Ajker Patrika

টাঙ্গুয়ার হাওর: মাছ পাখি পরিবেশ সবই বিপন্ন

  • দেশীয় প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে না।
  • পানিতে ভাসছে প্লাস্টিক বর্জ্য, তেল-মবিল।
  • শীতকালে একসময় দেড় লাখ পাখি আসত।
  • গত শীতে পাখি এসেছে মাত্র ২২ হাজার।
বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৬
এসব ইঞ্জিনের নৌকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। ইঞ্জিনের শব্দ ও ময়লা-আবর্জনায় নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি-পরিবেশ। গত শুক্রবার হাওর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
এসব ইঞ্জিনের নৌকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। ইঞ্জিনের শব্দ ও ময়লা-আবর্জনায় নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি-পরিবেশ। গত শুক্রবার হাওর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘মাছ, পাখি, গাছপালা, বন—সবকিছুই আছিল। হাওরে এখন দেশীয় প্রজাতির কোনো মাছই পাওয়া যায় না। আগে রাতে পাখির শব্দে ঘুম হইতো না। এখন দিনের বেলায়ও পাখি দেখা যায় না।’ কথাগুলো হাওরের ফেরিওয়ালা মো. রাজা মিয়ার। নৌকা থেকে আঙুল দিয়ে করচগাছ কাটার ক্ষত দেখিয়ে বলেন, ‘গাছগাছালি, বনজঙ্গল কেটে জীববৈচিত্র্যের আধারকে গলাটিপে হত্যা করা হইতাছে। মনে হয় এই হাওরের মালিক-কর্মচারী কেউই নাই।’

রাজা মিয়া কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে। স্থানীয়দের মতে, এক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এই হাওর। কেউ কেউ বলছেন, পর্যটন বা হাউসবোটের কারণে হাওর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কেউ বলছেন, প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকায় বৈচিত্র্য হারাচ্ছে হাওর।

সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলাধীন ১৮টি মৌজা নিয়ে বিস্তৃত হাওর টাঙ্গুয়ার। এই হাওরে ছোট-বড় ১২০টি বিল রয়েছে। ৮৮টি গ্রামসহ পুরো হাওর এলাকার আয়তন প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ২৮০২ দশমিক ৩৬ হেক্টর জলাভূমি রয়েছে। প্রায় ৬০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা এই হাওরকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি এই হাওরে গিয়ে দেখা গেল, চারদিক থেকে আসছে ইঞ্জিনের বিকট শব্দ, সঙ্গে পর্যটকের হুল্লোড়। ওয়াচ টাওয়ারের কাছের গাছগুলোতে যদিও হাউসবোট নেই। তবে কাছেই গোলাবাড়ি, জয়পুর গ্রামসংলগ্ন এলাকাসহ গোটা হাওরেই বিচরণ করছে পর্যটকবাহী হাউসবোট।

যদিও টাঙ্গুয়ায় হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন আকন্দের দাবি, এই বোটগুলো তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওর হয়ে ওয়াচ টাওয়ারের গোলাবাড়ির কিঞ্চি নদী দিয়ে টেকেরঘাটে যায়। এরপর রক্তি নদী হয়ে জাদুকাটা গিয়ে আনোয়ারপুরের লাইন দিয়ে সুনামগঞ্জে ফেরত আসে। এর মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওর পড়ে না।

তবে হাওরে ঘুরে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। পানিতে ভাসতে দেখা গেল প্লাস্টিক বর্জ্য, তেল-মবিল। এতে দূষিত হচ্ছে জলজ পরিবেশ। টাঙ্গুয়ার-তীরবর্তী একটি রিসোর্টের স্বত্বাধিকারীর বলেন, ইঞ্জিনের নৌকা ছোট-বড় দুইটাই হাওরের জন্য ক্ষতিকর। ইঞ্জিনের শব্দ, ময়লা-আবর্জনা, মলমূত্র প্রকৃতি-পরিবেশ নষ্ট করছে। প্রশাসনের ভূমিকাও অনেকটা ঢিলেঢালা। সবকিছু নিয়মের মধ্যে আনতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

কয়েক দশক ধরে টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার সামগ্রিক পরিবেশের অবনতি ঘটছে। পরিবেশগত ঐতিহ্য ও গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে সরকার বিশাল এই হাওরকে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটাপন্ন জলাভূমি (ওয়েটল্যান্ড) হিসেবে চিহ্নিত করে রামসার কনভেনশনের অধীনে ‘রামসার এলাকা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

মাছ-পাখি নেই হাওরে

কেবল সুনামগঞ্জ নয়, পুরো দেশেই হাওরটি শীতের অতিথি পাখিদের ‘স্বর্গরাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটত। বিশ্বের বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির পাখি এ বিশাল হাওরে শীতকালে অস্থায়ীভাবে আবাস গড়ে তোলে। তবে সেই চিত্র এখন আর নেই। বন্য প্রাণী গবেষক সীমান্ত দীপু জলচর পাখিশুমারির এ বছরের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ১৯৯২ সালের পর এ বছর সবচেয়ে কম পাখি এসেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। শীতকালে একসময় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো পাখির দেখা পাওয়া যেত। কিন্তু চলতি বছর পাখি এসেছে মাত্র ৩৪ প্রজাতির ২২ হাজার ৫৪৭টি।

দেশের মৎস্যসম্পদের অন্যতম উৎস টাঙ্গুয়ার হাওর। এখানে ১৪০টির বেশি প্রজাতির স্বাদুপানির মাছ পাওয়া যেত। তবে সেই মাছ উধাও হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সুনামগঞ্জের সমন্বয়ক সজল কান্তি সরকার বলেন, ‘ইঞ্জিনচালিত যানের পাখা ঘূর্ণনের সঙ্গে পেট্রল, মবিল, তেল পানিতে গিয়ে মিশছে; যা মাছ, পাখি, উদ্ভিদসহ গোটা প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। হাওরের ক্ষতি করে হলেও পর্যটন টিকিয়ে রাখার যে মচ্ছব চলছে, তাতে কিছুই থাকবে না।’

এ প্রসঙ্গে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, পানিতে ফেলা বর্জ্যের অনেক ধরনের প্রতিক্রিয়া আছে। এই বর্জ্য পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয়; যাতে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জরুরি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।

উদ্যোগ নেই প্রশাসনের

হাওরে ইজারাপ্রথা বাতিলের পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আনসার সদস্যদের পাহারা ছিল। বর্তমানে ঢিলেঢালা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মাছ-পাখি শিকার থেকে পর্যটন—সবকিছুতে চলছে হাওরে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানিয়েছেন, টাঙ্গুয়া নিয়ে বর্তমানে কোনো বিশেষ প্রকল্প নেই। প্রশাসন হাওরের দেখভাল করছে। হাওরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা আছে।

তবে শাবিপ্রবির বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, জীববৈচিত্র্যের জন্য যে পরিবেশ থাকা দরকার, তা দীর্ঘদিন ধরে হাওরে অনুপস্থিত। তিনি বলেন, হাওরের জীববৈচিত্র্যের প্রধান উপাদান হিজল, করচ, ঝোপঝাড়, জলাবন একেবারে কমে গেছে। পাখি ও বন্য প্রাণীর নিরাপদ পরিবেশ রক্ষায় হাওরে বনায়ন সৃষ্টিও জরুরি।

পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘সবাই চায় জীববৈচিত্র্য রক্ষা হোক। আবার আমরা অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনকেও উপভোগ করছি। গবেষণার মাধ্যমে সহনীয় মাত্রা নির্ধারণ করে একটি মডেল দাঁড় করাতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

এ প্রসঙ্গে গবেষক সীমান্ত দীপু বলেন, রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার তদারকিতে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু জায়গায় এ রকম পর্যটনের সুযোগ আছে। তবে সেটা নিয়মতান্ত্রিক। সরকারের পর্যটন, প্রশাসন, হাওর মাস্টারপ্ল্যান—সবখানেই নির্দেশনা শুধু কাগজে-কলমে। কোথাও কোনো নিয়মতান্ত্রিকতা নেই। সবকিছু নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিলেছে। তবে হাড়কাঁপানো শীত না পড়লেও বইছে মিষ্টি হিমেল বাতাস। আজ সারা দিন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে আকাশ পরিষ্কার থাকবে, আবহাওয়াও থাকবে শুষ্ক।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও আশপাশ এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। এদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৮ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টা। সূর্যের আলো যখন পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি, ঠিক তখনই ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল। রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার পাটুয়ারপাড় এলাকা।

আর এই ভূকম্পনেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ঢাকার নগরজীবন থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ। আতঙ্কিত হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ, এক-দুবার নয়, মাত্র ১৪ দিনে বাংলাদেশে একাধিকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, গাজীপুরের মতো ঢাকার আশপাশের অঞ্চল ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয় গত ২১ নভেম্বর। ওই দিন ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশেই উৎপত্তিস্থল ছিল পাঁচটি ভূমিকম্পের। এর প্রথমটি ছিল ২১ নভেম্বরের ঠিক দুই মাস আগে ২১ সেপ্টেম্বর। এদিন ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তি হয় সিলেটের ছাতকে।

এরপরের ভূমিকম্প ছিল ২১ নভেম্বর, মাত্রা ৫ দশমিক ৭। পরদিন ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার কালীগঞ্জ। এর ৫ দিন পর, ২৭ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের টঙ্গীর ঢালাদিয়া এলাকা।

কতবার ভূকম্পন হলো

তবে বারবার ভূমিকম্প কেবল বাংলাদেশেই নয়, সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, এমনকি চীনের তিব্বত সীমান্তেও ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ মাসে এই অঞ্চলে ২৮৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর কোনোটিই ৪ মাত্রার নিচে ছিল না।

গত সোমবার ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মিয়ানমারের ফালামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৩১ কিলোমিটার। ওই ভূমিকম্প বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, টেকটোনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তর দিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশন জোনের তৈরি হয়েছে।

হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, ‘এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।’ তাঁর মতে, ‘এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।’

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

তবে ভূমিকম্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যেসব ভূকম্পন, সেগুলো হলো ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের ‘আফটার শক’।

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের হনশু দ্বীপের টোহুকু অঞ্চলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর জেরে সৃষ্ট সুনামির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর কেবল ৬ মাত্রারই ৪৫০ বার আফটার শক হয়েছিল জাপানে। আরও অসংখ্যবার ছোট ছোট আফটার শক হয়েছিল তখন।

ভূকম্পনবিদ্যার গবেষক মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের পর একাধিকবার আফটার শক হচ্ছে। এই আফটার শক বহুদিন ধরে হতে পারে, কমপক্ষে আরও তিন মাস হতে পারে। ২ মাত্রার নিচের ভূকম্পনগুলো আমাদের (বাংলাদেশে) সিস্টেমে ধরা পড়ে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের দিল্লি। আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিকে পেছনে ফেলে এ শীর্ষ দূষিত শহর হলো ঢাকা।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকার অবস্থান ১ম। আজ সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ২৯৬, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি— পল্লবী দক্ষিণ, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, ইস্টার্ন হাউজিং ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

দূষিত বায়ুর শহর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর ও কাতারের দোহা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৭৮, ২৩৩, ১৯৯ ও ১৮৯।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এই তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়া আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রায় শুষ্ক থাকবে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৭ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত