Ajker Patrika

ইউক্রেনের ৩৫ হাজার শিশুর হদিস নেই, অনুমান মার্কিন বিশেষজ্ঞদের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ১৮: ৩১
ইউক্রেন থেকে শিশুদের অপহরণ করে রুশ সৈন্যরা। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন থেকে শিশুদের অপহরণ করে রুশ সৈন্যরা। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় ৩৫ হাজার শিশুর কোনো হদিস নেই। এ দাবি করেছে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের একটি দল। তাঁদের ধারণা, এই ৩৫ হাজারেরও বেশি শিশুর এখনো রাশিয়া বা রুশ অধিকৃত অঞ্চলে আটকে রাখা হয়েছে। এদিকে শিশুদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সন্তানদের উদ্ধারে তাঁরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বাধ্য হচ্ছেন চরম ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয়। এ সময় ইউক্রেন থেকে শিশুদের অপহরণ করে রুশ সৈন্যরা। কখনো অনাথ আশ্রমগুলো থেকে, কখনো মৃত বাবা-মায়ের পাশ থেকে আবার কখনো পরিবারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে শিশুসন্তানকে।

এই জোরপূর্বক অপহরণ করে নেওয়া শিশুদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে রাশিয়া। চলতি মাসে তুরস্কে অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতির আলোচনায় এক রুশ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ইউক্রেন হারিয়ে যাওয়া শিশুদের নিয়ে নাটক করছে।

প্রায় ছয় মাস রাশিয়ার একটি ক্যাম্পে আটক থাকা দুই কিশোর ছেলেকে তাদের মা কীভাবে উদ্ধার করেছিলেন, সে নাটকীয় ঘটনা দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তের খেরসন শহর দখল করে নেয়। সেই শহরের বাসিন্দা নাতালিয়াকে তাঁর এক প্রতিবেশী ছেলেদের রাশিয়ার সমুদ্রের তীরবর্তী রিসোর্টের শহর আনাপার একটি শিশুশিবিরে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।

নাতালিয়া বলছিলেন, ‘২১ দিনের জন্য সেখানে থাকার কথা ছিল। কোনো খরচ দিতে হয়নি এর জন্য। কথা ছিল সফর শেষে তাঁর ছেলেরা খেরসনে ফিরে আসবে। ছেলেরাও শুনে আগ্রহী হয়েছিল। আর আমি যেতে অনুমতি দিয়েছিলাম, যা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।’

২০২২ সালের শেষের দিকে খেরসন মুক্ত করে ইউক্রেনের সেনারা। কিন্তু ফ্রন্টলাইনের অন্য পাশের ওই ক্যাম্পে এখনো নাতালিয়ার সন্তানরাসহ আরও কিছু শিশু রয়ে গিয়েছিল। রাশিয়া তাদের ফিরতে দিচ্ছিল না নিজ দেশে।

নাতালিয়া বলতে থাকেন, ‘ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ আমার শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া বাচ্চাদের ছাড়তে রাজি ছিল না। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না।’

অবশেষে, ইউক্রেনের একটি সংস্থার সহায়তায় নাতালিয়া দুই ছেলের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি একাই যাত্রা শুরু করেন। পাড়ি দেন সীমান্ত, পৌঁছান কৃষ্ণ সাগরের উত্তর উপকূলে রাশিয়ার আনাপা শহরে। পথে পার হতে হয় অসংখ্য সীমান্ত চৌকি, যেখানে বারবার রুশ সৈন্যদের জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। বারবার ব্যাখ্যা করতে হয় কেন তিনি রাশিয়ায় এসেছেন।

যুদ্ধের তুমুল গোলাগুলির মধ্যেই নাতালিয়া টানা ছয় দিন চলতে থাকেন ছেলেদের ফিরে পাওয়ার দৃঢ় মনোবলকে সঙ্গী করে। অবশেষে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর যাত্রার ইতি হয়। কাছে পান দুই সন্তানকে।

স্মৃতিচারণ করে নাতালিয়া বলেন, ‘আমার মনের অবস্থা কেমন ছিল সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না। আমার সন্তানেরাই আমার সবকিছু।’

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর থেকে অপহরণ হওয়া বা রাশিয়ায় থাকা ইউক্রেনীয় শিশুদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে ব্রিং কিডস ব্যাক নামের একটি সংগঠন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৩৬৬টি শিশু ইউক্রেনে ফিরে বা পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞদের একটি দল অনুমান করছে, রাশিয়া ও দেশটির অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে প্রায় ৩৫ হাজার শিশু আটক থাকতে পারে।

আশঙ্কা রয়েছে, এর মধ্যে অনেক শিশুকে রুশ বাহিনী সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠিয়েছে। আর কারও ঠাঁই হয়েছে সরকারি শিশু নিবাসে। আবার কারও নতুন জীবন শুরু হয়েছে রাশিয়ার কোনো পরিবারে সন্তান হিসেবে।

রুশ ডেটাবেস, সরকারি নথি, পারিবারিক সংযোগ এবং রুশ সাইট, সরকারি ভবন ও অন্যান্য উৎসের স্যাটেলাইট ইমেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুর পরিচয় নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা।

এই গবেষণা দলের সদস্য ইয়েলের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক নাথানিয়েল রেমন্ড বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্ভবত এটিই সবচেয়ে বড় শিশু অপহরণের ঘটনা। নাৎসিদের হাতে পোলিশ শিশুদের জার্মানিকরণের (Germanification) সঙ্গে এ ঘটনাকে তুলনা করা যায়।

সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া ইউক্রেনীয় শিশুদের কাছ থেকে জানা যায়, রুশ আর্মি ক্যাম্পগুলোতে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। মাতৃভাষায় কথা বললে তাদের শাস্তি দেওয়া হতো।

উদ্ধার হওয়া একটি ৯ বছর বয়সী শিশু জানায়, ‘আমাদের রুশ জাতীয় সংগীত গাইতে হতো। রাশিয়ার পতাকা আঁকতে হতো।’

অপহৃত শিশুদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে কাজ করা সংগঠন ইউক্রেনিয়ান চাইল্ড রাইটস নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন দারিয়া কাসিয়ানোভা বলেন, শিশুদের বোঝানো হতো, তারা যদি কথা না শোনে, তাহলে তাদের বাবা-মাকে এর জন্য ভুগতে হবে।

অ্যাকটিভিস্ট ও গবেষকদের মতে, ইউক্রেনীয় শিশুদের জোরপূর্বক স্থানান্তর ও অপহরণ নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের সময়ও তিনি একই ধরনের অপহরণ ও নির্বাসনের ঘটনা দেখেছেন বলে জানান কাসিয়ানোভা।

দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল থেকে তখন তিনি ৪০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে কাজ করেছিলেন, যার মধ্য ১২ হাজারই শিশু। কাসিয়ানোভা বলতে থাকেন, ‘আমার মেয়ের বয়স তখন ১১। সে ও তার বন্ধু পিছিয়ে পড়েছিল। তাদের তখন রুশ আর্মি ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

অ্যাকটিভিস্টদের আশঙ্কা, অপহৃত অনেক শিশুই রাশিয়ার নতুন দত্তক আইনের কারণে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। সেখানে সম্প্রতি আইনে পরিবর্তন এনে রুশ নাগরিকদের ইউক্রেনীয় শিশুদের দত্তক ও লালন-পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

কাসিয়ানোভা বলেন, ‘কখনো কখনো দেখা যায়, বাবা-মা ইউক্রেনে আর শিশু দখল করা অঞ্চলে। যদি সেই বাবা-মা মারা যান বা গ্রেপ্তার হন, তাহলে শিশুটি অনাথ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। তাকে অনাথ আশ্রমেও পাঠানো হতে পারে। আর যদি এটা হয়ে যায়, তাহলে সেই শিশুকে ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে তারা।’

ইয়েল ইউনিভার্সিটির অপহৃত শিশুদের ব্যাপারে তদন্ত করা দলের প্রধান নাথানিয়েল রেমন্ড বলেন, ‘এই শিশুদের জোরপূর্বক নির্বাসনের নথিভুক্ত করা জরুরি। এক জাতি বা দেশের শিশুকে নিয়ে অন্য জাতি বা দেশের অংশ করে তোলার চেষ্টা করা যুদ্ধাপরাধ।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও (আইসিসি) এ বিষয়ে একমত। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তাঁরা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় শিশুদের বেআইনিভাবে নির্বাসনের ‘যুদ্ধাপরাধের’ অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এই শিশুদের ফিরিয়ে আনা এখন শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান দাবি। ইউক্রেনীয় দাতব্য সংস্থা হেল্পিং টু লিভের বিশেষজ্ঞ ক্সেনিয়া বলেন, ‘আমরা ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু আমাদের জনগণ, আমাদের শিশু, তারাই তো আমাদের ভূখণ্ড। আমরা তাদের কীভাবে ছেড়ে দিতে পারি?’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাদের সন্তান, ইউক্রেনের সন্তান। তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ওপর রাশিয়ার কোনো অধিকার নেই।’

এখন দর-কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে এই শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করেন রেমন্ড। তিনি বলেন, রাশিয়ানরা যখন এই সংঘাত শুরু করেছিল, তারা ভেবেছিল দ্রুত জয় আসবে। তখন এই অপহরণ শুরু হয়েছিল শিশুদের ব্যবহার বা দখলে রাখার জন্য নয়, বরং ইউক্রেনকে ‘রুশীকরণ’ (Russification) করার জন্য।

রেমন্ডের মতে, ‘যখন যুদ্ধের পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকল, তখন তারা কৌশল পাল্টে ফেলল। এখন এই শিশুদের জিম্মি করে আলোচনায় সুবিধা নিতে চায় রাশিয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দেশের টাকমাথার লোকদের বাঁচানোর লড়াইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউংয়ের সুবিন্যস্ত চুলের বাহার নজর কাড়ার মতো। তবে তিনি এখন এক অন্য অভিযানে নেমেছেন—দেশের টাকমাথা মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর ব্রত। তাঁর মূল লক্ষ্য—দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা ব্যবস্থা। তিনি প্রস্তাব করেছেন, চুল পড়ার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ এখন থেকে এই বিমা থেকেই মেটানো হোক।

প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং গত মঙ্গলবার এক সরকারি ব্রিফিংয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এই সাহসী প্রস্তাব দেন। তিনি যুক্তি দেখান, একসময় চুল পড়ার চিকিৎসাকে স্রেফ ‘প্রসাধন’ বা সাজসজ্জা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু আধুনিক সময়ে এটি মানুষের কাছে রীতিমতো ‘টিকে থাকার লড়াই’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিমা কেবল অসুস্থতাজনিত কারণে চুল পড়লে তার খরচ বহন করে। কিন্তু বংশগত কারণে টাক পড়লে বিমার টাকা পাওয়া যায় না। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জং ইউন-কিয়ং স্পষ্ট জানিয়েছেন, যেহেতু এটি জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি হুমকি নয়, তাই একে বিমার আওতাভুক্ত করা হয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট লি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বংশগত সমস্যাকে কেন রোগ হিসেবে দেখা হবে না?’

দক্ষিণ কোরিয়া কঠোর সৌন্দর্যের মানদণ্ডের জন্য পরিচিত। সেখানে টাক পড়া এক ধরনের সামাজিক কলঙ্ক, যা বিশেষ করে তরুণদের খুব কষ্ট দেয়। সরকারি তথ্য বলছে—গত বছর চুল পড়ার সমস্যায় হাসপাতালে যাওয়া ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশই ছিল ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী।

৩৩ বছর বয়সী লি ওন-উ নামে এক যুবক জানান, সামনের দিকে চুল কমে যাওয়ায় তিনি কোনো হেয়ার স্টাইল করতে পারেন না। তাঁর ভাষায়, ‘নিজেকে অগোছালো আর কুৎসিত মনে হয়, যা আমার আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে।’

প্রেসিডেন্টের এই প্রস্তাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে তাঁকে ‘ইতিহাসের সেরা প্রেসিডেন্ট’ বলে আকাশচুম্বী প্রশংসা করছেন। তবে সবাই কিন্তু উচ্ছ্বসিত নন। খোদ ভুক্তভোগীদের মধ্যেও কেউ কেউ একে দেখছেন ‘ভোট পাওয়ার সস্তা কৌশল’ হিসেবে।

সমালোচকদের ভাষ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিমা ব্যবস্থা গত বছর বড় ধরনের লোকসানের (প্রায় ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার) মুখে পড়েছে। প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই চাপ আরও বাড়বে। কোরিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, টাকের চেয়েও মারাত্মক অনেক রোগ আছে যেগুলোতে আগে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া উচিত।

নেটিজেনদের একাংশ বলছেন, যেখানে স্যানিটারি প্যাড বা স্তন ক্যানসারের ওষুধের খরচ দিতেই সরকারি তহবিলের টান পড়ে, সেখানে টাকের চিকিৎসায় বিমা সুবিধা দেওয়াটা এক ধরনের ‘নিষ্ঠুর রসিকতা’।

২০২২ সালের নির্বাচনে হেরে গেলেও এবার প্রেসিডেন্ট লি জয়ী হয়েছেন। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ২০২৬-এর স্থানীয় নির্বাচন সামনে রেখে তরুণ পুরুষ ভোটারদের তুষ্ট করতেই তিনি এই ‘কৌশলী আচরণ’ করছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার তীব্র প্রতিযোগিতামূলক সমাজে তরুণেরা এমনিতেই কোণঠাসা। তাদের মনে এই বিশ্বাস জন্মানো যে রাষ্ট্র তাদের ছোটখাটো সমস্যা নিয়েও ভাবছে—এটিই হতে পারে লির রাজনৈতিক লক্ষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘মান বাঁচাতে’ ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে ইইউ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহার না করে ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহার না করে ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে আগামী ২ বছরের জন্য বড় অঙ্কের সুদহীন ঋণ দিতে রাজি হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা আজ শুক্রবার ভোরের দিকে এই ঘোষণা দেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলা বৈঠকে নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ আপাতত ব্যবহার না করে বরং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ ধার করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা তহবিলের জোগান দেওয়া হবে। কূটনীতিকদের ভাষ্যমতে, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নানা আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা কাটানোর চেষ্টা চলেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তোনিও কস্তা লিখেছেন, ‘চুক্তি হয়ে গেছে। ২০২৬-২৭ সালের জন্য ইউক্রেনকে প্রায় ১০৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হলো। আমরা কথা দিয়েছিলাম, আমরা তা রেখেছি।’

তহবিলের উৎস নিয়ে কস্তা বিস্তারিত কিছু না জানালেও রয়টার্সের কাছে আসা এক খসড়া নথি বলছে, এই অর্থ আসবে সরাসরি পুঁজিবাজার থেকে এবং এর নিশ্চয়তা থাকবে ইইউ বাজেটের ওপর। রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহারের যে বিতর্কিত পরিকল্পনা নিয়ে আগে আলোচনা হচ্ছিল, তা থেকে আপাতত সরে আসা হয়েছে। তবে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদকে ভিত্তি করে কোনো ঋণ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও সরকারগুলোর মধ্যে আলোচনা চলবে।

এই চুক্তিতে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের ওপর কোনো আর্থিক দায় চাপানো হয়নি। কারণ দেশগুলো এই অর্থায়নে অংশ নিতে রাজি ছিল না। শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেন এই ঋণ তখনই শোধ করবে যখন তারা মস্কোর কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বা ‘ওয়ার রিপারেশন’ পাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়ার সম্পদগুলো অচল অবস্থায় পড়ে থাকবে। তবে প্রয়োজনে সেই সম্পদ থেকে ঋণ শোধ করার অধিকারও ইইউ নিজের হাতে রেখেছে।

এক ইইউ কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, ‘ইউক্রেনের জন্য অন্তত আগামী দুই বছরের অর্থের সংস্থান নিশ্চিত হওয়াটা একটা ইতিবাচক দিক।’ তবে অন্য একজন কূটনীতিকের মন্তব্য ছিল খানিকটা তির্যক। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ইউক্রেনকে বাঁচানোর চেয়ে বরং নিজেদের মান বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’

রাশিয়ার টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বেলজিয়াম। রাশিয়ার জব্দ করা ২১০ বিলিয়ন ইউরোর মধ্যে ১৮৫ বিলিয়ন ইউরোই আছে বেলজিয়ামের ইউরোক্লিয়ার নামক প্রতিষ্ঠানে। মস্কোর আইনি ও আর্থিক পাল্টা আঘাতের ভয়ে বেলজিয়াম সরকার বেশ আতঙ্কিত ছিল। ক্রেমলিন আগেই জানিয়ে রেখেছে, তাদের সম্পদ ধরা হলে তারা আদালতে যাবে এবং রাশিয়ায় থাকা বিদেশি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে।

এই বৈঠকের আগে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎস সতর্ক করে বলেছিলেন, চুক্তির সম্ভাবনা ছিল ‘ফিফটি-ফিফটি।’ বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডি ওয়েভারও আইনি ও আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন অন্য ইইউ দেশগুলো যেন সম্ভাব্য সব ক্ষতির দায়ভার নিতে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়।

শুক্রবার সকালে অবশ্য ডি ওয়েভার বেশ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার থেকে ঋণ নেওয়ার এই সিদ্ধান্তের ফলে ইইউ দেশগুলোর মধ্যে অন্তত বড় কোনো ‘বিশৃঙ্খলা বা বিভাজন’ তৈরি হয়নি।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই সম্পদ ব্যবহারের যেকোনো চেষ্টা হলে তারা ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করবে। বিশ্লেষক ক্রিস উইফার মনে করেন, মস্কো বিষয়টিকে একটি ‘আর্থিক যুদ্ধ’ হিসেবে দেখবে এবং কড়া প্রতিশোধ নেবে। তিনি বলেন, অনেক ইইউ রাষ্ট্রই এখন সরাসরি ইউক্রেনকে অর্থ দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই তারা মরিয়া হয়ে বিকল্প কোনো উৎসের সন্ধান করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৮
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ ক্রয় নিষ্কণ্টক করতেই রাশিয়াকে এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ছবি: সংগৃহীত
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ ক্রয় নিষ্কণ্টক করতেই রাশিয়াকে এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের পথ সুগম করতে তুরস্ক রাশিয়ার কাছে তাদের সরবরাহ করা এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।

গত বুধবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত সপ্তাহে তুর্কমেনিস্তান এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এই অনুরোধ করেন। রুশ ও তুর্কি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনার পর এই শীর্ষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিষয়টি এমন এক সময়ে প্রকাশ্যে এল, যার কয়েক দিন আগে তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক জানান, আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটন পুনরায় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান উৎপাদন ব্যবস্থায় তুরস্কের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। বারাক এক পোস্টে লেখেন, ‘তুরস্কের এফ-৩৫ প্রোগ্রামে পুনরায় যোগদানের ইচ্ছা এবং তাদের কাছে থাকা রুশ নির্মিত এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’

তুরস্ক কখনোই এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নিজ বিমানবহরে যুক্ত করেনি, তবে ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার পর এই যুদ্ধবিমানের যৌথ উৎপাদন কর্মসূচি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল দেশটিকে। সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযান এবং গ্রিসের আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণে মার্কিন কংগ্রেস আগে থেকেই তুরস্কের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল এবং এই ক্রয়ের ফলে আঙ্কারার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

২০২০ সালে এক প্রতিরক্ষা বিলে সংশোধনীর মাধ্যমে তুরস্ককে এফ-৩৫ দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি নিশ্চিত করেন যে তুরস্কের কাছে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নেই, তাহলে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন ও তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতাও স্থবির হয়ে পড়ে।

রাশিয়ার কাছে এস-৪০০ ফেরত নেওয়ার অনুরোধ এরদোয়ানের আগের অবস্থান থেকে এক বড় ধরনের প্যারাডাইম শিফট। আগে তুরস্ক চেয়েছিল এস-৪০০ নিজের কাছেই রাখতে (হয়তো অকেজো অবস্থায়) এবং সেই সঙ্গে এফ-৩৫ ক্রয় করতে। বিশ্লেষকদের মতে, একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে তুরস্ক এস-৪০০ কোনো গুদামে রাখবে এবং এটি ব্যবহার করবে না, যা ন্যাটো পরিদর্শকেরা নিয়মিত যাচাই করবেন। এর আগে তুরস্ক এই ব্যবস্থা অন্য কোনো দেশে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ট্রাম্প সিরিয়ার ইস্যুতে এবং গাজায় হামাসকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রভাবের ওপর নির্ভর করছেন। মার্কিন থিংকট্যাংক ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট অ্যারন স্টেইন এর আগে বলেছিলেন, ট্রাম্প তুরস্কের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘এফ-৩৫-এর প্রধান গ্রাহক হলো তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব। ট্রাম্প তুরস্কের কাছে এফ-৩৫ বিক্রি করতে অত্যন্ত আগ্রহী। আমার ধারণা, তিনি প্রয়োজনে ইসরায়েলিদের আপত্তির বিরুদ্ধেও যেতে পারেন। ৪০টি জেটের অর্ডার অনেক বড় একটি বিষয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমুদ্র উপকূলে পাওয়া গ্যাস বিক্রি করে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র–আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল। ছবি: এএফপি

গাজার সমুদ্রতীরবর্তী গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ ব্যবহার করে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই উপত্যকার পুনর্গঠন কাজে ব্যয় করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত আলোচনা করেছে। সাবেক এক পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং বর্তমানে কর্মরত এক পশ্চিমা ও এক আরব কর্মকর্তা লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই আলোচনা বিভিন্ন আঙ্গিকে হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব হলো—আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডনক) গাজার এখনো ব্যবহৃত হয়নি এমন গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানায় অংশ নেবে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ গাজার পুনর্গঠনে ব্যয় করা হবে।

আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের আগেই যুক্তরাষ্ট্র গাজার যুদ্ধোত্তর যে পরিকল্পনা শুরু করেছিল, তার অধিকাংশের মতোই এখানেও কোনো চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তবে সাবেক ওই পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বরে গাজার গ্যাস থেকে অর্থ উপার্জনের ধারণাটি পুনরায় আলোচনায় আসে।

২০০০ সালে গাজার সামুদ্রিক এলাকায় গ্যাস আবিষ্কৃত হয়। এই গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের অধিকার দুটি প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সার্বভৌম তহবিল প্যালেস্টাইন ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এবং কনসোলিডেটেড কন্ট্রাক্টরস কোম্পানি। এটি একটি নির্মাণ ও জ্বালানি গোষ্ঠী, যার মালিক গ্রিসভিত্তিক এক প্রবাসী ফিলিস্তিনি পরিবার।

এই প্রকল্পের প্রায় ৪৫ শতাংশ মালিকানা একজন আন্তর্জাতিক অংশীদারের জন্য সংরক্ষিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলা এবং পরবর্তী যুদ্ধের আগে মিসর এই মালিকানায় অংশ নিতে আগ্রহী ছিল। জাতিসংঘ বর্তমান এই যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় গ্যাস বিশেষজ্ঞ এবং দ্য গাজা মেরিন স্টোরি বইয়ের লেখক মাইকেল ব্যারন বলেন, ‘প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক।’

ব্যারন যখন ১৫ বছর আগে এই প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, তখন গ্যাসক্ষেত্রটি উন্নয়নের খরচ ধরা হয়েছিল ৭৫ কোটি ডলার। এটি থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার আয় হওয়ার কথা ছিল, যার মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৫ বছর ধরে বছরে ১০ কোটি ডলার করে লভ্যাংশ পেত। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। এর উন্নয়ন পুনর্গঠন কাজে বড় অবদান রাখতে পারে।’

জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, গাজার পূর্ণ পুনর্গঠন খরচ অনেক বেশি—প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল এই উপত্যকাকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্নির্মাণের ধারেকাছেও নেই। বরং ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের ঘনিষ্ঠ একদল মার্কিন প্রতিনিধি ইসরায়েল-অধিকৃত গাজার অর্ধাংশে অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের একটি ছোট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

সাবেক পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, তিনি মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর উচ্চপদস্থ কূটনীতিকদের সাথে কথা বলেছেন। তারা সবাই গাজাকে বিভক্ত রাখার এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাটিও থমকে আছে, কারণ আরব ও মুসলিম দেশগুলো হামাস এবং ইসরায়েলি সেনাদের মাঝখানে পড়ে যাওয়ার ভয়ে সেনা পাঠাতে ইচ্ছুক নয়।

কাতার এবং সৌদি আরব গাজার পুনর্গঠনে অর্থায়ন করার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি জানিয়েছেন, অন্যরা যা ধ্বংস করেছে তা পুনর্নির্মাণের জন্য তারা চেক লিখবেন না। অন্যদিকে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে কোনো তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেননি।

এই পরিস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রধান উপসাগরীয় অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আবুধাবি বর্তমানে গাজায় বৃহত্তম মানবিক ত্রাণ দাতা।

ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং রুয়ান্ডা-কঙ্গো শান্তি চুক্তিকে যেভাবে ব্যবসায়িক লেনদেনের সাথে যুক্ত করেছে, গাজার ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক সম্পদ (গ্যাস) ব্যবহারের মাধ্যমে তারা একই পথে হাঁটতে চাইছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত