Ajker Patrika

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন /গাজার গণহত্যায় লাভে আছে বড় কোম্পানিগুলো: জাতিসংঘের বিশেষ দূত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৫, ২১: ৫৮
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ছবি: ইপিএ
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ছবি: ইপিএ

গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের এক বিশেষ দূত। তিনি অভিযোগে করেছেন, এসব প্রতিষ্ঠান গাজার ‘গণহত্যা থেকে মুনাফা অর্জন করছে’। তিনি ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপিত এই প্রতিবেদনে বিশেষ দূত ফ্রানচেস্কা আলবানিজ বলেন, ‘গাজায় জীবন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে, পশ্চিম তীরেও হামলা বাড়ছে। এই পরিস্থিতির পেছনে এক বড় কারণ হলো—এটা অনেকের জন্য লাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

২০২২ সাল থেকে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইতালির আইন বিশেষজ্ঞ ফ্রানচেস্কা আলবানিজ। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই তিনি গাজায় ইসরায়েলের অভিযানকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেন।

আলবানিজ বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ চলছে, তবে তিনি মনে করেন এর জন্য আদালতের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষা করার দরকার নেই। তাঁর ভাষায়, ‘৬৩০ দিন ধরে আমি প্রতিদিন এই বিষয়টির তদন্ত করেছি। পাঁচ মাস পরেই বলতে পারি এটি গণহত্যা। এর জন্য কাউকে বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই, শুধু তথ্যগুলো যাচাই করলেই বোঝা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে হত্যা, বসবাসের উপযোগী জীবনধারা ধ্বংস, ৮০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস, পানি ও খাদ্যের অনুপস্থিতি–এই সবই গণহত্যার সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য।’

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ রয়েছেন।

জাতিসংঘের বিশেষ দূতের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: ‘দখলদারির অর্থনীতি থেকে গণহত্যার অর্থনীতি।’ এতে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ, ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংসে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সরবরাহ, অবৈধ বসতিগুলোর কৃষিপণ্য রপ্তানি এবং যুদ্ধ তহবিল বিনিয়োগের মতো কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যখন বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সরকারগুলো তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে, তখন বহু করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারি, বর্ণবৈষম্য ও এখন গণহত্যা থেকে মুনাফা অর্জন করছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলেন, ‘এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বরফ খণ্ডের চূড়া মাত্র। প্রকৃত জবাবদিহির জন্য বেসরকারি খাত এবং সেসব সংস্থার নির্বাহীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।’

আলবানিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা ক্রয় কর্মসূচির সুবিধাভোগী। যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন কোম্পানির নির্মিত এই বিমানে ১ হাজার ৬০০-এর বেশি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও আটটি দেশের অংশগ্রহণ রয়েছে। ইসরায়েলই প্রথম দেশ, যারা এটি ‘বিস্ট মোডে’ ব্যবহার করেছে এবং প্রতিবার ১৮ হাজার পাউন্ড বোমা পরিবহন করেছে।

এদিকে সোমবার যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন, ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর তৈরি যন্ত্রাংশ ইসরায়েলকে রপ্তানি আইনসম্মত, যদিও সেই যন্ত্রাংশ ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের’ কাজে ব্যবহার হতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। তবে লকহিড মার্টিনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘বিদেশি সামরিক বিক্রয় হলো, এক দেশের সরকারের সঙ্গে আরেক দেশের সরকারের চুক্তি। এ বিষয়ে আলোচনা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মাধ্যমে হওয়া উচিত।’

মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্যালান্টিরও সমালোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এটি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্বের মাধ্যমে তাদের যুদ্ধ-সম্পর্কিত কার্যক্রমে সহায়তা করছে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রানচেস্কা আলবানিজ। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রানচেস্কা আলবানিজ। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ফ্রানচেস্কা আলবানিজ মনে করেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এরই মধ্যে গাজায় গণহত্যার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করেছে, যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের ওপর তা প্রতিরোধের দায় আরোপ করে। কিন্তু ইসরায়েল আদালতের আদেশ কার্যত অগ্রাহ্য করেছে এবং এর বিচারিক এখতিয়ারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা চলছে, আর তাতে লাভবান হচ্ছে বহু প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই লাভের চক্র বন্ধ করা এবং দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনা।’

তবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ‘ল্যাভেন্ডার’ এবং ‘গসপেল’ নামের প্রোগ্রামগুলো ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে মার্কিন ডেটা অ্যানালাইটিকস প্রতিষ্ঠান প্যালান্টির। প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি মন্তব্য না করলেও আগের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছে, ‘এই প্রোগ্রামগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এদের ব্যবহারের সঙ্গে আমরা যুক্ত নই। তবে অন্য বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা মিশনে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা গর্বিত।’ তাদের দাবি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি কমাতে তারা নানান পদ্ধতি অনুসরণ করে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রানচেস্কা আলবানিজ তাঁর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে শুধু প্যালান্টির নয়, আরও কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানিকে ইসরায়েলি হামলায় পরোক্ষভাবে সহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইডেনভিত্তিক চীনা মালিকানাধীন ভলভো তাদের ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে গাজা ও পশ্চিম তীরে ঘরবাড়ি, মসজিদ ও অবকাঠামো ধ্বংসে সহায়তা করছে। আলবানিজ বলেন, ‘মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে এই কোম্পানিগুলো ইসরায়েলি বাজারে তাদের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য মালামাল সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে। এদের নিষ্ক্রিয় অবস্থান প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েলের জবরদখলের সহায়তাকারী।’

তবে ভলভো দাবি করেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত অনেক যন্ত্রপাতি তারা সরবরাহ করেনি, বরং সেকেন্ডহ্যান্ড বাজার থেকে কেনা হয়েছে, যেগুলোর ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। উল্লেখ্য, ভলভো ইসরায়েলি কোম্পানি মার্কাভিমের সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগে বাস তৈরি করে, যার চেসিস ভলভো সরবরাহ করে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র জানান, চুক্তিতে মার্কাভিমকে প্রযোজ্য আইন এবং মানবাধিকারবিষয়ক ভলভোর নীতিমালা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মার্কাভিম পশ্চিম তীরে কার্যক্রম চালানো কোম্পানিগুলোর তালিকায় রয়েছে। আলবানিজ বলেন, ‘যেহেতু আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মতে পশ্চিম তীর দখল অবৈধ, তাই ভলভোর উচিত অবিলম্বে ওই অংশীদারত্ব থেকে সরে আসা।’

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েল চলমান যুদ্ধ ও এর ফলে সৃষ্ট বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করছে এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং খাত তা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ফরাসি আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিএনপি পারিবাস ও ব্রিটেনের বার্কলেজ বন্ডগুলো আন্ডাররাইট করে বাজারে আস্থা ফিরিয়েছে, যার ফলে ইসরায়েল উচ্চ সুদের ঝুঁকি মোকাবিলা থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ ছাড়া, জার্মান কোম্পানি অ্যালিয়াঞ্জের মালিকানাধীন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান পিমকো ও মার্কিন প্রতিষ্ঠান ভ্যাঙ্গার্ড ইসরায়েলি বন্ড কিনেছে।

পিমকো এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও, ভ্যাঙ্গার্ড জানিয়েছে, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান সব সময় প্রযোজ্য আইন ও বিধিনিষেধ মেনে চলে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকে।’

বিশ্বের বৃহত্তম সার্বভৌম সম্পদ তহবিল নরওয়ের গভর্নমেন্ট পেনশন ফান্ড গ্লোবাল গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের জড়িত থাকা সত্ত্বেও গত অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলি কোম্পানিতে তাদের বিনিয়োগ ৩২ শতাংশ বাড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। তবে নরওয়ের বৃহত্তম পেনশন তহবিল কেএলপি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ওশকোশ ও জার্মানির বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাইসেনকুরুপের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। কারণ, এই দুটি কোম্পানি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে।

এ বিষয়ে জানার জন্য ওশকোশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো উত্তর দেয়নি। তবে থাইসেনকুরুপ জানায়, তারা কেবল আইনভাবে এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করে এবং জার্মান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে।

আলবানিজ তাঁর প্রতিবেদনে করপোরেট অপরাধের ইতিহাস তুলে ধরেন, যেমন—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের বৃহত্তম রাসায়নিক ও ওষুধ কোম্পানি আইজি ফারবেনের বিচার, যেটি নাৎসি জার্মানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিল। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনেও বড় কোম্পানিগুলোর ভূমিকা চিহ্নিত হয়েছিল।

জাতিসংঘ ২০১১ সালে ‘ব্যবসা ও মানবাধিকার বিষয়ে দিকনির্দেশনা’ প্রকাশ করে বলেছে, কোম্পানিগুলোর উচিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি যথাযথভাবে যাচাই করা এবং ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া।

প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করেছেন আলবানিজ। তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ও বিভিন্ন দেশের বিচার বিভাগকে অনুরোধ করেন, যেন করপোরেট নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে সহায়তার অভিযোগে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল
সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল

সোমালিল্যান্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন নজির স্থাপন করেছে ইসরায়েল। এর মধ্য দিয়ে আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী ভূখণ্ডটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো কোনো রাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্বীকৃতি পেল।

শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ও সোমালিল্যান্ড একটি যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। নেতানিয়াহু একে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গড়ে ওঠা ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। এই চুক্তির আওতায় দুই দেশ রাষ্ট্রদূত নিয়োগ ও পরস্পরের দেশে দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুক্রবার রাতে (২৬ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ১৯৯১ সালে সোমালিয়া থেকে একতরফাভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও সোমালিল্যান্ড এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।

সোমালিয়া সরকার বরাবরই সোমালিল্যান্ডের স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। ইসরায়েলের ঘোষণার পর সোমালিয়ার সরকার একটি জরুরি বৈঠক ডাকে। এই বৈঠক থেকে ফোনালাপে মিসর, তুরস্ক ও জিবুতির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দেশটির ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ইসরায়েলের এমন স্বীকৃতিকে জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী এবং ‘বিপজ্জনক নজির’ বলে আখ্যা দিয়েছে মিসর।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, ভিডিও কলে সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহিকে (আব্দিরাহমান সিরো) অভিনন্দন জানান নেতানিয়াহু এবং তাঁকে ইসরায়েল সফরের আমন্ত্রণ জানান। সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট একে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ উল্লেখ করে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার পর এই স্বীকৃতি সোমালিল্যান্ডের জন্য বড় সাফল্য হলেও এটি সোমালিয়ার ভেতরে নতুন বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাকে উসকে দিতে পারে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান দলের কিছু প্রভাবশালী নেতা বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাজিব রাজাকের ১৫ বছরের কারাদণ্ড, জটিল সমীকরণে মালয়েশিয়ার সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বর্তমানে অন্য একটি মামলায় জেল খাটছেন; যার মেয়াদ ২০২৮ সালে শেষ হবে। ছবি: এএফপি
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বর্তমানে অন্য একটি মামলায় জেল খাটছেন; যার মেয়াদ ২০২৮ সালে শেষ হবে। ছবি: এএফপি

মালয়েশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থ কেলেঙ্কারি মামলায় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) কুয়ালালামপুর হাইকোর্টের বিচারক কলিন লরেন্স সেকুয়েরাহ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাঁকে ১১ দশমিক ৪ বিলিয়ন রিঙ্গিত (প্রায় ২৮০ কোটি মার্কিন ডলার) জরিমানা করা হয়েছে।

৭২ বছর বয়সী নাজিব রাজাককে ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটি ও অর্থ পাচারের ২১টিসহ মোট ২৫টি অভিযোগের সব কটিতেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই রায় মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, নাজিবের দল ইউএমএনও বর্তমান সরকারের একটি বড় অংশীদার।

পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক সেকুয়েরাহ নাজিবের আত্মপক্ষ সমর্থনের সব যুক্তি নাকচ করে দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক দাবি করেছিলেন, ওয়ানএমডিবির কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু বিচারক তাঁর এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটি বিশ্বাস করা মানে কল্পনাকে রূপকথার রাজ্যে নিয়ে যাওয়া। ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে নাজিব মোটেও কোনো ‘অবুঝ গ্রাম্য লোক’ নন, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান।

বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, নাজিবের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো কোনো ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বিষয় নয়, বরং ‘কঠিন ও অকাট্য’ দালিলিক প্রমাণ বলছে তিনি নিজের ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করেছেন।

আদালত নাজিবকে ১১ দশমিক ৪ বিলিয়ন রিঙ্গিত জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই জরিমানা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাঁকে অতিরিক্ত আরও ১০ বছরের জেল খাটতে হতে পারে।

আদালত ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য প্রতিটি অভিযোগে ১৫ বছর এবং অর্থ পাচারের জন্য পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। তবে সব সাজার মেয়াদ একই সঙ্গে কার্যকর হবে, ফলে তাঁকে মোট ১৫ বছর জেল খাটতে হবে।

এদিকে নাজিব বর্তমানে অন্য একটি মামলায় জেল খাটছেন যার মেয়াদ ২০২৮ সালে শেষ হবে। নতুন এই সাজা সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে কার্যকর হবে।

তবে এই রায়ের ফলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে অস্থিরতা বাড়তে পারে। কারণ, নাজিবের দল ইউএমএনও বর্তমান সরকারের একটি বড় অংশীদার। ফলে দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তি নিয়ে ক্ষমতায় আসা আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য এটি একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

২০২২ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে কোনো দল বা জোটই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন নিশ্চিত করতে না পারায়, শেষমেশ আনোয়ার ইব্রাহিমের দল পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোট সরকার গঠন করে। এর মধ্যে পিএইচর ৮২টি, ইউনাইটেড মালয়জ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ইউএমএনও) ২৬টি ও বারিসান ন্যাসিওনালের (বিএন) চারটি আসন নিয়ে এই জোট সরকার গঠিত হয়।

জেলখানায় থাকলেও দলের ওপর নাজিবের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এই রায়ের পর দলের ভেতর থেকে আনোয়ার ইব্রাহিমের ওপর চাপ সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি কোনো কারণে ইউএমএনও বর্তমান জোট সরকার থেকে সরে যায়, তবে বিপাকে পড়বেন আনোয়ার ইব্রাহিম।

নাজিবের প্রধান আইনজীবী মুহাম্মদ শাফি আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আগামী সোমবার আপিল করবেন।

রায়ের পর এক বিবৃতিতে নাজিব রাজাক দেশবাসীকে শান্ত ও ধৈর্যশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই লড়াই দায়িত্ব এড়ানোর জন্য নয়, বরং ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।’ তবে এই দণ্ডাদেশের ফলে নাজিবের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বারহাদ বা ওয়ানএমডিবি হলো মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রমালিকানাধীন একটি কৌশলগত উন্নয়ন সংস্থা। মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটি তৈরি হয়েছিল, কিন্তু পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকসহ সংশ্লিষ্টরা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন।

২০১৫ সালে ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারির ঘটনাটি প্রথম সামনে আসে, যা ২০১৮ সালের নির্বাচনে নাজিব রাজাকের দলের দীর্ঘ ছয় দশকের শাসনের অবসান ঘটায়। এর আগে ২০২০ সালে অন্য একটি মামলায় নাজিবকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা পরে কমিয়ে ছয় বছর করা হয়। সাত বছর ধরে চলা এই দীর্ঘ আইনিপ্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ফের উদ্বেগ জানাল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ছবি: এএনআই
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ছবি: এএনআই

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও ময়মনসিংহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ফের তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহে ২৭ বছর বয়সী হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার কথা উল্লেখ করে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশে এক হিন্দু যুবককে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা আশা করি, এই জঘন্য অপরাধের হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’

রণধীর জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমাগত সহিংসতা ও বৈরী আচরণকে ভারত সরকার একটি ‘গভীর উদ্বেগের বিষয়’ হিসেবে দেখছে। ভারত নিয়মিত এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণও করছে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে দিল্লির অবস্থান পুনরায় পরিষ্কার করে মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ভারতের অবস্থান শুরু থেকেই স্পষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাই এবং আমরা সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পক্ষে।’

ভারত বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বলেও মন্তব্য করেন রণধীর জয়সওয়াল।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকার পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কারখানায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দেয় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা। পরে তাঁর মরদেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে রাত আড়াইটার দিকে অর্ধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।

গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০-১৬০ জনকে আসামি করে ভালুকা থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নামাজরত ফিলিস্তিনির ওপর গাড়ি চালিয়ে দিলেন ইসরায়েলি সেনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ইসরায়েল অধিকৃত গাজার পশ্চিম তীরে নামাজরত ফিলিস্তিনি ব্যক্তির ওপর বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) এক সেনা। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) এই রোমহর্ষক ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।

আইডিএফ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে অভিযুক্ত সেনাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পিঠে রাইফেল ঝোলানো এক ব্যক্তি সিভিল পোশাকে একটি এটিভি চালিয়ে এসে নামাজরত ফিলিস্তিনি ব্যক্তিকে সজোরে ধাক্কা দেন। এতে ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর ওই সেনাসদস্য চিৎকার করে তাঁকে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার ওই ফিলিস্তিনিকে ঘটনার পর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি বাড়িতে থাকলেও তাঁর দুই পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর বাবা মাজিদি আবু মোখো। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভিডিওতে দেখা না গেলেও ওই সেনা তাঁর ছেলের চোখে ‘পিপার স্প্রে’ বা মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিয়েছিলেন।

মাজিদি আবু মোখো ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, আক্রমণকারী ব্যক্তি ওই এলাকার একজন কট্টরপন্থী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী। তিনি গ্রামের কাছে একটি অবৈধ চৌকি স্থাপন করেছেন। অন্য বসতি স্থাপনকারীদের নিয়ে তিনি এখানে গবাদিপশু চরাতে আসেন, রাস্তা অবরোধ করেন এবং গ্রামবাসীদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেন।

আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন রিজার্ভ সেনা ছিলেন। ঘটনার পরপরই তাঁকে সামরিক দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার ও শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাঁর কাছে থাকা সরকারি অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সেনাকে গতকাল রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় এবং বর্তমানে তিনি পাঁচ দিনের জন্য গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এর আগে ওই ব্যক্তি গ্রামে গুলিবর্ষণ করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালটি গাজার পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের (বসতি স্থাপনকারী) হামলার ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ‘সহিংস বছর’।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জন অপহৃত হয়। এর জবাবে ইসরায়েলের টানা দুই বছরের যুদ্ধে গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত