Ajker Patrika

এমআরএনএ প্রযুক্তির উদ্ভাবকেরা পেলেন নোবেল, কী এই প্রযুক্তি

আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৯: ৫৩
এমআরএনএ প্রযুক্তির উদ্ভাবকেরা পেলেন নোবেল, কী এই প্রযুক্তি

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাসের টিকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত টিকা হলো ফাইজার–বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা। দুটোতেই ব্যবহার করা হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকতম প্রযুক্তি ‘এমআরএনএ ভ্যাকসিন’।

‘এমআরএনএ’ বা মেসেঞ্জার আরএনএ–কে এককথায় বলা যায় বার্তাবাহী রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড। কোষে প্রোটিন তৈরির বার্তা বহন করে বলেই এ নাম দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী নেচার বলছে, মানবদেহে কোষের কার্যকারিতা বাড়াতে এই এমআরএনএ একজন বার্তাবাহকের মতোই কাজ করে।

মানুষের প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে ডিএনএ অনুসরণ করে তৈরি হয় আরএনএ বা রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড। সেখান থেকে ট্রান্সলেশন নামক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় প্রোটিন। মূলত এসব প্রোটিনই জীবাণু বা ভাইরাসের কার্যক্রম রুখে দেয়। আর এসব প্রোটিনকে কার্যকর হিসেবে গড়ে তোলে মেসেঞ্জার রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড বা এমআরএনএ। এটি নিউক্লিয়াসে থাকা ডিএনএর কোডগুলো বহন করে প্রথমে সাইটোপ্লাজমে নিয়ে যায়। এরপর কোড অনুযায়ী একের পর এক অ্যামাইনো অ্যাসিড বসিয়ে তৈরি করে প্রোটিন। অনেকটা পুঁতির মালা, তসবি কিংবা লোহার শিকলের মতো। তাই একে চেইন বলা হয়। কোড বসানোর বার্তাটা এমআরএনএ–ই দেয়।

প্রচলিত ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে
সব ধরনের ভাইরাসে প্রোটিনের আবরণে মোড়া ডিএনএ বা আরএনএ দিয়ে তৈরি জিনের একটি কোর থাকে। একটি নির্দিষ্ট সংক্রামক এজেন্টের জন্য ডিজাইন করা একটি ভ্যাকসিনের মূল লক্ষ্য, সেই ভাইরাসটি কেমন তা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) শেখানো। কিছু সাধারণ টিকায় সংশ্লিষ্ট রোগের দুর্বল ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য টিকায় সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের প্রোটিন আবরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যবহার করা হয়। কোভিড–১৯–এর ক্ষেত্রে, স্পাইক প্রোটিন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে। মানুষের ইমিউন সিস্টেম একবার এই স্পাইক প্রোটিন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেলে পরবর্তীতে প্রকৃত ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করলে সেটির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।

পোলিও এবং হামের মতো রোগের টিকা সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে। সম্মিলিতভাবে টিকাগুলো সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় অগ্রগতির চেয়েও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভাবনীয় অবদান রেখেছে। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে বিপুল পরিমাণে ভাইরাস উৎপাদন এবং পরে সেগুলোকে আবার দুর্বল করতে পারার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে অনেক সময় লাগে। ফলে প্রথাগত পদ্ধতিতে টিকা তৈরি কোভিডের মতো মহামারী মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত নয়। এ কারণেই নতুন প্রযুক্তির খোঁজে নেমেছেন বিজ্ঞানীরা।

এমআরএনও ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পদক্ষেপ
প্রায় ৩০ বছর আগে, হাতেগোনা কয়েকজন বিজ্ঞানী ভ্যাকসিন তৈরি আরও সহজ করার বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। দুর্বল ভাইরাস বা ভাইরাসের প্রোটিন আবরণের একটি অংশ শরীরে প্রবেশ করানোর পরিবর্তে, তাঁরা একটি বিকল্প পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, শরীরে ভাইরাসের একটি অংশ সরাসরি প্রবেশ করানোর পরিবর্তে, যদি শরীরের কোষগুলোকেই ভাইরাসের সেই প্রোটিন অংশ তৈরি দেওয়া হয় তাহলে কেমন হয়! এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট ভাইরাসকে চিনতে ইমিউন সিস্টেমকে প্রশিক্ষিত করা যায়। ফলে প্রকৃত ভাইরাস শরীরের প্রবেশ করানো ছাড়াই সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হবে।

এই পদ্ধতির কয়েকটি ধাপ রয়েছে—প্রথমত, এমআরএনও তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শরীরে এমআরএনএ প্রবেশ করাতে হবে। এরপর সেটি শরীরের কোষে প্রবেশ করতে পারতে হবে। 

একটি ভাইরাসের জিন মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনও) তৈরি করে। সেটি একাধিক প্রোটিন তৈরি করে যা এই আরএনএর আবরণ তৈরি করে। প্রতিটি এমআরএনএ প্রোটিন আবরণের একটি আলাদা অংশ তৈরি করে। একটি নির্দিষ্ট কাঠামোসহ একটি জিন নির্দিষ্ট কাঠামোর এমআরএনএ তৈরি করে। এই এমআরএনএ আবার নির্দিষ্ট কাঠামোর প্রোটিন তৈরি করে। এর মধ্যে একটি হলো—স্পাইক প্রোটিন। 

নতুন প্রযুক্তিতে টিকা তৈরির প্রথম অংশ—এমআরএনএ তৈরি—অপেক্ষাকৃত সহজই ছিল। দ্বিতীয় অংশটি—নিরাপদে শরীরের কোষে সেই এমআরএনএ প্রবেশ করানো—এই পদ্ধতি বের করতে ৩০ বছর লেগে গেছে। শরীরে প্রবেশ করানো এমআরএনএকে রক্তে ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলোতে প্রবেশ করতে হবে যা কাঙ্ক্ষিত প্রোটিনের অংশ তৈরি করতে শুরু করবে। এই প্রোটিনই ইমিউন সিস্টেমকে সেই ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা দেবে, ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে। 

এমআরএনও ভ্যাকসিন তৈরিতে বাধা অতিক্রম
কোভিড কালে অবিশ্বাস্য গতিতে টিকা তৈরি হলেও এর আগে বিজ্ঞানীদের বেশ কয়েকটি বাধা অতিক্রম করতে হয়েছিল। প্রথমত, এমআরএনএকে মাইক্রোস্কোপিক (অতিক্ষুদ্র) ক্যাপসুলের ভেতর ঢুকানো যাতে এটি রক্তে রাসায়নিকের সংস্পর্শে গিয়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। দ্বিতীয়ত, এমআরএনএকে পরিবর্তন করার কৌশল বের করতে হয়েছে যাতে, এটি ইমিউন সিস্টেম আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি না করে। তৃতীয়ত, রক্তের মধ্যে প্রবাহিত এমআরএনএকে গ্রহণ করার জন্য ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলোকে উৎসাহিত করা। অবশেষে, কোষগুলোকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন তৈরির জন্য উৎসাহিত করা, যাতে এটি ইমিউন সিস্টেমকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করে। 

কোভিড–১৯ 
 ৩০ বছরের শ্রমসাধ্য গবেষণা ফাইজার–বায়োএনটেক এবং মডার্নার মতো কোম্পানিকে এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি বাস্তবে কাজে লাগানোর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। কোম্পানিগুলো তাত্ত্বিকভাবে এমন কৌশল উদ্ভাবন করেছে, যা যে কোনো সংক্রামক রোগের জন্য ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে। 

এরপর আসে কোভিড–১৯। এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস সনাক্ত করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চীনের বিজ্ঞানীরা স্পাইক প্রোটিন তৈরিকারী জিনসহ এর সমস্ত জিনের গঠন শনাক্ত করেছিলেন এবং এই তথ্য তাঁরা ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছিলেন। 

এর কয়েক মিনিটের মধ্যে ১০ হাজার মাইল দূরের বিজ্ঞানীরা একটি এমআরএনও ভ্যাকসিনের নকশা নিয়ে কাজ শুরু করেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা পশু এবং পরে মানুষের শরীরে এটি পরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলেন। 

সার্স–কোভ–২ ভাইরাস আবিষ্কারের মাত্র ১১ মাস পর যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিশ্চিত করে, কোভিড–১৯–এর জন্য একটি কার্যকর এবং নিরাপদ এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। এর আগে, চার বছরের কম সময়ে কোনও নতুন ভ্যাকসিন তৈরি সম্ভব হয়নি। 

এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অবদানের জন্য হাঙ্গেরি ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী যৌথভাবে এবারের চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল জিতে নিয়েছেন। বিজয়ী হিসেবে কাতালিন ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যানের নাম আজ সোমবার বিকেলে ঘোষণা করে নোবেল কমিটি। 

 ১৯৯০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটিতে একসঙ্গে কাজ করতেন কাতালিন ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যান। ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন কাতালিন। ২০২১ সাল থেকে তিনি সিজড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। পেনসিলভানিয়ার সঙ্গেও যুক্ত আছেন। আর ওয়েইসম্যান ১৯৫৯ সালে আমেরিকার ম্যাসচুয়েটসে জন্ম নেন। তিনি আমেরিকার পেন ইনস্টিটিউট ফর আরএনএ ইনোভেশন কাজ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রেইনবো ডায়েট কী, সুস্বাস্থ্যের জন্য কেন দরকারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রঙিন খাবারে সাজানো প্লেট দেখতে আমাদের মন এমনিতেই খাবারের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ছবি: পেক্সেলস
রঙিন খাবারে সাজানো প্লেট দেখতে আমাদের মন এমনিতেই খাবারের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ছবি: পেক্সেলস

জীবনে রঙের অস্তিত্ব না থাকলে কেমন হতো? নির্জীব, একঘেয়ে কেমন যেন নিরানন্দ কিংবা নেই কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা। রঙিন কিছু দেখলেই আমাদের মন যেন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে, খাবারের বেলায়ও এটি একই রকম সত্য।

রঙিন খাবারে সাজানো প্লেট দেখতে আমাদের মন এমনিতেই খাবারের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। খাবার দেখার ও ঘ্রাণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মস্তিষ্ক হজমের প্রস্তুতির জন্য নানা সংকেত পাঠাতে শুরু করে।

তবে দেখতে সুন্দর তা ই নয়, রঙিন খাবারের প্লেট আসলে পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’ বা এক শক্তিশালী ভাণ্ডার। ফলমূল ও শাকসবজিতে রঙের অস্তিত্ব জানান দেয় এসবে আছে উদ্ভিজ্জ রঞ্জক বা পিগমেন্ট— যার সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড ও অ্যান্থোসায়ানিন। এসব রঞ্জক ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট’ নামে পরিচিত।

আমাদের শরীর নিজে থেকে এসব ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট তৈরি করতে পারে না, অথচ নানা রোগ, প্রদাহ, সংক্রমণ এমনকি কিছু ধরনের ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দিতে এগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খাবারের প্রতিটি রং আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকার নিয়ে আসে চলুন জেনে নেওয়া যাক—

১. লাল রঙের খাবার: লাইকোপিনে ভরপুর

লাল রঙের ফল ও সবজিতে থাকে লাইকোপিন নামের এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি প্রকৃতিতে পাওয়া সবচেয়ে কার্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর একটি।

রঙিন খাবারের প্লেট পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’ বা এক শক্তিশালী ভাণ্ডার। ছবি: পেক্সেলস
রঙিন খাবারের প্লেট পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’ বা এক শক্তিশালী ভাণ্ডার। ছবি: পেক্সেলস

যে কারণে লাল রঙের খাবার বেশি খাওয়া উচিত

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুপারস্টার: শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বা টক্সিন বের করতে সাহায্য করে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।

চোখের সুরক্ষা: এক গবেষণায় দেখা গেছে, লাইকোপিন চোখের ম্যাকুলা অংশের ক্ষয় ধীর করতে সাহায্য করে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক: প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে লাইকোপিন। এছাড়াও স্তন ক্যানসারের অগ্রগতিও ধীর করতে পারে।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে মস্তিষ্কের কোষকে সুরক্ষা দেয়।

হৃদ্স্বাস্থ্য: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়, যা হৃদ্রোগের বড় ঝুঁকির কারণ।

লাল রঙের খাবারের সেরা উৎস: টমেটো (রান্না করা বা ব্লেন্ড করা টমেটো সবচেয়ে বেশি কার্যকর), তরমুজ, লাল পেয়ারা, জাম্বুরা এবং লাল গাজর।

লাল রঙের ফল ও সবজিতে থাকে লাইকোপিন নামের এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ছবি: পেক্সেলস
লাল রঙের ফল ও সবজিতে থাকে লাইকোপিন নামের এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ছবি: পেক্সেলস

২. কমলা ও হলুদ রঙের খাবার: ত্বক, চোখ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বুস্টার

এই উজ্জ্বল রংগুলোর উৎস বিটা-ক্রিপ্টোজ্যানথিন নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ যৌগ, যা কোষের পারস্পরিক যোগাযোগ ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহায়তা করে।

উপকারিতা:

শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: বয়স দ্রুত বাড়ানো, প্রদাহ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্য দায়ী ফ্রি র‍্যাডিক্যালকে নিষ্ক্রিয় করে।

প্রো-ভিটামিন এ: শরীরে সহজে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়, যা চোখের দৃষ্টি ও সুস্থ ত্বকের জন্য অপরিহার্য।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ইমিউন কোষের গঠন ও কার্যকারিতা উন্নত করে। বিশেষ করে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসে, যেখানে ভিটামিন এ গ্রহণ তুলনামূলক কম হতে পারে, সেখানে এটি খুবই উপকারী।

সেরা উৎস: আম, পেঁপে, কমলা, কুমড়া, হলুদ ক্যাপসিকাম।

লাল-নীল-সবুজ রঙের পাশাপাশি ফ্যাকাশে বা বাদামি রঙের খাবারও খেতে হবে। ছবি: পেক্সেলস
লাল-নীল-সবুজ রঙের পাশাপাশি ফ্যাকাশে বা বাদামি রঙের খাবারও খেতে হবে। ছবি: পেক্সেলস

৩. সবুজ রঙের খাবার: ক্লোরোফিল ও ডিটক্সের জাদু

সবুজ খাবারের রং আসে ক্লোরোফিল থেকে। প্রকৃতিতে পাওয়া সবচেয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় সবুজ শাকসবজি শীর্ষে।

কেন সবুজ খাবার জরুরি?

বিটা-ক্যারোটিন: ধমনিতে চর্বি জমা (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস), ক্যানসার, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ও ডিএনএ ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়ক।

উচ্চ আঁশ (ফাইবার) : অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ভিটামিন কে ও পটাশিয়াম: রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সালফোরাফেন ও আইসোথায়োসায়ানেটস: শরীরের ডিটক্স প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে, কোলনের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

সেরা উৎস: পালং শাক, ব্রকলি, কেল, সজনে পাতা, মেথি শাক, সবুজ হার্বস, অ্যাসপ্যারাগাস, কিউই, বাঁধাকপি, অঙ্কুরিত বীজ (স্প্রাউটস) ও গ্রিন টি।

৪. নীল ও বেগুনি রঙের খাবার: অ্যান্থোসায়ানিনের শক্তি

অ্যান্থোসায়ানিন আছে এমন খাবারে এই রংগুলো থাকে। যা থেকে বুঝা যায় এ খাবারগুলো শক্তিশালী ফ্ল্যাভোনয়েড এবং প্রদাহনাশক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণে ভরপুর।

উপকারিতা:

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

হৃদ্স্বাস্থ্য: কোলেস্টেরল ও প্রদাহ কমায়, ধমনিতে প্লাক জমা রোধে সহায়ক।

মস্তিষ্কের সুরক্ষা: স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকারিতা উন্নত করে, ডিএনএ ক্ষতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা: ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ধীর বা বন্ধ করতে সহায়তা করতে পারে।

সেরা উৎস: ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, বেগুনি বাঁধাকপি, বেগুন, আঙুর, বরই, ডুমুর।

রঙিন ফলমূল ও শাকসবজিতে আছে ২ হাজারেরও বেশি উদ্ভিজ্জ রঞ্জক বা পিগমেন্ট। ছবি: পেক্সেলস
রঙিন ফলমূল ও শাকসবজিতে আছে ২ হাজারেরও বেশি উদ্ভিজ্জ রঞ্জক বা পিগমেন্ট। ছবি: পেক্সেলস

৫. সাদা ও বাদামি খাবার: নীরব চিকিৎসক

লাল-নীল-সবুজ এমন রঙিন খাবারের ভিড়ে কিন্তু ফ্যাকাশে বা বাদামি রঙের খাবারকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। কেন না এসব খাবারে রয়েছে অ্যালিসিন, কোয়ারসেটিন, ক্যাম্পফেরল মতো যৌগ। এগুলোর প্রতিটিই স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।

উপকারিতা:

অ্যালিসিন: এই উপাদানটি রসুনে থাকে। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে কার্যকর, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

কোয়ারসেটিন: শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক, অ্যালার্জি এবং হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

ক্যাম্পফেরল: হৃদ্রোগ ও কিছু ধরনের ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দেয়।

সেরা উৎস: রসুন, পেঁয়াজ, ফুলকপি, মাশরুম ও মুলা।

আপনার প্রতিদিনের ‘রেইনবো ডায়েট’ সাজাতে পারেন যেভাবে—

১. আপনার প্লেটের অর্ধেক পূর্ণ করুন সবজি দিয়ে।

২. প্রতিদিন দুটি ফল খান।

৩. সর্বোচ্চ তাজা ও পুষ্টির জন্য মৌসুমি এবং স্থানীয় ফল ও সবজি বেছে নিন।

৪. প্রতিদিন একটি নতুন রঙের খাবার যোগ করুন।

৫. খাবার পরিকল্পনার সময় ক্যালরির পরিবর্তে রঙের দিকে মন দিন।

বিজ্ঞান বারবার প্রমাণ করেছে, যখন ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের কথা আসে, তখন সাপ্লিমেন্ট বা কৃত্রিম ওষুধের চেয়ে প্রাকৃতিক খাবার অনেক বেশি কার্যকর। প্রাকৃতিক খাবারে বিদ্যমান ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের যে সম্মিলিত শক্তি থাকে, কোনো ওষুধ বা পিল তা দিয়ে পূরণ হয় না। তাই প্রতিদিনের পুষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণে রঙকেই বেছে নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওজন কমাতে অনুপ্রেরণা ধরে রাখবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেমন কঠিন, সেই সিদ্ধান্তে দীর্ঘদিন অটল থাকা অনেকের ক্ষেত্রে আরও কঠিন। সঠিক অনুপ্রেরণা না থাকলে ওজন কমানো শুরু করাই কঠিন হয়ে পড়ে। আর শুরু করলেও মাঝপথে থেমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে কিছু বাস্তবসম্মত কৌশল অনুসরণ করলে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন সহজ হতে পারে।

নিজেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি না ভাঙা

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া বেশ ভূমিকা রাখতে পারে। কেউ কেউ লিখিত পরিকল্পনা বা অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিদিনের লক্ষ্য ঠিক করেন। আবার কেউ জিমের সদস্যপদ বা ব্যায়াম ক্লাসে ভর্তি হয়ে নিজেকে দায়বদ্ধ করে তোলেন। এতে মাঝপথে হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা কমে।

জীবনযাপনের সঙ্গে মানানসই পরিকল্পনা বেছে নেওয়া

যে ডায়েট বা ব্যায়াম পরিকল্পনা দীর্ঘদিন মেনে চলা সম্ভব নয়, তা এড়িয়ে চলা ভালো। অতিরিক্ত কঠোর নিয়ম অথবা সবকিছু একেবারে বাদ দেওয়ার মানসিকতা অনেক সময় উল্টো ফল বয়ে আনে। বরং ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ, খাবারের পরিমাণ কমানো, অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া এবং বেশি করে ফল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত করার মতো অভ্যাসগুলো দীর্ঘ মেয়াদে উপকারী।

পছন্দের ব্যায়াম খোঁজা

ওজন কমাতে শারীরিক কার্যকলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যে ব্যায়াম আপনার ভালো লাগে না, তা বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া কঠিন। হাঁটা, সাঁতার, নাচ, সাইক্লিং কিংবা জিম—যে ধরনের ব্যায়াম উপভোগ করেন, সেটিই বেছে নেওয়া ভালো।

যে বিষয়গুলো অনুপ্রেরণা জোগায়

ওজন কমানোর পুরো যাত্রায় শুধু শেষ লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে হতাশা আসতে পারে। তাই ছোট ছোট প্রক্রিয়াগত লক্ষ্য ঠিক করা জরুরি। যেমন সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েক দিন ব্যায়াম করা বা প্রতিটি খাবারে সবজি রাখা। এসব লক্ষ্য পূরণ হলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। নিজের অগ্রগতি লিখে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। খাবার ও দৈনন্দিন অভ্যাসের হিসাব রাখলে কোথায় ভুল হচ্ছে কিংবা কোন অভ্যাস ওজন বাড়াচ্ছে, তা সহজে ধরা পড়ে।

সামাজিক সহায়তা এবং ইতিবাচক মনোভাব

পরিবার ও বন্ধুদের নিজের লক্ষ্য জানালে তারা মানসিক সমর্থন দিতে পারে। কেউ কেউ ওজন কমানোর সঙ্গী পেলে আরও অনুপ্রাণিত বোধ করে। পাশাপাশি নিজের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে কথা বলা এবং পরিবর্তনের প্রতি দৃঢ় মনোভাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

বাধা এলে যা করতে হবে

জীবনে নানা ধরনের চাপ এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলে আবার সঠিক পথে ফেরা সহজ হয়। নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা না করে নিজের ভুল মেনে নেওয়া এবং নিজেকে ক্ষমা করাও অনুপ্রেরণা ধরে রাখতে সহায়ক।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাই সবচেয়ে বড় শক্তি। সবার অনুপ্রেরণার উৎস এক নয়। তাই নিজের জন্য কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে নেওয়াই হলো মূল চাবিকাঠি।

তবে ধৈর্য ধরুন, ছোট ছোট সাফল্য উদ্‌যাপন করুন

এবং প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে সংকোচ করবেন না। সঠিক পরিকল্পনা ও সমর্থন থাকলে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

সূত্র: হেলথ লাইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতে থাইরয়েড রোগীরা যা করবেন

ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম 
শীতে থাইরয়েড রোগীরা যা করবেন

থাইরয়েড হরমোন আমাদের গলার সামনে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একধরনের হরমোন কিংবা প্রাণরস। এটি গলার সামনে থেকে নিঃসৃত হলেও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো শরীরে কাজ করে।

হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ

  • ওজন বেড়ে যাওয়া
  • ঘুম কম হওয়া
  • শীত শীত ভাব
  • সন্তান ধারণে সমস্যা
  • বিষণ্নতা

শীতকালীন সবজি খাওয়ায় সতর্কতা

কাবেজ জাতীয় সবজি; যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুসপাতায় থাকে গয়ট্রোজেন নামে একধরনের উপাদান। এটি থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে বাধা দিয়ে থাকে। তাই যাঁদের হাইপোথাইরয়েড আছে, তাঁদের এসব সবজি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যাবে না। কিন্তু রান্না করে অল্প খাওয়া যাবে।

শীতকালে থাইরয়েড রোগীদের হরমোনের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত দুর্বল লাগে, ঠান্ডা ভাব এবং কাজের গতি ধীর হতে পারে।

শীতকালে থাইরয়েড রোগীদের করণীয়

গরম থাকার চেষ্টা করুন: জ্যাকেট কিংবা কম্বল ইত্যাদির মতো গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। গরম খাবার বেশি খেতে হবে; যেমন স্যুপ কিংবা চা।

ভিটামিন ‘ডি’ বাড়ান: সকাল ৯ থেকে ১০টার দিকে রোদে থাকার চেষ্টা করুন। ভিটামিন ‘ডি’ লেভেল বেশি কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।

খাদ্যাভ্যাস: পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ভিটামিন ‘সি ও বি’ সমৃদ্ধ এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।

মন নিয়ন্ত্রণ করুন: মুড সুইং খুবই সাধারণ বিষয় থাইরয়েড রোগীদের জন্য। তাই নিজের মন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন, কর্মঠ থাকুন, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। প্রয়োজনে লাইট থেরাপি নিতে পারেন।

শীতে থাইরয়েড রোগীদের ত্বকের যত্ন

থাইরয়েড রোগীদের ত্বক স্বভাবতই শুষ্ক থাকে। শীতকালে তা আরও শুষ্ক হয়ে ওঠে। তাই শীতকালে গোসলের পর ময়শ্চারাইজার, লোশন কিংবা ক্রিম নিয়মিত ব্যবহার করুন। ত্বকে চুলকানি অথবা র‍্যাশ থাকলে চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

নিয়মিত ফলোআপ

৩ থেকে ৬ মাস পরপর আপনার হরমোন ও থাইরয়েড, বিশেষত এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের মাত্রা কম কিংবা বেশি করা যাবে না।

এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল, কাকরাইল, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সবজির পুষ্টিগুণ পাওয়ার সঠিক উপায়

মো. ইকবাল হোসেন
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুষম খাবারের ৬টি উপাদানের অন্যতম ভিটামিন ও খনিজ লবণ। এগুলো আমাদের শরীরের চালিকাশক্তির অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত। শরীরের একেকটি অঙ্গের সুরক্ষায় একেক ধরনের ভিটামিন প্রয়োজন হয়। যেমন চুল ও চোখের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘এ’, ত্বকের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘বি’ ও ‘সি’, হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘ডি’ প্রয়োজন হয়। আবার ত্বক, চুল ও প্রজননতন্ত্রের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘ই’-এর ভূমিকা অনেক বেশি। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন রকমের পেশি এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষায় খনিজ লবণের ভূমিকা অনেক বেশি।

এই ভিটামিন ও খনিজ লবণগুলো আমরা প্রধানত শাকসবজি ও ফলমূল থেকে পেয়ে থাকি। কিন্তু কিছু অসাবধানতার ফলে শাকসবজি ও ফলমূলের পুষ্টির একটা বড় অংশ হারিয়ে যায়।

শাকসবজি কাটার পরে ধোয়া

আমরা ঐতিহ্যগতভাবে শাকসবজি কাটার পর পানি দিয়ে কয়েকবার ধুয়ে থাকি। এতে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ‘বি ও সি’ পানির সঙ্গে মিশে শাকসবজির বাইরে চলে যায়। ফলে আমরা ওই শাকসবজি থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ পাই না। তাই সেগুলো কাটা বা খোসা ছাড়ানোর আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এতে ময়লা পরিষ্কারের পাশাপাশি সব পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকবে। শাকসবজি কাটার আগে বঁটি, ছুরি বা গ্রেটারও খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

অনেক সময় ধরে রান্না করা

শাকসবজি রান্নার নামে দীর্ঘ সময় আগুনের তাপে রাখা যাবে না। অল্প তাপেই শাকসবজিতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু মারা যায়। এগুলো যত কম সময় সেদ্ধ করা হবে, তত বেশি পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকবে। যেমন দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করলে শাকসবজির প্রায় ৫০ শতাংশ পটাশিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এটি শরীরের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় খনিজ। ফলে অল্প আঁচে ভাপানো শাকসবজি খাওয়া ভালো।

শাকসবজির রং বজায় রাখুন

প্রতিটি শাকসবজির নিজস্ব রং বজায় রেখে রান্না করলে তার পুষ্টিগুণ বেশি বজায় থাকবে। যেমন গাজর রান্নার পর লাল রং, শিম রান্নার পর সবুজ রং কিংবা ফুলকপির সাদা রং বজায় থাকতে হবে। রান্না করতে গিয়ে শাকসবজির রং যত নষ্ট হবে, তার পুষ্টিগুণ তত বেশি নষ্ট হবে।

কাটার পর দ্রুত রান্না করুন

অনেক সময় রাতে শাকসবজি কেটে রেখে দেওয়া হয় সকালে রান্না করার জন্য। অথবা সকালে কেটে রাখি দুপুরে রান্না করার জন্য। এভাবে দীর্ঘ সময় কেটে রেখে দিলে শাকসবজির কাটা অংশ বাতাসের সংস্পর্শে এসে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুষ্টিগুণ নষ্ট করে। এভাবে কেটে রাখা শাকসবজিতে বিষক্রিয়াও হতে পারে। তাই এর সঠিক পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে রাতে কেটে না রেখে রান্নার আগে কেটে দ্রুত রান্না করুন।

ধারালো বঁটি বা ছুরি ব্যবহার করুন

শাকসবজি কাটার কাজে ধারালো বঁটি অথবা ছুরি ব্যবহার করতে হবে। ভোঁতা বঁটি বা ছুরি দিয়ে এগুলো কাটার পর অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া ভোঁতা বঁটি বা ছুরি দিয়ে কেটে রাখা শাকসবজিতে দ্রুত ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে।

বড় টুকরা করে কাটুন

সবজি ছোট টুকরা করে না কেটে যথাসম্ভব বড় টুকরা করে কাটবেন। ছোট টুকরা করে কাটলে তাপে বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। কিন্তু টুকরা বড় রাখলে বেশি তাপে রান্নায়ও ভেতরের পুষ্টিগুণ সহজে নষ্ট হয় না।

খোসাসহ রান্না করতে হবে

গাজর, পটোল, লাউ, শসা, মিষ্টিকুমড়ার মতো সবজিগুলো খোসাসহ রান্না করতে হবে। এসব সবজির খোসায়ও অনেক ভিটামিন ও মিনারেল থাকে।

ভাজা ভাজা করবেন না

শাকসবজি ভাজা ভাজা না করে রান্না করে খেলে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। প্রথমত ভাজা করতে হলে খুব ছোট টুকরা করে কাটতে হয়। দ্বিতীয়ত ভাজি করতে হলে দীর্ঘ সময় তাপে রাখতে হয়। এই দুটি বিষয় শাকসবজির পুষ্টিগুণ অনেক কমিয়ে দেয়। তাই এগুলো ঝোল করে রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত