Ajker Patrika

ফিলিস্তিনের নেলসন ম্যান্ডেলা: বারঘৌতির মুক্তির দাবিতে সোচ্চার দুই শতাধিক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৫
মারওয়ান বারঘৌতির মুক্তির দাবিতে প্রচার-প্রচারণায় নেলসন ম্যান্ডেলার পক্ষে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গে টেনে আনা হচ্ছে। ছবি: ডেভিড মিরজোয়েফ/ওন দ্য স্পেস
মারওয়ান বারঘৌতির মুক্তির দাবিতে প্রচার-প্রচারণায় নেলসন ম্যান্ডেলার পক্ষে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গে টেনে আনা হচ্ছে। ছবি: ডেভিড মিরজোয়েফ/ওন দ্য স্পেস

মারওয়ান বারঘৌতিকে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রক্রিয়ায় গতি আনা এবং ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন উপগ্রুপের মধ্যে ঐক্য স্থাপনে সক্ষম একমাত্র নেতা মনে করা হয়। তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে একজোট হয়েছেন বিশ্বের দুই শতাধিক অগ্রণী সাংস্কৃতিক, শিল্প ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ইসরায়েলি কারাগারে ২৩ বছর ধরে বন্দী ৬৬ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি নেতার মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে খোলা চিঠিতে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।

গ্রেপ্তার হওয়ার সময় বারঘৌতি ছিলেন নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য। দীর্ঘ কারাবাসের পরও তিনি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবেই রয়ে গেছেন। জনমত জরিপগুলোতে বারবার সেটি প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ায়, বারঘৌতিকেই এই অচলাবস্থা কাটানোর একমাত্র আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই মর্যাদাপূর্ণ এবং বৈচিত্র্যময় গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন সাহিত্য, অভিনয়, সংগীত এবং শিল্পজগতের বহু সুপরিচিত মুখ। এই ঘটনা নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির সময়ের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে। শিল্পজগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রথিতযশা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বারঘৌতির মুক্তির দাবিতে খোলা চিঠি দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম:

সাহিত্য ও অভিনয়: আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন নোবেলজয়ী ফরাসি লেখিকা অ্যানি এরনো, খ্যাতিমান লেখিকা মার্গারেট অ্যাটউড, ফিলিপ পুলম্যান, জাডি স্মিথ। অভিনেতাদের মধ্যে রয়েছেন স্যার ইয়ান ম্যাকেলেন, বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ, টিলডা সুইন্টন, মার্ক রাফালো, জশ ও’কনর এবং উপস্থাপক ও সাবেক ফুটবলার গ্যারি লিনেকার।

সংগীত ও অন্যান্য ক্ষেত্র: সংগীতশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন স্টিং, পল সাইমন, ব্রায়ান ইনো এবং অ্যানি লেনক্স। এ ছাড়া, অভিনেতা ও উপস্থাপক স্টিফেন ফ্রাই, ব্রিটিশ রন্ধনশিল্পী ডেলিয়া স্মিথ, পরিচালক স্যার রিচার্ড আয়ার, শিল্পী আই ওয়েইওয়েই এবং বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনও এই আবেদনে সমর্থন জানিয়েছেন।

আইন বিশেষজ্ঞরা বারঘৌতির বিচারকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। ফিলিস্তিনি-ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও আইনজীবী সেলমা দাব্বাগ বলেন, ‘মারওয়ানের বিচার প্রক্রিয়াটি ব্যাপকভাবে প্রহসনমূলক বলে বিবেচিত হয়েছিল। বিশ্বের সংসদগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা—ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)—তাদের নিজস্ব মূল্যায়নে এই বিচারকে গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে।’

মারওয়ান বারঘৌতির মুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলের অব্যাহত অস্বীকৃতির মূল কারণ নিরাপত্তা নয়, বরং তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইসরায়েল ভয় পাচ্ছে যে বারঘৌতি মুক্তি পেলে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য তৈরি করতে পারবেন এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রচেষ্টায় গতি আনতে সক্ষম হবেন। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় বন্দী বিনিময়ের সময়ও ইসরায়েল তাঁকে মুক্তি দিতে রাজি হয়নি।

উদ্বেগের কারণ হলো, ইসরায়েলি সরকার নতুন আইন পাসের উদ্যোগ নিয়েছে, যা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অনুমতি পাওয়া যাবে। যদি এই আইন কার্যকর হয়, তাহলে মারওয়ান বারঘৌতিসহ অনেক জনপ্রিয় নেতা ঝুঁকির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বারঘৌতির মুক্তির আন্দোলন এমন সময় জোরালো হয়েছে, যখন জাতিসংঘ গাজায় একটি ‘আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী’ প্রতিষ্ঠার জন্য ওয়াশিংটনের আহ্বানে সমর্থন জানিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগ মানবাধিকার সংস্থা এই জাতিসংঘ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বারঘৌতি মুক্তি পেলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তাঁকে এই বিভক্তি মোকাবিলা করতে হতে পারে। এর কারণ, প্রস্তাবিত বাহিনী হামাসের অস্ত্র সমর্পণ প্রশ্নে সংঘাতের মুখে পড়তে পারে। গাজা থেকে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো হামাসকে নিরস্ত্র করা।

বারঘৌতির মুক্তির দাবিতে এই প্রচারকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। অবশ্য ম্যান্ডেলা ২০০২ সালে নিজেই এই তুলনা টেনে বলেছিলেন: ‘বারঘৌতির সঙ্গে যা ঘটছে, তা আমার সঙ্গে ঘটার মতোই।’

ব্রিটিশ সুরকার ব্রায়ান ইনো এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে বলেন, ‘ইতিহাস আমাদের দেখায়, সাংস্কৃতিক কণ্ঠস্বর রাজনীতির গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। ঠিক যেমন বিশ্বব্যাপী সংহতি নেলসন ম্যান্ডেলাকে মুক্ত করতে সাহায্য করেছিল, তেমনি মারওয়ান বারঘৌতিকে মুক্ত করার দিনটিকে দ্রুত এগিয়ে আনার ক্ষমতা আমাদের সবার আছে। তাঁর মুক্তি এই দীর্ঘ সংগ্রামের একটি সন্ধিক্ষণ চিহ্নিত করবে এবং আমাদের সবার জন্য প্রয়োজনীয় আশার সুবাতাস বয়ে আনবে।’

খোলা চিঠির পূর্ণ বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মহলকে অনুরোধ করা হয়েছে: ‘আমরা জাতিসংঘ এবং বিশ্বের সরকারগুলোর কাছে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মারওয়ান বারঘৌতির মুক্তির জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জোরালো চাপ না এলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর মুক্তি আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ওপর মার্কিন চাপ আরও কমানোর একটি ইঙ্গিত এখান থেকে আসতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ