Ajker Patrika

তথ্য ফাঁসের ঘটনায় সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হয়েছে

মাসুদ রানা
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৩, ১৬: ৪১
তথ্য ফাঁসের ঘটনায় সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হয়েছে

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। ১৯৯৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। পরে ইংল্যান্ডের নর্দামবিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স ‘ব্যারিস্টার অ্যাট ল’ সম্পন্ন করেন। তিনি একজন অ্যাকটিভিস্ট। সম্পাদনা করেছেন ‘রামু: সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’ সংকলন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের বিষয়ে আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলেছেন। 

আজকের পত্রিকা: সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দেওয়ার পরও দেশের কোটি কোটি নাগরিকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা কীভাবে ঘটল?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ঘোষণা, সেটা কেবল সরকারের বক্তব্য হতে পারে না। বাংলাদেশের সব নাগরিককে ধীরে ধীরে এই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এটা আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই করতে হবে। এটা সারা পৃথিবীর মধ্যে একটা নতুন দ্বার উন্মুক্ত করার মতো ব্যাপার। সেই উদ্যোগ এখনো আমরা নিতে পারিনি। আমরা শুধু কথায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বলছি, কিন্তু এখনো তা হয়ে উঠতে পারিনি। আমাদের অধিকাংশ কাজ এখনো অ্যানালগ। কিছু কিছু কাজ ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করার সক্ষমতা অর্জন করার কারণে আমরা নিজেদের ডিজিটাল বলছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে একটা রাষ্ট্র ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য যে ধরনের দক্ষতা অর্জন, দক্ষ লোক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন হয়, এর কোনোটাই এখন পর্যন্ত আমরা অর্জন করতে পারিনি।

আমার নিজের দেখা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ইংল্যান্ডের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা শতভাগ ডিজিটালাইজড। কেউ যদি কখনো সেই সিস্টেমের কোনো কিছু হ্যাক করে, তখন পুরো শহর অন্ধকারে ডুবে যাবে। আর সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বুঝতে পারবেন যে কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে। সে হিসেবে তাঁরা ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আর রেলওয়ের পুরো নেটওয়ার্কটা ডিএলআর (ডকলান লাইট রেলওয়েস) নামে একটা পদ্ধতিতে করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় কোনো ড্রাইভার নেই। মাত্র দুটি বগি থাকে এবং পুরো ট্রেনের সিস্টেমটা চলে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে। এর মানে নেটওয়ার্ক কতটা উন্নত করা গেলে একটা রুমে বসে একজন ব্যক্তি পুরো ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারছেন। এ রকম ব্যবস্থা হয়তোবা আমরাও ভবিষ্যতে করতে পারব।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দেওয়ার পরও দেশের অধিকাংশ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গেল। আমাদের কর্তাব্যক্তিরা টেরই পেলেন না। আর আইসিটি প্রতিমন্ত্রী তো হ্যাক হওয়ার বিষয়টি স্বীকারই করলেন না; বরং তিনি সিস্টেমের দুর্বলতার কথা বললেন। তথ্য উন্মুক্ত ছিল বলে অন্য কেউ সেটা চুরি করেছে। এর মানে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিদের ডিজিটাল জ্ঞান কত নিম্নপর্যায়ের, এ ঘটনায় সেটা বোঝা গেল। ভাবা যায়, প্রায় ৫ কোটি মানুষের স্পর্শকাতর তথ্য, মানে সব ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে গেল! এটা হওয়ার পর নাগরিকের আর কোনো কিছুই গোপন থাকল না। 
 
আজকের পত্রিকা: তথ্য ফাঁসের ঘটনায় দক্ষিণ আফ্রিকার একজন ব্যক্তি প্রথম আমাদের বিভিন্ন সংস্থাকে ই-মেইল করার পরও এটাকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হলো না। আবার আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ই-মেইল না পাওয়ার কথা বললেন। এটা কীভাবে সম্ভব?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: আমি প্রতিমন্ত্রীর বিভিন্ন বক্তব্যে জানতে পেরেছি, সবগুলো মেইল ইগনোর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে আমাদের আচরণের মধ্যে, দৈনন্দিন জীবনযাপনে এবং পেশাগত জীবনেও অনলাইনটাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। দেশের বাইরে থেকে যিনি মেইল করেছেন, তিনি তো ইনফো-মেইলে পাঠিয়েছেন। তাঁর কাছে তো আইসিটি বিভাগের মেইল আইডি থাকার কথা না। তারপরও তো তিনি একটা দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে হ্যাক হওয়ার ঘটনা জানাতে মেইল করেছিলেন। কিন্তু আমাদের আইসিটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি মেইল নিয়মিত চেক না করেন, সে সবের উত্তর না দেন, তাহলে মেইলকারীর পক্ষে সময়মতো তা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়মিত চেক করা যদি পেশার দায়িত্বের মধ্যে না থাকে, তাহলে তো আমাদেরই সমস্যা। আমি পাইনি, এটা বলার সুযোগ কম। যদি অ্যাড্রেস ভুল না হয় বা টাইপিংয়ে ভুল না থাকে, তাহলে তা না আসার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের গাফিলতি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

আজকের পত্রিকা: পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটলে তা জনগণকে জানানোর নিয়ম আছে। কিন্তু এখানে সরকার কেন নীরব ভূমিকা পালন করছে?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রশ্ন। এর আগেও আমাদের সাত লাখ লোকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছিল। সিঙ্গাপুরে এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি তথ্যকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগও আছে। সেই সব ঘটনায় সেই দেশের সরকারকে দায়িত্ব নিতে দেখা গেছে।

আমরা এরশাদের শাসনামলের সমালোচনা করি, কিন্তু এরশাদের আমল পর্যন্ত যদি হিসাব করা যায় যে কোনো অঘটন ঘটলে সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হতো। কোনো উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটলে প্রেসনোটের মাধ্যমে বলা হতো, সেখানে কিছু কমন ধরা-বাঁধা কথা থাকলেও দায়িত্ববোধের জায়গাটা অন্তত ছিল। কিন্তু এরপর তথাকথিত গণতান্ত্রিক দাবিদার দলগুলো ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দায়বোধের জায়গাগুলোতে কোনো ধরনের উন্নতি ঘটেনি। যদি এ ঘটনায় জনগণকে জানানো, তাদের সতর্ক করা এবং কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তাহলেও বোঝা যেত যে তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও দায়িত্ববোধের উন্নতি ঘটেছে।

আজকের পত্রিকা: সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত। এ ঘটনায় সংবিধানের সেই ধারাটি লঙ্ঘন করা হয়েছে স্পষ্টত। আপনি কী বলেন?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ বিষয়ে ২০১০ সালের যে জাতীয় পরিচয়পত্রসংক্রান্ত আইন, সেটা সুস্পষ্টভাবে এ ঘটনায় লঙ্ঘন হয়েছে। কারণ এ ঘটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং ব্যক্তির অন্যান্য মাধ্যম থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে। সংবিধানের ৪৩ (খ) অনুচ্ছেদ ধারায় যোগাযোগ থেকে শুরু করে চিঠিপত্র আদান-প্রদান এবং ব্যক্তিগত—সবকিছুর গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে তথ্যের কথাটি সরাসরি উল্লেখ নেই, কিন্তু আমরা ব্যাখ্যা করে বলতে পারি, এ ধারাটায় আমাদের উপাত্তের সুরক্ষা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা আছে। যোগাযোগও তো উপাত্তের মধ্যে পড়ে। এ ঘটনায় এর লঙ্ঘন হয়েছে, সেটা বলা যাবে। আর জীবনের সঙ্গে তো অভিজ্ঞতাও জড়িত। কোনো ঘটনায় কোনো ব্যক্তির জীবন যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, সেটা তার ক্ষতিরও ব্যাপার। তাই এ ঘটনায় ব্যক্তির জীবনের যে কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা যে আছে, এটা আমরা বলতে পারি।

আজকের পত্রিকা: এত বড় ঘটনার দায় কি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন? 
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে সরকারি প্রতিষ্ঠান এর দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা এর দায় এড়াতে পারে না। এ থেকে বলা যায়, তাঁরা দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। আমি আপনার কথার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত যে শুধু দায় আর দায়িত্ববোধের বিষয় নয়। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে যদি উন্মুক্ত করে দিয়ে তথ্য ফাঁসের ঘটনাটি ঘটে, তাহলে সেটা তাঁদের দুর্বলতা। এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? এটা শুধু ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপার নয়। সত্যিকার অর্থে ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারও বটে।

আমরা কয়েকজন আইনজীবী মোবাইলের সিম রেজিস্ট্রেশনের সময় আঙুলের ছাপ নেওয়ার বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা যখন এর বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম, তখন বলা হয়েছিল এরা জঙ্গি, না হলে এর বিরুদ্ধে কেন কথা বলবেন? এখন তো বোঝা গেল সিম রেজিস্ট্রেশনের তথ্য কিংবা পরে পুলিশ বাসা-বাড়ি থেকে ভাড়াটেদের কাছ থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছিল, সেগুলো নীলক্ষেতের অনেক ফটোকপির দোকানে পাওয়া গিয়েছিল। একই ব্যক্তি ৮০টির মতো সিম তুলেছিল। একই রকম ঘটনা সাভার ও আশুলিয়ায়ও ঘটেছিল। সে সময় এসব নিয়ে সংবাদপত্রে অনেক রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছিল। আমরা যা যা বলেছিলাম, সে সবই ঘটেছিল। যেকোনো ব্যক্তির তথ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে তার অনুমতি নেওয়ার ব্যাপার আছে। কিন্তু এখানে কোনো কিছুর নিয়ম মানা হচ্ছে না।

আবার পাসপোর্টের জন্য যাবতীয় তথ্য দিতে হচ্ছে। এমনকি ব্যক্তির চোখ ও আঙুলের ছাপও দিতে হচ্ছে। এখন যখন হ্যাক হচ্ছে, তখন ব্যক্তির নিরাপত্তা কোথায় থাকছে? এর দায় কে নেবে? এখনই জবাবদিহি তৈরি না করা গেলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে, তখন তো কিছু করার থাকবে না। এ জন্য জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু হওয়া দরকার। সরকার যখন বিষয়টাকে সিরিয়াসভাবে দেখবে, তখন ব্যাপারগুলো পরে ঘটার আশঙ্কা থাকবে না। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত সেটা করতে পারেনি। এখন জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার যে ফিলিংস, এটা আসলে কোনো আইন দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। যতই আশ্বাস দেওয়া হোক না কেন, মানুষ বিশ্বাস করবে না। আর ভবিষ্যতে এসব নিয়ে সাংঘর্ষিক ঘটনা ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

যতই আমরা আইনের শাসনের কথা বলি না কেন, তার জন্য তো যিনি অন্যায়, অপরাধ করছেন, তাঁকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যখন সাধারণ নাগরিকের কেউ ভুল বা অন্যায় করে, তাকে কীভাবে শাস্তি দেবে? এসব ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের সমতা তো থাকতে হবে।

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত