Ajker Patrika

বঙ্কিমের ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে লোকসভায় কংগ্রেসকে মোদির তীব্র আক্রমণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লোকসভায় বক্তব্য রাখছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: পিটিআই
লোকসভায় বক্তব্য রাখছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: পিটিআই

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’-কে বিভক্ত ও অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ তুলেছেন। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক সম্প্রীতির নামে কংগ্রেস তুষ্টিকরণের রাজনীতি করেছে এবং আজও সেই রাজনীতি বহন করছে।

মোদি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু মুসলিম সমাজের আপত্তির ভয়ে ‘বন্দে মাতরম’ গানটি পুরোপুরি গ্রহণে দ্বিধাবোধ করেছিলেন। নেহরুর একটি চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে মোদি দাবি করেন—নেহরু সুভাষচন্দ্র বসুকে গানটির পটভূমি মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করতে পারে বলে লিখেছিলেন। মোদির ভাষ্য অনুযায়ী, এই চিঠি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর লক্ষ্ণৌতে প্রতিবাদের পর লেখা হয়েছিল।

মোদি আরও অভিযোগ করেন, কংগ্রেস ১৯৩৭ সালে বাংলায় এক অধিবেশনে গানটির ব্যবহার সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। মোদি বলেন, ‘২৬ অক্টোবর তারা বন্দে মাতরমকে দুই ভাগে ভেঙে দিল—সামাজিক সম্প্রীতির মুখোশ পরে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—এটি ছিল তুষ্টিকরণের রাজনীতি। যেমন তারা গান বিভক্ত করেছে, তেমনই পরে দেশও বিভক্ত করেছে।’

মোদি দাবি করেন—মুসলিম লিগের চাপে কংগ্রেস নত হয়েছিল এবং এর ধারাবাহিকতায় দেশভাগ ঘটেছিল। তিনি বলেন, ‘বন্দে মাতরমের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছিল। মহাত্মা গান্ধী ১৯০৫ সালে লিখেছিলেন—এই গান ইতিমধ্যে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেয়েছে। তবে এরপরও কেন গানটির প্রতি অবিচার করা হলো?’

তিনি বলেন, বন্দে মাতরম শুধু গান নয়—এটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের শক্তির উৎস। গানটি ব্রিটিশ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ করেছিল এবং ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

বক্তব্যের শেষ দিকে মোদি বলেন, ‘এখন আমাদের সুযোগ এসেছে বন্দে মাতরমের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার। এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত আমরা হাতছাড়া করতে পারি না।’

এদিকে বন্দে মাতরম নিয়ে বক্তৃতায় গানটির স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা বলতে গিয়ে একাধিকবার ‘বঙ্কিমদা’ শব্দটি উচ্চারণ করেন। তবে প্রায় এক ঘণ্টার ওই বক্তৃতার মাঝপথেই এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানান পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। মোদিকে থামিয়ে তিনি ‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধনে আপত্তি জানিয়ে বলেন, অন্তত ‘বাবু’ বলুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের প্রস্তাবে ‘অসন্তুষ্ট’ জেলেনস্কি গেলেন লন্ডনে ইউরোপের নেতাদের কাছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত মে মাসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ফাইল ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
গত মে মাসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ফাইল ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

হোয়াইট হাউস থেকে গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশ করা হয়েছে। ৩৩ পৃষ্ঠার এই নথিতে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং ইউরোপকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির নতুন অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। কৌশলটিকে ইউরোপবিরোধী এবং আক্রমণাত্মক ভাষায় তৈরি করা হয়েছে বলে সমালোচনা উঠেছে।

সোমবার সিএনএন জানিয়েছে, ওই নথিতে ইউরোপীয় নেতাদের সমালোচনা করা হয়েছে এবং অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ পরিস্থিতি শেষ করার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছেন। পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলোর মতো রাশিয়াকে হুমকি হিসেবে নয় বরং ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়াকে ‘অস্তিত্বগত ঝুঁকি’ মনে করে—এই বক্তব্য রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপের স্থিতিশীলতা এবং রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত ভারসাম্য পুনর্গঠনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই কৌশলকে স্বাগত জানান এবং ট্রাম্পকে ‘শক্তিশালী নেতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

দলিল প্রকাশের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কিকে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি ধীর এবং জেলেনস্কি এখনো মার্কিন পক্ষের তৈরি করা শান্তি প্রস্তাব পুরোটা পড়েননি। ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়া এই প্রস্তাবে ইতিবাচক হলেও জেলেনস্কি এতে সন্তুষ্ট নন।

এদিকে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার অংশ হিসেবে সোমবার লন্ডনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন জেলেনস্কি। সম্প্রতি মিয়ামিতে যুক্তরাষ্ট্র–ইউক্রেন আলোচনায় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, সীমান্ত ও ভূখণ্ড সংক্রান্ত ইস্যুতে সমাধান না আসায় এই বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধরা হচ্ছে।

ইউক্রেনের অবস্থান স্পষ্ট—তারা রাশিয়ার কাছে কোনো ভূখণ্ড ছাড়বে না এবং যুদ্ধ শেষে দেশটি স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায়। অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল দখলে নিতে তিনি যে কোনো পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত।

লন্ডনে জেলেনস্কির বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস। মাখোঁ জানিয়েছেন, তাঁরা মার্কিন মধ্যস্থতায় চলমান আলোচনার বর্তমান পরিস্থিতি ও অগ্রগতির মূল্যায়ন করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন /আইএলটিএসে ‘ফেল’ করেও যুক্তরাজ্যে হাজারো মানুষের অভিবাসন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২০
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, বিগত দুই বছরে অন্তত ৮০ হাজার আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীর ফল ভুল এসেছিল। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, বিগত দুই বছরে অন্তত ৮০ হাজার আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীর ফল ভুল এসেছিল। ছবি: সংগৃহীত

বাধ্যতামূলক ইংরেজি ভাষার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পরেও হাজার হাজার অভিবাসীকে ব্রিটিশ ভিসা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, এসব অভিবাসীর ভাষাসংক্রান্ত আইইএলটিএস পরীক্ষায় নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘটেছিল এক চরম ভুল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ব্রিটিশ কাউন্সিলের নেওয়া ভাষা পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থীর ফল ভুল এসেছিল। এর অর্থ হলো—তাঁদের মধ্যে অনেকে ফেল করেও পাস নম্বর পেয়েছিলেন। চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে এই ভাষা পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে। সেখানে অপরাধীরা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে প্রশ্নপত্র বিক্রি করে।

ফলস্বরূপ, বিভিন্ন ব্রিটিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে অনেকেই ইংরেজি ভাষায় দুর্বল হয়েও ভিসা পেয়েছেন। অথচ তা তাঁদের প্রাপ্য ছিল না। বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি এ ঘটনায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, পরীক্ষায় পাস না করেই যাঁরা ব্রিটেন গিয়েছেন, তাঁদের যেন ‘দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়’।

প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেমের (আইইএলটিএস) পরীক্ষা দেন। ব্রিটিশ কাউন্সিল, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট ও শিক্ষা সংস্থা আইডিপি যৌথভাবে এই পুরো ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে।

২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ পরীক্ষায় ভুল নম্বর পেয়েছেন। আইইএলটিএস এই ভুলের জন্য ‘একটি প্রযুক্তিগত সমস্যাকে’ দায়ী করেছে, যা কিছু একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং পরীক্ষার লিসেনিং ও রিডিংয়ের অংশবিশেষে প্রভাব ফেলেছিল। সংস্থাটি জানায়, মাত্র ১ শতাংশ পরীক্ষা এই ত্রুটির কারণে প্রভাবিত হয়েছিল। এই ত্রুটির কারণেই প্রায় ৭৮ হাজার পরীক্ষার্থীর ফল ভুল হয়েছিল।

সমস্যাটি ধরা পড়ে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে। গত মাসে আইইএলটিএস ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সঠিক ফল জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা ‘আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ ও উপযুক্ত সহায়তা দেওয়ার’ কথা বলেছে।

জানা গেছে, কিছু পরীক্ষার্থীর নম্বর যা হওয়া উচিত ছিল, তারচেয়ে বেশি এসেছিল; আবার কারও কারও নম্বর এসেছিল কম। দীর্ঘ সময় ধরে সমস্যাটি ধরা না পড়ায় ভুলবশত যাঁরা উত্তীর্ণ বলে গণ্য হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ভিসা জোগাড় করে ‘বৈধভাবে’ ব্রিটেনে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেছেন।

বিগত বছরগুলোতে ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ ইউনিয়ন জানিয়েছিল, বিদেশি শিক্ষার্থীরা যেহেতু বেশি টিউশন ফি দেন, তাই কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের ইংরেজি ভাষায় দুর্বল দক্ষতা উপেক্ষা করছে। এমনকি কিছু প্রভাষক অভিযোগ করেছেন যে, প্রায় ৭০ শতাংশ বিদেশি ছাত্রের ইংরেজি ভাষার দখল যথেষ্ট নয়।

এদিকে, এ ঘটনা ফাঁসের পর ব্রিটিশ ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের করোনার বা তদন্তকারীরাও সতর্ক করেছেন, এনএইচএস ও সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত অনেকের ইংরেজি ভাষাজ্ঞান অপর্যাপ্ত, যা রোগীদের ঝুঁকিতে ফেলছে এবং কিছু ক্ষেত্রে তা ‘মারাত্মক’ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এক ঘটনায় একজন কেয়ার কর্মীর ইংরেজি পরীক্ষার কোনো রেকর্ড ছিল না। সেই কেয়ার কর্মী ৯৯৯ কল হ্যান্ডলারের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘শ্বাস-প্রশ্বাস—breathing’ এবং ‘রক্তপাত—bleeding’ কিংবা ‘সতর্ক—alert’ ও ‘জীবিত—alive’-এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেননি বলে একজন করোনার জানিয়েছিলেন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আছেন, যাঁরা ভালোভাবে বা একেবারেই ইংরেজি বলতে পারেন না। আমাদের মধ্যে ইতিমধ্যে সংহতির সংকট রয়েছে আর এখন আমরা জানতে পারলাম যে, ভিসা পাওয়ার আগে প্রায় ৭৮ হাজার মানুষ ভুল ফল পেয়ে থাকতে পারেন। যাঁরা অন্যায্যভাবে ভিসা পেয়ে এসেছেন, তাঁদের সরিয়ে দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, যদি মানুষ এখানে এসে কখনোই ইংরেজি না শেখেন, তবে তাঁরা সমাজের সঙ্গে মিশতে পারবেন না এবং রাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া স্বাধীন জীবন গড়তে পারবেন না। এটা এক ভয়ংকর ব্যর্থতা।

এ ছাড়া আইইএলটিএস পরীক্ষায় প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে। অপরাধীরা ঘুষ দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তা বিক্রি করছে। বাংলাদেশ পুলিশ দুজনকে আটক করেছে, যাঁরা ১ হাজার পাউন্ড থেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ডের বিনিময়ে আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রি করছিলেন।

ভিয়েতনামে ব্রিটিশ কাউন্সিল গত ফেব্রুয়ারিতে একেবারে শেষ মুহূর্তে একটি নির্ধারিত পরীক্ষা বাতিল করে ‘ব্যাকআপ’ সংস্করণে পরীক্ষা নিয়েছিল, যা প্রশ্নপত্র ফাঁসের জল্পনাকে উসকে দেয়। সে সময় কাউন্সিল স্বীকার করেছিল যে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির চেষ্টা বেড়ে গিয়েছিল। চীনেও প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে। ভিসাব্যবস্থার অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের কারণে কিছু ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে।

ব্রিটিশ কাউন্সিল মূলত ইংরেজি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে চলে। তবে পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে তারা কিছু অনুদানও পায়। কোভিডকালে সরকারি ঋণের কারণে তাদের ১৯ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডের ঋণ রয়েছে, যা পরিশোধ করতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। পরীক্ষার নম্বর-বিভ্রাট থেকে কোনো ক্ষতিপূরণের দাবি উঠলে তাদের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হবে।

স্বরাষ্ট্র দপ্তর বর্তমানে ইংরেজি পরীক্ষা সরবরাহের জন্য ৮১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ডের একটি নতুন পাঁচ বছরের চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই চুক্তির জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলকে অন্যান্য দরদাতা সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আইইএলটিএসের এক মুখপাত্র বলেছেন, আইইএলটিএস সম্প্রতি এমন একটি সমস্যা শনাক্ত করেছে, যার ফলে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অল্পসংখ্যক পরীক্ষার্থী ভুল ফল পেয়েছিলেন। এই সময়ে নেওয়া আইইএলটিএস পরীক্ষার ৯৯ শতাংশের বেশি অপ্রভাবিত ছিল এবং বর্তমান আইইএলটিএস পরীক্ষাগুলোতে আর কোনো সমস্যা নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সঠিক ফল জানিয়েছি, আমাদের আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং উপযুক্ত সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সমস্ত সংশ্লিষ্ট অংশীদার ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। প্রতিবছর আমরা লাখ লাখ আইইএলটিএস পরীক্ষা পরিচালনা করি এবং এর সততা বজায় রাখতে আমাদের কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া চালু আছে। এই সমস্যা যাতে আর না হয়, সে জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজার অর্ধেক ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণেই রাখার ইঙ্গিত সেনাপ্রধানের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জমির। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জমির। ছবি: এএফপি

দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর প্রধান বা চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জমির গত রোববার মন্তব্য করেছেন যে, গাজায় ‘হলুদ রেখা’ নামে যে সীমারেখা বরাবর দখলদার বাহিনী পিছু হটেছে সেটিই এখন গাজা উপত্যকাকে ফিলিস্তিনিদের বাকি অধিকৃত ভূখণ্ড থেকে আলাদা করা এক নতুন সীমান্ত হিসেবে কাজ করবে। সামরিক এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় অবস্থিত ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে আলাপকালে জমির বলেন, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজার বিশাল এলাকার ওপর কার্যত নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে এবং এই নিরাপত্তা রেখা বরাবর তাদের অবস্থান ধরে রাখারই ইচ্ছে রয়েছে।

তিনি হলুদ রেখাটিকে একটি অগ্রবর্তী নিরাপদ বেষ্টনী এবং একই সঙ্গে চলমান সামরিক কার্যকলাপের একটি ক্ষেত্র হিসেবে বর্ণনা করেন। মার্কিন মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে ইসরায়েলি বাহিনী বর্তমানে এই সীমারেখার পেছনে অবস্থান করছে। তবে সেটি কার্যত গাজাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে।

জেনারেল ইয়াল জামির বলেন, ‘গাজা স্ট্রিপের বিস্তৃত অংশে আমাদের অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং আমরা সেই প্রতিরক্ষা রেখাগুলোতে থাকব। হলুদ রেখাটি একটি নতুন সীমান্তরেখা, যা আমাদের সম্প্রদায়গুলির জন্য একটি সামনের রক্ষণাত্মক রেখা এবং অপারেশনাল কার্যকলাপের একটি রেখা হিসাবে কাজ করছে।’

এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, দখলদার শক্তি এই রেখাটিকে পূর্বের চুক্তিতে সংজ্ঞায়িত একটি সাময়িক অবস্থান হিসেবে না দেখে এটিকে দীর্ঘমেয়াদি ভূখণ্ড দখল ও জাতিগত নির্মূলকরণের একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। মার্কিন মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুসারে, চুক্তির বৃহত্তর কাঠামো যখন বাস্তবায়িত হচ্ছে, তখন ইসরায়েলি বাহিনী হলুদ রেখার পেছনে সরে আসে।

জমিরের এই ঘোষণা দখলদার শক্তির আসল উদ্দেশ্যকে নগ্ন করে দেয়—যা ছিল সাময়িক পুনঃস্থাপনার রেখা, তাকেই কার্যত এমন এক সীমান্তে পরিণত করা, যা ভূখণ্ডগত চুরিকে পাকাপাকি করবে। হলুদ রেখাটিকে একটি স্থায়ী সীমান্ত হিসেবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করার মাধ্যমে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদি ভূমি দখল, জনসংখ্যাতাত্ত্বিক রদবদল এবং গাজার ক্রমিক সংযুক্তিকরণের এক বিস্তৃত প্রকল্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে—যা যুদ্ধবিরতি মানার আড়ালে তাদের বৃহত্তর সম্প্রসারণবাদী নীতিরই বিস্তার।

দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক কমান্ড গত অক্টোবরে গাজা উপত্যকার ভেতরে যুদ্ধবিরতির হলুদ রেখাটিকে বাস্তবিক অর্থে শক্তিশালী এবং আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করার নির্দেশ দেয়। তারা সেখানে আউটপোস্ট, দু-তলা বালির বাঁধ, কাঁটাতার এবং হলুদ রঙের কংক্রিটের মার্কার বসানোর পাশাপাশি ড্রোন ও সাঁজোয়া ইউনিট মোতায়েন করে।

দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল গাজা সিটির পূর্বে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শুজাইয়া এলাকার ওপর নজর রাখা একটি ইসরায়েলি আউটপোস্ট ঘুরে দেখেছে। তারা বলেছে, সেখানে কাঁটাতার দেওয়া একটি দু-তলা বালির বাঁধ, তার নিচ দিয়ে যাওয়া দুটি গাড়ির উপযুক্ত বালির রাস্তা এবং মাথার ওপর ড্রোন উড়তে দেখা যায়।

জানা গেছে, দখলদার বাহিনী এই সীমারেখা বরাবর হলুদ রং করা কংক্রিটের ব্লক বসাচ্ছে এবং সামরিক কর্মকর্তারা কাগজটিকে বলেছেন যে, চিহ্নিতকরণের কাজটির মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন মধ্যস্থতায় তৈরি হওয়া এই রেখাটি বর্তমান আউটপোস্টগুলি ও নতুন করে তৈরি করা অবস্থানগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, যেখানে বালির বাঁধের পেছনে সৈন্য ও ট্যাঙ্ক সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

ডাব্লিউএসজে-এর আগের একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল যে, গাজাকে দুই ভাগ করা এবং তথাকথিত হলুদ রেখার পেছনের এলাকাগুলি পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনাটি মার্কিন বিশেষ দূত জ্যারেড কুশনার ও মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্সের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হয়েছিল।

তথাকথিত যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় শিশুসহ শত শত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতিবেদন বলছে, অন্তত ৩৭০–৩৭৫ জন নিহত হয়েছেন এবং গড়ে দৈনিক আটজন বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছেন। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, গাজার মানুষকে সুরক্ষা দিতে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাজের চাপে মাঠকর্মীদের মৃত্যুতে ভ্রুক্ষেপ নেই ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩২
ভারতে ভোটার তালিকা সংশোধের কাজে যুক্ত ডজনখানেক নির্বাচন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ছবি: এএফপি
ভারতে ভোটার তালিকা সংশোধের কাজে যুক্ত ডজনখানেক নির্বাচন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ছবি: এএফপি

কয়েক দিন আগে ভারতের উত্তর প্রদেশের স্কুলশিক্ষক সর্বেশ কুমারকে তাঁর বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃত্যুর আগে তিনি নাকি একটি ভিডিও বানিয়েছিলেন, যেখানে তাঁকে কাঁদতে দেখা যায়। সেখানে তিনি নির্বাচনী কাজের চাপের কথা বলেছিলেন এবং সময়মতো কাজটি শেষ করতে না পারায় খুবই হতাশ ছিলেন।

ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ দিন ধরে আমি এক ফোঁটা ঘুমাতে পারিনি। হাতে যদি একটু সময় থাকত, তা হলে এই কাজটা শেষ করে দিতে পারতাম।’ সর্বেশ ছিলেন সেই সব হাজার হাজার সরকারি কর্মীর একজন, যাদের গত ৪ নভেম্বর থেকে ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫০ কোটিরও বেশি ভোটারের তালিকা তৈরির কাজে নামানো হয়েছিল।

ভারত সরকার পরিচালিত স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা বিশেষ নিবিড় সংশোধনী—এসআইআর নামে পরিচিত এই কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইছে, প্রত্যেক যোগ্য ভোটারের নাম তালিকায় তোলা হোক এবং অযোগ্য নামগুলো বাতিল করা হোক।

সাধারণত সরকারি স্কুলশিক্ষক, কর্মচারী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও হিসেবে ইসির তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম বিতরণ করেন, কাগজপত্র যাচাই করেন, নানা প্রশ্নের জবাব দেন ও নির্ভুল তথ্য আপলোড করেন। এই পুরো কাজের সময়সীমা মাত্র এক মাস।

তবে শুধু এটুকুই নয়। অনেক নির্বাচনী কর্মী—যাদের অনেকেই আবার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বা অঙ্গনওয়াড়ি (সরকার পরিচালিত শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র) কর্মী—বলেন, অনেক সময় তাঁদের নিজের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি নির্বাচনী দায়িত্বও সামলাতে হয়।

বিবিসি রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দশ জন বিএলও’র সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, সামান্য বিশ্রাম, কম ঘুম ও নগণ্য পারিশ্রমিক নিয়ে তাঁদের দিনে ১৪-১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে। এই দুই রাজ্যেই এসআইআর কাজ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এই শ্রমসাধ্য সময়সূচির কারণে বিএলওদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিশেষত কুমারসহ এক ডজনেরও বেশি কর্মীর মৃত্যুর পর এই ক্ষোভ আরও বেশি বেড়েছে। তাঁদের পরিবার এই মৃত্যুগুলোকে—যার মধ্যে কথিত আত্মহত্যা বা হার্ট অ্যাটাক রয়েছে—নির্বাচনী কাজসংক্রান্ত মানসিক চাপের ফল বলে মনে করছেন। তবে বিবিসির পক্ষে মৃত্যুর কারণগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। বিবিসির পাঠানো বিস্তারিত প্রশ্নের তালিকার কোনো জবাব ভারতের নির্বাচন কমিশন দেয়নি।

গুজরাটে অরবিন্দভাই ভাধের নামে এক প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক নাকি গত মাসেই ‘বিএলও–এর কাজের অত্যাচারের কারণে’ আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর পরিবার বিবিসিকে জানিয়েছে। মৃত্যুর আগে তাঁর লেখা একটি নোট বিবিসি দেখেছে। সেখানে ভাধের বলেছিলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি ‘অবিরাম ক্লান্তি ও মানসিক চাপে’ ভুগছিলেন।

অন্য এক ঘটনায় গুজরাটের এক স্কুলের প্রধান রমেশভাই পারমার এসআইআর-এর কাজের চাপ নেওয়ার পর রাতে ঘুমন্ত অবস্থাতেই মারা যান বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। পারমারের মেয়ে শিল্পাবেন বলেন, তাঁর বাবা প্রায়ই অনেক লম্বা সময় ধরে বা রাত অবধি কাজ করতেন। যেদিন তিনি মারা যান, সেদিনও তিনি এসআইআর-এর কাজে অনেক বার বাইরে গিয়েছিলেন এবং না খেয়েই শুতে গিয়েছিলেন।

এতগুলো মৃত্যুর পর এখন পোল কর্মীদের কাজের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দলের নেতারা ইসির ও সরকারের সমালোচনা করেছেন, এত দ্রুত এসআইআর কাজ শেষ করতে চাওয়ার জন্য। (এর আগে ২০০২-২০০৩ সালে এসআইআর-এর কাজ ছয় মাস ধরে করা হয়েছিল।)

আদালতে পেশ করা একটি হলফনামার সূত্রে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, এসআইআর-এর কাজের সঙ্গে বিএলওদের মৃত্যুর যোগ থাকার বিরোধীদের দাবি নির্বাচন কমিশন অস্বীকার করেছে। তারা এই সব দাবিকে ‘মিথ্যা, অত্যুক্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছে। গত সপ্তাহে ইসি জানিয়েছে, এসআইআর-এর সময়সীমা ৪ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে ১১ ডিসেম্বর করা হবে। তবে এর কারণ তারা জানায়নি।

কিন্তু উত্তর প্রদেশের নয়ডায় একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে এসআইআর-এর নেতৃত্ব দেওয়া এক স্কুলশিক্ষিকা মনীষা কুমারী (ছদ্মনাম) বলছেন, এই বাড়তি সময়ের মধ্যেও তিনি কাজ শেষ করতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন। গত এক মাস ধরে কুমারী ভোর পাঁচটায় উঠে বাড়ির কাজ সারেন ও ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করেন। তারপর সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা-ছয়টা অবধি এসআইআর-এর কাজ করেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘যেটুকু অল্প বিরতি পাই, সেটা খরচ হয় সেই সব লোকদের খুঁজে বের করার জন্য, যাঁরা প্রথমবার যখন গিয়েছিলাম, তখন বাড়িতে ছিলেন না।’ সন্ধ্যায়ও তাঁর নিস্তার নেই। বাড়ি ফিরে ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করার পর তিনি এসআইআর অ্যাপে লগইন করে যাচাই করা ফরমগুলো আপলোড করেন। কিন্তু অ্যাপটি প্রায়ই ‘ক্র্যাশ’ করে, তাই কাজ শেষ করতে তাঁকে আবার মাঝরাতের পর চেষ্টা করতে হয়। তিনি বলেন, ‘৪ নভেম্বর থেকে আজ অবধি আমার একটিও ছুটি নেই।’ তিনি আরও জানান, ক্লাসে তাঁর অনুপস্থিতির কারণে ছাত্রছাত্রীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

ভারতের বহু সরকারি স্কুলে কর্মীর অভাব রয়েছে। শিক্ষকেরা বলছেন, এই ধরনের কাজের জন্য তাঁদের ক্লাস থেকে তুলে নিলে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি হয়। কিছু বিএলও বিবিসিকে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যের ওপর এর খারাপ প্রভাব থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এই কঠিন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ তাঁরা আইনি পদক্ষেপের ভয় পান।

সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের কর্মকর্তারা এসআইআর-এর কাজে অবহেলার অভিযোগে পোল কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আর অন্য রাজ্যগুলোতেও কাজ করতে না চাইলে জেল বা চাকরি হারানোর হুমকির খবর পাওয়া গেছে। উত্তর প্রদেশের হিসাবরক্ষক সুধীর কুমার কোরি নাকি তাঁর বিয়ের জন্য এক দিনের ছুটি নেওয়ায় তাঁর ঊর্ধ্বতন তাঁকে বকাবকি করেছিলেন। এরপরই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর পরিবার বিবিসি হিন্দিকে জানিয়েছে।

গাজিয়াবাদের এক পোল কর্মী সুনীল সিং (ছদ্মনাম) বলেছেন, গত কয়েক দিনে তাঁর ‘প্লেটলেট সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে’ কিন্তু এসআইআর-এর কাজের জন্য তাঁকে ছুটি নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমাকে ডাক্তার বিশ্রাম নিতে বলেছেন, কিন্তু এই কর্মকর্তারা কানেও নিচ্ছেন না। ছুটি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো হাসপাতালে ভর্তি হওয়া।’ তিনি আরও জানান, তিনি রাজ্যের বিদ্যুৎ বিভাগের তাঁর চাকরিটি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।

বিএলওদের তাঁদের কাজের চাপ নিয়ে আবেদন জানানোর কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। কিন্তু তাঁরা বিক্ষোভ করেছেন এবং সময়সীমা বাড়ানোর ও ভালো কাজের পরিবেশের জন্য ইসি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে চিঠিও লিখেছেন। কিছু রাজ্য এই কাজের জন্য ছাত্র স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগাচ্ছে, আবার উত্তর প্রদেশের কিছু জেলায় সেরা কাজ করা বিএলওদের নগদ অর্থ, উপহার ও অন্য পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে যে, বিএলওদের দীর্ঘ কাজের সময় কমাতে এসআইআর কাজের জন্য যেন অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করা হয়। এখন ইসি বিএলওদের পারিশ্রমিক ছয় হাজার রুপি থেকে বাড়িয়ে বারো হাজার রুপি করেছে এবং সুপারভাইজারদের পারিশ্রমিক বারো হাজার রুপি থেকে আঠারো হাজার রুপি করেছে। এর পাশাপাশি বিএলওদের জন্য ছয় হাজার রুপির এসআইআর উৎসাহ-ভাতা যোগ করেছে। কিন্তু অনেক বিএলও বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, তাঁরা এখনো কোনো টাকাই পাননি, আর তাঁদের প্রাপ্য কত টাকা, তা-ও অনেকে জানেন না।

এর আগে এক ক্ষেত্রে, ইসি পশ্চিমবঙ্গে বিএলওদের টাকা দিতে দেরি হওয়ার জন্য রাজ্যকে দায়ী করেছিল, আবার রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তহবিল আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছিল। অনেক বিএলও বিবিসিকে বলেন, তাঁরা এসআইআর-এর কাজের জন্য নিজেদের টাকাপয়সা ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নয়ডার এক পোল কর্মী বলেন, ‘টাকা পাই কি না, দেখি। আশা খুবই কম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত