অর্ণব সান্যাল

বাংলায় প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রবাদটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে এখন। শিরোনাম দেখেই এটি হওয়ার কথা। আর এ দেশে তো আরও বেশি। কারণ, এখানে নন্দ ঘোষের সংখ্যা অনেক, কোটি কোটি। আর দোষ যাঁরা চাপান নন্দ ঘোষদের ঘাড়ে, তাঁরা ভারহীন থাকেন সর্বদাই। কে না জানে, নিজে কিছু না করে কাজ বা দায়িত্ব বা দায়—এসব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে আরামের কাজ দুনিয়ায় আর নেই!
বাংলাদেশে এই অন্যেরা হচ্ছেন ‘সাধারণ জনগণ’। তাঁরাই এ যুগের নন্দ ঘোষ। নির্বাচনী সহিংসতা থেকে শুরু করে আলু-পটোলের দাম—সবকিছুতেই এই নন্দ ঘোষদের ঘাড়কেই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেন দেশ, রাষ্ট্র বা সরকার চালানোর কাজে নিয়োজিত দায়িত্বরতরা। তাঁরা নির্দ্বিধায় বলে দেন, নন্দ ঘোষদের কারণেই যত বিপত্তি! অথচ এ দেশটা চলে নন্দদের ধাক্কাতেই। কিন্তু দিন শেষে নিরানন্দে থাকাটাই যেন নন্দদের একমাত্র ভবিতব্য। বাড়তি পাওনা হিসেবে ঘাড় পেতে নিতে হয় দোষের দায়।
এই যেমন চালের বাজার। দেশের পুরো বাজারই যদিও অস্থির, তবে চালের বাজারের চঞ্চলতা মানুষের পেটে আঘাত করছে সরাসরি। আজকের পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে, বোরো ধানের ভরা মৌসুম এখন। কোনো কোনো জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। কিন্তু খোলাবাজারে চাল আসছে কম। আর চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ঘাটতির পরিণামে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় চালভেদে এক লাফে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত কিছুদিনে; বিশেষ করে চাল উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত কুষ্টিয়া, নওগাঁর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারগুলোতেও।
সুতরাং, চালের দামের ইদানীংকালের চঞ্চলতা প্রমাণিত। আর ঠিক সেই সময়েই আমরা শুনতে পেলাম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। মন্ত্রীরা বলছেন, চালের আকাল নেই। চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি সম্প্রতি এ-ও বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন মোটা চাল খেতে চাচ্ছে না। বাজারে মোটা চালের ক্রেতা নেই। মোটা চাল চিকন করা হচ্ছে। সেই চাল বেশি টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছেন মানুষ।’ আর এ কারণেই ব্যবসায়ীরা ৫০ টাকা কেজি চাল শুধু প্যাকেট করে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘...একই চাল খোলাবাজারে ক্রেতা কম দামে কিনতে পারেন। নিশ্চয়ই তাঁরা কাস্টমার পাচ্ছেন বলেই বিক্রি করতে পারছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তাঁরা আজকে প্যাকেটজাত খাবার খাচ্ছেন। না হলে একই চাল বাজারে কম দামেও পাওয়া যাচ্ছে।’
কথাগুলোয় একটু কী অন্য রকম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে? মনে কি হচ্ছে না যে, চিকন চাল খাওয়াটাই কাল! চালের স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা নানা কথা শুনতে পাই। জানুয়ারি মাসে খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে সরু চাল খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রিকশাচালকেরাও সরু চাল খেতে চায়। অনেক করপোরেট কোম্পানি বাজার থেকে সরু চাল কিনে প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বিক্রি করে।’ অর্থাৎ, চাল কেটে বিক্রি করে মুনাফা করার যে বাণিজ্যনীতি (সু অথবা কু), তার বিষয়ে সরকারের উচ্চমহল অবহিত। তার প্রতিকারে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? মানুষ—সে ধনী হোক বা গরিব, তার সরু চাল খাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে। কিন্তু বাজারে সেটির ন্যায্য বিনিময়মূল্য বজায় রাখা সরকারের কাজ। এখন সরকারি কার্যালয়গুলো সেই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে না পেরে বাজার অস্থির হলেই যদি কর্তৃপক্ষীয় সুরে বলতে থাকে, ‘কেন খাও সরু চাল?’—তবে দোষ প্রকারান্তরে ভুক্তভোগীদের ওপরই চাপানো হচ্ছে নাকি?

সরু চাল খাওয়ার দোষের মতো কিছুদিন আগে সয়াবিন তেল খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলোও আমরা মন্ত্রী মহোদয়দের কাছ থেকে শিখতে পেরেছি। তেল বাজার থেকে ন্যাপথলিনের মতো হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে তার দাম প্রায় ডাবল সেঞ্চুরির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই ‘জিম্মি’-প্রক্রিয়া আটকাতে না পেরে এক অর্থে বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়ে এ দেশে। আর তারপরই বাণিজ্যমন্ত্রী সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে নজর দিতে বলেছেন রাইস ব্র্যান ও সরষের দিকে। তিনি বলেছেন, ‘সয়াবিনের চেয়ে রাইস ব্র্যান ভালো। শরীরের জন্যও উপকারী। সয়াবিন তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর।’
অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে সয়াবিন তেল না খাওয়ার পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। তা এই ‘অপকারী’ বস্তুটি বাজার থেকে একেবারে তুলে দেওয়া কি যায় না? তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়! নাকি দাম সাধারণের পকেটের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেই এমন ‘নসিহত’ পাওয়া যাচ্ছে? আগে সয়াবিনের এত ‘ক্ষতি’ সম্পর্কে উচ্চমহল থেকে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলেই আসলে প্রশ্নগুলো উঠেছে।
এতেই শেষ নয়। এ তো গেল খাওয়া-দাওয়ার কথা। এর আগে নাগরিকদের ‘প্রাণ’ যাওয়া নিয়েও ঊর্ধ্বতনদের হাত ধুয়ে ফেলার মতো বক্তব্য আমরা পেয়েছিলাম। তাতেও শেষ পর্যন্ত দায় চলে গিয়েছিল সাধারণদের ঘাড়েই। খুব বেশি দিনের আগের ঘটনা সেটি নয়। গত বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত কয়েক ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মরে যাওয়ার খবর দিয়েছিল আইন ও সালিশ কেন্দ্র। আহত হয়েছিলেন শত শত। প্রাণহানির পাশাপাশি কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছিল। যদিও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছিল, এসব ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ এবং ‘ভোট খুব ভালো হয়েছে’। আর সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মন্তব্য পাওয়া যায় প্রাণহানির ঘটনায়। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন শেষে প্রাণহানির ঘটনার দায় বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছিলেন, ‘প্রার্থী ও সমর্থকেরা দায় নেবেন। তাঁরা কেন এটি করেছেন? প্রার্থী ও সমর্থকদের অতি আবেগী হওয়া উচিত না।’
অর্থাৎ, যাঁরা নির্বাচন আয়োজন করছেন, তাঁদের কোনো দায় নেই। ইসি সচিবের কথায় সব দোষ নন্দ ঘোষদের। তাঁদের অতি আবেগ বা কম আবেগও এখন কাঠগড়ায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে নির্বাচন সুষ্ঠু বা অহিংস হওয়ার বিষয়টি শুধু আয়োজকদের ওপর নির্ভর করে না। সব পক্ষেরই সমান চেষ্টা এখানে প্রয়োজন। কিন্তু সেই চেষ্টায় সর্বতোভাবে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করা বা ক্ষেত্রবিশেষে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা আয়োজকদের অন্যতম কাজ। সেই কাজের বিচার না করে যদি শুধু তোতা পাখির মতো ‘ভোট খুব ভালো’ হওয়ার একই ক্যাসেট বারবার বাজানো হয়, তবে ফিতায় প্যাঁচ তো লাগবেই। যদিও সময়টা এমন যে নিজের কলসি নিজে বাজানো বা নিজের পিঠ নিজের হাতে চাপড়ে দেওয়াই এখন স্বাভাবিক প্রবণতা।
নির্বাচন অনেক বড় বিষয়। এসবে যেমন ঘাড় পেতে দোষ নিতে হয় নন্দদের, তেমনি দুপুর-রাতে খেতে বসলেও নিরানন্দ হতে হয়। একদিন চালের দাম বাড়ে, তো আরেকদিন মহাকাশে ওঠে তেলের দাম। আলু-পটোলও চোখ রাঙাতে ছাড়ে না। আর সেসব কিনতে গিয়ে জেরবার জনগণ একসময় শোনেন, মূল্যবৃদ্ধির ঘোড়াকে তেজি রাখার দোষও নাকি তাঁদেরই! শুনতে হয় খোঁটাও।
এহেন পরিস্থিতিতে সত্যি বলতে কি, ভয় ঢুকে গেছে মনে। সেই ভয় থেকেই হয়তো আমাদের সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে দোষের দায় নেওয়ার। সবকিছুতেই শেষে অনর্থের দোষ যখন ঘাড়ে আসেই, তখন পূর্বপ্রস্তুতি রাখাই ভালো। মনোযাতনার বিষয় হলো, পূর্বপ্রস্তুতিতে পরীক্ষায় ভালো ফল করার পূর্বাশা থাকে। তবে যে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়াই একমাত্র ভাগ্য, সেখানে নন্দ ঘোষদের মুখ গুঁজে দোষের ভার নেওয়া ছাড়া আর কীই-বা করার থাকে!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বাংলায় প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রবাদটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে এখন। শিরোনাম দেখেই এটি হওয়ার কথা। আর এ দেশে তো আরও বেশি। কারণ, এখানে নন্দ ঘোষের সংখ্যা অনেক, কোটি কোটি। আর দোষ যাঁরা চাপান নন্দ ঘোষদের ঘাড়ে, তাঁরা ভারহীন থাকেন সর্বদাই। কে না জানে, নিজে কিছু না করে কাজ বা দায়িত্ব বা দায়—এসব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে আরামের কাজ দুনিয়ায় আর নেই!
বাংলাদেশে এই অন্যেরা হচ্ছেন ‘সাধারণ জনগণ’। তাঁরাই এ যুগের নন্দ ঘোষ। নির্বাচনী সহিংসতা থেকে শুরু করে আলু-পটোলের দাম—সবকিছুতেই এই নন্দ ঘোষদের ঘাড়কেই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেন দেশ, রাষ্ট্র বা সরকার চালানোর কাজে নিয়োজিত দায়িত্বরতরা। তাঁরা নির্দ্বিধায় বলে দেন, নন্দ ঘোষদের কারণেই যত বিপত্তি! অথচ এ দেশটা চলে নন্দদের ধাক্কাতেই। কিন্তু দিন শেষে নিরানন্দে থাকাটাই যেন নন্দদের একমাত্র ভবিতব্য। বাড়তি পাওনা হিসেবে ঘাড় পেতে নিতে হয় দোষের দায়।
এই যেমন চালের বাজার। দেশের পুরো বাজারই যদিও অস্থির, তবে চালের বাজারের চঞ্চলতা মানুষের পেটে আঘাত করছে সরাসরি। আজকের পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে, বোরো ধানের ভরা মৌসুম এখন। কোনো কোনো জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। কিন্তু খোলাবাজারে চাল আসছে কম। আর চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ঘাটতির পরিণামে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় চালভেদে এক লাফে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত কিছুদিনে; বিশেষ করে চাল উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত কুষ্টিয়া, নওগাঁর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারগুলোতেও।
সুতরাং, চালের দামের ইদানীংকালের চঞ্চলতা প্রমাণিত। আর ঠিক সেই সময়েই আমরা শুনতে পেলাম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। মন্ত্রীরা বলছেন, চালের আকাল নেই। চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি সম্প্রতি এ-ও বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন মোটা চাল খেতে চাচ্ছে না। বাজারে মোটা চালের ক্রেতা নেই। মোটা চাল চিকন করা হচ্ছে। সেই চাল বেশি টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছেন মানুষ।’ আর এ কারণেই ব্যবসায়ীরা ৫০ টাকা কেজি চাল শুধু প্যাকেট করে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘...একই চাল খোলাবাজারে ক্রেতা কম দামে কিনতে পারেন। নিশ্চয়ই তাঁরা কাস্টমার পাচ্ছেন বলেই বিক্রি করতে পারছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তাঁরা আজকে প্যাকেটজাত খাবার খাচ্ছেন। না হলে একই চাল বাজারে কম দামেও পাওয়া যাচ্ছে।’
কথাগুলোয় একটু কী অন্য রকম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে? মনে কি হচ্ছে না যে, চিকন চাল খাওয়াটাই কাল! চালের স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা নানা কথা শুনতে পাই। জানুয়ারি মাসে খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে সরু চাল খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রিকশাচালকেরাও সরু চাল খেতে চায়। অনেক করপোরেট কোম্পানি বাজার থেকে সরু চাল কিনে প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বিক্রি করে।’ অর্থাৎ, চাল কেটে বিক্রি করে মুনাফা করার যে বাণিজ্যনীতি (সু অথবা কু), তার বিষয়ে সরকারের উচ্চমহল অবহিত। তার প্রতিকারে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? মানুষ—সে ধনী হোক বা গরিব, তার সরু চাল খাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে। কিন্তু বাজারে সেটির ন্যায্য বিনিময়মূল্য বজায় রাখা সরকারের কাজ। এখন সরকারি কার্যালয়গুলো সেই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে না পেরে বাজার অস্থির হলেই যদি কর্তৃপক্ষীয় সুরে বলতে থাকে, ‘কেন খাও সরু চাল?’—তবে দোষ প্রকারান্তরে ভুক্তভোগীদের ওপরই চাপানো হচ্ছে নাকি?

সরু চাল খাওয়ার দোষের মতো কিছুদিন আগে সয়াবিন তেল খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলোও আমরা মন্ত্রী মহোদয়দের কাছ থেকে শিখতে পেরেছি। তেল বাজার থেকে ন্যাপথলিনের মতো হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে তার দাম প্রায় ডাবল সেঞ্চুরির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই ‘জিম্মি’-প্রক্রিয়া আটকাতে না পেরে এক অর্থে বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়ে এ দেশে। আর তারপরই বাণিজ্যমন্ত্রী সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে নজর দিতে বলেছেন রাইস ব্র্যান ও সরষের দিকে। তিনি বলেছেন, ‘সয়াবিনের চেয়ে রাইস ব্র্যান ভালো। শরীরের জন্যও উপকারী। সয়াবিন তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর।’
অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে সয়াবিন তেল না খাওয়ার পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। তা এই ‘অপকারী’ বস্তুটি বাজার থেকে একেবারে তুলে দেওয়া কি যায় না? তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়! নাকি দাম সাধারণের পকেটের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেই এমন ‘নসিহত’ পাওয়া যাচ্ছে? আগে সয়াবিনের এত ‘ক্ষতি’ সম্পর্কে উচ্চমহল থেকে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলেই আসলে প্রশ্নগুলো উঠেছে।
এতেই শেষ নয়। এ তো গেল খাওয়া-দাওয়ার কথা। এর আগে নাগরিকদের ‘প্রাণ’ যাওয়া নিয়েও ঊর্ধ্বতনদের হাত ধুয়ে ফেলার মতো বক্তব্য আমরা পেয়েছিলাম। তাতেও শেষ পর্যন্ত দায় চলে গিয়েছিল সাধারণদের ঘাড়েই। খুব বেশি দিনের আগের ঘটনা সেটি নয়। গত বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত কয়েক ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মরে যাওয়ার খবর দিয়েছিল আইন ও সালিশ কেন্দ্র। আহত হয়েছিলেন শত শত। প্রাণহানির পাশাপাশি কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছিল। যদিও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছিল, এসব ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ এবং ‘ভোট খুব ভালো হয়েছে’। আর সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মন্তব্য পাওয়া যায় প্রাণহানির ঘটনায়। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন শেষে প্রাণহানির ঘটনার দায় বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছিলেন, ‘প্রার্থী ও সমর্থকেরা দায় নেবেন। তাঁরা কেন এটি করেছেন? প্রার্থী ও সমর্থকদের অতি আবেগী হওয়া উচিত না।’
অর্থাৎ, যাঁরা নির্বাচন আয়োজন করছেন, তাঁদের কোনো দায় নেই। ইসি সচিবের কথায় সব দোষ নন্দ ঘোষদের। তাঁদের অতি আবেগ বা কম আবেগও এখন কাঠগড়ায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে নির্বাচন সুষ্ঠু বা অহিংস হওয়ার বিষয়টি শুধু আয়োজকদের ওপর নির্ভর করে না। সব পক্ষেরই সমান চেষ্টা এখানে প্রয়োজন। কিন্তু সেই চেষ্টায় সর্বতোভাবে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করা বা ক্ষেত্রবিশেষে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা আয়োজকদের অন্যতম কাজ। সেই কাজের বিচার না করে যদি শুধু তোতা পাখির মতো ‘ভোট খুব ভালো’ হওয়ার একই ক্যাসেট বারবার বাজানো হয়, তবে ফিতায় প্যাঁচ তো লাগবেই। যদিও সময়টা এমন যে নিজের কলসি নিজে বাজানো বা নিজের পিঠ নিজের হাতে চাপড়ে দেওয়াই এখন স্বাভাবিক প্রবণতা।
নির্বাচন অনেক বড় বিষয়। এসবে যেমন ঘাড় পেতে দোষ নিতে হয় নন্দদের, তেমনি দুপুর-রাতে খেতে বসলেও নিরানন্দ হতে হয়। একদিন চালের দাম বাড়ে, তো আরেকদিন মহাকাশে ওঠে তেলের দাম। আলু-পটোলও চোখ রাঙাতে ছাড়ে না। আর সেসব কিনতে গিয়ে জেরবার জনগণ একসময় শোনেন, মূল্যবৃদ্ধির ঘোড়াকে তেজি রাখার দোষও নাকি তাঁদেরই! শুনতে হয় খোঁটাও।
এহেন পরিস্থিতিতে সত্যি বলতে কি, ভয় ঢুকে গেছে মনে। সেই ভয় থেকেই হয়তো আমাদের সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে দোষের দায় নেওয়ার। সবকিছুতেই শেষে অনর্থের দোষ যখন ঘাড়ে আসেই, তখন পূর্বপ্রস্তুতি রাখাই ভালো। মনোযাতনার বিষয় হলো, পূর্বপ্রস্তুতিতে পরীক্ষায় ভালো ফল করার পূর্বাশা থাকে। তবে যে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়াই একমাত্র ভাগ্য, সেখানে নন্দ ঘোষদের মুখ গুঁজে দোষের ভার নেওয়া ছাড়া আর কীই-বা করার থাকে!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
অর্ণব সান্যাল

বাংলায় প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রবাদটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে এখন। শিরোনাম দেখেই এটি হওয়ার কথা। আর এ দেশে তো আরও বেশি। কারণ, এখানে নন্দ ঘোষের সংখ্যা অনেক, কোটি কোটি। আর দোষ যাঁরা চাপান নন্দ ঘোষদের ঘাড়ে, তাঁরা ভারহীন থাকেন সর্বদাই। কে না জানে, নিজে কিছু না করে কাজ বা দায়িত্ব বা দায়—এসব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে আরামের কাজ দুনিয়ায় আর নেই!
বাংলাদেশে এই অন্যেরা হচ্ছেন ‘সাধারণ জনগণ’। তাঁরাই এ যুগের নন্দ ঘোষ। নির্বাচনী সহিংসতা থেকে শুরু করে আলু-পটোলের দাম—সবকিছুতেই এই নন্দ ঘোষদের ঘাড়কেই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেন দেশ, রাষ্ট্র বা সরকার চালানোর কাজে নিয়োজিত দায়িত্বরতরা। তাঁরা নির্দ্বিধায় বলে দেন, নন্দ ঘোষদের কারণেই যত বিপত্তি! অথচ এ দেশটা চলে নন্দদের ধাক্কাতেই। কিন্তু দিন শেষে নিরানন্দে থাকাটাই যেন নন্দদের একমাত্র ভবিতব্য। বাড়তি পাওনা হিসেবে ঘাড় পেতে নিতে হয় দোষের দায়।
এই যেমন চালের বাজার। দেশের পুরো বাজারই যদিও অস্থির, তবে চালের বাজারের চঞ্চলতা মানুষের পেটে আঘাত করছে সরাসরি। আজকের পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে, বোরো ধানের ভরা মৌসুম এখন। কোনো কোনো জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। কিন্তু খোলাবাজারে চাল আসছে কম। আর চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ঘাটতির পরিণামে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় চালভেদে এক লাফে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত কিছুদিনে; বিশেষ করে চাল উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত কুষ্টিয়া, নওগাঁর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারগুলোতেও।
সুতরাং, চালের দামের ইদানীংকালের চঞ্চলতা প্রমাণিত। আর ঠিক সেই সময়েই আমরা শুনতে পেলাম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। মন্ত্রীরা বলছেন, চালের আকাল নেই। চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি সম্প্রতি এ-ও বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন মোটা চাল খেতে চাচ্ছে না। বাজারে মোটা চালের ক্রেতা নেই। মোটা চাল চিকন করা হচ্ছে। সেই চাল বেশি টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছেন মানুষ।’ আর এ কারণেই ব্যবসায়ীরা ৫০ টাকা কেজি চাল শুধু প্যাকেট করে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘...একই চাল খোলাবাজারে ক্রেতা কম দামে কিনতে পারেন। নিশ্চয়ই তাঁরা কাস্টমার পাচ্ছেন বলেই বিক্রি করতে পারছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তাঁরা আজকে প্যাকেটজাত খাবার খাচ্ছেন। না হলে একই চাল বাজারে কম দামেও পাওয়া যাচ্ছে।’
কথাগুলোয় একটু কী অন্য রকম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে? মনে কি হচ্ছে না যে, চিকন চাল খাওয়াটাই কাল! চালের স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা নানা কথা শুনতে পাই। জানুয়ারি মাসে খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে সরু চাল খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রিকশাচালকেরাও সরু চাল খেতে চায়। অনেক করপোরেট কোম্পানি বাজার থেকে সরু চাল কিনে প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বিক্রি করে।’ অর্থাৎ, চাল কেটে বিক্রি করে মুনাফা করার যে বাণিজ্যনীতি (সু অথবা কু), তার বিষয়ে সরকারের উচ্চমহল অবহিত। তার প্রতিকারে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? মানুষ—সে ধনী হোক বা গরিব, তার সরু চাল খাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে। কিন্তু বাজারে সেটির ন্যায্য বিনিময়মূল্য বজায় রাখা সরকারের কাজ। এখন সরকারি কার্যালয়গুলো সেই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে না পেরে বাজার অস্থির হলেই যদি কর্তৃপক্ষীয় সুরে বলতে থাকে, ‘কেন খাও সরু চাল?’—তবে দোষ প্রকারান্তরে ভুক্তভোগীদের ওপরই চাপানো হচ্ছে নাকি?

সরু চাল খাওয়ার দোষের মতো কিছুদিন আগে সয়াবিন তেল খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলোও আমরা মন্ত্রী মহোদয়দের কাছ থেকে শিখতে পেরেছি। তেল বাজার থেকে ন্যাপথলিনের মতো হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে তার দাম প্রায় ডাবল সেঞ্চুরির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই ‘জিম্মি’-প্রক্রিয়া আটকাতে না পেরে এক অর্থে বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়ে এ দেশে। আর তারপরই বাণিজ্যমন্ত্রী সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে নজর দিতে বলেছেন রাইস ব্র্যান ও সরষের দিকে। তিনি বলেছেন, ‘সয়াবিনের চেয়ে রাইস ব্র্যান ভালো। শরীরের জন্যও উপকারী। সয়াবিন তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর।’
অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে সয়াবিন তেল না খাওয়ার পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। তা এই ‘অপকারী’ বস্তুটি বাজার থেকে একেবারে তুলে দেওয়া কি যায় না? তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়! নাকি দাম সাধারণের পকেটের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেই এমন ‘নসিহত’ পাওয়া যাচ্ছে? আগে সয়াবিনের এত ‘ক্ষতি’ সম্পর্কে উচ্চমহল থেকে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলেই আসলে প্রশ্নগুলো উঠেছে।
এতেই শেষ নয়। এ তো গেল খাওয়া-দাওয়ার কথা। এর আগে নাগরিকদের ‘প্রাণ’ যাওয়া নিয়েও ঊর্ধ্বতনদের হাত ধুয়ে ফেলার মতো বক্তব্য আমরা পেয়েছিলাম। তাতেও শেষ পর্যন্ত দায় চলে গিয়েছিল সাধারণদের ঘাড়েই। খুব বেশি দিনের আগের ঘটনা সেটি নয়। গত বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত কয়েক ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মরে যাওয়ার খবর দিয়েছিল আইন ও সালিশ কেন্দ্র। আহত হয়েছিলেন শত শত। প্রাণহানির পাশাপাশি কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছিল। যদিও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছিল, এসব ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ এবং ‘ভোট খুব ভালো হয়েছে’। আর সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মন্তব্য পাওয়া যায় প্রাণহানির ঘটনায়। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন শেষে প্রাণহানির ঘটনার দায় বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছিলেন, ‘প্রার্থী ও সমর্থকেরা দায় নেবেন। তাঁরা কেন এটি করেছেন? প্রার্থী ও সমর্থকদের অতি আবেগী হওয়া উচিত না।’
অর্থাৎ, যাঁরা নির্বাচন আয়োজন করছেন, তাঁদের কোনো দায় নেই। ইসি সচিবের কথায় সব দোষ নন্দ ঘোষদের। তাঁদের অতি আবেগ বা কম আবেগও এখন কাঠগড়ায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে নির্বাচন সুষ্ঠু বা অহিংস হওয়ার বিষয়টি শুধু আয়োজকদের ওপর নির্ভর করে না। সব পক্ষেরই সমান চেষ্টা এখানে প্রয়োজন। কিন্তু সেই চেষ্টায় সর্বতোভাবে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করা বা ক্ষেত্রবিশেষে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা আয়োজকদের অন্যতম কাজ। সেই কাজের বিচার না করে যদি শুধু তোতা পাখির মতো ‘ভোট খুব ভালো’ হওয়ার একই ক্যাসেট বারবার বাজানো হয়, তবে ফিতায় প্যাঁচ তো লাগবেই। যদিও সময়টা এমন যে নিজের কলসি নিজে বাজানো বা নিজের পিঠ নিজের হাতে চাপড়ে দেওয়াই এখন স্বাভাবিক প্রবণতা।
নির্বাচন অনেক বড় বিষয়। এসবে যেমন ঘাড় পেতে দোষ নিতে হয় নন্দদের, তেমনি দুপুর-রাতে খেতে বসলেও নিরানন্দ হতে হয়। একদিন চালের দাম বাড়ে, তো আরেকদিন মহাকাশে ওঠে তেলের দাম। আলু-পটোলও চোখ রাঙাতে ছাড়ে না। আর সেসব কিনতে গিয়ে জেরবার জনগণ একসময় শোনেন, মূল্যবৃদ্ধির ঘোড়াকে তেজি রাখার দোষও নাকি তাঁদেরই! শুনতে হয় খোঁটাও।
এহেন পরিস্থিতিতে সত্যি বলতে কি, ভয় ঢুকে গেছে মনে। সেই ভয় থেকেই হয়তো আমাদের সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে দোষের দায় নেওয়ার। সবকিছুতেই শেষে অনর্থের দোষ যখন ঘাড়ে আসেই, তখন পূর্বপ্রস্তুতি রাখাই ভালো। মনোযাতনার বিষয় হলো, পূর্বপ্রস্তুতিতে পরীক্ষায় ভালো ফল করার পূর্বাশা থাকে। তবে যে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়াই একমাত্র ভাগ্য, সেখানে নন্দ ঘোষদের মুখ গুঁজে দোষের ভার নেওয়া ছাড়া আর কীই-বা করার থাকে!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বাংলায় প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রবাদটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে এখন। শিরোনাম দেখেই এটি হওয়ার কথা। আর এ দেশে তো আরও বেশি। কারণ, এখানে নন্দ ঘোষের সংখ্যা অনেক, কোটি কোটি। আর দোষ যাঁরা চাপান নন্দ ঘোষদের ঘাড়ে, তাঁরা ভারহীন থাকেন সর্বদাই। কে না জানে, নিজে কিছু না করে কাজ বা দায়িত্ব বা দায়—এসব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে আরামের কাজ দুনিয়ায় আর নেই!
বাংলাদেশে এই অন্যেরা হচ্ছেন ‘সাধারণ জনগণ’। তাঁরাই এ যুগের নন্দ ঘোষ। নির্বাচনী সহিংসতা থেকে শুরু করে আলু-পটোলের দাম—সবকিছুতেই এই নন্দ ঘোষদের ঘাড়কেই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেন দেশ, রাষ্ট্র বা সরকার চালানোর কাজে নিয়োজিত দায়িত্বরতরা। তাঁরা নির্দ্বিধায় বলে দেন, নন্দ ঘোষদের কারণেই যত বিপত্তি! অথচ এ দেশটা চলে নন্দদের ধাক্কাতেই। কিন্তু দিন শেষে নিরানন্দে থাকাটাই যেন নন্দদের একমাত্র ভবিতব্য। বাড়তি পাওনা হিসেবে ঘাড় পেতে নিতে হয় দোষের দায়।
এই যেমন চালের বাজার। দেশের পুরো বাজারই যদিও অস্থির, তবে চালের বাজারের চঞ্চলতা মানুষের পেটে আঘাত করছে সরাসরি। আজকের পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে, বোরো ধানের ভরা মৌসুম এখন। কোনো কোনো জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। কিন্তু খোলাবাজারে চাল আসছে কম। আর চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ঘাটতির পরিণামে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় চালভেদে এক লাফে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত কিছুদিনে; বিশেষ করে চাল উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত কুষ্টিয়া, নওগাঁর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারগুলোতেও।
সুতরাং, চালের দামের ইদানীংকালের চঞ্চলতা প্রমাণিত। আর ঠিক সেই সময়েই আমরা শুনতে পেলাম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। মন্ত্রীরা বলছেন, চালের আকাল নেই। চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি সম্প্রতি এ-ও বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন মোটা চাল খেতে চাচ্ছে না। বাজারে মোটা চালের ক্রেতা নেই। মোটা চাল চিকন করা হচ্ছে। সেই চাল বেশি টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছেন মানুষ।’ আর এ কারণেই ব্যবসায়ীরা ৫০ টাকা কেজি চাল শুধু প্যাকেট করে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘...একই চাল খোলাবাজারে ক্রেতা কম দামে কিনতে পারেন। নিশ্চয়ই তাঁরা কাস্টমার পাচ্ছেন বলেই বিক্রি করতে পারছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তাঁরা আজকে প্যাকেটজাত খাবার খাচ্ছেন। না হলে একই চাল বাজারে কম দামেও পাওয়া যাচ্ছে।’
কথাগুলোয় একটু কী অন্য রকম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে? মনে কি হচ্ছে না যে, চিকন চাল খাওয়াটাই কাল! চালের স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা নানা কথা শুনতে পাই। জানুয়ারি মাসে খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে সরু চাল খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রিকশাচালকেরাও সরু চাল খেতে চায়। অনেক করপোরেট কোম্পানি বাজার থেকে সরু চাল কিনে প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বিক্রি করে।’ অর্থাৎ, চাল কেটে বিক্রি করে মুনাফা করার যে বাণিজ্যনীতি (সু অথবা কু), তার বিষয়ে সরকারের উচ্চমহল অবহিত। তার প্রতিকারে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? মানুষ—সে ধনী হোক বা গরিব, তার সরু চাল খাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে। কিন্তু বাজারে সেটির ন্যায্য বিনিময়মূল্য বজায় রাখা সরকারের কাজ। এখন সরকারি কার্যালয়গুলো সেই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে না পেরে বাজার অস্থির হলেই যদি কর্তৃপক্ষীয় সুরে বলতে থাকে, ‘কেন খাও সরু চাল?’—তবে দোষ প্রকারান্তরে ভুক্তভোগীদের ওপরই চাপানো হচ্ছে নাকি?

সরু চাল খাওয়ার দোষের মতো কিছুদিন আগে সয়াবিন তেল খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলোও আমরা মন্ত্রী মহোদয়দের কাছ থেকে শিখতে পেরেছি। তেল বাজার থেকে ন্যাপথলিনের মতো হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে তার দাম প্রায় ডাবল সেঞ্চুরির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই ‘জিম্মি’-প্রক্রিয়া আটকাতে না পেরে এক অর্থে বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়ে এ দেশে। আর তারপরই বাণিজ্যমন্ত্রী সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে নজর দিতে বলেছেন রাইস ব্র্যান ও সরষের দিকে। তিনি বলেছেন, ‘সয়াবিনের চেয়ে রাইস ব্র্যান ভালো। শরীরের জন্যও উপকারী। সয়াবিন তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর।’
অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে সয়াবিন তেল না খাওয়ার পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। তা এই ‘অপকারী’ বস্তুটি বাজার থেকে একেবারে তুলে দেওয়া কি যায় না? তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়! নাকি দাম সাধারণের পকেটের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেই এমন ‘নসিহত’ পাওয়া যাচ্ছে? আগে সয়াবিনের এত ‘ক্ষতি’ সম্পর্কে উচ্চমহল থেকে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলেই আসলে প্রশ্নগুলো উঠেছে।
এতেই শেষ নয়। এ তো গেল খাওয়া-দাওয়ার কথা। এর আগে নাগরিকদের ‘প্রাণ’ যাওয়া নিয়েও ঊর্ধ্বতনদের হাত ধুয়ে ফেলার মতো বক্তব্য আমরা পেয়েছিলাম। তাতেও শেষ পর্যন্ত দায় চলে গিয়েছিল সাধারণদের ঘাড়েই। খুব বেশি দিনের আগের ঘটনা সেটি নয়। গত বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত কয়েক ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মরে যাওয়ার খবর দিয়েছিল আইন ও সালিশ কেন্দ্র। আহত হয়েছিলেন শত শত। প্রাণহানির পাশাপাশি কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছিল। যদিও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছিল, এসব ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ এবং ‘ভোট খুব ভালো হয়েছে’। আর সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মন্তব্য পাওয়া যায় প্রাণহানির ঘটনায়। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন শেষে প্রাণহানির ঘটনার দায় বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছিলেন, ‘প্রার্থী ও সমর্থকেরা দায় নেবেন। তাঁরা কেন এটি করেছেন? প্রার্থী ও সমর্থকদের অতি আবেগী হওয়া উচিত না।’
অর্থাৎ, যাঁরা নির্বাচন আয়োজন করছেন, তাঁদের কোনো দায় নেই। ইসি সচিবের কথায় সব দোষ নন্দ ঘোষদের। তাঁদের অতি আবেগ বা কম আবেগও এখন কাঠগড়ায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে নির্বাচন সুষ্ঠু বা অহিংস হওয়ার বিষয়টি শুধু আয়োজকদের ওপর নির্ভর করে না। সব পক্ষেরই সমান চেষ্টা এখানে প্রয়োজন। কিন্তু সেই চেষ্টায় সর্বতোভাবে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করা বা ক্ষেত্রবিশেষে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা আয়োজকদের অন্যতম কাজ। সেই কাজের বিচার না করে যদি শুধু তোতা পাখির মতো ‘ভোট খুব ভালো’ হওয়ার একই ক্যাসেট বারবার বাজানো হয়, তবে ফিতায় প্যাঁচ তো লাগবেই। যদিও সময়টা এমন যে নিজের কলসি নিজে বাজানো বা নিজের পিঠ নিজের হাতে চাপড়ে দেওয়াই এখন স্বাভাবিক প্রবণতা।
নির্বাচন অনেক বড় বিষয়। এসবে যেমন ঘাড় পেতে দোষ নিতে হয় নন্দদের, তেমনি দুপুর-রাতে খেতে বসলেও নিরানন্দ হতে হয়। একদিন চালের দাম বাড়ে, তো আরেকদিন মহাকাশে ওঠে তেলের দাম। আলু-পটোলও চোখ রাঙাতে ছাড়ে না। আর সেসব কিনতে গিয়ে জেরবার জনগণ একসময় শোনেন, মূল্যবৃদ্ধির ঘোড়াকে তেজি রাখার দোষও নাকি তাঁদেরই! শুনতে হয় খোঁটাও।
এহেন পরিস্থিতিতে সত্যি বলতে কি, ভয় ঢুকে গেছে মনে। সেই ভয় থেকেই হয়তো আমাদের সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে দোষের দায় নেওয়ার। সবকিছুতেই শেষে অনর্থের দোষ যখন ঘাড়ে আসেই, তখন পূর্বপ্রস্তুতি রাখাই ভালো। মনোযাতনার বিষয় হলো, পূর্বপ্রস্তুতিতে পরীক্ষায় ভালো ফল করার পূর্বাশা থাকে। তবে যে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়াই একমাত্র ভাগ্য, সেখানে নন্দ ঘোষদের মুখ গুঁজে দোষের ভার নেওয়া ছাড়া আর কীই-বা করার থাকে!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলায় প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রবাদটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে এখন। শিরোনাম দেখেই এটি হওয়ার কথা। আর এ দেশে তো আরও বেশি। কারণ, এখানে নন্দ ঘোষের সংখ্যা অনেক, কোটি কোটি। আর দোষ যাঁরা চাপান নন্দ ঘোষদের ঘাড়ে, তাঁরা ভারহীন থাকেন সর্বদাই। কে না জানে, নিজে কিছু না করে কাজ বা দায়িত্ব বা দায়—এসব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দে
০৫ জুন ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলায় প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রবাদটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে এখন। শিরোনাম দেখেই এটি হওয়ার কথা। আর এ দেশে তো আরও বেশি। কারণ, এখানে নন্দ ঘোষের সংখ্যা অনেক, কোটি কোটি। আর দোষ যাঁরা চাপান নন্দ ঘোষদের ঘাড়ে, তাঁরা ভারহীন থাকেন সর্বদাই। কে না জানে, নিজে কিছু না করে কাজ বা দায়িত্ব বা দায়—এসব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দে
০৫ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলায় প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রবাদটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে এখন। শিরোনাম দেখেই এটি হওয়ার কথা। আর এ দেশে তো আরও বেশি। কারণ, এখানে নন্দ ঘোষের সংখ্যা অনেক, কোটি কোটি। আর দোষ যাঁরা চাপান নন্দ ঘোষদের ঘাড়ে, তাঁরা ভারহীন থাকেন সর্বদাই। কে না জানে, নিজে কিছু না করে কাজ বা দায়িত্ব বা দায়—এসব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দে
০৫ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলায় প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রবাদটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে এখন। শিরোনাম দেখেই এটি হওয়ার কথা। আর এ দেশে তো আরও বেশি। কারণ, এখানে নন্দ ঘোষের সংখ্যা অনেক, কোটি কোটি। আর দোষ যাঁরা চাপান নন্দ ঘোষদের ঘাড়ে, তাঁরা ভারহীন থাকেন সর্বদাই। কে না জানে, নিজে কিছু না করে কাজ বা দায়িত্ব বা দায়—এসব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দে
০৫ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫