Ajker Patrika

তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার পথে দিল্লির বাধা চীনের উত্থান: ভারতীয় সেনাপ্রধান

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৩: ১১
ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ছবি: পিটিআই
ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ছবি: পিটিআই

ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেছেন, চীন বর্তমানে একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় এটি ভারতের জন্য গ্লোবাল সাউথের (তৃতীয় বিশ্ব) নেতা হওয়ার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে এবং প্রতিযোগিতার মুখে ফেলছে।

গতকাল রোববার দিল্লিতে চতুর্থ বিপিন রাওয়াত স্মারক বক্তৃতায় এমন মন্তব্য করেন উপেন্দ্র দ্বিবেদী।

ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেন, ভবিষ্যতে আফ্রিকা একটি নতুন ক্ষমতাকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে এবং ভারতকে সেই সম্ভাবনার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে চীনের উত্থান বিশ্বরাজনীতিতে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করেছে, প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে এবং গ্লোবাল সাউথের স্বাভাবিক নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।’

সেনাপ্রধান দ্বিবেদী বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবর্তন ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতার কারণে ভবিষ্যতে আফ্রিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। তবে, ভারত ভূগোল, জনসংখ্যা, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সফট পাওয়ার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকবে।

ভারতের অনেক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যাবহুল দেশ, বৃহত্তম গণতন্ত্র, সপ্তম বৃহত্তম ভৌগোলিক আয়তন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূকৌশলগত অবস্থান থাকা সত্ত্বেও, ভারত এখনো তুলনামূলকভাবে নিম্ন অবস্থানে রয়েছে।’

সেনাপ্রধান বলেন, এমনকি ব্রিকস (বিকল্প অর্থনৈতিক জোট) গোষ্ঠীও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। মার্কিন ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে ব্রিকস–এর প্রচেষ্টা ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে। এই বাস্তবতায়, আমাদের সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)–এর গতিবিধির ওপর ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখতে হবে।’

জাতীয় নিরাপত্তা কেবল যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতার বিষয় নয়, বরং যুদ্ধ প্রতিরোধের কৌশল হিসেবেও কাজ করে বলে উল্লেখ করেন সেনাপ্রধান দ্বিবেদী।

তিনি উল্লেখ করেন, সামরিক ও বেসামরিক খাতের সমন্বয়, আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্পভিত্তি, দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য সম্পদ, সঠিক সময়ে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নেতৃত্ব এবং ‘সিটিজেন ওয়ারিয়রস’ (সাধারণ নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ) একটি কার্যকর প্রতিরক্ষা কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সেনাপ্রধান বলেন, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এখন প্রতিরোধ শক্তির নতুন মুদ্রা হয়ে উঠেছে, এবং তথ্য (ডেটা) বর্তমানে বাণিজ্য ও নিরাপত্তার প্রধান মূলধন হয়ে উঠেছে।

ভারতকে তার গ্লোবাল সাউথ অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার পরামর্শ দিয়ে দ্বিবেদী বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার করে গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সংঘাত নিরসনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, বিশ্বজুড়ে ভারতীয় প্রবাসীদের মানবিক কাজে যুক্ত করতে হবে, এবং বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।

পাশাপাশি ভারতকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াই এবং শান্তিরক্ষী মিশনে নেতৃত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পরমাণু অস্ত্রকে একটি কৌশলগত রাজনৈতিক সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করার পক্ষেও সাফাই দেন সেনাপ্রধান।

পরমাণু অস্ত্রকে সম্ভাব্য সংঘাত যতদিন সম্ভব প্রতিহত করার কৌশলগত রাজনৈতিক সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, ইউক্রেন ও গাজার দুটি বড় সংঘাত থেকে বিশ্ব ধীরে ধীরে থিতু হচ্ছে, তবে এর মধ্যেই উপদ্রুত অঞ্চলগুলোতে ক্ষুদ্র আকারে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা এবং ব্যাপক সাইবার আক্রমণের মতো সাধারণ হুমকিগুলো বিশ্ব শান্তির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে একটি সূক্ষ্ম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতার একটি অন্যতম কারণ।

দ্বিবেদী বলেন, বিশ্ব এখন ইউক্রেন ও গাজার দুটি বড় সংঘাত থেকে ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে। এই দুই সংঘাতে বেশির ভাগ দেশ বাস্তববাদ, আদর্শবাদ বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পক্ষ নিয়েছে। তা ছাড়া, বিভিন্ন উপদ্রুত অঞ্চলে ক্ষুদ্র আকারে সংঘাত চলছে এবং সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, ব্যাপক সাইবার হামলা এবং গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো হুমকি বিশ্ব শান্তির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

তিনি বলেন, বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা সংকটের কারণে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। বিশ্ব বর্তমানে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, যার ফলে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশসহ একাধিক দেশের শাসনব্যবস্থা পতনের মুখে পড়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেন একপ্রকার পরিবর্তনশীল বালুকাবেলার মতো, যেখানে কখন উচ্চ জোয়ার আর কখন নিম্ন জোয়ার আসবে, তা অনুমান করা কঠিন।’

তাঁর মতে, বর্তমান বিশ্বে দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে ‘আংশিক বন্ধুত্ব’ গড়ে তুলছে, যা একপ্রকার ‘বন্ধুত্বে বাধ্য হওয়া’ বা ‘ফ্রেন্ডস বাই কমপালসন’ নামে পরিচিত।

দ্বিবেদীর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আদর্শবাদীরা এখন বাস্তববাদী হয়ে উঠছে, আবার বাস্তববাদীরাও আদর্শবাদী হয়ে যাচ্ছে। আংশিক বন্ধুত্ব একটি নতুন কূটনৈতিক প্রবণতা হয়ে উঠছে, যেখানে দেশগুলো বাধ্য হয়ে সম্পর্ক বজায় রাখছে। নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ বা নির্বাচিত নেতার পতন একটি দেশের সম্পূর্ণ কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। আমরা এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে দেখতে পাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তায় উদীয়মান প্রযুক্তির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এখন প্রতিরোধের নতুন মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং তথ্য (ডেটা) বর্তমানে বাণিজ্য ও নিরাপত্তার নতুন মূলধন হয়ে উঠেছে।

সেনাপ্রধানের মতে, ভবিষ্যতের যুদ্ধে প্রযুক্তিগত দক্ষতাই দেশগুলোর মূল শক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার যুদ্ধ ও আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিরাপত্তার মূল স্তম্ভ হয়ে উঠবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকারকে যুক্তরাষ্ট্রের ধাওয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। ছবি: এএফপি
জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। ছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাঙ্কার ধাওয়া করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একজন মার্কিন কর্মকর্তা আল জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে এই অভিযান ওয়াশিংটনের।

গতকাল রোববার এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। এর মাত্র একদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশিত এক ‘ব্লকেডের’ অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় জাহাজ জব্দ করে মার্কিন কোস্ট গার্ড।

আল জাজিরাকে ওই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ‘জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে আমাদের কোস্ট গার্ড। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, জাহাজটি ভেনেজুয়েলার সেই “ডার্ক ফ্লিট”-এর অংশ, যা লাতিন আমেরিকার দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তেল খাতের ওপর ওয়াশিংটনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর চেষ্টা করছে।’

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জাহাজটি ‘ভুয়া পতাকা’ ব্যবহার করছিল। একই সঙ্গে এটি একটি ‘বিচারিক জব্দাদেশ’-এর আওতাভুক্ত।

এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওই ট্যাঙ্কারটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। তবে এখন পর্যন্ত জাহাজটিতে কেউ আরোহণ করেনি। জাহাজটির গতিরোধের প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে সন্দেহভাজন জাহাজের খুব কাছ দিয়ে নৌযান চালানো বা ওপর দিয়ে বিমান ওড়ানোও অন্তর্ভুক্ত।

অভিযানটি কোথায় চলছে বা কোন জাহাজের পিছু নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি ওই কর্মকর্তা।

ব্রিটিশ সামুদ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংস্থা ভ্যানগার্ড ওই জাহাজটিকে ‘বেলা ১’ হিসেবে শনাক্ত করেছে। এটি একটি বিশাল আকারের অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ, যা গত বছর মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় যুক্ত করা হয়। জাহাজটির সঙ্গে ইরানের যোগসূত্র রয়েছে বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি।

ট্যাংকারট্র্যাকার্স ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার ভেনেজুয়েলার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বেলা ১ খালি ছিল।

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ (PDVSA)-র অভ্যন্তরীণ নথির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ২০২১ সালে ভেনেজুয়েলার তেল চীনে পরিবহনে ব্যবহৃত হয়েছিল এই জাহাজটি। একই সঙ্গে, একটি জাহাজ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি আরও জানায় যে, জাহাজটি এর আগে ইরানের অপরিশোধিত তেলও বহন করেছিল।

ভেনেজুয়েলার তেল খাতকে লক্ষ্য করে এই অভিযানটি এমন এক সময়ে পরিচালিত হচ্ছে যখন এই অঞ্চলে বৃহৎ আকারে মার্কিন সামরিক শক্তি বাড়ানো হয়েছে। এর ঘোষিত লক্ষ্য হলো মাদক পাচার মোকাবিলা করা। এছাড়াও, দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির নিকটবর্তী প্রশান্ত মহাসাগর এবং ক্যারিবীয় সাগরে কথিত মাদক পাচারকারী জাহাজগুলোর ওপর দুই ডজনেরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে।

সমালোচকেরা এসব হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে ভেনেজুয়েলা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির দাবি, বিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুত দখলের উদ্দেশ্যেই ওয়াশিংটন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ জব্দের ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে ভেনেজুয়েলা।

এ প্রসঙ্গে গতকাল হোয়াইট হাউস বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জব্দ করা প্রথম দুটি তেলের ট্যাঙ্কার কালোবাজারে পরিচালিত হচ্ছিল এবং নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশগুলোতে তেল সরবরাহ করছিল।

শনিবার জব্দ করা দ্বিতীয় জাহাজটি পানামার পতাকাবাহী ‘সেঞ্চুরিজ’ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। জাহাজটিতে প্রায় ১৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ছিল। ভেনেজুয়েলার এই তেলগুলো চীনে নেওয়ার কথা ছিল।

প্রথম জব্দ জাহাজ ‘স্কিপার’ বর্তমানে টেক্সাস উপকূলে নোঙর করা আছে। জাহাজটিতে থাকা ১৯ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সেখানে খালাস করে যুক্তরাষ্ট্রে পরিশোধনের প্রস্তুতি চলছে।

এই জাহাজ জব্দের ঘটনায় ভেনেজুয়েলা সরকার অভিযোগ করছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের তেল চুরি করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৬
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫২
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত