Ajker Patrika

আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান নেই আরবদের, ইসরায়েলে অ-ইহুদিরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১১: ২৩
আশ্রয়কেন্দ্র অবস্থান করছেন ইসরায়েলিরা। ছবি: এএফপি
আশ্রয়কেন্দ্র অবস্থান করছেন ইসরায়েলিরা। ছবি: এএফপি

সামার আল রাশেদ, ইসরায়েলে বসবাসরত এক ফিলিস্তিনি। গত শুক্রবার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে জিহানকে নিয়ে নিজের অ্যাপার্টমেন্টেই ছিলেন তিনি। হঠাৎ শুনতে পান সাইরেন। তড়িঘড়ি মেয়েটিকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটে যান তিনি। মেয়েটা যাতে ভয় না পায় তাই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। আর এতেই বাধে বিপত্তি। আরবি ভাষা শুনে মুখের ওপর আশ্রয়কেন্দ্রের দরজা বন্ধ করে দেন তাঁরই প্রতিবেশী এক ইসরায়েলি।

২৯ বছর বয়সী সামার বলেন, ওই ইসরায়েলির আচরণে তিনি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমি হিব্রু ভাষায় তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সে ঘৃণাভরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল—এই আশ্রয়কেন্দ্র তোমাদের জন্য নয়।’

আরেক ফিলিস্তিনি মোহাম্মাদ দাবদুব বাস করেন ইসরায়েলের হাইফায়। ৩৩ বছর বয়সী দাবদুস কাজ করেন একটি মোবাইল ফোন মেরামতের দোকানে। তিনি জানান, অন্যান্য দিনের মতো গত শনিবারও দোকানে মোবাইল ফোন মেরামত করছিলেন। হঠাৎ একযোগে সব ফোনে সতর্কবার্তা বাজতে শুরু করে। হাতে যে কাজটি ছিল সেটি শেষ করে দ্রুত দোকানের পেছনে থাকা একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। কিন্তু ততক্ষণে একটু দেরি হয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দেখতে পান দরজায় তালা ঝুলছে।

তিনি বলেন, ‘আমি কোড দিয়ে চেষ্টা করলাম কিন্তু কাজ হলো না। অনেকক্ষণ দরজায় কড়া নাড়লাম। হিব্রু ভাষায় ডাকাডাকি করলাম, কোনো সাড়া পেলাম না। কিছুক্ষণের মধ্যে কাছেই কোথাও একটি ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরণ হলো। রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ল ভাঙা কাচ। ধরেই নিয়েছিলাম আমি মারা যাব।’ একটু থেমে তিনি আবার বলেন, ‘কালো ধোঁয়ায় চারপাশ ছেয়ে গেল। চিৎকার-চেঁচামেচি-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। ১৫ মিনিট পর পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনতে পেলাম। আমার মনে হলো যেন ২০২০ সালে বৈরুতে বিস্ফোরণের অভিজ্ঞতা আবার জ্যান্ত হয়ে গেল আমার চোখের সামনে।’

শুধু সামার বা দাবদুব নয়, ইসরায়েলে বসবাসরত প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির অভিজ্ঞতা একই রকম। ইসরায়েলের জনসংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশই ফিলিস্তিনি নাগরিক। কাগজে-কলমে তাঁদের অধিকারের ব্যাপারে ইসরায়েল সরকার নিজেকে সচেতন বলে দাবি করে। তবে, বরাবরই প্রায় সব ক্ষেত্রেই বৈষম্যের স্বীকার হতে হয় এই ফিলিস্তিনিদের। আর এ ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

বাসস্থান, শিক্ষা, কর্মসংস্থা ও রাষ্ট্রীয় সেবাসহ নানা ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কাঠামোগত বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলের নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও তাঁদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয়। ‘আদালাহ—দ্য লিগ্যাল সেন্টার ফর অ্যারাব মাইনরিটি রাইটস ইন ইসরায়েল’-এর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলে ৬৫টিরও বেশি আইন সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক। ২০১৮ সালে পাস হওয়া ‘জাতি-রাষ্ট্র আইন’ (নেশন স্টেট ল) এই বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এই আইনে ইসরায়েলকে ‘ইহুদি জাতি-রাষ্ট্র’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই আইন ইসরায়েলে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদকে বৈধতা দেয়।

সংঘাতের সময় ফিলিস্তিনি নাগরিকেরা প্রায়ই বৈষম্যমূলক পুলিশি নজরদারি ও বিধিনিষেধের শিকার হন। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে হয় তাঁদের, বঞ্চিত করা হয় আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার থেকে। এ ছাড়া, যেসব শহরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি জাতি-গোষ্ঠীর বসবাস প্রায় সমান, সেসব মিশ্র শহরে মৌখিক হয়রানির মতো ঘটনা ঘটে হরহামেশাই।

ইসরায়েলের সব নাগরিকেরই জননিরাপত্তামূলক সুবিধা—যেমন বোমা আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহারের সমান অধিকার থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামগুলোতে ইহুদি জনপদের তুলনায় নিরাপদ আশ্রয়স্থলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজে প্রকাশিত ২০২২ সালের স্টেট কম্পট্রোলারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর বসতিগুলোর ৭০ শতাংশেরও বেশি বাড়িতে নিরাপদ ঘর বা আশ্রয়কেন্দ্র নেই। যেখানে ইহুদি বসতির ক্ষেত্রে এই অনুপাত কেবল ২৫ শতাংশ। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসামরিক প্রতিরক্ষার জন্য ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত অঞ্চলের পৌরসভাগুলো তুলনামূলকভাবে কম বাজেট পায়। নতুন ভবন তো নির্মাণ করা হয়ই না, পুরোনো ভবনগুলোতেও প্রয়োজনীয় উন্নয়নকাজ করা হয় না।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলার পর বলেছিলেন, ‘ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের সব মানুষকে লক্ষ্য করে—ইহুদি এবং আরব উভয়কেই।’ এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি মূলত ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন কিংবা বহির্বিশ্বে নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। যুদ্ধ শুরুর আগেও রাজনৈতিক মত প্রকাশের কারণে ইসরায়েলি নাগরিকদের তুলনায় ফিলিস্তিনিদের বেশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো পোস্টে শুধু রিয়্যাক্ট করার কারণেও কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অথচ অনলাইনে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পাল্টা সহিংসতার ডাক দেওয়া অনেক পোস্টই সরকারি নজরদারিতে থাকে না।

এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের কাছে স্পষ্ট যে, কাগজে-কলমে তারা ইসরায়েলের নাগরিক, কিন্তু বাস্তবে এই রাষ্ট্রে বহিরাগত!

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।

চাকরি খোঁজার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। সেখানে কর্মীরা চাকরি খোঁজেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কর্মীদের বাছাই করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মে এবার ‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ।

ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামের দীনেশ বৈরাগী। ‘পূর্ণকালীন’ চাকরির অফার দিয়ে নারীবন্ধু খুঁজেছেন লিংকডইনে। ওই বিজ্ঞাপনের বিবরণে সম্ভাব্য ‘গার্লফ্রেন্ড’-এর জন্য প্রয়োজনীয় নানা গুণাবলির কথাও উল্লেখ করেছেন দীনেশ।

টেক মাহিন্দ্রার সাবেক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট দীনেশ চাকরির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, ‘গুরগাঁওয়ে পূর্ণকালীন গার্লফ্রেন্ডের পদ খালি আছে। সরাসরি দেখা করা এবং দূর থেকে দায়িত্ব পালন দুটোই করতে হবে।’

প্রযুক্তিখাতে অভিজ্ঞ এই যুবক চাকরির বিজ্ঞাপনে আরও লিখেছেন, ‘এই ভূমিকায় শক্তিশালী আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা, অর্থবহ কথোপকথনে অংশ নেওয়া, সঙ্গ দেওয়া, পারস্পরিক সমর্থন এবং সঙ্গীর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম বা শখে যুক্ত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সক্রিয় যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়া এই ভূমিকাটির ভিত্তি হবে। পাশাপাশি যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ইতিবাচক ও সহায়ক সম্পর্কের পরিবেশ গড়ে তোলাও এর অন্তর্ভুক্ত।’

দীনেশ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার আবেগগত বুদ্ধিমত্তা, শোনার সক্ষমতা, সহমর্মিতা ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তিনি জানান, এমন একজনকে তিনি খুঁজছেন, যাঁর মধ্যে রসবোধ, দয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকবে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও যৌথ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। শখ, কার্যক্রমে আগ্রহ বা একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার মানসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের ভেতরে পারস্পরিক সমর্থন ও বিকাশে আগ্রহী হতে হবে।’

লিংকডইনে দেওয়া এই চাকরি খোঁজার মতো করে গার্লফ্রেন্ড খোঁজার পোস্টটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে রসিকতার বন্যা বইয়ে দেন নেটিজেনরা। অনেকেই এই অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা করেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি পারিশ্রমিক বা বেতন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চান।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ওহ, এখন সব পরিষ্কার! তাহলে আমার প্রাক্তন আমার সঙ্গে ছয় মাস গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ইন্টার্নশিপ করেছিল, এরপর অন্য কোথাও ফুলটাইম গার্লফ্রেন্ডের চাকরি পেয়ে চলে গেছে।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যদি আসলেই ভারতীয় হন, তাহলে যেকোনো অ্যাপই ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে ফেলবেন।’

তৃতীয় একজন লিখেছেন, ‘পদের বিবরণ দেখে বেশ চমকপ্রদই লাগছে, কিন্তু স্যালারি কত?’

একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন, ‘তিনি কি লিংকডইনের পোস্টের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা চালাচ্ছেন?’ উত্তরে দীনেশ বলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি প্রকৃত শূন্যপদ। প্রোফাইলটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমি চাকরির বিবরণ দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া কেউ যদি আগ্রহী ও যোগ্য হন, তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।’

শেষ আপডেট অনুযায়ী দীনেশ জানিয়েছেন, এই ‘চাকরির’ জন্য এরইমধ্যে ২৬ জন আবেদন করেছেন। এখন নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি বিচে বন্দুকধারীদের গুলি, নিহত অন্তত ১০

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪২
সিডনির বন্ডি সমুদ্রসৈকতে বন্দুকধারীদের হামলায় অনেক হতাহত। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সিডনির বন্ডি সমুদ্রসৈকতে বন্দুকধারীদের হামলায় অনেক হতাহত। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র বন্ডি বিচে ভয়াবহ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বন্ডি বিচ ও এর সংলগ্ন এলাকায় বড় আকারের অপারেশন শুরু করেছে।

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ ‘এক্স’ হ্যান্ডলে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পুলিশি অভিযান এখনো চলছে এবং জনসাধারণকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ করা হচ্ছে।

পুলিশের বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দুক হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হামলাকারী বা বন্দুকধারীও রয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন সাধারণ নাগরিক, দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, হামলার সময় বন্ডি বিচে ইহুদিদের অন্যতম প্রধান উৎসব হানুক্কার প্রথম দিনের একটি অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘চানুকা বাই দ্য সি ২০২৫’ এবং এটি আজ রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে বিচসংলগ্ন শিশুদের খেলার মাঠের কাছে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। চাবাদ অব বন্ডি নামের একটি ইহুদি কেন্দ্র এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।

হামলার সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ব্যারি জানান, তিনি তাঁর সন্তানদের নিয়ে হানুক্কার অনুষ্ঠানে ছিলেন, তখনই গুলির শব্দ শুরু হয়। তিনি দেখতে পান, দুজন ব্যক্তি একটি ব্রিজের ওপর থেকে জনসমাবেশের দিকে গুলি চালাচ্ছেন। তিনি ঘটনাস্থলে একাধিক মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি সন্তানদের নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে বন্ধুর গাড়িতে পালিয়ে যান। ব্যারি এ সময় অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে একটি ইহুদি অনুষ্ঠানে এমন হামলা হওয়াকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে বর্ণনা করেন।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি ব্রোন্টে বিচে ছিলেন, তিনি প্রায় ২০টি গুলির শব্দ শুনতে পান। প্রথমে ভেবেছিলেন, আতশবাজির শব্দ। পরে হেলিকপ্টার উড়তে দেখে ও শুটিংয়ের খবর পেয়ে তিনি ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পারেন।

অন্য একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি বন্দুকধারীদের অস্ত্র নামিয়ে রাখার অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু তাঁরা সে কথায় কান দেননি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ও যাচাই করা ভিডিওগুলোতে বন্ডি বিচের ঘটনার পরের ভয়ংকর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যাম্পবেল প্যারেডের কারপার্ক থেকে সমুদ্রসৈকতের দিকে যাওয়া একটি ছোট সেতু থেকে দুজন বন্দুকধারী গুলি চালাচ্ছেন। সেতুটি বন্ডি পার্ক প্লেগ্রাউন্ড থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে অবস্থিত।

অন্য একটি যাচাই করা ভিডিওতে দেখা যায়, একই সেতুর ওপর বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। একজনের বুকে সিপিআর দেওয়া হচ্ছে আর অন্য একজন চিৎকার করে বলছেন, ‘সে মারা গেছে, সে মারা গেছে।’ আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নিথর পড়ে থাকা অন্য এক ব্যক্তির জামাকাপড় কাঁচি দিয়ে কেটে দেওয়া হচ্ছে। মেঝেতে রক্তের দাগ, একটি বুলেটপ্রুফ ভেস্ট এবং কমপক্ষে আটটি গুলির খোসা পড়ে থাকতে দেখা যায়।

পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ঘটনাস্থলে একটি বিশেষ নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করেছে এবং হাতে তৈরি বিস্ফোরক (আইইডি) নিষ্ক্রিয় করার জন্য বিশেষ দল ও সরঞ্জাম আনা হয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে এই এক্সক্লুশন জোনের সঠিক অবস্থান এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এইচ–১বি ভিসা ফি বৃদ্ধি: ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২০ অঙ্গরাজ্যের মামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৬
ট্রাম্প এইচ–১বি ভিসার ফি বাড়ানোয় তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে ২০ মার্কিন অঙ্গরাজ্য। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প এইচ–১বি ভিসার ফি বাড়ানোয় তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে ২০ মার্কিন অঙ্গরাজ্য। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দেশটিতে বিদেশি দক্ষ শ্রমশক্তি নিয়োগ দেওয়ার ভিসা এইচ–১ বি’র ফি বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করেছেন। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ২০টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বনটা গত শুক্রবার ঘোষণা করেছেন, এইচ–১বি ভিসা আবেদনের ফি বাড়িয়ে ১ লাখ মার্কিন ডলার করায় ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়া ও আরও উনিশটি রাজ্য মামলা করছে।

বনটা দাবি করেন, দক্ষ কর্মীদের জন্য নির্ধারিত এই ভিসার জন্য ফি বৃদ্ধি বেআইনি। কারণ, এটি কংগ্রেসে অনুমোদিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং এই কর্মসূচি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাদের মূল উদ্দেশ্যকে ক্ষুণ্ন করছে। মামলার সঙ্গে যুক্ত সকল রাজ্যেই অ্যাটর্নি জেনারেলরা ডেমোক্র্যাট দলের।

সান ফ্রান্সিসকোতে একটি সংবাদ সম্মেলনে বনটা সাফ বলেন, ‘কোনো প্রেসিডেন্টের প্রশাসন অভিবাসন আইনকে নতুন করে লিখতে পারে না। কোনো প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের মতো সরকারকে উপেক্ষা করতে পারেন না, সংবিধান বা আইনকেও এড়িয়ে যেতে পারেন না।’

এই ভিসার সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী হলো বড় টেক কোম্পানিগুলো, যারা দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়ে আসে। ট্রাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন ক্যাম্পেইনের রিপাবলিকান সমর্থকেরা অভিযোগ করছেন, কোম্পানিগুলো সস্তা শ্রমের জন্য আমেরিকানদের পাশ কাটিয়ে এই কর্মসূচির অপব্যবহার করছে। কিন্তু বনটা যুক্তি দেন, এই ফি আরোপের ফলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য খাতেও শ্রমিকের ঘাটতি আরও বাড়বে। এতে চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষক, নার্স ও সরকারি সেবাকর্মীর মতো পদগুলো পূরণ করা আরও কঠিন হবে।

তিনি এও সতর্ক করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সেপ্টেম্বরে এক নির্বাহী ঘোষণায় যে ১ লাখ ডলারের ফি ধার্য করেছেন, তা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোমের ইচ্ছানুযায়ী বেছে বেছে প্রয়োগ করা হতে পারে। দক্ষ অভিবাসন এবং বিশেষ করে এইচ–১বি ভিসা এর আগেও ট্রাম্পের জনতুষ্টিমূলক সমর্থক আর বিশ্বজুড়ে প্রতিভা আকর্ষণে চিন্তিত সিলিকন ভ্যালির মিত্রদের মধ্যে মতভেদের কারণ হয়েছিল।

এই নীতি ঘোষণার পর এবং প্রোগ্রামটি ব্যবহারকারী প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার পর প্রেসিডেন্ট তাঁর অবস্থানে খানিকটা নমনীয় হয়েছেন বলেই মনে হয়। গত মাসে ফক্স নিউজের উপস্থাপক লরা ইনগ্রাহামের সঙ্গে এইচ–১বি ভিসা নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এই দাবি অস্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট প্রতিভাবান মানুষ রয়েছে; তিনি তখন বলেছিলেন যে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মীর প্রয়োজন এখনো আছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র টেইলর রজার্স গত শুক্রবার প্রশাসনের পদক্ষেপের পক্ষ নিয়ে বলেন, এটি কেবল আইনসম্মতই নয়, বরং এটি ‘এইচ–১বি প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয় সংস্কারের দিকে একটি জরুরি, প্রাথমিক, ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপ।’

মামলার জবাবে এক বিবৃতিতে রজার্স বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকান কর্মীদের প্রথম স্থানে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এবং এইচ–১বি ভিসার ওপর তাঁর এই সাধারণ পদক্ষেপ সে কাজটাই করছে। এটি কোম্পানিগুলোকে সিস্টেমের অপব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করবে এবং আমেরিকানদের মজুরি কমিয়ে দেওয়া থেকে বিরত রাখবে, আবার যে সকল নিয়োগকর্তার বিদেশ থেকে সেরা প্রতিভা আনার প্রয়োজন, তাঁদের কাছে নিশ্চয়তাও দেবে।’

বনটা শুক্রবার এইচ–১বি প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট কোনো সংস্কারের সুপারিশ করেননি, যদিও তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন যে যেকোনো প্রোগ্রাম বা নীতির মতোই এরও ‘সম্ভবত উন্নতির সুযোগ রয়েছে।’ চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউএস চেম্বার অব কমার্স একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে এই নতুন ফি-এর বিরুদ্ধে আলাদা একটি মামলা দায়ের করেছিল। তাদের আপত্তি ছিল যে প্রশাসন এইচ–১বি প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী আইনের বিধানগুলো অগ্রাহ্য করেছে। এ ছাড়া, ভিন্ন ভিন্ন খাতের শ্রমিক সংগঠনসহ আরও বড় একটি গোষ্ঠী থেকেও আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নতুন মামলা ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা হবে এবং এর নেতৃত্ব দেবেন বনটা ও বে স্টেটের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া জয় ক্যাম্পবেল। এই নিয়ে বনটা চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ৪৯ বারের মতো আদালতে গেলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণ সূচকে সর্বোচ্চ সীমায় দিল্লি, জনজীবন বিপর্যস্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভয়াবহ বায়ুদূষণে সৃষ্ট ধোঁয়াশার কারণে ভোর বেলাতেও দৃষ্টসীমা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ছবি: এক্স
ভয়াবহ বায়ুদূষণে সৃষ্ট ধোঁয়াশার কারণে ভোর বেলাতেও দৃষ্টসীমা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ছবি: এক্স

ভারতের রাজধানী দিল্লির আকাশ ঘন ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা। শহরটির বাতাসের মান ‘সিভিয়ার বা গুরুতর’ শ্রেণিতেই আটকে আছে বেশ কয়েক দিন ধরে। আজ রোববার সকালের ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) জানায়, সকাল ৬টায় দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই ছিল ৪৬২।

দিল্লির ৪০টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সব কটিতেই বাতাসের দূষণ নির্দেশক সূচক ‘লাল’, অর্থাৎ বাতাসের মান ‘গুরুতর’ পর্যায়ে রয়েছে। উত্তর-পশ্চিম দিল্লির রোহিণীতে একিউআই রেকর্ড করা হয়েছে ৪৯৯। সেখানে প্রধান দূষক ছিল পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ বা পিএম ২.৫ কণা। এর পরেই আছে জাহাঙ্গীরপুরী ও বিবেক বিহার, যেখানে একিউআই ছিল ৪৯৫।

স্মগ বা ধোঁয়াশার কারণে দিল্লির একাধিক এলাকায় দৃষ্টিসীমা কমে গেছে। পূর্ব দিল্লির পাটপারগঞ্জ থেকে পাওয়া দৃশ্যে দেখা যায়, সকাল ৬টায় সেখানে একিউআই ছিল ৪৮৮ এবং মানুষজন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছেন।

একিউআই বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স হলো—জনস্বাস্থ্যের একটি সূচক, যার মাধ্যমে বাতাসে দূষণের মাত্রা বা বায়ুর গুণমান সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানো হয়। সিপিসিবির তথ্য অনুযায়ী, কোনো এলাকার একিউআই নির্ধারণে আটটি দূষককে প্রধান সূচক হিসেবে ধরা হয়। এগুলো হলো পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএস) ১০, পিএম ২.৫, ওজোন, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা এবং অ্যামোনিয়া।

সিপিসিবি জানায়, একিউআই যদি ০ থেকে ৫০—এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো।’ ৫১ থেকে ১০০ হলে ‘সন্তোষজনক’, ১০১ থেকে ২০০ ‘মাঝারি’, ২০১ থেকে ৩০০ ‘খারাপ’, ৩০১ থেকে ৪০০ ‘অত্যন্ত খারাপ’ এবং ৪০১ থেকে ৫০০ হলে তা ‘গুরুতর’ হিসেবে ধরা হয়। এই প্রতিটি স্তরই দূষণের মাত্রা এবং তার সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। যেমন, একিউআই যদি ‘গুরুতর’ পর্যায়ে থাকে, তাহলে তা সুস্থ মানুষের জন্যও বিপজ্জনক। এ অবস্থায় বাইরে বের হওয়া বা খোলা জায়গায় শরীরচর্চা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এই অবস্থায় দিল্লির দূষণ বর্তমানে একিউআইয়ের সর্বোচ্চ সীমা ৫০০ ছাড়াতে পারে কী—এই প্রশ্নও সামনে এসেছে। ভারতের একিউআই স্কেল সর্বোচ্চ ৫০০ পর্যন্ত নির্ধারিত। অর্থাৎ ৫০০-এর বেশি হলে সেটিও ‘গুরুতর’ শ্রেণির মধ্যেই ধরা হয়, যা একটি জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের চেয়ার প্রফেসর অধ্যাপক ড. গুফরান বেগ বলেন, ‘৪০০-এর ওপরে একিউআই অত্যন্ত বিপজ্জনক। ধরে নেওয়া হয়, একিউআই ৫০০ আর একিউআই ৯০০-এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব প্রায় একই। তাই বেশি সংখ্যা দেখিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করার প্রয়োজন নেই।’

তবে এনভায়রোক্যাটালিস্টসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিশ্লেষক সুনীল দাহিয়া বলেন, একিউআই ৫০০-তে সীমাবদ্ধ রাখার পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই, যদিও প্রযুক্তিগতভাবে এর চেয়েও বেশি মান নির্ণয় করা সম্ভব। তাঁর ভাষায়, ‘এটা ঠিক যে, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব তুলনামূলক কম ঘনত্বে বেশি হয় এবং খুব উচ্চ ঘনত্বে বাড়লেও তা ধীরে বাড়ে। কিন্তু তাৎক্ষণিক ঝুঁকি তখন অনেক বেশি হয়। বিশেষ করে দূষণ হঠাৎ খুব বেড়ে গেলে হৃদ্‌রোগী, শ্বাসকষ্টে ভোগা মানুষ এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য তা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা চিকিৎসাজনিত জরুরি অবস্থার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। খড় পোড়ানোর মৌসুম বা দীপাবলির সময় আমরা এমন পরিস্থিতি বারবার দেখেছি।’

দিল্লিতে বাড়তে থাকা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে শনিবার বায়ু মান ব্যবস্থাপনা কমিশন গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান বা গ্র্যাপ-এর তৃতীয় ধাপের বিধিনিষেধ জারি করে। পরে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেটি আরও কঠোর করে গ্র্যাপ-৪ কার্যকর করা হয়।

একিউআই হঠাৎ খারাপ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংস্থাটি জানায়, উত্তর-পশ্চিম ভারতে ধেয়ে আসা দুর্বল পশ্চিমা ঝঞ্ঝাই ছিল এর প্রধান কারণ, স্থানীয় নির্গমন নয়। কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতিতে বাতাসের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, অনেক সময় একেবারেই স্থির হয়ে পড়ছে। বাতাসের দিক পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে ঘুরেছে এবং নিম্ন বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়েছে। শীতকালীন এ ধরনের পরিস্থিতি ধোঁয়াশা ও কুয়াশা তৈরির জন্য অনুকূল, ফলে দূষকগুলো সহজে ছড়িয়ে না পড়ে ভূপৃষ্ঠের কাছেই আটকে থাকে। এই বিরূপ আবহাওয়ার কারণেই হঠাৎ করে বায়ুর মানের অবনতি ঘটেছে।

গ্র্যাপ-৪-এর আওতায় একাধিক কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। দিল্লিতে অপ্রয়োজনীয় ট্রাকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে যেসব ট্রাক জরুরি পণ্য বা পরিষেবা বহন করে, অথবা এলএনজি, সিএনজি, বিদ্যুৎ চালিত কিংবা বিএস-ফাইভ ডিজেলে চলে, সেগুলো এর বাইরে থাকবে। দিল্লিতে নিবন্ধিত মাঝারি ও ভারী পণ্যবাহী ডিজেলচালিত যানবাহন, বিশেষ করে বিএস-৪ ও তার আগের মানের যান, নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু জরুরি পরিষেবায় ব্যবহৃত যানবাহন এ ক্ষেত্রে ছাড় পাবে। দিল্লির বাইরে নিবন্ধিত হালকা বাণিজ্যিক যান, যেগুলো ইভি, সিএনজি বা বিএস-৬ ডিজেল মান পূরণ করে না, সেগুলোর প্রবেশও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বন্ধ থাকবে।

এ ছাড়া সব ধরনের নির্মাণ ও ভাঙচুর কার্যক্রম, এমনকি মহাসড়কের মতো সরকারি প্রকল্পও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লি ও ভারতের কেন্দ্রীয় রাজধানী অঞ্চল যেসব রাজ্যের মধ্যে পড়েছে সেসব রাজ্যের সরকারগুলোতে ষষ্ঠ থেকে নবম এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সশরীরে ক্লাসের বদলে অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সরকারি, পৌর এবং বেসরকারি দপ্তরগুলোকে অন্তত ৫০ শতাংশ কর্মী দিয়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি অফিসের সময় ধাপে ধাপে নির্ধারণ করার কথাও বলা হয়েছে, যাতে ব্যস্ত সময়ের যানজট ও দূষণ কিছুটা কমানো যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত