Ajker Patrika

যেদিন মৃণাল সেন ফিরে এলেন জন্মস্থান ফরিদপুরে

খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ২০: ১২
যেদিন মৃণাল সেন ফিরে এলেন জন্মস্থান ফরিদপুরে

‘এই শহর কলকাতায় আসার পর আমার কেন যেন ভয় ভয় করতে লাগল। এক বিশাল জনসমুদ্র! আমার মনে হতে লাগল আমি এই জনসমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছি। এ জনসমুদ্রে আমি একাকী নিঃসঙ্গ। এই জনসমুদ্রের সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ কারও সম্পর্কে কোনও খবরই রাখে না। উদাসীন নির্লিপ্ত জনজোয়ার…’
(তৃতীয় ভুবন, মৃণাল সেন)

কলকাতায় যাওয়ার আগে প্রায় সতেরো বছর ফরিদপুরে ছিলেন নির্মাতা মৃণাল সেন। মফসসলের গন্ধ মাখা ওই শহরে মৃণালের জন্ম। একটু একটু করে বড় হয়ে ওঠা। ফরিদপুর তখন ছিল জাতীয় কংগ্রেসের এক বিশেষ ঘাঁটি। মৃণাল সেনের বাবা দীনেশচন্দ্র ছিলেন পেশায় আইনজীবী। রাজনীতির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ছিলেন তিনি।

বাবাকে নিয়ে মৃণাল সেন লিখছেন, ‘সে সময়ের বিপ্লবীরা যাঁদের অনেকের ফাঁসি হয়েছে এবং যাঁরা তখনকার স্বাধীনতা সংগ্রামী—তাঁরা সব বাবার বন্ধু ছিলেন। একটা সময় বাবাকে শাস্তি পেতে হয়েছিল, কোর্টে গিয়ে সওয়াল না করতে বাধ্য করেছিলেন বাবাকে ইংরেজ সরকার।’

মা-বাবা, প্রতিবেশি, জন্মভূমি—সবকিছুর সঙ্গে যখন ধীরে ধীরে মৃণাল সেনের স্মৃতির পাল্লা ভারী হচ্ছে, তখনই তাঁকে জন্মস্থান ছেড়ে চলে যেতে হয় কলকাতায়। সাল ১৯৪০। বাবা-মা-ই পাঠান তাঁকে কলকাতা, স্কটিশ চার্চ কলেজে বিএসসি পড়ার জন্য।

নির্মাতা মৃণাল সেন (১৪ মে ১৯২৩—৩০ ডিসেম্বর ২০১৮)কলকাতায় যাওয়ার আগে বাবা-মাকে একদিন মজার ছলে প্রশ্ন করেছিলেন মৃণাল সেন, ‘আমার মধ্যে কি কোনো প্রতিভা আছে? আন্দাজ পেয়েছ কিছু?’ প্রশ্নটা শুনে তাঁর বাবা-মা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। উত্তরটা মৃণাল নিজেই দিয়েছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেলকে কোট করে, ‘দশ বছর বয়স পর্যন্ত সবাই প্রতিভাবান।’

সতেরো বছর বয়সে মৃণাল সেন ফরিদপুর ছাড়লেন। সেই যে গেলেন কলকাতা, তার পর দেশ ভাগ হলো, বড়সড় রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখল ভারতবর্ষ। ইতিহাসের অনেক পাতাই ওল্টানো হলো। কিন্তু ফরিদপুরে আর ফিরলেন না মৃণাল।

দেশভাগের সময় তাঁর বাবা-মাও ফরিদপুর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। বাড়ি-জমি যা যা স্থাবর সম্পত্তি ছিল, জলের দরে বিক্রি করে একদিন তাঁরা মৃণালের মতোই হাজির হলেন অচেনা শহর কলকাতায়। একেবারে বাস্তুহারার মতো।

অনেক বছর পর, ১৯৯০ সালে ফরিদপুরের সেই বাড়ির সামনে আবার এসে দাঁড়ালেন মৃণাল। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী গীতা। এর আগে কয়েকবার চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছেন মৃণাল। জন্মস্থান ফরিদপুরে যাওয়ার আমন্ত্রণও পেয়েছেন। কিন্তু যাননি। কেন? ‘সত্যি বলতে আমার কাছে এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই’—বলেন মৃণাল।

সেবার ঢাকা পৌঁছেই জন্মস্থানের জন্য মনটা কেমন করে উঠল তাঁর। ঠিক করলেন—চারদিনের জন্য ফরিদপুর যাবেন। মৃণাল সেনের বিভিন্ন সময়ের বয়ানে উঠে এসেছে স্মরণীয় সেই যাত্রার কথা। স্ত্রী গীতা, চিত্রগ্রাহক শশী আনন্দ, আর পথপ্রদর্শক খয়ের খাঁ—এ তিনজনকে নিয়ে মৃণাল সেন যখন ফরিদপুরের কাছাকাছি, তখন যেন উত্তেজনার আগুন পোহাচ্ছেন তিনি।

নির্মাতা মৃণাল সেন (১৪ মে ১৯২৩—৩০ ডিসেম্বর ২০১৮)বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে গাড়ি থামল। নামলেন। এবার কিছুটা পথ যেতে হবে হেঁটে। অনেকেই এগিয়ে এলেন উষ্ণ অভ্যর্থনা, প্রশংসা আর ভালোবাসা নিয়ে। একটু খাওয়া। বিশ্রাম। তারপর পায়ে হেঁটে এগোতে থাকলেন সেই অতীতের খোঁজে। সবাইকে বললেন, ‘আমি এখানে আমার নিজের মতো করে পথ চলব, তোমরা কেউ কোনও কথা বলবে না। যদি আমি কখনও ভুল করি পথ চলতে চলতে, তা হলেও নয়।’

অবশেষে, অনেকটা পথ পেরিয়ে, অনেক স্মৃতিতে দিয়ে ডুব, কান্নাভেজা চোখে বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালেন মৃণাল সেন। বাড়ির সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু মানুষ। কেউ কোনো কথা বলল না। ‘অখণ্ড অপূর্ব নীরবতা!’

বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন এক মাঝবয়সি নারী। হাতে একগুচ্ছ ফুল। মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতার হাতে ফুলগুলো দিয়ে বললেন, ‘আপনি শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন। আসুন, সেই পুকুর পাড়ে যাবেন তো? আপনাদের বাবার কথা আমরা রেখেছি। ভাঙচুর একটু-আধটু যা হয়েছে, তাও সারিয়েছি।’

নির্মাতা মৃণাল সেন (১৪ মে ১৯২৩—৩০ ডিসেম্বর ২০১৮)সেই পুকুরপাড়! মৃণাল সেনের স্মৃতিতে জ্বলজ্বলে তখনও পুকুরপাড়টা। মাঝবয়সি সেই নারীর মুখে পুকুরপাড়ের কথা শুনে মৃণাল-গীতা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। গলাটা ধরে এল মৃণালের।

ওই পুকুরপাড়ে লেপ্টে আছে রেবার স্মৃতি। মৃণালের বোন রেবা। সাত ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সবার ছোট রেবা। বড় আদরের। পাড়া-প্রতিবেশী সবাই খুব ভালোবাসত রেবাকে। একদিন ছুটির দিন। দুপুরবেলা। সবাই খাচ্ছিলেন। রেবা সবার আগে খাওয়া শেষ করে পুকুরঘাটের দিকে চলে যায়। ঘাটটি ছিল সব ভাইবোনের প্রিয় আড্ডার জায়গা। রেবারও। সিঁড়িতে বসে পা ঝুলিয়ে বসে থাকত সে।

সেদিন দুপুরের খাবার শেষ করে পুকুরঘাটের দিকে চলে যাওয়ার পর রেবাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। কোত্থাও না। এ-পাড়া ও-পাড়া— খুঁজতে বাকি নেই কোথাও। অনেকক্ষণ পর মৃণালের মেজদা কী যেন ভেবে পুকুরে ঝাঁপ দিলেন। মুহূর্তের মধ্যে পানির নিচ থেকে টেনে নিয়ে এলেন রেবাকে। রেবার শরীরটা তখন ঠান্ডা।

নির্মাতা মৃণাল সেন (১৪ মে ১৯২৩—৩০ ডিসেম্বর ২০১৮)মেয়ের মৃত্যুর পর মৃণালের বাবা দীনেশচন্দ্র পুকুরঘাটে রেবার স্মৃতিসৌধ তৈরি করেছিলেন। দেশভাগের সময় বাড়ি বিক্রি করে, দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে বাড়ির নতুন মালিককে অনুরোধ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র—যেন স্মৃতিসৌধটি না ভাঙা হয়।

অনেক বছর পর নিজের জন্মভিটেয় এসে রেবার স্মৃতিসৌধটি সেভাবেই পেয়েছিলেন মৃণাল। প্রিয় বোনের স্মৃতির দিকে তাকিয়ে চোখ ছলছল করে উঠল মৃণালের। ভীষণ কান্না পেল। কিন্তু কাঁদতে পারলেন না। মাঝবয়সী সেই নারীর কথা তখনও তাঁর কানে বাজছে—‘সেই পুকুর পাড়ে যাবেন তো? আপনাদের বাবার কথা আমরা রেখেছি। ভাঙচুর একটু-আধটু যা হয়েছে, তাও সারিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চলে গেলেন ‘নারী স্বাধীনতার প্রতীক’ ব্রিজিত বার্দো

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০০
১৯৬৩ সালে ব্রিজিত বার্দো। ছবি: সংগৃহীত
১৯৬৩ সালে ব্রিজিত বার্দো। ছবি: সংগৃহীত

ফরাসি সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী ও প্রাণী অধিকারকর্মী ব্রিজিত বার্দো আর নেই। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) তাঁর প্রতিষ্ঠানের দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ৯১ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন। সিনেমায় সাহসী ও স্বাধীন নারীর প্রতীক হিসেবে ষাটের দশকে যৌন বিপ্লবের ভাষা নির্মাণে ভূমিকা রেখেছিলেন বার্দো। জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে সেই মানুষটিই নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করেছিলেন প্রাণীর অধিকার রক্ষার আন্দোলনে।

বার্দোর মৃত্যুতে তাঁর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, একজন অসাধারণ নারীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, যিনি সবকিছু দিয়েছিলেন এবং প্রাণীদের প্রতি আরও সম্মানজনক একটি পৃথিবীর জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর আদর্শ ও সংগ্রাম ফাউন্ডেশনের কাজের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবে।

সিএনএন জানিয়েছে, ফ্রান্সে ‘বিবি’ নামে পরিচিত ছিলেন ব্রিজিত। ১৯৫০ ও ৬০–এর দশকে তাঁর খোলামেলা, সংযমহীন অভিনয় একদিকে দর্শককে মোহিত করে, অন্যদিকে রক্ষণশীলতার ধারক-বাহকদের কাঁপিয়ে দেয়। হলিউডে যখন যৌনতা নিয়ে কঠোর সেন্সরশিপ চলছিল, তখন বার্দো বিদেশি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মার্কিন দর্শকদের কাছে নতুন এক স্বাধীনতার ছবি হাজির করেন। ১৯৬১ সালে লাইফ ম্যাগাজিন লিখেছিল, ‘মেয়েরা যখন হাঁটে, তারা বার্দোর মতো হাঁটে, পোশাক পরে, চুল বাঁধে এবং তাঁর মতো মুক্ত আত্মা হতে চায়।’

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বার্দোকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, তিনি স্বাধীন জীবনের প্রতীক। এক্সে দেওয়া পোস্টে মাখোঁ লেখেন, ‘তাঁর সিনেমা, কণ্ঠ, দীপ্তি, দুঃখ, প্রাণীদের প্রতি উদার ভালোবাসা—সব মিলিয়ে বার্দো এক মুক্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি।’

বার্দো ছিলেন আধুনিক সেলিব্রিটির প্রথম দিককার এক উদাহরণ। প্রাক-নারীবাদী যুগেই তিনি নিজের শর্তে প্রেম করেছেন, সম্পর্ক গড়েছেন, ভোগবাদী জীবনযাপন নিয়ে কখনো অনুতপ্ত হননি। ফরাসি দার্শনিক সিমোন দ্য বোভোয়ার ১৯৫৯ সালে লিখেছিলেন, প্রেমের খেলায় বার্দো যেমন শিকার, তেমনি শিকারি—আর সেটাই পুরুষ অহংকারে আঘাত হানে।

নিজের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে বার্দো কখনো বড়াই করেননি। তবু ‘...অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড উইম্যান’, ‘কঁতঁপ্ত’, ‘ভিভা মারিয়া!’সহ ৪০টির বেশি চলচ্চিত্রে প্রায় দুই দশক ধরে তাঁর ক্যারিশমা অপ্রতিরোধ্য ছিল। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় গায়িকাও। ফ্যাশনে তাঁর প্রভাব ছিল দীর্ঘস্থায়ী—স্বর্ণকেশী এলোমেলো চুল, সহজ পোশাক ও স্বাভাবিক উপস্থিতি বহু অভিনেত্রী ও মডেলের অনুকরণীয় হয়ে ওঠে।

১৯৭৩ সালে, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে সিনেমা থেকে অবসর নিয়ে জীবনকে অন্যদিকে নিয়ে যান বার্দো। প্রাণী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি হয়ে ওঠেন কণ্ঠস্বর। ১৯৮৭ সালে তিনি বলেন, ‘যৌবন ও সৌন্দর্য দিয়েছি পুরুষদের, এখন আমার প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দেব প্রাণীদের জন্য।’ তবে তাঁর জীবন বিতর্কমুক্ত ছিল না—অভিবাসন ও ধর্মীয় আচার নিয়ে মন্তব্যের কারণে তিনি সমালোচিত ও দণ্ডিত হয়েছেন।

স্বাভাবিকভাবে বার্ধক্যকে গ্রহণ করাও ছিল তাঁর আরেকটি বিদ্রোহ। প্লাস্টিক সার্জারি এড়িয়ে সাদা চুল ও মুখের ভাঁজ নিয়েই তিনি প্রকাশ্যে থেকেছেন।

ব্রিজিত বার্দোর জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, প্যারিসে। একসময় ব্যালে নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখা মেয়েটি শেষপর্যন্ত হয়ে ওঠেন শতাব্দীর এক প্রতীক—যিনি স্বাধীনতা, বিতর্ক ও করুণ বাস্তবতার মাঝেই নিজের মতো করে বেঁচে ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুমুল হট্টগোলে ফরিদপুরে পণ্ড হলো কনসার্ট, আয়োজকদের দুষলেন জেমস

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৫
জেমস। ছবি: সংগৃহীত
জেমস। ছবি: সংগৃহীত

গত শুক্রবার ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনীর সমাপনী দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার কথা ছিল ব্যান্ড তারকা নগরবাউল জেমসের। গান শোনাতে যথাসময়ে ফরিদপুর গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জেমস মঞ্চে ওঠার আগেই তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। বহিরাগত ব্যক্তিদের হামলা ও ইটবৃষ্টির মুখে কনসার্টটি বাতিল ঘোষণা করেন আয়োজকেরা। শেষ পর্যন্ত গান না গেয়েই ফরিদপুর ছাড়েন জেমস। কনসার্ট বাতিল হওয়ার ঘটনাকে আয়োজকদের ব্যর্থতা দাবি করে জেমস বলেছেন, ‘এটি সম্পূর্ণ আয়োজকদের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতা।’

জেমসের ম্যানেজার ও মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আয়োজকেরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। অনুষ্ঠানস্থলের ভেতর থেকে অনেক বেশি মানুষ ছিল বাইরে। এভাবে তো অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। আমরা সন্ধ্যার সময়ই ফরিদপুর পৌঁছাই। অনুষ্ঠান শুরুর পর জানতে পারি বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। রাত ১০টার দিকে আমাদের জানানো হয়, বাতিল করা হয়েছে অনুষ্ঠান। এরপর ঢাকায় চলে আসেন জেমস।’

জানা যায়, স্কুলের পুনর্মিলনী উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকেই সাজ সাজ রব ছিল ফরিদপুর শহরে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পর্বের সময় জিলা স্কুলের মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার মানুষ ভেতরে প্রবেশের জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। একদল যুবক সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে স্বেচ্ছাসেবকেরা বাধা দেন। এর পরপরই মুজিব সড়ক ও স্কুলের চারপাশ থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এতে শিক্ষার্থী ও আয়োজকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে, বিশৃঙ্খলার কবলে পড়েছেন জেমস। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেন—এমন কথাও ছড়িয়ে পড়ে। তবে রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন বলেন, ‘এমন কথা সত্যি নয়। সন্ধ্যায় ফরিদপুর পৌঁছালেও অনুষ্ঠানস্থলে যাননি জেমস। ছিলেন একটি গেস্ট হাউসে। সেখানেই তিনি খবর পান বিশৃঙ্খলার। পরে শো বাতিল করলে আমরা ভেন্যুতে না গিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি।’

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের ভেতরের ধারণক্ষমতার চেয়ে বাইরে অন্তত ১০ গুণ মানুষ জমায়েত হয়েছিল। জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে এত বিশাল জনসমুদ্র সামলানো অসম্ভব ছিল। বহিরাগতদের বাধা দিতে গেলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।’

পুনর্মিলনী উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান শামীম বলেন, ‘নিরাপত্তার খাতিরেই আমরা অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছি। আমাদের অনেক ছোট ছোট শিক্ষার্থী ও প্রবীণ সদস্য আহত হয়েছেন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আবার শুরু হচ্ছে ‘প্রীতিলতা’ সিনেমার শুটিং

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৬
পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত
পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে দুটি সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। প্রদীপ ঘোষের ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ সিনেমায় প্রীতিলতা হয়েছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। অন্যদিকে রাশিদ পলাশের সিনেমায় প্রীতিলতা হয়েছেন পরীমণি। প্রদীপ ঘোষের সিনেমাটি ২০২৩ সালে আলোর মুখ দেখলেও আটকে আছে রাশিদ পলাশের ‘প্রীতিলতা’। নির্মাতা জানালেন নতুন বছরে আবার শুরু হচ্ছে সিনেমার শুটিং।

গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় পরীমণির সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে রাশিদ পলাশ লেখেন, ‘এবার প্রীতিলতাও শেষ হবে ইনশা আল্লাহ ২০২৬’। মন্তব্যের ঘরে পরীমণি লেখেন, ‘আমিও প্রস্তুত আছি’। স্পষ্টতই বোঝা গেল, জটিলতা কাটিয়ে নতুন বছরে আবার প্রীতিলতা হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছেন পরীমণি।

প্রীতিলতা সিনেমা নিয়ে জানতে যোগাযোগ করলে রাশিদ পলাশ বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই প্রীতিলতার বাকি অংশের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের এপ্রিলে শুটিংয়ে যাব।’

২০২১ সালে প্রকাশ করা হয়েছিল প্রীতিলতার ফার্স্ট লুক। প্রীতিলতা বেশে চমকে দিয়েছিলেন পরী। সিনেমাটি নিয়ে তৈরি হয়েছিল আগ্রহ। কিন্তু পরীমণির মাতৃত্বকালীন বিরতিসহ নানা কারণে সে সময় শুটিং শেষ করা সম্ভব হয়নি। মাঝে কয়েকবার এই সিনেমার শুটিং শুরুর কথা শোনা গেলেও তা হয়নি। নতুন বছরে সেই অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে চান পরিচালক রাশিদ পলাশ। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছরের এপ্রিলে শুটিং শেষ করতে চান প্রীতিলতার। এরপরেই শুরু করবেন সম্পাদনাসহ পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। সিনেমার চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন গোলাম রাব্বানী।

রাশিদ পলাশ বলেন, ‘২০২০ সালের শেষ দিকে আমরা শুটিং শুরু করেছিলাম। তখন প্রায় ৩০ শতাংশ শুটিং হয়েছিল। সব মিলিয়ে ঢাকা অংশের কাজ শেষ করা আছে। এখন আমরা শুটিং করব চট্টগ্রাম অংশের। আশা করছি রোজার ঈদের পর এপ্রিল মাসে আবার ক্যামেরা ওপেন করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিরে দেখা /বলিউডের হতাশার বছরে আলো দেখালেন রণবীর

বিনোদন ডেস্ক
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৫
‘ধুরন্ধর’ সিনেমায় রণবীর সিং
‘ধুরন্ধর’ সিনেমায় রণবীর সিং

তারকারাই বলিউডের প্রাণ। যত বড় তারকা, তাঁর সিনেমা ঘিরে প্রত্যাশাও তত বিশাল। তবে সিনেমায় সুপারস্টারের উপস্থিতি কিংবা নজরকাড়া প্রমোশন এখন আর সাফল্যের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। দর্শকেরা এখন তারকা নয়, সিনেমায় খোঁজে ভালো গল্প। এর প্রমাণ এ বছর আবারও পেয়েছে বলিউড।

হৃতিক রোশন-এনটিআর জুনিয়র-কিয়ারা আদভানি অভিনীত ‘ওয়ার ২’ প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি। ব্যর্থ হয়েছে সালমান খানের ‘সিকান্দার’, বরুণ ধাওয়ান-জাহ্নবী কাপুরের ‘সানি সংস্কারি কি তুলসী কুমারী’, শহিদ কাপুরের ‘দেবা’, কাজলের ‘মা’, অর্জুন কাপুরের ‘মেরে হাজবেন্ড কি বিবি’সহ একাধিক বড় তারকার সিনেমা। হিট সিনেমার সিকুয়েলও এবার খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারেনি। ওয়ার ২ তো আছেই, ফ্লপের তালিকায় যুক্ত হয়েছে অজয়ের ‘দে দে পেয়ার দে ২’, ‘সন অব সরদার ২’, টাইগার শ্রফের ‘বাঘি ৪’, সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী-তৃপ্তি দিমরির ‘ধাড়াক ২’সহ একগুচ্ছ সিকুয়েল।

আগে থেকেই দক্ষিণের চাপে ছিল বলিউড। এ বছর সে চাপ আরও বেড়েছে। ইদানীং দক্ষিণি সিনেমাগুলো প্যান-ইন্ডিয়া নাম দিয়ে হিন্দি ভাষাতেও মুক্তি পায়। ফলে দক্ষিণি সিনেমার সাফল্য অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে বলিউডের বক্স অফিস। বলিউডের হতাশার এই বছরে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বড় সাফল্য এনে দেয় ভিকি কৌশলের ‘ছাভা’। দেড় শ কোটিতে নির্মিত সিনেমাটি ৮০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করে। তবে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগও ওঠে সিনেমাটির বিরুদ্ধে।

‘লাল সিং চাড্ডা’র ব্যর্থতার পর ‘সিতারে জমিন পার’ দিয়ে বক্স অফিসে আমির খানের রাজত্ব ফেরাটাও বলিউডের এ বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। প্রেক্ষাগৃহে ২৬৬ কোটির বেশি ব্যবসা করা সিনেমাটি পরবর্তী সময়ে ওটিটিতে না দিয়ে আমির সরাসরি মুক্তি দেন ইউটিউবে। সেখানেও বড় সাফল্য পেয়েছেন। এ পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সিনেমা মুক্তির নতুন দিশা দেখিয়েছেন তিনি।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে এক নতুন জুটি দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন নির্মাতা মোহিত সুরি। আহান পান্ডে ও অনিত পাড্ডাকে নিয়ে তিনি তৈরি করেন ‘সাইয়ারা’। এই গতানুগতিক প্রেমের আখ্যান দর্শক ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। আয় করেছে ৫৭৯ কোটি রুপি। এ সিনেমার সাফল্যের মাধ্যমে বলিউড পেয়েছে দুই নতুন মুখ, যাঁরা হয়ে উঠতে পারেন আগামীর তারকা। অ্যাকশন গল্পের আধিক্যের ভিড়ে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে ‘জলি এলএলবি ৩’ কিংবা ‘হাউসফুল ৫’-এর মতো কমেডি গল্প। এ দুই সিনেমা দিয়ে এবার বক্স অফিসে কিছুটা হলেও সাফল্য ফিরে পেয়েছেন অক্ষয় কুমার।

তবে বছরের সবচেয়ে বড় দানটা মেরেছেন রণবীর সিং। বছরজুড়ে তাঁর মুক্তির তালিকা ছিল শূন্য। ছিলেন আলোচনার বাইরে। ৫ ডিসেম্বর আসে তাঁর স্পাই অ্যাকশন থ্রিলার ‘ধুরন্ধর’। মুক্তির ২২ দিনের মাথায় হাজার কোটির মাইলফলকে পৌঁছেছে সিনেমাটি। এটিই বলিউডে এ বছরের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এই সিনেমা দিয়ে নতুন করে আলোচনায় ফিরেছেন অক্ষয় খান্না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত