Ajker Patrika

এসডিজি থেকে পিছিয়ে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯: ৪৪
এসডিজি থেকে পিছিয়ে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা

দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার বর্তমানে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ৩৪ জন। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ২৫-এ নামিয়ে আনতে হবে। একইভাবে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি ১০ হাজারে ১২১ জন।

এসডিজি অর্জন করতে হলে ২০২৩ সালের মধ্যে এটি ৪০-এ নামিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া শিশুমৃত্যুর হার বর্তমানে প্রতি হাজারে জীবিত জন্মে ১৮ জন। এসডিজি অর্জন করতে এটি ১২ জনে নামিয়ে আনার কথা। খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেই এসব তথ্য মিলেছে। এসব তথ্য থেকে বোঝা যায়, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এসডিজি থেকে কতটা পিছিয়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মোটেও সহজসাধ্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ ৭ এপ্রিল বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। একই সঙ্গে উদ্যাপিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এসডিজি অর্জন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের ব্যাপারে বৈশ্বিক অঙ্গীকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারও একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। দেশের জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের আহ্বান সার্থক হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে। মৃত্যু ও অক্ষমতার বড় কারণ রোগ ও দুর্যোগ। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, একই সঙ্গে জলবায়ু সংকট বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেওয়ার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের বায়ুদূষণে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাউন্সিল অন দি ইকোনমিকস অব হেলথ ফর অল জানিয়েছে, অন্তত ১৪০টি দেশ তাদের সংবিধানে স্বাস্থ্যকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবু দেশগুলো তাদের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন পাস করছে না। যাদের আইন রয়েছে, তারা সেগুলোর চর্চা করছে না। এটি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, পৃথিবীর ৪৫০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪-এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার’।

প্রতিপাদ্য প্রসঙ্গে সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ বলেছেন, সবার জন্য স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যেখানে প্রত্যেকের সর্বত্র উচ্চমানের স্বাস্থ্যসুবিধা ও পরিষেবা ভোগের সুযোগ থাকবে। তারা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যপণ্য কিনতে পারবে এবং তাদের মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অর্থাৎ, মানুষকে স্বাস্থ্যকরভাবে বাঁচতে সক্ষম করে তোলা, যাতে তাদের নিরাপদ পানি ও বাতাস, বাসস্থান ও পুষ্টিকর খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যের অধিকার পূরণে স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

বেশ কিছু অগ্রগতি সত্ত্বেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে সবার জন্য স্বাস্থ্যের অধিকার বাস্তবে পরিণত করতে এখনো যথেষ্ট অসংগতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সায়মা ওয়াজেদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যের অধিকারের প্রতি বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এই অঞ্চলের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। দারিদ্র্য ও দুর্বলতা এই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে সবচেয়ে বড় বাধা; যা তাদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য বিপর্যয়কর। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৬ দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
৬ দফা দাবিতে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
৬ দফা দাবিতে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতনবৈষম্য দূরীকরণ এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। আজ বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) থেকে সারা দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় সমবেত হয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন।

গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি প্রথম দুই দিন চলেছিল শহীদ মিনারে। পরে তাঁরা অবস্থান নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে। বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন দেশের ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকেরা।

এই কর্মসূচির কারণে কয়েক দিন ধরে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে টিকা নিতে এসে অনেক মা ও শিশু ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য সহকারীদের এ কর্মসূচির কারণে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের সেবা কয়েক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে টিকা নিতে এসে মা ও শিশুরা ফিরে যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে কর্মবিরতিতে যেতে তাঁরা চাননি। কিন্তু দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে তাঁরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বারবার প্রতিশ্রুতির আশ্বাস মিললেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান জানিয়ে নেতারা বলেন, ‘আমাদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করার সরকারি আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না। এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলছে, প্রয়োজনে আরও কঠোর হতে বাধ্য হব।’

স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের নানা বঞ্চনার চিত্রও তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা জানান, টিকাদানের আগে মাসজুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, নবজাতক ও গর্ভবতী মায়ের রেজিস্ট্রেশন, যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণ, ডটস (সরাসরি পর্যবেক্ষণ থেরাপি) পদ্ধতিতে ওষুধ খাওয়ানো, উঠান বৈঠক, মা সমাবেশসহ বিভিন্ন সেবা তাঁরা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহে তিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত সেবা দেওয়ার পরও তাঁদের মাসিক ভ্রমণভাতা মাত্র ৬০০ টাকা। আর বেতন মোট ৯ হাজার ৭০০ টাকা।

আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি নিশ্চিত করা, প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতনস্কেল পুনর্নির্ধারণের সময় টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা এবং ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) সম্পন্নকারীদের সমমান স্বীকৃতি প্রদান।

বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব ফজলুল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, আমাদের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে এখনো বিশ্লেষণ শুরু হয়নি।’

তিনি আরও জানান, ৬৪ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী শনিবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আবু হানিফ আজ সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের দাবির বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজ রয়েছে। সেখানে প্রক্রিয়াগতভাবে কিছুটা সময় লাগছে। গত তিন দিন তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান করছে। আমরা কাজ করছি। আমরা আশা করছি, সবকিছু ভালোভাবে সমাধান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতিতে দিনভর দুর্ভোগ

  • ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি।
  • আজ থেকে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা আসতে পারে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বেতনকাঠামোর দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। গত ৩০ নভেম্বর থেকে টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

এদিকে দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা রয়েছে আন্দোলনকারীদের। তবে কঠোর এই কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে গতকাল রাতে বৈঠকে বসেছেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতির কারণে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়লেও দাবি আদায়ে দিনভর কঠোর অবস্থানে ছিলেন তাঁরা। কর্মবিরতির সময় হাসপাতালের জরুরি সেবা চালু থাকলেও অনেককে সেবা না পেয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।

আন্দোলনরতরা জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘদিনেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। এর আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা নার্স ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে দাবি আদায়ে এবার কঠোর কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। এসব সেবাপ্রার্থীর বড় অংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসে। টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের গতকালের কর্মবিরতির কারণে অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে চলে যায়।

বিভিন্ন স্থানে দিনভর ভোগান্তি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সেবা বন্ধ রেখে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

কর্মবিরতি চলাকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ফার্মেসিতে বিনা মূল্যে সরকারি ওষুধ বিতরণ, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রামসহ রোগনির্ণয়ের বিভিন্ন সেবাকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এ সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সেবাকেন্দ্রগুলোয় কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলছিল। তবে হাসপাতালের অন্যান্য সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। চমেক হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের একজন কর্মচারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, কর্মবিরতির ফলে এক্স-রে করা সাময়িক বন্ধ ছিল।

একই দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও নার্সদের মতো তাঁদেরও চাকরিগত মর্যাদা দশম গ্রেডে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সদরে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ বিতরণ বন্ধ ছিল।

আবদুল্লাহ নামের এক রোগী বলেন, ‘সিটি স্ক্যান করানোর জন্য এসেছিলাম। এসে শুনি, কর্মবিরতি দিয়েছে। এ জন্য ফিরে যাচ্ছি।’

উল্লাপাড়ার আনিসুর নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘কোমরে ব্যথা। তাই ডাক্তারের কাছে এসেছি। এসে শুনি, দুপুরের আগে চিকিৎসা হবে না।’

একই দাবিতে রাজবাড়ীতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা চার ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। কর্মবিরতি কর্মসূচিতে দাবি আদায় না হলে ৪ ডিসেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে হাসপাতাল শাটডাউন ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শৌচাগার সুবিধা: হাসপাতালে বিড়ম্বনায় প্রতিবন্ধীরা

  • ৯৯ শতাংশ শৌচাগার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়।
  • শৌচাগারগুলোর দরজা সংকীর্ণ, কমোডের উচ্চতা অনুপযুক্ত, প্রবেশে র‍্যাম্প সুবিধা নেই।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২২
ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি হাসপাতালে। আজকের পত্রিকা
ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি হাসপাতালে। আজকের পত্রিকা

দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে প্রতিবছরই বাড়ছে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য অথবা ন্যূনতম মানের নয়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিবন্ধী রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও তীব্র। কারণ হাসপাতালে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগার ১ শতাংশেরও কম।

হাসপাতাল পরিচালনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার একটি হাসপাতালের মৌলিক পরিকাঠামোর অংশ হওয়া উচিত। তবে দেশে এ ধরনের সুবিধার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঘাটতি বেশি। ফলে রোগীরা শুধু ভোগান্তিতেই পড়ছেন না; বরং গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিরও সম্মুখীন হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় শৌচাগার ব্যবহার করতে না পারার ফলে কিডনি জটিলতা, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (মূত্রনালি সংক্রমণ) ও পানিশূন্যতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সের প্লস ওয়ান সাময়িকীতে বাংলাদেশে হাসপাতালের শৌচাগার নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ পায়। গবেষণার শিরোনাম ‘ইনঅ্যাডিক্যুইট স্যানিটেশন ইন হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ: অ্যা কম্প্রিহেনসিভ ইভ্যালুয়েশন অব টয়লেটস ইন মেজর হাসপাতাল ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’। গবেষণাটি করেছেন অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের নয়জন গবেষক।

গবেষণায় রাজধানীর ১০টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৪৫৯টি শৌচাগার পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগারের সংখ্যা মাত্র ১০টি, যা ১ শতাংশেরও কম বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। প্রায় ৯৯ শতাংশ শৌচাগার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী বা চলাফেরায় সীমাবদ্ধ রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়। অধিকাংশ শৌচাগারে দরজা সংকীর্ণ, কমোডের উচ্চতা অনুপযুক্ত, গ্র্যাব-বার বা হাতল নেই এবং প্রবেশপথে র‍্যাম্পের সুবিধাও নেই। ফলে প্রতিবন্ধী রোগীরা শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি এবং নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন।

দেশে ক্যানসার রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঘুরে এখানকার দুটি ভবনের কোথাও প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার পাওয়া যায়নি।

একইভাবে হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য সরকারের বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তিনটি ভবনের কোথাও নেই প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার। তাঁদের জন্য আলাদা শৌচাগার না থাকার কথা স্বীকার করেন এই হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে ভর্তি রোগীরা বেডসাইড টয়লেট ব্যবহার করেন। বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য নতুন যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য শৌচাগার, হুইলচেয়ার বা শয্যাসহ ওঠানামার জন্য প্রয়োজনীয় র‍্যাম্প রাখা প্রয়োজন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার ২-৩ গুণ রোগী ভর্তি থাকেন। দৈনিক বহির্বিভাগে রোগী আসেন সক্ষমতার ৪-৫ গুণ। স্বাভাবিক রোগীদের জন্য উন্নত শৌচাগারের ব্যবস্থাপনা নেই। প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্যও আলাদা শৌচাগার রাখা যায়নি। তবে আমরা এ বিষয়ে পরিকল্পনা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৫৬৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৫৬৫

দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন আক্রান্ত ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এ নিয়ে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩৮৬ জনের মৃত্যু হলো। আর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৫ হাজার ৫৭৭। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।

আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানানো হয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা পুরুষ। তাঁদে বয়স যথাক্রমে ৫৫ ও ৬৫ বছর।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নভেম্বর মাসে। ওই মাসে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে অক্টোবর মাসে ৮০ জন ও সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮২, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৫, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১২৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৮৮ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৫, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩০, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) তিন ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত