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমকে করা হলে তিনি নিরুত্তর থাকেন। সেদিনই একই প্রশ্ন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অন্য এক কর্মকর্তাকে করা হলে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রসচিব বদলানোর কথা অনেক দিন থেকেই হচ্ছে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে গত বছরের ৫ আগস্ট। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক মো. তৌহিদ হোসেনকে। তৌহিদ হোসেন ২০০৬ সালের শেষ দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ছিলেন। পরে তাঁকে পররাষ্ট্রসচিব করা হয়। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা কূটনৈতিক পরিসরে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ফরেন সেক্রেটারি’ হিসেবে পরিচিত।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তৌহিদ হোসেনের পছন্দেই পররাষ্ট্রসচিব করে চীন থেকে উড়িয়ে আনা হয় মো. জসীম উদ্দিনকে। তিনি তখন দেশটিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু নোবেল বিজয়ী ইউনূসের কাজের ধরন ও গতির সঙ্গে তাল মেলানোর ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই পিছিয়ে পড়ে। দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের নানা ঝামেলা সামাল দেওয়ার পাশাপাশি ইউনূসের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো হয়ে উঠছে না।
এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস নিজের আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত হিসেবে গত সেপ্টেম্বরের নিয়োগ দেন লুৎফে সিদ্দিকীকে। উপদেষ্টা পদমর্যাদায় নিয়োগ পাওয়া লুৎফে সিদ্দিকী বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা পেশাদারদের আন্তর্জাতিক সংস্থা সিএফএ ইনস্টিটিউটের অন্যতম সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে ড. খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৭৭ ব্যাচের কর্মকর্তা খলিলুর রহমান এর আগে কয়েক বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছিলেন। পরে তিনি লিয়েনে চলে যান জাতিসংঘের চাকরিতে। লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমান উভয়েই বসেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। এর বাইরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ ও বদলি তদারকির দায়িত্ব অন্য দুই উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও মাহফুজ আলমকে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
কূটনৈতিক কয়েকটি সূত্র জানায়, এত সব নিয়োগ সত্ত্বেও বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক ঠিকঠাক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা অসংগতি দেখতে পান প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর কার্যালয়। গত মার্চের মাঝামাঝি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর, একই মাসের শেষ দিকে ইউনূসের চীন সফর ও এপ্রিলের শুরুতে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের পাশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় অনেক অসংগতি বেশি করে চোখে পড়ে।
খলিলুর রহমানের অভিযোগ, রোহিঙ্গা বিষয়ে ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফরের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাননি তিনি। অনেক ক্ষেত্রে পুরোনো তথ্য দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
বিমসটেক সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কূটনীতিক বলেন, হাসিনার পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ব্যাংকক সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ। কিন্তু এই সাক্ষাৎটাই হবে কি হবে না, এমন একটা অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে গত ৩ এপ্রিল সেখানে নামে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। একই দিন ব্যাংককে নামা ভারতীয় প্রতিনিধিদলের গঠন থেকে বুঝতে পারার কথা ইউনূস ও মোদির সাক্ষাৎ হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগেও বিষয়টি হয়তো জানা যেত। ইউনূস এ বৈঠকের বিষয়ে বারবার জানতে চান। কিন্তু ভারতের তরফ থেকে ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় সরাসরি নিশ্চিত করার আগপর্যন্ত মোদি-ইউনূসের সাক্ষাতের বিষয়ে অন্ধকারে ছিল বাংলাদেশ।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ব্যাংককে নৈশভোজের সময় বাংলাদেশ ও মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে খলিলুর রহমানের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা বলেন। অন্যদিকে, ইউনূসের দলে উপযুক্ত লোক না পেয়ে পরদিন দুপুরে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নোট নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় এমন একজন কূটনীতিককে, যিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে যুক্ত নন। আবার কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত সুনামের ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে।
ব্যাংকক থেকে ইউনূস ঢাকা ফিরে খলিলুর রহমানের পদবি বদলে দেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয় তাঁকে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে উপদেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য গত ২০ এপ্রিল বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক কূটনীতিক সুফিউর রহমানকে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার পাশাপাশি তাঁকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়। সুফিউর জেনেভায় জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি, সুইজারল্যান্ড ও মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কায় হাইকমিশনার ছিলেন।
খলিলুর রহমান ও তৌহিদ হোসেন উভয়েই চেয়েছেন সুফিউর রহমান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বসবেন, দেখবেন রোহিঙ্গাসংক্রান্ত বিষয়াবলি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় চেয়েছে, করিতকর্মা ও দক্ষ হিসেবে পরিচিত এই কূটনীতিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আনতে মন্ত্রণালয়েই বসবেন।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমানের নিয়োগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ ও বদলি তদারকির দায়িত্ব অন্য দুই উপদেষ্টাকে দেওয়ার বিষয়টি তৌহিদ হোসেন শুরু থেকেই ভালোভাবে নেননি। রোহিঙ্গা বিষয় দেখতে সুফিউরকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি একমত ছিলেন। কিন্তু নিয়োগের আদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার উল্লেখ থাকায় বিগড়ে যান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর জন্য একটি কক্ষ আছে। সুফিউরের নিয়োগের আদেশ জারি হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁর বসার জন্য কক্ষটি প্রস্তুত করতে শুরু করেন। কিন্তু তৌহিদ হোসেনের ইঙ্গিতে জসীম উদ্দিনের নির্দেশে কক্ষ প্রস্তুত করার কাজ থেমে যায় বলে জানা যায়। সুফিউর গতকাল বুধবার পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে যোগ দেননি।
নতুন সরকারের সময়কার কাজের ধরন, প্রয়োজনীয়তা ও মুহাম্মদ ইউনূসের গতির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল মেলাতে পারছে না, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে গত সপ্তাহে তাঁর কার্যালয়ে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হয়। সেটাই করে যাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাধারণভাবে গতিশীল মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত। অন্য অনেক মন্ত্রণালয়ের চেয়ে কাজে ভালো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এসে এর কাজের গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ার বড় কারণ তৌহিদ হোসেন ও জসীম উদ্দিন উভয়েরই ধীরে চলার নীতি। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফাইল পড়ে থাকছে। অনেক সভায় পররাষ্ট্রসচিবেরই যোগ দেওয়া প্রয়োজন থাকলেও তিনি সভাগুলো এড়িয়ে চলছেন, অন্য কাউকে পাঠাচ্ছেন। সব মিলিয়ে সরকারের কাজকর্মে বেশ ঝামেলা হচ্ছে। ঢাকায় বিদেশি মিশন ও বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর কাজেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যে দক্ষ হিসেবে সুনাম নেই, এমন অনেকে পদপদবি বাগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় পররাষ্ট্রসচিবকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেক দিন ধরে বিবেচনায় রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এ মাসের শেষ দিকে জাপান সফরে যাবেন। ৩০ মে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক আছে। এর আগে আজ ১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বনির্ধারিত পরামর্শমূলক সভা (এফওসি) হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় প্রধান উপদেষ্টার সফরের প্রস্তুতি নিয়েও আলাপ হওয়ার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব এ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলমান পরিস্থিতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় পররাষ্ট্রসচিবের পরিবর্তে সচিব পর্যায়ের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে দলনেতা করার ইঙ্গিত দেওয়া হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রসচিব জাপানের সঙ্গে পরামর্শমূলক সভাটিই স্থগিত করে দেন। সভা স্থগিতের বিষয়টি ঢাকায় দেশটির দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে গত সোমবার জানিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিনই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে লুৎফে সিদ্দিকীকেই টোকিওতে পাঠানো হবে। এ অবস্থায় এফওসি ঠিক রাখতে তৎপর হন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত শিন-ইচি সাইদা। অবশেষে মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. নজরুল ইসলামকে দলনেতা করে টোকিওতে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। এফওসি স্থগিত না করে এ সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া যেত, এমনটা মনে করছেন কূটনীতিকেরা।
এফওসি বাতিলের বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না, আজকের পত্রিকা থেকে সোমবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রসচিব নিরুত্তর থাকেন।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে বিদায় নিতে হবে, সরকারের এ নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জেনে জসীম উদ্দিন তাঁর সম্মানজনক প্রস্থান নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন। নিয়মিত চাকরি শেষে আগামী বছর (২০২৬) ডিসেম্বরে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, জসীম উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা কানাডায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু অসুবিধা হলো এই দুই দেশেই নতুন মিশনপ্রধান হিসেবে মাত্র কয়েক মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে আসাদ আলম সিয়াম ও নাহিদা সোবহানকে। এমন অবস্থায় বিদায়ী পররাষ্ট্রসচিবের জন্য আর কী বিকল্প হতে পারে, তা দেখা হচ্ছে। তৌহিদ হোসেন জার্মানি সফরে আছেন, তিনি ফেরার পর পররাষ্ট্রসচিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর দপ্তর মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন এবং সরকারপ্রধানের কাজের যে বৈচিত্র্য ও গতি, তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল-লয় ঠিক রেখে চলতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহরণ, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর সামনে রেখে টোকিওতে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরামর্শমূলক সভা (এফওসি) নিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্তে বদল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় কদিন পরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বদলানোর আওয়াজ ওঠে। মুহাম্মদ ইউনূস অবশ্য বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক দেখভাল করতে উচ্চপর্যায়ে নতুন নতুন মুখ যুক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছেন। এর মধ্যেও কিছু ঝামেলা তৈরি হওয়ায় অবশেষে সরকার পররাষ্ট্রসচিব বদলানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
পররাষ্ট্রসচিব বদলানো হচ্ছে কি না—প্রশ্নটি গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকা থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমকে করা হলে তিনি নিরুত্তর থাকেন। সেদিনই একই প্রশ্ন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অন্য এক কর্মকর্তাকে করা হলে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রসচিব বদলানোর কথা অনেক দিন থেকেই হচ্ছে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে গত বছরের ৫ আগস্ট। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক মো. তৌহিদ হোসেনকে। তৌহিদ হোসেন ২০০৬ সালের শেষ দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ছিলেন। পরে তাঁকে পররাষ্ট্রসচিব করা হয়। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা কূটনৈতিক পরিসরে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ফরেন সেক্রেটারি’ হিসেবে পরিচিত।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তৌহিদ হোসেনের পছন্দেই পররাষ্ট্রসচিব করে চীন থেকে উড়িয়ে আনা হয় মো. জসীম উদ্দিনকে। তিনি তখন দেশটিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু নোবেল বিজয়ী ইউনূসের কাজের ধরন ও গতির সঙ্গে তাল মেলানোর ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই পিছিয়ে পড়ে। দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের নানা ঝামেলা সামাল দেওয়ার পাশাপাশি ইউনূসের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো হয়ে উঠছে না।
এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস নিজের আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত হিসেবে গত সেপ্টেম্বরের নিয়োগ দেন লুৎফে সিদ্দিকীকে। উপদেষ্টা পদমর্যাদায় নিয়োগ পাওয়া লুৎফে সিদ্দিকী বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা পেশাদারদের আন্তর্জাতিক সংস্থা সিএফএ ইনস্টিটিউটের অন্যতম সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে ড. খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৭৭ ব্যাচের কর্মকর্তা খলিলুর রহমান এর আগে কয়েক বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছিলেন। পরে তিনি লিয়েনে চলে যান জাতিসংঘের চাকরিতে। লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমান উভয়েই বসেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। এর বাইরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ ও বদলি তদারকির দায়িত্ব অন্য দুই উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও মাহফুজ আলমকে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
কূটনৈতিক কয়েকটি সূত্র জানায়, এত সব নিয়োগ সত্ত্বেও বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক ঠিকঠাক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা অসংগতি দেখতে পান প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর কার্যালয়। গত মার্চের মাঝামাঝি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর, একই মাসের শেষ দিকে ইউনূসের চীন সফর ও এপ্রিলের শুরুতে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের পাশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় অনেক অসংগতি বেশি করে চোখে পড়ে।
খলিলুর রহমানের অভিযোগ, রোহিঙ্গা বিষয়ে ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফরের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাননি তিনি। অনেক ক্ষেত্রে পুরোনো তথ্য দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
বিমসটেক সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কূটনীতিক বলেন, হাসিনার পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ব্যাংকক সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ। কিন্তু এই সাক্ষাৎটাই হবে কি হবে না, এমন একটা অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে গত ৩ এপ্রিল সেখানে নামে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। একই দিন ব্যাংককে নামা ভারতীয় প্রতিনিধিদলের গঠন থেকে বুঝতে পারার কথা ইউনূস ও মোদির সাক্ষাৎ হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগেও বিষয়টি হয়তো জানা যেত। ইউনূস এ বৈঠকের বিষয়ে বারবার জানতে চান। কিন্তু ভারতের তরফ থেকে ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় সরাসরি নিশ্চিত করার আগপর্যন্ত মোদি-ইউনূসের সাক্ষাতের বিষয়ে অন্ধকারে ছিল বাংলাদেশ।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ব্যাংককে নৈশভোজের সময় বাংলাদেশ ও মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে খলিলুর রহমানের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা বলেন। অন্যদিকে, ইউনূসের দলে উপযুক্ত লোক না পেয়ে পরদিন দুপুরে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নোট নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় এমন একজন কূটনীতিককে, যিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে যুক্ত নন। আবার কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত সুনামের ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে।
ব্যাংকক থেকে ইউনূস ঢাকা ফিরে খলিলুর রহমানের পদবি বদলে দেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয় তাঁকে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে উপদেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য গত ২০ এপ্রিল বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক কূটনীতিক সুফিউর রহমানকে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার পাশাপাশি তাঁকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়। সুফিউর জেনেভায় জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি, সুইজারল্যান্ড ও মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কায় হাইকমিশনার ছিলেন।
খলিলুর রহমান ও তৌহিদ হোসেন উভয়েই চেয়েছেন সুফিউর রহমান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বসবেন, দেখবেন রোহিঙ্গাসংক্রান্ত বিষয়াবলি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় চেয়েছে, করিতকর্মা ও দক্ষ হিসেবে পরিচিত এই কূটনীতিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আনতে মন্ত্রণালয়েই বসবেন।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমানের নিয়োগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ ও বদলি তদারকির দায়িত্ব অন্য দুই উপদেষ্টাকে দেওয়ার বিষয়টি তৌহিদ হোসেন শুরু থেকেই ভালোভাবে নেননি। রোহিঙ্গা বিষয় দেখতে সুফিউরকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি একমত ছিলেন। কিন্তু নিয়োগের আদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার উল্লেখ থাকায় বিগড়ে যান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর জন্য একটি কক্ষ আছে। সুফিউরের নিয়োগের আদেশ জারি হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁর বসার জন্য কক্ষটি প্রস্তুত করতে শুরু করেন। কিন্তু তৌহিদ হোসেনের ইঙ্গিতে জসীম উদ্দিনের নির্দেশে কক্ষ প্রস্তুত করার কাজ থেমে যায় বলে জানা যায়। সুফিউর গতকাল বুধবার পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে যোগ দেননি।
নতুন সরকারের সময়কার কাজের ধরন, প্রয়োজনীয়তা ও মুহাম্মদ ইউনূসের গতির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল মেলাতে পারছে না, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে গত সপ্তাহে তাঁর কার্যালয়ে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হয়। সেটাই করে যাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাধারণভাবে গতিশীল মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত। অন্য অনেক মন্ত্রণালয়ের চেয়ে কাজে ভালো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এসে এর কাজের গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ার বড় কারণ তৌহিদ হোসেন ও জসীম উদ্দিন উভয়েরই ধীরে চলার নীতি। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফাইল পড়ে থাকছে। অনেক সভায় পররাষ্ট্রসচিবেরই যোগ দেওয়া প্রয়োজন থাকলেও তিনি সভাগুলো এড়িয়ে চলছেন, অন্য কাউকে পাঠাচ্ছেন। সব মিলিয়ে সরকারের কাজকর্মে বেশ ঝামেলা হচ্ছে। ঢাকায় বিদেশি মিশন ও বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর কাজেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যে দক্ষ হিসেবে সুনাম নেই, এমন অনেকে পদপদবি বাগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় পররাষ্ট্রসচিবকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেক দিন ধরে বিবেচনায় রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এ মাসের শেষ দিকে জাপান সফরে যাবেন। ৩০ মে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক আছে। এর আগে আজ ১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বনির্ধারিত পরামর্শমূলক সভা (এফওসি) হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় প্রধান উপদেষ্টার সফরের প্রস্তুতি নিয়েও আলাপ হওয়ার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব এ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলমান পরিস্থিতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় পররাষ্ট্রসচিবের পরিবর্তে সচিব পর্যায়ের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে দলনেতা করার ইঙ্গিত দেওয়া হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রসচিব জাপানের সঙ্গে পরামর্শমূলক সভাটিই স্থগিত করে দেন। সভা স্থগিতের বিষয়টি ঢাকায় দেশটির দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে গত সোমবার জানিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিনই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে লুৎফে সিদ্দিকীকেই টোকিওতে পাঠানো হবে। এ অবস্থায় এফওসি ঠিক রাখতে তৎপর হন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত শিন-ইচি সাইদা। অবশেষে মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. নজরুল ইসলামকে দলনেতা করে টোকিওতে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। এফওসি স্থগিত না করে এ সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া যেত, এমনটা মনে করছেন কূটনীতিকেরা।
এফওসি বাতিলের বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না, আজকের পত্রিকা থেকে সোমবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রসচিব নিরুত্তর থাকেন।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে বিদায় নিতে হবে, সরকারের এ নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জেনে জসীম উদ্দিন তাঁর সম্মানজনক প্রস্থান নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন। নিয়মিত চাকরি শেষে আগামী বছর (২০২৬) ডিসেম্বরে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, জসীম উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা কানাডায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু অসুবিধা হলো এই দুই দেশেই নতুন মিশনপ্রধান হিসেবে মাত্র কয়েক মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে আসাদ আলম সিয়াম ও নাহিদা সোবহানকে। এমন অবস্থায় বিদায়ী পররাষ্ট্রসচিবের জন্য আর কী বিকল্প হতে পারে, তা দেখা হচ্ছে। তৌহিদ হোসেন জার্মানি সফরে আছেন, তিনি ফেরার পর পররাষ্ট্রসচিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে এদিন বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হতে বিএনপির আরও অনেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রাত ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে অন্তত ৮১টি আসনে দলটির একাধিক নেতা...
১৭ মিনিট আগে
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানকে দুই মাসের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরকে।
৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ২ হাজার ৫৮২ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৩ হাজার ৪০৭ জন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন এ তথ্য জানান।
৫ ঘণ্টা আগে
দেশের আর্থিক খাতের পাচারের অন্যতম হোতা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১৮ জনের নামে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দিয়া শিপিং লিমিটেড নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে এফএএস ফাইন্যান্
৬ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে এদিন বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হতে বিএনপির আরও অনেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রাত ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে অন্তত ৮১টি আসনে দলটির একাধিক নেতা প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
তবে শুধু বিএনপিতে নয়, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের দুই নেতা। আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী রোববার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের তারিখ ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তির তারিখ ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি এবং ভোট গ্রহণ ১২ ফেব্রুয়ারি।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ৩,৪০৭ জন। তাঁদের মধ্যে গতকাল শেষ দিন পর্যন্ত জমা পড়েছে ২ হাজার ৫৮২টি।
গত ৩ নভেম্বর প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বিএনপি। এক দিন পরই মাদারীপুর-১ আসনের ঘোষিত প্রার্থী কামাল জামাল মোল্লার নাম স্থগিত করা হয়। পরে ৪ ডিসেম্বর আরও ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। পরবর্তী ২৮ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা না করলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে মনোনয়ন নিশ্চিত হয়েছে ৮ জোট নেতার। এর বাইরে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন আরও ৫ নেতা।
আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়, ময়মনসিংহে ১১টি আসনের ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির ১৪ জন নেতা। ময়মনসিংহ-৪ ও ৫ বাদে বাকি সব আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির নেতারা। ময়মনসিংহ-১ আসনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের আসনেই দলের আরও দুই নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নোয়াখালীর ৬টি আসনের মধ্যে তিনটিতেই বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর বাইরে দলের অন্য নেতারাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে নোয়াখালী-২ আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানসহ ২ জন। নোয়াখালী-৫ আসনে দলের বাইরে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির নেতা প্রয়াত মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদ। নোয়াখালী-৬ আসনেও বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলের তিন নেতা। দলের সমর্থন না পেয়েও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক এমপি ফজলুল আজিম ও তাঁর স্ত্রী এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানবীর উদ্দিন রাজিব। তিনটি আসনে বিদ্রোহীরা মাঠে থাকলে বিএনপির জন্য নেতিবাচক ফল আনতে পারে।
নওগাঁর ৬ আসনের মধ্যে ৫টিতেই বিএনপির প্রার্থী আছেন একাধিক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৬টি আসনেও আছেন বিএনপির একাধিক প্রার্থী। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে সমর্থন দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকিকে বিএনপির ছাড় দেওয়া আসনে বিএনপির এক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নাটোরের ৪টি আসনের মধ্যে ২টিতে বিএনপির একাধিক নেতা প্রার্থী হতে চান। এর মধ্যে নাটোর-১ আসনে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে ছাড় দিলেও সেখানে বিএনপির নেতা হাসান মাহমুদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মানিকগঞ্জের ৩ আসনেই বিএনপির একাধিক নেতা প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি সংসদীয় আসনের একটিতে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির এক নেতা। দিনাজপুরের ৬ আসনের মধ্যে দুটিতে বিএনপির দুজন করে নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন (দিনাজপুর-২ ও ৫)।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম, জামালপুর, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, বরিশাল, বাগেরহাট, ফরিদপুর, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, শেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোর, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, নাটোর ও রংপুর, নরসিংদী, পাবনাসহ বিভিন্ন জায়গায় এক এবং একাধিক আসনে বিএনপির কয়েকজন করে নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জামায়াতে ইসলামী
এদিকে দলীয় প্রার্থী থাকার পরেও ময়মনসিংহ-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর জসিম উদ্দিন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার জামায়াতের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী হাসানুজ্জামান সজীব। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলটির নেতা জহুরুল ইসলাম আজিজি।
১৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী বদল
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ১৫ আসনে পরিবর্তন করেছে বিএনপি। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ঢাকা-১২ আসনে সাইফুল আলম নীরবের পরিবর্তে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মো. মাসুদুজ্জামান ভোটে অনীহা প্রকাশ করার পর সেখানে বিএনপির সাবেক মহানগর সভাপতি আবুল কালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। রাউজান (চট্টগ্রাম-৬) আসনে ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে গোলাম আকবর খন্দকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি আগে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য ফাঁকা রাখা হলেও অলি আহমদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেওয়ার পর সেখানে বিএনপি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিনকে প্রার্থী করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাহউদ্দিনের পরিবর্তে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ থেকে সরিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।
বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানের ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেখানে বিএনপির নেতা মীর শাহে আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে মান্না শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের বদলে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে প্রার্থী করা হয়। মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে এক্মি গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রবীণ নেতা মিজানুর রহমান সিনহার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ এবং মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান রতনের বদলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
ঝিনাইদহ-১ আসনে সদ্য পদত্যাগ করা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানকে প্রার্থী করা হয়েছে। নড়াইল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থীর পরিবর্তে জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
যশোর-১, যশোর-৫ ও যশোর-৬ আসনেও দলীয় ও জোটগত সমীকরণে নতুন প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামাল মোল্লার বদলে নাদিরা আক্তারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যশোর-৬ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শ্রাবণকে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে গণঅধিকার পরিষদ থেকে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া রাশেদ খান। এদিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তিনটি আসনেই বিকল্প প্রার্থী রেখেছে বিএনপি।
মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ২ হাজার ৫৮২টি
ইসি জানিয়েছে, রংপুর অঞ্চলের ৮ জেলার ৩৩টি আসন থেকে ৩৩৮টি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছিল, জমা পড়েছে ২৭৮টি। রাজশাহী অঞ্চলের ৮ জেলার ৩৯ আসন থেকে ৩২৯টি মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়েছিল, জমা পড়েছে ২৬০টি। বরিশাল অঞ্চলের ৬ জেলার ২১টি আসন থেকে বিতরণ করা হয় ২১২টি, জমা পড়েছে ১৬৬টি। ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলার ১৫টি আসন থেকে বিতরণ করা হয় ১৬৫টি, জমা পড়েছে ১৪২টি। খুলনা অঞ্চলের ১০ জেলার ৩৬ আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৩৫৮টি, জমা পড়েছে ২৭৬টি। ঢাকা অঞ্চলের ৬ জেলার ৪১টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে ৬৩৮টি, জমা পড়েছে ৪৪৪টি। ময়মনসিংহের ৬টি জেলার ৩৮টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৪০২টি, জমা পড়েছে ৩১১টি। সিলেটের ৪টি জেলার ১৯টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে ১৭৬টি, জমা পড়েছে ১৪৬টি। কুমিল্লার ৬ জেলার ৩৫টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৪৯৬টি, জমা পড়েছে ৩৬৫টি। চট্টগ্রামের ৫ জেলার ২৩টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ২৯৩টি, জমা পড়েছে ১৯৪টি মনোনয়নপত্র।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে এদিন বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হতে বিএনপির আরও অনেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রাত ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে অন্তত ৮১টি আসনে দলটির একাধিক নেতা প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
তবে শুধু বিএনপিতে নয়, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের দুই নেতা। আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী রোববার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের তারিখ ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তির তারিখ ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি এবং ভোট গ্রহণ ১২ ফেব্রুয়ারি।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ৩,৪০৭ জন। তাঁদের মধ্যে গতকাল শেষ দিন পর্যন্ত জমা পড়েছে ২ হাজার ৫৮২টি।
গত ৩ নভেম্বর প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বিএনপি। এক দিন পরই মাদারীপুর-১ আসনের ঘোষিত প্রার্থী কামাল জামাল মোল্লার নাম স্থগিত করা হয়। পরে ৪ ডিসেম্বর আরও ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। পরবর্তী ২৮ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা না করলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে মনোনয়ন নিশ্চিত হয়েছে ৮ জোট নেতার। এর বাইরে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন আরও ৫ নেতা।
আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়, ময়মনসিংহে ১১টি আসনের ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির ১৪ জন নেতা। ময়মনসিংহ-৪ ও ৫ বাদে বাকি সব আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির নেতারা। ময়মনসিংহ-১ আসনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের আসনেই দলের আরও দুই নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নোয়াখালীর ৬টি আসনের মধ্যে তিনটিতেই বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর বাইরে দলের অন্য নেতারাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে নোয়াখালী-২ আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানসহ ২ জন। নোয়াখালী-৫ আসনে দলের বাইরে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির নেতা প্রয়াত মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদ। নোয়াখালী-৬ আসনেও বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলের তিন নেতা। দলের সমর্থন না পেয়েও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক এমপি ফজলুল আজিম ও তাঁর স্ত্রী এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানবীর উদ্দিন রাজিব। তিনটি আসনে বিদ্রোহীরা মাঠে থাকলে বিএনপির জন্য নেতিবাচক ফল আনতে পারে।
নওগাঁর ৬ আসনের মধ্যে ৫টিতেই বিএনপির প্রার্থী আছেন একাধিক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৬টি আসনেও আছেন বিএনপির একাধিক প্রার্থী। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে সমর্থন দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকিকে বিএনপির ছাড় দেওয়া আসনে বিএনপির এক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নাটোরের ৪টি আসনের মধ্যে ২টিতে বিএনপির একাধিক নেতা প্রার্থী হতে চান। এর মধ্যে নাটোর-১ আসনে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে ছাড় দিলেও সেখানে বিএনপির নেতা হাসান মাহমুদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মানিকগঞ্জের ৩ আসনেই বিএনপির একাধিক নেতা প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি সংসদীয় আসনের একটিতে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির এক নেতা। দিনাজপুরের ৬ আসনের মধ্যে দুটিতে বিএনপির দুজন করে নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন (দিনাজপুর-২ ও ৫)।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম, জামালপুর, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, বরিশাল, বাগেরহাট, ফরিদপুর, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, শেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোর, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, নাটোর ও রংপুর, নরসিংদী, পাবনাসহ বিভিন্ন জায়গায় এক এবং একাধিক আসনে বিএনপির কয়েকজন করে নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জামায়াতে ইসলামী
এদিকে দলীয় প্রার্থী থাকার পরেও ময়মনসিংহ-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর জসিম উদ্দিন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার জামায়াতের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী হাসানুজ্জামান সজীব। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলটির নেতা জহুরুল ইসলাম আজিজি।
১৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী বদল
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ১৫ আসনে পরিবর্তন করেছে বিএনপি। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ঢাকা-১২ আসনে সাইফুল আলম নীরবের পরিবর্তে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মো. মাসুদুজ্জামান ভোটে অনীহা প্রকাশ করার পর সেখানে বিএনপির সাবেক মহানগর সভাপতি আবুল কালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। রাউজান (চট্টগ্রাম-৬) আসনে ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে গোলাম আকবর খন্দকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি আগে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য ফাঁকা রাখা হলেও অলি আহমদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেওয়ার পর সেখানে বিএনপি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিনকে প্রার্থী করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাহউদ্দিনের পরিবর্তে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ থেকে সরিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।
বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানের ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেখানে বিএনপির নেতা মীর শাহে আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে মান্না শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের বদলে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে প্রার্থী করা হয়। মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে এক্মি গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রবীণ নেতা মিজানুর রহমান সিনহার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ এবং মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান রতনের বদলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
ঝিনাইদহ-১ আসনে সদ্য পদত্যাগ করা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানকে প্রার্থী করা হয়েছে। নড়াইল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থীর পরিবর্তে জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
যশোর-১, যশোর-৫ ও যশোর-৬ আসনেও দলীয় ও জোটগত সমীকরণে নতুন প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামাল মোল্লার বদলে নাদিরা আক্তারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যশোর-৬ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শ্রাবণকে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে গণঅধিকার পরিষদ থেকে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া রাশেদ খান। এদিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তিনটি আসনেই বিকল্প প্রার্থী রেখেছে বিএনপি।
মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ২ হাজার ৫৮২টি
ইসি জানিয়েছে, রংপুর অঞ্চলের ৮ জেলার ৩৩টি আসন থেকে ৩৩৮টি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছিল, জমা পড়েছে ২৭৮টি। রাজশাহী অঞ্চলের ৮ জেলার ৩৯ আসন থেকে ৩২৯টি মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়েছিল, জমা পড়েছে ২৬০টি। বরিশাল অঞ্চলের ৬ জেলার ২১টি আসন থেকে বিতরণ করা হয় ২১২টি, জমা পড়েছে ১৬৬টি। ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলার ১৫টি আসন থেকে বিতরণ করা হয় ১৬৫টি, জমা পড়েছে ১৪২টি। খুলনা অঞ্চলের ১০ জেলার ৩৬ আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৩৫৮টি, জমা পড়েছে ২৭৬টি। ঢাকা অঞ্চলের ৬ জেলার ৪১টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে ৬৩৮টি, জমা পড়েছে ৪৪৪টি। ময়মনসিংহের ৬টি জেলার ৩৮টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৪০২টি, জমা পড়েছে ৩১১টি। সিলেটের ৪টি জেলার ১৯টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে ১৭৬টি, জমা পড়েছে ১৪৬টি। কুমিল্লার ৬ জেলার ৩৫টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৪৯৬টি, জমা পড়েছে ৩৬৫টি। চট্টগ্রামের ৫ জেলার ২৩টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ২৯৩টি, জমা পড়েছে ১৯৪টি মনোনয়নপত্র।

সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর দপ্তর মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন এবং সরকারপ্রধানের কাজের যে বৈচিত্র্য ও গতি, তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল-লয় ঠিক রেখে চলতে পারছে না...
১৫ মে ২০২৫
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানকে দুই মাসের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরকে।
৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ২ হাজার ৫৮২ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৩ হাজার ৪০৭ জন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন এ তথ্য জানান।
৫ ঘণ্টা আগে
দেশের আর্থিক খাতের পাচারের অন্যতম হোতা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১৮ জনের নামে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দিয়া শিপিং লিমিটেড নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে এফএএস ফাইন্যান্
৬ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানকে দুই মাসের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরকে।
২৪ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সামিউল আমিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী মো. সাইদুর রহমানকে তাঁর অবসরোত্তর ছুটি ও তৎসংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থগিত এবং অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা সরকারি সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো।
একই আইনের সমধারায় দুই মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফরও। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে অধ্যাপক ডা. মো. শাদরুল আলমকে। এত দিন তিনি সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের (সিএমই) পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আজ সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের উপসচিব দূর-রে শাহওয়াজ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তাঁকে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানকে দুই মাসের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরকে।
২৪ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সামিউল আমিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী মো. সাইদুর রহমানকে তাঁর অবসরোত্তর ছুটি ও তৎসংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থগিত এবং অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা সরকারি সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো।
একই আইনের সমধারায় দুই মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফরও। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে অধ্যাপক ডা. মো. শাদরুল আলমকে। এত দিন তিনি সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের (সিএমই) পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আজ সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের উপসচিব দূর-রে শাহওয়াজ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তাঁকে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে।

সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর দপ্তর মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন এবং সরকারপ্রধানের কাজের যে বৈচিত্র্য ও গতি, তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল-লয় ঠিক রেখে চলতে পারছে না...
১৫ মে ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে এদিন বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হতে বিএনপির আরও অনেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রাত ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে অন্তত ৮১টি আসনে দলটির একাধিক নেতা...
১৭ মিনিট আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ২ হাজার ৫৮২ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৩ হাজার ৪০৭ জন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন এ তথ্য জানান।
৫ ঘণ্টা আগে
দেশের আর্থিক খাতের পাচারের অন্যতম হোতা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১৮ জনের নামে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দিয়া শিপিং লিমিটেড নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে এফএএস ফাইন্যান্
৬ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ২ হাজার ৫৮২ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৩ হাজার ৪০৭ জন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন এ তথ্য জানান।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক জানান, রংপুর অঞ্চলের ৮ জেলার ৩৩টি আসন থেকে ৩৩৮টি মনোনয়ন বিতরণ করা হয়েছিল। জমা পড়েছে ২৭৮টি। রাজশাহী অঞ্চলের ৮ জেলার ৩৯ আসন থেকে ৩২৯টি মনোনয়ন বিতরণ করা হয়েছিল। জমা পড়েছে ২৬০টি। বরিশাল অঞ্চলের ৬ জেলার ২১টি আসন থেকে বিতরণ করা হয় ২১২টি, জমা পড়েছে ১৬৬টি। ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলার ১৫টি আসন থেকে বিতরণ করা হয় ১৬৫টি, জমা পড়েছে ১৪২টি।
খুলনা অঞ্চলের ১০ জেলার ৩৬ আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৩৫৮টি, জমা পড়েছে ২৭৬টি। ঢাকা অঞ্চলের ৬ জেলার ৪১টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে ৬৩৮টি, জমা পড়েছে ৪৪৪টি।
ময়মনসিংহের ৬টি জেলার ৩৮টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৪০২টি, জমা পড়েছে ৩১১টি। সিলেটের ৪ জেলার ১৯টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে ১৭৬টি, জমা পড়েছে ১৪৬টি। কুমিল্লার ৬ জেলার ৩৫টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৪৯৬টি, জমা পড়েছে ৩৬৫টি। চট্টগ্রামের ৫ জেলার ২৩টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ২৯৩টি, জমা পড়েছে ১৯৪টি।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত, রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল করার সময় ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি, আপিল নিষ্পত্তি ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি, নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগপর্যন্ত, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
আর ভোট গ্রহণ করা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। সেদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ২ হাজার ৫৮২ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৩ হাজার ৪০৭ জন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন এ তথ্য জানান।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক জানান, রংপুর অঞ্চলের ৮ জেলার ৩৩টি আসন থেকে ৩৩৮টি মনোনয়ন বিতরণ করা হয়েছিল। জমা পড়েছে ২৭৮টি। রাজশাহী অঞ্চলের ৮ জেলার ৩৯ আসন থেকে ৩২৯টি মনোনয়ন বিতরণ করা হয়েছিল। জমা পড়েছে ২৬০টি। বরিশাল অঞ্চলের ৬ জেলার ২১টি আসন থেকে বিতরণ করা হয় ২১২টি, জমা পড়েছে ১৬৬টি। ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলার ১৫টি আসন থেকে বিতরণ করা হয় ১৬৫টি, জমা পড়েছে ১৪২টি।
খুলনা অঞ্চলের ১০ জেলার ৩৬ আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৩৫৮টি, জমা পড়েছে ২৭৬টি। ঢাকা অঞ্চলের ৬ জেলার ৪১টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে ৬৩৮টি, জমা পড়েছে ৪৪৪টি।
ময়মনসিংহের ৬টি জেলার ৩৮টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৪০২টি, জমা পড়েছে ৩১১টি। সিলেটের ৪ জেলার ১৯টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে ১৭৬টি, জমা পড়েছে ১৪৬টি। কুমিল্লার ৬ জেলার ৩৫টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৪৯৬টি, জমা পড়েছে ৩৬৫টি। চট্টগ্রামের ৫ জেলার ২৩টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ২৯৩টি, জমা পড়েছে ১৯৪টি।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত, রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল করার সময় ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি, আপিল নিষ্পত্তি ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি, নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগপর্যন্ত, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
আর ভোট গ্রহণ করা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। সেদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে।

সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর দপ্তর মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন এবং সরকারপ্রধানের কাজের যে বৈচিত্র্য ও গতি, তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল-লয় ঠিক রেখে চলতে পারছে না...
১৫ মে ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে এদিন বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হতে বিএনপির আরও অনেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রাত ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে অন্তত ৮১টি আসনে দলটির একাধিক নেতা...
১৭ মিনিট আগে
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানকে দুই মাসের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরকে।
৩ ঘণ্টা আগে
দেশের আর্থিক খাতের পাচারের অন্যতম হোতা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১৮ জনের নামে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দিয়া শিপিং লিমিটেড নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে এফএএস ফাইন্যান্
৬ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশের আর্থিক খাতের পাচারের অন্যতম হোতা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১৮ জনের নামে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দিয়া শিপিং লিমিটেড নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় এই চার্জশিট অনুমোদন করে কমিশন।
আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক তানজির আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ২০২২ সালের ১৯ মে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন।
মামলার আসামিরা হলেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার, দিয়া শিপিং লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিবপ্রসাদ ব্যানার্জী, পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জী, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান এম এ হাফিজ, সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক অরুণ কুমার কুণ্ডু, অঞ্জন কুমার রায়, মো. মোস্তাইন বিল্লাহ, উজ্জল কুমার নন্দী, সত্য গোপাল পোদ্দার এবং এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ার।
তদন্তে আরও ছয়জনের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায় দুদক। তাঁরা হলেন ইটা অ্যান্ড টাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নওশেরুল ইসলাম, দিয়া অয়েল লিমিটেডের এমডি বাসুদেব ব্যানার্জী, পরিচালক পূজা ব্যানার্জী, এমএসটি মেরিন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেডার্স লিমিটেডের পরিচালক অমল চন্দ্র দাস, মমতাজ বেগম এবং বিডিএস অ্যাডজাস্টার্সের চিফ এক্সিকিউটিভ ইবনে মোফাজ্জল বারকি।
আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে অবৈধ উপায়ে ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে ঋণ হিসেবে ৪৪ কোটি টাকা গ্রহণ করে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান মামলার অন্যতম আসামি এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক এম ডি রাসেল শাহরিয়ারকে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে এই মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠায়।
কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগরে গা ঢাকা দিয়েছিলেন বাংলাদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা পি কে হালদার। তিনি শিবশংকর হালদার নামে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন।
২০২২ সালের ১৪ মে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে ধরা পড়েন তিনি। তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরও পাঁচজন। পরে প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদারসহ ছয়জনকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। বর্তমানে পি কে হালদার ভারতের কারাগারে রয়েছেন।

দেশের আর্থিক খাতের পাচারের অন্যতম হোতা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১৮ জনের নামে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দিয়া শিপিং লিমিটেড নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় এই চার্জশিট অনুমোদন করে কমিশন।
আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক তানজির আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ২০২২ সালের ১৯ মে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন।
মামলার আসামিরা হলেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার, দিয়া শিপিং লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিবপ্রসাদ ব্যানার্জী, পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জী, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান এম এ হাফিজ, সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক অরুণ কুমার কুণ্ডু, অঞ্জন কুমার রায়, মো. মোস্তাইন বিল্লাহ, উজ্জল কুমার নন্দী, সত্য গোপাল পোদ্দার এবং এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ার।
তদন্তে আরও ছয়জনের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায় দুদক। তাঁরা হলেন ইটা অ্যান্ড টাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নওশেরুল ইসলাম, দিয়া অয়েল লিমিটেডের এমডি বাসুদেব ব্যানার্জী, পরিচালক পূজা ব্যানার্জী, এমএসটি মেরিন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেডার্স লিমিটেডের পরিচালক অমল চন্দ্র দাস, মমতাজ বেগম এবং বিডিএস অ্যাডজাস্টার্সের চিফ এক্সিকিউটিভ ইবনে মোফাজ্জল বারকি।
আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে অবৈধ উপায়ে ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে ঋণ হিসেবে ৪৪ কোটি টাকা গ্রহণ করে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান মামলার অন্যতম আসামি এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক এম ডি রাসেল শাহরিয়ারকে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে এই মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠায়।
কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগরে গা ঢাকা দিয়েছিলেন বাংলাদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা পি কে হালদার। তিনি শিবশংকর হালদার নামে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন।
২০২২ সালের ১৪ মে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে ধরা পড়েন তিনি। তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরও পাঁচজন। পরে প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদারসহ ছয়জনকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। বর্তমানে পি কে হালদার ভারতের কারাগারে রয়েছেন।

সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের নানা দিক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর দপ্তর মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন এবং সরকারপ্রধানের কাজের যে বৈচিত্র্য ও গতি, তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাল-লয় ঠিক রেখে চলতে পারছে না...
১৫ মে ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে এদিন বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হতে বিএনপির আরও অনেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রাত ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে অন্তত ৮১টি আসনে দলটির একাধিক নেতা...
১৭ মিনিট আগে
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানকে দুই মাসের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরকে।
৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ২ হাজার ৫৮২ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৩ হাজার ৪০৭ জন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন এ তথ্য জানান।
৫ ঘণ্টা আগে