Ajker Patrika

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিম তীরে ১০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বহুদিন পর পশ্চিম তীরে ট্যাংক প্রবেশ করিয়েছে ইসরায়েল। ছবিটি কয়েক দিন আগে তোলা। ছবি: আনাদোলু
বহুদিন পর পশ্চিম তীরে ট্যাংক প্রবেশ করিয়েছে ইসরায়েল। ছবিটি কয়েক দিন আগে তোলা। ছবি: আনাদোলু

ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে দখলকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা আরও বাড়িয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সেখানে তারা এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধ যখন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছিল, তখন পশ্চিম তীরে দখলদার সেনাবাহিনী ও অবৈধ ইহুদি বসতির বাসিন্দারা ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়ন আরও বাড়িয়ে দেয়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে পশ্চিম তীরে সহিংস অভিযান বাড়িয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনি গ্রামবাসীদের ওপর ইসরায়েলি দখলদার বসতি স্থাপনকারীদের হামলার ঘটনা আরও বেড়েছে, যা থামানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের হাতে সর্বশেষ নিহত ব্যক্তি হলেন—সামির বাসেম আল-জাগারনে। ১ জুলাই তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, আল-জাগারনে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমকে বিভক্তকারী ‘সেপারেশন ব্যারিয়ারের’ কাছে নিহত হন। ২০০২ সালে ওই ব্যারিয়ার নির্মাণ শুরু করে ইসরায়েল, যা বহু ফিলিস্তিনি জনপদ ও কৃষিজমি বিভক্ত করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও অবৈধ ইহুদি বসতি গড়ে তোলা সন্ত্রাসী দখলদারেরা পশ্চিম তীরকে গ্রাস করে ফেলছে। এই দখলদারেরা আকস্মিক বিভিন্ন শহরে হামলা চালায়, ঘরবাড়িতে আগুন দেয়, আক্রমণ করে এবং ফিলিস্তিনিদের নিজ এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে। একই সঙ্গে ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনী বিভিন্ন শরণার্থীশিবির ঘিরে রেখেছে, নিয়মিত সেখানে অভিযান চালাচ্ছে, বাসিন্দাদের বের করে দিচ্ছে স্থায়ীভাবে।

অনেক দখলদারকে আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে ‘একীভূত’ করা হয়েছে। কারণ, গাজায় যুদ্ধ চালানোর জন্য সেনাবাহিনীর বড় অংশ মোতায়েন থাকায় পশ্চিম তীরে ‘বিকল্প বাহিনী’ হিসেবে এই দখলদারদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে দখলদারদের সহিংসতা আরও বেড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, বিশেষজ্ঞ, অধিকারকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সহিংসতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে—ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে জমি দখল এবং পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে একীভূত করা। ইসরায়েলি অধিকার সংগঠন ‘পিস নাউ’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের যত জমি দখল করেছে, তা গত ২০ বছরের সম্মিলিত জমি দখলের চেয়েও বেশি।

এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ‘সেটেলমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নামে একটি নতুন দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নেন। এই পদ ব্যবহার করে তিনি পশ্চিম তীরের ওপর ইসরায়েলের বেসামরিক আইন চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

স্মতরিচ একের পর এক নতুন অবৈধ বসতি অনুমোদন দিচ্ছেন, জমি দখল করছেন এবং তথাকথিত ‘নির্মাণ-বসতি নীতিমালা’ চালু করছেন। আসলে, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করতে এবং নতুন অবৈধ বসতি গড়ে তুলতে তিনি সেনাবাহিনী ও দখলদারদের সহিংসতাকে কাজে লাগাচ্ছেন।

ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহের নামে গঠিত স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা শিরিন মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম এক মাসে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত দুই মাসে নিহতের সংখ্যা ৩৪ জন।

এসব হত্যার বড় অংশই নিয়মিত ইসরায়েলি অভিযানের ফলে ঘটেছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূল করতে অভিযান চালাচ্ছে। ২০২১ সাল থেকে পশ্চিম তীরে এসব গোষ্ঠী গড়ে ওঠে, কারণ তখন থেকে ইসরায়েলের দমন-পীড়ন আরও তীব্র হয়।

তবে বাস্তবতা হলো—অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ উদাহরণ সৃষ্টি করছে। তারা নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করছে, নিহতদের পরিবারকে দাফনের সুযোগ দিচ্ছে না এবং পুরো পাড়া-মহল্লা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, যাতে আরও বেশি ফিলিস্তিনি ঘরহারা হয়। জেনিন, তুলকারেম, নূর শামস, ফারা’আ এবং নাবলুসের শরণার্থীশিবিরে চলছে এসব অভিযান। এসব স্থানে ইসরায়েল গাজায় যেভাবে পুরোপুরি অবরোধ আরোপ করেছিল, এখানেও তাই করছে। ফলে ব্যাপক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। ইসরায়েল হাসপাতালে হামলা চালাচ্ছে, তুলকারেম ও জেনিন শিবিরে বোমাবর্ষণ করছে, এতে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু বাড়ছে।

টেক ফর প্যালেস্টাইন নামে মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পশ্চিম তীরে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি দখলদার হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে দখলদারদের হামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১৪। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

এসব হামলার বেশির ভাগ ঘটছে পশ্চিম তীরের ‘এরিয়া সি’ অঞ্চলে। ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তিতে পশ্চিম তীরকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়—এরিয়া এ, বি ও সি। এরিয়া এ পুরোটাই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা, এরিয়া বি-তে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের, কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের। আর এরিয়া সি—যা পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশের বেশি এলাকা—পুরোটাই ইসরায়েলের প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে।

ইসরায়েল থামবে এমন কোনো লক্ষণ নেই। বিপরীতে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হামলা আরও বেড়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েল এরিয়া সি-র মাসাফের ইয়াত্তা অঞ্চলের ১২টি ফিলিস্তিনি কমিউনিটি উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। তারা এলাকাটিকে ‘সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকা’ ঘোষণা দিয়ে এই উচ্ছেদকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। গত কয়েক দশক ধরেই ফিলিস্তিনিদের জমি দখলের জন্য ইসরায়েল এই অজুহাত ব্যবহার করে আসছে।

সর্বশেষ, ২৫ জুন কাফার মালিক গ্রামে ১০০ জনের বেশি ভারী অস্ত্র সজ্জিত ইহুদি দখলদার ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালায়। তারা ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। ফিলিস্তিনিরা বাধা দিলে তিনজন নিহত হন। পাশের টাইবেহ গ্রামে দখলদাররা একটি গাড়িতে আগুন দেয়। পরে ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বেতসেলেমের সংগ্রহ করা ভিডিওতে গাড়ির পুড়ে যাওয়া অবস্থা দেখা যায়।

আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বহু ফিলিস্তিনি জানিয়েছেন, তারা আরও বড় হামলার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। তারা প্রায়ই বলেন, তাদের কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। আর প্রতিরোধের চেষ্টা করলে দখলদার ও সেনাদের হাতে আরও ভয়াবহ হামলার শিকার হতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার উপকূলে আবার তেলের ট্যাংকার জব্দ করল যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ঘোষিত ‘সর্বাত্মক অবরোধের’ অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছে মার্কিন কোস্টগার্ড। আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন, ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ এবং সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে। তাঁর এমন ঘোষণার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় এই অভিযান চালানো হলো।

এর আগে গত সপ্তাহে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দের পর এটি দ্বিতীয় ঘটনা। তবে এই ট্যাংকারের নাম বা নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে পেন্টাগন বা হোয়াইট হাউস এখনো বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্টগার্ড এই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) তাৎক্ষণিকভাবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে আগের অভিযানকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল মাদুরো সরকার।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবরোধ ঘোষণার পর থেকে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানিতে ধস নেমেছে। আটকের ভয়ে ভেনেজুয়েলার জলসীমার ভেতরে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল তেল নিয়ে বহু ট্যাংকার নোঙর করে আছে।

গত সপ্তাহের অভিযানের পর থেকে দেশটির অপরিশোধিত তেল রপ্তানি আরও কমেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হলে দৈনিক প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সরবরাহ বন্ধ হবে। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় এশীয় ও ইউরোপীয় বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামও কিছুটা বেড়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়া উপকূলে ‘মাদকবিরোধী অভিযানের’ নামে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ২৬টি সামরিক হামলা চালিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো অভিযোগ করেছেন, এই অবরোধ ও সামরিক তৎপরতা আসলে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ভেনেজুয়েলার বিশাল তেল সম্পদ দখলে নেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা।

ভেনেজুয়েলার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। ডিসেম্বরে দেশটি প্রতিদিন গড়ে ৬ লাখ ব্যারেল তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল, যা এখন চরম ঝুঁকির মুখে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ডেমোক্র্যাট কিছু কংগ্রেসম্যান ‘যুদ্ধের শামিল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, শিগগির ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে স্থল হামলাও শুরু হতে পারে।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার ওপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে দেশটির তেল কিনতে আগ্রহী ব্যবসায়ী ও শোধনাগারগুলো তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’ ব্যবহার করে আসছে। এসব ট্যাংকার নিজেদের অবস্থান গোপন রাখে এবং অনেক ক্ষেত্রে ইরান বা রাশিয়ার তেল পরিবহনের জন্য নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজ ব্যবহার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে নিকাব বিতর্ক: কাজে যোগ দেননি সেই নারী চিকিৎসক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সরকারি অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট নিতে আসা এক মুসলিম নারীর মুখ দেখতে নিকাব টান দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে আজ আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, নিকাব বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা সেই নারী চিকিৎসক নুসরাত পারভীন নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগ দেননি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি কাজে যোগদান করেননি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাটনার সিভিল সার্জন অবিনাশ কুমার সিং। এমনকি তাঁর বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

পাটনার সিভিল সার্জন জানান, নুসরাত পারভীনের কাজে যোগদানের শেষ সময় ২০ ডিসেম্বরের পর আরও বাড়ানো হয়েছে। তবে নতুন সময়সীমা কত দিন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। সিভিল সার্জন বলেন, ‘তিনি সোমবার যোগ দেন কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।’

নুসরাত পারভীনের পাটনা সদরের সাবলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সেখানকার সার্জন বিজয় কুমার জানিয়েছেন, আজ ৫-৬ জন নতুন চিকিৎসক যোগ দিলেও নুসরাতের কোনো খোঁজ নেই। এমনকি সিভিল সার্জন অফিস থেকেও তাঁর নিয়োগপত্র এখনো সেখানে পৌঁছায়নি।

নুসরাত পারভীন পাটনার সরকারি তিব্বি কলেজ ও হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কলেজের প্রিন্সিপাল মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, নুসরাত সর্বশেষ ১৭ বা ১৮ ডিসেম্বর কলেজে এসেছিলেন।

নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা অতিরিক্ত মিডিয়া কাভারেজ এড়াতে চাইছেন। এই বিতর্কের কারণে নুসরাত আদৌ চাকরিতে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।

এদিকে নুসরাতের পরিবার কলকাতায় চলে গেছে বলে যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা নাকচ করে দিয়েছেন তাঁর স্বামী। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারের ওপর নয়, বরং সংবাদমাধ্যমের সৃষ্টি করা বিতর্কে বিরক্ত।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে পাটনায় আয়ুশ চিকিৎসকদের নিয়োগপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, নুসরাত পারভীন নিয়োগপত্র নিতে মঞ্চে এলে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁর মুখের নিকাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং একপর্যায়ে তা টেনে সরিয়ে দেন। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিহারের রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান। তবে তিনি এই ঘটনাকে ‘বিতর্ক’ বলতে নারাজ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাবা ও মেয়ের মধ্যে কি কোনো বিতর্ক হতে পারে? নীতীশ কুমার নারী শিক্ষার্থীদের নিজের মেয়ের মতো মনে করেন। আপনারা বিষয়টিকে কোথায় নিয়ে গেছেন?’

তবে এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নীতীশ কুমার। গত নভেম্বরের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এক জনসভায় এক নারীকে মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হলে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সে সময় এক জেডিইউ সংসদ সদস্য থামানোর চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ধমক দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মোদি সরকারের সদ্য পাস হওয়া ‘শান্তি’ বিল নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। দলের প্রবীণ নেতা ও রাজ্যসভার সংসদ সদস্য জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করতেই এই বিতর্কিত বিলটি সংসদে জোরপূর্বক পাস করা হয়েছে।

জয়রাম রমেশের দাবি, এই বিলের মাধ্যমে ভারতের পরমাণু খাতে বিদেশি সরবরাহকারীদের দায়বদ্ধতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘদিনের জাতীয় ঐকমত্যের পরিপন্থী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জয়রাম রমেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএএ) ২০২৬’-এর প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

তিনি বলেন, ট্রাম্প স্বাক্ষরিত ৩ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার ওই মার্কিন আইনের ১৯১২ নম্বর পৃষ্ঠায় ভারতের ‘পরমাণু দায়বদ্ধতা আইন’ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় পর্যালোচনার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমাদের নতুন বিলে সেটা নেই।

জয়রাম রমেশ বলেন, ‘এখন আমরা নিশ্চিত যে প্রধানমন্ত্রী কেন চলতি সপ্তাহেই “শান্তি” বিলটি পাস করার জন্য এত তাড়াহুড়ো করলেন। এটি তাঁর একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর (ট্রাম্প) সঙ্গে সুসম্পর্ক বা শান্তি ফিরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা মাত্র।’

কটাক্ষ করে তিনি বলেন, শান্তি বিলটিকে আসলে ‘ট্রাম্প অ্যাক্ট’ বলা উচিত। এর পূর্ণরূপ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন—‘দ্য রিঅ্যাক্টর ইউস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রমিজ অ্যাক্ট’।

কী আছে এই ‘শান্তি’ বিলে

মোদি সরকারের দাবি, ‘সাস্টেইনেবল হার্নেসিং অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া (শান্তি বা এসএইচএএনটিআই) বিল-২০২৫’ ভারতের পরমাণু খাতে আমূল পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করবে। এই বিলের মাধ্যমে ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ খাতে এই প্রথম বেসরকারি কোম্পানিগুলোর প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার ভারতের পরমাণু শক্তি দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। তাঁর মতে, এই বিলের লক্ষ্য হলো—১৯৬২ সালের পারমাণবিক শক্তি আইনের ভিত্তিতে আধুনিক প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও জ্বালানি বাস্তবতার সঙ্গে ভারতের পারমাণবিক কাঠামোকে আধুনিক করা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিল পাস হওয়াকে একটি ‘রূপান্তরমূলক মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেন।

বিলটির মূল লক্ষ্য হলো—ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বাড়ানো। বর্তমানে ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন উৎপাদন সক্ষমতা ৮ দশমিক ২ গিগাওয়াট। মোদি সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে তা ১০০ গিগাওয়াটে নিতে চায়। এ ছাড়া ভারতের ২০৭০ সালের মধ্য নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং পাশাপাশি ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়ার সঙ্গেও এটি সম্পর্কযুক্ত।

তবে বিরোধীরা বলছেন, নতুন এই বিলের মাধ্যম ১৯৬২ সালের পরমাণু শক্তি আইন ও ২০১০ সালের পরমাণু ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ক বেসামরিক দায়বদ্ধতা আইন (সিভিল লাইয়াবিলিটি ফর নিউক্লিয়ার ড্যামেজ আইন) বাতিল হয়ে গেছে।

বিরোধীদের প্রধান অভিযোগ, নতুন আইনে পারমাণবিক দুর্ঘটনায় সরঞ্জাম সরবরাহকারীর দায়বদ্ধতা-সংক্রান্ত কঠোর ধারাগুলো শিথিল করা হয়েছে। এখন কোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায় মূলত অপারেটরের ওপরই বর্তাবে।

সংসদে বিলটি পাসের সময় কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধী দলগুলো দাবি করেছিল, বিলটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হোক। কিন্তু সরকার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং বিরোধীদের ওয়াকআউটের মধ্যেই বিলটি পাস হয়ে যায়।

বিরোধীদের মতে, ২০১০ সালে যখন ইউপিএ সরকার পরমাণু দায়বদ্ধতা আইন এনেছিল, তখন বিজেপিই সরবরাহকারীর দায়বদ্ধতার দাবিতে অনড় ছিল। এখন সেই বিজেপিই ক্ষমতায় এসে বিদেশি সংস্থাগুলোকে ছাড় দিতে আইন শিথিল করছে, যা জনস্বার্থের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রিস উপকূলে মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৫৪০ অভিবাসী উদ্ধার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ গাভদোসের কাছে একটি মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫৪০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্ট গার্ড। গ্রিক কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) গাভদোস দ্বীপ থেকে প্রায় ১৬ নটিক্যাল মাইল (২৯.৬ কিমি) দূরে লিবীয় সাগরে নৌকাটি শনাক্ত করা হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের টহল জাহাজ প্রথমে নৌকাটি দেখতে পায়। এরপর কোস্ট গার্ডের তিনটি জাহাজ, ফ্রন্টেক্সের তিনটি জাহাজ ও তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজের সমন্বয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।

জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া ৫৪০ জন অভিবাসীর সবাই বর্তমানে সুস্থ আছেন। তাঁদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী ক্রিট দ্বীপের আগিয়া গালিনি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গ্রিক কোস্ট গার্ডের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ফিলিস্তিনি নাগরিকেরাও এই দলে ছিলেন।

তাঁদের আপাতত ক্রিট দ্বীপের রেথিমনো শহরের একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের (Asylum) আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর তোব্রুক থেকে পরিচালিত পাচারকারী চক্রগুলো এখন ইউরোপে প্রবেশের জন্য গাভদোস রুটটিকে বেশি ব্যবহার করছে। ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ক্রিট ও গাভদোসে ৭ হাজার ৩০০-এর বেশি অভিবাসী পৌঁছেছেন, যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের মোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন অভিবাসন চুক্তি কার্যকর হবে। এর আওতায় যাঁদের আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হবে, তাঁদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

উদ্ধারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, মিসর ও সুদানের নাগরিকেরা এই মরণযাত্রার জন্য পাচারকারী চক্রকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২.৫ থেকে ৬ লাখ টাকা) পরিশোধ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত