Ajker Patrika

প্রায় ৪০ বছর ধরে উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ৮০ বছরের মুসেভিনি, থাকতে চান আরেক মেয়াদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রায় ৪০ বছর ধরে আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় দেশ উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভিনি। ছবি: সংগৃহিত
প্রায় ৪০ বছর ধরে আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় দেশ উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভিনি। ছবি: সংগৃহিত

প্রায় ৪০ বছর ধরে আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় দেশ উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভিনি। বয়স ৮০ পেরোলেও থামতে চান না তিনি। আরেক মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে চান তিনি। সপ্তমবারের মতো নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন মুসেভিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে।

১৯৮৬ সাল থেকে টানা উগান্ডা শাসন করছেন মুসেভিনি। সর্বশেষ ২০২১ সালের ষষ্ঠবারের মতো তিনি নির্বাচনে জয়ী হন। এবার ২০২৬ সালের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন ‘ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্ট’ (এনআরএম) দলের নেতারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচনে জয়ী হলে মুসেভিনির শাসনকাল ৪০ বছর ছাড়িয়ে যাবে, যা আধুনিক আফ্রিকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাঁর দীর্ঘ শাসনের পেছনে রয়েছে সংবিধানে একাধিক সংশোধনী। ২০০৫ সালে তুলে দেওয়া হয় প্রেসিডেন্টের মেয়াদসীমা, আর ২০১৭ সালে বিলুপ্ত হয় বয়সসীমা। ফলে আইনগত বাধা ছাড়াই তিনি প্রেসিডেন্ট পদে থাকার পথ তিনি এরই মধ্যে তৈরি করেছেন।

গত সপ্তাহে রাজধানী কাম্পালায় এক দলীয় সভায় মুসেভিনিকে নির্বাচনের প্রার্থী হতে আহ্বান জানায় এনআরএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। দলের মহাসচিব রিচার্ড তাদেওয়ো কাসুলা লুমুমবা আনুষ্ঠানিকভাবে বলেন, ‘২০২৬ সালের নির্বাচনে আমাদের নেতা মুসেভিনিকেই আমরা প্রার্থী হিসেবে চাই। দেশ ও দলের ভবিষ্যতের জন্য তাঁর নেতৃত্ব প্রয়োজন।’

তবে এই দীর্ঘ শাসন নিয়ে দেশটির ভেতরে-বাইরে সমালোচনা রয়েছে। বিরোধীরা মুসেভিনিকে স্বৈরশাসক আখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ রুদ্ধ করেছেন। সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে বিরোধী দলগুলোর ওপর দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগও রয়েছে।

গত নির্বাচনে মুসেভিনির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জনপ্রিয় পপ গায়ক ও বিরোধী নেতা ববি ওয়াইন (আসল নাম রবার্ট ক্যাগুলানি)। তিনি বলেন, ‘দেশকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছেন মুসেভিনি। জনগণকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছেন তিনি।’

অন্যদিকে, মুসেভিনি দাবি করেন, তাঁর নেতৃত্বেই উগান্ডা স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নিরাপত্তা অর্জন করেছে। তিনি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘২০২৬ সালের মধ্যে উগান্ডার অর্থনীতির আকার ৬৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫০০ বিলিয়নে উন্নীত করব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব।’

উগান্ডায় এখন এক ধরনের ‘নির্বাচনপূর্ব আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, আবারও নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে ভিন্নমত দমন করা হতে পারে।

মুসেভিনির ছেলে জেনারেল মুহোজি কেইনারুগাবা সেনাবাহিনী ও রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এতে বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, দেশটি ‘রাজতন্ত্রের’ দিকে ধাবিত হচ্ছে।

রাজনীতিতে এত দীর্ঘ মেয়াদ থাকার বিষয়টি নিয়ে দেশটির সংসদেও আলোচনা উঠেছে। কয়েকজন সংসদ সদস্য মুসেভিনির মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিকভাবে পশ্চিমা মানবাধিকার সংস্থাগুলোও উগান্ডার রাজনৈতিক পরিসরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সীমাবদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। সব মিলিয়ে আফ্রিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য নজির হতে চলেছে মুসেভিনির এই সপ্তমবারের নির্বাচন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত