জিনাতুন নুর

পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন বিশ্বের খ্রিস্টানদের শীর্ষ ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নিতে আজ শনিবার রোমের রাস্তায় ও ভ্যাটিকান সিটিতে আনুমানিক ৪ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারাও পোপ ফ্রান্সিসকে বিদায় জানাতে ভ্যাটিকানে মিলিত হয়েছিলেন।
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পর রোমের সড়ক বেয়ে এক বিষণ্ণ শোকযাত্রাসহ পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে যাওয়া হয় চতুর্থ শতাব্দীর রোমান গির্জা সান্তা মারিয়া ম্যাজিওর বাসিলিকায়। শত বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম পোপ, যিনি প্রথা ভেঙে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার অর্থাৎ ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের বাইরে সমাহিত হলেন। সাধারণত পোপদের ভ্যাটিকান সিটির ভেতরে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার নিচেই সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু ফ্রান্সিস নিজেই চেয়েছিলেন, যেন তাঁকে শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত সেন্ট মেরি মেজর নামে পরিচিত 'বাসিলিকা দি সান্তা মারিয়া ম্যাজিওরে' ‘অনাড়ম্বর’ কবরে সমাহিত করা হয়।
২০১৩ সালে ফ্রান্সিস পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আগ পর্যন্ত নিজ দেশ আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস অঞ্চলের আর্চ বিশপ ছিলেন। তাঁর জন্য শোক জানাতে আর্জেন্টিনা ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে চার্চ, ক্যাথেড্রাল ও উন্মুক্ত স্থানে ভিড় করেন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীরা।
কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে যথার্থই বলেছেন, ফ্রান্সিস মানুষের মধ্যে ‘দেয়াল নয়, সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন’। তিনি এমন একজন ছিলেন, যিনি সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন। আর তাইতো কোনো অন্য কোনো পোপকে শেষ বিদায় জানাতে এতো মানুষের জমায়েত হয়নি। ধনী-দরিদ্র, প্রভাবশালী ও প্রান্তিক— সবাই সমবেত হয়েছিলেন। এখন পরবর্তী পোপ বা ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রপ্রধান কে হবেন, সবার নজর থাকবে সেদিকে।
ইতালির রাজধানী রোমের ভেতরেই আরেকটি ব্যতিক্রমী রাষ্ট্র এই ভ্যাটিকান সিটি। এটি ক্যাথলিকতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রতীক, যা একইসঙ্গে বিশ্বের খ্রিস্টানদের গীর্জা ও রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এই রাষ্ট্রের প্রধান হলেন পোপ, তিনি গীর্জারও প্রধান। ভ্যাটিকান সিটি যেমন বিশ্বের অন্যতম ছোট রাষ্ট্র, তেমনি এটি প্রাচীন ধর্মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রগুলোর মধ্যে সর্বশেষ। রাজতন্ত্র ও যাজকতন্ত্র একাকার হয়েও ধর্ম ও রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্যের অনন্য উদাহরণ এটি। ভ্যাটিক্যান সিটির রাজনৈতিক কাঠামো কীভাবে কাজ করে এবং পোপ কীভাবে নির্বাচিত হন, তাঁর ভূমিকা কী— এসব বিষয় জানতে ও জানাতেই আজকের এই নিবন্ধ।

এজার ভাটিকানুস ও পোপীয় রাষ্ট্র
ভ্যাটিকান সিটিতে চিরকালই পোপের শাসন ছিল না। এক সময় এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটির নামও ভ্যাটিকান ছিল না। আগে এই অঞ্চলকে এজার ভ্যাটিকানুস বলা হত। ভ্যাটিকান অবেলিস্ক (স্মৃতিস্তম্ভ) হিসেবে পরিচিত রোম সম্রাট নিরুর সার্কাস ছিল এখানকার আকর্ষণ। সেটাই ভ্যাটিকানের আধুনিক নগর রাষ্ট্রে একমাত্র অবশেষ।
যে এলাকাটিকে এখন সেন্ট পিটার্স স্কোয়ার বলা হয়, সেখানে যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য সেন্ট পিটার্সকে ক্রূশবিদ্ধ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সম্রাট কন্সটান্টিনের সময় রোম খ্রিষ্টধর্মে রূপান্তরিত হলে সেন্ট পিটার্সের কথিত সমাধিস্থলের ওপর ৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট পিটার্স র্গিজা গড়ে তোলা হয়। এই গির্জাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পোপতন্ত্রের রাষ্ট্র, পোপীয় রাষ্ট্রের প্রধান হন পোপ। তিনি একইসঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় শাসক।
৭৫৬ থেকে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইতালীয় উপদ্বীপের বিশাল অংশজুড়ে ছিল এই পোপীয় রাষ্ট্র। প্রায় এক হাজার বছর ধরে রোমের বিপরীত দিকে এক রাজপ্রাসাদ ছিল পোপের বাসভবন ও কর্মস্থল। চতুর্দশ শতকে কিছু সময়ের জন্য ফ্রান্সের অ্যাভিনন থেকে শাসনকার্য পরিচালিত হতো। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে নবগঠিত ইতালীয় সাম্রাজ্য পোপীয় রাষ্ট্রকে দখল করে নেয় এবং ইতালীর নতুন রাজা পোপের শাসন খর্ব করে।
এভাবেই প্রায় ৬০ বছর ধরে ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের মাঝে আটকে ছিল পোপতন্ত্র। তবে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। লাতেরান চুক্তির মাধ্যমে ইতালীর প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি ভ্যাটিকান সিটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর পোপতন্ত্র বিবর্তিত হলেও নগররাষ্ট্রটির শাসন হোলি সি বা পোপের অধীনেই রয়েছে। নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হিসেবে ভ্যাটিকানের যে গোড়াপত্তন শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত আছে।

ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন
ভ্যাটিকানের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পোপ নামে পরিচিত রোমের বিশপের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। এই নগর রাষ্ট্র ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তির শাসন হলেও হোলি সি কোনোভাবেই তার সমতুল্য নয়। সরকার, কার্ডিনাল, বিশপ ও পোপ নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানের পদবী হোলি সি। রাষ্ট্র ছাড়াও হোলি সি টিকে থাকতে পারে। এটিই একমাত্র সত্ত্বা যা ক্যাথলিক চার্চের সহস্রাব্দের বেশি সময়ের শাসনকাল ধরে টিকে ছিল।
ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্র এমন এলাকা, যেখানে বসে হোলি সি প্রজাদের শাসন করতে পারে। আর প্রজা মানে সকল ক্যাথলিক ধর্মানুসারী। ভ্যাটিকানের প্রশাসন ও হোলি সি-উভয় ক্ষেত্রেই পোপের নিরূঙ্কুশ ক্ষমতা। তবে সকল রাজতন্ত্রের মতো পোপ প্রশাসনের সব বিষয়ে নাক গলান না। প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালনের জন্য সরকারের অন্যান্য সদস্যদের হাতেও ক্ষমতা অর্পণ করেন।
নির্বাহী ক্ষমতা, আইনসভা ও বিচারিক ক্ষমতার চর্চা ভ্যাটিকান সরকারে কিছু প্রতিষ্ঠানের হাতেই। তবে তাত্ত্বিকভাবে হলেও এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রধান যাজক বা পোপের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। যদিও পোপের প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা পাওয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি শাখার প্রধান ব্যাক্তিদের সঙ্গে আরও বেশ কিছু সদস্য কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
পোপ ও ভ্যাটিকানের নির্বাহী শাখা
ভ্যাটিকানের নিরূঙ্কুশ রাজা ও ধর্মীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন পোপ। বেশ কিছু নির্বাহী ক্ষমতা গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট বা ভ্যাটিকান সরকারের প্রধানের কাছেও অর্পণ করা হয়। ভ্যাটিকানের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী পোপ। কিন্তু তিনি রোমান কিউরিয়া হিসেবে পরিচিত ক্যাথলিক গীর্জা বা হোলি সির গভর্নিং বডি মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষমতার প্রয়োগ করেন।
১৯৫২ সালে ভ্যাটিকান সিটির গর্ভনর পদের নাম বদলে ভ্যাটিকান গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট নাম দেওয়া হয়। পোপের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী শাখার এই শীর্ষ নেতার হাতেই ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্রের পরিচালনার ভার। তিনি পন্টিফিক্যাল বা যাজকীয় কমিশনেরও প্রধান। এই কমিশন ভ্যাটিকানের প্রধান আইন প্রণয়নকারী সংস্থা।
গভর্নরটের প্রেসিডেন্টকে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করেন পোপ। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে এই পদে আছেন সিস্টার রাফায়েলা পেত্রিনি। ভ্যাটিকানের ইতিহাসে এই পদে তিনিই প্রথম নারী। সরাসরি ভ্যাটিকান বা হোলি সির সঙ্গে সম্পর্কিত হোক বা না হোক-পোপ ও প্রেসিডেন্ট উভয়েরই রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে উভয় দিকের নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সেখানে সিদ্ধান্ত হয়।

পোপ পদাধিকারবলে ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা নন, নির্বাচিত রাজা। মৃত্যু কিংবা অবসরের আগ পর্যন্ত পোপের পদ বহাল থাকে। কলেজ অব কার্ডিনালস বা পাপাল কনক্লেভ নামের ইলেক্টরাল বডি বা নির্বাচকমন্ডলী নতুন পোপ নির্বাচন করে থাকে। বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক চার্চের পাদরীদের নিয়ে গঠিত এই ইলেক্টোরাল বডি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বে ২৬৩ জন কার্ডিনাল পাদরী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১২৪ জন কার্ডিনাল ইলেক্টর। তাঁরাই কনক্লেভে বা পোপ নির্বাচনের সভায় অংশ নিতে পারেন।
পোপ নির্বাচিত করার জন্য কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে বসেন। দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সিস্টিন চ্যাপেলে আটকে রাখা হয়। বাইরে থেকে সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারের চিমনির ধোঁয়া দেখে নির্বাচন শেষ হয়েছে বোঝা যায়। ব্যালট পেপার পুড়িয়ে চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের করা হয়। যখন নতুন পোপ নির্বাচিত হয়, তখন সাদা ধোঁয়া , তার আগ পর্যন্ত চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। ব্যালট পেপার পোড়ানোর কাজটি সকাল ও রাতে দুইবার করে করা হয়।

ভ্যাটিকানের আইন ব্যবস্থা
এককক্ষবিশিষ্ট পন্টিফিক্যাল কমিশন ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়ন করে থাকে। সাতজন কার্ডিনালের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিশন ভ্যাটিকান সিটি ও হলি সির জন্য নতুন আইন ও নীতির প্রস্তাব করে। কমিশনের প্রতিটি পদ পাঁচ বছর মেয়াদী হয়। কমিশনের প্রধান অর্থাৎ পন্টিফিক্যাল কমিশনের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানের পাশাপাশি আইনসভার প্রধান হিসেবেও কাজ করেন।
নতুন আইন পাশ হলে সেটাকে সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট বা পররাষ্ট্র দপ্তরের অনুমোদিত হতে হয়। সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট হলো রোমান কিউরিয়ার প্রধান অঙ্গ। এটি হলি সির পক্ষে সকল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কাজ করে।
এই সেক্রেটারিয়েটের প্রধান একজন কার্ডিনাল, তাকে সেক্রেটারি অব স্টেট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ডিকাস্ট্রি বা কিউরিয়ার সুনির্দিষ্ট তিনটি শাখা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে আছে সাধারণ বিভাগ, পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিভাগ ও কূটনৈতিক কর্মী বিভাগ। বর্তমান সেক্রেটারি অব স্টেট কার্ডিনাল পিয়েত্র পারোলিন ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য সব আইন সেক্রেটারিয়েট অব স্টেটকে অনুমোদন করতে হয়। কারণ ক্যাথলিক গির্জার আইন এই রাষ্ট্রেরও আইন।
ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন পরিচালনার জন্য মৌলিক আইন আছে। ২০০০ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল এই দেওয়ানি আইন জারি করার পাশাপাশি ভ্যাটিকানের নতুন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল আইন বাতিল করেন। ১৮৮৯ সালের ইতালীয় মৌলিক আইনের উপর ভিত্তি করেই ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভ্যাটিকান সিটির দন্ডবিধি আইন ও দেওয়ানি আইন কার্যকর ছিল। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে এবং অর্থ পাচার ও যৌন র্নিযাতনের মতো অপরাধের আধুনিক শাস্তি অন্তর্ভূক্ত করতে পোপ ফ্রান্সিস এসে আইন সংশোধন করেন।

আগে প্যাস্টর বোনাস নামে পরিচিত ঐশী সংবিধান অনুযায়ী রোমান কিউরিয়া ও ক্যাথলিক চার্চের শাসন পরিচালিত হয়। পোপকে বিশ্বব্যাপী র্চাচ পরিচালনায় সাহায্য করতে এই সংবিধান অনুযায়ী বিধি ও আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০২২ সালে সেটি পরিবর্তন করে প্রেডিকেট ইভাঞ্জেলিয়ামকে (প্রিচ দ্য গসপেল) ভ্যাটিকানের ঐশী সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করেন পোপ ফ্রান্সিস। এছাড়াও ২০০৮ সালের পর ভ্যাটিকান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইতালীয় সরকারের আইন গ্রহণ করেনি। বরং ইতালিতে যখনই নতুন কোনো আইন প্রর্বতিত হয় তখন ভ্যাটিকান এটি র্পযালোচনা করে এবং র্চাচের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যর্পূণ হলেই তা গ্রহণ করে। না হলে ভ্যাটিকান সে আইন বাস্তবায়ন প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রাখে।
ভ্যাটিকানের বিচার ব্যবস্থা
ভ্যাটিকানের আইন প্রয়োগ করে বিচার বিভাগ। একজন প্রেসিডেন্ট ও চারজন বিচারপতি নিয়ে ভ্যাটিকানের ট্রাইবুনালটি গঠিত। পোপ ফ্রান্সিস ২০২০ সালে একজন বিচারপতির সংখ্যা বাড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাই করা অধ্যাপক ও বিচার বিভাগীয় র্কমর্কতারা ট্রাইবুনালের সদস্য হন। পোপ তাঁদের বাছাই করে নিয়োগ দিলেও তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করেন।
২০২০ সালের পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারের ফলে বিচারে সহায়তার জন্য রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়। ভ্যাটিকানের অন্যান্য বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল ও আইন কর্মকর্তার জবাবদিহিতা শুধুমাত্র পোপের কাছে সীমাবদ্ধ।
এই আইন ভ্যাটিকানের বিচার আরও সহজ ও শক্তিশালী করে। এর ফলে আর্থিক ও ফৌজদারি অপরাধ আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এই ধরনের অপরাধের বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিধি ও পদ্ধতি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে মানসম্মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধানও আছে।
ভ্যাটিকানের আইনপ্রয়োগ করে নগর-রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী জেন্ডামেরি। এটি বেসামরিক বাহিনী হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স আর উচ্চতার বাধ্যবাধকতা আছে। এই বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে ক্যাথলিক ধর্ম চর্চা করতে হয়। প্রায় ২০০ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত এই ছোট বাহিনী অন্য যেকোনো দেশের সাধারণ পুলিশ বহিনীর মতোই কাজ করে। পাশাপাশি এরাই ভ্যাটিকানের সিমান্ত রক্ষা করে।
ভ্যাটিকানে অপরাধের হার কম। শুধু ভ্যাটিকান সিটিতে কারাগারের সংখ্যাও কম। তাই লাতেরান চুক্তির শর্তাবলী অনুসারে ভ্যাটিকানের অপরাধীদের ইতালির কারাগারে রাখা হয়।
এক নজরে ভ্যাটিকান রাজনৈতিক কাঠামো
নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাটিকান সিটি নামে ছোট রাষ্ট্রের শাসক পোপ হলেন নির্বাচিত রাজা। এর সরকারের অভ্যন্তরীণ আরও বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো এটিকে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে টিকিয়ে রেখেছে— যেমন ভ্যাটিকান সিটি (রাষ্ট্র) ও হোলি সির (চার্চ) স্বতন্ত্র অস্তিত্ব।
ভ্যাটিকান বিশ্বব্যাপী চার্চের সরকার হিসেবে কাজ করলেও এটি এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে কার্যকরী ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এর মধ্যে রয়েছে জনসেবা, বিচার বিভাগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক।
মোটের উপর একটি ধর্মীয় ক্ষুদ্ররাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হয় ভ্যাটিকান হচ্ছে তার চমৎকার কেস স্টাডি। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সাথে মিশ্রিত ধর্মীয় রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায় ঐশ্বরিক ও অনন্য এক চিত্র তুলে ধরে।
লেখক: ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, ইডেন কলেজ

পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন বিশ্বের খ্রিস্টানদের শীর্ষ ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নিতে আজ শনিবার রোমের রাস্তায় ও ভ্যাটিকান সিটিতে আনুমানিক ৪ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারাও পোপ ফ্রান্সিসকে বিদায় জানাতে ভ্যাটিকানে মিলিত হয়েছিলেন।
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পর রোমের সড়ক বেয়ে এক বিষণ্ণ শোকযাত্রাসহ পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে যাওয়া হয় চতুর্থ শতাব্দীর রোমান গির্জা সান্তা মারিয়া ম্যাজিওর বাসিলিকায়। শত বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম পোপ, যিনি প্রথা ভেঙে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার অর্থাৎ ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের বাইরে সমাহিত হলেন। সাধারণত পোপদের ভ্যাটিকান সিটির ভেতরে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার নিচেই সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু ফ্রান্সিস নিজেই চেয়েছিলেন, যেন তাঁকে শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত সেন্ট মেরি মেজর নামে পরিচিত 'বাসিলিকা দি সান্তা মারিয়া ম্যাজিওরে' ‘অনাড়ম্বর’ কবরে সমাহিত করা হয়।
২০১৩ সালে ফ্রান্সিস পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আগ পর্যন্ত নিজ দেশ আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস অঞ্চলের আর্চ বিশপ ছিলেন। তাঁর জন্য শোক জানাতে আর্জেন্টিনা ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে চার্চ, ক্যাথেড্রাল ও উন্মুক্ত স্থানে ভিড় করেন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীরা।
কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে যথার্থই বলেছেন, ফ্রান্সিস মানুষের মধ্যে ‘দেয়াল নয়, সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন’। তিনি এমন একজন ছিলেন, যিনি সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন। আর তাইতো কোনো অন্য কোনো পোপকে শেষ বিদায় জানাতে এতো মানুষের জমায়েত হয়নি। ধনী-দরিদ্র, প্রভাবশালী ও প্রান্তিক— সবাই সমবেত হয়েছিলেন। এখন পরবর্তী পোপ বা ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রপ্রধান কে হবেন, সবার নজর থাকবে সেদিকে।
ইতালির রাজধানী রোমের ভেতরেই আরেকটি ব্যতিক্রমী রাষ্ট্র এই ভ্যাটিকান সিটি। এটি ক্যাথলিকতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রতীক, যা একইসঙ্গে বিশ্বের খ্রিস্টানদের গীর্জা ও রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এই রাষ্ট্রের প্রধান হলেন পোপ, তিনি গীর্জারও প্রধান। ভ্যাটিকান সিটি যেমন বিশ্বের অন্যতম ছোট রাষ্ট্র, তেমনি এটি প্রাচীন ধর্মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রগুলোর মধ্যে সর্বশেষ। রাজতন্ত্র ও যাজকতন্ত্র একাকার হয়েও ধর্ম ও রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্যের অনন্য উদাহরণ এটি। ভ্যাটিক্যান সিটির রাজনৈতিক কাঠামো কীভাবে কাজ করে এবং পোপ কীভাবে নির্বাচিত হন, তাঁর ভূমিকা কী— এসব বিষয় জানতে ও জানাতেই আজকের এই নিবন্ধ।

এজার ভাটিকানুস ও পোপীয় রাষ্ট্র
ভ্যাটিকান সিটিতে চিরকালই পোপের শাসন ছিল না। এক সময় এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটির নামও ভ্যাটিকান ছিল না। আগে এই অঞ্চলকে এজার ভ্যাটিকানুস বলা হত। ভ্যাটিকান অবেলিস্ক (স্মৃতিস্তম্ভ) হিসেবে পরিচিত রোম সম্রাট নিরুর সার্কাস ছিল এখানকার আকর্ষণ। সেটাই ভ্যাটিকানের আধুনিক নগর রাষ্ট্রে একমাত্র অবশেষ।
যে এলাকাটিকে এখন সেন্ট পিটার্স স্কোয়ার বলা হয়, সেখানে যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য সেন্ট পিটার্সকে ক্রূশবিদ্ধ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সম্রাট কন্সটান্টিনের সময় রোম খ্রিষ্টধর্মে রূপান্তরিত হলে সেন্ট পিটার্সের কথিত সমাধিস্থলের ওপর ৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট পিটার্স র্গিজা গড়ে তোলা হয়। এই গির্জাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পোপতন্ত্রের রাষ্ট্র, পোপীয় রাষ্ট্রের প্রধান হন পোপ। তিনি একইসঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় শাসক।
৭৫৬ থেকে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইতালীয় উপদ্বীপের বিশাল অংশজুড়ে ছিল এই পোপীয় রাষ্ট্র। প্রায় এক হাজার বছর ধরে রোমের বিপরীত দিকে এক রাজপ্রাসাদ ছিল পোপের বাসভবন ও কর্মস্থল। চতুর্দশ শতকে কিছু সময়ের জন্য ফ্রান্সের অ্যাভিনন থেকে শাসনকার্য পরিচালিত হতো। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে নবগঠিত ইতালীয় সাম্রাজ্য পোপীয় রাষ্ট্রকে দখল করে নেয় এবং ইতালীর নতুন রাজা পোপের শাসন খর্ব করে।
এভাবেই প্রায় ৬০ বছর ধরে ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের মাঝে আটকে ছিল পোপতন্ত্র। তবে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। লাতেরান চুক্তির মাধ্যমে ইতালীর প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি ভ্যাটিকান সিটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর পোপতন্ত্র বিবর্তিত হলেও নগররাষ্ট্রটির শাসন হোলি সি বা পোপের অধীনেই রয়েছে। নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হিসেবে ভ্যাটিকানের যে গোড়াপত্তন শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত আছে।

ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন
ভ্যাটিকানের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পোপ নামে পরিচিত রোমের বিশপের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। এই নগর রাষ্ট্র ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তির শাসন হলেও হোলি সি কোনোভাবেই তার সমতুল্য নয়। সরকার, কার্ডিনাল, বিশপ ও পোপ নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানের পদবী হোলি সি। রাষ্ট্র ছাড়াও হোলি সি টিকে থাকতে পারে। এটিই একমাত্র সত্ত্বা যা ক্যাথলিক চার্চের সহস্রাব্দের বেশি সময়ের শাসনকাল ধরে টিকে ছিল।
ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্র এমন এলাকা, যেখানে বসে হোলি সি প্রজাদের শাসন করতে পারে। আর প্রজা মানে সকল ক্যাথলিক ধর্মানুসারী। ভ্যাটিকানের প্রশাসন ও হোলি সি-উভয় ক্ষেত্রেই পোপের নিরূঙ্কুশ ক্ষমতা। তবে সকল রাজতন্ত্রের মতো পোপ প্রশাসনের সব বিষয়ে নাক গলান না। প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালনের জন্য সরকারের অন্যান্য সদস্যদের হাতেও ক্ষমতা অর্পণ করেন।
নির্বাহী ক্ষমতা, আইনসভা ও বিচারিক ক্ষমতার চর্চা ভ্যাটিকান সরকারে কিছু প্রতিষ্ঠানের হাতেই। তবে তাত্ত্বিকভাবে হলেও এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রধান যাজক বা পোপের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। যদিও পোপের প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা পাওয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি শাখার প্রধান ব্যাক্তিদের সঙ্গে আরও বেশ কিছু সদস্য কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
পোপ ও ভ্যাটিকানের নির্বাহী শাখা
ভ্যাটিকানের নিরূঙ্কুশ রাজা ও ধর্মীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন পোপ। বেশ কিছু নির্বাহী ক্ষমতা গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট বা ভ্যাটিকান সরকারের প্রধানের কাছেও অর্পণ করা হয়। ভ্যাটিকানের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী পোপ। কিন্তু তিনি রোমান কিউরিয়া হিসেবে পরিচিত ক্যাথলিক গীর্জা বা হোলি সির গভর্নিং বডি মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষমতার প্রয়োগ করেন।
১৯৫২ সালে ভ্যাটিকান সিটির গর্ভনর পদের নাম বদলে ভ্যাটিকান গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট নাম দেওয়া হয়। পোপের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী শাখার এই শীর্ষ নেতার হাতেই ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্রের পরিচালনার ভার। তিনি পন্টিফিক্যাল বা যাজকীয় কমিশনেরও প্রধান। এই কমিশন ভ্যাটিকানের প্রধান আইন প্রণয়নকারী সংস্থা।
গভর্নরটের প্রেসিডেন্টকে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করেন পোপ। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে এই পদে আছেন সিস্টার রাফায়েলা পেত্রিনি। ভ্যাটিকানের ইতিহাসে এই পদে তিনিই প্রথম নারী। সরাসরি ভ্যাটিকান বা হোলি সির সঙ্গে সম্পর্কিত হোক বা না হোক-পোপ ও প্রেসিডেন্ট উভয়েরই রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে উভয় দিকের নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সেখানে সিদ্ধান্ত হয়।

পোপ পদাধিকারবলে ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা নন, নির্বাচিত রাজা। মৃত্যু কিংবা অবসরের আগ পর্যন্ত পোপের পদ বহাল থাকে। কলেজ অব কার্ডিনালস বা পাপাল কনক্লেভ নামের ইলেক্টরাল বডি বা নির্বাচকমন্ডলী নতুন পোপ নির্বাচন করে থাকে। বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক চার্চের পাদরীদের নিয়ে গঠিত এই ইলেক্টোরাল বডি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বে ২৬৩ জন কার্ডিনাল পাদরী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১২৪ জন কার্ডিনাল ইলেক্টর। তাঁরাই কনক্লেভে বা পোপ নির্বাচনের সভায় অংশ নিতে পারেন।
পোপ নির্বাচিত করার জন্য কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে বসেন। দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সিস্টিন চ্যাপেলে আটকে রাখা হয়। বাইরে থেকে সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারের চিমনির ধোঁয়া দেখে নির্বাচন শেষ হয়েছে বোঝা যায়। ব্যালট পেপার পুড়িয়ে চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের করা হয়। যখন নতুন পোপ নির্বাচিত হয়, তখন সাদা ধোঁয়া , তার আগ পর্যন্ত চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। ব্যালট পেপার পোড়ানোর কাজটি সকাল ও রাতে দুইবার করে করা হয়।

ভ্যাটিকানের আইন ব্যবস্থা
এককক্ষবিশিষ্ট পন্টিফিক্যাল কমিশন ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়ন করে থাকে। সাতজন কার্ডিনালের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিশন ভ্যাটিকান সিটি ও হলি সির জন্য নতুন আইন ও নীতির প্রস্তাব করে। কমিশনের প্রতিটি পদ পাঁচ বছর মেয়াদী হয়। কমিশনের প্রধান অর্থাৎ পন্টিফিক্যাল কমিশনের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানের পাশাপাশি আইনসভার প্রধান হিসেবেও কাজ করেন।
নতুন আইন পাশ হলে সেটাকে সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট বা পররাষ্ট্র দপ্তরের অনুমোদিত হতে হয়। সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট হলো রোমান কিউরিয়ার প্রধান অঙ্গ। এটি হলি সির পক্ষে সকল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কাজ করে।
এই সেক্রেটারিয়েটের প্রধান একজন কার্ডিনাল, তাকে সেক্রেটারি অব স্টেট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ডিকাস্ট্রি বা কিউরিয়ার সুনির্দিষ্ট তিনটি শাখা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে আছে সাধারণ বিভাগ, পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিভাগ ও কূটনৈতিক কর্মী বিভাগ। বর্তমান সেক্রেটারি অব স্টেট কার্ডিনাল পিয়েত্র পারোলিন ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য সব আইন সেক্রেটারিয়েট অব স্টেটকে অনুমোদন করতে হয়। কারণ ক্যাথলিক গির্জার আইন এই রাষ্ট্রেরও আইন।
ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন পরিচালনার জন্য মৌলিক আইন আছে। ২০০০ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল এই দেওয়ানি আইন জারি করার পাশাপাশি ভ্যাটিকানের নতুন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল আইন বাতিল করেন। ১৮৮৯ সালের ইতালীয় মৌলিক আইনের উপর ভিত্তি করেই ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভ্যাটিকান সিটির দন্ডবিধি আইন ও দেওয়ানি আইন কার্যকর ছিল। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে এবং অর্থ পাচার ও যৌন র্নিযাতনের মতো অপরাধের আধুনিক শাস্তি অন্তর্ভূক্ত করতে পোপ ফ্রান্সিস এসে আইন সংশোধন করেন।

আগে প্যাস্টর বোনাস নামে পরিচিত ঐশী সংবিধান অনুযায়ী রোমান কিউরিয়া ও ক্যাথলিক চার্চের শাসন পরিচালিত হয়। পোপকে বিশ্বব্যাপী র্চাচ পরিচালনায় সাহায্য করতে এই সংবিধান অনুযায়ী বিধি ও আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০২২ সালে সেটি পরিবর্তন করে প্রেডিকেট ইভাঞ্জেলিয়ামকে (প্রিচ দ্য গসপেল) ভ্যাটিকানের ঐশী সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করেন পোপ ফ্রান্সিস। এছাড়াও ২০০৮ সালের পর ভ্যাটিকান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইতালীয় সরকারের আইন গ্রহণ করেনি। বরং ইতালিতে যখনই নতুন কোনো আইন প্রর্বতিত হয় তখন ভ্যাটিকান এটি র্পযালোচনা করে এবং র্চাচের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যর্পূণ হলেই তা গ্রহণ করে। না হলে ভ্যাটিকান সে আইন বাস্তবায়ন প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রাখে।
ভ্যাটিকানের বিচার ব্যবস্থা
ভ্যাটিকানের আইন প্রয়োগ করে বিচার বিভাগ। একজন প্রেসিডেন্ট ও চারজন বিচারপতি নিয়ে ভ্যাটিকানের ট্রাইবুনালটি গঠিত। পোপ ফ্রান্সিস ২০২০ সালে একজন বিচারপতির সংখ্যা বাড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাই করা অধ্যাপক ও বিচার বিভাগীয় র্কমর্কতারা ট্রাইবুনালের সদস্য হন। পোপ তাঁদের বাছাই করে নিয়োগ দিলেও তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করেন।
২০২০ সালের পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারের ফলে বিচারে সহায়তার জন্য রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়। ভ্যাটিকানের অন্যান্য বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল ও আইন কর্মকর্তার জবাবদিহিতা শুধুমাত্র পোপের কাছে সীমাবদ্ধ।
এই আইন ভ্যাটিকানের বিচার আরও সহজ ও শক্তিশালী করে। এর ফলে আর্থিক ও ফৌজদারি অপরাধ আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এই ধরনের অপরাধের বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিধি ও পদ্ধতি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে মানসম্মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধানও আছে।
ভ্যাটিকানের আইনপ্রয়োগ করে নগর-রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী জেন্ডামেরি। এটি বেসামরিক বাহিনী হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স আর উচ্চতার বাধ্যবাধকতা আছে। এই বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে ক্যাথলিক ধর্ম চর্চা করতে হয়। প্রায় ২০০ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত এই ছোট বাহিনী অন্য যেকোনো দেশের সাধারণ পুলিশ বহিনীর মতোই কাজ করে। পাশাপাশি এরাই ভ্যাটিকানের সিমান্ত রক্ষা করে।
ভ্যাটিকানে অপরাধের হার কম। শুধু ভ্যাটিকান সিটিতে কারাগারের সংখ্যাও কম। তাই লাতেরান চুক্তির শর্তাবলী অনুসারে ভ্যাটিকানের অপরাধীদের ইতালির কারাগারে রাখা হয়।
এক নজরে ভ্যাটিকান রাজনৈতিক কাঠামো
নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাটিকান সিটি নামে ছোট রাষ্ট্রের শাসক পোপ হলেন নির্বাচিত রাজা। এর সরকারের অভ্যন্তরীণ আরও বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো এটিকে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে টিকিয়ে রেখেছে— যেমন ভ্যাটিকান সিটি (রাষ্ট্র) ও হোলি সির (চার্চ) স্বতন্ত্র অস্তিত্ব।
ভ্যাটিকান বিশ্বব্যাপী চার্চের সরকার হিসেবে কাজ করলেও এটি এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে কার্যকরী ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এর মধ্যে রয়েছে জনসেবা, বিচার বিভাগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক।
মোটের উপর একটি ধর্মীয় ক্ষুদ্ররাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হয় ভ্যাটিকান হচ্ছে তার চমৎকার কেস স্টাডি। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সাথে মিশ্রিত ধর্মীয় রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায় ঐশ্বরিক ও অনন্য এক চিত্র তুলে ধরে।
লেখক: ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, ইডেন কলেজ
জিনাতুন নুর

পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন বিশ্বের খ্রিস্টানদের শীর্ষ ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নিতে আজ শনিবার রোমের রাস্তায় ও ভ্যাটিকান সিটিতে আনুমানিক ৪ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারাও পোপ ফ্রান্সিসকে বিদায় জানাতে ভ্যাটিকানে মিলিত হয়েছিলেন।
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পর রোমের সড়ক বেয়ে এক বিষণ্ণ শোকযাত্রাসহ পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে যাওয়া হয় চতুর্থ শতাব্দীর রোমান গির্জা সান্তা মারিয়া ম্যাজিওর বাসিলিকায়। শত বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম পোপ, যিনি প্রথা ভেঙে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার অর্থাৎ ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের বাইরে সমাহিত হলেন। সাধারণত পোপদের ভ্যাটিকান সিটির ভেতরে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার নিচেই সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু ফ্রান্সিস নিজেই চেয়েছিলেন, যেন তাঁকে শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত সেন্ট মেরি মেজর নামে পরিচিত 'বাসিলিকা দি সান্তা মারিয়া ম্যাজিওরে' ‘অনাড়ম্বর’ কবরে সমাহিত করা হয়।
২০১৩ সালে ফ্রান্সিস পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আগ পর্যন্ত নিজ দেশ আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস অঞ্চলের আর্চ বিশপ ছিলেন। তাঁর জন্য শোক জানাতে আর্জেন্টিনা ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে চার্চ, ক্যাথেড্রাল ও উন্মুক্ত স্থানে ভিড় করেন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীরা।
কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে যথার্থই বলেছেন, ফ্রান্সিস মানুষের মধ্যে ‘দেয়াল নয়, সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন’। তিনি এমন একজন ছিলেন, যিনি সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন। আর তাইতো কোনো অন্য কোনো পোপকে শেষ বিদায় জানাতে এতো মানুষের জমায়েত হয়নি। ধনী-দরিদ্র, প্রভাবশালী ও প্রান্তিক— সবাই সমবেত হয়েছিলেন। এখন পরবর্তী পোপ বা ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রপ্রধান কে হবেন, সবার নজর থাকবে সেদিকে।
ইতালির রাজধানী রোমের ভেতরেই আরেকটি ব্যতিক্রমী রাষ্ট্র এই ভ্যাটিকান সিটি। এটি ক্যাথলিকতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রতীক, যা একইসঙ্গে বিশ্বের খ্রিস্টানদের গীর্জা ও রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এই রাষ্ট্রের প্রধান হলেন পোপ, তিনি গীর্জারও প্রধান। ভ্যাটিকান সিটি যেমন বিশ্বের অন্যতম ছোট রাষ্ট্র, তেমনি এটি প্রাচীন ধর্মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রগুলোর মধ্যে সর্বশেষ। রাজতন্ত্র ও যাজকতন্ত্র একাকার হয়েও ধর্ম ও রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্যের অনন্য উদাহরণ এটি। ভ্যাটিক্যান সিটির রাজনৈতিক কাঠামো কীভাবে কাজ করে এবং পোপ কীভাবে নির্বাচিত হন, তাঁর ভূমিকা কী— এসব বিষয় জানতে ও জানাতেই আজকের এই নিবন্ধ।

এজার ভাটিকানুস ও পোপীয় রাষ্ট্র
ভ্যাটিকান সিটিতে চিরকালই পোপের শাসন ছিল না। এক সময় এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটির নামও ভ্যাটিকান ছিল না। আগে এই অঞ্চলকে এজার ভ্যাটিকানুস বলা হত। ভ্যাটিকান অবেলিস্ক (স্মৃতিস্তম্ভ) হিসেবে পরিচিত রোম সম্রাট নিরুর সার্কাস ছিল এখানকার আকর্ষণ। সেটাই ভ্যাটিকানের আধুনিক নগর রাষ্ট্রে একমাত্র অবশেষ।
যে এলাকাটিকে এখন সেন্ট পিটার্স স্কোয়ার বলা হয়, সেখানে যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য সেন্ট পিটার্সকে ক্রূশবিদ্ধ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সম্রাট কন্সটান্টিনের সময় রোম খ্রিষ্টধর্মে রূপান্তরিত হলে সেন্ট পিটার্সের কথিত সমাধিস্থলের ওপর ৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট পিটার্স র্গিজা গড়ে তোলা হয়। এই গির্জাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পোপতন্ত্রের রাষ্ট্র, পোপীয় রাষ্ট্রের প্রধান হন পোপ। তিনি একইসঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় শাসক।
৭৫৬ থেকে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইতালীয় উপদ্বীপের বিশাল অংশজুড়ে ছিল এই পোপীয় রাষ্ট্র। প্রায় এক হাজার বছর ধরে রোমের বিপরীত দিকে এক রাজপ্রাসাদ ছিল পোপের বাসভবন ও কর্মস্থল। চতুর্দশ শতকে কিছু সময়ের জন্য ফ্রান্সের অ্যাভিনন থেকে শাসনকার্য পরিচালিত হতো। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে নবগঠিত ইতালীয় সাম্রাজ্য পোপীয় রাষ্ট্রকে দখল করে নেয় এবং ইতালীর নতুন রাজা পোপের শাসন খর্ব করে।
এভাবেই প্রায় ৬০ বছর ধরে ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের মাঝে আটকে ছিল পোপতন্ত্র। তবে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। লাতেরান চুক্তির মাধ্যমে ইতালীর প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি ভ্যাটিকান সিটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর পোপতন্ত্র বিবর্তিত হলেও নগররাষ্ট্রটির শাসন হোলি সি বা পোপের অধীনেই রয়েছে। নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হিসেবে ভ্যাটিকানের যে গোড়াপত্তন শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত আছে।

ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন
ভ্যাটিকানের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পোপ নামে পরিচিত রোমের বিশপের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। এই নগর রাষ্ট্র ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তির শাসন হলেও হোলি সি কোনোভাবেই তার সমতুল্য নয়। সরকার, কার্ডিনাল, বিশপ ও পোপ নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানের পদবী হোলি সি। রাষ্ট্র ছাড়াও হোলি সি টিকে থাকতে পারে। এটিই একমাত্র সত্ত্বা যা ক্যাথলিক চার্চের সহস্রাব্দের বেশি সময়ের শাসনকাল ধরে টিকে ছিল।
ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্র এমন এলাকা, যেখানে বসে হোলি সি প্রজাদের শাসন করতে পারে। আর প্রজা মানে সকল ক্যাথলিক ধর্মানুসারী। ভ্যাটিকানের প্রশাসন ও হোলি সি-উভয় ক্ষেত্রেই পোপের নিরূঙ্কুশ ক্ষমতা। তবে সকল রাজতন্ত্রের মতো পোপ প্রশাসনের সব বিষয়ে নাক গলান না। প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালনের জন্য সরকারের অন্যান্য সদস্যদের হাতেও ক্ষমতা অর্পণ করেন।
নির্বাহী ক্ষমতা, আইনসভা ও বিচারিক ক্ষমতার চর্চা ভ্যাটিকান সরকারে কিছু প্রতিষ্ঠানের হাতেই। তবে তাত্ত্বিকভাবে হলেও এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রধান যাজক বা পোপের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। যদিও পোপের প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা পাওয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি শাখার প্রধান ব্যাক্তিদের সঙ্গে আরও বেশ কিছু সদস্য কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
পোপ ও ভ্যাটিকানের নির্বাহী শাখা
ভ্যাটিকানের নিরূঙ্কুশ রাজা ও ধর্মীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন পোপ। বেশ কিছু নির্বাহী ক্ষমতা গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট বা ভ্যাটিকান সরকারের প্রধানের কাছেও অর্পণ করা হয়। ভ্যাটিকানের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী পোপ। কিন্তু তিনি রোমান কিউরিয়া হিসেবে পরিচিত ক্যাথলিক গীর্জা বা হোলি সির গভর্নিং বডি মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষমতার প্রয়োগ করেন।
১৯৫২ সালে ভ্যাটিকান সিটির গর্ভনর পদের নাম বদলে ভ্যাটিকান গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট নাম দেওয়া হয়। পোপের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী শাখার এই শীর্ষ নেতার হাতেই ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্রের পরিচালনার ভার। তিনি পন্টিফিক্যাল বা যাজকীয় কমিশনেরও প্রধান। এই কমিশন ভ্যাটিকানের প্রধান আইন প্রণয়নকারী সংস্থা।
গভর্নরটের প্রেসিডেন্টকে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করেন পোপ। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে এই পদে আছেন সিস্টার রাফায়েলা পেত্রিনি। ভ্যাটিকানের ইতিহাসে এই পদে তিনিই প্রথম নারী। সরাসরি ভ্যাটিকান বা হোলি সির সঙ্গে সম্পর্কিত হোক বা না হোক-পোপ ও প্রেসিডেন্ট উভয়েরই রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে উভয় দিকের নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সেখানে সিদ্ধান্ত হয়।

পোপ পদাধিকারবলে ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা নন, নির্বাচিত রাজা। মৃত্যু কিংবা অবসরের আগ পর্যন্ত পোপের পদ বহাল থাকে। কলেজ অব কার্ডিনালস বা পাপাল কনক্লেভ নামের ইলেক্টরাল বডি বা নির্বাচকমন্ডলী নতুন পোপ নির্বাচন করে থাকে। বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক চার্চের পাদরীদের নিয়ে গঠিত এই ইলেক্টোরাল বডি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বে ২৬৩ জন কার্ডিনাল পাদরী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১২৪ জন কার্ডিনাল ইলেক্টর। তাঁরাই কনক্লেভে বা পোপ নির্বাচনের সভায় অংশ নিতে পারেন।
পোপ নির্বাচিত করার জন্য কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে বসেন। দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সিস্টিন চ্যাপেলে আটকে রাখা হয়। বাইরে থেকে সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারের চিমনির ধোঁয়া দেখে নির্বাচন শেষ হয়েছে বোঝা যায়। ব্যালট পেপার পুড়িয়ে চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের করা হয়। যখন নতুন পোপ নির্বাচিত হয়, তখন সাদা ধোঁয়া , তার আগ পর্যন্ত চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। ব্যালট পেপার পোড়ানোর কাজটি সকাল ও রাতে দুইবার করে করা হয়।

ভ্যাটিকানের আইন ব্যবস্থা
এককক্ষবিশিষ্ট পন্টিফিক্যাল কমিশন ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়ন করে থাকে। সাতজন কার্ডিনালের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিশন ভ্যাটিকান সিটি ও হলি সির জন্য নতুন আইন ও নীতির প্রস্তাব করে। কমিশনের প্রতিটি পদ পাঁচ বছর মেয়াদী হয়। কমিশনের প্রধান অর্থাৎ পন্টিফিক্যাল কমিশনের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানের পাশাপাশি আইনসভার প্রধান হিসেবেও কাজ করেন।
নতুন আইন পাশ হলে সেটাকে সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট বা পররাষ্ট্র দপ্তরের অনুমোদিত হতে হয়। সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট হলো রোমান কিউরিয়ার প্রধান অঙ্গ। এটি হলি সির পক্ষে সকল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কাজ করে।
এই সেক্রেটারিয়েটের প্রধান একজন কার্ডিনাল, তাকে সেক্রেটারি অব স্টেট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ডিকাস্ট্রি বা কিউরিয়ার সুনির্দিষ্ট তিনটি শাখা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে আছে সাধারণ বিভাগ, পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিভাগ ও কূটনৈতিক কর্মী বিভাগ। বর্তমান সেক্রেটারি অব স্টেট কার্ডিনাল পিয়েত্র পারোলিন ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য সব আইন সেক্রেটারিয়েট অব স্টেটকে অনুমোদন করতে হয়। কারণ ক্যাথলিক গির্জার আইন এই রাষ্ট্রেরও আইন।
ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন পরিচালনার জন্য মৌলিক আইন আছে। ২০০০ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল এই দেওয়ানি আইন জারি করার পাশাপাশি ভ্যাটিকানের নতুন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল আইন বাতিল করেন। ১৮৮৯ সালের ইতালীয় মৌলিক আইনের উপর ভিত্তি করেই ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভ্যাটিকান সিটির দন্ডবিধি আইন ও দেওয়ানি আইন কার্যকর ছিল। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে এবং অর্থ পাচার ও যৌন র্নিযাতনের মতো অপরাধের আধুনিক শাস্তি অন্তর্ভূক্ত করতে পোপ ফ্রান্সিস এসে আইন সংশোধন করেন।

আগে প্যাস্টর বোনাস নামে পরিচিত ঐশী সংবিধান অনুযায়ী রোমান কিউরিয়া ও ক্যাথলিক চার্চের শাসন পরিচালিত হয়। পোপকে বিশ্বব্যাপী র্চাচ পরিচালনায় সাহায্য করতে এই সংবিধান অনুযায়ী বিধি ও আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০২২ সালে সেটি পরিবর্তন করে প্রেডিকেট ইভাঞ্জেলিয়ামকে (প্রিচ দ্য গসপেল) ভ্যাটিকানের ঐশী সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করেন পোপ ফ্রান্সিস। এছাড়াও ২০০৮ সালের পর ভ্যাটিকান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইতালীয় সরকারের আইন গ্রহণ করেনি। বরং ইতালিতে যখনই নতুন কোনো আইন প্রর্বতিত হয় তখন ভ্যাটিকান এটি র্পযালোচনা করে এবং র্চাচের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যর্পূণ হলেই তা গ্রহণ করে। না হলে ভ্যাটিকান সে আইন বাস্তবায়ন প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রাখে।
ভ্যাটিকানের বিচার ব্যবস্থা
ভ্যাটিকানের আইন প্রয়োগ করে বিচার বিভাগ। একজন প্রেসিডেন্ট ও চারজন বিচারপতি নিয়ে ভ্যাটিকানের ট্রাইবুনালটি গঠিত। পোপ ফ্রান্সিস ২০২০ সালে একজন বিচারপতির সংখ্যা বাড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাই করা অধ্যাপক ও বিচার বিভাগীয় র্কমর্কতারা ট্রাইবুনালের সদস্য হন। পোপ তাঁদের বাছাই করে নিয়োগ দিলেও তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করেন।
২০২০ সালের পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারের ফলে বিচারে সহায়তার জন্য রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়। ভ্যাটিকানের অন্যান্য বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল ও আইন কর্মকর্তার জবাবদিহিতা শুধুমাত্র পোপের কাছে সীমাবদ্ধ।
এই আইন ভ্যাটিকানের বিচার আরও সহজ ও শক্তিশালী করে। এর ফলে আর্থিক ও ফৌজদারি অপরাধ আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এই ধরনের অপরাধের বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিধি ও পদ্ধতি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে মানসম্মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধানও আছে।
ভ্যাটিকানের আইনপ্রয়োগ করে নগর-রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী জেন্ডামেরি। এটি বেসামরিক বাহিনী হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স আর উচ্চতার বাধ্যবাধকতা আছে। এই বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে ক্যাথলিক ধর্ম চর্চা করতে হয়। প্রায় ২০০ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত এই ছোট বাহিনী অন্য যেকোনো দেশের সাধারণ পুলিশ বহিনীর মতোই কাজ করে। পাশাপাশি এরাই ভ্যাটিকানের সিমান্ত রক্ষা করে।
ভ্যাটিকানে অপরাধের হার কম। শুধু ভ্যাটিকান সিটিতে কারাগারের সংখ্যাও কম। তাই লাতেরান চুক্তির শর্তাবলী অনুসারে ভ্যাটিকানের অপরাধীদের ইতালির কারাগারে রাখা হয়।
এক নজরে ভ্যাটিকান রাজনৈতিক কাঠামো
নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাটিকান সিটি নামে ছোট রাষ্ট্রের শাসক পোপ হলেন নির্বাচিত রাজা। এর সরকারের অভ্যন্তরীণ আরও বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো এটিকে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে টিকিয়ে রেখেছে— যেমন ভ্যাটিকান সিটি (রাষ্ট্র) ও হোলি সির (চার্চ) স্বতন্ত্র অস্তিত্ব।
ভ্যাটিকান বিশ্বব্যাপী চার্চের সরকার হিসেবে কাজ করলেও এটি এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে কার্যকরী ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এর মধ্যে রয়েছে জনসেবা, বিচার বিভাগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক।
মোটের উপর একটি ধর্মীয় ক্ষুদ্ররাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হয় ভ্যাটিকান হচ্ছে তার চমৎকার কেস স্টাডি। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সাথে মিশ্রিত ধর্মীয় রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায় ঐশ্বরিক ও অনন্য এক চিত্র তুলে ধরে।
লেখক: ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, ইডেন কলেজ

পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন বিশ্বের খ্রিস্টানদের শীর্ষ ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নিতে আজ শনিবার রোমের রাস্তায় ও ভ্যাটিকান সিটিতে আনুমানিক ৪ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারাও পোপ ফ্রান্সিসকে বিদায় জানাতে ভ্যাটিকানে মিলিত হয়েছিলেন।
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পর রোমের সড়ক বেয়ে এক বিষণ্ণ শোকযাত্রাসহ পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে যাওয়া হয় চতুর্থ শতাব্দীর রোমান গির্জা সান্তা মারিয়া ম্যাজিওর বাসিলিকায়। শত বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম পোপ, যিনি প্রথা ভেঙে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার অর্থাৎ ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের বাইরে সমাহিত হলেন। সাধারণত পোপদের ভ্যাটিকান সিটির ভেতরে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার নিচেই সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু ফ্রান্সিস নিজেই চেয়েছিলেন, যেন তাঁকে শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত সেন্ট মেরি মেজর নামে পরিচিত 'বাসিলিকা দি সান্তা মারিয়া ম্যাজিওরে' ‘অনাড়ম্বর’ কবরে সমাহিত করা হয়।
২০১৩ সালে ফ্রান্সিস পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আগ পর্যন্ত নিজ দেশ আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস অঞ্চলের আর্চ বিশপ ছিলেন। তাঁর জন্য শোক জানাতে আর্জেন্টিনা ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে চার্চ, ক্যাথেড্রাল ও উন্মুক্ত স্থানে ভিড় করেন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীরা।
কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে যথার্থই বলেছেন, ফ্রান্সিস মানুষের মধ্যে ‘দেয়াল নয়, সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন’। তিনি এমন একজন ছিলেন, যিনি সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন। আর তাইতো কোনো অন্য কোনো পোপকে শেষ বিদায় জানাতে এতো মানুষের জমায়েত হয়নি। ধনী-দরিদ্র, প্রভাবশালী ও প্রান্তিক— সবাই সমবেত হয়েছিলেন। এখন পরবর্তী পোপ বা ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রপ্রধান কে হবেন, সবার নজর থাকবে সেদিকে।
ইতালির রাজধানী রোমের ভেতরেই আরেকটি ব্যতিক্রমী রাষ্ট্র এই ভ্যাটিকান সিটি। এটি ক্যাথলিকতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রতীক, যা একইসঙ্গে বিশ্বের খ্রিস্টানদের গীর্জা ও রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এই রাষ্ট্রের প্রধান হলেন পোপ, তিনি গীর্জারও প্রধান। ভ্যাটিকান সিটি যেমন বিশ্বের অন্যতম ছোট রাষ্ট্র, তেমনি এটি প্রাচীন ধর্মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রগুলোর মধ্যে সর্বশেষ। রাজতন্ত্র ও যাজকতন্ত্র একাকার হয়েও ধর্ম ও রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্যের অনন্য উদাহরণ এটি। ভ্যাটিক্যান সিটির রাজনৈতিক কাঠামো কীভাবে কাজ করে এবং পোপ কীভাবে নির্বাচিত হন, তাঁর ভূমিকা কী— এসব বিষয় জানতে ও জানাতেই আজকের এই নিবন্ধ।

এজার ভাটিকানুস ও পোপীয় রাষ্ট্র
ভ্যাটিকান সিটিতে চিরকালই পোপের শাসন ছিল না। এক সময় এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটির নামও ভ্যাটিকান ছিল না। আগে এই অঞ্চলকে এজার ভ্যাটিকানুস বলা হত। ভ্যাটিকান অবেলিস্ক (স্মৃতিস্তম্ভ) হিসেবে পরিচিত রোম সম্রাট নিরুর সার্কাস ছিল এখানকার আকর্ষণ। সেটাই ভ্যাটিকানের আধুনিক নগর রাষ্ট্রে একমাত্র অবশেষ।
যে এলাকাটিকে এখন সেন্ট পিটার্স স্কোয়ার বলা হয়, সেখানে যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য সেন্ট পিটার্সকে ক্রূশবিদ্ধ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সম্রাট কন্সটান্টিনের সময় রোম খ্রিষ্টধর্মে রূপান্তরিত হলে সেন্ট পিটার্সের কথিত সমাধিস্থলের ওপর ৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট পিটার্স র্গিজা গড়ে তোলা হয়। এই গির্জাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পোপতন্ত্রের রাষ্ট্র, পোপীয় রাষ্ট্রের প্রধান হন পোপ। তিনি একইসঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় শাসক।
৭৫৬ থেকে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইতালীয় উপদ্বীপের বিশাল অংশজুড়ে ছিল এই পোপীয় রাষ্ট্র। প্রায় এক হাজার বছর ধরে রোমের বিপরীত দিকে এক রাজপ্রাসাদ ছিল পোপের বাসভবন ও কর্মস্থল। চতুর্দশ শতকে কিছু সময়ের জন্য ফ্রান্সের অ্যাভিনন থেকে শাসনকার্য পরিচালিত হতো। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে নবগঠিত ইতালীয় সাম্রাজ্য পোপীয় রাষ্ট্রকে দখল করে নেয় এবং ইতালীর নতুন রাজা পোপের শাসন খর্ব করে।
এভাবেই প্রায় ৬০ বছর ধরে ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের মাঝে আটকে ছিল পোপতন্ত্র। তবে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। লাতেরান চুক্তির মাধ্যমে ইতালীর প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি ভ্যাটিকান সিটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর পোপতন্ত্র বিবর্তিত হলেও নগররাষ্ট্রটির শাসন হোলি সি বা পোপের অধীনেই রয়েছে। নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হিসেবে ভ্যাটিকানের যে গোড়াপত্তন শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত আছে।

ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন
ভ্যাটিকানের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পোপ নামে পরিচিত রোমের বিশপের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। এই নগর রাষ্ট্র ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তির শাসন হলেও হোলি সি কোনোভাবেই তার সমতুল্য নয়। সরকার, কার্ডিনাল, বিশপ ও পোপ নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানের পদবী হোলি সি। রাষ্ট্র ছাড়াও হোলি সি টিকে থাকতে পারে। এটিই একমাত্র সত্ত্বা যা ক্যাথলিক চার্চের সহস্রাব্দের বেশি সময়ের শাসনকাল ধরে টিকে ছিল।
ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্র এমন এলাকা, যেখানে বসে হোলি সি প্রজাদের শাসন করতে পারে। আর প্রজা মানে সকল ক্যাথলিক ধর্মানুসারী। ভ্যাটিকানের প্রশাসন ও হোলি সি-উভয় ক্ষেত্রেই পোপের নিরূঙ্কুশ ক্ষমতা। তবে সকল রাজতন্ত্রের মতো পোপ প্রশাসনের সব বিষয়ে নাক গলান না। প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালনের জন্য সরকারের অন্যান্য সদস্যদের হাতেও ক্ষমতা অর্পণ করেন।
নির্বাহী ক্ষমতা, আইনসভা ও বিচারিক ক্ষমতার চর্চা ভ্যাটিকান সরকারে কিছু প্রতিষ্ঠানের হাতেই। তবে তাত্ত্বিকভাবে হলেও এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রধান যাজক বা পোপের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। যদিও পোপের প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা পাওয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি শাখার প্রধান ব্যাক্তিদের সঙ্গে আরও বেশ কিছু সদস্য কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
পোপ ও ভ্যাটিকানের নির্বাহী শাখা
ভ্যাটিকানের নিরূঙ্কুশ রাজা ও ধর্মীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন পোপ। বেশ কিছু নির্বাহী ক্ষমতা গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট বা ভ্যাটিকান সরকারের প্রধানের কাছেও অর্পণ করা হয়। ভ্যাটিকানের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী পোপ। কিন্তু তিনি রোমান কিউরিয়া হিসেবে পরিচিত ক্যাথলিক গীর্জা বা হোলি সির গভর্নিং বডি মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষমতার প্রয়োগ করেন।
১৯৫২ সালে ভ্যাটিকান সিটির গর্ভনর পদের নাম বদলে ভ্যাটিকান গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট নাম দেওয়া হয়। পোপের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী শাখার এই শীর্ষ নেতার হাতেই ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্রের পরিচালনার ভার। তিনি পন্টিফিক্যাল বা যাজকীয় কমিশনেরও প্রধান। এই কমিশন ভ্যাটিকানের প্রধান আইন প্রণয়নকারী সংস্থা।
গভর্নরটের প্রেসিডেন্টকে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করেন পোপ। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে এই পদে আছেন সিস্টার রাফায়েলা পেত্রিনি। ভ্যাটিকানের ইতিহাসে এই পদে তিনিই প্রথম নারী। সরাসরি ভ্যাটিকান বা হোলি সির সঙ্গে সম্পর্কিত হোক বা না হোক-পোপ ও প্রেসিডেন্ট উভয়েরই রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে উভয় দিকের নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সেখানে সিদ্ধান্ত হয়।

পোপ পদাধিকারবলে ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা নন, নির্বাচিত রাজা। মৃত্যু কিংবা অবসরের আগ পর্যন্ত পোপের পদ বহাল থাকে। কলেজ অব কার্ডিনালস বা পাপাল কনক্লেভ নামের ইলেক্টরাল বডি বা নির্বাচকমন্ডলী নতুন পোপ নির্বাচন করে থাকে। বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক চার্চের পাদরীদের নিয়ে গঠিত এই ইলেক্টোরাল বডি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বে ২৬৩ জন কার্ডিনাল পাদরী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১২৪ জন কার্ডিনাল ইলেক্টর। তাঁরাই কনক্লেভে বা পোপ নির্বাচনের সভায় অংশ নিতে পারেন।
পোপ নির্বাচিত করার জন্য কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে বসেন। দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সিস্টিন চ্যাপেলে আটকে রাখা হয়। বাইরে থেকে সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারের চিমনির ধোঁয়া দেখে নির্বাচন শেষ হয়েছে বোঝা যায়। ব্যালট পেপার পুড়িয়ে চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের করা হয়। যখন নতুন পোপ নির্বাচিত হয়, তখন সাদা ধোঁয়া , তার আগ পর্যন্ত চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। ব্যালট পেপার পোড়ানোর কাজটি সকাল ও রাতে দুইবার করে করা হয়।

ভ্যাটিকানের আইন ব্যবস্থা
এককক্ষবিশিষ্ট পন্টিফিক্যাল কমিশন ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়ন করে থাকে। সাতজন কার্ডিনালের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিশন ভ্যাটিকান সিটি ও হলি সির জন্য নতুন আইন ও নীতির প্রস্তাব করে। কমিশনের প্রতিটি পদ পাঁচ বছর মেয়াদী হয়। কমিশনের প্রধান অর্থাৎ পন্টিফিক্যাল কমিশনের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানের পাশাপাশি আইনসভার প্রধান হিসেবেও কাজ করেন।
নতুন আইন পাশ হলে সেটাকে সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট বা পররাষ্ট্র দপ্তরের অনুমোদিত হতে হয়। সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট হলো রোমান কিউরিয়ার প্রধান অঙ্গ। এটি হলি সির পক্ষে সকল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কাজ করে।
এই সেক্রেটারিয়েটের প্রধান একজন কার্ডিনাল, তাকে সেক্রেটারি অব স্টেট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ডিকাস্ট্রি বা কিউরিয়ার সুনির্দিষ্ট তিনটি শাখা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে আছে সাধারণ বিভাগ, পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিভাগ ও কূটনৈতিক কর্মী বিভাগ। বর্তমান সেক্রেটারি অব স্টেট কার্ডিনাল পিয়েত্র পারোলিন ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য সব আইন সেক্রেটারিয়েট অব স্টেটকে অনুমোদন করতে হয়। কারণ ক্যাথলিক গির্জার আইন এই রাষ্ট্রেরও আইন।
ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন পরিচালনার জন্য মৌলিক আইন আছে। ২০০০ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল এই দেওয়ানি আইন জারি করার পাশাপাশি ভ্যাটিকানের নতুন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল আইন বাতিল করেন। ১৮৮৯ সালের ইতালীয় মৌলিক আইনের উপর ভিত্তি করেই ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভ্যাটিকান সিটির দন্ডবিধি আইন ও দেওয়ানি আইন কার্যকর ছিল। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে এবং অর্থ পাচার ও যৌন র্নিযাতনের মতো অপরাধের আধুনিক শাস্তি অন্তর্ভূক্ত করতে পোপ ফ্রান্সিস এসে আইন সংশোধন করেন।

আগে প্যাস্টর বোনাস নামে পরিচিত ঐশী সংবিধান অনুযায়ী রোমান কিউরিয়া ও ক্যাথলিক চার্চের শাসন পরিচালিত হয়। পোপকে বিশ্বব্যাপী র্চাচ পরিচালনায় সাহায্য করতে এই সংবিধান অনুযায়ী বিধি ও আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০২২ সালে সেটি পরিবর্তন করে প্রেডিকেট ইভাঞ্জেলিয়ামকে (প্রিচ দ্য গসপেল) ভ্যাটিকানের ঐশী সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করেন পোপ ফ্রান্সিস। এছাড়াও ২০০৮ সালের পর ভ্যাটিকান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইতালীয় সরকারের আইন গ্রহণ করেনি। বরং ইতালিতে যখনই নতুন কোনো আইন প্রর্বতিত হয় তখন ভ্যাটিকান এটি র্পযালোচনা করে এবং র্চাচের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যর্পূণ হলেই তা গ্রহণ করে। না হলে ভ্যাটিকান সে আইন বাস্তবায়ন প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রাখে।
ভ্যাটিকানের বিচার ব্যবস্থা
ভ্যাটিকানের আইন প্রয়োগ করে বিচার বিভাগ। একজন প্রেসিডেন্ট ও চারজন বিচারপতি নিয়ে ভ্যাটিকানের ট্রাইবুনালটি গঠিত। পোপ ফ্রান্সিস ২০২০ সালে একজন বিচারপতির সংখ্যা বাড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাই করা অধ্যাপক ও বিচার বিভাগীয় র্কমর্কতারা ট্রাইবুনালের সদস্য হন। পোপ তাঁদের বাছাই করে নিয়োগ দিলেও তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করেন।
২০২০ সালের পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারের ফলে বিচারে সহায়তার জন্য রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়। ভ্যাটিকানের অন্যান্য বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল ও আইন কর্মকর্তার জবাবদিহিতা শুধুমাত্র পোপের কাছে সীমাবদ্ধ।
এই আইন ভ্যাটিকানের বিচার আরও সহজ ও শক্তিশালী করে। এর ফলে আর্থিক ও ফৌজদারি অপরাধ আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এই ধরনের অপরাধের বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিধি ও পদ্ধতি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে মানসম্মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধানও আছে।
ভ্যাটিকানের আইনপ্রয়োগ করে নগর-রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী জেন্ডামেরি। এটি বেসামরিক বাহিনী হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স আর উচ্চতার বাধ্যবাধকতা আছে। এই বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে ক্যাথলিক ধর্ম চর্চা করতে হয়। প্রায় ২০০ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত এই ছোট বাহিনী অন্য যেকোনো দেশের সাধারণ পুলিশ বহিনীর মতোই কাজ করে। পাশাপাশি এরাই ভ্যাটিকানের সিমান্ত রক্ষা করে।
ভ্যাটিকানে অপরাধের হার কম। শুধু ভ্যাটিকান সিটিতে কারাগারের সংখ্যাও কম। তাই লাতেরান চুক্তির শর্তাবলী অনুসারে ভ্যাটিকানের অপরাধীদের ইতালির কারাগারে রাখা হয়।
এক নজরে ভ্যাটিকান রাজনৈতিক কাঠামো
নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাটিকান সিটি নামে ছোট রাষ্ট্রের শাসক পোপ হলেন নির্বাচিত রাজা। এর সরকারের অভ্যন্তরীণ আরও বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো এটিকে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে টিকিয়ে রেখেছে— যেমন ভ্যাটিকান সিটি (রাষ্ট্র) ও হোলি সির (চার্চ) স্বতন্ত্র অস্তিত্ব।
ভ্যাটিকান বিশ্বব্যাপী চার্চের সরকার হিসেবে কাজ করলেও এটি এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে কার্যকরী ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এর মধ্যে রয়েছে জনসেবা, বিচার বিভাগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক।
মোটের উপর একটি ধর্মীয় ক্ষুদ্ররাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হয় ভ্যাটিকান হচ্ছে তার চমৎকার কেস স্টাডি। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সাথে মিশ্রিত ধর্মীয় রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায় ঐশ্বরিক ও অনন্য এক চিত্র তুলে ধরে।
লেখক: ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, ইডেন কলেজ

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
৪ ঘণ্টা আগেরাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৫ ঘণ্টা আগে
তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে।
৬ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর)
৭ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।
একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।
তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।
জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।
তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।
গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।
একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।
তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।
জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।
তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।
গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এবং প্রাচীন ধর্মীয় রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটির শাসনব্যবস্থা, পোপের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও তাদের কর্তৃত্ব নিয়ে এই নিবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর তাঁর অনাড়ম্বর সমাধি এবং বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে বিশাল শোকানুষ্ঠানের বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে।
২৭ এপ্রিল ২০২৫রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৫ ঘণ্টা আগে
তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে।
৬ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর)
৭ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’
জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।
এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।
রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’
জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।
এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।
রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এবং প্রাচীন ধর্মীয় রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটির শাসনব্যবস্থা, পোপের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও তাদের কর্তৃত্ব নিয়ে এই নিবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর তাঁর অনাড়ম্বর সমাধি এবং বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে বিশাল শোকানুষ্ঠানের বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে।
২৭ এপ্রিল ২০২৫
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
৪ ঘণ্টা আগে
তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে।
৬ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর)
৭ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।
চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।
এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।
চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।
এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এবং প্রাচীন ধর্মীয় রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটির শাসনব্যবস্থা, পোপের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও তাদের কর্তৃত্ব নিয়ে এই নিবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর তাঁর অনাড়ম্বর সমাধি এবং বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে বিশাল শোকানুষ্ঠানের বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে।
২৭ এপ্রিল ২০২৫
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
৪ ঘণ্টা আগেরাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৫ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর)
৭ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) পৃথক দুটি আপিল করেছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি।
আপিল আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই সাজা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইমরান খানকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ ‘পরিকল্পিত’ রায় দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা ইমরান খান ও বুশরা বিবির পক্ষে কিছু যুক্তি উত্থাপন করেছেন।
আইনজীবীদের দাবি, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) কোনো এফআইআর ছাড়াই ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে চালানো তদন্তের ভিত্তিতে এই মামলা হয়, যা স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী।
আপিল আবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানাসংক্রান্ত এটি চতুর্থ মামলা। একই বিষয়ে বারবার মামলা করা আইনের লঙ্ঘন এবং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, যাতে ইমরান খানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।
আইনজীবীদের দাবি, ২০১৮ সালের তোশাখানা নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেই উপহারগুলো রাখা হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বা ‘ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ ঘটেনি।
আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান পেনাল কোড অনুযায়ী ইমরান খান ও বুশরা বিবি এই উপহার নেওয়ার সময় প্রচলিত সংজ্ঞায় ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না। বিশেষ করে, বুশরা বিবি একজন গৃহিণী হিসেবে কোনো সরকারি পদের দায়িত্বে ছিলেন না।
প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলাটি মূলত ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি বুলগারি জুয়েলারি সেট নিয়ে। প্রায় ৮ কোটি রুপি মূল্যের এই নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুলের সেটটি ইমরান দম্পতি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখেছিলেন।
এই মামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ তাঁদের প্রত্যেককে প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। বর্তমানে ইমরান খান ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। বুশরা বিবিও একই মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত।
ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তোশাখানা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ক্যাঙারু কোর্টে’র মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) পৃথক দুটি আপিল করেছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি।
আপিল আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই সাজা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইমরান খানকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ ‘পরিকল্পিত’ রায় দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা ইমরান খান ও বুশরা বিবির পক্ষে কিছু যুক্তি উত্থাপন করেছেন।
আইনজীবীদের দাবি, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) কোনো এফআইআর ছাড়াই ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে চালানো তদন্তের ভিত্তিতে এই মামলা হয়, যা স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী।
আপিল আবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানাসংক্রান্ত এটি চতুর্থ মামলা। একই বিষয়ে বারবার মামলা করা আইনের লঙ্ঘন এবং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, যাতে ইমরান খানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।
আইনজীবীদের দাবি, ২০১৮ সালের তোশাখানা নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেই উপহারগুলো রাখা হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বা ‘ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ ঘটেনি।
আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান পেনাল কোড অনুযায়ী ইমরান খান ও বুশরা বিবি এই উপহার নেওয়ার সময় প্রচলিত সংজ্ঞায় ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না। বিশেষ করে, বুশরা বিবি একজন গৃহিণী হিসেবে কোনো সরকারি পদের দায়িত্বে ছিলেন না।
প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলাটি মূলত ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি বুলগারি জুয়েলারি সেট নিয়ে। প্রায় ৮ কোটি রুপি মূল্যের এই নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুলের সেটটি ইমরান দম্পতি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখেছিলেন।
এই মামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ তাঁদের প্রত্যেককে প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। বর্তমানে ইমরান খান ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। বুশরা বিবিও একই মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত।
ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তোশাখানা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ক্যাঙারু কোর্টে’র মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এবং প্রাচীন ধর্মীয় রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটির শাসনব্যবস্থা, পোপের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও তাদের কর্তৃত্ব নিয়ে এই নিবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর তাঁর অনাড়ম্বর সমাধি এবং বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে বিশাল শোকানুষ্ঠানের বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে।
২৭ এপ্রিল ২০২৫
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
৪ ঘণ্টা আগেরাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৫ ঘণ্টা আগে
তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে।
৬ ঘণ্টা আগে