Ajker Patrika

তালেবান শাসনে নারী স্বাধীনতা কোন পথে

ইমরান খান
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ২২: ২০
তালেবান শাসনে নারী স্বাধীনতা কোন পথে

২০ বছর পর আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফিরেছে তালেবান। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশের শাসনভার ছিল তাদের হাতে। তখন ইসলামি আইনের নামে পশতুন গোষ্ঠীর কিছু নিয়ম সংযুক্ত করে নারীদের জীবন পুরোপুরি ঘরবন্দী করে ফেলে তারা। নারীদের শিক্ষা, রাজনীতি, চাকরি, খেলাধুলা, পর্দা ও পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। তবে এবার ক্ষমতায় ফেরার আগে-পরে তালেবানের দেওয়া কিছু আশ্বাস নাগরিকদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছিল। মনে হচ্ছিল, হয়তো নতুন এক তালেবান দেখবে বিশ্ব। যে তালেবান হবে আগের চেয়ে পরিণত ও বিবেচনাসম্পন্ন। তবে ১৫ আগস্ট ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো এই প্রশ্ন তুলতেই পারে—নতুন আশ্বাসের মোড়কে কি পুরোনো তালেবানই ফিরে এল? 

নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাইপুরোনো অভিজ্ঞতা নেতিবাচক হওয়ায় তালেবান শাসনে এবার নারীর অধিকার কেমন হবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী শঙ্কা ছিল। ১৪ জুলাই জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, ‘মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কারণে আফগান নারীদের অবর্ণনীয় ক্ষতি হবে।’ নিউইয়র্ক টাইমসে ১৯ আগস্ট প্রকাশিত এক নিবন্ধে নোবেলজয়ী নারী আন্দোলনকর্মী মালালা ইউসুফজাই বলেন, ‘তারা নারীদের বিশেষ মর্যাদা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এগুলো সব মিথ্যা এবং ভাঁওতাবাজি।’

এরই মাঝে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন গণমাধ্যমকে বললেন, ‘অবশ্যই আমরা নারীদের শিক্ষা, কাজ এবং বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

একপক্ষের শঙ্কা, আর অন্য পক্ষের আশ্বাসের দোলাচলে আফগান নারীরা আসলে কী পাচ্ছেন, কেমন আছেন, তা বুঝতে আমরা বরং তালেবান সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের দিকে নজর দিই।

ছেলে ও মেয়েদের এক ক্লাসে না বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছেশিক্ষা
১৯৯৬ থেকে ২০০১ শাসনামলে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনার অনুমতি ছিল না। এবার তালেবানের পক্ষ থেকে আফগান নারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। তবে ক্ষমতায় এসে নারী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড বদলে লাগানো হয় ‘প্রার্থনা, নির্দেশনা, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ’ শীর্ষক সাইনবোর্ড।

শুরুতে শুধু ছাত্র ও পুরুষ শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নারী শিক্ষক ও ছাত্রীদের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান সরকারের এই ঘোষণার পর আফগানিস্তান হলো পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের এমন অবস্থানেও তাদের ভাবনায় কোনো বদল আসেনি। ২৭ সেপ্টেম্বর এক টুইট বার্তায় কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য মোহাম্মদ আশরাফ ঘাইরাত ঘোষণা দেন, ‘যত দিন প্রকৃত ইসলামি পরিবেশ সবার জন্য তৈরি করা সম্ভব না হয়, তত দিন মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বা কাজ করতে দেওয়া হবে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে আফগানিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল্লাহ মুনির বলেন, ‘আজ কোনো পিএইচডি, মাস্টার্স ডিগ্রির মূল্য নেই। আপনারা দেখুন যে মোল্লা ও তালেবান যারা এখন ক্ষমতায় আছে, তাঁদের কারোরই কোনো পিএইচডি, মাস্টার্স অথবা উচ্চবিদ্যালয়ের ডিগ্রি পর্যন্ত নেই। কিন্তু তবু তাঁরা সবার চেয়ে বড় পদে রয়েছেন।’ 

এতে গত দুই দশকে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় আসা দেশটির হাজার হাজার নারী বিপদে পড়ে যায়। অবশেষে ২৯ আগস্ট তালেবানের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল বাকি হাক্কানি বলেন, আফগানিস্তানের জনগণ ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে। তবে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে না। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পড়তে পারবে না বলে জানায় তালেবান। এর পর থেকে আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষে ছেলেমেয়েদের ক্লাস শুরু হয়।

এরপরও যে শঙ্কা কাটেনি, তার প্রমাণ বিবিসি ঘোষিত বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকা। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রকাশিত বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন আফগানিস্তানের ৪৬ জন নারী। নতুন আবিষ্কার এবং বিশ্বকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় তাঁদের নাম এসেছে। তবে তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে ওই নারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তালিকায় বেশ কয়েকজনের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে; দেওয়া হয়নি তাঁদের ছবিও।

কোনো নারী সদস্য ছাড়াই ৮ সেপ্টেম্বর ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে তালেবানরাজনীতি
তালেবানের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই নারী অধিকারের বিষয়টি একদম তোয়াক্কা না করার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে আফগান সরকার কাঠামো নিয়ে কেন্দ্রীয় স্তর থেকে আসা প্রথম ঘোষণায় ১৭ আগস্ট তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য এনামুল্লাহ সামানগনি বলেন, ‘নারীরা পিছিয়ে থাকুক—এটি ইসলামিক আমিরাতের চাওয়া নয়। শরিয়া আইন মেনেই নারীদের আফগান সরকারের অংশ করা হবে।’

এই বক্তব্যে নারীরা কিছুটা আশা পেলেও ৭ সেপ্টেম্বর তালেবান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করে, তাতে কোনো নারীকে রাখা হয়নি। এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টিওএলওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র সৈয়দ জেকরুল্লাহ হাশিমি বলেন, ‘নারীরা মন্ত্রী হতে পারে না। এটি এমন বিষয়, যেটি আপনি তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন, কিন্তু তারা সেটি নিতে পারবে না। তাদের কাজ হলো জন্ম দেওয়া।’ নারীদের সমাজের অর্ধাংশ ভাবতেও নারাজ তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘গত ২০ বছরে নারীদের নিয়ে আফগানিস্তানে যা হয়েছে, তা কি পতিতাবৃত্তি ছাড়া কিছু?’ 

সরকার গঠন ও জেকরুল্লাহ হাশিমির এই বক্তব্য তালেবান শাসনামলে নারীদের রাজনীতির ভবিষ্যৎ খুব সহজেই অনুমেয়।

 দেশের সকল পার্লার বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান সদস্যরাকর্মসংস্থান
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু নারীর কর্মসংস্থান হয়েছিল। তাঁদের আপাতত কর্মস্থলে যেতে নিষেধ করেছেন উপাচার্য। 

আগের মেয়াদে আফগানিস্তানের সব বিউটি পার্লার বন্ধ করে দিয়েছিল তালেবান। ২০০১ সালের পর তালেবান সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে জাতিসংঘের একটি সংস্থা ও আফগান সরকারের অর্থায়নে ছয় মাসের একটি বিউটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী উপার্জনের উৎস হিসেবে বেছে নেন বিউটি স্যালন পেশাকে, যা পরে অনেক লাভজনক একটি পেশায় পরিণত হয়। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতা দখলের পরও তালেবান নেতারা বিউটি পার্লার বন্ধ করে দিয়েছে। সকল দেয়াল থেকে নারীদের ছবি মুছে দিয়েছে তালেবান, যা নারীদের বিজ্ঞাপন করার পথও বন্ধ করে দেয়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েন অনেক নারী।

তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময় রাজধানী কাবুলের বিমানবন্দরে প্রায় ৮০ নারী কর্মী নিয়োজিত ছিলেন। এদের মধ্য থেকে ১২ সেপ্টেম্বর কর্মস্থলে ফিরেছেন মাত্র ১২ আফগান নারী। এর কারণ নারী প্রশ্নে তালেবান দৃষ্টিভঙ্গি, যা গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমির কথায় স্পষ্ট—‘আফগান নারীদের পুরুষের সঙ্গে কাজ করা উচিত নয়।’

আফগানিস্তান ছেড়ে পাকিস্তানের পথে নারী ফুটবলাররাখেলাধুলা
নব্বইয়ের দশকে তালেবানের শাসনামলে আফগানিস্তানে নারীদের সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ ছিল। ফের দেশটির দখল নিয়ে নারীদের খেলাধুলার ব্যাপারে একই মনোভাব প্রকাশ করেছে তালেবান। ফলে নারী ফুটবলারেরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ১৪ সেপ্টেম্বর ৮১ জন নারী ফুটবলার তোরখাম সীমান্তের উত্তর-পশ্চিমাংশ দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮ দলের খেলোয়াড়েরা ছিলেন।

বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও সব স্বীকৃত দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) নতুন চেয়ারম্যান মিরওয়াইস আশরাফ ক্রিকেট বোর্ডের স্টাফদের সঙ্গে পরিচিতিমূলক এক সভায় ঘোষণা দেন, ‘নারী ক্রিকেট আইসিসির প্রধান আবশ্যিকতাগুলোর একটি। এটি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের মেয়েরা স্বাভাবিক নিয়মেই ক্রিকেট খেলবে। আমরা তাদের মৌলিক চাহিদা ও তাদের প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা দিতে চাই।’

এই খেলা এখনো শুরুর আলো দেখতে পারেনি। অন্যান্য খেলার চিত্র কী হবে, তা এখনই বলা যাবে না।

আফগানিস্তান ছেড়ে পাকিস্তানের পথে নারী ফুটবলাররাচলাফেরা
আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তালেবান শাসনামলে আফগান নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। তবে এবার তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন আফগানিস্তানে নারীদের বোরকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘নারীরা মাথায় হিজাব পরেছেন কি-না সেটা পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে পুরো শরীর ঢাকা বোরকা পরতেই হবে, এমন নয়।’

এর মধ্যে ২৬ ডিসেম্বর দেশটির পুণ্যের প্রচার ও পাপ প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, আফগান নারীরা পুরুষ আত্মীয় ছাড়া ৭২ কিলোমিটারের বেশি দূরে ভ্রমণ করতে পারবেন না। যানবাহনে চলাচল করতেও ইসলামিক হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যানবাহন মালিকদেরও শুধু হিজাব পরা নারীদের পরিবহনের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

নাটক-সিনেমায় নারীদের অভিনয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। টেলিভিশন সাংবাদিকদের খবর উপস্থাপনার সময় হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নারীদের জন্য টিভি চ্যানেল চালু করা নারী সাংবাদিক জেহরা নবীর টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘কর্মীদের নিয়ে কাজ করার নিরাপদ জায়গা পাচ্ছি না।’ আগস্টে চাকরি হারানো সাংবাদিক সোনিয়া আহমাদিয়ার বলেন, ‘গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করা হচ্ছে।’

২৪ আগস্ট তালেবানের মুখপাত্র যাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, নারীদের আপাতত ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। নারীদের কর্মস্থলে যোগদানে স্থায়ীভাবে বাধা দেওয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাঁরা যাতে কাজে ফিরতে পারেন, কর্তৃপক্ষ সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি। 

আফগান নারী খাতিরানারীদের কোন চোখে দেখে তালেবান
১৫ আগস্ট ভারতের নিউজ এইটটিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আফগান নারী খাতিরা বলেন, ‘তালেবানের চোখে নারীরা মানুষ নয়। তাদের কাছে নারী মানেই এক টুকরো মাংস।’ তারা নারী শরীরকে কুকুরের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে অবশ্য বিতর্কও কম হয়নি। এর মধ্যেই বিবিসির সাংবাদিক জিয়া শাহরিয়ারের টুইটারে শেয়ার করা এক ভিডিওতে একজন তালেবান কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা কি কেউ কাটা তরমুজ কেনেন? নাকি পুরো তরমুজ কেনেন? অবশ্যই পুরোটা কেনেন। হিজাব না পরা মেয়েরা হলো কাটা তরমুজ।’

এসব বক্তব্যের মধ্যেই নারী অধিকারের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের চাপের মুখে পড়ে তালেবান। চাপে রাখার কৌশল হিসেবে বিশ্বের শক্তিশালী বেশ কয়েকটি দেশ আফগানিস্তানের বেশ কিছু তহবিল স্থগিত করে।

এর মাঝেই তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ডিক্রি প্রকাশের সময় বলেন, ‘নারী কোনো সম্পত্তি নয়; বরং মুক্ত ও অভিজাত মানুষ। শান্তি বা অন্য কোনো কিছুর জন্য তাকে কেউ কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারে না।’ ডিক্রিতে বিয়ে ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিয়ে সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, জোরপূর্বক কোনো নারীর বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। আর প্রয়াত স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার রয়েছে। এই ভাষ্য প্রচারের জন্য তথ্য ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতকে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এই ডিক্রি বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে।

নারী অধিকার খর্ব হওয়ার প্রতিবাদে রাজপথে আফগান নারীরানারীর বাক স্বাধীনতা
নারী অধিকারের নানা প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের হেরাতে কিছুসংখ্যক নারী নিজেদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। তালেবান নেতৃত্বের কাছে তাঁরা দাবি করেন—শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং কাজের অধিকার যেন খর্ব না হয়। এগুলো যেকোনো মানুষের মৌলিক অধিকার। বিক্ষোভকারীরা আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। তাঁরা তালেবানের সঙ্গে লড়াই করে নিহত আফগান সৈন্যদের সম্মান জানায়। কেউ কেউ মাইক্রোফোন নিয়ে জড়ো হয় এবং কাজ চালিয়ে যাওয়ার দাবি জানায়।

এ মিছিল পণ্ড করতে ফাঁকা গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে তালেবান। তালেবানরা নারীদের অধিকারে ‘কোনো সমস্যা করবে না’ ঘোষণার একদিন পর এ ঘটনা ঘটল।

শুধু আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে ক্ষান্ত হয়নি তালেবান। ৮ সেপ্টেম্বর কাবুলের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কারত-এ-চর এলাকায় নারীদের তালেবানবিরোধী আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া আফগান সংবাদমাধ্যম তাকির দুই সাংবাদিক দারায়াবি ও নাকদিকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে তালেবান সদস্যরা। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিবেদক মার্কাস ইয়াম ও আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম ইটিলাট্রোজের প্রকাশ করা ছবিতে দেখা যায় অন্তর্বাস পরা দুই সাংবাদিকের গায়ে আঘাতের চিহ্ন। ইটিলাট্রোজের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম ইউরো নিউজের স্থানীয় প্রধান, টিওএলও নিউজের ক্যামেরা পারসন ওয়াহিদ আহমাদি এবং আরিয়ানা নিউজের ক্যামেরাপারসন সামিমকেও গ্রেপ্তার করে তালেবান।

অর্থনৈতিক সংকট ও আইএসের হামলার পাশাপাশি তালেবানের সামনে বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল নারী ইস্যু। এ ক্ষেত্রে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই নানা সুমধুর বাণী শোনাতে থাকে। সরকারেও নারীর অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেয় গোষ্ঠীটি। তবে তালেবান সরকার গঠনের পর একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করা হয় নারীদের ওপর। তবে ২০ বছর আগের তালেবানের চেয়ে এখনকার তালেবান নারী অধিকারের বিষয়টি কিছুটা হলেও নমনীয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা। মেয়েদের শিক্ষা, খেলাধুলা নিষিদ্ধসহ বোরকা পরার বাধ্যবাধকতা ছিল। এবার সেসব দিক থেকে তালেবান খানিকটা সরে এসেছে বলাই যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০ বছর অন্ধকারে বন্দী, মৃত্যুর হুমকিতে থেমে যাওয়া শৈশব-কৈশোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এনডিটিভি
ছবি: এনডিটিভি

পৃথিবী যখন খেলায় মত্ত, তখন তিনি বন্দী ছিলেন অন্ধকারে। ছয় বছর বয়সে ঘরবন্দী হওয়া লিসা ২০ বছর পর সেই দরজা পেরিয়ে বাইরে এলেও আলো দেখার ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন।

কিছু গল্প ক্ষতের মতো করে উন্মোচিত হয়। কিছু শৈশব যেন কোনোদিনই শুরু হয় না। লিসার জীবন তেমনই এক গল্প। নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া এক শৈশবের, পরিস্থিতিতে মুছে যাওয়া এক শিশুর এবং এক নারীর।

যে বয়সে শিশুরা বর্ণমালা শেখে, ছত্তিশগড়ের বাস্তার জেলার বাকাওয়ান্দ গ্রামের বাসিন্দা লিসা তখন ভয়কে জানছিলেন। ছয় বছর বয়সেই তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় বাইরের জগতের সব শব্দ। বাড়ির দরজা শুধু খাবারের জন্য খুলত, জীবনের জন্য নয়। ২০ বছর পর কর্তৃপক্ষ যখন তাঁকে খুঁজে পায়, তখন তাঁর চোখে নয়, স্মৃতিতেও ছিল শুধু অন্ধকার।

ছায়াই ছিল তাঁর পরিচয়। কথোপকথন বলতে ছিল শুধু দরজার নিচ দিয়ে ঠেলে দেওয়া থালাবাটির শব্দ। দুই দশক ধরে বন্দিদশার পর এখন তিনি নিজের নামে সাড়া দিতেও হিমশিম খান।

লিসার বন্দিত্ব শুরু হয়েছিল না লোহার শিক দিয়ে, না শিকল দিয়ে—শুরু হয়েছিল আতঙ্ক দিয়ে।

২০০০ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। সেই কথায় আতঙ্ক এত গভীর হয়, তিনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন নীরবতায়। এরই মধ্যে মারা যান তাঁর মা। কৃষক বাবা হয়ে পড়েন দুর্বল ও আতঙ্কিত। কোনো সহায়তা নেই, নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই, কারও কাছে ভরসা চাওয়ার নেই। তাই তিনি এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা মেয়ের জীবনের পরবর্তী ২০ বছর নির্ধারণ করে দেয়।

তিনি মেয়েকে মাটির ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। বলেন, অন্ধকারই তাঁকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। জানালাবিহীন একটি ঘরই হয়ে ওঠে তাঁর পৃথিবী। না সূর্যের আলো। না কোনো কথা। না কোনো মানুষের স্পর্শ।

শুধু দরজায় রেখে যাওয়া এক প্লেট খাবার আর প্রতিদিন একটু একটু করে সংকুচিত হয়ে যাওয়া জীবনের প্রতিধ্বনি।

যে ব্যবস্থা তাঁকে রক্ষা করবে ভাবা হয়েছিল, তা-ই শেষমেশ তাঁকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেয়।

সমাজকল্যাণ দপ্তরের দল যখন কুঁড়েঘরে প্রবেশ করে, তারা দেখতে পায় এক নারীকে, যাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব।

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন প্রাকৃতিক আলো থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে লিসার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাঁর মানসিক বিকাশও গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে। আচরণ বয়সের তুলনায় অনেক কম বয়সী শিশুর মতো। প্রতিটি শব্দে ভয় পান। যেকোনো স্পর্শে চমকে ওঠেন।

উদ্ধারের পর লিসাকে নিয়ে যাওয়া হয় জগদলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিস্তারিত পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, লিসার শৈশব থেমে যায় প্রবল ট্রমায় আর প্রাপ্তবয়স্ক জীবন গঠিত হয়েছে ইন্দ্রিয়ের বঞ্চনায়।

সমাজকল্যাণ দপ্তর পুরো ঘটনায় এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।

কর্তৃপক্ষ লিসার পরিবার ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে—কেন তিনি ২০ বছর ধরে বন্দী ছিলেন এবং এই বন্দিত্ব আইনবহির্ভূত আটক হিসেবে বিবেচিত হবে কি না।

জেলার প্রশাসন কর্মকর্তারা বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে, লিসার বাবা কি ভয়ে ও অজ্ঞতার কারণে স্কুল, পঞ্চায়েত বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কোনো সাহায্য চাননি?

লিসা বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের এক আশ্রমে আছেন, যেখানে সেবাকর্মী ও কাউন্সেলররা তাঁকে নতুন করে জীবন খুঁজে পেতে সহায়তা করছেন।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইন্ডিগোর ফ্লাইট বিপর্যয়: পানি–খাবারহীন অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা হাজারো যাত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় বারো ঘণ্টা ধরে যাত্রীরা নিজেদের মালপত্র হাতে পেতে রীতিমতো সংগ্রাম করছেন। খাবার–পানির কোনো ব্যবস্থা নেই, আর ইন্ডিগোর কাউন্টারগুলি ফাঁকা। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বিমান সংস্থা সংস্থা ইন্ডিগোর পরিচালনগত ত্রুটির কারণে পাঁচ শতাধিক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে এমন বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখা গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে, দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাজার হাজার স্যুটকেস পড়ে আছে। বহু যাত্রী মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর কেউ কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এক যাত্রী ইন্ডিগোর এই ব্যর্থতাকে ‘মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে এনডিটিভিকে জানান, বারো ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তিনি বিমান সংস্থাটির কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট জবাব পাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘আমি বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এখানে। প্রতিবার তারা বলছেন এক ঘণ্টা দেরি, দু–ঘণ্টা দেরি। আমরা একটা বিয়েতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আমাদের মালপত্র পর্যন্ত হাতে নেই। ইন্ডিগোর কর্মীরা আমাদের কিছু বলছেন না। এই মুহূর্তে এটি সবচেয়ে খারাপ বিমান সংস্থা। আমি বুঝি না কেন তারা নতুন যাত্রী নিচ্ছে আর মালপত্র জমিয়ে রাখছেন।’

আরেক যাত্রী জানালেন যে তিনি গতকাল দুপুর থেকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘তারা বারবার ফ্লাইট পিছিয়ে দিচ্ছে। ইন্ডিগোর তরফ থেকে আমরা কোনো স্পষ্ট খবর পাচ্ছি না।’ আরেক যাত্রী বলেন, ‘খুবই মানসিক চাপের বিষয় এটা। চৌদ্দ ঘণ্টা ধরে আমি বিমানবন্দরে বসে আছি। খাবার বা অন্য কিছুর জন্য কোনো কুপন নেই। আমার কানেকটিং ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন, কিন্তু কর্মীরা কোনো স্পষ্ট জবাব দিচ্ছেন না। এমন জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কর্মীদের বিন্দুমাত্র প্রশিক্ষণ নেই।’

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। আটকা পড়া যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছিলেন। কারণ তাদের কোনো খাবার বা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। একদল যাত্রী প্রতিবাদস্বরূপ একটি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট পর্যন্ত আটকে দিয়েছিলেন।

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরের এক যাত্রী বলেন, ‘আমার ফ্লাইট গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা ছিল। আমি আমার সহকর্মীকে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছাই। আমাদের বলা হয়েছিল যে ফ্লাইট সময়মতো চলবে। এখন আমরা এখানে বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আছি। ইন্ডিগো আমাদের কোনো স্পষ্ট ধারণা দেয়নি। তারা শুধু বলে চলেছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য দেরি হচ্ছে। আমাদের কোনো স্পষ্ট খবর, খাবার বা পানি দেওয়া হয়নি। ইন্ডিগোর সাড়া একেবারেই যাচ্ছেতাই। এখানে বয়স্ক মানুষ আছেন, যাদের বিশেষ দায়বদ্ধতা আছে, তাদের জন্য কোনো সমাধান নেই। এটা খুবই হাস্যকর।’

গোয়া বিমানবন্দরে একদল যাত্রী হতাশায় ভেঙে পড়েন। এক ভিডিওতে দেখা যায় তারা ইন্ডিগোর কর্মীদের লক্ষ্য করে চিৎকার করছেন। পরিস্থিতি সামলাতে বহু পুলিশ কর্মীকেও সেখানে দেখা যায়। চেন্নাই বিমানবন্দরে শত শত যাত্রী আটকা পড়েছেন। সেখানে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) ইন্ডিগোর যাত্রীদের প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। বিশাখাপত্তম বিমানবন্দরে কমপক্ষে ঊনপঞ্চাশটি বহির্গমন ও তেতাল্লিশটি ইনকামিং ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগোর এই পরিচালনগত ত্রুটি আজ চতুর্থ দিনের মতো চলছে। কুড়ি বছরের পুরোনো এই বিমান সংস্থাটি ক্রু-সংকট ও প্রযুক্তিগত সমস্যাসহ একাধিক কারণে পাঁচ শ পঞ্চাশটিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করার রেকর্ড তৈরি করেছে। এর মধ্যে মুম্বাই বিমানবন্দরে এক শ চারটি, দিল্লি বিমানবন্দরে দু শ পঁচিশটি, বেঙ্গালুরুতে এক শ দু'টি এবং হায়দরাবাদে বিরানব্বইটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ভূপাল বিমানবন্দরেও কমপক্ষে পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগো স্বীকার করেছে যে তারা নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রু-এর প্রয়োজনীয়তা ভুলভাবে আন্দাজ করেছিল এবং পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল, যার ফলস্বরূপ শীতকালীন আবহাওয়া ও যানজটের সময়ে পর্যাপ্ত ক্রু-এর অভাব দেখা দিয়েছে। বিমান সংস্থাটি সতর্ক করেছে, সময়সূচি স্বাভাবিক করার চেষ্টার অংশ হিসেবে আগামী দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জানিয়েছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে তারা আরও বিঘ্ন এড়াতে ফ্লাইট পরিচালন কমিয়ে দেবে।

অন্যদিকে, ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স কর্মীদের বলেছেন যে পরিচালন স্বাভাবিক করা এবং সময়ানুবর্তিতা ফিরিয়ে আনা ‘সহজ লক্ষ্য হবে না।’ বিমান সংস্থাটি গত রাতে তাদের গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের কাছে নতুন করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘গত দুই দিন ধরে ইন্ডিগোর নেটওয়ার্ক এবং পরিচালন ব্যবস্থায় ব্যাপক বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের সব গ্রাহক এবং শিল্প স্টেকহোল্ডারদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ তারা আরও যোগ করেছে, ‘ইন্ডিগো এই বিলম্বের প্রভাব কমাতে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে ও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়া, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২১
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।

গত বছর রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার সিঙ্ক্রো ইভেন্টে সোনা জেতেন ইউক্রেনীয় ডাইভার সোফিয়া লাইসকুন (২৩)। তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর তাঁকে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হলো। ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশন (ইউডিএফ) ফেডারেশনের অধীনে পাওয়া তাঁর সমস্ত খেতাব, পদক ও পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ইউডিএফ জানিয়েছে, লাইসকুন দেশের ক্রীড়া মহলের কোনো পক্ষকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ দলবদলের বিষয়ে ফেডারেশন, কোচিং স্টাফ এমনকি ইউক্রেনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও অবগত করেননি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত দলবদলের ঘটনায় ফেডারেশন ‘তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা’ জানিয়েছে।

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে: ‘এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এগুলো জাতীয় দল এবং ইউক্রেনের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যে মুহূর্তে পুরো ইউক্রেনীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করছে, ঠিক তখনই একজন চ্যাম্পিয়নের এমন পদক্ষেপ পুরো প্রচেষ্টাকেই হেয় করে।’

ইউক্রেনীয় ফেডারেশনের এই সমালোচনার বিপরীতে লাইসকুন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে তিনি তাঁর কোচদের অধীনে আর পেশাদারভাবে ‘উন্নতি’ করতে পারছিলেন না।

লাইসকুন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউক্রেনীয় কোচিং স্টাফে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ‘সবাই জিমন্যাস্ট বা ট্রাম্পোলিন ক্রীড়াবিদ ছিলেন’, এটি আন্তর্জাতিক ডাইভিং-এর মতো বিশেষায়িত খেলার জন্য অনুকূল ছিল না। তাঁর মতে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অভাবই তাঁকে দলবদলে উৎসাহিত করেছে।

লাইসকুনের দলবদলের পর ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইউক্রেন জাতীয় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, ফেডারেশনের অধীনে সোফিয়া লাইসকুনের অর্জিত সমস্ত খেতাব ও পুরস্কার বাতিল করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে, যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদের ওপর ‘স্পোর্টস কোয়ারেন্টাইন’ আরোপ করা হয়। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন চাচ্ছে, লাইসকুন যেন কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর রাশিয়া এবং বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিক্স ইভেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ ছিল। তবে সেই বিধিনিষেধগুলো সম্প্রতি শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে রুশ এবং বেলারুশীয় ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জাতীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁরা দলগত ইভেন্টেও নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। লাইসকুন-এর এই দলবদল এমন এক সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার ক্রীড়াবিদেরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন বাহিনীর প্রধান হয়েই পাকিস্তানকে ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছানোর ঘোষণা আসিম মুনিরের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৬
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছেন, পাকিস্তান এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আওয়াইন-ই-সদরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিম মুনির বলেন, ‘সবই তো ঠিক আছে, আপনাদের চোখের সামনেই তো সব। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, আর এখন থেকে পাকিস্তান আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।’ তাঁর এই মন্তব্য এল ঠিক এমন এক সময়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি নোট প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাতে সেনাপ্রধান মুনিরকে পাকিস্তানের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। এরপরই প্রেসিডেন্ট এই অনুমোদন দেন।

সত্তরের দশকের পর দেশটির সামরিক কমান্ডে এটি হলো সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই নিয়োগে অনুমোদন দেন। খবর দ্য ডনের

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাপ্রধানের (সিওএএস) সঙ্গে সমান্তরালভাবে সিডিএফ হিসেবেও নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন।’ এই বিবৃতি বহুদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই প্রেসিডেন্টকে এই নতুন দ্বৈত দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সেনাবাহিনীর প্রধান এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।’

এই নতুন ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীতে ২৪৩ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে একটি অফিসের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও কৌশলগত ক্ষমতাকে একত্র করা হয়েছে। সংশোধিত ২৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করবেন, যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবেও কাজ করবেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু থাকা তিন বাহিনীর সমন্বয় ব্যবস্থা—চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) অফিস বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে যৌথ কমান্ডের ইন্টিগ্রেশন সিডিএফের হাতে চলে এল।

সাংবিধানিক এই আমূল পরিবর্তনকে সামরিক বাহিনীর আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকার ২৭তম সংশোধনীর পরপরই ১৯৫২ সালের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টেও (পিএএ) সংশোধন আনে। পিএএর ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (১) এখন জানাচ্ছে, ‘প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর প্রধান যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হবেন [...], তাঁর মেয়াদ এই ধারার অধীনে ওই পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই প্রথম সিওএএসসহ-সিডিএফের বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের বিদ্যমান মেয়াদ ওই বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (৩) অনুযায়ী, সিওএএস যিনি একই সঙ্গে সিডিএফেরও দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর ‘শর্তাবলি ও নিয়ম’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট স্থির করবেন।

ফিল্ড মার্শাল মুনির ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার পিএএ-তে পরিবর্তন আনে, যেখানে সিজেসিএসসির মেয়াদ তিন বছর অপরিবর্তিত রেখে বাকি তিন বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। একই সংশোধনীতে সার্ভিস চিফদের পুনর্নিয়োগ বা তাঁদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত