Ajker Patrika

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ দ্বীপ

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ২৪
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ দ্বীপ

এই বিশ্বে দ্বীপের অভাব নেই। তবে আকারে বড় দ্বীপের সংখ্যা খুব বেশি নয়। কয়েক হাজার দ্বীপ মিলিয়ে গড়ে উঠেছে এমন দেশও যেমন আছে; আবার একটি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এমন দেশও আছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ কোনটি, তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। দ্বীপের সংজ্ঞা বিবেচনা করলে অস্ট্রেলিয়াও একটি দ্বীপ হওয়ার কথা। কারণ কোনো ধরনের ভূভাগের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এর। তবে একে একটি মহাদেশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তাই আমাদের তালিকায় থাকছে না এটি। চলুন তবে পরিচিত হওয়া যাক আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ দ্বীপের সঙ্গে।

আয়তনে বিশাল হলেও গ্রিনল্যান্ডের জনসংখ্যা মোটে ৫৫ হাজার। ছবি: উইকিপিডিয়াগ্রিনল্যান্ড
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের আয়তন ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬ বর্গকিলোমিটার। ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের অন্তর্গত গ্রিনল্যান্ডের অবশ্য অভ্যন্তরীণ বিষয় দেখভালের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকার আছে। 

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ও আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত এলাকাটি মহাদেশের মর্যাদা না পাওয়ার একটি কারণ হতে পারে এর জনসংখ্যা। আয়তনে বিশাল হলেও এর জনসংখ্যা মোটে ৫৫ হাজার। তাদের বেশির ভাগই ইনুইট আদিবাসী। শীতল এলাকায় বাস করা এই জাতিগোষ্ঠীর মানুষের দেখা মেলে কানাডা ও আলাস্কায়। ইনুইটরা এস্কিমো নামেও পরিচিত।

গ্রিনল্যান্ডের বেশির ভাগ অংশজুড়েই আছে হিমবাহ। মেরু এলাকার বাইরে এত বিশাল সব হিমবাহ পাবেন না আর কোথাও। দ্বীপটির প্রধান শহরগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এমন কোনো সড়কও পাবেন না। মাছ ও সিল ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন এখানকার অধিবাসীদের বড় একটি অংশ। বিভিন্ন দেশের মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান নর্থইস্ট গ্রিনল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক দর্শনে যান।

প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে নিউগিনির বড় একটি এলাকাজুড়ে গহিন অরণ্য। ছবি: উইকিপিডিয়ানিউগিনি
৮ লাখ ২১ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটারের বিশাল এই দ্বীপ পড়েছে দুই দেশের সীমানায়। এগুলো হলো ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউগিনি। বছরে ৩০০ ইঞ্চির বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে এখানে গভীর অরণ্য এবং নানা জাতের বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে। তবে সে তুলনায় জনসংখ্যা কম।

৪০ হাজার বছরেরও বেশি আগে এখানে প্রথম মানব বসতি গড়ে ওঠে বলে ধারণা করা হয়। তামা ও সোনার বিশাল মজুতের জন্য সাগর পেরিয়ে বারবারই এখানে অনুসন্ধান চালাতে এসেছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। 

সবচেয়ে বড় দ্বীপের তালিকায় বোর্নিওর অবস্থান তিনেবোর্নিও
সবচেয়ে বড় দ্বীপের তালিকায় বোর্নিওর অবস্থান ৩–এ। এর আয়তন ৭ লাখ ৪৮ হাজার ১৬৮ বর্গকিলোমিটার। এটি বিশ্বের একমাত্র, দ্বীপ যা অঞ্চলভেদে নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি দেশ— ব্রুনেই, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।

গভীর অরণ্যে আচ্ছাদিত দ্বীপটিতে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেখা মেলে। যেমন: বোর্নিও ওরাংওটাং এবং দায়াক ফলখেকো বাদুড়ের দেখা মিলবে শুধু এই দ্বীপেই। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে আছে— সান্দ্রা মেঘলা চিতা ও বোর্নিও পিগমি হাতি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের ফুলের দেখা মেলে দ্বীপটিতে। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো চিরসবুজ বন, যা ১০ কোটি বছরের পুরোনো, বাড়িয়েছে জায়গাটির মর্যাদা।

অরণ্যময় এলাকা হিসেবে বোর্নিও দ্বীপের জনসংখ্যা একেবারে কম নয়। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ জানাচ্ছে, দ্বীপে বাস ২ কোটি ১২ লাখ ৫৮ হাজার মানুষের।

৪০ জাতের লেমুরের বাস মাদাগাস্কারেমাদাগাস্কার
বিচিত্র সব বন্যপ্রাণী ও গাছপালার জন্য বিখ্যাত মাদাগাস্কার দ্বীপের অবস্থান বৃহত্তম দ্বীপের তালিকায় ৪–এ। এর আয়তন ৫ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখের মতো।

আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে ভারত মহাসাগরের মাঝখানে এ দ্বীপের অবস্থান। প্রায় আড়াই লাখ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাস এখানে। মজার ঘটনা, এগুলোর তিন ভাগের দুই ভাগই পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। পৃথিবীতে যে ৪০ প্রজাতির লেমুর আছে, এর সবগুলোই আছে মাদাগাস্কারে। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, লেমুর হলো গাছে বাস করা লোমশ একধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী। মানুষ ও বানরের মতো এরাও প্রাইমেট বর্গের।

মাদাগাস্কারের প্রবাল রাজ্যও মুগ্ধ করে মানুষকে। ভারত মহাসাগরের উষ্ণ জলে সাঁতার কাটা এবং প্রবালের অসাধারণ সৌন্দর্য দেখার জন্য পর্যটক ও ডুবুরিদের প্রিয় জায়গা এটি। 

 বাফিন দ্বীপে বরফে ঢাকা দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সামুদ্রিক খাঁড়ি। ছবি: উইকিপিডিয়া বাফিন
উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডার সবচেয়ে বড় দ্বীপ বাফিন বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপের তালিকায় আছে ৫–এ। আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপটির আয়তন ৫ লাখ ৭ হাজার ৪৫১ বর্গকিলোমিটার।

সতেরো শতকের ব্রিটিশ অভিযাত্রী উইলিয়াম বাফিনের নামে নামকরণ করা দ্বীপটি পড়েছে উত্তর কানাডার নুনাভাট অঞ্চলে। উপকূলীয় কিছু ছোট গ্রাম ছাড়া মোটামুটি জনবসতিহীন এলাকা এটি। দ্বীপের মোট জনসংখ্যা ১৩ হাজারের কিছু বেশি।

সামুদ্রিক খাঁড়ি, স্বাদু পানির হ্রদ ও হিমবাহে ভরপুর জাতীয় উদ্যান মিলিয়ে জায়গাটি দেখার মতো! তবে চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর কারণে দ্বীপটি মানুষের বসবাসের জন্য বৈরী। এখানকার গড় বার্ষিক তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

আর্কটিক সার্কেলের কাছেই এই দ্বীপের অবস্থান। এ কারণে নর্দার্ন লাইট, আর্কটিক নেকড়ে, মেরু ভালুক দেখার জন্য এখানে পাড়ি জমান কোনো কোনো পর্যটক।

বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম দ্বীপ সুমাত্রার আয়তন ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬ বর্গকিলোমিটারসুমাত্রা
বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম দ্বীপ সুমাত্রার আয়তন ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬ বর্গকিলোমিটার। এটি এমন এক জায়গায় অবস্থিত, যেখানে ইন্দো–অস্ট্রেলিয়ান ও ইউরেশিয়ান টেকটনিক প্লেট একটি আরেকটিকে অতিক্রম করে গেছে। এ কারণে এখানে ভূমিকম্প ও সুনামি বলতে গেলে স্বাভাবিক ঘটনা!

বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্যের জন্য নাম আছে সুমাত্রা দ্বীপের। সুমাত্রা বাঘ, সুমাত্রা গন্ডার ও সুমাত্রা ওরাংওটাং এখানকার উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী। জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি না হলেও অরণ্য এলাকা হিসেবে একেবারে কমও নয়। দ্বীপটিতে ৬ কোটির মতো মানুষের বাস।

জাপানের হনশু দ্বীপের স্যাটেলাইট চিত্র। ছবি: নাসাহনশু
জাপানের মূল চারটি দ্বীপের মধ্যে বৃহত্তম হনশু। জাপান সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত হনশুর আয়তন ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৮ বর্গকিলোমিটার। 

গোটা জাপানের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে থাকা হনশু দ্বীপের মধ্যে পড়েছে টোকিও, হিরোশিমা ও ওসাকার মতো বিখ্যাত শহর। দ্বীপটিতে ১০ কোটি ৩০ লাখের মতো মানুষের বাস। জাপানের উচ্চতম পর্বত মাউন্ট ফিজি এবং সবচেয়ে বড় হ্রদ বিওয়ার অবস্থানও এই দ্বীপে।

ভিক্টোরিয়া দ্বীপের স্যাটেলাইট চিত্র। ছবি: নাসাভিক্টোরিয়া
২ লাখ ১৭ হাজার ২৯১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভিক্টোরিয়া কানাডীয় আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে অবস্থিত। এই দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত দ্বীপগুলোর মধ্যে এর চেয়ে বড় কেবল বাফিন দ্বীপ। 

রানি ভিক্টোরিয়ার নামে নামকরণ করা দ্বীপটির স্থায়ী জনসংখ্যা ২ হাজারের কিছু বেশি। আর্কটিক অভিযাত্রী টমাস সিম্পসন ১৮৩৮ সালে দ্বীপটি আবিষ্কার করেন।

গ্রেট ব্রিটেনের ক্যান্টারবারি ক্যাথেড্রালগ্রেট ব্রিটেন
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস—এই তিন দেশ নিয়ে গ্রেট ব্রিটেন। দ্বীপটির আয়তন ২ লাখ ৯ হাজার ৩৩১ বর্গকিলোমিটার। ইউনাইটেড কিংডমের অন্তর্গত দ্বীপটি। এটি বিশ্বের নবম বৃহত্তম এবং ইউনাইটেড কিংডমের (যুক্তরাজ্য) সবচেয়ে বড় দ্বীপ।

ইউরোপের বৃহত্তম এই দ্বীপকে মহাদেশের মূল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ইংলিশ চ্যানেল ও উত্তর সাগর। দ্বীপটির পুরোনো ইতিহাসের চিহ্ন পাবেন স্টোনহেঞ্জ ও মধ্যযুগীয় সব দুর্গে। ইউরোপের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা গ্রেট ব্রিটেনের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৯০ লাখের বেশি।

এলেসমেরের বেশির ভাগ এলাকাজুড়েই ঢেউ খেলানো পাহাড় আর বরফের রাজত্বএলেসমেরে
তালিকায় ১০–এ থাকা দ্বীপ এলেসমেরের আয়তন ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৩৬ বর্গকিলোমিটার। কানাডীয় আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত এই দ্বীপটির নামকরণ হয় ১৮৫২ সালে, এলেসমেরর প্রথম আর্ল ফ্রান্সিস এগারটনের প্রতি সম্মান জানিয়ে। ধারণা করা হয়, দশম শতাব্দীতে ভাইকিংরা দ্বীপটিতে আসেন।

দুর্গম ভূপ্রকৃতি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে জায়গাটিতে বাস করা কঠিন। মাত্র ১৪৪ জন মানুষের বাস কানাডার নুনাভাট অঞ্চলের অন্তর্গত এই দ্বীপে। বাফিন উপসাগর ও আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত এলেসমেরের বেশির ভাগ এলাকাজুড়েই ঢেউ খেলানো পাহাড় আর বরফের রাজত্ব। 

সূত্র: ব্রিটানিকা, ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ, ট্যুরোপিয়া, উইকিপিডিয়া, ট্রাভেল ডট আর্থ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়ার, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।

গত বছর রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার সিঙ্ক্রো ইভেন্টে সোনা জেতেন ইউক্রেনীয় ডাইভার সোফিয়া লাইসকুন (২৩)। তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর তাঁকে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হলো। ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশন (ইউডিএফ) ফেডারেশনের অধীনে পাওয়া তাঁর সমস্ত খেতাব, পদক ও পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ইউডিএফ জানিয়েছে, লাইসকুন দেশের ক্রীড়া মহলের কোনো পক্ষকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ দলবদলের বিষয়ে ফেডারেশন, কোচিং স্টাফ এমনকি ইউক্রেনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও অবগত করেননি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত দলবদলের ঘটনায় ফেডারেশন ‘তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা’ জানিয়েছে।

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে: ‘এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এগুলো জাতীয় দল এবং ইউক্রেনের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যে মুহূর্তে পুরো ইউক্রেনীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করছে, ঠিক তখনই একজন চ্যাম্পিয়নের এমন পদক্ষেপ পুরো প্রচেষ্টাকেই হেয় করে।’

ইউক্রেনীয় ফেডারেশনের এই সমালোচনার বিপরীতে লাইসকুন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে তিনি তাঁর কোচদের অধীনে আর পেশাদারভাবে ‘উন্নতি’ করতে পারছিলেন না।

লাইসকুন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউক্রেনীয় কোচিং স্টাফে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ‘সবাই জিমন্যাস্ট বা ট্রাম্পোলিন ক্রীড়াবিদ ছিলেন’, এটি আন্তর্জাতিক ডাইভিং-এর মতো বিশেষায়িত খেলার জন্য অনুকূল ছিল না। তাঁর মতে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অভাবই তাঁকে দলবদলে উৎসাহিত করেছে।

লাইসকুনের দলবদলের পর ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইউক্রেন জাতীয় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, ফেডারেশনের অধীনে সোফিয়া লাইসকুনের অর্জিত সমস্ত খেতাব ও পুরস্কার বাতিল করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে, যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদের ওপর ‘স্পোর্টস কোয়ারেন্টাইন’ আরোপ করা হয়। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন চাচ্ছে, লাইসকুন যেন কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর রাশিয়া এবং বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিক্স ইভেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ ছিল। তবে সেই বিধিনিষেধগুলো সম্প্রতি শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে রুশ এবং বেলারুশীয় ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জাতীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁরা দলগত ইভেন্টেও নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। লাইসকুন-এর এই দলবদল এমন এক সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার ক্রীড়াবিদেরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন বাহিনীর প্রধান হয়েই পাকিস্তানকে ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছানোর ঘোষণা আসিম মুনিরের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৬
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছেন, পাকিস্তান এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আওয়াইন-ই-সদরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিম মুনির বলেন, ‘সবই তো ঠিক আছে, আপনাদের চোখের সামনেই তো সব। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, আর এখন থেকে পাকিস্তান আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।’ তাঁর এই মন্তব্য এল ঠিক এমন এক সময়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি নোট প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাতে সেনাপ্রধান মুনিরকে পাকিস্তানের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। এরপরই প্রেসিডেন্ট এই অনুমোদন দেন।

সত্তরের দশকের পর দেশটির সামরিক কমান্ডে এটি হলো সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই নিয়োগে অনুমোদন দেন। খবর দ্য ডনের

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাপ্রধানের (সিওএএস) সঙ্গে সমান্তরালভাবে সিডিএফ হিসেবেও নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন।’ এই বিবৃতি বহুদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই প্রেসিডেন্টকে এই নতুন দ্বৈত দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সেনাবাহিনীর প্রধান এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।’

এই নতুন ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীতে ২৪৩ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে একটি অফিসের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও কৌশলগত ক্ষমতাকে একত্র করা হয়েছে। সংশোধিত ২৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করবেন, যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবেও কাজ করবেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু থাকা তিন বাহিনীর সমন্বয় ব্যবস্থা—চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) অফিস বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে যৌথ কমান্ডের ইন্টিগ্রেশন সিডিএফের হাতে চলে এল।

সাংবিধানিক এই আমূল পরিবর্তনকে সামরিক বাহিনীর আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকার ২৭তম সংশোধনীর পরপরই ১৯৫২ সালের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টেও (পিএএ) সংশোধন আনে। পিএএর ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (১) এখন জানাচ্ছে, ‘প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর প্রধান যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হবেন [...], তাঁর মেয়াদ এই ধারার অধীনে ওই পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই প্রথম সিওএএসসহ-সিডিএফের বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের বিদ্যমান মেয়াদ ওই বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (৩) অনুযায়ী, সিওএএস যিনি একই সঙ্গে সিডিএফেরও দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর ‘শর্তাবলি ও নিয়ম’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট স্থির করবেন।

ফিল্ড মার্শাল মুনির ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার পিএএ-তে পরিবর্তন আনে, যেখানে সিজেসিএসসির মেয়াদ তিন বছর অপরিবর্তিত রেখে বাকি তিন বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। একই সংশোধনীতে সার্ভিস চিফদের পুনর্নিয়োগ বা তাঁদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ায় ইউরোভিশন বয়কট ৪ দেশের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি গায়িকা ইউভাল রাফায়েল। ছবি: এএফপি
ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি গায়িকা ইউভাল রাফায়েল। ছবি: এএফপি

আগামী বছরের অর্থাৎ, ২০২৬ সালের ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা বয়কট করবে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও স্লোভেনিয়া। কারণ আয়োজকেরা ইসরায়েলকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দিয়েছে। দেশগুলোর অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালানো ইসরায়েলকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া ঠিক হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধ এবং নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে এসব দেশ ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার দাবি করেছিল। জেনেভায় এক বৈঠকে গোপন ভোটের দাবি তোলে স্পেনের সম্প্রচার সংস্থা আরটিভিই। তারা জানায়, আয়োজনকারীরা সেই দাবি মানেনি। এতে উৎসবের প্রতি তাদের অবিশ্বাস আরও বেড়েছে।

আয়ারল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম আরটিই জানায়, গাজার ভয়াবহ প্রাণহানি এবং চলমান মানবিক সংকটের সময়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। স্পেন ইউরোভিশনের ‘বিগ ফাইভ’ দেশের একটি। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে স্পেনের শিল্পীরা সরাসরি ফাইনালে ওঠে। কারণ এসব দেশের সম্প্রচার সংস্থা ইবিইউকে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রায় ৫০টি সম্প্রচার সংস্থা—যার মধ্যে বিবিসিও আছে—ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের (ইবিইউ) বৈঠকে যোগ দেয়। প্রতিবছর ১৫ কোটির বেশি দর্শক এই প্রতিযোগিতা দেখে, তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। ইসরায়েল তাদের অংশগ্রহণকারী ইউভাল রাফায়েলের পক্ষে ভোট বাড়াতে অন্যদের সাহায্য নিয়েছে, এমন অভিযোগের পর সরকার ও তৃতীয় পক্ষের প্রভাব ঠেকাতে নতুন নিয়মে সম্মতি চাইছিল ইবিইউ।

বিবিসি জানায়, এই নিয়ম মানার ভোটের সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। সদস্যরা রাজি হলে ইসরায়েলকে নিয়ে আর কোনো ভোট হবে না। ইবিইউ জানায়, যারা নতুন নিয়ম মানতে সম্মত, তারা ইউরোভিশন ২০২৬-এ অংশ নিতে পারবে। ইউরোভিশন পরিচালক মার্টিন গ্রিন বলেন, সদস্যরা ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে খোলামেলা বিতর্কের সুযোগ পেয়েছে। ভোটে দেখা গেছে, অধিকাংশই চায় এই প্রতিযোগিতা রাজনৈতিক মঞ্চ না হোক, নিরপেক্ষতা বজায় থাকুক।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এটি সংহতি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতীক। ইসরায়েল বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার যোগ্য। ইসরায়েলের সম্প্রচার সংস্থা কান–এর প্রধান গলান ইয়োখপাজ বলেন, ইসরায়েলকে সরাতে চাওয়া সংস্কৃতিগত বয়কট ছাড়া কিছু নয়। আজ বয়কট শুরু হলে কাল অন্যদেরও ক্ষতি হতে পারে। ইউরোভিশনের ৭০ তম বছরে কি এমন স্মৃতি আমরা চাই?

যুক্তরাজ্যে ইউরোভিশন দেখায় বিবিসি। তারা জানায়, ইবিইউর নিয়ম কার্যকরে তারা সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। তবে এই সিদ্ধান্ত ইউরোভিশন সম্প্রদায়ের ভেতর বড় বিভাজন তৈরি করেছে। ডাচ সম্প্রচার সংস্থা অ্যাভরোট্রস জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণ তাদের মূল মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না।

স্পেনের আরটিভিই জানায়, গত সেপ্টেম্বরেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল—ইসরায়েল থাকলে স্পেন ইউরোভিশন থেকে সরে দাঁড়াবে। এই কারণে ২০২৬ সালের ফাইনাল ও সেমিফাইনাল তারা সম্প্রচারও করবে না। স্লোভেনিয়ার আরটিভিও জানায়, তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। নিয়ম বদলালেও মত বদলায়নি। ন্যায়নীতি রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। বেলজিয়ামের সম্প্রচার সংস্থা বলেছে, তারা কয়েক দিনের মধ্যে অবস্থান জানাবে।

অন্যদিকে নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ডসহ নর্ডিক দেশগুলো নিয়ম সংশোধনকে সমর্থন করেছে। তবে আইসল্যান্ড এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। জার্মানি, যারা আগে বলেছিল ইসরায়েল বাদ গেলে তারাও সরে দাঁড়াবে, সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের সংস্থা এআরডি জানায়, তারা পরের বছর অংশ নিতে আগ্রহী এবং বৈচিত্র্য ও সংহতির উৎসব হিসেবে এটিকে দেখে। তবে যারা সরে দাঁড়িয়েছে, তাদের সিদ্ধান্তকে তারা সম্মান করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুবই সাধারণ খাবার খান পুতিন, দেশে-বিদেশে খাদ্যতালিকায় যা থাকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে যখন ভ্লাদিমির পুতিনের ৪-৫ ডিসেম্বরের রাষ্ট্রীয় সফর ও ২৩ তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন কূটনৈতিক আলোচনার বাইরেও একটি বিষয় নজর কেড়েছে—রুশ প্রেসিডেন্টের খাবার সংক্রান্ত অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্য বিশ্বনেতাদের মতো তিনিও আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় অংশ নেন, তবে তাঁর খাবার সবচেয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

পুতিন হোটেল বা আয়োজক দেশের কর্মীদের তৈরি খাবার গ্রহণ করেন না। তাঁর খাবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করা হয়।

বিদেশ সফরে পুতিনের খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রায় সামরিক নির্ভুলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কঠোরতার মূল কারণ হলো নিরাপত্তা—বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য বিষক্রিয়া বা গুপ্তহত্যার চেষ্টা এড়াতে এই ব্যবস্থা অপরিহার্য। পুতিনের জন্য খাবার পরিবেশনের আগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়:

বিশেষ শেফ ও লজিস্টিকস: প্রশিক্ষিত রুশ শেফ, পুষ্টিবিদ এবং সহযোগী কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ফ্লাইটে আসেন। তাঁরাই বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত রান্নাঘরে পুতিনের খাবার তৈরি করেন।

মোবাইল পরীক্ষাগার: তিনি ভ্রমণের সময় একটি অত্যাধুনিক মোবাইল খাদ্য পরীক্ষাগারও সঙ্গে রাখেন। এই ল্যাব পরিবেশনের আগে প্রতিটি খাদ্য এবং পানীয়ের উপাদান দ্রুত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য বিষ বা ক্ষতিকারক বস্তুর উপস্থিতি যাচাই করে।

নিয়ন্ত্রিত উপাদান: খাবারের উপাদান হয় সরাসরি রাশিয়া থেকে আনা হয়, নতুবা আয়োজক দেশে দীর্ঘ পরীক্ষার মাধ্যমে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। শুধু অনুমোদিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা উপাদানই তাঁর রান্নাঘরে প্রবেশাধিকার পায়।

বিশেষ পরিবেশন: আনুষ্ঠানিক ভোজসভার ক্ষেত্রেও এই সতর্কতা বজায় থাকে। যদিও তিনি উপস্থিত থাকেন, কিন্তু সাধারণত তাঁর প্লেটে পরিবেশিত খাবারটি নিজস্ব শেফদের দ্বারা পৃথকভাবে প্রস্তুতকৃত হয়। খাদ্য পরিবেশনের আগে প্রশিক্ষিত পরীক্ষকদের দ্বারা চূড়ান্ত যাচাই করা হয়। এই প্রক্রিয়া মস্কো এবং বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয়।

পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস

খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে এত কড়াকড়ি থাকলেও, পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা কিন্তু বেশ সাধারণ। তাঁর জীবনযাপনও সুশৃঙ্খল। তিনি জমকালো ভোজের পরিবর্তে পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবার পছন্দ করেন।

সকালের নাশতা: তাঁর সকাল শুরু হয় উচ্চ-প্রোটিন এবং কম-চিনিযুক্ত খাবার দিয়ে। সাধারণত মধুসহ ভরোগ (Tvorog, রুশ কটেজ চিজ) অথবা পরিজ (স্টার্চ ও পানি বা দুধ সহযোগে তৈরি) প্রধান খাদ্য। এ ছাড়া তিনি তাজা ফলের রস এবং মাঝে মাঝে কাঁচা কোয়েলের ডিম বা অমলেট গ্রহণ করেন। তাঁর খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবারের স্থান নেই।

দুপুরের ও রাতের খাবার: পুতিন লাল মাংসের চেয়ে মাছ বেশি পছন্দ করেন, বিশেষত গ্রিলড বা স্মোকড মাছের পদ। ভেড়ার মাংসও তাঁর প্রিয়। তবে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত রান্না তিনি এড়িয়ে চলেন। তাঁর বেশির ভাগ খাবারেই টমেটো, শসা এবং অন্যান্য সাধারণ সবজির সালাদ বাধ্যতামূলক। এই সবজিগুলো ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়।

পানীয় ও ডেজার্ট: পুতিন মিষ্টি বেক করা সামগ্রী, কেক বা বাটারি পেস্ট্রি একদম পছন্দ করেন না। পানীয়ের ক্ষেত্রে তাজা জুস, সাধারণ ভেষজ পানীয় এবং কেফির (এক প্রকার ফার্মেন্টেড দুগ্ধজাত পানীয়) পান করেন। তবে তাঁর সুশৃঙ্খল রুটিনের মাঝেও একটি ছোট দুর্বলতা রয়েছে—তা হলো পেস্তা আইসক্রিম!

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুতিনের এই খাদ্যাভ্যাস তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ: সংযত, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐতিহ্যমুখী। পুষ্টি, প্রোটিন এবং সহজলভ্যতা ওপর তাঁর এই জোর, তাঁর দীর্ঘ ও অনিয়মিত কর্মঘণ্টার জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীল ক্যালরির জোগান নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত