Ajker Patrika

ইউক্রেনের ৩৫ হাজার শিশুর হদিস নেই, অনুমান মার্কিন বিশেষজ্ঞদের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ১৮: ৩১
ইউক্রেন থেকে শিশুদের অপহরণ করে রুশ সৈন্যরা। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন থেকে শিশুদের অপহরণ করে রুশ সৈন্যরা। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় ৩৫ হাজার শিশুর কোনো হদিস নেই। এ দাবি করেছে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের একটি দল। তাঁদের ধারণা, এই ৩৫ হাজারেরও বেশি শিশুর এখনো রাশিয়া বা রুশ অধিকৃত অঞ্চলে আটকে রাখা হয়েছে। এদিকে শিশুদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সন্তানদের উদ্ধারে তাঁরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বাধ্য হচ্ছেন চরম ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয়। এ সময় ইউক্রেন থেকে শিশুদের অপহরণ করে রুশ সৈন্যরা। কখনো অনাথ আশ্রমগুলো থেকে, কখনো মৃত বাবা-মায়ের পাশ থেকে আবার কখনো পরিবারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে শিশুসন্তানকে।

এই জোরপূর্বক অপহরণ করে নেওয়া শিশুদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে রাশিয়া। চলতি মাসে তুরস্কে অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতির আলোচনায় এক রুশ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ইউক্রেন হারিয়ে যাওয়া শিশুদের নিয়ে নাটক করছে।

প্রায় ছয় মাস রাশিয়ার একটি ক্যাম্পে আটক থাকা দুই কিশোর ছেলেকে তাদের মা কীভাবে উদ্ধার করেছিলেন, সে নাটকীয় ঘটনা দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তের খেরসন শহর দখল করে নেয়। সেই শহরের বাসিন্দা নাতালিয়াকে তাঁর এক প্রতিবেশী ছেলেদের রাশিয়ার সমুদ্রের তীরবর্তী রিসোর্টের শহর আনাপার একটি শিশুশিবিরে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।

নাতালিয়া বলছিলেন, ‘২১ দিনের জন্য সেখানে থাকার কথা ছিল। কোনো খরচ দিতে হয়নি এর জন্য। কথা ছিল সফর শেষে তাঁর ছেলেরা খেরসনে ফিরে আসবে। ছেলেরাও শুনে আগ্রহী হয়েছিল। আর আমি যেতে অনুমতি দিয়েছিলাম, যা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।’

২০২২ সালের শেষের দিকে খেরসন মুক্ত করে ইউক্রেনের সেনারা। কিন্তু ফ্রন্টলাইনের অন্য পাশের ওই ক্যাম্পে এখনো নাতালিয়ার সন্তানরাসহ আরও কিছু শিশু রয়ে গিয়েছিল। রাশিয়া তাদের ফিরতে দিচ্ছিল না নিজ দেশে।

নাতালিয়া বলতে থাকেন, ‘ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ আমার শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া বাচ্চাদের ছাড়তে রাজি ছিল না। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না।’

অবশেষে, ইউক্রেনের একটি সংস্থার সহায়তায় নাতালিয়া দুই ছেলের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি একাই যাত্রা শুরু করেন। পাড়ি দেন সীমান্ত, পৌঁছান কৃষ্ণ সাগরের উত্তর উপকূলে রাশিয়ার আনাপা শহরে। পথে পার হতে হয় অসংখ্য সীমান্ত চৌকি, যেখানে বারবার রুশ সৈন্যদের জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। বারবার ব্যাখ্যা করতে হয় কেন তিনি রাশিয়ায় এসেছেন।

যুদ্ধের তুমুল গোলাগুলির মধ্যেই নাতালিয়া টানা ছয় দিন চলতে থাকেন ছেলেদের ফিরে পাওয়ার দৃঢ় মনোবলকে সঙ্গী করে। অবশেষে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর যাত্রার ইতি হয়। কাছে পান দুই সন্তানকে।

স্মৃতিচারণ করে নাতালিয়া বলেন, ‘আমার মনের অবস্থা কেমন ছিল সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না। আমার সন্তানেরাই আমার সবকিছু।’

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর থেকে অপহরণ হওয়া বা রাশিয়ায় থাকা ইউক্রেনীয় শিশুদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে ব্রিং কিডস ব্যাক নামের একটি সংগঠন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৩৬৬টি শিশু ইউক্রেনে ফিরে বা পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞদের একটি দল অনুমান করছে, রাশিয়া ও দেশটির অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে প্রায় ৩৫ হাজার শিশু আটক থাকতে পারে।

আশঙ্কা রয়েছে, এর মধ্যে অনেক শিশুকে রুশ বাহিনী সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠিয়েছে। আর কারও ঠাঁই হয়েছে সরকারি শিশু নিবাসে। আবার কারও নতুন জীবন শুরু হয়েছে রাশিয়ার কোনো পরিবারে সন্তান হিসেবে।

রুশ ডেটাবেস, সরকারি নথি, পারিবারিক সংযোগ এবং রুশ সাইট, সরকারি ভবন ও অন্যান্য উৎসের স্যাটেলাইট ইমেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুর পরিচয় নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা।

এই গবেষণা দলের সদস্য ইয়েলের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক নাথানিয়েল রেমন্ড বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্ভবত এটিই সবচেয়ে বড় শিশু অপহরণের ঘটনা। নাৎসিদের হাতে পোলিশ শিশুদের জার্মানিকরণের (Germanification) সঙ্গে এ ঘটনাকে তুলনা করা যায়।

সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া ইউক্রেনীয় শিশুদের কাছ থেকে জানা যায়, রুশ আর্মি ক্যাম্পগুলোতে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। মাতৃভাষায় কথা বললে তাদের শাস্তি দেওয়া হতো।

উদ্ধার হওয়া একটি ৯ বছর বয়সী শিশু জানায়, ‘আমাদের রুশ জাতীয় সংগীত গাইতে হতো। রাশিয়ার পতাকা আঁকতে হতো।’

অপহৃত শিশুদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে কাজ করা সংগঠন ইউক্রেনিয়ান চাইল্ড রাইটস নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন দারিয়া কাসিয়ানোভা বলেন, শিশুদের বোঝানো হতো, তারা যদি কথা না শোনে, তাহলে তাদের বাবা-মাকে এর জন্য ভুগতে হবে।

অ্যাকটিভিস্ট ও গবেষকদের মতে, ইউক্রেনীয় শিশুদের জোরপূর্বক স্থানান্তর ও অপহরণ নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের সময়ও তিনি একই ধরনের অপহরণ ও নির্বাসনের ঘটনা দেখেছেন বলে জানান কাসিয়ানোভা।

দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল থেকে তখন তিনি ৪০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে কাজ করেছিলেন, যার মধ্য ১২ হাজারই শিশু। কাসিয়ানোভা বলতে থাকেন, ‘আমার মেয়ের বয়স তখন ১১। সে ও তার বন্ধু পিছিয়ে পড়েছিল। তাদের তখন রুশ আর্মি ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

অ্যাকটিভিস্টদের আশঙ্কা, অপহৃত অনেক শিশুই রাশিয়ার নতুন দত্তক আইনের কারণে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। সেখানে সম্প্রতি আইনে পরিবর্তন এনে রুশ নাগরিকদের ইউক্রেনীয় শিশুদের দত্তক ও লালন-পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

কাসিয়ানোভা বলেন, ‘কখনো কখনো দেখা যায়, বাবা-মা ইউক্রেনে আর শিশু দখল করা অঞ্চলে। যদি সেই বাবা-মা মারা যান বা গ্রেপ্তার হন, তাহলে শিশুটি অনাথ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। তাকে অনাথ আশ্রমেও পাঠানো হতে পারে। আর যদি এটা হয়ে যায়, তাহলে সেই শিশুকে ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে তারা।’

ইয়েল ইউনিভার্সিটির অপহৃত শিশুদের ব্যাপারে তদন্ত করা দলের প্রধান নাথানিয়েল রেমন্ড বলেন, ‘এই শিশুদের জোরপূর্বক নির্বাসনের নথিভুক্ত করা জরুরি। এক জাতি বা দেশের শিশুকে নিয়ে অন্য জাতি বা দেশের অংশ করে তোলার চেষ্টা করা যুদ্ধাপরাধ।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও (আইসিসি) এ বিষয়ে একমত। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তাঁরা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় শিশুদের বেআইনিভাবে নির্বাসনের ‘যুদ্ধাপরাধের’ অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এই শিশুদের ফিরিয়ে আনা এখন শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান দাবি। ইউক্রেনীয় দাতব্য সংস্থা হেল্পিং টু লিভের বিশেষজ্ঞ ক্সেনিয়া বলেন, ‘আমরা ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু আমাদের জনগণ, আমাদের শিশু, তারাই তো আমাদের ভূখণ্ড। আমরা তাদের কীভাবে ছেড়ে দিতে পারি?’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাদের সন্তান, ইউক্রেনের সন্তান। তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ওপর রাশিয়ার কোনো অধিকার নেই।’

এখন দর-কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে এই শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করেন রেমন্ড। তিনি বলেন, রাশিয়ানরা যখন এই সংঘাত শুরু করেছিল, তারা ভেবেছিল দ্রুত জয় আসবে। তখন এই অপহরণ শুরু হয়েছিল শিশুদের ব্যবহার বা দখলে রাখার জন্য নয়, বরং ইউক্রেনকে ‘রুশীকরণ’ (Russification) করার জন্য।

রেমন্ডের মতে, ‘যখন যুদ্ধের পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকল, তখন তারা কৌশল পাল্টে ফেলল। এখন এই শিশুদের জিম্মি করে আলোচনায় সুবিধা নিতে চায় রাশিয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল

দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে—অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার কবলেও পড়েছিলেন। তবে সৌভাগ্য এই যে, দুই ঘটনায়ই তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন!

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে আহত অস্ত্রোভস্কি একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী। রক্তে ভেজা শরীর ও ব্যান্ডেজে মোড়ানো অবস্থায় তিনি অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। চারদিকে শিশু, বৃদ্ধ, পরিবার—সবাই আনন্দ করছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। চারদিকে গুলির শব্দ, মানুষ দৌড়াচ্ছে, লুকোচ্ছে—পুরো জায়গা জুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক।’

অস্ত্রোভস্কি জানান, কোন দিক থেকে গুলি আসছিল, তা কেউ বুঝতে পারছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি এক বন্দুকধারী চারদিকে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। শিশুদের মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছি, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের আহত হতে দেখেছি—এটা ছিল এক রক্তাক্ত বিভীষিকা।’

অস্ত্রোভস্কি এটাও জানান, তিনি ১৩ বছর ইসরায়েলে ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। তাঁর ভাষায়, ‘সেই ঘটনার পর আবার এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। কখনো ভাবিনি অস্ট্রেলিয়ায়, তাও আবার বন্ডাই বিচের মতো জায়গায় এমন কিছু ঘটবে।’

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকা উদ্‌যাপনের সময় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ‘চানুকাহ বাই দ্য সি’ নামে একটি অনুষ্ঠানের মাঝেই এই হামলা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পবেল প্যারেড এলাকায় একটি গাড়ি থেকে নেমে দুই সশস্ত্র ব্যক্তি এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যেই উৎসবের আনন্দ রূপ নেয় বিভীষিকায়। পর্যটন এলাকা জুড়ে একের পর এক গুলির শব্দ শোনা যায়।

ঘটনাস্থলে বহু মানুষকে আহত অবস্থায় ঘাসের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের একজনকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অপরজন আহত অবস্থায় আটক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৩
বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন এক পথচারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই পথচারী হাজারো মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা ওই পথচারী পার্কিং লট থেকে দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এরপর তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

অকস্মাৎ পেছন থেকে জাপটে ধরায় হামলাকারী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পিছু হটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পথচারীর এমন সাহসী পদক্ষেপে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

যদিও ওই পথচারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাহসিকতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো (একজন সাধারণ বেসামরিক) হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন। কেউ কেউ সাহসী আর কেউ কেউ...এই ধরনের।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘এই অস্ট্রেলিয়ান বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসীদের একজনকে নিরস্ত্র করে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছেন। হিরো।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স এটিকে তাঁর দেখা ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই লোকটি একজন প্রকৃত হিরো। তিনি নির্ভয়ে হামলাকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করলেন এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করলেন। আমি নিশ্চিত যে, ওই ব্যক্তির সাহসিকতার জন্যই অনেক মানুষ বেঁচে আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও হামলার সময় অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নাগরিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই অস্ট্রেলীয়রা বিপদেও ছুটে গেছেন অন্যদের রক্ষা করতে। তাঁদের সাহসিকতাই অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

উল্লেখ্য, গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১২ জন নিহত বলে জানা গেছে। দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৬
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে শান্তি আলোচনার পথ সুগম করতে গিয়ে ন্যাটো জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জার্মানির বার্লিনে বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি জানান—ন্যাটো সদস্যপদের বদলে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে সেটিকে একটি সমঝোতা হিসেবে বিবেচনা করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ন্যাটো সদস্যপদ, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর গ্যারান্টি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই পথে সমর্থন না দেওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে। তাঁর ভাষায়—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘আর্টিকেল ফাইভ’-এর মতো প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হতে হবে।

এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। কারণ দেশটির সংবিধানেই ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে এটি রাশিয়ার যুদ্ধলক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রুশ বাহিনী। তবে বর্তমানে তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের দখলও নিতে চাইছে। তবে মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছাড় না দিতে এখনো অনড় রয়েছে ইউক্রেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে হবে এবং সেখানে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের চাপের মুখে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বার্লিনে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রায় চার বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের অবসানে অগ্রগতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন—ইউক্রেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে একটি ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যার শেষ ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, ইউক্রেন সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে না।

ইউরোপীয় মিত্ররা এই সময়টিকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি ‘সংকটজনক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছে। একই সঙ্গে রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, তাপ ও পানিসেবা অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানবিক সংকটও গভীর হচ্ছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে ইউক্রেনের জনগণের ওপর সর্বোচ্চ ক্ষতি চাপিয়ে দিতে চাইছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় সংঘটিত এই হামলায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তবে ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা অন্তত দুই শিক্ষার্থীর কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগেও তাঁরা স্কুল জীবনে এই ধরনের গোলাগুলির মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী মিয়া ট্রেটা এবং ২০ বছর বয়সী জোয়ে ওয়েইসম্যান—দুজনেই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা হলো—এই দেশ কীভাবে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে দিল?’

শনিবার কালো পোশাক পরা এক বন্দুকধারী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে গুলি চালানো শুরু করলে ক্যাম্পাসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শত শত পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ওয়েইসম্যান তখন নিজের ডরমিটরিতেই ছিলেন। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণ চলছে। প্রথমে ভয় পেলেও সেই আতঙ্ক দ্রুত ক্ষোভে রূপ নেয়। এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আট বছর পর আবারও সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজের মিডল স্কুলের পাশের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ শুটিং প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওয়েইসম্যান। ওই ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিয়া ট্রেটা ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সগাস হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করে, যাদের একজন ছিলেন ট্রেটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গুলিতে ট্রেটার পেট গুরুতরভাবে জখম হয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার সময় নিজের ডরমিটরিতে পড়াশোনা করছিলেন ট্রেটা। তিনি মূলত যে ভবনে হামলাটি ঘটে সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত বোধ করায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—যা কার্যত তার প্রাণ বাঁচায়।

এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৯টি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০-এর বেশি।

ট্রেটা ও ওয়েইসম্যান দুজনই বলছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি দ্বিতীয়বার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে বোঝাতাম—পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আর কেউই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত