Ajker Patrika

ঋণ পরিশোধের এক অবিশ্বাস্য ঘটনা

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পৃথিবীতে কোনো মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। জীবনের নানা প্রয়োজনে মানুষকে অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি একটি প্রয়োজন হলো আর্থিক আদান-প্রদান বা ঋণ। ব্যবসা ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন কিংবা জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ একে অপরের কাছে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। ইসলামে এই ঋণ দেওয়া ও নেওয়া—উভয়কেই অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রয়োজনে কাউকে ঋণ প্রদান করাকে আল্লাহ তাআলা এত বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, একে সরাসরি আল্লাহকে ঋণ দেওয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এমন কে আছে যে আল্লাহকে দেবে উত্তম ঋণ (কর্জ হাসানা), অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে (তার প্রতিদানকে) দ্বিগুণ—বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন।’ (সুরা বাকারা: ২৪৫)

ঋণ দিলে তা সদকার সমপরিমাণ সওয়াব এনে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুবার ঋণ দেওয়া একবার সদকা করা থেকে উত্তম।’ (জামে সগির: ৬১০০)

অন্যদিকে, ঋণগ্রহীতার জন্য যথাসময়ে তা পরিশোধ করা অপরিহার্য কর্তব্য। ঋণ আদায়ে গড়িমসি করাকে জুলুমের অন্তর্ভুক্ত এবং অকৃতজ্ঞতার শামিল বলা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ মূলত একটি আমানত। সময়মতো তা আদায় না করা একধরনের খেয়ানত।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তোমরা আমানত তার প্রাপকের নিকট ফিরিয়ে দাও।’ (সুরা নিসা: ৫৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।’ (সহিহ্ বুখারি: ২২৩২)

ঋণ গ্রহণ করার সময় কোনো ব্যক্তি যদি আন্তরিকভাবে তা পরিশোধ করার নিয়ত রাখে এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখে, তাহলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন। হাদিস শরিফে ঋণ আদায়ের এমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তির কথা বলেছেন। একবার সে বনি ইসরাইলের আরেক ব্যক্তির কাছে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ঋণ চেয়েছিল। ঋণদাতা তখন বলল, ‘আমার নিকট সাক্ষী নিয়ে এসো।’ ঋণগ্রহীতা বলল, ‘সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’

লোকটি আবার বলল, ‘তাহলে একজন জামিনদার (ঋণের দায়বদ্ধ সহযোগী) নিয়ে এসো।’ সে বলল, ‘জামিন হিসেবেও আল্লাহই যথেষ্ট।’

এ কথা শুনে ঋণদাতা আশ্বস্ত হলো এবং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের শর্তে তাকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে দিল।

ঋণগ্রহীতা সেই এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সমুদ্রপথে যাত্রা করল। নির্ধারিত সময়ে সে তার ব্যবসা সফল করল এবং ঋণ পরিশোধের জন্য সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশে একটি নৌযান খুঁজতে লাগল। কিন্তু কোনো নৌযান খুঁজে না পেয়ে সে হতাশ হলো।

অতঃপর সে কাঠের একটি টুকরা নিয়ে তা ছিদ্র করল এবং তার মধ্যে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ও প্রাপকের নামে একটি পত্র ঢুকিয়ে দিল। তারপর ছিদ্রটি বন্ধ করে সে সমুদ্রে চলে এল এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি জানো যে, আমি অমুকের কাছে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ঋণ চেয়েছিলাম। সে একজন জামিনদার চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম, জামিন হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। তোমার নাম বলাতে সে রাজি হয়েছিল। এরপর সে একজন সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম, সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। এ কথা শুনে সে রাজি হয়ে গিয়েছিল। আমি যথাসময়ে তার প্রাপ্য পৌঁছানোর জন্য একটি নৌযান খুঁজতে যথেষ্ট চেষ্টা করি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি। এখন এগুলো তোমার নিকট আমানত রাখছি।’

এই বলে সে কাঠের টুকরাটি পানিতে ফেলে দিল। আল্লাহর ইচ্ছায় তা সমুদ্রে ভাসতে লাগল। এদিকে ঋণদাতা আশা নিয়ে নদীর তীরে এসে পৌঁছাল, এই ভেবে যে হয়তো তার প্রাপ্য কোনো নৌযানে করে এসেছে। হঠাৎ তার নজরে পড়ল ওই কাঠের টুকরাটি। নিজের পরিবারের রান্নার লাকড়ি হিসেবে সে এটি উঠিয়ে নিল। ঘরে এনে যখন একটি কুঠার দিয়ে এটি চিরল, তখন তার মধ্যে রাখা স্বর্ণমুদ্রাগুলো এবং পত্রটি পেয়ে গেল।

কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে এসে হাজির হয়ে বলল, ‘শপথ আল্লাহর! আপনার সম্পদ যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমি সব সময় নৌযান খুঁজেছিলাম, কিন্তু কোনো নৌযান পাইনি। তাই আমার বিলম্ব হয়েছে।’

ঋণদাতা তখন বলল, ‘তুমি কি এর আগে আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে?’

লোকটি বলল, ‘আমি তোমাকে তো বলেছি যে এর আগে কোনো যানবাহন পাইনি।’

তখন ঋণদাতা বলল, ‘তুমি কাষ্ঠখণ্ডে করে যা পাঠিয়েছিলে, আল্লাহ তাআলা তা তোমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দিয়েছেন।’

এ কথা শুনে লোকটি ওই এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে অত্যন্ত খুশিমনে ফিরে এল। (সহিহ্ বুখারি: ২২৯১)

এই হাদিস থেকে আমরা শিখতে পারি যে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টাকে কতটা মূল্য দেন। যখন একজন মানুষ তার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয় এবং কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, তখন আল্লাহ তাকে এমনভাবে সাহায্য করেন, যা মানবীয় বুদ্ধির কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়।

লেখক: মুহাদ্দিস ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্ম যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তার মৃত্যুও পৃথিবীর এক অমোঘ সত্য। জীবনে চলার পথে যত সাফল্য, ব্যস্ততা বা আকাঙ্ক্ষা থাকুক; মৃত্যুর মুহূর্তে সবকিছু থেমে যায়। ইসলাম এই বাস্তবতাকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছে এবং আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি প্রাণী একদিন তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।

মৃত্যু অবধারিত ‎সত্য। তা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। কোনো বস্তু জীবনের অস্তিত্ব লাভ করলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

কেউ যখন মারা যায়, তার মৃত্যুর খবর শুনলে একটি দোয়া পড়তে হয়, দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে।

দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’

দোয়ার অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত