Ajker Patrika

কবিরের পরিবার পেল শুধু কথা ও প্রতিশ্রুতি

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ২০
কবিরের পরিবার পেল শুধু কথা ও প্রতিশ্রুতি

‘আপনি আমার ছোট বোন, আপনার পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিলাম। পরিবারের খরচ ও সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় গণমাধ্যমকর্মী আহসান কবির খান (৪৮) নিহত হওয়ার পর তাঁর স্ত্রীকে ফোনে সান্ত্বনা দিয়ে এ কথাগুলোই বলেছিলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়েছিল সেদিন।

কিন্তু কবিরের পরিবার বলছে, দুর্ঘটনার পর গত দুই মাসে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটিবারও তাঁদের খোঁজ নেওয়া হয়নি। সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়নি একটি পয়সাও। গত ২৫ নভেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের উল্টোদিকে ডিএনসিসি ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী কবির খান। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাদিরা পারভিন রেখা (৪০) বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেন। কবির একটি জাতীয় দৈনিকের কম্পিউটার বিভাগে চাকরি করতেন। চাকরির পাশাপাশি করতেন ব্যবসা। ঝালকাঠির গ্রামের বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ মা-বাবা ও ঢাকায় স্ত্রী-সন্তানদের খরচ একাই বহন করতেন তিনি। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ের ছোট্ট সংসার বেশ ভালোই চলছিল।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির হঠাৎ মৃত্যুতে ভেঙে পড়ে তাঁর পরিবার। পরিবারের খরচ নির্বাহ ও দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন স্ত্রী নাদিরা পারভিন রেখা। ছেলে সাদমান শাহারিয়ার কাইফ (১৫) দশম শ্রেণিতে পড়ছে রাজধানীর ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউটে। মেয়ে সাফরিন কবির দিয়া (১০) পড়ছে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণিতে।

দুর্ঘটনার দিন ২৫ নভেম্বর রাতেই উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাসার মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘নিহত আহসান কবির খানের দুই সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। ইতিমধ্যে ডিএনসিসি মেয়রের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকা, নিহতের নিজ বাড়ি ঝালকাঠি মরদেহ পরিবহন ও যাতায়াতের জন্য একটি ফ্রিজারভ্যান এবং একটি মাইক্রোবাস দেওয়া হয়েছে।’

পরে নিহত কবির খানের স্ত্রীকে সান্ত্বনা জানিয়ে মোবাইলে কথা বলেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম।

দুর্ঘটনার দুই মাস পূর্ণ হতে চলছে আগামী মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি)। কবির খানের চাচাতো ভাই জহির ইলিয়াছ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই রাতে সমঝোতার শর্তে ৫০ হাজার টাকা দিতে আসেন ডিএনসিসির (কারওয়ান বাজার) অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ। তিনি লাশ ঝালকাঠি গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দেওয়ার কথা জানান। তখন শোকাহত পরিবারটি কোনো টাকা নেয়নি। তবে ডিএনসিসির অ্যাম্বুলেন্সের আশ্বাসে অন্য অ্যাম্বুলেন্সও ঠিক করা হয়নি। রাতে সিটি করপোরেশন থেকে কেউ যোগাযোগ রাখেনি, অ্যাম্বুলেন্সও পাঠায়নি।’

ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কবির খানের স্বজন জজ কোর্টের আইনজীবী রমজান হোসেন ফোন করেন ডিএনসিসির কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদকে। তিনি জানান, বাইরে আছেন, পরে ফোন করবেন। কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও ওই কর্মকর্তার আর ফোন করার সময় হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার মগবাজারের সোনালীবাগের বাসায় কথা হয় নিহতের স্ত্রী নাদিরা পারভিনের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষটির মৃত্যুতে আমরা অসহায় জীবন-যাপন করছি। সিটি করপোরেশনের মিথ্যা প্রচারণার কারণে স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষীরা কেউ এগিয়ে আসেনি। সবাই ভাবছেন, আমরা বেশ ভালো আছি, মেয়র আতিকের অনুদান পেয়েছি। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে আমরা কিছুই পাইনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল (শনিবার) ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর ওই পরিবারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। ছেলেমেয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন নেবে জানিয়েছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কথা দিয়েছি অবশ্যই আমরা দায়িত্ব নেব।’

আহসান কবির খানের পরিবার গত দুই মাসে কোনো সহযোগিতা পায়নি জানালে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘আমি বলে দিচ্ছি, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা আজকেই কথা বলবেন। আমরা যে কথা দিয়েছি, তা বাস্তবায়ন করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

নিরাপত্তা শঙ্কায় ইসিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও রেহা কবির সিগমা

হাসনাত কি সরকারের অংশ— ‘সেভেন সিস্টার্স’ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবে জাপা, মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ