Ajker Patrika

শিশু দেখলে কিছু মানুষ কেন ‘আগ্রাসী’ হয়ে ওঠে

আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ০৬
শিশু দেখলে কিছু মানুষ কেন ‘আগ্রাসী’ হয়ে ওঠে

শিশুদের আদর–স্নেহ করা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তবে স্নেহের আতিশয্যে অনেকে বাড়াবাড়িও করে ফেলেন। শিশুকে দেখলে দৌড়ে গিয়ে কোলে নেওয়া  বা চুমু দেওয়া পর্যন্ত হয়তো স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ধরা যেতে পারে। কিন্তু অনেকে স্নেহ প্রকাশে বেশ আগ্রাসী ভাব দেখান। যেমন—   শক্ত করে চেপে ধরা বা চিমটি কাটা। 

শুধু মানবশিশু নয়, যে কোনো ছোট প্রাণীর প্রতিই মানুষের এমন আচরণ লক্ষ্য করা হয়। সৌন্দর্যের প্রতি চিরায়ত আকর্ষণের কারণেই মানুষের মধ্যে এ প্রবণতা দেখা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েকটি শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে মানুষ সৌন্দর্যের নির্ধারক বলে মনে করে। প্রাণী আচরণবিদ কোনরাড লরেঞ্জ ১৯৪৩ সালে সৌন্দর্যের এ ধারণাকে ‘কাইন্ডশেনস্কিমা’ বা ‘বেবি স্কিমা’ বলে আখ্যায়িত করেন।

এ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—   গোলগাল কপোল, বড় চোখ, উঁচু কপাল, ছোট চিবুক আর ছোট নাক। এ ধরনের শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে কোনো সুন্দর প্রাণীর দিকে তাকালে আমাদের হৃদয় উষ্ণ হয়, ভালোবাসা ও আনন্দের মতো অনুভূতি হয়।    

কোনো প্রাণীর মধ্যে এই ‘বেবি স্কিমা’ বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে মানুষের মধ্যে ওই প্রাণীর কাছাকাছি যাওয়ার বা মানবশিশুর সঙ্গে মা যেমন আচরণ করেন তেমন আচরণ করার প্রবণতা দেখা দেয়। এর কারণে মানুষ কুকুর বিড়াল পুষতে ভালোবাসে। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, সৌন্দর্য কীভাবে ও কেন আমাদের ওপর এত প্রভাব ফেলে। সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের মুগ্ধতার প্রধান দুটি কারণের কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা—   

১. সৌন্দর্য আবেগের সৃষ্টি করে
২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, ‘বেবি স্কিমা’ আমাদের মধ্যে একধরনের আবেগীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। একে বলে ‘কামা মুতা’। সংস্কৃত এ শব্দটিতে বোঝায়— ভালোবাসা এবং উষ্ণতা, স্মৃতিকাতরতা এমনকি দেশাত্মবোধ অনুভব করা। গবেষকেরা বলছেন, ‘কামা মুতা’ প্রতিক্রিয়া বিশেষত ঘটে যখন কোনো ‘সুন্দর প্রাণী’ স্নেহের উদ্রেক করে।

গবেষণা আরও বলছে, সুন্দর কোনো বস্তুর দিকে তাকালে আমাদের মধ্যে জটিল এবং প্রায়ই পরস্পর–বিরোধী আবেগের সৃষ্টি হয়। গবেষকেরা বলছেন, আমরা অতিরিক্ত সুন্দর কিছু দেখলে ‘দ্বিরূপ অভিব্যক্তি’ প্রকাশ করি। অর্থাৎ কোনো ইতিবাচক আবেগের প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানো। যেমন—আনন্দে কান্না করতে চাওয়া বা চিৎকার করতে চাওয়া।  

সুন্দর বস্তুগুলো আমাদের মধ্যে তীব্র ইতিবাচক আবেগের সৃষ্টি করে। এর কারণে নেতিবাচক কোনো অনুভূতি ছাড়াই কখনো কখনো আমরা নিয়ন্ত্রণহীন বা অস্থিরতা অনুভব করতে পারি।   

২. সৌন্দর্য তীব্র আচরণগত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে
২০১২ সালের এক গবেষণায় ‘কাওয়াই’–এর প্রভাব তুলে ধরা হয়। জাপানি শব্দ কাওয়াই মানে হলো ‘সুন্দর’। এ গবেষণা অনুসারে, কুকুর ছানা ও বিড়াল ছানার মতো কোনো প্রাণীর ছানার সুন্দর ছবি দেখলে গভীর মনযোগ প্রয়োজন এমন কাজে কর্মদক্ষতা বাড়ে।   

সহজ কথায় বলতে গেলে, সুন্দর কিছু দেখলে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক আবেগ ও দৃঢ় মনযোগের তৈরি হয়। এর পরে আমরা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করি, যৌক্তিক ও সূক্ষ্ম চিন্তা করি এবং প্রয়োজনের সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

দ্বিতীয় আচরণগত প্রভাবটি হলো, অনেকের মধ্যে সৌন্দর্যের প্রতি আগ্রাসী মনোভাব দেখা দিতে পারে। এর কারণে মানুষ প্রকৃতপক্ষেই সুন্দর জিনিসের ক্ষতি করতে না চাইলেও এটি অতি মাত্রায় ইতিবাচক অনুভূতির তৈরি করে। এ অনুভূতিগুলো প্রায়ই মানুষের শারীরিক প্রতিক্রিয়াতে প্রকাশ পায়। প্রতিক্রিয়াগুলো হতে পারে—   দাঁতে দাঁত ঘষা, উচ্চস্বরে কথা বলা এবং সুন্দর বস্তু বা প্রাণীকে চেপে ধরা, কামড় দেওয়া বা চিমটি দেওয়ার মতো ইচ্ছা তৈরি হওয়া।    

২০১৫ সালে গবেষণা প্রতিবেদনে যেসব গবেষক ‘সুন্দরের প্রতি আগ্রাসী মনোভাব’ ধারণাটি এনেছেন তাঁরা এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্য স্নায়বিক ভিত্তির খোঁজ পেয়েছেন। গবেষকেরা বলছেন, তীব্র উত্তেজনা ও আনন্দের প্রকাশ এবং অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতিই হলো এমন আগ্রাসী মনোভাব।

২০১৮ সালের এক গবেষণা অনুসারে, সৌন্দর্যের প্রতি আগ্রাসী মনোভাব আমাদের আরও বেশি যত্নবান হতে উৎসাহী করে। এর কারণে নিজের খেয়াল রাখতে পারে না এমন প্রাণীর (মানবশিশু বা প্রাণীর ছানা) প্রতি আরও যত্নশীল হয়ে উঠি। সৌন্দর্যের উপলব্ধি মানুষের মধ্যে নিরাপদে রাখার, যত্ন নেওয়ার ও কাছাকাছি থাকার প্রবৃত্তি তৈরি করে। এ প্রতিক্রিয়া আমাদের জীবতত্ত্বের গভীরে শেকড় গেড়ে আছে। যেমন—   মা–বাবারা সন্তানদের প্রতি গভীর ইতিবাচক আবেগ অনুভব করেন। এর কারণে মা–বাবারা সন্তানের টিকে থাকা ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন।    

অন্যান্য গবেষণায় বলা হচ্ছে, আমাদের কার্যক্রমে সৌন্দর্যের প্রভাব দেখা যায়। একটি সুন্দর ইন্টারফেস (কৃত্রিম মানুষ বা প্রাণী) আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে জড়িত হওয়ার ইচ্ছা তৈরি করতে পারে। আবার সৌন্দর্যের প্রভাব অসংযত কেনাকাটার মতো প্রবণতা তৈরি করতে পারে। এমনকি স্বাদ যাচাই না করেই শুধু সুন্দর দেখতে খাবার কেনার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়।

সুবিধা–বঞ্চিত শিশুদের দুঃখী মুখের ছবির চেয়ে হাসি মুখের ছবি বেশি সুন্দর লাগে বলে ২০২১ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এ কারণে মানুষের মনে আরও বেশি সহমর্মিতা তৈরি করে দাতব্য কাজে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা তৈরি হয়।

সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তনের অংশ, যার ফলে মানুষ প্রজাতি এখনো টিকে রয়েছে। সৌন্দর্য মানুষের মধ্যে আবেগের সঞ্চার করে, যা আচরণ নিয়ন্ত্রিত করে।    

কখনো কখনো সৌন্দর্য নিয়ন্ত্রণহীন আচরণের উদ্রেক করলেও তা মূলত মানুষের সচেতনতা, মনযোগ ও ভালোবাসার অনুভূতি তৈরি করে। দৃশ্যত মনে হয়, যেন সুন্দর জিনিসকে ভালোবাসা ও রক্ষা করাই মানুষের প্রকৃতি, এই প্রবণতা সর্বজনীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোন খাবারে কীভাবে রসুন ব্যবহার করবেন, জেনে নিন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
রসুন ব্যবহারের সাধারণ কিছু ভুলের কারণে খাবারের স্বাদ তিতকুটে হয়ে যায়, নষ্ট হয় এর পুষ্টিগুণও। ছবি: ফ্রিপিক
রসুন ব্যবহারের সাধারণ কিছু ভুলের কারণে খাবারের স্বাদ তিতকুটে হয়ে যায়, নষ্ট হয় এর পুষ্টিগুণও। ছবি: ফ্রিপিক

রান্নাঘরের অতি পরিচিত একটি মসলা হলো রসুন। আমিষ হোক কিংবা নিরামিষ, খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে এর জুড়ি নেই। রসুনের আছে কড়া ঘ্রাণ, যা রান্নায় যোগ করে নতুন মাত্রা। শুধু তা-ই নয়, কাঁচা রসুনও পেটের অসুখ ভালো করে দেওয়া পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমরা কি রসুনের সঠিক ব্যবহার জানি? অনেক সময় রসুন ব্যবহারের সাধারণ কিছু ভুলেই খাবারের স্বাদ তিতকুটে হয়ে যায়, নষ্ট হয় এর পুষ্টিগুণও।

ফ্রিজে রসুন রাখার ভুল

অনেকেই রসুন ভালো রাখতে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখেন। এটি রসুনের জন্য সব থেকে ক্ষতিকর। ফ্রিজের ঠান্ডা ও আর্দ্র পরিবেশে রসুন দ্রুত অঙ্কুরিত হয়। আবার ফ্রিজের শুকনা বাতাস রসুনের কোয়া থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয়। ফলে রসুন স্পঞ্জের মতো নরম হয়ে যায় এবং এর আসল স্বাদ হারিয়ে ফেলে। এর পরিবর্তে রসুন ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন। ঝুড়ি বা জালের ব্যাগে এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে বাতাস চলাচল করতে পারে। সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখা ভালো।

রসুন নিয়ে আতঙ্ক

সবুজ রঙের অঙ্কুর রসুনের বাকি অংশের তুলনায় বেশ তিতকুটে ও কড়া স্বাদের। ছবি: ফ্রিপিকসবুজ রঙের অঙ্কুর রসুনের বাকি অংশের তুলনায় বেশ তিতকুটে ও কড়া স্বাদের। ছবি: ফ্রিপিক
সবুজ রঙের অঙ্কুর রসুনের বাকি অংশের তুলনায় বেশ তিতকুটে ও কড়া স্বাদের। ছবি: ফ্রিপিকসবুজ রঙের অঙ্কুর রসুনের বাকি অংশের তুলনায় বেশ তিতকুটে ও কড়া স্বাদের। ছবি: ফ্রিপিক

ভিনেগারে রসুনের আচার করলে অথবা সসে মেশালে অনেক সময় তা নীলচে বা সবুজ রং ধারণ করে। অনেকে মনে করেন, এটি বিষাক্ত এবং তা ফেলে দেন। আসলে এটি একটি স্বাভাবিক রাসায়নিক বিক্রিয়া। রসুনের সালফার যৌগ যখন অ্যাসিড বা খনিজ পদার্থের সংস্পর্শে আসে, তখন এমন রং হয়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং স্বাদেও কোনো পরিবর্তন আনে না। উত্তর চীনে ‘লাবা রসুন’ নামক একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারে রসুনের এই চমৎকার সবুজ রংই বিশেষত্ব হিসেবে ধরা হয়। পুরোনো রসুনের কোয়ার ভেতরে সবুজ রঙের একটি অঙ্কুর দেখা যায়। এটি বিষাক্ত নয়, তবে রসুনের বাকি অংশের তুলনায় এটি বেশ তিতকুটে ও কড়া স্বাদের হয়। রসুনের অঙ্কুরটি ফেলে দিন। সূক্ষ্ম স্বাদের কোনো খাবার বা কাঁচা সস তৈরির সময় এই অঙ্কুরটি ফেলে দেওয়া ভালো। না হলে খাবারের স্বাদ নষ্ট হতে পারে।

কোন রান্নায় কেমন রসুন

বিভিন্ন খাবারে রসুন বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে হবে। তাতে স্বাদ ঠিক থাকবে। ছবি: ফ্রিপিক
বিভিন্ন খাবারে রসুন বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে হবে। তাতে স্বাদ ঠিক থাকবে। ছবি: ফ্রিপিক

রসুনের স্বাদ কতটা কড়া হবে, তা নির্ভর করে আপনি এটি কীভাবে কাটছেন তার ওপর। রসুন যত বেশি মিহি করে কুচি করবেন বা থেঁতো করবেন, তত বেশি সালফার যৌগ নির্গত হবে। এতে স্বাদ তত বেশি উগ্র ও কড়া হবে। সব রান্নায় রসুনকুচি না দিয়ে প্রয়োজন বুঝে কাটুন। ঘন সসের জন্য থেঁতো করা রসুন, স্যুপ বা স্ট্যুর সুগন্ধের জন্য কুচানো রসুন এবং হালকা সবজি রান্নার জন্য পাতলা স্লাইস করা রসুন ব্যবহার করুন। গ্রিল করা খাবারে মিহি কুচি রসুন এড়িয়ে চলুন। মাংস বা সবজি গ্রিল করার আগে ম্যারিনেশনে মিহি কুচি করা রসুন ব্যবহার করবেন না। আগুনের সরাসরি তাপে ক্ষুদ্র রসুনের টুকরাগুলো মাংস সেদ্ধ হওয়ার আগেই পুড়ে কালো হয়ে যায় এবং খাবার তিতকুটে করে ফেলে। রসুনের কুচির বদলে থেঁতো করা রসুনের রস ব্যবহার করুন অথবা ম্যারিনেশনের জন্য গার্লিক পাউডার বেছে নিন।

কড়াইয়ে শুরুতেই রসুন নয়

তেল গরম হতেই পেঁয়াজ বা সবজির আগে রসুন দিয়ে দেওয়া আমাদের অনেকেরই অভ্যাস। রসুনে চিনির পরিমাণ বেশি এবং আর্দ্রতা কম থাকায় এটি খুব দ্রুত পুড়ে যায়। পেঁয়াজ বা মাংস সেদ্ধ হওয়ার আগেই রসুন পুড়ে কালো হয়ে যেতে পারে। আগে সবজি বা পেঁয়াজ ভাজুন। রান্না প্রায় শেষের দিকে এলে রসুনকুচি যোগ করুন। রসুনের সুগন্ধ বের হতে মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট সময় লাগে। এ ছাড়া চড়া আঁচে কখনই রসুন ভাজবেন না। অনেকেই সময় বাঁচাতে উচ্চ তাপে রসুন ভাজেন। এতে তা বাইরে থেকে পুড়ে লাল হয়ে যায়, কিন্তু ভেতর থেকে এর সুগন্ধ বের হতে পারে না। এটি খাবারের স্বাদ তিতকুটে করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানও তৈরি করতে পারে। সব সময় মাঝারি বা কম আঁচে রসুন ভাজুন। এতে রসুনের প্রাকৃতিক চিনি ধীরে ধীরে ক্যারামেলাইজড হয়ে চমৎকার সোনালি রং ধারণ করবে এবং একটি মিষ্টি সুগন্ধ তৈরি করবে।

সূত্র: টেস্টিং টেবিল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নারী ও পুরুষের মস্তিষ্ক কি আসলেই আলাদা? গবেষকেরা কী বলছেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
গবেষকদের মতে, স্বাস্থ্যকর প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের লিঙ্গ ভিত্তিক পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করতে পারলে বিভিন্ন রোগের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া সম্ভব। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
গবেষকদের মতে, স্বাস্থ্যকর প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের লিঙ্গ ভিত্তিক পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করতে পারলে বিভিন্ন রোগের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া সম্ভব। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

একুশ শতকে এসেও লৈঙ্গিক সমতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা ও বিতর্ক সচল রয়েছে। কার মাথায় বুদ্ধি বেশি, কার উপস্থিত বুদ্ধি বেশি ভালো—এসব আলোচনা থেকে এখনো থামানো যায় না কাউকেই। একজন নারী বেশি বুদ্ধিমান নাকি একজন পুরুষের মাথায় বুদ্ধির ভারটা বেশি, তুমুল সেই বিতর্কের ফাঁক গলে নারীরা বাড়ির আঙিনা থেকে পাড়ি জমাচ্ছে মহাকাশে। এমনকি একজন পুরুষ জটিলতম মেশিনের ডিজাইন করতে করতে রান্নাঘরে তৈরি করছে নতুন নতুন খাবারের রেসিপি। তা-ও থামছে না বুদ্ধির ঘটে কার পাল্লা ভারী, তা নিয়ে ঝগড়া। এদিকে বিজ্ঞানীদের মাইক্রোস্কোপের নিচে উঠে এসেছে সেই চিরন্তন প্রশ্ন—নারী ও পুরুষের মস্তিষ্ক কি আসলেই আলাদা? এই প্রশ্ন যেমন কৌতূহলোদ্দীপক, তেমনি বিতর্কিত। সাম্প্রতিক গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ফলে এই বিতর্ক এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।

‘পাঁচ আউন্স’-এর সেই পুরোনো তত্ত্ব

মস্তিষ্কের গঠন নিয়ে বিতর্কের শুরুটা বেশ পুরোনো। শুরুর দিকের গবেষণায় মানুষের মাথার খুলির আয়তন মেপে দেখা গিয়েছিল, পুরুষের মস্তিষ্ক ওজনের দিক থেকে নারীদের তুলনায় কিছুটা ভারী। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তখন কিছু সমালোচক ‘মিসিং ফাইভ আউন্স’ বা হারানো পাঁচ আউন্স তত্ত্বটি সামনে আনেন। তাঁদের ধারণা ছিল, পুরুষের কথিত শ্রেষ্ঠত্বের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে এই বাড়তি ওজনে। তবে আধুনিক বিজ্ঞান এই ধারণাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। নিউ সায়েন্টিস্টদের মতে, এর একটি অত্যন্ত সহজ ব্যাখ্যা রয়েছে। সাধারণত বড় শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল রাখতে বেশি পরিমাণ মস্তিষ্কের কোষ বা টিস্যুর প্রয়োজন হয়। প্রাণিজগতেও এই একই নিয়ম দেখা যায়। অর্থাৎ, বড় শরীর মানেই বড় মস্তিষ্ক। এর সঙ্গে মেধার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।

স্ট্যানফোর্ড গবেষণার মূল লক্ষ্য

বর্তমানে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তবে তাঁদের এই কাজের উদ্দেশ্য কেবল পার্থক্য খোঁজা নয়। স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের মনোরোগ ও আচরণগত বিজ্ঞানের অধ্যাপক বিনোদ মেনন বলেন, ‘এই গবেষণার মূল অনুপ্রেরণা হলো মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশ, বার্ধক্য এবং স্নায়বিক রোগ বা মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে লিঙ্গভেদে যে ভিন্নতা দেখা যায়, তা বোঝা।’

গবেষকদের মতে, স্বাস্থ্যকর প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের লৈঙ্গিক ভিত্তিক পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করতে পারলে বিভিন্ন রোগের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া সম্ভব। যেমন অটিজম ও পারকিনসনের মতো রোগগুলো পুরুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এদিকে মাল্টিপল স্কলেরোসিস ও বিষণ্নতা জাতীয় রোগে নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়। বিনোদ মেনন সতর্ক করে বলেন, মস্তিষ্কের গঠনের এই লৈঙ্গিক ভিত্তিক পার্থক্যগুলো যদি আমরা এড়িয়ে যাই, তবে স্নায়বিক রোগের পেছনের মূল কারণগুলো হয়তো আমাদের অজানাই থেকে যাবে।

‘সেক্স ডিফারেন্স’ অ্যাজেন্ডা

তবে এই ধরনের গবেষণাকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অনেক বিজ্ঞানী। ব্রিটিশ নিউরোসায়েন্টিস্ট জিনা রিপন ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ লিখেছেন, বর্তমানে সমাজে জৈবিকভাবে নির্ধারিত লৈঙ্গিক ভিত্তিক পার্থক্য খোঁজার একধরনের প্রবল আগ্রহ বা ‘অ্যাজেন্ডা’ তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, মানুষ চায় নারী-পুরুষের আচরণ, মেজাজ বা অর্জনের পার্থক্যগুলো সরাসরি মস্তিষ্কের ওপর চাপিয়ে দিতে। এস্টন ইউনিভার্সিটি ব্রেন সেন্টারের এই ইমেরিটাস অধ্যাপক মনে করেন, ‘আমরা যদি এই যুক্তিতে বিশ্বাস করতে শুরু করি, নারী-পুরুষের পার্থক্যগুলো জন্মগত বা অপরিবর্তনীয়, তবে সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার সব প্রচেষ্টা সহজে বাধাগ্রস্ত হবে।’ তাঁর মতে, সমান হওয়ার অর্থ এই নয় যে সবকিছুতে অভিন্ন হতে হবে। কিন্তু পার্থক্যগুলোকে স্থায়ী তকমা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

আধুনিক প্রযুক্তি ও আগামীর পথ

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত গবেষণাগুলো পুরোনো আমলের লৈঙ্গিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক বিতর্ক কাটিয়ে নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছে। বিষয়টি এখনো অত্যন্ত বিতর্কিত এবং স্পর্শকাতর। বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশের অভিমত হলো, গবেষণার ফলাফল যা-ই আসুক, তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। চিকিৎসার প্রয়োজনে কোনো পার্থক্যকে যেমন এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়, তেমনি সেই পার্থক্য পুঁজি করে সামাজিক বৈষম্যকে বৈধতা দেওয়াও উচিত হবে না।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ন্যাচার, নিউ সায়েন্টিস্ট, স্ট্যানফোর্ড মেডিকেল ম্যাগাজিন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৪
আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

মেষ

সাহস আজ আপনার রক্তে টগবগ করছে। অফিসে সহকর্মীদের ওপর এমন হুকুম চালাবেন যেন আপনি সম্রাট আকবরের বংশধর। সঞ্চয় ভালো হবে, কিন্তু কৃপণতার দুনিয়ায় আজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন। গিন্নি বা প্রিয়তমা আজ কেনাকাটার কথা তুললে কানপুরে যাওয়ার টিকিট কাটার ভান করতে পারেন। রাস্তায় হাঁটার সময় মোবাইল টিপবেন না; আজ নর্দমায় পা পড়ার বা হোঁচট খাওয়ার প্রবল যোগ! পকেটে একটি লাল রুমাল রাখুন, মেজাজ ঠান্ডা থাকবে।

বৃষ

মনের কথা আজ পেটে সইবে না। তবে খবরদার! অফিসের বস বা পাড়ার চায়ের দোকানের আড্ডায় নিজের বা অন্যের হাঁড়ি ভাঙবেন না। দাম্পত্য জীবনে আজ একটু ‘মাখন’ লাগানোর প্রয়োজন আছে, নয়তো রাতের ডিনারে শুধু সেদ্ধ ভাত জুটতে পারে। পুরোনো কোনো পাওনা টাকা হঠাৎ ফেরত পেতে পারেন, যা দিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ার ইচ্ছা হবে প্রবল। সোশ্যাল মিডিয়ায় আজ বিতর্কিত কমেন্ট করবেন না, ট্রল হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ পারসেন্ট। বাইরে বেরোনোর আগে এক চামচ দই চিনি খেয়ে বেরোন।

মিথুন

বসের মেজাজ আজ তপ্ত কড়াইয়ের মতো। তিনি যদি বলেন ‘ঘাস নীল’, তবে আপনি তালি বাজিয়ে বলবেন ‘কী অপূর্ব নীলিমা স্যার!’ ছোট ভুল আজ ক্যারিয়ারের এভারেস্টে ফাটল ধরাতে পারে, তাই যেকোনো ফাইলে সই করার আগে অন্তত তিনবার চোখ বুলিয়ে নিন। বাড়িতে কোনো খুশির খবর বা হঠাৎ মিষ্টি আসতে পারে। ক্যালরি মেপে মিষ্টি খাবেন, ডায়াবেটিস আজ উঁকি দিচ্ছে। সবুজ রঙের কোনো কলম সঙ্গে রাখুন।

কর্কট

মানিব্যাগের দশা আজ মরুভূমির মতো। মাসের শেষে পকেট গড়ের মাঠ হওয়ায় বন্ধুর থেকে ধার নেওয়ার ফন্দি আঁটবেন। পারিবারিক দায়িত্ব আজ হিমালয়ের মতো কাঁধে চেপে বসবে, তবে চিন্তা নেই—দিন শেষে কোনো পুরোনো বন্ধুর আড্ডায় সব ক্লান্তি দূর হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে বেশি সময় নষ্ট করবেন না, কাজের দেরি হবে। ছোটদের কিছু চকলেট উপহার দিন, আপনার ভাগ্য খুলবে।

সিংহ

কাজের চেয়ে আপনার মন আজ বিনোদনের দিকে বেশি। অফিসের কম্পিউটারে আড়ালে গেম খেলতে গিয়ে বসের হাতে ধরা পড়ার সম্ভাবনা আছে। পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে ভাইবোনের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে মেজাজ হারাবেন না, হিতে বিপরীত হতে পারে। নতুন গাড়ি বা গ্যাজেট কেনার ভূত মাথায় চাপতে পারে, কিন্তু আজ ডিল করবেন না।

আজ অনলাইন শপিং সাইটগুলো থেকে দূরে থাকুন, নয়তো ক্রেডিট কার্ডের দফারফা হবে।

কন্যা

আপনি আজ বড্ড আবেগপ্রবণ। টিভির সিরিয়াল দেখেও চোখে জল আসতে পারে। তবে এই কোমল মন আজ নতুন বন্ধু তৈরিতে সাহায্য করবে। অফিসে কাজের চাপ থাকবে প্রচুর, কিন্তু ক্রেডিট নেওয়ার সময় দেখবেন অন্য কেউ লাইন মেরে চলে গেছে। ধৈর্য ধরুন, ফলের আশা করবেন না (আপাতত)। পরনিন্দা-পরচর্চা থেকে দূরে থাকুন, পাড়ার আন্টিরা আপনাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।

তুলা

আজ আপনার জন্য প্রলোভনের দিন। শপিং মলের ‘৫০% অফ’ দেখে মন নাচবে, কিন্তু পকেটে হাত দিলেই শক খাবেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে আপনি আজ মধ্যমণি, কিন্তু বেশি স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে হাসির পাত্র হবেন না। দুজনের ঝগড়া মেটাতে গিয়ে নিজে মাঝখান থেকে ভিলেন হয়ে যাবেন না। একটি রুপার কয়েন বা আংটি সঙ্গে রাখুন।

বৃশ্চিক

যাঁরা হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রপাতির ব্যবসা করেন, তাঁদের আজ পয়া দিন। স্ত্রীর বুদ্ধিতে কোনো ব্যবসায়িক জটিলতা মিটে যেতে পারে। শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে দামি কোনো উপহার বা নিমন্ত্রণ আসার সম্ভাবনা আছে। তবে শরীরের নিচের অংশে চোট লাগার ভয় আছে, তাই সাবধানে চলাফেরা করুন। মিষ্টি দেখলে আজ লোভ সামলান, দাঁত ব্যথার যোগ আছে।

ধনু

মন আজ এক জায়গায় টিকবে না। অফিস কামাই করে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা জাগবে। হঠাৎ কোনো অজানার থেকে আর্থিক প্রস্তাব আসতে পারে, যাচাই না করে পা দেবেন না। ভ্রমণের সুযোগ এলে ব্যাগ গুছিয়ে নিন, তবে ট্রেন বা বাসে মানিব্যাগ এবং মোবাইল সামলে রাখুন। প্রিয়জনের সঙ্গে তর্কে যাবেন না, ঝগড়া মেটাতে ২০২৬ সাল চলে আসবে।

মকর

প্রেমের দুনিয়ায় আজ বড় আকাল। প্রিয়তমার সঙ্গে ছোটখাটো বিষয়ে ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে, যা বিশ্বযুদ্ধের আকার নিতে পারে। দুপুরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করুন। কারণ, বিকেলে অলসতা আপনাকে অজগরের মতো গিলে খাবে। সন্তানদের কোনো জেদ পূরণ করতে গিয়ে পকেট খালি হতে পারে। ঠান্ডা মেজাজে কথা বলুন, নয়তো আজ বাড়িতে থালাবাসন ওড়ার শব্দ শোনা যেতে পারে।

কুম্ভ

আপনি আজ পাড়ার ‘শান্তি কমিটি’র মেম্বারের মতো আচরণ করবেন। নিজের অশান্তি ভুলে অন্যের দুঃখ মুছতে ব্যস্ত থাকবেন। আধ্যাত্মিক কোনো কাজে যোগ দিলে মন ভালো থাকবে। জিম বা ব্যায়াম করার প্রবল উৎসাহ জাগবে, কিন্তু প্রথম দিনেই দুনিয়ার ভার তুলতে গিয়ে পেশিতে টান লাগাবেন না। অচেনা কাউকে আজ টাকা ধার দেবেন না।

মীন

দিনটা আপনার জন্য বেশ পয়া। লটারি না জিতলেও মন থাকবে ফুরফুরে। পুরোনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হতে পারে। বাড়িতে নতুন কোনো রেসিপি ট্রাই করতে পারেন; বাড়ির লোকজন হয়তো ভয়ে ভয়ে খাবে, কিন্তু মুখে আপনার প্রশংসাই করবে। ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা অবহেলা করবেন না। ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম আজ এড়িয়ে চলুন, গলার অবস্থা খারাপ হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সকালের নাশতা কখন খাবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম থেকে ওঠার দুই ঘণ্টার মধ্যে সকালের ভারসাম্যপূর্ণ নাশতা সেরে ফেলা উচিত। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম থেকে ওঠার দুই ঘণ্টার মধ্যে সকালের ভারসাম্যপূর্ণ নাশতা সেরে ফেলা উচিত। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

সকালের নাশতা বা ব্রেকফাস্টকে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার বলা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কী খাচ্ছেন, সেটা বড় প্রশ্ন নয়। বড় প্রশ্ন হলো, কখন খাচ্ছেন। পুষ্টিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানো এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি এড়াতে সকালের নাশতা খাওয়ার সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভালো অভ্যাসের জন্য জেনে নিন, কখন নাশতা খাবেন। সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যকর নাশতা শুধু আপনার শরীরের ওজন বা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করবে না, বরং সারা দিনের শক্তি, মানসিক স্বচ্ছতা এবং কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করবে।

হৃদ্‌যন্ত্রের সুরক্ষায় ‘দুই ঘণ্টার নিয়ম’

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম থেকে ওঠার দুই ঘণ্টার মধ্যে সকালের ভারসাম্যপূর্ণ নাশতা সেরে ফেলা উচিত। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সরাসরি সাহায্য করে। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে পরে অস্বাস্থ্যকর নাশতা বা বেশি পরিমাণে খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান ভেরোনিকা রাউস এবং ডোবরা মারফির মতে, নাশতার সময় যত দ্রুত হয়, কোলেস্টেরলের জন্য, তা তত মঙ্গলজনক। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত সকালের নাশতা এড়িয়ে যান, তাঁদের শরীরে ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। ২০২১ সালে চীনে ৩৭ হাজার ৩৫৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নাশতা খান না, তাঁদের রক্তে চর্বির পরিমাণ ১০ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মোট কোলেস্টেরল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের অন্য একটি বিশ্লেষণ বলছে, নাশতা বাদ দিলে এলডিএল কোলেস্টেরল গড়ে ৯ দশমিক ৮৯ এমজি/ডিএল পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ১২ ঘণ্টার ফাস্টিং

যদি আপনার লক্ষ্য হয় ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখা, তবে খাবারের সময়ের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ হিসাব কাজ করে। নাশতা মানেই উপবাস ভাঙা। গবেষকদের মতে, আগের দিনের রাতের খাবার এবং পরের দিনের সকালের নাশতার মধ্যে অন্তত ১২ ঘণ্টার ব্যবধান থাকা উচিত। যেমন আপনি যদি রাত ৮টায় রাতের খাবার খেয়ে নেন, তবে সকাল ৮টার আগে নাশতা না করাই ভালো। এই ১২ ঘণ্টার বিরতি শরীরে কেটোসিস প্রক্রিয়া শুরু করতে সাহায্য করে; যেখানে শরীর শক্তির জন্য গ্লুকোজের বদলে জমানো চর্বি পোড়াতে থাকে। এ ছাড়া এই বিরতি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বা মাইক্রোবায়োমকে বিশ্রাম ও পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়, যা মেটাবলিজম দ্রুত করে।

কত দেরি হলে তা ‘খুব দেরি’

একটি গবেষণা অনুযায়ী, সকাল ৯টার মধ্যে নাশতা সেরে ফেলা আদর্শ সময়। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। এর কারণ হলো, সকালে আমাদের মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়া সবচেয়ে ভালো কাজ করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর ইনসুলিন প্রতিরোধী হতে শুরু করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং পেটে চর্বি জমায়। তবে মনে রাখতে হবে, ১২ ঘণ্টার উপবাসের নিয়মটি নমনীয়। যদি কোনো কারণে রাতে দেরি করে খাবার খান, তবে পরের দিন ১২ ঘণ্টা পূর্ণ করেই হালকা নাশতা করা উচিত।

দেরিতে ডিনার ও নাশতা বর্জন নয়

ইউরোপীয় ‘জার্নাল অব প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজি’তে প্রকাশিত গবেষণায় দেরিতে রাতের খাবার এবং সকালের নাশতা বাদ দেওয়াকে মারাত্মক উল্লেখ করা হয়েছে। যাঁরা এই অভ্যাসে অভ্যস্ত, তাঁদের হৃদ্‌রোগ, হার্ট অ্যাটাক এবং শরীরে প্রদাহের ঝুঁকি অনেক বেশি। গবেষকেরা একে একটি ‘কিলার’ বা প্রাণঘাতী কম্বিনেশন হিসেবে অভিহিত করেছেন।

কোলেস্টেরল কমাতে আদর্শ নাশতা

ডোনাট বা পেস্ট্রির মতো চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলোতে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা সরাসরি এলডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায়। নাশতায় উদ্ভিজ্জ খাবার বা প্ল্যান্ট-বেসড খাবারের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ফল ও ওটস: এতে থাকা সলুবল ফাইবার অন্ত্রে কোলেস্টেরলকে আটকে ফেলে রক্তে মিশতে বাধা দেয়।

হোল-গ্রেইন টোস্ট বা সিরিয়াল: এতে থাকা ভিটামিন-বি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়।

বাদাম ও বীজ: এগুলো স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্ল্যান্ট স্টেরল সমৃদ্ধ।

ব্যায়ামের ভূমিকা

নাশতার পাশাপাশি নিয়মিত সকালে ব্যায়াম কোলেস্টেরলের জন্য মহৌষধ। এটি এলডিএল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়। হার্টের সুস্বাস্থ্যের জন্য সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি পরিশ্রম, যেমন দ্রুত হাঁটা অথবা ৭৫ মিনিট দৌড়ানোর মতো কঠিন কাজ করা জরুরি।

সূত্র: ভোগ, ডেইলি মেইল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত