Ajker Patrika

ঈদের সিনেমার ব্যবসায় খুশি সবাই

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
গ্র্যান্ড সিলেট মুভি থিয়েটারে শাকিব খান ও ইধিকা অভিনীত ‘বরবাদ’ দেখছেন দর্শক। ছবি: সংগৃহীত
গ্র্যান্ড সিলেট মুভি থিয়েটারে শাকিব খান ও ইধিকা অভিনীত ‘বরবাদ’ দেখছেন দর্শক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাই সিনেমা এখন ঈদকেন্দ্রিক। সারা বছর খালি থাকলেও ঈদের সময় দর্শকে মুখর হয়ে ওঠে হলগুলো। তবে গত কয়েক বছর রোজার ঈদের সিনেমাগুলোতে আশানুরূপ সাফল্য মেলেনি। ‘প্রিয়তমা’, ‘পরাণ’, ‘তুফান’-এর মতো ব্যবসাসফল সিনেমাগুলো মুক্তি পেয়েছে কোরবানির ঈদে। এবার সেই খরা বুঝি কাটল। রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া ছয় সিনেমার চারটিই দারুণ ব্যবসা করছে। প্রথম দিন থেকে হলে ভিড় বেড়েছে দর্শকের। মুক্তির সাত দিন পেরিয়ে গেলেও সিনেপ্লেক্সগুলোতে এখনো চলছে টিকিটের টানাটানি। সিঙ্গেল স্ক্রিনেও দেখা যাচ্ছে লম্বা সারি।

এবার রোজার ঈদে মুক্তি পেয়েছে ‘বরবাদ’, ‘অন্তরাত্মা’, ‘জংলি’, ‘দাগি’, ‘চক্কর ৩০২’ ও ‘জ্বীন থ্রি’। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক হলে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত বরবাদ। সিঙ্গেল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্স মিলিয়ে ১২০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। হলের সংখ্যায় এরপরেই ছিল শাকিবের আরেক সিনেমা অন্তরাত্মা। তবে মুক্তির পর তা আলো ছড়াতে পারেনি। দুই দিন পরেই সিনেপ্লেক্স থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় অন্তরাত্মা। বাকিগুলো চলছে দাপট নিয়ে। আর তাতেই প্রযোজকদের পাশাপাশি হাসি ফুটেছে হলমালিকদের মুখে।

বরবাদ দিয়ে প্রযোজক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে রিয়েল এনার্জি প্রোডাকশন। প্রথম সিনেমার সাফল্যে খুশি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শেহরিন আক্তার সুমি। তিনি বলেন, ‘জানতাম, বরবাদ ভালো চলবে। তবে এত সাড়া পাব ভাবিনি। অধিকাংশ হল নতুন রেন্টাল দিয়ে সপ্তাহ বাড়িয়ে নিচ্ছে। মাল্টিপ্লেক্সেও টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি। লেট নাইট শোর ব্যবস্থা করা হয়েছে অনেক জায়গায়। মুক্তির সাত দিন পরেও দর্শকের আগ্রহে ভাটা পড়েনি। আমার ধারণা, কোরবানির ঈদ পর্যন্ত বরবাদ চলবে। তবে সারা দেশে আরও হল বাড়ানো উচিত। হল না থাকায় বাইরে থেকে অনেক দর্শক সিনেমা দেখতে ঢাকায় আসছেন। ঢাকার বাইরে হলের সংখ্যা বাড়ানো গেলে দর্শকের জন্য সুবিধা হয়।’

ব্যবসা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে দাগির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আইয়ের কর্ণধার শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘প্রতিদিনই দাগি হাউসফুল যাচ্ছে। সব সিনেপ্লেক্সেই দাপট দেখাচ্ছে দাগি। ঈদের ছুটির সময় দর্শক সিনেমা দেখবেন, এমন ধারণা আগেই করেছিলাম। তবে ছুটির পর দর্শক উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু ছুটির পরেও হাউসফুল যাচ্ছে। এমনকি বেলা ১১টার শো এবং রাতের শেষ শোতেও টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে। অফিস-আদালত খোলার পরেও মানুষ সিনেমা দেখছেন। আগামী কয়েক দিনের টিকিটও শেষের দিকে। এটা আমাদের জন্য দারুণ অনুভূতি।’

সরকারি অনুদানে চক্কর ৩০২ বানিয়েছেন শরাফ আহমেদ জীবন। সিনেমার সহপ্রযোজকও তিনি। দর্শকের আগ্রহে সন্তুষ্ট হলেও সিনেমার শো নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ আছে তাঁর। জীবন বলেন, ‘সিনেমা বানিয়েছি দর্শকের জন্য। যাঁদের দেখছেন, তাঁরা ভালো বলছেন, এটাই তো সার্থকতা। ব্যাপকভাবে প্রচার করতে পারিনি। শুরু থেকে আমরা বলেছি, চক্করের প্রমোশন করবেন দর্শক। সেটাই কিন্তু হচ্ছে। প্রথম দিন থেকে তাঁরা চক্করের প্রশংসা করছেন। তবে দর্শক রিয়েকশন অনুযায়ী আমাদের শোর সংখ্যা যতটা হওয়া উচিত, ততটা নেই। শুরুতে যতটা শো পেয়েছিলাম, এখন তা নেই। আরও দুটি বিষয় বলব, যে পরিমাণ সিনেমা আমরা রিলিজ দিয়েছি, সেই পরিমাণ হল আমাদের নেই। দ্বিতীয় বাস্তবতা হচ্ছে, ঈদে এতগুলো সিনেমা আসায় সঠিকভাবে ডিস্ট্রিবিউট করা মাল্টিপ্লেক্সগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের সিনেমাটি যখন দর্শক দেখতে চাচ্ছেন, তখন কর্তৃপক্ষের উচিত, সেটা দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজরে নেবেন।’

সিনেপ্লেক্সে কম শো পেলেও দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্ট জংলি সিনেমার প্রযোজক জাহিদ হোসেন অভি। তিনি মনে করেন, সামনে আরও বেশি শো পাবে জংলি, সেই সঙ্গে আগামী সপ্তাহ থেকে সিঙ্গেল স্ক্রিনেও প্রদর্শনী বাড়বে। অভি বলেন, ‘জংলি ফ্যামিলি অডিয়েন্সের সিনেমা। অবশ্যই কমার্শিয়াল সিনেমা; পাশাপাশি সামাজিক বেশ কিছু মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জংলির সব শো হাউসফুল যাওয়ায় আমরা খুশি। দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় আমরা অভিভূত। তাঁরা তাঁদের ভালো লাগার কথা জানাচ্ছেন। যেহেতু অনেক সিনেমার চাপ, তাই হয়তো আমাদের সবগুলো শো মনমতো সময়ে পাইনি। তবে দর্শকের রেসপন্সের কারণে ইতিমধ্যে শোর সংখ্যা বেড়েছে। জংলিকে আমরা লম্বা রেসের ঘোড়া বলতে পারি। যেখানে অন্যান্য সিনেমার শো কমছে, সেখানে আমাদেরটা বাড়ছে। হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, সামনে শোর সংখ্যা বাড়বে। আগামী সপ্তাহ থেকে সিঙ্গেল স্ক্রিনের সংখ্যাও বাড়বে।’

টেকনিক্যাল কারণে সিঙ্গেল স্ক্রিনে জ্বীন থ্রি মুক্তি দিতে পারেনি জাজ মাল্টিমিডিয়া। ডিসিপি রেডি করতে দেরি হওয়ায় মাল্টিপ্লেক্সেও শোর সংখ্যায় পিছিয়ে পড়েছে সিনেমাটির। তবে যে কয়টি শো পেয়েছে, বেশির ভাগ হাউসফুল যাচ্ছে বলে দাবি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির।

এবার ঈদের সিনেমা নতুন করে আশা দেখাচ্ছে উল্লেখ করে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘ঈদের সিনেমা নিয়ে হলমালিকেরা সন্তুষ্ট। প্রায় সব প্রেক্ষাগৃহ হাউসফুল যাচ্ছে। বরবাদ, জ্বীন থ্রি, দাগি, জংলি, চক্কর—প্রতিটি সিনেমাই দর্শক দেখার চেষ্টা করছে। আমরা আনন্দিত। শিল্পী-কলাকুশলীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তাঁরা হলে দর্শকের কাছে গিয়েছেন। সিনেমা নিয়ে কথা বলেছেন। সব মিলিয়ে একটা উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা হলমালিকেরা প্রযোজকদের অনুরোধ করব, নতুন নতুন সিনেমা তৈরি করুন, এই আমেজটা ধরে রাখুন। নতুন ভাবনা তৈরি করুন, ভালো গল্প উপহার দিন, দর্শক অবশ্যই হলে যাবে।’

ধারাবাহিকভাবে ভালো সিনেমা মুক্তি পেলে হলের সংখ্যা বাড়ার আশাবাদ এই প্রযোজকের। উজ্জ্বল বলেন, ‘সিনেমার ব্যবসা নিয়ে নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম। অনেকে এই ব্যবসা থেকে সরে গেছেন, অনেকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এই ঈদে যে সাড়া পেয়েছি, তাতে হলমালিকেরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছেন। যে হলগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তাঁরা তাঁদের হলগুলো সংস্কার করে পুনরায় চালুর ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আবারও আমাদের হলের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চলে গেলেন ‘নারী স্বাধীনতার প্রতীক’ ব্রিজিত বার্দো

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
১৯৬৩ সালে ব্রিজিত বার্দো। ছবি: সংগৃহীত
১৯৬৩ সালে ব্রিজিত বার্দো। ছবি: সংগৃহীত

ফরাসি সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী ও প্রাণী অধিকারকর্মী ব্রিজিত বার্দো আর নেই। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) তাঁর প্রতিষ্ঠানের দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ৯১ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন। সিনেমায় সাহসী ও স্বাধীন নারীর প্রতীক হিসেবে ষাটের দশকে যৌন বিপ্লবের ভাষা নির্মাণে ভূমিকা রেখেছিলেন বার্দো। জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে সেই মানুষটিই নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করেছিলেন প্রাণীর অধিকার রক্ষার আন্দোলনে।

বার্দোর মৃত্যুতে তাঁর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘একজন অসাধারণ নারীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, যিনি সবকিছু দিয়েছিলেন এবং প্রাণীদের প্রতি আরও সম্মানজনক একটি পৃথিবীর জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর আদর্শ ও সংগ্রাম ফাউন্ডেশনের কাজের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবে।’

সিএনএন জানিয়েছে, ফ্রান্সে ‘বিবি’ নামে পরিচিত ছিলেন ব্রিজিত। ১৯৫০ ও ৬০–এর দশকে তাঁর খোলামেলা, সংযমহীন অভিনয় একদিকে দর্শককে মোহিত করে, অন্যদিকে রক্ষণশীলতার ধারক-বাহকদের কাঁপিয়ে দেয়। হলিউডে যখন যৌনতা নিয়ে কঠোর সেন্সরশিপ চলছিল, তখন বার্দো বিদেশি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মার্কিন দর্শকদের কাছে নতুন এক স্বাধীনতার ছবি হাজির করেন। ১৯৬১ সালে লাইফ ম্যাগাজিন লিখেছিল, ‘মেয়েরা যখন হাঁটে, তারা বার্দোর মতো হাঁটে, পোশাক পরে, চুল বাঁধে—এবং তাঁর মতো মুক্ত আত্মা হতে চায়।’

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বার্দোকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন—তিনি স্বাধীন জীবনের প্রতীক। এক্সে দেওয়া পোস্টে মাখোঁ লেখেন, ‘তাঁর সিনেমা, কণ্ঠ, দীপ্তি, দুঃখ, প্রাণীদের প্রতি উদার ভালোবাসা—সব মিলিয়ে বার্দো এক মুক্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি।’

বার্দো ছিলেন আধুনিক সেলিব্রিটির প্রথম দিককার এক উদাহরণ। প্রাক-নারীবাদী যুগেই তিনি নিজের শর্তে প্রেম করেছেন, সম্পর্ক গড়েছেন, ভোগবাদী জীবনযাপন নিয়ে কখনো অনুতপ্ত হননি। ফরাসি দার্শনিক সিমোন দ্য বোভোয়ার ১৯৫৯ সালে লিখেছিলেন—প্রেমের খেলায় বার্দো যেমন শিকার, তেমনি শিকারি—আর সেটাই পুরুষ অহংকারে আঘাত হানে।

নিজের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে বার্দো কখনো বড়াই করেননি। তবু ‘...অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড ওম্যান’, ‘কঁতঁপ্ত’, ‘ভিভা মারিয়া!’ সহ ৪০ টির বেশি চলচ্চিত্রে প্রায় দুই দশক ধরে তাঁর ক্যারিশমা অপ্রতিরোধ্য ছিল। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় গায়িকাও। ফ্যাশনে তাঁর প্রভাব ছিল দীর্ঘস্থায়ী—স্বর্ণকেশী এলোমেলো চুল, সহজ পোশাক ও স্বাভাবিক উপস্থিতি বহু অভিনেত্রী ও মডেলের অনুকরণীয় হয়ে ওঠে।

১৯৭৩ সালে, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে সিনেমা থেকে অবসর নিয়ে জীবনকে অন্যদিকে নিয়ে যান বার্দো। প্রাণী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি হয়ে ওঠেন কণ্ঠস্বর। ১৯৮৭ সালে তিনি বলেন, ‘যৌবন ও সৌন্দর্য দিয়েছি পুরুষদের, এখন আমার প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দেব প্রাণীদের জন্য।’ তবে তাঁর জীবন বিতর্কমুক্ত ছিল না—অভিবাসন ও ধর্মীয় আচার নিয়ে মন্তব্যের কারণে তিনি সমালোচিত ও দণ্ডিত হয়েছেন।

স্বাভাবিকভাবে বার্ধক্যকে গ্রহণ করাও ছিল তাঁর আরেকটি বিদ্রোহ। প্লাস্টিক সার্জারি এড়িয়ে সাদা চুল ও মুখের ভাঁজ নিয়েই তিনি প্রকাশ্যে থেকেছেন।

ব্রিজিত বার্দোর জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, প্যারিসে। এক সময় ব্যালে নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখা মেয়েটি শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেন শতাব্দীর এক প্রতীক—যিনি স্বাধীনতা, বিতর্ক ও করুণ বাস্তবতার মাঝেই নিজের মতো করে বেঁচে ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুমুল হট্টগোলে ফরিদপুরে পণ্ড হলো কনসার্ট, আয়োজকদের দুষলেন জেমস

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৫
জেমস। ছবি: সংগৃহীত
জেমস। ছবি: সংগৃহীত

গত শুক্রবার ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনীর সমাপনী দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার কথা ছিল ব্যান্ড তারকা নগরবাউল জেমসের। গান শোনাতে যথাসময়ে ফরিদপুর গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জেমস মঞ্চে ওঠার আগেই তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। বহিরাগত ব্যক্তিদের হামলা ও ইটবৃষ্টির মুখে কনসার্টটি বাতিল ঘোষণা করেন আয়োজকেরা। শেষ পর্যন্ত গান না গেয়েই ফরিদপুর ছাড়েন জেমস। কনসার্ট বাতিল হওয়ার ঘটনাকে আয়োজকদের ব্যর্থতা দাবি করে জেমস বলেছেন, ‘এটি সম্পূর্ণ আয়োজকদের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতা।’

জেমসের ম্যানেজার ও মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আয়োজকেরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। অনুষ্ঠানস্থলের ভেতর থেকে অনেক বেশি মানুষ ছিল বাইরে। এভাবে তো অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। আমরা সন্ধ্যার সময়ই ফরিদপুর পৌঁছাই। অনুষ্ঠান শুরুর পর জানতে পারি বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। রাত ১০টার দিকে আমাদের জানানো হয়, বাতিল করা হয়েছে অনুষ্ঠান। এরপর ঢাকায় চলে আসেন জেমস।’

জানা যায়, স্কুলের পুনর্মিলনী উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকেই সাজ সাজ রব ছিল ফরিদপুর শহরে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পর্বের সময় জিলা স্কুলের মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার মানুষ ভেতরে প্রবেশের জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। একদল যুবক সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে স্বেচ্ছাসেবকেরা বাধা দেন। এর পরপরই মুজিব সড়ক ও স্কুলের চারপাশ থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এতে শিক্ষার্থী ও আয়োজকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে, বিশৃঙ্খলার কবলে পড়েছেন জেমস। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেন—এমন কথাও ছড়িয়ে পড়ে। তবে রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন বলেন, ‘এমন কথা সত্যি নয়। সন্ধ্যায় ফরিদপুর পৌঁছালেও অনুষ্ঠানস্থলে যাননি জেমস। ছিলেন একটি গেস্ট হাউসে। সেখানেই তিনি খবর পান বিশৃঙ্খলার। পরে শো বাতিল করলে আমরা ভেন্যুতে না গিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি।’

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের ভেতরের ধারণক্ষমতার চেয়ে বাইরে অন্তত ১০ গুণ মানুষ জমায়েত হয়েছিল। জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে এত বিশাল জনসমুদ্র সামলানো অসম্ভব ছিল। বহিরাগতদের বাধা দিতে গেলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।’

পুনর্মিলনী উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান শামীম বলেন, ‘নিরাপত্তার খাতিরেই আমরা অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছি। আমাদের অনেক ছোট ছোট শিক্ষার্থী ও প্রবীণ সদস্য আহত হয়েছেন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আবার শুরু হচ্ছে ‘প্রীতিলতা’ সিনেমার শুটিং

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৬
পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত
পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে দুটি সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। প্রদীপ ঘোষের ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ সিনেমায় প্রীতিলতা হয়েছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। অন্যদিকে রাশিদ পলাশের সিনেমায় প্রীতিলতা হয়েছেন পরীমণি। প্রদীপ ঘোষের সিনেমাটি ২০২৩ সালে আলোর মুখ দেখলেও আটকে আছে রাশিদ পলাশের ‘প্রীতিলতা’। নির্মাতা জানালেন নতুন বছরে আবার শুরু হচ্ছে সিনেমার শুটিং।

গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় পরীমণির সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে রাশিদ পলাশ লেখেন, ‘এবার প্রীতিলতাও শেষ হবে ইনশা আল্লাহ ২০২৬’। মন্তব্যের ঘরে পরীমণি লেখেন, ‘আমিও প্রস্তুত আছি’। স্পষ্টতই বোঝা গেল, জটিলতা কাটিয়ে নতুন বছরে আবার প্রীতিলতা হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছেন পরীমণি।

প্রীতিলতা সিনেমা নিয়ে জানতে যোগাযোগ করলে রাশিদ পলাশ বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই প্রীতিলতার বাকি অংশের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের এপ্রিলে শুটিংয়ে যাব।’

২০২১ সালে প্রকাশ করা হয়েছিল প্রীতিলতার ফার্স্ট লুক। প্রীতিলতা বেশে চমকে দিয়েছিলেন পরী। সিনেমাটি নিয়ে তৈরি হয়েছিল আগ্রহ। কিন্তু পরীমণির মাতৃত্বকালীন বিরতিসহ নানা কারণে সে সময় শুটিং শেষ করা সম্ভব হয়নি। মাঝে কয়েকবার এই সিনেমার শুটিং শুরুর কথা শোনা গেলেও তা হয়নি। নতুন বছরে সেই অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে চান পরিচালক রাশিদ পলাশ। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছরের এপ্রিলে শুটিং শেষ করতে চান প্রীতিলতার। এরপরেই শুরু করবেন সম্পাদনাসহ পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। সিনেমার চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন গোলাম রাব্বানী।

রাশিদ পলাশ বলেন, ‘২০২০ সালের শেষ দিকে আমরা শুটিং শুরু করেছিলাম। তখন প্রায় ৩০ শতাংশ শুটিং হয়েছিল। সব মিলিয়ে ঢাকা অংশের কাজ শেষ করা আছে। এখন আমরা শুটিং করব চট্টগ্রাম অংশের। আশা করছি রোজার ঈদের পর এপ্রিল মাসে আবার ক্যামেরা ওপেন করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিরে দেখা /বলিউডের হতাশার বছরে আলো দেখালেন রণবীর

বিনোদন ডেস্ক
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৫
‘ধুরন্ধর’ সিনেমায় রণবীর সিং
‘ধুরন্ধর’ সিনেমায় রণবীর সিং

তারকারাই বলিউডের প্রাণ। যত বড় তারকা, তাঁর সিনেমা ঘিরে প্রত্যাশাও তত বিশাল। তবে সিনেমায় সুপারস্টারের উপস্থিতি কিংবা নজরকাড়া প্রমোশন এখন আর সাফল্যের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। দর্শকেরা এখন তারকা নয়, সিনেমায় খোঁজে ভালো গল্প। এর প্রমাণ এ বছর আবারও পেয়েছে বলিউড।

হৃতিক রোশন-এনটিআর জুনিয়র-কিয়ারা আদভানি অভিনীত ‘ওয়ার ২’ প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি। ব্যর্থ হয়েছে সালমান খানের ‘সিকান্দার’, বরুণ ধাওয়ান-জাহ্নবী কাপুরের ‘সানি সংস্কারি কি তুলসী কুমারী’, শহিদ কাপুরের ‘দেবা’, কাজলের ‘মা’, অর্জুন কাপুরের ‘মেরে হাজবেন্ড কি বিবি’সহ একাধিক বড় তারকার সিনেমা। হিট সিনেমার সিকুয়েলও এবার খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারেনি। ওয়ার ২ তো আছেই, ফ্লপের তালিকায় যুক্ত হয়েছে অজয়ের ‘দে দে পেয়ার দে ২’, ‘সন অব সরদার ২’, টাইগার শ্রফের ‘বাঘি ৪’, সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী-তৃপ্তি দিমরির ‘ধাড়াক ২’সহ একগুচ্ছ সিকুয়েল।

আগে থেকেই দক্ষিণের চাপে ছিল বলিউড। এ বছর সে চাপ আরও বেড়েছে। ইদানীং দক্ষিণি সিনেমাগুলো প্যান-ইন্ডিয়া নাম দিয়ে হিন্দি ভাষাতেও মুক্তি পায়। ফলে দক্ষিণি সিনেমার সাফল্য অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে বলিউডের বক্স অফিস। বলিউডের হতাশার এই বছরে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বড় সাফল্য এনে দেয় ভিকি কৌশলের ‘ছাভা’। দেড় শ কোটিতে নির্মিত সিনেমাটি ৮০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করে। তবে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগও ওঠে সিনেমাটির বিরুদ্ধে।

‘লাল সিং চাড্ডা’র ব্যর্থতার পর ‘সিতারে জমিন পার’ দিয়ে বক্স অফিসে আমির খানের রাজত্ব ফেরাটাও বলিউডের এ বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। প্রেক্ষাগৃহে ২৬৬ কোটির বেশি ব্যবসা করা সিনেমাটি পরবর্তী সময়ে ওটিটিতে না দিয়ে আমির সরাসরি মুক্তি দেন ইউটিউবে। সেখানেও বড় সাফল্য পেয়েছেন। এ পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সিনেমা মুক্তির নতুন দিশা দেখিয়েছেন তিনি।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে এক নতুন জুটি দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন নির্মাতা মোহিত সুরি। আহান পান্ডে ও অনিত পাড্ডাকে নিয়ে তিনি তৈরি করেন ‘সাইয়ারা’। এই গতানুগতিক প্রেমের আখ্যান দর্শক ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। আয় করেছে ৫৭৯ কোটি রুপি। এ সিনেমার সাফল্যের মাধ্যমে বলিউড পেয়েছে দুই নতুন মুখ, যাঁরা হয়ে উঠতে পারেন আগামীর তারকা। অ্যাকশন গল্পের আধিক্যের ভিড়ে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে ‘জলি এলএলবি ৩’ কিংবা ‘হাউসফুল ৫’-এর মতো কমেডি গল্প। এ দুই সিনেমা দিয়ে এবার বক্স অফিসে কিছুটা হলেও সাফল্য ফিরে পেয়েছেন অক্ষয় কুমার।

তবে বছরের সবচেয়ে বড় দানটা মেরেছেন রণবীর সিং। বছরজুড়ে তাঁর মুক্তির তালিকা ছিল শূন্য। ছিলেন আলোচনার বাইরে। ৫ ডিসেম্বর আসে তাঁর স্পাই অ্যাকশন থ্রিলার ‘ধুরন্ধর’। মুক্তির ২২ দিনের মাথায় হাজার কোটির মাইলফলকে পৌঁছেছে সিনেমাটি। এটিই বলিউডে এ বছরের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এই সিনেমা দিয়ে নতুন করে আলোচনায় ফিরেছেন অক্ষয় খান্না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত