Ajker Patrika

বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও প্রসারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়

এম আবদুল আলীম
বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও প্রসারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়

ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের মহিমায় দীপ্ত ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা আবেগে ভারাক্রান্ত হই। নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালন করি ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। পুষ্পের ডালি সাজিয়ে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার অর্ঘ্য নিবেদন করতে হাজির হই শহীদ মিনারে। শুধু তাই নয়, আলোচনা সভার আয়োজনসহ নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিনটি অতিবাহিত করি। এতৎসত্ত্বেও ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ সময় পরে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে—একুশের চেতনা লালন, বাঙালি সংস্কৃতির বিস্তার, বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে আমরা কতটুকু সফল হয়েছি? এমন প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক ও সংগত। কারণ, একুশকে আমরা আনুষ্ঠানিকতায় যতটা পরিণত করতে পেরেছি, ততটা এর চেতনা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারিনি। বিশেষ করে জ্ঞান সৃষ্টি, সংরক্ষণ ও বিতরণের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

একুশে ফেব্রুয়ারি এলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতানুগতিক রেওয়াজ অনুসারে শহীদদের স্মরণে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেগুলো বেশির ভাগই থাকে অনুষ্ঠানসর্বস্ব, তাতে বেশির ভাগ শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণ থাকে না। এ তো গেল একুশের দিনের চিত্র। সারা বছর কী হয়? ভাষা আন্দোলন সংগঠনের মূলে ছিল বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতিকে হটিয়ে উর্দু-আরবি মিশেলে তথাকথিত ইসলামি তমদ্দুন তথা পাকিস্তানি সংস্কৃতি প্রচলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদের মর্মমূল থেকে যে চেতনা উৎসারিত হয়েছিল, তাতে সব ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিকশিত হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। বাংলা ভাষা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদালাভ তো করেছিলই, একই সঙ্গে ভাষা-সংস্কৃতিভিত্তিক নতুন জাতীয়তাবোধেরও উন্মেষ ঘটেছিল, যার সূত্র ধরে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চূড়ান্ত ধাপে জন্ম নিয়েছিল ভাষা-সংস্কৃতিভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ।

একুশের চেতনার বিশেষ লক্ষ্য ছিল সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন এবং বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতির সর্বব্যাপী চর্চা ও বিকাশের পথ প্রশস্ত করা। বর্তমানে আমরা তার বাস্তবায়নে যে চিত্র দেখি তা হতাশাব্যঞ্জক। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন বুলিসর্বস্বই রয়ে গেছে, আজও তার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আইন-আদালত, ব্যবসায়-বাণিজ্য, সরকারি অফিস—সর্বত্রই ইংরেজির জয়জয়কার। হ্যাঁ, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে সেটার প্রয়োজন অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে সমানতালে বাংলা ভাষা ব্যবহারের উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

একুশের চেতনা লালন ও বাংলা ভাষার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করার কথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। কারণ, সেখানে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা, পঠন-পাঠন ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। সেই বিবেচনায় অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ চালু করে এর পঠন-পাঠন ও গবেষণা করা হচ্ছে। বহুসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রতিবছরই এ বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে এ কারণে যে, বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলা ভাষার উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী ভূমিকা পালন করছে? বাস্তবে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। ডিগ্রি প্রদানের জন্য দু-চারটি প্রথাগত গবেষণাকর্ম ও সেমিনার ছাড়া আর কি কিছু করা হচ্ছে?

এই যেমন বিশ্বের শক্তিশালী ভাষাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বাংলা ভাষার যে টেকনিক্যাল উন্নতি বিধান দরকার, তা কতটুকু করতে পারছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো? এ ভাষায় নিত্যনতুন গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ সেই জ্ঞান বিস্তারই-বা কতটুকু সম্ভাবিত হচ্ছে? কর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন ভাষাগত দক্ষতায় তাদের কতটুকু দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না। বাস্তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একুশের চেতনা লালন, বাঙালি সংস্কৃতির বিস্তার এবং বাংলা ভাষার উন্নয়নে কার্যকর তেমন কিছুই করা হচ্ছে না। কিন্তু ভাষা আন্দোলন এবং একুশের চেতনা লালন ও বিস্তারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রেখেছেন সবচেয়ে বেশি অবদান।

একে একে দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যেতে পারে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ভাষা আন্দোলনের একেবারে শুরুতে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় এ ভাষার গৌরব, শক্তি ও ঐশ্বর্যের কথা সর্বপ্রথম যৌক্তিকভাবে যাঁরা তুলে ধরেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ড. মুহম্মদ এনামুল হক, আবুল কাশেম, এ এস এম নূরুল হক ভূঁইয়া, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে যে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন, তা ইতিহাসে গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন, তাঁদের একজন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবুল বরকত। ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকায় গ্রেপ্তার ও কারা নির্যাতনের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনীর চৌধুরী, মুজফ্ফর আহমদ চৌধুরী এবং পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তী। এ ছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র পুলিশি হয়রানি ও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন।

বায়ান্ন-পরবর্তীকালে কারাগারে বসেই একুশের প্রথম নাটক ‘কবর’ রচনা করেছিলেন মুনীর চৌধুরী। ভাষা আন্দোলনের প্রথম বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন এবং একুশের প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ প্রকাশে অবদান রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বাংলা বানান সংস্কার, বাংলা ভাষায় পুস্তক প্রণয়ন, বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা, সর্বোপরি ষাটের দশকে একুশের চেতনা প্রসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের উদ্যোগে স্মারকলিপি প্রদান, সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদ্‌যাপন, রবীন্দ্রবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা—পাকিস্তানিদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এসব ছিল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী কাজ। তারই ধারাবাহিকতায় বাঙালির জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ অর্জনেও অগণিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আত্মাহুতি দিয়েছেন।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন আর সেই আবেগ এবং একুশের চেতনার প্রাণস্পন্দন অনুভব করা যায় না। এবারের অমর একুশের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশের আয়োজন বলতে ওই শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং সীমিত পরিসরের আলোচনা সভা চোখে পড়েছে। মাস কিংবা সপ্তাহব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব, সেমিনার কিংবা কর্মশালা আয়োজন, বাংলা ভাষার উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ-পরিকল্পনা গ্রহণ কিছুই চোখে পড়েনি। বাংলা ভাষাকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে তুলে ধরার মতো গবেষণাকর্ম কিংবা সময়োপযোগী টেকনিক উদ্ভাবনেরও কোনো প্রয়াস লক্ষ করা যায়নি। বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রেও নেই কোনো কর্মপন্থা। না আছে বই, না আছে তা রচনার প্রচেষ্টা। তাহলে উচ্চশিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হবে কীভাবে? এটা তো ভাষা আন্দোলন কিংবা একুশের চেতনার লক্ষ্য ছিল না।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলা ভাষার উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সেই মোতাবেক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে গবেষণালব্ধ জ্ঞান সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলা ভাষাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে যে ধরনের দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন, তাও গড়ে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জ্ঞান সৃষ্টি, জ্ঞান বিতরণ এবং জ্ঞান সংরক্ষণের প্রাণকেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়েই যদি বাংলা ভাষা উপেক্ষিত হয়; তবে এ ভাষার উন্নয়ন ও বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে টিকে থাকার উপায় নির্ধারণ হবে সুদূর পরাহত। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষার গবেষণা ও পঠন-পাঠনে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে এ ভাষায় মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, নতুন নতুন পরিভাষা সৃষ্টি ও প্রয়োগের ক্ষেত্র নির্ধারণসহ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ ভাষা যাতে এগিয়ে যেতে পারে, সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের মহিমায় দীপ্ত একুশে ফেব্রুয়ারি বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা ভাষা ও ভাষা আন্দোলনের গৌরব সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলা ভাষার শক্তি ও সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত করে এ ভাষার উন্নয়ন ও প্রসারে কাজ করে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে প্রণয়ন করতে হবে সময়োপযোগী ভাষা পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের কর্মপন্থা।

লেখক: অধ্যাপক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত