Ajker Patrika

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ১৫: ৩৬
ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সের সংযোগপথগুলো। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সের সংযোগপথগুলো। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ শীতল হয় পড়ে। এর ফলে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর যোগাযোগের ভবিষ্যৎও হুমকির মুখে পড়ে। এই অবস্থায় ভারত কলকাতা বন্দর থেকে মিয়ানমার হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নতুন করে সমুদ্রপথ বেছে নিয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত নতুন মহাসড়ক প্রস্তাব করেছে ভারত সরকার। এই মহাসড়ক মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ মাল্টি-মডাল পরিবহন প্রকল্পের সম্প্রসারণ। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার মধ্যে সমুদ্রপথে একটি বিকল্প সংযোগ তৈরি হবে।

ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের (এনএইচআইডিসিএল) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা এই প্রকল্পকে ‘জবাব’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গত মার্চে বেইজিং সফরকালে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, উত্তর-পূর্ব ভারত ‘ভূবেষ্টিত।’ তিনি আরও বলেছিলেন, এই অঞ্চলের জন্য ঢাকা ‘মহাসাগরের (প্রবেশের) একমাত্র অভিভাবক।’

শিলংয়ের কাছে মাওলিনখুং থেকে শিলচরের কাছে পাঁচগ্রাম পর্যন্ত এনএইচ-৬ বরাবর ১৬৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই চার লেনের মহাসড়কটি উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম উচ্চগতির করিডর প্রকল্প। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এনএইচআইডিসিএল এটি বাস্তবায়ন করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, মিয়ানমারে কালাদান মাল্টি-মডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে হচ্ছে। এটি কলকাতা সমুদ্রবন্দরকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিত্তে বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই সিত্তে বন্দর কালাদান নদীর মাধ্যমে মিয়ানমারের পালেতওয়া এবং সেখান থেকে সড়কপথে মিজোরামের জোরিনপুইয়ের সঙ্গে যুক্ত।

এনএইচআইডিসিএল-এর কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এনএইচআইডিসিএল এই প্রকল্পটি জোরিনপুই থেকে মিজোরামের লংলাই হয়ে আইজল পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এটি কেবল উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম উচ্চগতির করিডর নয়, পাহাড়ি অঞ্চলেরও এমন প্রকল্প প্রথম। শিলং-শিলচর গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শিলচর হলো মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মণিপুর এবং আসামের বরাক উপত্যকার সংযোগস্থল। ফলে এটি সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি প্রধান সংযোগকারী পথ হয়ে উঠবে এবং ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতির জন্য এই অঞ্চলকে প্রবেশদ্বার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ‘কালাদান প্রকল্পের সহায়তায় পণ্যসামগ্রী বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করে (ওডিশার) বিশাখাপত্তনম এবং (পশ্চিমবঙ্গের) কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে পৌঁছাবে। এরপর এই উচ্চগতির করিডর সড়কপথে পণ্য পরিবহনের নিশ্চয়তা দেবে, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করবে।’

বর্তমানে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের যোগাযোগের একমাত্র পথ শিলিগুড়ি করিডর, যাকে চিকেন’স নেক নামেও পরিচিত। অন্য দুটি প্রবেশ পথ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে। তবে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে এবং এই অঞ্চলে জলপথের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। তাই বিকল্প হিসেবে ভারত ও মিয়ানমার যৌথভাবে কালাদান প্রকল্প চিহ্নিত করেছে। আশা করা হচ্ছে, শিলং-শিলচর মহাসড়কের কাজ শেষ হওয়ার আগেই এই সংযোগটি পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে।

গত ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ২২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে অনুমোদন দেয়। প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্যের মধ্যে মেঘালয়ে ১৪৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার এবং আসামে ২২ কিলোমিটার। চালু হলে এই নতুন পথটি ভ্রমণের সময় সাড়ে আট ঘণ্টা থেকে কমিয়ে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা করবে।

এনএইচআইডিসিএল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই নতুন মহাসড়কটি শিলিগুড়ি করিডরের ওপর নির্ভরতা কমাবে। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি অন্যতম চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প হতে চলেছে। কারণ এখানকার ভূখণ্ড খুবই কঠিন এবং বিদ্যমান রাস্তার অবস্থাও ভালো নয়।’

শিলং-শিলচর প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) একটি রূপ হাইব্রিড অ্যানুইটি মোডে (এইচএএম) বাস্তবায়িত হবে। এতে ১৯টি বড় সেতু, ১৫৩টি ছোট সেতু, ৩২৬টি কালভার্ট, ২২টি আন্ডারপাস, ২৬টি ওভারপাস, আটটি সীমিত উচ্চতার সাবওয়ে এবং ৩৪টি ভায়াডাক্ট থাকবে।

এর আগে, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে রেল সংযোগ প্রকল্পের অর্থায়ন ও নির্মাণকাজ স্থগিত করেছে ভারত। এই সিদ্ধান্তের ফলে অন্তত তিনটি চলমান প্রকল্প থেমে গেছে এবং আরও পাঁচটি প্রকল্পের জরিপ কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। এই প্রকল্পগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা।

এসব প্রকল্পের আকার প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপি বলে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়েছে জানিয়েছে দ্য হিন্দু। সংবাদমাধ্যমটি সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়েছে জানিয়েছে, নয়াদিল্লি এই পরিস্থিতিতে তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করছে এবং উত্তর ভারতে রেল অবকাঠামো জোরদার করার পাশাপাশি ভুটান ও নেপালের মাধ্যমে বিকল্প সংযোগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। সূত্র আরও জানায়, ভুটান ও নেপালের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার কোটি রুপির সংযোগ পরিকল্পনা বিবেচনাধীন।

স্থগিত হওয়া প্রকল্পগুলো ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর (সেভেন সিস্টার্স) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই রাজ্যগুলোর সংযোগ স্থাপিত হলে সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডরের (চিকেন’স নেক) ওপর নির্ভরতা কমতো। এই করিডরটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই মুহূর্তে আমরা বাংলাদেশে নির্মাণ সামগ্রী বা অন্য কোনো জিনিস সরবরাহ করছি না। প্রতিবেশী দেশটির মাধ্যমে সংযোগকারী রুটের জন্য প্রকল্প তহবিলও স্থগিত রাখা হয়েছে। সেখানে প্রথমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসা প্রয়োজন। তবে ভারতের অংশে নির্মাণকাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে।’

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র ক্রিপ্টোমাইনিংয়ে কাজে লাগাতে চান ট্রাম্প: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৭
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনে অবস্থিত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র ক্রিপ্টোমাইনিংয়ে কাজে লাগাতে চান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি দেশটির অর্থনীতিকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম কমারস্যান্তের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

রুশ সংবাদমাধ্যম কমারস্যান্তের বরাতে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, জাপোরোজিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (জেডএনপিপি) প্রস্তাবিত অংশীদারিত্ব ব্যবহার করে ওয়াশিংটন সেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং কার্যক্রম চালাতে আগ্রহী।

২০২২ সাল থেকে কেন্দ্রটি সম্পূর্ণভাবে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এবং খবর পাওয়া গেছে যে, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন শান্তির জন্য প্রস্তাবিত ২৮ দফার রোডম্যাপে স্থান পেয়েছে।

বাণিজ্য বিষয়ক দৈনিক কমারস্যান্ত বৃহস্পতিবার জানায়, পুতিন বলেছেন যে—চলমান রুশ-মার্কিন আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূতরা মস্কোর সাথে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ভাগ করে নিতে এবং ওয়াশিংটনের অংশ ব্যবহার করে ক্রিপ্টো মাইনিং করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

তিনি আরও জানিয়েছেন, এই কেন্দ্র থেকে আবারও ইউক্রেনকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার একটি মার্কিন প্রস্তাবও মস্কো বিবেচনা করছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, পুতিনের বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিভ সম্প্রতি মিয়ামি থেকে ফেরার পর, ‘শাটল ডিপ্লোম্যাসি—shuttle diplomacy’—এর সর্বশেষ ধাপে ওয়াশিংটনের দেওয়া একটি পাল্টা প্রস্তাব বর্তমানে রাশিয়া বিশ্লেষণ করছে।

এর এক দিন আগে ভ্লাদিমির জেলেনস্কি তাঁর নিজস্ব একটি খসড়া পরিকল্পনা উন্মোচন করেন, যেখানে তিনি রাশিয়ার দখলে থাকা এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৫০/৫০ ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন।

ইউক্রেনীয় নেতা মস্কোর কাছ থেকে আঞ্চলিক ছাড় দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন, যদিও বর্তমানে যুদ্ধের সামনের সারিতে রুশ বাহিনী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তিনি ইউক্রেনের জন্য ৮ লাখ সৈন্যের একটি শান্তিকালীন সেনাবাহিনী রাখা এবং ওয়াশিংটন, ন্যাটো ও ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে ন্যাটোর ‘আর্টিকেল-৫’ এর মতো নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছেন।

মস্কো দাবি করে আসছে যে, ইউক্রেন এবং তার পশ্চিম ইউরোপীয় পৃষ্ঠপোষকরা এমন সব শর্ত যোগ করছে, যা রাশিয়ার জন্য গ্রহণ করা একেবারেই অসম্ভব এবং এর মাধ্যমে তারা মার্কিন শান্তি প্রচেষ্টাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

ক্রেমলিনের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং জ্যেষ্ঠ রুশ আলোচক ইউরি উশাকভ এই সপ্তাহের শুরুর দিকে বলেছিলেন, তারা যেসব ধারা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছে তা ‘নথিগুলোর উন্নতি ঘটায়নি কিংবা দীর্ঘমেয়াদী শান্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও তৈরি করেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৩
গ্রেপ্তার তুষার ও শুভম। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার তুষার ও শুভম। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের গুরগাঁওয়ে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। মাত্র ছয় মাসের পরিচয়ের ভিত্তিতে এক যুবক বিয়ের প্রস্তাব দেয় এক বিবাহিত তরুণীকে। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে গুলি করেন সেই যুবক। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গুরুগাঁওয়ের একটি ক্লাবের ভেতরে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২৫ বছর বয়সী এক নারীকে গুলি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ২০ ডিসেম্বর ভোরের দিকে এমজি রোডে।

পুলিশ জানিয়েছে, গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক নারী আহত হওয়ার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় পায়। গুরুতর আহত হওয়ায় শুরুতে তিনি জবানবন্দি দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না।

দিল্লির নাজাফগড়ের বাসিন্দা ওই নারীর স্বামী অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে যে, তাঁর স্ত্রী কল্পনা (২৫) গুরুগ্রামের একটি ক্লাবে কাজ করতেন এবং তাঁকে দিল্লির সঙ্গম বিহারের বাসিন্দা তুষার গুলি করেছেন।

অভিযোগে ওই স্বামী জানান, তাঁর স্ত্রী ১৯ ডিসেম্বর কাজে গিয়েছিলেন এবং রাত ১টার দিকে তাঁকে ফোন করে জানান, তাঁকে গুলি করা হয়েছে। অভিযোগকারী আরও যোগ করেন, ‘প্রায় এক মাস আগে তুষার আমাদের বাড়িতে এসেছিল, আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করেছিল এবং চলে গিয়েছিল।’

এই অভিযোগের ভিত্তিতে সেক্টর ২৯ থানায় একটি এফআইআর (FIR) দায়ের করা হয়। তদন্ত চলাকালীন, ক্রাইম ইউনিটের একটি দল উত্তর প্রদেশের বারাউত থেকে দুই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলো তুষার ওরফে জন্টি (২৫) এবং তার বন্ধু শুভম ওরফে জনি (২৪)। দুজনেই দিল্লির সঙ্গম বিহারের বাসিন্দা।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, তুষার স্বীকার করেছেন যে প্রায় ছয় মাস আগে ওই নারীর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয় এবং তিনি তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ওই নারী বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেন।

পুলিশের অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯ ডিসেম্বর রাতে তুষার তাঁর বন্ধু শুভমকে নিয়ে ওই ক্লাবে যান এবং আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি ওই নারীকে গুলি করেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার আরও তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২২
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, মার্কিন বাহিনী উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএল (আইএসআইএস) যোদ্ধাদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ রাতে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে আমার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় আইএসআইএস সন্ত্রাসী আবর্জনার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী এবং প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।’

ট্রাম্প বলেন, আইএসআইএল যোদ্ধারা ‘প্রাথমিকভাবে নির্দোষ খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যা বহু বছর এমনকি শতাব্দীর মধ্যেও দেখা যায়নি!’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি এর আগে এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম যে তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে; তবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে এবং আজ রাতে সেটাই হয়েছে।’

আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আফ্রিকা কমান্ড (AFRICOM) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, এই বিমান হামলাটি ‘নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে’ চালানো হয়েছে এবং এতে ‘একাধিক আইএসআইএস সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বিস্তারিত কোনো তথ্য না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘নাইজেরীয় সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ। সামনে আরও আসবে।

এক বিবৃতিতে আফ্রিকম জানিয়েছে, এই হামলাটি নাইজেরিয়ার সবতো রাজ্যে সংঘটিত হয়েছে, যা মূলত নাইজেরিয়ার সোকোতো রাজ্যকে নির্দেশ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, নাইজেরিয়ার সবতো নামে কোনো রাজ্য নেই।

নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নির্যাতনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প পেন্টাগনকে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা শুরু করার নির্দেশ দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর এই মার্কিন সামরিক পদক্ষেপটি এল।

নাইজেরিয়া সরকার এর আগে ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা বলেছিল, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দেশের মুসলিম এবং খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই লক্ষ্যবস্তু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি একটি জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে না এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করে।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষ ‘সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থার মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাঠামোগত নিরাপত্তা সহযোগিতায় নিয়োজিত রয়েছে।’ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ‘এর ফলে উত্তর-পশ্চিমে বিমান হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নিখুঁতভাবে আঘাত করা সম্ভব হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।

বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।

একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।

ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?

তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।

সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত