Ajker Patrika

দুবাইয়ের বন্যার পেছনে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত নিয়ে যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

দুবাইয়ের বন্যার পেছনে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত নিয়ে যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেখা দিয়েছে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। এই বন্যার সঙ্গে কৃত্রিম বৃষ্টির সংযোগ নিয়ে চলছে জল্পনাকল্পনা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, দুই বছরের বৃষ্টি একদিনেই হয়েছে দুবাইতে। এমন বন্যার পেছনে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ভূমিকাকে তাই খুব বেশি বড় করে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।

কী পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে দুবাইতে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে অবস্থিত শহর দুবাই সাধারণত খুব শুষ্ক থাকে। বছরে শহরটিতে গড়ে ১০০ মিলিমিটার (৩ দশমিক ইঞ্চি) এর চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। তবে মাঝে মাঝে চরম বৃষ্টিপাতও ঘটে থাকে এখানে। দুবাই থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) দূরে অবস্থিত আল-আইন শহরে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ২৫৬ মিলিমিটার (১০ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।

দুবাই আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১০টা থেকে সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত দুবাইয়ে দেড় ফুট অর্থাৎ, ৬ দশমিক ২৬ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের মতে, দুবাইতে প্রতি বছর গড়ে ৩ দশমিক ১২ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহরটিতে দুই বছরের বৃষ্টি হয়েছে।

উপসাগরীয় অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের ধরন নিয়ে গবেষণা করা রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ অধ্যাপক মার্টেন অ্যাম্বাউম বলেন, পৃথিবীর এই অংশটি দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত ছাড়াই থাকে এবং তারপর অনিয়মিত, ভারী বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। তবুও এই বৃষ্টিপাতের ঘটনা খুবই বিরল।

জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা 
জলবায়ু পরিবর্তন দুবাইয়ের বন্যায় কতটা ভূমিকা পালন করেছে তা সঠিকভাবে পরিমাপ করা এখনো সম্ভব হয়নি। এর জন্য প্রাকৃতিক এবং মানবিক কারণগুলোর একটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন, যাতে লেগে যেতে পারে কয়েক মাস। তবে এই রেকর্ড বৃষ্টিপাত জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সহজ করে বললে—উষ্ণ বাতাস বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে। প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে বাতাস প্রায় ৭ শতাংশ অতিরিক্ত আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে, যা বৃষ্টির তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানের অধ্যাপক রিচার্ড অ্যালান ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা উষ্ণ জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর্দ্রতা বাড়লে ঝড়ের তীব্রতাও বাড়ে। সে সঙ্গে, ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যুক্ত বন্যাও ক্রমশ শক্তিশালী হয়।’

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, বিশ্ব উষ্ণতা অব্যাহত থাকায় এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশির ভাগ অংশে বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ুবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ফ্রেডরিক অটো বলেন, ‘মানুষ তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে থাকলে জলবায়ু উষ্ণ হতে থাকবে। এতে বৃষ্টিপাত বাড়তে থাকবে এবং বন্যায় মানুষ প্রাণ হারাবে।’

দুবাইয়ের বন্যায় ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিম বৃষ্টির ভূমিকা
বিদ্যমান মেঘগুলোকে আরও বেশি বৃষ্টি তৈরি করতে সাহায্য করার কৃত্রিম প্রক্রিয়াই ক্লাউড সিডিং।

বিমান ব্যবহার করে মেঘের মধ্যে ছোট কণা (যেমন সিলভার আয়োডাইড) নিক্ষেপ করার মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে। জলীয় বাষ্প তখন আরও সহজে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিতে পরিণত হতে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে কৌশলটি কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলের ঘাটতি মোকাবিলায় কৌশলটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

বন্যার পর সামাজিক প্ল্যাটফর্মে এই চরম আবহাওয়ার জন্য সাম্প্রতিক ক্লাউড সিডিংকে দায়ী করা হয়।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, ক্লাউড সিডিংয়ের জন্য গত রোববার ও সোমবার বিমান মোতায়েন করা হয়েছিল। এরপর মঙ্গলবারেই হয় বন্যা। তবে সেই দুদিন ক্লাউড সিডিং হয়েছিল কিনা তা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝড়ের ওপর ক্লাউড সিডিংয়ের সামান্য প্রভাব থাকতে পারে। তাই এই চরম আবহাওয়ার পেছনে ক্লাউড সিডিংকেই দায়ী করাটা বিভ্রান্তিকর।

ফ্রেডরিক ওটো বলেন, ‘দুবাইয়ে বৃষ্টি ঝরাতে যদি ক্লাউড সিডিং কৌশল প্রয়োগ করা হয়েও থাকে, তবুও আগে থেকেই মেঘ সৃষ্টির জন্য পানি বহনের উপযোগী পরিবেশ সেখানে ছিল।’

বাতাস, আর্দ্রতা এবং ধুলোর অবস্থা বৃষ্টির জন্য অপর্যাপ্ত হলে সেই অঞ্চলে ক্লাউড সিডিং করা যেতে পারে। গত সপ্তাহেই আবহাওয়াবিদেরা উপসাগর জুড়ে বন্যার উচ্চ ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।

আবুধাবির খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং ভূ-পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডায়ানা ফ্রান্সিস বলেন, ‘যখন এ ধরনের তীব্র এবং বৃহৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া হয় তখন আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্লাউড সিডিংয়ের মতো ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া প্রয়োজন পড়ে না।’

বিবিসির আবহাওয়াবিদ ম্যাট টেলরও উল্লেখ করেছেন যে, ভয়াবহ আবহাওয়ার ঘটনার পূর্বাভাস আগেই দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক বছরের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ছিল বলে কম্পিউটার মডেলগুলো আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।

তিনি বলেন, ‘শুধু ক্লাউড সিডিং থেকে যা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বিস্তৃত ফলাফল দেখেছি আমরা। বাহরাইন থেকে ওমান পর্যন্ত বিশাল এলাকায় মারাত্মক বন্যা দেখা দিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে কাঁপছে সারা দেশ, রাতে তাপমাত্রা আরও কমবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যশোরে টানা দুইদিন সূর্যের দেখা নেই। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরে টানা দুইদিন সূর্যের দেখা নেই। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাঘ মাস আসতে এখনো অনেক বাকি। আজ সোমবার কেবল ১৪ পৌষ। তবে এখনই হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে দেশজুড়ে। আজ সকাল ৬টায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রাতে সারা দেশেই তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

আজ সকাল ৯টা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকালে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪, রংপুরে ১৩, ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৬, সিলেটে ১৪ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৭ এবং খুলনা ও বরিশালে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুয়াশার কারণে দেশজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্ন হতে পারে উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

এ ছাড়া সারা দেশে আজ রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় শীত আরও বেড়েছে, পড়বে ঘন কুয়াশা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় শীত যেন আরও জেঁকে বসেছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ সোমবার একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২১ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, কুয়াশায় ব্যাহত চলাচল

  • দক্ষিণের পথে লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা।
  • কুয়াশায় ব্যাহত সড়ক ও বিমান যোগাযোগও।
  • বাগেরহাটে শীতের জেরে বৃদ্ধের মৃত্যু।
  • রাতের তাপমাত্রা আরেকটু কমতে পারে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৯
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আবহাওয়া দপ্তরের ভাষায় ‘শৈত্যপ্রবাহ’ না চললেও গতকাল রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশ তীব্র শীতে কাবু ছিল। বরং ঠান্ডার কামড়ের জোর আরও কিছুটা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের অনেক এলাকাতেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। চলতে পারে ঘন কুয়াশার ভোগান্তিও। তবে কয়েক দিন পরই নতুন বছরের শুরুতে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, গতকাল সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামা মানে রীতিমতো হাড়কাঁপানো শীত।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সোমবারসহ আগামী চার দিন সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার চাদর অব্যাহত থাকতে পারে।

লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ

ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল রাতে চাঁদপুর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়।

কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌযোগাযোগের পাশাপাশি বিমান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার প্রভাবে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকালও ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট দেরিতে অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। তবে কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট অন্যত্র পাঠানো হয়নি।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ গতকাল দুপুরের দিকে বলেন, ‘ভোরে রানওয়ের দৃশ্যমানতা কম থাকায় ফ্লাইট অপারেশনে সাময়িক বিঘ্ন ঘটে। তবে সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ফ্লাইট অপারেশন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে’।

বাগেরহাটে বৃদ্ধের মৃত্যু

বাগেরহাটের চিতলমারীতে শীতের তীব্রতায় অসুস্থ হয়ে বৈদ্যনাথ মণ্ডল (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। বৈদ্যনাথ চিতলমারী উপজেলার খিলিগাতী গ্রামের মুকুন্দলাল মণ্ডলের ছেলে।

এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়ে গত চার দিনে মোট ৫৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

উত্তরে জীবন বিপর্যস্ত

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কুয়াশার জন্য মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। হিমালয়ের পাদদেশের কাছাকাছি হওয়ায় বরাবরই উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা বেশি থাকে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে সে অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান, গত দুই দিনে এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন ১৩ এবং সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে শনিবার ও গতকাল দুপুর ১২টার আগে বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি।

দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, এটি চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার সকাল ৬টা থেকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির ছিল। এটি চলতি মৌসুমে এখানকার সর্বনিম্ন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেঁকে বসেছে শীত, বছরের শেষ দিন পর্যন্ত কমতে পারে তাপমাত্রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৭
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

মধ্য পৌষে এসে সারা দেশে শীত যেন জেঁকে বসেছে। গতকালের তুলনায় আজ রোববার তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে। তবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা কমতে পারে। এর সঙ্গে পড়বে ঘন কুয়াশা।

আজ বেলা ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে এসব কথা জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নিকলীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় ছিল ১৪ দশমিক ৩।

বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সকালে তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী, রংপুর, বরিশালে ১৩; ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৩, সিলেটে ১৪ দশমিক ৮, চট্টগ্রামে ১৬, খুলনায় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও আবার দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

সারা দেশে আজ রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।

এ ছাড়া আজ ঢাকায় পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

২৯ ডিসেম্বরও পরিস্থিতির পরিবর্তন তেমন হবে না উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এদিন রাতে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে দিনের বেলা তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত