Ajker Patrika

দুধের নিয়ন্ত্রিত দামে লোকসানে খামারিরা

ওয়াহিদুজ্জামান, বেড়া (পাবনা) 
দুধের নিয়ন্ত্রিত দামে লোকসানে খামারিরা

খোলাবাজারে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। কিন্তু সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে হয় লিটারপ্রতি ৪০ থেকে ৪৮ টাকায়। পাবনা ও সিরাজগঞ্জে সমিতির সঙ্গে যুক্ত থাকা খামারিদের প্রতিষ্ঠান-নির্ধারিত এই দামের বাইরে দুধ বিক্রির সুযোগ নেই। কিন্তু এই ব্যবস্থার কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁদের। তাই অনেকে গরু পালনই বন্ধ করে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে দুধের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাবে বলে মনে করছেন খামারিরা। লিটারপ্রতি দাম অন্তত ১০ টাকা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় নিয়ন্ত্রিত ছোট-বড় ৪০০ গোচারণভূমিতে উন্নত জাতের এক লাখের বেশি গরু পালন করেন খামারিরা। এসব গরু থেকে আসা আয়ের ওপর নির্ভরশীল প্রায় দেড় লাখ পরিবার। এখানে উৎপাদিত প্রায় দুই লাখ লিটার তরল দুধ সংগ্রহ করে সরকারি সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা এবং বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান। মূলত এসব প্রতিষ্ঠানই দুধের দাম নির্ধারণ করে দেয়।
 
খামারিদের অভিযোগ, গোখাদ্যের উচ্চ মূল্যসহ দুধ উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধিকে বিবেচনায় না নিয়ে তাঁদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করছে এসব প্রতিষ্ঠান। এ কারণে দিন দিন গরু পালনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন তাঁরা।
 
দুধের দামের একটি তুলনামূলক হিসাব দেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের চড়াচিথুলিয়া গ্রামের খামারি মো. টিক্কা খান। তিনি দাবি করেন, প্রতি লিটার ৪৩-৪৮ টাকা দরে খামারিদের কাছ থেকে দুধ কেনে প্রতিষ্ঠানগুলো। ননি আলাদা করার পর তরল দুধ প্যাকেটজাত করে ৮৫ টাকা লিটারে বাজারজাত করে তারা। অর্থাৎ কেনা দামের প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার দুধ থেকে পাওয়া ননিতে যে ঘি উৎপাদিত হয়, তার মূল্য ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি লিটার দুধ থেকে অনেক বেশি লাভ করছে। কিন্তু খামারিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন তাঁরা। 
 
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী গ্রামের জাকির হোসেনের খামারে দুই বছর আগেও শতাধিক গাভি ছিল। তবে এখন তিনি মাত্র চারটি গাভি পালন করছেন। তিনি বলেন, অব্যাহত লোকসানের মুখে বাকি গাভিগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন।
 
পাবনার বেড়ার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন মিল্ক ভিটা সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আলম বলেন, আগে সমিতির মাধ্যমে দুই শতাধিক খামারি প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করতেন। এখন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। কারণ, খামারিরা খোলাবাজারে দাম বেশি পাওয়ায় সমিতিতে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।
 
স্থানীয় বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান ইছামতি মিল্ক অ্যান্ড ডেইরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রউফ বলেন, ‘খামারিরা দুধের কম দাম পাচ্ছেন, কথাটা সত্য। তবে করোনাকালে ছোট কোম্পানিগুলো সংকটে পড়ায় বড় কোম্পানিগুলো এককভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।’
 
বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম মহল্লার মিনা ডেইরি ফার্মের মালিক মাহফুজা খাতুন মিনা আজকের পত্রিকা বলেন, তিনি দুটি ডেইরিতে তাঁর খামার থেকে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ লিটার দুধ সরবরাহ করতেন। কিন্তু ন্যায্য দাম না পেয়ে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন তিনি খোলাবাজারে বিক্রি করেন।
 
এদিকে মিল্ক ভিটা-সংশ্লিষ্ট খামারিরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা সমিতির সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছেন। সে কারণে খোলাবাজারে দুধের দাম বেশি হলেও তাঁরা সমিতি-নির্ধারিত দামে দুধ সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
 
বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু পালনের মাধ্যমে খামারিরা কীভাবে লালনপালন ব্যয় কমিয়ে রাখতে পারেন, সে ব্যাপারে তিনি খামারিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ