Ajker Patrika

রেকর্ড দ্রুততায় শুকাচ্ছে গঙ্গা, গুরুতর হুমকির মুখে ভারত–বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৮
দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে গঙ্গা/পদ্মা। ছবি: এএফপি
দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে গঙ্গা/পদ্মা। ছবি: এএফপি

গঙ্গা (যা বাংলাদেশে পদ্মা নামেও পরিচিত) দক্ষিণ এশিয়ার কোটি মানুষের জীবনের অবলম্বন। কিন্তু এই অবলম্বনই ব্যাপকভাবে দ্রুত শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইতিহাসে এত দ্রুত কখনোই গঙ্গাকে শুকিয়ে যেতে দেখা যায়নি। তাঁরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বদলে যাওয়া মৌসুমি বৃষ্টি, লাগাতার পানি উত্তোলন ও বাঁধ নির্মাণ—সব মিলিয়ে মহাশক্তিশালী এই নদী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এর প্রভাব পড়ছে খাদ্য, পানির জোগান আর কোটি মানুষের জীবিকার ওপর।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের এক গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই। এর শিরোনাম ‘The Ganges River is drying faster than ever–here’s what it means for the region and the world. ’ অর্থাৎ, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্রুত শুকাচ্ছে গঙ্গা, এর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব কী।’

শতাব্দীর পর শতাব্দী গঙ্গা ও এর উপনদীগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের জীবনধারণের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এই নদী অববাহিকা সাড়ে ৬০০ কোটি মানুষের জীবনের ভরসা। এই নদী ভারতের এক-চতুর্থাংশ মিঠা পানি এবং দেশটির বিশাল খাদ্য ও অর্থনীতির লাইফ লাইন। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নদীটির অবক্ষয় এখন রেকর্ডকৃত ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্বের বড় বড় অনেক নদীর রূপান্তর নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য নথিবদ্ধ করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু গঙ্গার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের গতি ও ব্যাপকতা আলাদা মাত্রা নিয়েছে। এক নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ১ হাজার ৩০০ বছরের প্রবাহের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক কয়েক দশকেই অববাহিকাটি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখোমুখি হয়েছে। আর এই খরাগুলো প্রাকৃতিক জলবায়ু পরিবর্তনের সীমার বাইরে।

যে নদীপথে একসময় সারা বছর নৌযান চলাচল হতো, তা এখন গ্রীষ্মে অচল হয়ে পড়ছে। বড় নৌকা যেগুলো আগে বাংলার নদী থেকে বিহার হয়ে বারাণসী ও এলাহাবাদ পর্যন্ত গঙ্গায় চলত, সেগুলো এখন বালুচরে আটকে যাচ্ছে। যেসব খাল আগে সপ্তাহের পর সপ্তাহ জমিতে পানি বয়ে নিয়ে যেত গঙ্গা থেকে, সেগুলো এখন আগেভাগেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনকি যেসব কূপ একেক পরিবারকে কয়েক দশক ধরে বাঁচিয়ে রেখেছিল, সেগুলো এখন কেবল ফোঁটা ফোঁটা পানি দিচ্ছে।

বৈশ্বিক জলবায়ু মডেলও গঙ্গার শুকিয়ে যাওয়ার ভয়াবহতা অনুমানে ব্যর্থ হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মানে মানবিক ও পরিবেশগত চাপ এমনভাবে একে অপরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, যা আমরা এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। সেচখালগুলোতে অতিরিক্ত পানি সরানো হচ্ছে, কৃষির জন্য ভূগর্ভস্থ পানি পাম্প করা হচ্ছে, নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা। এক হাজারের বেশি বাঁধ ও ব্যারাজ নদীর স্বাভাবিক গতিপথই পাল্টে দিয়েছে। এর সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে মৌসুমি বৃষ্টিও ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ফলাফল হচ্ছে—একটি নদীব্যবস্থা যা নিজেকে আর টিকিয়ে রাখতে পারছে না।

হিমালয়ের উচ্চভূমিতে নদীর উৎস গঙ্গোত্রী হিমবাহ মাত্র দুই দশকে হ্রাস পেয়ে আগের তুলনায় প্রায় এক কিলোমিটার পিছিয়ে গেছে। পুরো হিমালয়ে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে—উষ্ণায়নে দ্রুত হিমবাহ গলে যাচ্ছে। প্রথম দিকে এতে হিমবাহ হ্রদ থেকে হঠাৎ বন্যা নামত। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এর মানে হচ্ছে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে অনেক কম পানি প্রবাহিত হবে।

এসব হিমবাহকে বলা হয় ‘এশিয়ার পানির টাওয়ার’। কিন্তু সেই টাওয়ারগুলো ছোট হয়ে আসায় গ্রীষ্মকালে গঙ্গা ও এর উপনদীগুলোর পানির প্রবাহও ভয়াবহভাবে কমে যাচ্ছে।

ভূগর্ভস্থ পানির লাগামহীন উত্তোলন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা এখন বিশ্বের দ্রুততম হারে নিঃশেষ হতে থাকা ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলোর একটি। প্রতিবছর পানির স্তর ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত নেমে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক ভূগর্ভস্থ পানিই আবার আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডে দূষিত। এতে মানবস্বাস্থ্য ও কৃষি উভয়ই হুমকির মুখে।

মানুষের প্রকৌশলগত হস্তক্ষেপও বড় ভূমিকা রাখছে। ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজের মতো প্রকল্পগুলো শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। এতে মাটি আরও লবণাক্ত হচ্ছে আর হুমকির মুখে পড়ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক লাভকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্তগুলো নদীর পরিবেশগত ভারসাম্য ভেঙে দিয়েছে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল আর পশ্চিমবঙ্গে অনেক ছোট নদী গ্রীষ্মেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে গ্রামাঞ্চলে মানুষ ফসল ও গবাদিপশুর জন্য পানি পাচ্ছে না। এই উপনদীগুলোর অদৃশ্য হয়ে যাওয়া বড় সতর্কবার্তা, যা জানিয়ে দিচ্ছে গঙ্গার ক্ষেত্রেও একই পরিণতি ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, এখনই কিছু না বদলালে কয়েক দশকের মধ্যে অববাহিকার কোটি মানুষ ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখে পড়বে।

এখন আর টুকরো টুকরো সমাধানে কাজ হবে না। জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া গঙ্গাকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। এর মানে হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানির অতি ব্যবহার কমানো, যাতে স্বাভাবিকভাবে পুনরায় মজুত হতে পারে। এর মানে নদীতে পর্যাপ্ত প্রবাহ বজায় রাখা, যাতে মানুষ ও পরিবেশ দুটিই টিকে থাকে। এর মানে উন্নত জলবায়ু মডেল তৈরি করা, যেখানে সেচ, বাঁধ ও মৌসুমি বৃষ্টির অনিশ্চয়তা একসঙ্গে বিবেচনায় রাখা হবে।

একই সঙ্গে সীমান্তপারের সহযোগিতা অপরিহার্য। ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালকে আরও বেশি করে তথ্য ভাগাভাগি করতে হবে, বাঁধ পরিচালনায় সমন্বয় করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় যৌথ পরিকল্পনা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক তহবিল আর রাজনৈতিক অঙ্গীকারেও গঙ্গার মতো নদীগুলোকে বৈশ্বিক অগ্রাধিকার হিসেবে নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শাসনব্যবস্থা যেন অংশগ্রহণমূলক হয়—স্থানীয় মানুষের কণ্ঠস্বর, বিজ্ঞানী আর নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি নদী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সমানভাবে গুরুত্ব পায়।

গঙ্গা শুধু একটি নদী নয়। এটি জীবনরেখা, এটি পবিত্র প্রতীক, এটি দক্ষিণ এশীয় সভ্যতার ভিত্তি। কিন্তু এই নদী এখন ইতিহাসে যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। নিষ্ক্রিয়তার পরিণতি অকল্পনীয়। সতর্কবার্তার সময় শেষ হয়ে গেছে। এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে গঙ্গা বয়ে চলে—শুধু আমাদের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিলেছে। তবে হাড়কাঁপানো শীত না পড়লেও বইছে মিষ্টি হিমেল বাতাস। আজ সারা দিন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে আকাশ পরিষ্কার থাকবে, আবহাওয়াও থাকবে শুষ্ক।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও আশপাশ এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। এদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৮ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টা। সূর্যের আলো যখন পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি, ঠিক তখনই ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল। রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার পাটুয়ারপাড় এলাকা।

আর এই ভূকম্পনেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ঢাকার নগরজীবন থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ। আতঙ্কিত হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ, এক-দুবার নয়, মাত্র ১৪ দিনে বাংলাদেশে একাধিকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, গাজীপুরের মতো ঢাকার আশপাশের অঞ্চল ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয় গত ২১ নভেম্বর। ওই দিন ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশেই উৎপত্তিস্থল ছিল পাঁচটি ভূমিকম্পের। এর প্রথমটি ছিল ২১ নভেম্বরের ঠিক দুই মাস আগে ২১ সেপ্টেম্বর। এদিন ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তি হয় সিলেটের ছাতকে।

এরপরের ভূমিকম্প ছিল ২১ নভেম্বর, মাত্রা ৫ দশমিক ৭। পরদিন ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার কালীগঞ্জ। এর ৫ দিন পর, ২৭ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের টঙ্গীর ঢালাদিয়া এলাকা।

কতবার ভূকম্পন হলো

তবে বারবার ভূমিকম্প কেবল বাংলাদেশেই নয়, সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, এমনকি চীনের তিব্বত সীমান্তেও ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ মাসে এই অঞ্চলে ২৮৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর কোনোটিই ৪ মাত্রার নিচে ছিল না।

গত সোমবার ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মিয়ানমারের ফালামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৩১ কিলোমিটার। ওই ভূমিকম্প বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, টেকটোনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তর দিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশন জোনের তৈরি হয়েছে।

হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, ‘এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।’ তাঁর মতে, ‘এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।’

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

তবে ভূমিকম্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যেসব ভূকম্পন, সেগুলো হলো ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের ‘আফটার শক’।

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের হনশু দ্বীপের টোহুকু অঞ্চলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর জেরে সৃষ্ট সুনামির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর কেবল ৬ মাত্রারই ৪৫০ বার আফটার শক হয়েছিল জাপানে। আরও অসংখ্যবার ছোট ছোট আফটার শক হয়েছিল তখন।

ভূকম্পনবিদ্যার গবেষক মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের পর একাধিকবার আফটার শক হচ্ছে। এই আফটার শক বহুদিন ধরে হতে পারে, কমপক্ষে আরও তিন মাস হতে পারে। ২ মাত্রার নিচের ভূকম্পনগুলো আমাদের (বাংলাদেশে) সিস্টেমে ধরা পড়ে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের দিল্লি। আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিকে পেছনে ফেলে এ শীর্ষ দূষিত শহর হলো ঢাকা।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকার অবস্থান ১ম। আজ সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ২৯৬, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি— পল্লবী দক্ষিণ, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, ইস্টার্ন হাউজিং ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

দূষিত বায়ুর শহর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর ও কাতারের দোহা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৭৮, ২৩৩, ১৯৯ ও ১৮৯।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এই তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়া আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রায় শুষ্ক থাকবে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৭ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত