Ajker Patrika

পাঁচ রাজ্যের জনমত কংগ্রেস–বিজেপির বিপক্ষে

প্রতিনিধি
পাঁচ রাজ্যের জনমত কংগ্রেস–বিজেপির বিপক্ষে

কলকাতা: কোভিডকালে ভারতের পাঁচ রাজ্য এবং ইউনিয়ন টেরিটোরি পডুচেরির ভোটে প্রত্যাশিত ফল পাচ্ছে না বিজেপি বা কংগ্রেস কেউই। বুথফেরত জরিপে এই বৃহৎ দুই দলের কোনও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য চূড়ান্ত ফল জানতে রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বুথফেরত জরিপে স্পষ্ট ইঙ্গিত, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস, তামিলনাডুতে এমকে স্টালিনের ডিএমকে এবং কেরালায় পিনারাই বিজয়নের হাত ধরে বামেদের পক্ষেই রয়েছে জনমত।

এছাড়া কোভিডকালে ভোট আয়োজনে পাঁচ মাস আগে বিহারে ভারতের নির্বাচন কমিশন সাফল্য পেলেও এবারের ভোটে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অভিযোগে আঙ্গুল উঠছে তাদের দিকেই। কয়েক দফায় ভোটগ্রহণ এবং প্রধানমন্ত্রীসহ শাসক দলের ইচ্ছেমতো জনসমাবেশ করতে দেওয়ার কারণে কমিশনের বিরুদ্ধে সংক্রমণের পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও তুলছেন অনেকে।

২০১৯ সালে প্রবল বিক্রমে নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখে দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন ঘটে বিজেপির। মোদিকে সামনে রেখেই বিভিন্ন রাজ্যে ভোটে লড়ছে বিজেপি। কিন্তু দ্বিতীয় দফার মোদি সরকারের নয়া কৃষি আইন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, ক্ষমতায় এসেই কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ, দেশের বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশে বিজেপির শাসনে একাধিক সমালোচিত ঘটনা– শাসক দলকে বারবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে কংগ্রেস সরকারবিরোধী আবেগকে ভোটে রূপান্তরিত করতে পারেনি। মাত্র পাঁচ মাস আগে 'মহাগাঁট বন্ধন' করেও বিহারে হারানো যায়নি বিজেপির জোটকে। কারণ সেই কংগ্রেস। শরিক দলগুলো ভালো ফল করলেও কংগ্রেস প্রার্থীরা ভোটারদের মনে দাগ কাটতে ব্যর্থ হন। বিহার-ব্যর্থতার জন্য কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর অসুস্থতার পাশাপাশি রাহুল গান্ধী ও তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর লাগাতার কর্মসূচির অভাবকেও অনেকে দায়ী করেন।

কারণ যাইহোক জরিপে নিশ্চিত, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের বিন্দুমাত্র দাগ কাটতে পারবে না। পুরোনো শত্রু বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়েও কোনও লাভ যে হচ্ছে না, সেটি কংগ্রেস নেতারা একান্তে স্বীকারও করছেন। পশ্চিমবঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে বামেরাও। এবারের লড়াই মোদি বনাম মমতার। পশ্চিমবঙ্গ জিততে মরিয়া মোদি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন প্রচারে। মমতার পাল্টা কোনও রাজ্য নেতাকে সামনে না রেখে, মোদির ইমেজকেই বাজি ধরেন বিজেপি নেতারা। কোভিডকালেও দিল্লির বিজেপি নেতারা বিমানে 'ডেলি-প্যাসেঞ্জারি' করেন। তৃণমূলের একঝাঁক নেতা-মন্ত্রী নাম লেখান বিজেপিতে। প্রশ্ন ওঠে, 'কোথায় বিজেপি! প্রার্থীরা তো অনেকেই তৃণমূলের ঘরের লোক!'

তৃণমূলের বহু নেতা এবার ছিলেন বিজেপির প্রার্থী। দলে মমতার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায় আগেই বিজেপিতে ভিড়েছেন। ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুলে আরও অনেক হেভিওয়েট।

একদিকে, ভারতের শাসক দলের প্রধানমন্ত্রীসহ একঝাঁক তারকা মন্ত্রী, মিঠুন চক্রবর্তীর মতো জনপ্রিয় অভিনেতা, সঙ্গে আবার দলছুট তৃণমূল নেতা-নেত্রী। অন্যদিকে, মমতা একা। একার গ্ল্যামারকে পুঁজি করে লড়েছেন গদি রক্ষায়। বেশিরভাগ জরিপের আভাস, তিনিই থাকছেন। থাকুন বা না থাকুন, রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে একা যেভাবে ভোটকে হাড্ডাহাড্ডি পর্যায়ে তুলে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন, সেটাও কম নয়। ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন বিজেপিরই নেতারা।

জরিপ বলছে, এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ) এবং সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) নিয়ে বিতর্কের মধ্যেও আসামে ক্ষমতায় ফিরতে পারে বিজেপির জোট। কিন্তু এই জরিপেই দেখাচ্ছে বিজেপির মিত্রজোটের থেকে কংগ্রেসের মহাজোট অন্তত ৫ শতাংশ ভোট বেশি পাচ্ছে। আর এটা পাচ্ছে, মহাজোটের বাকি নয় শরিকের হাত ধরে। ১২৬টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস একাই প্রার্থী দিয়েছে ৮০টিতে। বাকিরা ৪৬। জরিপের ইঙ্গিত, শরিকরা ভালো ফল করবে, কংগ্রেস নয়। কারণ? নেতৃত্বের দুর্বলতা।

আবার বিজেপির জোট ক্ষমতায় এলেও ভোট কমবে তাঁদের। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপি নেতারা গোটা আসামও চষে বেড়ান। তবু ভোট কম। মোদি-ম্যাজিক উধাও জরিপে। অথচ, রাজ্যে নিজেদের সরকার থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের বদলে মোদি-মডেল সামনে রেখে ভোট করে বিজেপি। সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে। তবু 'হাড্ডাহাড্ডি' লড়াই মোটেই স্বস্তি দিচ্ছে না বিজেপিকে।

আসামে তবু ক্ষমতায় ফেরার চান্স আছে। কিন্তু ভারতের দাক্ষিণাত্যে কর্নাটক ছাড়া 'পদ্ম-চাষ'-এর সম্ভাবনা এখনও অধরা। কেরালা এখন দেশের একমাত্র বামশাসিত রাজ্য। রাহুল গান্ধী এখান থেকেই জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য। প্রতি পাঁচ বছর পর সরকার পরিবর্তন এখানকার নিয়ম।। সেই হিসাবে বামেদের হটিয়ে কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার কথা। বিজেপিও সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপায়। কিন্তু জরিপ বলছে, কেরালায় ফের ফিরছে বামেরা। কংগ্রেস ও বিজেপি পরাস্ত ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত রাজ্যটিতে। জরিপ মতে, প্রবীণ সিপিএম নেতা মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কোভিড ম্যানেজমেন্টই রক্ষা করেছে দেশের একমাত্র লালদুর্গ। এখানকার মহামারি ব্যবস্থা গোটা দুনিয়াতেই প্রশংসিত। তাই শিক্ষিত রাজ্যবাসী ভুল করেননি সফল সরকারকে যোগ্য মর্যাদা দিতে।

কংগ্রেসের একমাত্র 'ললিপপ' তামিলনাড়ু। ডিএমকের হাত ধরে তাঁরা ক্ষমতায় ফিরতে পারে। সব বুথফেরত জরিপই এমন বলছে। হারছে বিজেপি-এআইডিএমকে। কিন্তু এই জয়ে কংগ্রেসের ভূমিকা অতি সামান্য। কারণ রাজ্যের ২৩৪টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস লড়েছেই ২৫টিতে। জিতছে ডিএমকে একাই। জয়ে সঙ্গে রয়েছে কংগ্রেস। ছোট্ট রাজ্য পডুচেরিতে গতবার জিতেছিল কংগ্রেস। কিন্তু ভোটের ক'দিন আগে দলবদলে কংগ্রেস তছনছ। দলছুটদের ভরসায় সেখানে ক্ষমতায় আসতে পারে বিজেপির জোট।

সবই সমীক্ষার ইঙ্গিত। আসল ছবি জানা যাবে রোববার। পাঁচ রাজ্যের ভোটগণনা। তবু, জরিপের আভাস কংগ্রেস ও বিজেপির জন্য খুব একটা স্বস্তির হচ্ছে না। বড়জোড় দুয়েক রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারেন তাঁরা। লোকসভার সেই ইমেজ নেই বিজেপির। কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানো এখনও বিশবাঁও জলে! ফের জোট রাজনীতিই ভারতের ভবিতব্য কিনা সেটি অবশ্য বলার সময় এখনো আসেনি। যদিও আভাস মিলতে পারে ২০২২-এর শুরুতেই। আগামী বছরের শেষ নাগাদ ভোট রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, মণিপুর ও উত্তরাখণ্ডে এবং বছর শেষে গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশ। ২০২৪-এর শুরুতে ভারতে সাধারণ নির্বাচন। তাই মোদির গদি এখন সুরক্ষিত, কিন্তু ইমেজ ধরে টান দিয়েছে জরিপের ফলাফল।

কংগ্রেস ও বিজেপি ছাড়াও কোভিডকালের এই ভোট ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছেও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কলকাতা ও মাদ্রাজ হাইকোর্ট যেভাবে কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছেন সেটা অভূতপূর্ব। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতও কমিশনের ভূমিকায় মোটেই সন্তুষ্ট নন। কারণ অতিমারির সময় নেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ব্যর্থ কমিশন। তাই, মাদ্রাজ হাইকোর্ট কমিশনের বিরুদ্ধে হত্যার মামলা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন। কলকাতা হাইকোর্ট ভারতের সাবেক মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টিএন শেষণের উদাহরণ টেনে বর্তমান কর্মকতাদের ব্যর্থতা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। বেড়েছে পক্ষপাতের অভিযোগও। সবমিলিয়ে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি প্রশ্ন চিহ্নের সামনে ভারতের নির্বাচন কমিশনও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচের ঘটনায় বদলে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়ার অস্ত্র-আইন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: রয়টার্স
নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: রয়টার্স

দেশের সবচেয়ে বড় বন্দুক হামলার একদিন পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) কড়া বন্দুক আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শনিবার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের একটি হানুক্কাহ অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।

পুলিশ অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ না করলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তাঁদের একজনের নাম সাজিদ আকরাম এবং অন্যজন নাভিদ আকরাম। সম্পর্কে তাঁরা পিতা-পুত্র।

বন্দুকধারীদের গাড়িতে জঙ্গি সংস্থা আইএস-এর দুটি পতাকা পাওয়া গেছে। ২৪ বছর বয়সী অভিযুক্ত নাভিদের বাবা সাজিদ তথা অপর অভিযুক্তের কাছে ২০১৫ সাল থেকে অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল এবং তাঁর কাছে ছয়টি নিবন্ধিত অস্ত্র ছিল। এসব অস্ত্র দিয়েই হামলাকারীরা প্রায় ১০–২০ মিনিট ধরে উৎসবে উপস্থিত মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুও রয়েছে এবং নিহতদের বয়স ১০ থেকে ৮৭ বছর পর্যন্ত।

রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার পর হাসপাতালে নেওয়া ৪০ জনের মধ্যে দুজন পুলিশও ছিলেন। এ ছাড়া ঘটনার সময় হামলাকারী নাভিদ গুরুতর আহত হলেও তাঁর বাবা সাজিদ পুলিশের পাল্টা গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন।

সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছেন, ‘গতকাল আমরা যা দেখেছি, তা ছিল ধর্মবিরোধী খাঁটি শয়তানদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’ তিনি ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকার বন্দুক নিয়ম কঠোর করবে এবং জাতীয় অস্ত্র নিবন্ধন চালু করবে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বন্ডাই বিচে প্রায় ১ হাজার মানুষ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হতভম্ব হয়ে দিগ্‌বিদিক পালিয়ে যান। তবে আহমেদ আল-আহমেদ নামে এক বীর নাগরিক খালি হাতে এক হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে বহু মানুষের জীবন বাঁচান। এ সময় আল-আহমেদ নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

বিশ্ব নেতারা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এটি অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে গুরুতর বন্দুক হামলার ঘটনা।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় দেড় লাখ ইহুদি বসবাস করেন। তাঁদের এক-তৃতীয়াংশই বাস করেন সিডনির পূর্বাঞ্চলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মুখে ধনকুবের থেকে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের মুখ জিমি লাই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০১৯ সালে হংকংয়ের রাজপথে সংঘটিত গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে ধনকুবের জিমি লাই। ছবি: বিবিসি
২০১৯ সালে হংকংয়ের রাজপথে সংঘটিত গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে ধনকুবের জিমি লাই। ছবি: বিবিসি

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের শীর্ষ মুখ ও প্রভাবশালী মিডিয়া উদ্যোক্তা জিমি লাইকে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের (এনএসএল) আওতায় বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন দেশটির আদালত। ৭৮ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ নাগরিক ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে কারাবন্দী রয়েছেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করলেও আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, তিনি হংকং ও চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিদেশি সরকারগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে তাঁর সাজা ঘোষণা হতে পারে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণার সময় বিচারক অ্যাস্থার তোহ বলেন, চীনের পিপলস রিপাবলিকের প্রতি জিমি লাইয়ের ঘৃণা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, লাই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে হংকংয়ের অজুহাতে চীনের সরকার উৎখাতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আদালত আরও রায় দেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক ‘অ্যাপল ডেইলি’ পত্রিকার মাধ্যমে লাই রাষ্ট্রদ্রোহমূলক লেখা প্রকাশ করেছিলেন, যা ঔপনিবেশিক আমলের একটি আইনের লঙ্ঘন।

বেইজিং শাসিত হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন—লাইয়ের কর্মকাণ্ড দেশ ও হংকংবাসীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন করেছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই রায়কে ‘নিষ্ঠুর বিচারিক প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে বলছে, বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনটি কার্যত ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৯ সালে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের পর বেইজিং কোনো আইনসভা পরামর্শ ছাড়াই এই আইন প্রণয়ন করেছিল, যা কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, রায়ের সময় জিমি লাই শান্ত ছিলেন এবং আদালত ছাড়ার সময় পরিবারকে বিদায় জানান। তাঁর স্ত্রী টেরেসা, এক ছেলে ও ক্যাথলিক কার্ডিনাল জোসেফ জেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। লাইয়ের আইনজীবী জানান, দীর্ঘ রায় পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আপিল করা হবে কি না, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

এদিকে লাইয়ের ছেলে সেবাস্তিয়ান লাই যুক্তরাজ্য সরকারকে তাঁর বাবার মুক্তির জন্য আরও সক্রিয় হতে আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য এই মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়ন’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে লাইয়ের মুক্তি দাবি করে এলেও চীন ও হংকং সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

এক সময়ের সফল ব্যবসায়ী জিমি লাই ১৯৮৯ সালের চীনের তিয়েনআনমেন গণহত্যার পর গণতন্ত্র আন্দোলনে সক্রিয় হন। অনেক হংকংবাসীর চোখে তিনি এখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রতীক। তবে এই রায় হংকংয়ের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পেহেলগাম হামলায় এনআইএর চার্জশিট, ৫ ব্যক্তির সঙ্গে এলটিই-টিআরএফও অভিযুক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। ছবি: পিটিআই
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। ছবি: পিটিআই

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রায় আট মাস পর চার্জশিট দিয়েছে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। চার্জশিটে পাঁচ সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবাসহ (এলইটি) দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের দুই সশস্ত্র সংগঠনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক।

এনআইএর ১ হাজার ৫৯৭ পৃষ্ঠার চার্জশিটে হামলার পেছনে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র, অভিযুক্তদের ভূমিকা এবং মামলার পক্ষে থাকা প্রমাণের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পেহেলগাম হামলার পরিকল্পনা, সহায়তা ও বাস্তবায়নে এলইটি-টিআরএফ সরাসরি জড়িত ছিল। হামলার মূল হ্যান্ডলার হিসেবে এলইটির শীর্ষ কমান্ডার সাজিদ জাটের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

চার্জশিটে তিনজনের নাম রয়েছে, যাঁদের পাকিস্তানের সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সুলেমান শাহ, হাবিব তাহির ওরফে জিবরান ও হামজা আফগানির। চলতি বছরের জুলাইয়ে শ্রীনগরের কাছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁরা নিহত হন।

এলইটি ও টিআরএফের পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ২০২৩-এর (বিএনএস) অস্ত্র আইন (১৯৫৯) ও বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (১৯৬৭) বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এনআইএ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার’ ধারাও যুক্ত করেছে।

এ ছাড়া আরও দুজন এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত হয়েছেন। পারভেজ আহমদ ও বশির আহমদকে গত ২২ জুন এনআইএ গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা তিন সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

পারভেজ আহমদ ও বশির আহমদ জিজ্ঞাসাবাদে পেহেলগাম হামলায় জড়িত তিন সন্ত্রাসীর পরিচয় প্রকাশ করেন এবং নিশ্চিত করেন যে, তাঁরা পাকিস্তানের নাগরিক এবং লস্কর-ই-তাইয়েবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কে এই সাজিদ জাট

সাজিদ জাট একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত। তাঁর পরিচিত নামগুলোর মধ্যে রয়েছে সাইফুল্লাহ, নুমি, নুমান, ল্যাংড়া, আলি সাজিদ, উসমান হাবিব ও শানি। ২০২২ সালের অক্টোবরে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের (ইউএপিএ) আওতায় তাঁকে ‘ব্যক্তিগত সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

প্রসঙ্গত, ইন্ডিভিজুয়াল টেররিস্ট (Individual Terrorist) বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি কোনো বড় সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থেকেও একা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন। তাঁরা লোন উলফ নামেও পরিচিত। কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় সহজে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না।

ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর ধারণা, সাজিদ জাট পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত লস্করের সদর দপ্তর থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি শুধু টিআরএফের অপারেশনাল প্রধানই নয়, কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসী নিয়োগ, অর্থায়ন ও অনুপ্রবেশের দায়িত্বেও রয়েছেন।

সাজিদ জাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০২৩ সালের ধাংরি গণহত্যা (যেখানে তিনি ছিলেন মূল ষড়যন্ত্রকারী), ২০২৪ সালের মে মাসে পুঞ্চে বিমানবাহিনীর কনভয়ে হামলা এবং ২০২৪ সালের জুনে রিয়াসি বাস হামলা।

এ ছাড়া হাইব্রিড সন্ত্রাসীদের লজিস্টিক ও অপারেশনাল সহায়তা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর মতে, কাশ্মীরে সক্রিয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সবচেয়ে ভয়ংকর মুখ হলেন এই সাজিদ জাট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হিমালয়ে হারিয়ে যাওয়া পারমাণবিক যন্ত্র ৬০ বছর পরও গঙ্গার জন্য ঝুঁকি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। ছবি: এএনআই
ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। ছবি: এএনআই

প্রায় ৬০ বছর আগের ঘটনা, তখন স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। চীনকে টেক্কা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মিলে নামে এক গোপন অভিযানে। কিন্তু অভিযানে নেমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে হারিয়ে যায় নজরদারির কাজে ব্যবহৃত পারমাণবিক শক্তিচালিত একটি যন্ত্র, যেটি আজও হিমালয় পর্বতের বরফের নিচে চাপা পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের নন্দা দেবী পর্বতের কাছে হারিয়ে যাওয়া ওই পারমাণবিক শক্তিচালিত যন্ত্রটি গঙ্গা নদীর জন্য নানান ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ঘটনার সূত্রপাত ১৯৬৫ সালে, চীনের সদ্য গড়ে ওঠা পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) যৌথভাবে এক গোপন অভিযানে নামে। লক্ষ্য ছিল—ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্র বসানো।

ওই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল একটি রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর (আরটিজি)। এটি কয়েক কেজি প্লুটোনিয়াম দিয়ে চালিত হতো। এর মাধ্যমে স্থাপিত সেন্সরগুলো দিয়ে সীমান্তের ওপারে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক পরীক্ষার তথ্য সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু ভয়াবহ তুষারঝড়ের কবলে পড়ে অভিযানে অংশ নেওয়া দল যন্ত্রটি পাহাড়ে রেখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরের মৌসুমে ফিরে গেলে দেখা যায়—আরটিজি ও এর প্লুটোনিয়াম-কোর আর সেখানে নেই। ধারণা করা হয়, তুষারধসের কারণে সেটি ভেসে গেছে অথবা গভীর হিমবাহের নিচে চাপা পড়েছে।

আরটিজি কী

আরটিজি বা রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর হলো এমন একটি যন্ত্র, যা তেজস্ক্রিয় পদার্থের তাপ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ওই পদার্থ ধীরে ধীরে ক্ষয় হওয়ার সময় তাপ তৈরি হয় আর সেই তাপ বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়।

এই প্রক্রিয়ায় কোনো চলমান যন্ত্রাংশ থাকে না। তাই আরটিজি দীর্ঘদিন কাজ করতে পারে। সাধারণত মহাকাশ অভিযান বা এমন দুর্গম এলাকায় এগুলো ব্যবহার করা হয়।

আরটিজি কোনো পারমাণবিক বোমা নয় এবং এটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে না। তবে যন্ত্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণজনিত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

হারানো যন্ত্রটি এখন কোথায়

পরবর্তী কয়েক দশকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ওই যন্ত্রের সন্ধানে অভিযান চালালেও সফল হয়নি। দুই দেশের কেউই নিশ্চিত করে বলেনি, যন্ত্রটির পরিণতি কী হয়েছে।

কিছু কর্মকর্তা ও লেখকের মতে, ভারতীয় কোনো দল নীরবে যন্ত্রটি উদ্ধার করে থাকতে পারে। আবার অনেকের ধারণা, এটি এখনো নন্দা দেবী এলাকার অস্থির বরফ ও পাথরের স্তরের নিচে আটকে আছে।

১৯৭৮ সালে ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনের এক জরিপে স্থানীয় নদীগুলোতে কোনো প্লুটোনিয়াম দূষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে জরিপটি যন্ত্রটির অবস্থানও নির্দিষ্ট করতে পারেনি। ফলে বিষয়টি আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

গঙ্গায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ঝুঁকি

নন্দা দেবীর হিমবাহ থেকে উৎপন্ন রিষিগঙ্গা ও ধৌলিগঙ্গা নদী মিলিত হয়ে অলকানন্দায় প্রবাহিত হয়। পরে অলকানন্দা ও ভাগীরথী একত্রে গঙ্গা নদীর জন্ম দেয়। এই নদীই নিচের দিকে কয়েক শ কোটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটরটি অক্ষত অবস্থায় বরফের গভীরে চাপা পড়ে থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিক ঝুঁকি তুলনামূলক কম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এর আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ গলে বরফের পানির সঙ্গে মিশে নদীতে প্রবেশ করতে পারে।

এই সম্ভাবনাকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—সম্ভাবনা কম, কিন্তু প্রভাব ভয়াবহ। উত্তরাখন্ডে প্রতিবছর বন্যা, তুষারধসের ঘটনা ঘটলে এই আশঙ্কা নতুন করে সামনে আসে।

নতুন করে উদ্বেগ কেন

হিমালয়ে হিমবাহ গলার গতি বেড়ে যাওয়া, ২০২১ সালের চামোলি বন্যার মতো দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি এবং পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকায় পুরোনো সামরিক ও পারমাণবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বাড়তি নজরদারির প্রেক্ষাপটে নন্দা দেবীর এই হারানো যন্ত্রটি আবার আলোচনায় এসেছে।

এখন পর্যন্ত কোনো তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা—তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হিমবাহ সরে যাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে আরটিজির অবশিষ্টাংশ উন্মুক্ত বা নড়াচড়া করতে পারে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ও নিউইয়র্ক টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত