Ajker Patrika

বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল যান চলাচল প্রটোকলের খসড়া চূড়ান্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৭: ৪২
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল যানবাহন চলাচলে একটি প্রটোকলের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল যানবাহন চলাচলে একটি প্রটোকলের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচলের জন্য স্বাক্ষরিত মোটর ভেহিকেলস অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ)।

চুক্তি স্বাক্ষরের এক দশক পরে এই চার দক্ষিণ এশীয় দেশ যান চলাচল নিশ্চিতে একটি প্রটোকলের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের প্রটোকল এটিই প্রথম। মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্ট ছাড়াও বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল) দেশগুলো আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য আন্তসংযুক্ত গ্রিডের পরিকল্পনাও করছে।

বিবিআইএন-এমভিএর লক্ষ্য হলো যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের মাধ্যমে আন্ত-আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ জোরদার করার ক্ষেত্রে বাধা দূর করা।

বিবিআইএন দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো। তবে এই কাঠামো এখনো সুপ্ত। ভারত-পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বৈরিতার কারণে সার্ক এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনো শীর্ষ সম্মেলন করতে পারেনি।

কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, সম্প্রতি ভারতের বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট-সুবিধা বাতিল করার সিদ্ধান্ত এই চার দেশের মধ্যে এমভিএ বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী, ভারতের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী এবং নেপালের ভৌত অবকাঠামো ও পরিবহনমন্ত্রী ২০১৫ সালের ১৫ জুন ভুটানের থিম্পুতে বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্টে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। এই চুক্তি দেশগুলোর ভূখণ্ডের মধ্যে দ্রুত ও সুলভে পণ্য ও মানুষ যাতায়াতে সহায়তা করবে। প্রটোকলটির আওতায় একটি পাইলট প্রকল্প চালুর কথাও বলা হয়েছে।

প্রটোকল অনুযায়ী, ভুটান ছাড়া অন্য তিন দেশ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেবে। পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল অনুমোদনের অধীনে হালকা বাণিজ্যিক যানবাহন (৭ হাজার ৫০০ কেজি পর্যন্ত), মাঝারি বাণিজ্যিক যানবাহন (৭ হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার কেজি) এবং ভারী বাণিজ্যিক যানবাহন (১২ হাজার কেজির বেশি)—এই তিন শ্রেণি চালু করা হবে।

প্রটোকল চূড়ান্ত করার জন্য ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পরীক্ষামূলক চলাচল (ট্রায়াল রান) অনুষ্ঠিত হয়।
এতে যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যানবাহনের মসৃণ চলাচল সম্ভব বলেই প্রতীয়মান হয়।

২০১৫ সালের নভেম্বরে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রুটে (৬০০ কিলোমিটার) পণ্যবাহী যানবাহনের পরীক্ষামূলক চলাচল; ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে (১ হাজার ৭৮০ কিলোমিটার) এবং ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে ভারত হয়ে কাঠমান্ডু পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস পরীক্ষামূলক চলাচল করে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির মতে, প্রস্তাবিত পরীক্ষামূলক রুটের মধ্যে রয়েছে নেপাল ও ভারতের মধ্যে কাঠমান্ডু-ভৈরব-সুনৌলি-লক্ষ্ণৌ-কানপুর-নয়াদিল্লি এবং কাঠমান্ডু-বীরগঞ্জ-রাক্সৌল-কলকাতা।

নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পরীক্ষামূলক রুট হিসেবে কাঠমান্ডু-কাঁকরভিটা-পানিতানকি-শিলিগুঁড়ি-ফুলবাড়ী-বাংলাবান্ধা-মোংলা/চট্টগ্রাম রুট প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্মকর্তারা ২০২২ সালের মার্চ মাসে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করেন এবং মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সম্মত হন। সেই সঙ্গে তাঁরা আরও পরীক্ষামূলক চলাচল আয়োজনের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি এডিবির কাছে সেই পরীক্ষামূলক চলাচলে সহায়তার অনুরোধ জানান। পরে এডিবি এমভিএর ধারণাপত্রের ভিত্তিতে একটি পদ্ধতি প্রস্তাব করে।

বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে অথবা কেবল দুটি দেশের মধ্যে পরীক্ষামূলক চলাচল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভুটান বিবিআইএন-এমভিএতে স্বাক্ষর করেছে এবং প্রটোকলে সম্মতিও জানিয়েছে, কিন্তু তারা পরীক্ষামূলক চলাচলে অংশ নেয়নি।

এডিবির তৈরি করা এশিয়ান হাইওয়ে করিডর বিবিআইএন-এমভিএ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এডিবি রুট সমন্বয় (রুটভিত্তিক উৎস-গন্তব্য বিশ্লেষণ) ; রুট চিহ্নিতকরণ; ফি নির্ধারণ; আন্তসীমান্ত যানবাহন বিমা এবং নেপালের জন্য বিবিআইএন প্রভাব সমীক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নেপাল সরাসরি চারটি ভারতীয় বন্দর—কলকাতা, হলদিয়া, বিশাখাপত্তম ও মুন্দ্রার সঙ্গে যুক্ত হবে।

এডিবি চ্যালেঞ্জ হিসেবে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর মধ্যে দুর্বল সমন্বয়ের কথাও উল্লেখ করেছে।

তবে অংশীজনেরা চুক্তি বাস্তবায়নের পর নেপালে ভারত ও বাংলাদেশের যানবাহন প্রবেশের ব্যাপক বৃদ্ধি আশা করছেন।

প্রটোকলটিতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া; চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের তদন্ত ও প্রতিরোধের জন্য সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রটোকলের খসড়া অনুসারে, স্বাক্ষরকারীরা চুক্তি স্বাক্ষরের দুই বছরের মধ্যে চুক্তির অধীনে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর কার্যকর ট্র্যাকিংয়ের জন্য উপযুক্ত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারসহ একটি ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করবে। দেশগুলো যানবাহন ও পণ্য চলাচল পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে জন্য একটি সাধারণ (যৌথ) ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করবে।

যানবাহনের ক্রুদের (চালক, সহকারী ইত্যাদি) অবশ্যই স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর নাগরিক হতে হবে। তাঁরা বৈধ পাসপোর্ট বা অন্যান্য নথির ভিত্তিতে ভ্রমণ করবেন। আন্তসীমান্ত ভ্রমণের জন্য ভিসার প্রয়োজন হলে, চালক ও সহকারীদের ভিসার আবেদনের সঙ্গে চুক্তির সংযুক্তি-৩ অনুযায়ী ইস্যু করা তাঁর ক্রু আইডেনটিটি কার্ডের কপি জমা দিতে হবে। আবেদনকারীকে তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্সের একটি কপিও জমা দিতে হবে। ক্রু আইডেনটিটি কার্ড কাগজের ফরমে বা স্মার্ট কার্ড হিসেবে ইস্যু করা হবে।

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা হিসেবে, চুক্তির বাস্তবায়ন, সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণের জন্য এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত সচিবের সভাপতিত্বে একটি স্থায়ী জাতীয় স্থল পরিবহন সুবিধা কমিটি বা অনুরূপ সংস্থা গঠন করা হবে।

চুক্তির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা এবং বিরোধের বন্ধুত্বপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করার জন্য একটি যৌথ স্থল পরিবহন সুবিধা কমিটি গঠন করা হবে। অনুরূপভাবে, প্রটোকল অনুযায়ী মোটর যানবাহনের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কাস্টমস উপ-গ্রুপ গঠন করা হবে। প্রটোকলে চুক্তি স্থগিত, প্রত্যাহার, পর্যালোচনা ও সংশোধনের বিধানও রাখা হয়েছে।

আরও খবর পড়ুন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত