Ajker Patrika

জেন-জি বিক্ষোভ

ফেসবুক ও ইউটিউবসহ ২৬ প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা চাপা ক্ষোভ উসকে দিল নেপালে, সহিংসতায় ঝরল ১৯ প্রাণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২: ৫৮
২৬টি যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে নেপাল সরকার। এতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তরুণেরা। গতকাল কাঠমান্ডুর পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে এই তরুণদের ওপর চালানো হয় গুলি। ছবি: এএফপি
২৬টি যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে নেপাল সরকার। এতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তরুণেরা। গতকাল কাঠমান্ডুর পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে এই তরুণদের ওপর চালানো হয় গুলি। ছবি: এএফপি

নেপালে দুর্নীতিবিরোধী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার বিক্ষোভ থেকে পার্লামেন্ট ভবনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তরুণদের ওপর গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

বিক্ষোভ শুরুর পর হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতাল। কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ১৯ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া প্রায় ১০০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।

এই গুলির ঘটনার জেরে পদত্যাগ করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল মন্ত্রিসভায় পদত্যাগপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, ‘এত মানুষের প্রাণহানি অচিন্তনীয়। নৈতিকভাবে আমার আর দায়িত্বে থাকা উচিত নয়।’

নেপালের গণমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট এই বিক্ষোভকে ‘জেন-জি’দের বিক্ষোভ হয়েছে আখ্যা দিয়েছে। গণমাধ্যমটি বলছে, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে বিক্ষোভ ডিজিটাল স্পেস থেকে সড়কে নেমে এসেছে। সোমবার সকাল ৯টার দিকে রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষোভকারীরা। তারা প্রথমে কাঠমান্ডুর মাইতিগড় এলাকায় জড়ো হয়। সেখানে স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। এই মাইতিগড় ছাড়াও গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশ এই বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করলে তারা পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর চালায়।

এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপে দিকে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে।

এদিকে কাঠমান্ডুর হাসপাতালের চিত্র তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকেরা। রাজধানীর সিভিল হাসপাতালের তথ্য কর্মকর্তা রঞ্জন নেপাল বলেন, ‘আমি এমন পরিস্থিতি এই হাসপাতালে এর আগে কখনো দেখিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে অনেক আহতের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এখানেই কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করছে। এতে চিকিৎসকদেরও কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

কারফিউ জারি

বিক্ষোভের কারণে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রথমে এই কারফিউ ছিল বানেস্বর এলাকায়। এই এলাকায় নেপালের পার্লামেন্ট ভবন, কাঠমান্ডু প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর। পুলিশের হামলার পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে কাঠমান্ডু। পরে কাঠমান্ডুতে প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় শীতল নিউওয়াজ এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। এ ছাড়া লাইনচাউর (ভাইস-প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলাকা), বালুওয়াতার (প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এলাকা), মহারাজগঞ্জ, সিংঘা দরবারসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য এলাকায়ও কারফিউ জারি করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্পর্শকাতর এলাকাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই কারফিউ বজায় থাকবে।

তারকাদের সমর্থন

কারফিউ জারি করার পরও বিক্ষোভ এখনো চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, তরুণেরা এখনো রাস্তা ছেড়ে যাননি। এই বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন দেশটির তারকারা। অভিনেতা মদন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ এবং হরি বনস আচারিয়া এই আন্দোলনের পক্ষে সরাসরি এবং প্রকাশে বক্তব্য দিয়েছেন। সরকারের অবস্থান এবং দুর্নীতির সমালোচনা করেছেন আচারিয়া। প্রবীণ নেতাদের সরে গিয়ে তরুণদের জায়গা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আরেক অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী প্রকাশ সপুত তাঁর ছোট দুই ভাইকে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। এই বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়ের অর্থ তাঁদের হাতে দিয়েছেন তিনি।

যাঁরা বিক্ষোভের পেছনে

কাঠমান্ডুর প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ‘হামি নেপাল’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে গতকাল মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। এই মিছিলের জন্য আগেই অনুমোদনও নিয়েছিল তারা। এই সংগঠনের প্রধান সুধান গুরুং বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সারা দেশে আমরা যে বিক্ষোভ করছি, তেমনি একটি বিক্ষোভ ছিল গতকাল।’

তবে এই বিক্ষোভকে জোরালো করার জন্য কাজ করা হচ্ছিল আগে থেকেই। ‘হামি নেপালের’ পক্ষ থেকে বিক্ষোভের জন্য বিভিন্ন তথ্য আগেই দেওয়া হচ্ছিল। এ ছাড়া ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য কী করতে হবে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগে জানিয়ে দিচ্ছিল সংগঠনটি। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের বই নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিল। গতকাল কাঠমান্ডু পোস্টে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, অনেকেই স্কুল, কলেজের ড্রেস পরে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। তাদের হাতে বিভিন্ন লিফলেট, পোস্টার ছিল। একটি পোস্টারে লেখা ছিল, দুর্নীতিকে না বলুন এবং একতাবদ্ধ হোন। আরেকটি পোস্টারে লেখা ছিল, ‘জেন-জি এখানে, ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল’।

নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বিক্ষোভ

কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে সমালোচনা বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল। গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), মেসেঞ্জার, সিগন্যাল, ইমো, ইউচ্যাট, স্ন্যাপচ্যাটসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নেপাল সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সরকারের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী পৃথিবী সুব্বা জানান, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের পাস করা নতুন বিধি অনুসারে নিবন্ধন নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

তবে টিকটক, ভাইবার ও আরও তিনটি প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন করায় তারা সরকারের নিষেধাজ্ঞা আওতার বাইরে থাকবে বলে জানান এই মন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়, এর আগে ক্ষোভ প্রকাশ হচ্ছিল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে ‘নেপো কিডস’, ‘নেপো বেবিস’ হ্যাশট্যাগগুলোর ব্যবহার করা হচ্ছিল। মূলত সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তরুণেরা। তবে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দিলে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। গত রোববার সাংবাদিকেরা কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ থেকে সাংবাদিকেরা বলেন, সরকার এর মাধ্যমে জনসাধারণের কণ্ঠস্বর রোধ করতে চায়। এ ছাড়া গণতন্ত্রের পথ রোধ করে কর্তৃত্ববাদের পথে হাঁটতে চাইছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানায় আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।

তবে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি এসব সমালোচনা গায়ে মাখেননি। উল্টো তিনি হুমকি দেন, দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

ক্ষতির কারণে সড়কে মানুষেরা

সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার কারণে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে নেপালের পর্যটন খাত। দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানই বিদেশি পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই সুযোগ আর পাচ্ছে না পর্যটন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া নেপালের অনেকেই দেশটির বাইরে থাকেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে তাঁরাও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়। রোববার প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির সংসদীয় এলাকায় গুলি চালায় পুলিশ। এরপর গতকাল সোমবার আবারও গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী।

গতকাল বিক্ষোভে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থী জুজান রাজভান্ডরি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি। তবে এটাই বিক্ষোভের একমাত্র কারণ নয়। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। নেপালে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে।’

এদিকে পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে ইকসামা তুমরক বলেন, ‘সরকার বিক্ষোভের বিরুদ্ধে যা করছে তা কর্তৃত্ববাদী আচরণ। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন দেখতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৭ বছরের সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আপিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) পৃথক দুটি আপিল করেছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি।

আপিল আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই সাজা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইমরান খানকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ ‘পরিকল্পিত’ রায় দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা ইমরান খান ও বুশরা বিবির পক্ষে কিছু যুক্তি উত্থাপন করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) কোনো এফআইআর ছাড়াই ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে চালানো তদন্তের ভিত্তিতে এই মামলা হয়, যা স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী।

আপিল আবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানাসংক্রান্ত এটি চতুর্থ মামলা। একই বিষয়ে বারবার মামলা করা আইনের লঙ্ঘন এবং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, যাতে ইমরান খানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।

আইনজীবীদের দাবি, ২০১৮ সালের তোশাখানা নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেই উপহারগুলো রাখা হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বা ‘ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ ঘটেনি।

আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান পেনাল কোড অনুযায়ী ইমরান খান ও বুশরা বিবি এই উপহার নেওয়ার সময় প্রচলিত সংজ্ঞায় ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না। বিশেষ করে, বুশরা বিবি একজন গৃহিণী হিসেবে কোনো সরকারি পদের দায়িত্বে ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলাটি মূলত ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি বুলগারি জুয়েলারি সেট নিয়ে। প্রায় ৮ কোটি রুপি মূল্যের এই নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুলের সেটটি ইমরান দম্পতি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখেছিলেন।

এই মামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ তাঁদের প্রত্যেককে প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। বর্তমানে ইমরান খান ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। বুশরা বিবিও একই মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত।

ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তোশাখানা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ক্যাঙারু কোর্টে’র মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত