Ajker Patrika

মিয়ানমারের লোক ঢুকছে টেকনাফ সীমান্ত দিয়েও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও কক্সবাজার প্রতিনিধি
মিয়ানমারের লোক ঢুকছে টেকনাফ সীমান্ত দিয়েও

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়ার পর টেকনাফের সঙ্গে লাগোয়া মিয়ানমারের সীমান্তে এবার সংঘাত ছড়িয়েছে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘাতের জেরে গতকাল বুধবার টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত দিয়ে বিজিপির আরও ৬৫ সদস্য এসেছেন। এ নিয়ে ৩২৯ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাঁদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানো হবে তাঁদের।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সংঘর্ষ শিন রাজ্যেও ছড়িয়েছে। সেখানে জান্তা সরকারের বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি (এএ)। মিয়ানমারের রাখাইনে এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে নিজ নাগরিকদের ফেরার আহ্বান জানিয়েছে ভারত। এ ছাড়া দেশটির সঙ্গে সীমান্তে বেড়া দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

এক সপ্তাহ ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, তমব্রু, ঘুমধুম, উখিয়ার পালংখালী, থাইংখালী, রহমতেরবিল সীমান্তে গোলাগুলি এবং মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল থেকে টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি শুরু হয়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেখানকার হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, গোলাগুলি শব্দে বাসিন্দারা সীমান্ত এলাকার ঘরবাড়ি ছেড়ে ওপরের দিকে চলে আসে। এর কিছুক্ষণ পর উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে বিজিপির ৬৫ জন বাংলাদেশে ঢোকেন। বিজিবি তাঁদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে যায়। বিজিবির সদর দপ্তর জানিয়েছে, এ নিয়ে বিজিপির ৩২৯ জন সদস্য বাংলাদেশে ঢুকেছে। 

সীমান্ত পরিদর্শনে বিজিবির প্রধান
এদিকে গতকাল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। সেখানে সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের খোঁজখবর নেন এবং তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিজিপির সদস্যদের ফেরত দেওয়ার জন্য দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পত্রালাপ চলছে। মানবিক কারণে তাঁদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের ফেরত পাঠানো হবে।

সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণের বিষয়ে আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা কোস্ট গার্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের না যাওয়ার জন্য নিরুৎসাহিত করব। নৌযান চলাচলেও নিষেধ করা হয়েছে। আর কয়েকটি দিন গেলে আমরা বলতে পারব, আসলে কী ঘটছে।’ 

সীমান্তে এখনো আতঙ্ক
এদিকে গোলাগুলি কমে আসার পর সীমান্তে অল্প কয়েকটি পরিবার বাড়ি ফিরেছে। তবে আতঙ্ক এখনো আছে। উখিয়ার দক্ষিণ রহমতবিলের বাসিন্দা পারভিন আক্তার বলেন, ‘গোলাগুলি শুরুর পর, বালুখালী ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। সেখানেই ছিলাম। এখনো কাপড়চোপড় গুছিয়ে রেখেছি। কোনো ঝামেলা হলে আবার চলে যাব।’

এদিকে ঘুমধুম, তমব্রুসহ নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের আতঙ্কগ্রস্ত ১৩ গ্রামের হাজারো মানুষ এখনো বাড়িছাড়া। মঙ্গলবার দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে তমব্রু, ঘুমধুম ও নাইক্ষ্যংছড়ির ২৭ পরিবারের ১৩০ জন বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছিলেন। গতকাল বিকেলে সেখানে গিয়ে জানা যায়, তাঁরা চলে গেছেন। তবে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ঘুমধুম সীমান্তে রবি ও সোমবারের রকেট লঞ্চার-মর্টারশেলের আঘাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর ঘুমধুম, তমব্রুসহ সীমান্তের লোকজন ভয়ে-আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে যায়। কিছু মানুষ নিজেদের সম্পদ রক্ষায় বাড়ি ফিরে গেছেন।

তমব্রু পশ্চিমকুলে বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি ভয়ে ভয়ে বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন। তাঁর গ্রামে অন্তত ২ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাড়ি ফিরেছে। বাকিরা আতঙ্কের কারণে আসছে না। 

বিজিপির সদস্যরা ফেরত যাচ্ছেন
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘর্ষের সময় বিজিপির যেসব সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন, তাঁদের সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ে গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। 
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, মিয়ানমার বাহিনীর সদস্যদের কীভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সেটি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভালো হতো যদি তাঁদের আকাশপথে ফেরত পাঠানো যেত। তবে মিয়ানমার তাঁদের সমুদ্রপথে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ভাবছে।

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩২৯ জন অনুপ্রবেশ করেছেন, এমন তথ্য দিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আরও শ খানেক আসতে পারেন। তাঁদের সবাইকে নিরাপদে ও দ্রুততম সময়ে পাঠানোটাই সরকারের অগ্রাধিকার। 

শিনে হেলিকপ্টার ভূপাতিত
এদিকে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতীর অনলাইন সংস্করণে গতকাল এক খবরে বলা হয়, আরাকান আর্মির সদস্যরা শিন রাজ্যের পালেতোয়া টাউনশিপে জান্তা বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার তথ্য নিশ্চিত করেছে। এই এলাকাও বাংলাদেশের সঙ্গে লাগোয়া। সেখানে গত বছর থেকে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে আরাকান আর্মি। 

নাগরিকদের সতর্ক করল ভারত
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার বলেছে, যেসব ভারতীয় এখনো রাখাইনে রয়েছেন, তাঁদের শিগগির ওই এলাকা ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আপাতত রাখাইন ভ্রমণ না করার পরামর্শও দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধির জয়সোয়াল বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। এর প্রভাব সরাসরি আমাদের ওপর পড়ছে।’

এদিকে ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় জানিয়েছেন, ভারত-মিয়ানমারের ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের পুরো অংশে এই বেড়া নির্মাণ করা হবে।

টুইটে অমিত শাহ বলেন, ‘মোদি সরকার দুর্ভেদ্য সীমান্ত নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকার পুরো ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও ভালো নজরদারির সুবিধার্থে সীমান্তে একটি টহল ট্র্যাক তৈরি করা হবে।’

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টুইটে আরও বলেছেন, ‘মোট সীমান্ত দৈর্ঘ্যের মধ্যে মণিপুরের মোরেতে ১০ কিলোমিটার সীমান্তে এরই মধ্যে বেড়া দেওয়া হয়েছে। হাইব্রিড সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম (এইচএসএস) ব্যবহার করে বেড়া তৈরির দুটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের দিল্লি ও আগরতলা মিশন থেকে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনের সামনে এ-সংক্রান্ত নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

দিল্লিতে বাংলাদেশ ভবনের সামনে হট্টগোল ও হুমকির অভিযোগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আর উত্তেজনার মধ্যে সাময়িকভাবে ভিসা কার্যক্রম বন্ধের এ খবর এল।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় দুটি পত্রিকা অফিস ও ছায়ানট ভবনে হামলা হয়। সেই রাতে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে একদল মানুষ বিক্ষোভ দেখায়, সে সময় মিশনে ঢিলও ছোড়া হয়।

এরপর চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক) কার্যক্রম গতকাল রোববার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভালুকার একটি কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তাঁর লাশ গাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর শনিবার রাতে দিল্লিতে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’ নামের এক সংগঠনের ২০-২৫ জন সদস্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার মো. ফয়সাল মাহমুদকে উদ্ধৃত করে গতকাল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে কিছু কথাবার্তা (তারা) বলছে—হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে হবে; হাইকমিশনারকে ধরো। পরে তারা মেইন গেটের সামনে এসে কিছুক্ষণ চিৎকার করে। তারা চিৎকার করে চলে গেছে—এতটুকুই আমি জানি।’

সেই খবরের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘এ ঘটনা নিয়ে আমরা বাংলাদেশি কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা লক্ষ করেছি। বাস্তবতা হলো, ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ২০-২৫ জন যুবক জড়ো হয়েছিল। ওই যুবকেরা ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্লোগান দিচ্ছিল এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছিল।’

মুখপাত্র স্পষ্ট করে বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা হাইকমিশনের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করেনি বা কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করেনি।’

সেখানে মোতায়েন থাকা পুলিশ সদস্যরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ জনসমক্ষে পাওয়া যাচ্ছে।

বিবৃতিতে রণধীর জয়সওয়াল আরও উল্লেখ করেন, ‘ভারত বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে। আমাদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে ভারতের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। আমরা দীপু চন্দ্র দাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছি।’

রণধীর আরও বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভারতের মাটিতে অবস্থিত সব বিদেশি মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘নয়াদিল্লি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

তবে ভারতের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, দিল্লিতে কূটনৈতিক এলাকার গভীরে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের সামনে ‘হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনের বিক্ষোভকারীদের আসার সুযোগ করে দেওয়া’ হয়েছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারতীয় প্রেসনোটে যে কথা বলা হয়েছে, এটা আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করি এ জন্য যে, বিষয়টি যত সহজভাবে উত্থাপন করা হয়েছে, আসলে অত সহজ না।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের মিশন, বাংলাদেশের মিশন কূটনৈতিক এলাকার গভীরে অবস্থিত। এমন না যে এটা বাইরে কোনো জায়গায় অথবা কূটনৈতিক এলাকার শুরুতে, তা কিন্তু না। তারা বলছে, ২০-২৫ জনের একটা দল, হতে পারে। হয়তো একটু কমবেশি হতে পারে সংখ্যাটা। কিন্তু সেটা কথা না। একটা হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনের ২৫ বা ৩০ জনের একটা দল এত দূর পর্যন্ত আসতে পারবে কেন, একটা স্যানিটাইজড এলাকার মধ্যে? তার মানে তাদের আসতে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে হোক তারা এসেছে, আসতে পারার কথা না কিন্তু নরমালি।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘সেখানে তারা দাঁড়িয়ে যে শুধু ওই হিন্দু নাগরিকের হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিয়ে চলে গেছে, তা না। তারা আরও অনেক কিছু বলেছে, সেটা আমরা জানি এবং আমাদের পত্রপত্রিকায় যে রিপোর্টটা আসছে, সেটাকে যে তারা বলতেছে যে ‘মিসলিডিং’, এটাও সত্য না। আমাদের পত্রপত্রিকায় মোটামুটি সঠিক রিপোর্টই এসেছে, যেটুকু আমরা তথ্য পেয়েছি। আমার কাছে প্রমাণ নেই যে তাকে (হাইকমিশনার) হত্যার হুমকি দিয়েছে, কিন্তু আমরা এটাও শুনেছি যে, তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সেটা কেউ একজন কথা বলল, সেটার মধ্যে হতে পারে।’

কূটনৈতিক এলাকার এত ভেতরে বিক্ষোভকারীরা কীভাবে যেতে পারল, সেই প্রশ্ন তুলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সাধারণত কোনো প্রটেস্ট গ্রুপ যখন যায়, সেটা আগে থেকে ইনফর্ম করা হয় এবং পুলিশ তাদের একটু দূরে এক জায়গায় আটকে দেয়। কখনো যদি কোনো কাগজপত্র দেওয়ার থাকে, দুজন এসে দিয়ে যায়। এটা হলো নর্ম। সবখানে এটা হয়, আমাদের দেশেও হয়।’

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে আহ্বান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সে বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘একজন বাংলাদেশি নাগরিক নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। এটার সঙ্গে মাইনরিটিজের নিরাপত্তাকে একসঙ্গে করে ফেলার কোনো মানে হয় না। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, যাঁকে হত্যা করা হয়েছে এবং অবিলম্বে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে অ্যাকশন নিয়েছে। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন যে, বেশ কিছু অ্যারেস্ট করা হয়েছে। তো, এ ধরনের ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশে ঘটে, তা নয়; এই অঞ্চলের সব দেশেই ঘটে এবং প্রতি দেশের দায়িত্ব হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া, বাংলাদেশ নিচ্ছে। অন্যদেরও উচিত সে রকম ব্যবস্থা নেওয়া। কাজেই, এটা গ্রহণযোগ্য না, যেভাবে এটাকে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ হাইকমিশন এলাকায় নিরাপত্তার নিয়মকানুন সঠিকভাবে ‘রক্ষা করা হয়নি’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, নরমালি সিকিউরিটির যে নিয়মকানুন আছে, সেটা এখানে ঠিকমতো পালিত হয়নি। তারা বলছে যে, আমাদের সব মিশনের নিরাপত্তা দেখছে, আমরা সেটা নোট করেছি।’

কর্মরত কূটনীতিবিদদের নিরাপত্তার খাতিরে বাংলাদেশ মিশনকে সংকুচিত করার কথা সরকার ভাববে কি না, সেই প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি তেমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাহলে আমরা সেটা করব। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা যেটা দেখছি, আমরা এখনো ভরসা রাখছি, ভারত যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে।’

বাংলাদেশ মিশনের নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি ছিল কি-না—এমন প্রশ্নে একসময় দিল্লি মিশনে কাজ করা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাপারটা কিন্তু শুধু যে তারা এখানে এসেছে, দুটো স্লোগান দিয়েছে, তা না। এর ভেতরে কিন্তু একটা পরিবার বাস করে; হাইকমিশনার ও তার পরিবার কিন্তু ওখানে বাস করে। তারা কিন্তু থ্রেটেনড ফিল করেছে এবং তারা কিন্তু আতঙ্কিত হয়েছে, কারণ পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। দুজন গার্ড ছিল, তারা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ এ নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আদালতে হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণের নির্দেশ চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদি (৩৩) ১২ ডিসেম্বর পল্টন থানাধীন বিজয়নগর এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে আহত হন। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লাশ দেশে আনা হয় এবং ২০ ডিসেম্বর লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করা হয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাশাত জাবীন ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন।

মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে ডিএনএ নমুনা সিআইডির প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ জন্য আদালতের নির্দেশ প্রয়োজন।

শুনানি শেষে আদালত নির্দেশ দেন। এ ছাড়া প্রোফাইলিং ও সংরক্ষণ কার্য সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের চিফ ডিএনএ অ্যানালিস্ট ফরেনসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

হাদিকে গুলি করার পর ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। হাদির মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোটারদের উৎসাহিত করতে জাতিসংঘের উদ্যোগে নতুন ওয়েবসাইট চালু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ, নারী, প্রান্তিক ভোটারসহ সব নাগরিকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। ‘ফিউচার বাংলাদেশ ইউ ওয়ান্ট’ নামক এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করা হবে।

আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও জোরদার এবং নাগরিক অংশগ্রহণকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। ওয়েবসাইটটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো—তরুণ প্রজন্মসহ সব বাংলাদেশিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে উৎসাহিত করা। এই প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধনের মাধ্যমে নাগরিকেরা তাঁদের প্রত্যাশিত ‘ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ সম্পর্কে সরাসরি মতামত প্রকাশ করতে পারবেন।

ওয়েবসাইটটি থেকে গণতন্ত্র, সুশাসন, দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব ও নির্বাচনী অংশগ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ থাকবে।

নির্বাচন কমিশন ও জাতিসংঘ বিশ্বাস করে, একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে তুলতে সচেতন নাগরিক অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সে লক্ষ্যেই এই ওয়েবসাইটে নাগরিক দায়িত্ব, ভোটাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বার্তা অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক হিসেবে কাজ করবে। এটি দেশের সব স্তরের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত, যা ভবিষ্যতে ইতিবাচক সংলাপ ও দায়িত্ববোধ বিকাশে সহায়ক হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আনতে চলবে ১০টি বিশেষ ট্রেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪০
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহ থেকে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলটির নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় আনার জন্য বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দের আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাহিদার ভিত্তিতে ১০টি রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে।

চাহিদার ভিত্তিতে বিশেষ ট্রেন চলবে নিম্নোক্ত রুটগুলোতে—কক্সবাজার–ঢাকা–কক্সবাজার, জামালপুর–ময়মনসিংহ–ঢাকা–জামালপুর, টাঙ্গাইল–ঢাকা–টাঙ্গাইল, ভৈরববাজার–নরসিংদী–ঢাকা–নরসিংদী–ভৈরববাজার, জয়দেবপুর–ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট–জয়দেবপুর (গাজীপুর), পঞ্চগড়–ঢাকা–পঞ্চগড়, খুলনা–ঢাকা–খুলনা, চাটমোহর–ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট–চাটমোহর, রাজশাহী–ঢাকা–রাজশাহী এবং যশোর–ঢাকা–যশোর।

বিশেষ ট্রেন পরিচালনার কারণে স্বল্প দূরত্বের তিনটি ট্রেনের চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হবে। ট্রেনগুলো হলো—রাজবাড়ী কমিউটার (রাজবাড়ী–পোড়াদহ), ঢালারচর এক্সপ্রেস (পাবনা–রাজশাহী) এবং রোহনপুর কমিউটার (রোহনপুর–রাজশাহী)। ২৫ ডিসেম্বর এসব ট্রেনের যাত্রা এক দিনের জন্য স্থগিত থাকবে।

এতে সংশ্লিষ্ট রুটের যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বিশেষ ট্রেন পরিচালনা ও অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের আনুমানিক ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হবে।

স্পেশাল ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন আচরণ বিধিমালা–২০২৫ কঠোরভাবে প্রতিপালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত