Ajker Patrika

রয়টার্সের প্রতিবেদন /বিদ্রোহীদের উত্থান ও ইরানের অনিশ্চয়তায় গাজায় অস্তিত্বের লড়াইয়ে হামাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, ১৬: ১২
২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর গাজায় হামাসের সমর্থনে স্থানীয় বাসিন্দাদের র‍্যালি। ছবি: এএফপি
২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর গাজায় হামাসের সমর্থনে স্থানীয় বাসিন্দাদের র‍্যালি। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গাজায় এখন কঠিন চাপের মুখে। টানা ২০ মাস ধরে ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে সংগঠনটির বড়ধরনের ক্ষতি হয়েছে। কমান্ডার-যোদ্ধাসংকট, টানেল বা সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের বড় অংশ ধ্বংস, বিদ্রোহী গোত্রের উত্থান ও মিত্র ইরানের সহযোগিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত হামাস।

হামাসের ঘনিষ্ঠ তিনটি সূত্র জানিয়েছে, হামাসের যোদ্ধারা এখন নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বাধীনভাবে লড়ছে। তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যত দিন সম্ভব টিকে থাকার। তবে গোষ্ঠীটি নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ, ইসরায়েল সরাসরি হামাসবিরোধী কিছু গোত্রকে সমর্থন দিচ্ছে।

গাজায় মানবিক সংকট আরও ভয়াবহ আকার নেওয়ায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। হামাসও এখন মরিয়া হয়ে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে, জানিয়েছে হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র। সূত্রটি আরও বলেছে, যুদ্ধবিরতি হলে শুধু সাধারণ গাজাবাসীর জন্য স্বস্তি আসবে না, হামাসও এই সুযোগে কিছু বিদ্রোহী গ্রুপ, কিছু গোত্র ও ত্রাণ লুটপাটে জড়িত অপরাধীদের দমন করতে পারবে।

হামাসের ঘনিষ্ঠ ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ১৬ জনের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। তারা হামাসের বর্তমান অবস্থার যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তাতে দেখা যায়—গোষ্ঠীটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিছুটা প্রভাব ও সামরিক সক্ষমতা এখনো রয়ে গেছে, তবে পরিস্থিতি খুবই কঠিন।

তবে এখনো হামাস আঘাত হানতে সক্ষম। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজায় হামলায় তারা সাতজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের তিন কূটনীতিকের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভেঙে পড়েছে। এখন তারা কেবল ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে।

অন্যদিকে অব্যাহত মানবিক সংকটে গাজায় সাধারণ মানুষ হামাসের ওপর ক্ষুব্ধ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে যুদ্ধবিরতির জন্য। হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সংগঠনটি এখন যুদ্ধবিরতির জন্য মরিয়া। কারণ, এতে শুধু সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে না, হামাসও এই সুযোগে বিদ্রোহী গ্রুপ, লুটেরা ও কিছু গোত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এই পরিস্থিতিতে হামাসের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ইয়াসির আবু শাবাব নামের এক বেদুইন নেতা। তিনি দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় অবস্থান করছেন। হামাসের তিনটি সূত্র জানিয়েছে, আবু শাবাবকে হত্যা কিংবা আটক করতে শীর্ষ যোদ্ধাদের পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আড়ালে আছেন।

হামাসের অভিযোগ, আবু শাবাব ইসরায়েলের সহযোগিতায় সংগঠনটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আবু শাবাবের গোষ্ঠী অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা কোনোভাবেই ইসরায়েলের সহযোগিতা নেয়নি। বরং নিজেদের ‘জনগণের জন্য কাজ করা বাহিনী’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে, যারা ত্রাণের ট্রাক পাহারা দেয় এবং লুটপাট ঠেকায়। তারা হামাসের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর ও ভিন্নমত দমনের অভিযোগ তুলেছে।

হামাসের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘যেকোনো মূল্যে আমরা এই সহযোগিতাকারী ইয়াসির আবু শাবাবের গ্যাংকে নির্মূল করব। তারা গাজায় বিশৃঙ্খলা তৈরি ও আইনশৃঙ্খলা ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে।’

ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তাদের দাবি, তারা এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। গাজার উপকূলীয় এলাকায় কয়েক শ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ ধ্বংস বা অকেজো করে দেওয়া হয়েছে। গাজার বড় অংশ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, হামাস এখন হতদরিদ্র, বাস্তুচ্যুত তরুণদের মধ্য থেকে নতুন যোদ্ধা সংগ্রহ করছে। ফলে সংগঠনটির যোদ্ধাদের গড় বয়স প্রতিদিনই কমছে।

গাজা সিটির বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সী নির্মাণশ্রমিক এসসাম বলেন, ‘তারা (হামাস) আগের মতো শক্তিশালী নেই। তবে মাঝেমধ্যে তারা দেখা দেয়—রুটির দোকানে লাইন নিয়ন্ত্রণ করে, ত্রাণ পাহারা দেয়, অপরাধীদের শাস্তি দেয়। তারা আছে, তবে আগের মতো আর নয়।’

রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে হামাসের শীর্ষ নেতা সামি আবু জুহরি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় রাজি আছি, সব বন্দীকে একসঙ্গে মুক্তি দিতেও প্রস্তুত। তবে আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা চাই হত্যাকাণ্ড বন্ধ হোক, ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করুক।’

গাজার পরিস্থিতি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অভিজ্ঞ গবেষক ইয়াজিদ সাইঘ বলেন, হামাসের এখন বেঁচে থাকার লড়াই চলছে। সামরিকভাবে টিকে থাকার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও সংগঠনটি বড় সংকটে পড়েছে। বৈরুতের ‘কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টারের’ এই জ্যেষ্ঠ গবেষক রয়টার্সকে বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ না হলে হামাস শুধু মাঠ থেকে নয়, গাজার সম্ভাব্য রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ থেকেই মুছে যেতে পারে। তারা এখন অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম চালাচ্ছে।’

গাজার স্থানীয় রাজনীতি ও গোত্রের ভূমিকা নিয়েও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে বলেছেন, তাঁরা হামাসবিরোধী কিছু ফিলিস্তিনি গোত্রকে অস্ত্র দিচ্ছেন। তবে তিনি কোন কোন গোত্রের কথা বলেছেন, তা খোলাসা করেননি। রাফাহের আবু শাবাবের গ্রুপই এখন হামাসের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। তারা পূর্ব রাফাহ নিয়ন্ত্রণ করে।

ফেসবুকে তাদের পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, তারা কারেম শালোম ক্রসিং দিয়ে ত্রাণের ট্রাক প্রবেশে সহায়তা করছে। আবু শাবাবের গোষ্ঠী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা কোনো প্রশাসনিক কর্তৃত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা শুধু বলছে, রাফাহ থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া লোকজন যেন ঘরে ফিরে আসে, তাদের জন্য খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে গাজার উত্তরের কিছু গোত্রও হামাসের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি তারা উত্তরের গাজায় ত্রাণের ট্রাক লুটপাট ঠেকিয়েছে। হামাসের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, এ ঘটনায় হামাস তাদের অনুমতি দিয়েছিল। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, ত্রাণের ট্রাকগুলো হামাসের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। হামাস ও সংশ্লিষ্ট গোত্রগুলো অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

হামাসের আরেকটি বড় সংকট তৈরি হয়েছে ইরানের ভূমিকা নিয়ে। এত দিন ইরানের সহযোগিতায় হামাসের সামরিক শাখা শক্তিশালী হয়েছিল। বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও জটিল হামলার কৌশল শিখিয়েছিল ইরান। কিন্তু সম্প্রতি ইরানে ইসরায়েলের হামলায় রেভল্যুশনারি গার্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সাঈদ ইজাদি নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে। ইজাদি সরাসরি হামাসের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

হামাস ইরানকে সমবেদনা জানিয়ে ইজাদিকে ‘ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছে। তবে হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরানের সহযোগিতা কমার ঝুঁকি রয়েছে। এতে হামাসের অর্থায়ন ও সামরিক দক্ষতা বাড়ানোর সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে হামাসের অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির শীর্ষ নেতা সামি আবু জুহরি বলেন, ‘ইরান বড় ও শক্তিশালী দেশ, তাকে সহজে হারানো যাবে না। ইরানের সহযোগিতার ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে।’

গাজা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক আকরাম আতা-আল্লাহ মনে করেন, ইয়াসির আবু শাবাবের উত্থান মূলত হামাসের দুর্বলতারই প্রতিফলন। তিনি বলেন, আবু শাবাবের মতো কেউই সফল হতে পারবেন না, কারণ, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতাকে ঘৃণা করে। তবে একই সংস্কৃতির ভেতর থেকে এমন শত্রু থাকাটা হামাসের জন্য বড় হুমকি। যত দিন পর্যন্ত তাঁকে সরিয়ে ফেলা না যায়, হুমকি থেকেই যাবে।

গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে থাকা কূটনৈতিক মহল এবং বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, হামাস এখন আর আগের মতো সংগঠিত ও শক্তিশালী নেই। সংগঠনটির সামনে টিকে থাকার জন্য কেবল সামরিক নয়, বড় রাজনৈতিক যুদ্ধও অপেক্ষা করছে। আর সেই যুদ্ধে হামাস কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে যুদ্ধ থামার সুযোগ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির মোড় ঘোরানোর ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভেনেজুয়েলায় ভ্রমণ নিয়ে নতুন করে কঠোর সতর্কতা জারি করেছে। দেশটিতে থাকা সব মার্কিন নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের অবিলম্বে দেশটি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। নিরাপত্তা হুমকি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই নির্দেশনা দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় ভুলভাবে আটক হওয়া, আটক অবস্থায় নির্যাতন, সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ, স্থানীয় আইনের স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগ, অপরাধ, নাগরিক অস্থিরতা এবং দুর্বল স্বাস্থ্যসেবার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তাই দেশটিতে ভ্রমণ না করতে এবং সেখানে অবস্থান না করতে মার্কিন নাগরিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

ঘোষণায় আরও বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় থাকা সব মার্কিন নাগরিক ও আইনগত স্থায়ী বাসিন্দাদের অবিলম্বে দেশ ছাড়তে জোরালো পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই সতর্কবার্তা এল এমন এক সময়, যার কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রাণঘাতী হামলায় অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে একটি নৌকা লক্ষ্য করে মার্কিন বাহিনী হামলা চালায়। এতে চারজন নিহত হয়েছেন বলে ইউএস সাউদার্ন কমান্ড এক বিবৃতিতে জানায়।

সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী এই নৌযানটি একটি ‘সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সংগঠনের’ সঙ্গে যুক্ত। গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, নৌকাটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর পথে অবৈধ মাদক পরিবহন করছিল। এক্সে দেওয়া পোস্টে সাউদার্ন কমান্ড জানায়, নৌকায় থাকা চার পুরুষ ‘মাদকসন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বহু ইঞ্জিনবিশিষ্ট দ্রুতগতির নৌকাটি আচমকা একটি প্রবল বিস্ফোরণে আঘাত পেয়ে আগুনে ঘিরে যায়।

ঘটনাটি অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তৃত মাদকবিরোধী সামরিক অভিযানের অংশ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই অভিযান নিয়ে সমালোচনা বেড়েছে, কারণ এতে নিহতের সংখ্যা এখন ৮৫–এর বেশি ছাড়িয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনার জেরে একযোগে ছয়টি বড় আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনের অবতরণ ও উড্ডয়নের অনুমতি বাতিল করেছে ভেনেজুয়েলা। এর আগে মার্কিন সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে ভেনেজুয়েলার কারাকাসগামী ফ্লাইটগুলো স্থগিত করেছিল এই এয়ারলাইনগুলো। পরে ভেনেজুয়েলা তাদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় ২৭ নভেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ হওয়া এয়ারলাইনগুলো হলো—আইবেরিয়া, টিএপি পর্তুগাল, গোল, লাতাম, অ্যাভিয়াঙ্কা এবং টার্কিশ এয়ারলাইনস। ভেনেজুয়েলার এই সিদ্ধান্তে হাজারো যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। তবে কিছু ছোট ছোট এয়ারলাইন এখনো দেশটিতে যাতায়াত করছে।

সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ঘিরে এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূলীয় এলাকায় ১৫ হাজার সেনা এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড মোতায়েন করেছে। ওয়াশিংটন বলছে, এই অভিযান মাদকবিরোধী তৎপরতার অংশ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযানে এত বড় সামরিক উপস্থিতি সাধারণত দেখা যায় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও ক্ষমতাধর আসিম মুনির, হলেন পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে দেশের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সত্তরের দশকের পর দেশটির সামরিক কমান্ডে এটি হলো সবচেয়ে বড়ো ও ব্যাপক পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই নিয়োগে অনুমোদন দেন। খবর দ্য ডনের।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাপ্রধানের (সিওএএস) সঙ্গে সমান্তরালভাবে সিডিএফ হিসাবেও নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন।’ এই বিবৃতি বহুদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই প্রেসিডেন্টকে এই নতুন দ্বৈত-দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সেনাবাহিনী প্রধান এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসাবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।’

এই নতুন ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীতে ২৪৩ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে, একটি মাত্র অফিসের অধীনে সশস্ত্রবাহিনীর অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও কৌশলগত ক্ষমতাকে একত্র করা হয়েছে। সংশোধিত ২৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করবেন, যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসাবেও কাজ করবেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু থাকা তিনবাহিনী সমন্বয় ব্যবস্থা—চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) অফিস বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে যৌথ কমান্ডের ইন্টিগ্রেশন সিডিএফ-এর হাতে চলে এল।

সাংবিধানিক এই আমূল পরিবর্তনকে সামরিক বাহিনীর আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকার ২৭ তম সংশোধনীর পরপরই ১৯৫২ সালের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টেও (পিএএ) সংশোধন আনে। পিএএ-এর ৮এ অনুচ্ছেদের উপ-ধারা (১) এখন জানাচ্ছে যে, ‘প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী প্রধান যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হবেন […], তাঁর মেয়াদ এই ধারার অধীনে ওই পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই প্রথম সিওএএসসহ-সিডিএফ-এর বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের বিদ্যমান মেয়াদ ওই বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ ৮এ অনুচ্ছেদের উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী, সিওএএস যিনি একই সঙ্গে সিডিএফ-এরও দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর ‘শর্তাবলি ও নিয়ম’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট স্থির করবেন।

ফিল্ড মার্শাল মুনির ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৭ তম সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার পিএএ-তে পরিবর্তন আনে, যেখানে সিজেসিএসসি-এর মেয়াদ তিন বছর অপরিবর্তিত রেখে বাকি তিন বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। একই সংশোধনীতে সার্ভিস চিফদের পুনঃ নিয়োগ বা তাঁদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর ছিল।

ফলস্বরূপ, ২৭ তম সংশোধনীর অধীনে এই পুনর্গঠনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে, পিএএ-এর সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সিওএএসসহ-সিডিএফ-কে আরও পাঁচ বছরের জন্য পুনঃ নিয়োগ বা তাঁর মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে। এর ফলে তিনি ২০৩৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্তও পদে থাকতে পারেন।

এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা ব্যাপক জল্পনা বাড়িয়েছিল। বিশেষ করে, যখন ২৭ নভেম্বর জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা অবসর নেওয়ার পর সিজেসিএসসি পদটি বিলুপ্ত হয়। ফিল্ড মার্শাল মুনির-এর আসল তিন বছরের সেনাপ্রধানের মেয়াদ (গত বছরের সংশোধনীর আগে) ২৯ নভেম্বরে শেষ হয়, কিন্তু সেদিনও কোনো বিজ্ঞপ্তি না আসায় আরও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অনেকে মনে করেন, সরকার হয়তো আসন্ন চার-তারকা পদের নিয়োগ নিয়ে দর-কষাকষির জন্য এই নিয়োগ আটকে রেখেছিল।

রাজনৈতিক মহল থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের নতুন কমান্ডার (সিএনএসসি), ভাইস চিফ অব দ্য আর্মি স্টাফ (ভিসিওএএস) এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আইএসআই প্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে দরদাম করতেই এই দেরি। সেনাবাহিনী আগেই স্পষ্ট করেছিল যে, কোনো ভিসিওএএস নিয়োগ করা হচ্ছে না। তবে সংশোধিত আইন অনুযায়ী, সিএনএসসি এবং যেকোনো ভিসিওএএস-এর নিয়োগ সিডিএফ-এর সুপারিশের সঙ্গে যুক্ত।

সরকারি কর্মকর্তারা বারবার সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো উত্তেজনার কথা অস্বীকার করেছেন, জানিয়েছেন যে প্রক্রিয়াগত প্রয়োজনীয়তা ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সূচি সময়রেখা নির্ধারণ করেছে। তবুও, ২৭ তম সংশোধনী যেভাবে তাড়াহুড়ো করে সংসদে পাশ করানো হয়েছিল, তার পরে এমন নীরবতাকে অনেকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেছেন। এই সংশোধনী কেন্দ্রীয় সরকারকে সিডিএফ-এর কার্যাবলি নির্ধারণের ক্ষমতাও দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বহু-ডোমেন ইন্টিগ্রেশন, পুনর্গঠন এবং সার্ভিসগুলোর মধ্যে যৌথতা বাড়ানো।

এদিকে, আইনসচিব আজম নাজির তারার জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সিডিএফ-এর জন্য একটি নতুন অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত করছে এবং এর খসড়া একদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সিডিএফ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কোনো মতপার্থক্যের ধারণা তিনি নাকচ করে দেন, জোর দিয়ে বলেন যে প্রধানমন্ত্রীর দেশের বাইরে থাকার কারণেই এই বিলম্ব। কর্মকর্তারা বলছেন, এই অর্গানোগ্রামেই সিডিএফ, সার্ভিস চিফ ও নতুন প্রতিষ্ঠিত কৌশলগত কমান্ডের মধ্যে কমান্ডের প্রবাহ কেমন হবে, তা উল্লেখ করা থাকবে।

সিডিএফ-এর নিয়োগ অনুমোদনের পাশাপাশি, প্রেসিডেন্ট জারদারি বিমানবাহিনীর নেতৃত্বের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শও অনুমোদন করেছেন। প্রেসিডেন্ট ভবন জানিয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমদ বাবর সিধুর জন্য ২০২৬ সালের ১৯ মার্চ থেকে দুই বছরের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছেন।’

এই মেয়াদ বৃদ্ধিটি আগামী বছরের মার্চে তাঁর বর্তমান পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কার্যকর হবে, যা তাঁকে ২০২৮ সালের মার্চ পর্যন্ত পদে বহাল রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জ্বালানি কিনতে পারলে, ভারত কেন পারবে না—প্রশ্ন পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৮
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমানবন্দরে তাঁকে আলিঙ্গন করে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর পরই পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র যদি রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিনতে পারে, তবে ভারত কেন তা পারবে না।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে অবতরণের কয়েক ঘণ্টা পর পুতিন ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেতে এই মন্তব্য মন্তব্য করেন। এই সফরের সময় উভয় দেশ পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতকে রাশিয়াকে এড়িয়ে চলতে চাপ দিচ্ছে, ঠিক তখন চার বছরে পুতিনের এই প্রথম ভারত সফরের লক্ষ্য হলো রাশিয়ার তেল, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং যুদ্ধবিমানের বিক্রি বাড়ানো, এবং জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বাইরেও ব্যবসায়িক সম্পর্ক প্রসারিত করা।

নয়াদিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে এবং বহু দশক ধরে রাশিয়া ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহের উৎস। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারত সমুদ্রপথে আসা রাশিয়ার তেলের শীর্ষ ক্রেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যখন বলছে যে ভারতের সস্তায় রুশ তেল কেনা মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নে সাহায্য করছে, তখন ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক শুল্ক এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কঠোর হওয়ার ফলে এই মাসে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হতে চলেছে।

পুতিন ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখনো তার নিজস্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য আমাদের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি কেনে। সেটিও তো জ্বালানি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের জ্বালানি কেনার অধিকার থাকে, তবে ভারতের কেন একই সুযোগ থাকবে না? এই প্রশ্নটির পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা প্রয়োজন, এবং আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।’

ভারত বলেছে যে ট্রাম্পের শুল্ক অন্যায্য এবং অযৌক্তিক এবং মস্কোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্যের দিকে ইঙ্গিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে শুরু করে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পর্যন্ত কোটি কোটি ডলারের রাশিয়ান জ্বালানি ও পণ্য আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

পশ্চিমাদের চাপের কারণে ভারতীয় তেলের ক্রয় কমেছে কি না জানতে চাইলে পুতিন বলেন, ‘এই বছরের প্রথম ৯ মাসে সামগ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণে কিছুটা হ্রাস দেখা গেছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এটা কেবল একটি সামান্য সমন্বয়। সামগ্রিকভাবে, আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় আগের মতোই আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং অপরিশোধিত তেল... রাশিয়ার তেলের বাণিজ্য ভারতে মসৃণভাবে চলছে।’

ভারত ও রাশিয়ার ট্রাম্প এবং তাঁর শুল্কের সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা উচিত জানতে চাইলে পুতিন বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন কিছু উপদেষ্টা আছেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন যে এই ধরনের শুল্কনীতি বাস্তবায়ন চূড়ান্তভাবে মার্কিন অর্থনীতির জন্য উপকারী। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি যে শেষ পর্যন্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সকল নিয়ম লঙ্ঘন সংশোধন করা হবে।’

এর কয়েক ঘণ্টা আগে নরেন্দ্র মোদি দিল্লিতে বিমানবন্দরে পুতিনকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরের রানওয়েতে লালগালিচার ওপর তাঁরা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন এবং তারপর প্রধানমন্ত্রী মোদি আয়োজিত একটি ব্যক্তিগত নৈশভোজের জন্য একই গাড়িতে চলে যান।

পুতিনের এই সফরে রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন মন্ত্রী এবং একটি বড় রাশিয়ান ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লিতে উপস্থিত ছিল। শুক্রবার দুই নেতা শীর্ষ বৈঠক করবেন, যেখানে একাধিক চুক্তি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইন্ডিগোতে ফ্লাইট বিপর্যয়: এক দিনে বাতিল ৫৫০-এর বেশি ফ্লাইট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ২০ বছরের পুরোনো বিমান পরিবহন সংস্থা ইন্ডিগো এক দিনে ৫৫০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল করার মধ্য দিয়ে এক নতুন ও উদ্বেগজনক রেকর্ড তৈরি করেছে। ক্রু-সংক্রান্ত সমস্যা এবং প্রযুক্তিগত জটিলতাসহ একাধিক পরিচালনাগত ব্যাঘাতের কারণে এই বিপর্যয় টানা তৃতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে।

সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পিটার এলবার্স কর্মীদের উদ্দেশ করে বলেছেন, এই মুহূর্তে স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনা এবং সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখা ‘সহজ লক্ষ্য’ হবে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইন্ডিগো তাদের সময়সূচি সমন্বয় করেছে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার অংশ হিসেবে পূর্বপরিকল্পিত পরিষেবা বাতিল করছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা ছিল নিম্নরূপ—মুম্বাইয়ে কমপক্ষে ১১৮টি, বেঙ্গালুরুতে ১০০টি, হায়দরাবাদে ৭৫, কলকাতায় ৩৫, চেন্নাইয়ে ২৬ এবং গোয়ায় ১১টি। অন্যান্য বিমানবন্দর থেকেও ফ্লাইট বাতিলের খবর পাওয়া গেছে।

ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, তারা সংশোধিত ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস (এফডিটিএল) নিয়মের অধীনে ক্রুদের প্রয়োজনীয়তা ভুলভাবে মূল্যায়ন করেছিল। এই পরিকল্পনার ত্রুটির ফলেই শীতকালীন আবহাওয়া এবং অতিরিক্ত ভিড়ের সময় পর্যাপ্ত ক্রুর অভাব দেখা দিয়েছে।

আদালতের নির্দেশে গত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া এফডিটিএল নিয়মের দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নে রূপান্তরকালীন অসুবিধার কারণেই এই বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে বলে ইন্ডিগো ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশনকে (ডিজিসিএ) জানিয়েছে। তারা উল্লেখ করেছে যে দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পাইলটের প্রকৃত সংখ্যা তাদের পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।

বিমান সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এফডিটএলের নতুন নিয়মের ফলে কর্মীর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে রাতের বেলা অপারেশনের ক্ষেত্রে, যেখানে স্লট কম এবং ডিউটি সময়ের বিধিনিষেধ কঠোর। এই নতুন নিয়মগুলো পাইলটদের নিরাপত্তা ও ক্লান্তি ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য তৈরি করা হয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ইন্ডিগো অস্থায়ীভাবে দুটি নিয়ম প্রত্যাহার করেছে—

১. রাত ডিউটির সংজ্ঞা মধ্যরাত থেকে ভোর ৬টা করার নিয়মটি সাময়িকভাবে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং

২. রাতে অবতরণের সংখ্যা দুটিতে সীমাবদ্ধ করার নিয়মটিও সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।

সংস্থাটি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত