Ajker Patrika

জেন-জি বিক্ষোভ

ফেসবুক ও ইউটিউবসহ ২৬ প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা চাপা ক্ষোভ উসকে দিল নেপালে, সহিংসতায় ঝরল ১৯ প্রাণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২: ৫৮
২৬টি যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে নেপাল সরকার। এতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তরুণেরা। গতকাল কাঠমান্ডুর পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে এই তরুণদের ওপর চালানো হয় গুলি। ছবি: এএফপি
২৬টি যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে নেপাল সরকার। এতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তরুণেরা। গতকাল কাঠমান্ডুর পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে এই তরুণদের ওপর চালানো হয় গুলি। ছবি: এএফপি

নেপালে দুর্নীতিবিরোধী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার বিক্ষোভ থেকে পার্লামেন্ট ভবনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তরুণদের ওপর গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

বিক্ষোভ শুরুর পর হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতাল। কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ১৯ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া প্রায় ১০০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।

এই গুলির ঘটনার জেরে পদত্যাগ করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল মন্ত্রিসভায় পদত্যাগপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, ‘এত মানুষের প্রাণহানি অচিন্তনীয়। নৈতিকভাবে আমার আর দায়িত্বে থাকা উচিত নয়।’

নেপালের গণমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট এই বিক্ষোভকে ‘জেন-জি’দের বিক্ষোভ হয়েছে আখ্যা দিয়েছে। গণমাধ্যমটি বলছে, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে বিক্ষোভ ডিজিটাল স্পেস থেকে সড়কে নেমে এসেছে। সোমবার সকাল ৯টার দিকে রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষোভকারীরা। তারা প্রথমে কাঠমান্ডুর মাইতিগড় এলাকায় জড়ো হয়। সেখানে স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। এই মাইতিগড় ছাড়াও গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশ এই বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করলে তারা পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর চালায়।

এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপে দিকে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে।

এদিকে কাঠমান্ডুর হাসপাতালের চিত্র তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকেরা। রাজধানীর সিভিল হাসপাতালের তথ্য কর্মকর্তা রঞ্জন নেপাল বলেন, ‘আমি এমন পরিস্থিতি এই হাসপাতালে এর আগে কখনো দেখিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে অনেক আহতের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এখানেই কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করছে। এতে চিকিৎসকদেরও কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

কারফিউ জারি

বিক্ষোভের কারণে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রথমে এই কারফিউ ছিল বানেস্বর এলাকায়। এই এলাকায় নেপালের পার্লামেন্ট ভবন, কাঠমান্ডু প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর। পুলিশের হামলার পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে কাঠমান্ডু। পরে কাঠমান্ডুতে প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় শীতল নিউওয়াজ এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। এ ছাড়া লাইনচাউর (ভাইস-প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলাকা), বালুওয়াতার (প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এলাকা), মহারাজগঞ্জ, সিংঘা দরবারসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য এলাকায়ও কারফিউ জারি করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্পর্শকাতর এলাকাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই কারফিউ বজায় থাকবে।

তারকাদের সমর্থন

কারফিউ জারি করার পরও বিক্ষোভ এখনো চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, তরুণেরা এখনো রাস্তা ছেড়ে যাননি। এই বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন দেশটির তারকারা। অভিনেতা মদন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ এবং হরি বনস আচারিয়া এই আন্দোলনের পক্ষে সরাসরি এবং প্রকাশে বক্তব্য দিয়েছেন। সরকারের অবস্থান এবং দুর্নীতির সমালোচনা করেছেন আচারিয়া। প্রবীণ নেতাদের সরে গিয়ে তরুণদের জায়গা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আরেক অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী প্রকাশ সপুত তাঁর ছোট দুই ভাইকে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। এই বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়ের অর্থ তাঁদের হাতে দিয়েছেন তিনি।

যাঁরা বিক্ষোভের পেছনে

কাঠমান্ডুর প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ‘হামি নেপাল’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে গতকাল মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। এই মিছিলের জন্য আগেই অনুমোদনও নিয়েছিল তারা। এই সংগঠনের প্রধান সুধান গুরুং বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সারা দেশে আমরা যে বিক্ষোভ করছি, তেমনি একটি বিক্ষোভ ছিল গতকাল।’

তবে এই বিক্ষোভকে জোরালো করার জন্য কাজ করা হচ্ছিল আগে থেকেই। ‘হামি নেপালের’ পক্ষ থেকে বিক্ষোভের জন্য বিভিন্ন তথ্য আগেই দেওয়া হচ্ছিল। এ ছাড়া ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য কী করতে হবে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগে জানিয়ে দিচ্ছিল সংগঠনটি। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের বই নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিল। গতকাল কাঠমান্ডু পোস্টে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, অনেকেই স্কুল, কলেজের ড্রেস পরে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। তাদের হাতে বিভিন্ন লিফলেট, পোস্টার ছিল। একটি পোস্টারে লেখা ছিল, দুর্নীতিকে না বলুন এবং একতাবদ্ধ হোন। আরেকটি পোস্টারে লেখা ছিল, ‘জেন-জি এখানে, ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল’।

নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বিক্ষোভ

কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে সমালোচনা বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল। গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), মেসেঞ্জার, সিগন্যাল, ইমো, ইউচ্যাট, স্ন্যাপচ্যাটসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নেপাল সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সরকারের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী পৃথিবী সুব্বা জানান, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের পাস করা নতুন বিধি অনুসারে নিবন্ধন নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

তবে টিকটক, ভাইবার ও আরও তিনটি প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন করায় তারা সরকারের নিষেধাজ্ঞা আওতার বাইরে থাকবে বলে জানান এই মন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়, এর আগে ক্ষোভ প্রকাশ হচ্ছিল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে ‘নেপো কিডস’, ‘নেপো বেবিস’ হ্যাশট্যাগগুলোর ব্যবহার করা হচ্ছিল। মূলত সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তরুণেরা। তবে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দিলে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। গত রোববার সাংবাদিকেরা কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ থেকে সাংবাদিকেরা বলেন, সরকার এর মাধ্যমে জনসাধারণের কণ্ঠস্বর রোধ করতে চায়। এ ছাড়া গণতন্ত্রের পথ রোধ করে কর্তৃত্ববাদের পথে হাঁটতে চাইছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানায় আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।

তবে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি এসব সমালোচনা গায়ে মাখেননি। উল্টো তিনি হুমকি দেন, দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

ক্ষতির কারণে সড়কে মানুষেরা

সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার কারণে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে নেপালের পর্যটন খাত। দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানই বিদেশি পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই সুযোগ আর পাচ্ছে না পর্যটন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া নেপালের অনেকেই দেশটির বাইরে থাকেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে তাঁরাও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়। রোববার প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির সংসদীয় এলাকায় গুলি চালায় পুলিশ। এরপর গতকাল সোমবার আবারও গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী।

গতকাল বিক্ষোভে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থী জুজান রাজভান্ডরি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি। তবে এটাই বিক্ষোভের একমাত্র কারণ নয়। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। নেপালে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে।’

এদিকে পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে ইকসামা তুমরক বলেন, ‘সরকার বিক্ষোভের বিরুদ্ধে যা করছে তা কর্তৃত্ববাদী আচরণ। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন দেখতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাঁজা চাষে লাইসেন্স ফি কমাল পাকিস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে। ছবি: এএফপি
গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে। ছবি: এএফপি

গাঁজা চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের লাইসেন্স ফি কমানোর অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তানের সরকার। দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, খাইবার পাখতুনখোয়া এলাকায় গাঁজা চাষের এই ফি কমাচ্ছে ক্যানাবিস রেগুলেটরি অথরিটি (সিআরএ)।

এছাড়া, শিল্পজাত হেম্প ও হেম্প বীজের তেলের ওপর থেকে আবগারি শুল্ক তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফুল-স্পেকট্রাম ক্যানাবিডিওল (CBD) ও টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (THC)-এর ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সরকারি নথি বরাতে দ্য ডন জানিয়েছে, সিআরএ গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করেছে এবং গাঁজা প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্স ফি ১৫ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ১০ লাখ রুপি নির্ধারণ করেছে।

এছাড়া হেম্প প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্স ফি ৭ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ফুল-স্পেকট্রাম ক্যানাবিডিওল ও টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলের ওপর আবগারি শুল্ক প্রতি কেজিতে ৩ হাজার রুপি থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার রুপি করা হয়েছে।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, ২২ ডিসেম্বর আবগারি, কর ও মাদকদ্রব্য বিষয়ক মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, ওই বৈঠকটি ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-কমিটির বৈঠকের ধারাবাহিকতা ছিল, যেখানে এসব পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছিল।

নথি অনুযায়ী, সিআরএ-এর বৈঠকে খাইবার পাখতুনখোয়ার জন্য প্রস্তাবিত হেম্প মডেল কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় আবগারি, কর ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য সচিব জোর দিয়ে বলেন, ব্যবসা পরিচালনাকে সহজ করা এবং বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিতে প্রস্তাবিত মডেলটি আরও সরল করা প্রয়োজন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, খাইবার পাখতুনখোয়ায় স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরীক্ষামূলকভাবে হেম্প চাষের লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান কৃষকদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে।

হেম্প চাষ ও প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্সের আবেদন ফরম, টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (টিএইচসি) নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ফরম, পর্যায়ক্রমিক পরিদর্শন ফরমসহ অন্যান্য বাধ্যতামূলক রেজিস্টার অনুমোদন করেছে সিআরএ।

শিল্প ও কৃষকদের যৌথ উদ্যোগে বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট (বিওআই) এবং শিল্প বিভাগ সহায়তা প্রদানের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কৃষকদের নিবন্ধন ব্যক্তিগত বা সমবায় কোম্পানি হিসেবে উভয় ক্ষেত্রেই ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে।

হেম্প বীজ আমদানি ও এর শংসাপত্রের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সপ্রাপ্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত গাঁজা চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ আপাতত স্থগিত রাখা হবে এবং ওষুধ শিল্পের প্রয়োজনীয় গাঁজা নিয়ন্ত্রণ ও এর পণ্য ব্যবস্থাপনা পাকিস্তানের ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটির (ডিআরএপি) চাহিদা ও মানদণ্ডের আলোকে বিবেচনা করা হবে।

নথিতে আরও বলা হয়, ক্যানাবিস মডেল প্রণয়ন এবং ক্যানাবিস সংক্রান্ত বিধিবিধান পুনর্বিবেচনার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে একটি উপকমিটি গঠন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে উত্তেজনা: শিখ ও হিন্দু বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হাতাহাতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স

লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে গত শনিবার একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত এই সমাবেশে স্বাধীন খালিস্তানপন্থী শিখ অধিকার কর্মী এবং একদল হিন্দু বিক্ষোভকারী মুখোমুখি হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রিটিশ পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আয়োজকদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি দৈনিক ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আয়োজিত সমাবেশে খালিস্তান রেফারেন্ডাম অভিযানের সমন্বয়ক পরমজিৎ সিং পাম্মা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে হরদীপ সিং নিজ্জার এবং শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি দেখা গেছে। সমাবেশের একপর্যায়ে ভারতীয় এক হিন্দু বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পাম্মার কথা-কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি শুরু হয়। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সেখানে দায়িত্বরত মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং দুই পক্ষকে আলাদা করে দেন।

বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রবেশপথের কাছে একটি কর্ডন তৈরি করে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যান। এ সময় তাঁরা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দেন। বিশেষ করে হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যা এবং অন্যান্য শিখ নেতাদের খুনের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, ভারত সরকার পরমজিৎ সিং পাম্মাকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্ট’ বা অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করলেও পাম্মা ও তাঁর সমর্থকেরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।

গত বছরের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার খুন হওয়ার পর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরম আকার ধারণ করেছে। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে মার্কিন বিচার বিভাগ।

লন্ডনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সেই বৈশ্বিক উত্তেজনার ছায়া দেখা গেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কোনো বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।

খালিস্তান আন্দোলনের শিকড় ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ এবং পাঞ্জাব বিভাজনের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের দাবিতে এই আন্দোলন দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে। এই আন্দোলন বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারত-কানাডা এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েল কেন প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল কেন সোমালিয়া থেকে স্বাধীন হতে চাওয়া সোমালিল্যান্ডকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিল—এই প্রশ্ন ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের স্বঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল শুধু একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্তই নেয়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও লোহিত সাগর ঘিরে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক—এই তিনটি প্রধান কারণ। সোমালিল্যান্ডের অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। এটি এডেন উপসাগরের তীরে অবস্থিত এবং ইয়েমেনের খুব কাছেই, যেখানে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সক্রিয়। চলতি বছরে হুতি ও ইসরায়েলের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালায়। জবাবে ইয়েমেনের সানা ও হোদেইদায় হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েল।

এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষক ডেভিড মাকোভস্কি প্রশ্ন তুলেছেন—সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে কি ইসরায়েল সেখানে সামরিক সুবিধা বা গোয়েন্দা উপস্থিতির পথ খুলেছে? বিশেষ করে হুতি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহি গোপনে একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন। গত অক্টোবরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মোসাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে সোমালিয়া ও আফ্রিকান ইউনিয়ন। মিসর ও ফিলিস্তিনসহ কয়েকটি আরব দেশও এর সমালোচনা করেছে। অতীতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, যদিও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা এই ধরনের কোনো যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি ইসরায়েলের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সোমালিল্যান্ডের বন্দরনগরী বেরবেরা ইসরায়েলকে লোহিত সাগরে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারে। এমন হলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মানদেব প্রণালির ওপর নজরদারি চালাতে পারবে ইসরায়েল। তবে সব মিলিয়ে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে ইসরায়েল ইতিহাস তৈরি করলেও এর পূর্ণ প্রভাব ও ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের সেরা সিইও কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট

২০২৫ সাল ছিল বিশ্ব করপোরেট নেতৃত্বের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে শুরু হয় নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ ও অনিশ্চিত নীতিনির্ধারণ। একই সঙ্গে চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই আরও তীব্র হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও, সেটিকে লাভজনক ব্যবসায় রূপ দেওয়ার কাজ অনেক সিইওর জন্য হতাশাজনকই থেকে যায়।

তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও কিছু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যতিক্রমী সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এবারও (২০২৫ সাল) সেরা সিইও নির্বাচন করেছে। এ ক্ষেত্রে এসঅ্যান্ডপি ১২০০ সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের খাতভিত্তিক গড়ের তুলনায় অতিরিক্ত শেয়ারহোল্ডার রিটার্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর তিন বছরের কম সময় দায়িত্বে থাকা সিইওদের বাদ দিয়ে শীর্ষ ১০ জনকে প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়।

এই তালিকায় ছিলেন—জার্মান অস্ত্র নির্মাতা রাইনমেটালের আরমিন পাপারগার, স্বর্ণখনি জায়ান্ট নিউমন্টের টম পামার, ফুজিকুরার ওকাদা নাওকি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ডেভিড জাসলাভ, হানহা অ্যারোস্পেসের সন জে-ইল, মাইক্রনের সঞ্জয় মেহরোত্রা, কিনরস গোল্ডের জে পল রোলিনসন, রবিনহুডের ভ্লাদিমির টেনেভ, এসকে হাইনিক্সের কাক নো-জং এবং সিগেট টেকনোলজির ডেভ মসলে।

তবে অতীতের দুর্বল পারফরম্যান্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স সমস্যা কিংবা নিছক সৌভাগ্যের কারণে অনেকেই চূড়ান্ত বিবেচনা থেকে বাদ পড়েছেন। স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় খনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়লেও, সেটিকে সিইওদের কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হয়নি। মেমোরি চিপ খাতে এআই বুমের সুফল পেলেও, সেখানে এসকে হাইনিক্সের গবেষণা ও উন্নয়নে ধারাবাহিক বিনিয়োগ আলাদা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সবশেষে ২০২৫ সালের সেরা সিইও হিসেবে রাইনমেটালের আরমিন পাপারগারকেই বেছে নিয়েছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশসহ ১৫৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাইনমেটাল বড় বড় চুক্তি জয় করেছে এবং নৌযান নির্মাণ খাতেও সম্প্রসারণে নেমেছে। ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা পাপারগার ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা অনুধাবন করেছিলেন। দূরদর্শিতা, সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই ২০২৫ সালের সেরা সিইওর স্বীকৃতি তাঁর হাতেই উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত