Ajker Patrika

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রয়োজন

স্বপ্না রেজা
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রয়োজন

উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে সকল স্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়ে। কাউকে পেছনে ফেলে, পেছনে রেখে উন্নয়ন কখনোই সম্ভব হয় না। বর্তমান বাংলাদেশে যে উন্নয়নের ধারা, তা প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে, আলোচনা-সমালোচনা যাই-ই থাকুক। বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের মানুষের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিকায়নের বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ, পরিকল্পনা বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ থেকে সহজতর করেছে। প্রচলিত অর্থে মানবমর্যাদা বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা ব্যক্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে বিধায় জনমনে স্বস্তির উপস্থিতি দেখা যায়। যদিও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি ততটা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিশ্চিত হয়নি এবং না হওয়ার কারণও রয়েছে বেশ। যেমন—যথাযথ আইন প্রয়োগ না করা, দায়িত্বে অবহেলা, দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো রয়ে গেছে। যা হোক, ভালোমন্দ মিলিয়ে দেশ এগোচ্ছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কেউ অস্বীকার করলে তার উদ্দেশ্য ভিন্ন বলে মনে করা যেতেই পারে।

শুরুতে বলছিলাম, উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে ব্যক্তি, গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। বর্তমান বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্ম ও শ্রেণি-জাতির মানুষের, তথা বৃহৎ ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নাগরিক সুবিধাভোগের ব্যবস্থার প্রচলন ঘটেছে এবং সেটা সাম্প্রদায়িক শক্তির হুমকি-ধমকির পরও। আইন প্রণয়ন হয়েছে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। সচেতনতারও কমতি নেই। ধর্ম, বর্ণ, জাতিভেদে সব শ্রেণির মানুষের সামাজিক ও মানবমর্যাদা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বর্তমান সরকার ও সরকারপ্রধানের এক অভাবনীয় চিন্তা-চেতনা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টারই ফলশ্রুতি—এমন কথা নির্বিঘ্নে বলা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও সুরক্ষার জন্য বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করে, যেখানে বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেন রাষ্ট্রের সব সুবিধা ভোগ করতে পারে এবং তার মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়। এখানে সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবার স্নায়ু বিকাশজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছে সরকার। তাদের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। উদ্যোগ গ্রহণে বলা যায়, সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব, সন্দেহ নেই। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর এক দশকের বেশি সময়ে আদতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কী করা হয়েছে বা হচ্ছে, তা পর্যালোচনা করা দরকার। সমাজের মূলধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি, অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা এক কথায় বলে দিতে পারে যে, আদতে তারা সমাজের কোথায়, কীভাবে অবস্থান করছে।

আর সবার মতো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও বেঁচে থাকার মেধা, শক্তি নিয়ে জগতে ভূমিষ্ঠ হয়। সৃষ্টিকর্তা সব প্রাণীকেই বেঁচে থাকার, টিকে থাকার শক্তি, মেধা ও সাহস দিয়ে জগতে পাঠিয়ে দেন। প্রত্যেক প্রাণীকেই প্রকৃতির সহায়তায়, অন্য প্রাণীর সহায়তায় বেড়ে উঠতে হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই সহায়তার বেশি প্রয়োজন পড়ে। কারণ, তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জগতে আবির্ভূত হয়। একটা সময়ে সমাজে মনে করা হতো, ব্যক্তির প্রতিবন্ধিতা মূলত জিন-পরির আছর। ধর্মীয় রীতিনীতিতে তাকে সুস্থ করার পাঁয়তারা চলত। অসচেতন অভিভাবক সন্তানের এই অবস্থাকে মেনে নিতে পারতেন না। দ্বারস্থ হতেন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তিদের আস্তানায়। বলা যায়, ধীরে ধীরে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পুরোপুরি না হলেও বেশ কিছুটা সেই আঁধারাচ্ছন্ন যুগের অবসান ঘটেছে। এই অবসানের নেপথ্যে সক্রিয় ছিলেন এবং আছেনও প্রথমত অভিভাবকেরা, তারপর সমাজ উন্নয়নকর্মী এবং রাষ্ট্র। অভিভাবকদের উদ্যোগই এই বিশেষ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ঘর থেকে বের হতে সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রবেশাধিকার ঘটেছে। রাষ্ট্র বুঝেছে, এই বিশেষ জনগোষ্ঠী দেশের সংবিধানের আওতাভুক্ত। এদের নিয়েই এগোতে হবে।

তবে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সমাজের সবাই যে পরিপূর্ণ ধারণা বহন করে কাজ করে, তা কিন্তু নয়। ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’-এর মতে, ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। এই ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। প্রতিবন্ধিতার ধরনগুলো হলো: অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, বাকপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ-দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা। এর মধ্যে অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি হলো স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা। ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজন ভিন্ন ভিন্ন অ্যাসেসমেন্ট, কারিকুলাম ও পরিকল্পনা এবং অর্থ বরাদ্দ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে কর্মরত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করেছে যে, তাদের মধ্যে যে সক্ষমতা ও মেধা রয়েছে, তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়ানো সম্ভব এবং প্রশিক্ষিতদের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সহজ হয়। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে তাদের সক্ষমতার বিষয়ে গবেষণা জরুরি।

প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে দায়িত্বশীল অনেকের মধ্যেই এখনো চ্যারিটি মনোভাব দেখা যায়। অথচ উন্নয়নের মূলধারায় এই বিশেষ জনগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করতে সক্ষম, যদি তাদের দক্ষতা বাড়ানো যায় এবং সে ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সদিচ্ছা ও দায়িত্ববোধ থেকে যায়। বর্তমানে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তথা সব জায়গায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি আছে। মোটামুটি প্রতিবন্ধী বিষয়ে সবাই কমবেশি অবগত হয়েছেন। যদিও প্রতিবন্ধী বলতে অনেকেই কেবল অটিজম বুঝে থাকেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবন্ধী বিষয়ে সবার ধারণা সম্পূর্ণ নয়। এখন বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলি। এক মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জানা গেল যে, সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁর কাজ হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা। অথচ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বা ইচ্ছেপূরণে সবারই অনেক কাজ করার কথা, থাকার কথা কাজের জবাবদিহিতা।

সমন্বয় নেই মন্ত্রণালয়গুলোর—এ রকম অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। রাষ্ট্রের জনগণের জন্য যেমন সব মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ও সমন্বয় দরকার, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তেমন সমন্বয় ও ভূমিকা দরকার, যদি সত্যিকার অর্থে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগের কথা ভেবে থাকি, নিশ্চিত করার সৎ ইচ্ছা পোষণ করি। 
একজন সাধারণ নাগরিকের জন্য যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান তথা জীবিকায়ন অপরিহার্য বিষয়, তেমনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অপরিহার্য বিষয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের উপযোগী করার যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনিভাবে সমাজকেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যেনতেনভাবে ঢালাও কর্মসূচিতে ফেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না। বরং তাদের গুণগত অবস্থার অবনতি ঘটবে।

ডিজঅ্যাবলড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন যুব প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তাদের নিয়ে অতিমারি করোনার সময়ে একটি অনলাইন সম্মেলন বাস্তবায়ন করে, যেখানে ২ হাজার ৬৪ জন যুব প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেন। ২০ জন যুব প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা তাঁদের উদ্যোগের জন্য পুরস্কৃতও হন। তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং অর্থনীতিবিদ ও তৎকালীন পিকেএসএফ পর্ষদ চেয়ারম্যান খলীকুজ্জমান আহমদ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে খলীকুজ্জমান আহমদ পাঁচজন যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে তাঁর কিউকে আহমদ ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন, যা আজও চলমান।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা, দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। চাই যথাযথ পরিকল্পনা ও অর্থ বরাদ্দ এবং দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহি।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত