Ajker Patrika

চরমভাবাপন্ন এশিয়ার আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ ও বন্যা হচ্ছে একই সময়ে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১২: ১৯
চরম আবহাওয়া এশিয়ার বেশ কিছু অংশে কেড়ে নিয়েছে কয়েক শতাধিক প্রাণ। ছবি: জাতিসংঘ
চরম আবহাওয়া এশিয়ার বেশ কিছু অংশে কেড়ে নিয়েছে কয়েক শতাধিক প্রাণ। ছবি: জাতিসংঘ

প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত চীন, পাকিস্তান ও ভারত। একই সময় এশিয়ার অন্য দুই দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে। আবহাওয়ার এই চরম রূপ এরই মধ্যে এশিয়ার বেশ কিছু অংশে কেড়ে নিয়েছে কয়েক শতাধিক প্রাণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন চরম আবহাওয়ার মাত্রা আরও ভয়াবহ ও নিয়মিত হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির তুলনায় এশিয়া দ্বিগুণ গতিতে উষ্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জলবায়ু ঝুঁকি সূচক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন দশকে বন্যা, তাপপ্রবাহ ও খরার মতো চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে এশিয়া অঞ্চলের আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার (১.৫ ট্রিলিয়ন পাউন্ড)।

গত মঙ্গলবার জাপানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে গুনমা প্রদেশের ইসেসাকি শহরে। তাপমাত্রা উঠেছে ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৭ ফারেনহাইট)।

চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসেও সর্বকালের সর্বোচ্চ গরমে বিপর্যস্ত হয়েছে দেশটি।

টোকিওর মেডিকেল এক্সামিনার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত তাপপ্রবাহজনিত কারণে অন্তত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তাপের তীব্রতায় রেললাইন বিকৃত হওয়ার আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ কিছু ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাপানের এক অফিসকর্মী বলেন, ‘আমি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন। কিন্তু এসি ছাড়া টিকতে পারি না। আমি আসলে জানি না, কী করা উচিত। কোনোভাবে দিন পার করছি।’

গত মাস থেকে জাপানের জরুরি সেবা বিভাগে গরমে অসুস্থ হয়ে সহায়তা চেয়ে ফোনকল আসা বেড়ে গেছে। চরম গরমের কারণে সরকারি দপ্তর ও বিভিন্ন কর্মস্থলে ড্রেস কোড শিথিল করা হয়েছে, যাতে কর্মীরা স্বস্তিতে কাজ করতে পারেন এবং এসির ওপর নির্ভরশীলতা কিছুটা কমানো যায়।

তবে আসছে দিনগুলোতে তীব্র এই গরম কিছুটা কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশটির কিছু অঞ্চলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টি এবং অল্প কিছুটা ঠান্ডা বাতাস মানুষকে তীব্র গরম থেকে সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় জুলাই মাসে টানা ২২টি রাত তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকার রেকর্ড হয়েছে, যেগুলোকে ‘ট্রপিকাল নাইট’ বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এশিয়ার অন্যান্য দেশও তীব্র গরমে পুড়ছে। ভিয়েতনামের কিছু অংশে দেখা যাচ্ছে নজিরবিহীন গরম। হ্যানয়ে এই আগস্টে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এএফপিকে ভিয়েতনামের একজন নির্মাণ শ্রমিক নাম জানান, ‘গত কয়েক দিন ধরে রাজধানী শহরটা যেন আগুনে পোড়া একটা তাওয়া।’

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যখন তীব্র গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে, তখন চীনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সাংহাই থেকে বেইজিং পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ।

টানা ভারী বৃষ্টিপাতে দক্ষিণ চীনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গুয়াংডং প্রদেশের রাজধানী গুয়াংজুতে শত শত ফ্লাইট বাতিল কিংবা বিলম্বিত হয়েছে।

গতকাল বুধবার ভূমিধস ও নতুন বন্যার আশঙ্কায় এলাকায় ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কারে হিমশিম খাচ্ছিলেন জরুরি সেবাকর্মীরা।

ইতিমধ্যে প্রদেশটির সড়কগুলোর জলাবদ্ধতা মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে।

বছরের এই সময় দক্ষিণ চীনে এমন বৃষ্টিপাত প্রায়শই হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ঘন ঘন ট্রপিক্যাল স্টর্ম বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেড়েছে।

মাত্র গত সপ্তাহেই পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে একসঙ্গে তিনটি ঘূর্ণিঝড় সক্রিয় ছিল। অথচ জুন মাসের আগ পর্যন্ত এ ধরনের ঝড়ের কার্যকলাপ ছিল প্রায় নেই বললেই চলে।

গত মাসের শেষ দিকে বেইজিংয়ের পার্বত্য এলাকা ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়। এতে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে। একটি বৃদ্ধাশ্রমের ৩১ বাসিন্দাও এতে মারা যান।

পাহাড়ি এলাকা ভূমিধসের ঝুঁকি থাকায় ভারী বৃষ্টি সেখানে বিশেষভাবে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। আর জনবহুল নগর অঞ্চলে হঠাৎ আসা ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা আকস্মিক বন্যা স্থানীয়দের সম্পূর্ণ প্রস্তুতিহীন অবস্থায় ফেলে দেয়। বাড়িয়ে তোলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা।

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডে হঠাৎ ভয়াবহ ফ্ল্যাশ ফ্লাড সৃষ্টি হয়। এতে এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।

পাকিস্তানেও বৃষ্টিজনিত ঘটনায় জুন মাস থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে শতাধিক শিশু রয়েছে। প্রবল বর্ষণে দেশটির বহু ঘরবাড়ি এবং স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, পাঞ্জাব প্রদেশে স্কুলগুলোর অন্তত এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার হংকংয়ে ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা শহরটির ইতিহাসে ১৮৮৪ সালের পর আগস্ট মাসে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। হংকংয়ে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ২ হাজার ৪০০ মিলিমিটার, যার বেশিরভাগই জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাসের মধ্যে হয়ে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিলেছে। তবে হাড়কাঁপানো শীত না পড়লেও বইছে মিষ্টি হিমেল বাতাস। আজ সারা দিন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে আকাশ পরিষ্কার থাকবে, আবহাওয়াও থাকবে শুষ্ক।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও আশপাশ এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। এদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৮ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টা। সূর্যের আলো যখন পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি, ঠিক তখনই ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল। রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার পাটুয়ারপাড় এলাকা।

আর এই ভূকম্পনেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ঢাকার নগরজীবন থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ। আতঙ্কিত হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ, এক-দুবার নয়, মাত্র ১৪ দিনে বাংলাদেশে একাধিকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, গাজীপুরের মতো ঢাকার আশপাশের অঞ্চল ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয় গত ২১ নভেম্বর। ওই দিন ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশেই উৎপত্তিস্থল ছিল পাঁচটি ভূমিকম্পের। এর প্রথমটি ছিল ২১ নভেম্বরের ঠিক দুই মাস আগে ২১ সেপ্টেম্বর। এদিন ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তি হয় সিলেটের ছাতকে।

এরপরের ভূমিকম্প ছিল ২১ নভেম্বর, মাত্রা ৫ দশমিক ৭। পরদিন ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার কালীগঞ্জ। এর ৫ দিন পর, ২৭ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের টঙ্গীর ঢালাদিয়া এলাকা।

কতবার ভূকম্পন হলো

তবে বারবার ভূমিকম্প কেবল বাংলাদেশেই নয়, সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, এমনকি চীনের তিব্বত সীমান্তেও ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ মাসে এই অঞ্চলে ২৮৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর কোনোটিই ৪ মাত্রার নিচে ছিল না।

গত সোমবার ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মিয়ানমারের ফালামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৩১ কিলোমিটার। ওই ভূমিকম্প বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, টেকটোনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তর দিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশন জোনের তৈরি হয়েছে।

হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, ‘এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।’ তাঁর মতে, ‘এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।’

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

তবে ভূমিকম্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যেসব ভূকম্পন, সেগুলো হলো ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের ‘আফটার শক’।

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের হনশু দ্বীপের টোহুকু অঞ্চলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর জেরে সৃষ্ট সুনামির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর কেবল ৬ মাত্রারই ৪৫০ বার আফটার শক হয়েছিল জাপানে। আরও অসংখ্যবার ছোট ছোট আফটার শক হয়েছিল তখন।

ভূকম্পনবিদ্যার গবেষক মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের পর একাধিকবার আফটার শক হচ্ছে। এই আফটার শক বহুদিন ধরে হতে পারে, কমপক্ষে আরও তিন মাস হতে পারে। ২ মাত্রার নিচের ভূকম্পনগুলো আমাদের (বাংলাদেশে) সিস্টেমে ধরা পড়ে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের দিল্লি। আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিকে পেছনে ফেলে এ শীর্ষ দূষিত শহর হলো ঢাকা।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকার অবস্থান ১ম। আজ সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ২৯৬, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি— পল্লবী দক্ষিণ, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, ইস্টার্ন হাউজিং ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

দূষিত বায়ুর শহর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর ও কাতারের দোহা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৭৮, ২৩৩, ১৯৯ ও ১৮৯।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এই তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়া আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রায় শুষ্ক থাকবে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৭ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত