Ajker Patrika

সৌদি আরবে আমাজনের গুদামে প্রবাসী নেপালিরা প্রতারণার শিকার  

আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১৭: ০৩
সৌদি আরবে আমাজনের গুদামে প্রবাসী নেপালিরা প্রতারণার শিকার  

সৌদি আরবে আমাজনের গুদামে কর্মরত প্রবাসী নেপালিরা প্রতারণা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। কাজ দেওয়ার নাম করে নেপালিদের কাছ থেকে অর্থ নিলেও বেতন কম দেওয়া, নোংরা জায়গায় থাকতে বাধ্য করা এবং অন্য কোনো কাজ খুঁজে নেওয়া বা দেশত্যাগের সুযোগ তাদের দেওয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে রিয়াদে আমাজনের গুদামে কর্মরত ২২ নেপালি শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আবদুল্লাহ ফায়ার আল-বুসাইরি সাপোর্ট সার্ভিসেস কোম্পানি (আল-বুসাইরি) এবং বাঁশদাহ আল-মুসা নাদা করা আর টেকনিক্যাল সাপোর্ট সার্ভিসেস (বাঁশদাহ)-এই দুটি এজেন্সি নেপালের শ্রমিকদের নিয়োগ দিয়েছিল। 
 
সৌদি আরব গিয়ে আমাজনে  কাজ পাওয়া নিশ্চিত করতে একজন ছাড়া বাকি সবাই এজেন্টদের গড়ে ১ হাজার ৫০০ ডলার করে দেয়। কেউ কেউ এই ফি শোধ করতে উচ্চ সুদে ঋণও নিয়েছিল। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলার সময় সৌদি আরবে শ্রমিক সাপ্লাই কোম্পানির যোগসাজশে এজেন্টরা এই বলে নেপালিদের প্রতারিত করেছিল যে, আমাজন তাদের সবাইকে সরাসরি নিয়োগ দেবে। 

সৌদি আরবের উদ্দেশে যাত্রা করার কয়েক ঘণ্টা আগে যখন যুক্তিপত্র এবং অন্যান্য কাগজ পায় নেপালের শ্রমিকেরা, তখন কয়েকজন সন্দেহ করেন যে, তাদের হয়তো আমাজন সরাসরি নিয়োগ দিচ্ছে না। অন্যরা সৌদি আরবে পৌঁছানোর পরই ব্যাপারটা বুঝতে পারে। কিন্তু ততক্ষণে সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে দেওয়ায় এজেন্সির কথা মত চলা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে সাক্ষাৎকার দেওয়া এক নেপালি শ্রমিক বলেন, আমি ফ্লাইটের দিন বুঝতে পেরেছিলাম যে এটি একটি ভিন্ন কোম্পানি। আমার পাসপোর্টে লেখা ছিল, ’আল বাসমাহ কোং’। কিন্তু এজেন্ট বলল, ’চিন্তা করবেন না, এটি আমাজনের একটি শাখা। 

শ্রমিকদের বেশির ভাগকেই কয়েক মাস ধরে রাখা হয়েছিল নোংরা এবং ঠাসাঠাসি করে থাকতে হয় এমন ঘরে। আমাজনের গুদামে কাজ করার পর বেতনেও ক্ষেত্রেও দেখা দেয় অনিয়ম। ঠিকাদাররা প্রায়ই কোনো কারণ ব্যাখ্যা করা ছাড়াই তাদের বেতন এবং খাবারের ভাতার কিছু অংশ নিজেরাই রেখে দিত। ওভারটাইমের পুরো অর্থও পেত না শ্রমিকেরা। 

শ্রমিকেরা জানায়, গুদামগুলোতে তাদের সারা দিন অনেক ভারী জিনিস তুলতে হতো। সব সময় পর্যবেক্ষণের মধ্যে ঠেকে লক্ষ্য পূরণের জন্য ছুটতে হতো। প্রয়োজনীয় বিশ্রামের অনুমতি তারা পেত না। কিছু ক্ষেত্রে অসুস্থ হইয়ে যায় শ্রমিকেরা। তাদের মধ্যে একজন জানান, হাত ভেঙেছে বলে সন্দেহ হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি এক মাসের ছুটি নেন। কিন্তু অসুস্থ শ্রমিককে বেতন দেওয়া হবে না বলে এজেন্সি জানালে বাধ্য হয়ে তাঁকে দুই সপ্তাহ পরই কাজে ফিরতে হয়েছিল। 

বেশির ভাগ কর্মীই শ্রম সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে দুই বছরের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে ১২ মাসেরও কম সময় পরই চাকরি চলে গেছে অনেকের। বেকার এসব শ্রমিকদের আরও খারাপ থাকার জায়গায় নিয়ে যেত এজেন্সিগুলো। তাদের বেতন দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল এজেন্সিগুলো। খাবারের অর্থও বন্ধ দেওয়া হতো না কিছু ক্ষেত্রে। সরকার কিংবা অন্য কোনো জায়গা থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা না পাওয়া এসব মানুষ রুটি আর লবণ খেয়ে দিন পার করেছে। পান করতে হয়েছে লবণাক্ত পানি। 

একজন শ্রমিক জানান, থাকার জায়গা ছিল প্রচণ্ড নোংরা। ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এয়ার কন্ডিশন কিংবা বৈদ্যুতিক পাখা-কোন কিছু ছাড়াই তাদের টিকে থাকতে হয়েছে। ইন্টারনেটও ছিল না বলে দেশে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেননি তারা। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার বিভাগের প্রধান স্টিভ ককবার্ন প্রতিবেদনটিতে বলেছেন, শ্রমিকেরা ভেবেছিল যে তারা আমাজনে  কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু এর পরিবর্তে তারা হয়েছে নির্যাতনের শিকার। আমরা ধারণা করছি, এ রকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আরও অনেককেই যেতে হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমাজন অনেক আগেই শ্রমিকদের এই ভয়ংকর দুর্ভোগের ইতি তানতে পারত। কিন্তু আমাজনের নিয়মাবলি সৌদি আরবে এই চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাজনের উচিত ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং নিশ্চিত করা উচিত যে, এটি যেন আর কখনো না ঘটে। ” 

ককবার্ন আরও বলেন, সৌদি আরব সরকারেরও এখানে দায়িত্ব রয়েছে। তাদের অবশ্যই এই ঘটনাগুলোর তদন্ত করতে হবে এবং শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে শ্রম ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। যার মধ্যে থাকবে স্বাধীনভাবে নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করা এবং শর্ত ছাড়াই দেশ ত্যাগের ক্ষমতা থাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৭ অক্টোবরের দায় এড়াতে ফন্দি খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু: সাবেক মুখপাত্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এপির সৌজন্যে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এপির সৌজন্যে

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পরপরই প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেই ঘটনার দায় এড়ানোর উপায় খুঁজতে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখপাত্র ইলাই ফেল্ডস্টাইন গত সোমবার রাতে ইসরায়েলের ‘কান’ নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিস্ফোরক দাবি করেছেন।

গোপন নথি ফাঁসের দায়ে বর্তমানে বিচারের মুখোমুখি হওয়া ফেল্ডস্টাইন এই প্রথম সরাসরি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনলেন।

ইলাই ফেল্ডস্টাইন জানান, ৭ অক্টোবরের সেই রক্তক্ষয়ী হামলার ঠিক পরেই নেতানিয়াহু তাঁকে ‘প্রথম কাজ’ হিসেবে দিয়েছিলেন—কীভাবে জবাবদিহি বা দায়বদ্ধতার প্রশ্ন থেকে রেহাই পাওয়া যায় তার উপায় বের করা। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘হামলার পর নেতানিয়াহু আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘এখন কী ধরনের সংবাদ প্রচার হচ্ছে? তারা কি এখনো দায়বদ্ধতার কথা বলছে?’’ তাঁকে তখন বেশ আতঙ্কিত দেখাচ্ছিল। নেতানিয়াহু চেয়েছিলেন এমন কিছু বলা হোক, যাতে গণমাধ্যমে তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে যে ঝড় উঠেছে, তা স্তিমিত হয়ে যায়।’

ফেল্ডস্টাইন আরও দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যেন যেকোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ‘দায়বদ্ধতা’ (Responsibility) শব্দটি ব্যবহার না করা হয়।

তবে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এই সাক্ষাৎকারকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। হিব্রু সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে এবং নিজের অপরাধ থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে এক ব্যক্তি এমন ডাহা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

কে এই ইলাই ফেল্ডস্টাইন

ইলাই ফেল্ডস্টাইন নেতানিয়াহুর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি দুটি বড় কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। গোপন নথি ফাঁস—গত আগস্টে গাজায় ছয় জিম্মি নিহতের পর প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে একটি জার্মান সংবাদমাধ্যমে সামরিক গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে তাঁর বিচার চলছে। কাতারগেট স্ক্যান্ডাল—নেতানিয়াহুর হয়ে কাজ করার সময় কাতারের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মধ্যে তিনি একজন।

উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবরের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জন অপহৃত হয়। এর জবাবে ইসরায়েলের টানা দুই বছরের যুদ্ধে গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হয়। অনেকে মনে করেন, এই ব্যর্থতার দায় ঠেকানোর জন্য নেতানিয়াহু বরাবরই স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনে বাধা দিয়ে আসছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের ভিসা স্থগিতে বিপাকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাংলাদেশের ভিসা স্থগিতে বিপাকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা স্থগিতের সিদ্ধান্তে কলকাতার আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা এখন যথেষ্ট শঙ্কিত। তাই তারা দ্রুত এই সংকট কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ ও যোগাযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক, তুলা, সবজি এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়। বিপরীতে সেখান থেকে আমদানিপণ্য হিসেবে আসে প্রক্রিয়াজাত চামড়া। কাউন্সিল অব লেদার এক্সপোর্টের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার আঞ্চলিক কমিটির সদস্য জিয়া নাফিস বলেন, ‘প্রতি বছর কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স এবং কসবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের মাধ্যমে প্রায় ১২৫ কোটি টাকার প্রক্রিয়াজাত চামড়া আমদানি করা হয়। এই চামড়া মূলত ব্যাগ তৈরির কাজে লাগে। এখানকার চামড়ার চেয়ে গুণগত মান আলাদা এবং দাম কিছুটা সস্তা হওয়ায় আমরা সেখান থেকে আমদানি করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে আমদানিকারকরা ঠিক তেমনই সমস্যায় পড়বেন, যেমনটা হয়েছিল চীনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সময়।’ নাফিসের মতে, চামড়া একটি প্রাকৃতিক পণ্য, তাই এর মান একেক লটে একেক রকম হয়। আমদানির আগে সরাসরি গিয়ে মান যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। ভিসা না থাকলে সশরীরে পণ্য দেখা সম্ভব হবে না, ফলে পণ্যের গুণগত মান নিয়ে ঝুঁকি থেকে যায়। ব্যবসা সচল রাখতে ভ্রমণ প্রক্রিয়া সহজ করা দরকার।

গত সোমবার নিজ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভের মুখে দিল্লির কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং আগরতলার মিশন ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত নোটিশও টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানির এখন ভরা মৌসুম। ঠিক এই সময়েই এমন স্থগিতাদেশ এল। এক রপ্তানি প্রতিনিধি জানান, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ ঈদ পর্যন্ত পোশাকের চাহিদা খুব বেশি থাকে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৬০ টন পোশাক রপ্তানি হয়।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে ইন্ডিগোর একটি কার্গো ফ্লাইট কলকাতা থেকে ঢাকা শুধু পোশাকই নিয়ে যায়, অথচ এখন আরও কার্গো ফ্লাইটের প্রয়োজন ছিল।

বেঙ্গানি কমোডিটিসের পরিচালক এবং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের সাবেক আঞ্চলিক চেয়ারম্যান বিমল বেঙ্গানি জানান, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি আগে প্রতি মাসে বাংলাদেশে যেতাম। গত এক বছরে একবারও যাইনি। বাণিজ্য অনেক কমে গেছে। আগে প্রতিদিন পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে ১ হাজার ৬০০ ট্রাক বাংলাদেশে যেত; এখন তা নেমে এসেছে ৮ শতে। সমস্যা মেটানো আর নতুন বাজার খোঁজার জন্য ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করাটা খুব জরুরি।’

বিমল বেঙ্গানি মূলত পোলট্রি ফিড, মসলা এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করেন। তিনি যোগ করেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য গড়ে উঠেছে পারস্পরিক আস্থা ও যোগাযোগের ওপর। আমরা নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগকে সম্মান করি, তবে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত ভিসা সমস্যার সমাধান চাই। ব্যবসায়ী, রোগী এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াত স্বাভাবিক থাকা দুই দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

এদিকে কলকাতা থেকে ঢাকাগামী যাত্রী কমে যাওয়ার আশঙ্কায় এয়ারলাইনগুলোও চিন্তিত। বাংলাদেশের একটি এয়ারলাইনসের কর্মকর্তা জানান, ‘যাত্রী কমে যাওয়ায় ফ্লাইটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। বর্তমানে যেসব ফ্লাইট চলছে তাতে যাত্রী ভালোই আছে, কিন্তু ভিসার ওপর কড়াকড়ি শুরু হলে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত জেলেনস্কির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি হালনাগাদ শান্তি পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন, যেখানে মস্কোর দাবি অনুযায়ী পূর্ব ইউক্রেন থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহান্তে ফ্লোরিডায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যস্থতাকারীদের সম্মতিতে তৈরি হওয়া ২০ দফার এই পরিকল্পনার বিষয়ে জেলেনস্কি বলেন, আমেরিকানরা রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলার পর তারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে।

এই পরিকল্পনাকে ‘যুদ্ধ শেষ করার মূল রূপরেখা’ হিসেবে বর্ণনা করে জেলেনস্কি জানান, এতে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো এবং ইউরোপীয়দের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে রাশিয়া পুনরায় ইউক্রেন আক্রমণ করলে সমন্বিত সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে জেলেনস্কি বলেন, একটি ‘মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গঠন একটি সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে। সাংবাদিকদের তিনি জানান, ইউক্রেন সেনা প্রত্যাহারের বিপক্ষে থাকায় মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা একটি অসামরিক অঞ্চল অথবা মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন।

জেলেনস্কি বলেন, ‘এখানে দুটি পথ খোলা আছে—হয় যুদ্ধ চলবে, নতুবা সম্ভাব্য সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়ে কোনো একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।’ এই ২০ দফার পরিকল্পনাটিকে কয়েক সপ্তাহ আগে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের রাশিয়ার সঙ্গে করা ২৮ দফার মূল দলিলের একটি হালনাগাদ সংস্করণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগের সেই দলিলটি মূলত ক্রেমলিনের দাবি পূরণের লক্ষ্যেই তৈরি বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হয়েছিল।

শান্তি চুক্তির বিনিময়ে পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এলাকা থেকে ইউক্রেনকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। ওই অঞ্চলের বাকি অংশ ইতিমধ্যে রাশিয়ার দখলে রয়েছে। জেলেনস্কি ব্যাখ্যা করেন, ভূখণ্ড বিষয়ক স্পর্শকাতর প্রশ্নসহ অন্যান্য জটিল বিষয়গুলো ‘নেতৃপর্যায়ে’ সমাধান করতে হবে। তবে এই নতুন খসড়া ইউক্রেনকে শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং ৮ লাখ সৈন্যের এক বিশাল সামরিক শক্তি নিশ্চিত করবে।

হালনাগাদ করা এই পরিকল্পনার অনেকটাই বার্লিনে সাম্প্রতিক আলোচনার সঙ্গে মিলে যায়, যেখানে মার্কিন মধ্যস্থতাকারী উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় নেতারা অংশ নিয়েছিলেন। এরপর গত সপ্তাহান্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সরে যায় মিয়ামিতে, যেখানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রুশ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ এবং পরে ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন।

ভূখণ্ড বিষয়ক ইস্যুতে এখন অনেক বেশি বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে বলে মনে হচ্ছে, যদিও এটা স্পষ্ট যে ইউক্রেনীয় পক্ষ এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। ইউক্রেন যদি দোনেৎস্কের অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ এলাকায় একটি ‘মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তুলতে তাদের ভারী সামরিক সরঞ্জাম ৫, ১০ বা ৪০ কিলোমিটার পিছিয়ে নিতে রাজি হয়—যাতে এলাকাটি কার্যত অসামরিক হয়ে পড়ে—তবে জেলেনস্কির মতে, রাশিয়াকেও ‘অনুরূপভাবে ৫, ১০ বা ৪০ কিলোমিটার’ পিছু হটতে হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশেও একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং নিপ্রোপেত্রভস্ক, মাইকোলাইভ, সুমি ও খারকিভ—এই চারটি অঞ্চল থেকে রুশ বাহিনীকে অবশ্যই সরে যেতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মসজিদে নববির মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান আর নেই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩১
মসজিদে নববীর প্রয়াত মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদে নববীর প্রয়াত মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান। ছবি: সংগৃহীত

মদিনার পবিত্র মসজিদে নববির মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান আর নেই। দীর্ঘ ২৫ বছর এই পবিত্র দায়িত্ব পালনের পর গতকাল মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

শেখ ফয়সাল নোমান ২০০১ সালে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁকে ফজর নামাজের পরপরই মদিনার আল-বাকি কবরস্থানে দাফন করা হয়। আল-বাকি কবরস্থান জান্নাতুল বাকি নামেও পরিচিত। এটি মদিনার সবচেয়ে প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি গোরস্তান। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবারের সদস্য, স্ত্রী ও সাহাবিদেরসহ হাজার হাজার প্রারম্ভিক যুগের মুসলিমদের শেষ আশ্রয়স্থল এটি।

শেখ ফয়সালের মৃত্যুর পর মসজিদে নববি কর্তৃপক্ষ তাঁর দেওয়া শেষ আজানের একটি আবেগঘন ভিডিও শেয়ার করেছে। গত ২ নভেম্বর তিনি এই শেষ আজানটি দিয়েছিলেন।

আজানের সুর যেন শেখ ফয়সালের রক্তে মিশে ছিল। তাঁর পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই মহান সেবার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর বাবা ও দাদা—উভয়েই এই পবিত্র মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর দাদা যেমন মুয়াজ্জিন ছিলেন, তেমনি তাঁর বাবাও মাত্র ১৪ বছর বয়সে এই পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ৯০ বছরের বেশি বয়সে মৃত্যুর আগপর্যন্ত কয়েক দশক ধরে তাঁর বাবা এই খেদমত করে গেছেন। বাবার ইন্তেকালের পরই শেখ ফয়সাল নোমানকে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

দুই পবিত্র মসজিদের ধর্মীয় বিষয়াবলিসংক্রান্ত প্রেসিডেন্সির প্রধান শেখ ড. আবদুর রহমান আল-সুদাইস তাঁর নিজের এবং মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও কর্মীদের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

শেখ সুদাইস মরহুম মুয়াজ্জিনের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন যে, আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন এবং মসজিদে নববিতে দীর্ঘকাল আজান দেওয়ার জন্য তাঁকে উত্তম প্রতিদান দেন। একই সঙ্গে তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাঁদের ধৈর্য ধারণের শক্তি কামনা করেন।

উল্লেখ্য, এই বছরের শুরুর দিকে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি এবং কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারসের প্রধান শেখ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ আল আল-শেখ ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ এক রাজকীয় ডিক্রির মাধ্যমে শেখ ড. সালেহ বিন ফাওজান বিন আবদুল্লাহ আল-ফাওজানকে নতুন গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিযুক্ত করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত