Ajker Patrika

চিত্তের বিকাশ এবং একজন অধ্যাপকের বক্তব্য

তাপস মজুমদার, সাংস্কৃতিক সংগঠক
চিত্তের বিকাশ এবং একজন অধ্যাপকের বক্তব্য

কয়েক দিন হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এস এম আবু বকরের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বর্তমান সময়ের ভাষায় বক্তব্যটি ‘ভাইরাল’ হয়েছে বলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী অধ্যাপকদের এক সংবর্ধনা সভায় তিনি এই বক্তৃতা করছিলেন। তিনি বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থী বলে কিছু নেই, সব হয়ে গেছে পরীক্ষার্থী।’ তিনি আরও বলছেন, ‘যদি শিক্ষাকে পূর্ণ করতে চান, তাহলে তার চিত্তের বিকাশ দরকার। সকাল থেকে বেলা আড়াইটা-তিনটা পর্যন্ত একটানা ক্লাস। কোনো বিরতি নেই।...যত সময় চিত্তের বিকাশ না হচ্ছে, তত সময় হল দখল চলবে; ঠেকাতে পারবেন না; কয়জনকে বহিষ্কার করবেন! সিট দখল চলবে; ডাইনিংয়ে খেয়ে পয়সা দেবে না, এগুলো মানুষ করার দায়িত্ব শিক্ষকের না!... ’

কথাগুলো ভাবাচ্ছে। নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, প্রাসঙ্গিক এবং প্রণিধানযোগ্য কথা। তার মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময় পরীক্ষা লেগেই থাকে! ভাইরাল বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা অনেক মন্তব্য থেকে এ কথার সত্যতা পাওয়া যায়। আর এই ‘পরীক্ষা’ একজন ছাত্রের জন্য রীতিমতো ভয়ানক দুর্ভোগ। তাঁর এই বক্তব্যে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন ছাত্র লিখেছেন, তিনি ২০২৩ সালে তিনটি সেমিস্টার ফাইনাল, বারোটি মিড টার্ম ও বারোটি ইনকোর্স পরীক্ষা দিয়েছেন। এর সঙ্গে তাঁর অ্যাসাইনমেন্টও ছিল। কী ভয়াবহ অবস্থা!

উপর্যুপরি পরীক্ষার ফলে ছাত্রদের শারীরিক ক্লান্তি ও মানসিক শ্রান্তি এসে যাওয়া স্বাভাবিক। এর ফলে তাঁদের চিন্তা করার সময় ও সুযোগ থাকছে না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল চেহারা হতে পারে না। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দ না থাকলে সেটা কোনো শিক্ষাই নয়। এমন কথা প্রায়ই শোনা যায় যে কোনো কোনো শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন না। অবশেষে তাঁর জমে যাওয়া একাধিক ক্লাস একটি ক্লাসে শেষ করে দেন। দুই সপ্তাহ বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষা করে ডিপার্টমেন্টে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও অনেক শিক্ষকই তা পরিপালন না করে মাসের পর মাস ফেলে রাখেন। ফলে সময়মতো রেজাল্ট দেওয়া সম্ভব হয় না। আমরা এ-ও জানি, একটি সেমিস্টারের রেজাল্ট হয়নি অথচ পরের সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ফলে এমনও ঘটে, পরীক্ষায় খারাপ ফল করা ছাত্রটি ‘ইমপ্রুভমেন্ট’ দেওয়ার সুযোগ পান না। রেজাল্ট কেন হয় না? কোনো না কোনো শিক্ষকের গাফিলতি; মূল কাজের চেয়ে অন্য কাজে মনোযোগ; প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, শিক্ষক রাজনীতি, ব্যবসা, পদোন্নতি ইত্যাদি! এস এম আবু বকর এবং তাঁর মতো কিছু শিক্ষকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ছাত্রদের জীবন নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কোনো অধিকার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের থাকতে পারে না। এটা রীতিমতো অপরাধ।

কিন্তু এগুলো হচ্ছে কেন? শিক্ষকের সচেতনতার অভাব, জবাবদিহির অভাব, প্রশাসনিক দুর্বলতা, নাকি অন্য কিছু? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের আওতায় লিখিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালেন্ডার’র দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে শিক্ষকের দায়িত্ব সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা এ রকম—তাঁরা ছাত্রদের শিক্ষা দেবেন, গবেষণা পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করবেন, ছাত্রদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সংযোগ রেখে নির্দেশনা দেবেন ও ‘এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস’ পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করবেন। এখানে দুটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়—শিক্ষকেরা শিক্ষা দেবেন (শুধু ক্লাস নেওয়ার কথা বলা হয়নি) এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগ রেখে পথনির্দেশ ও এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম দেখভাল করবেন। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের একাডেমিক কমিটির দায়িত্বের মধ্যেও কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসের কথা বলা হয়েছে (এখানে এক্সট্রা না বলে কো-বলা হয়েছে)। প্রফেসর আবু বকর যে চিত্তের বিকাশের কথা বলেছেন, বোধ করি তিনি এই এক্সট্রা-কারিকুলার এবং কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসের দিকেই বিশেষভাবে অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন ঘুরলে দুটো জিনিস সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। একটা হলো পোস্টার-ব্যানারসহ রাজনৈতিক সক্রিয়তা, আরেকটি হলো বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি। আমি দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা শুরু করেন; কোচিং শুরু করেন। তাহলে তিনি কি আর শিক্ষার্থী থাকেন! তিনি হয়ে যান পরীক্ষার্থী। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে একটি রিপোর্ট পড়ছিলাম। সেখানে দেখলাম, লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করার জন্য ভোররাত থেকে লাইন পড়ে যায়। ৮টায় লাইব্রেরি খুলবে। ছেলেমেয়েদের লাইন ধরে লাইব্রেরিতে যাওয়ার ভিড়। কিন্তু শিক্ষার্থী হিসেবে শিখতে নয়; বিসিএস পরীক্ষার পরীক্ষার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিতে। এই যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার চিত্র হয়, তাহলে ছাত্ররা শিখবেন কখন। কীভাবেই বা শিখবেন। আমরা বিশ্বমানব হওয়ার প্রতিযোগিতায় দাঁড়াব কী করে?

এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব কার। প্রফেসর আবু বকর প্রশ্ন রেখেছেন এই দায়িত্ব কি শিক্ষকের নয়? অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি, আমরা যারা সাংস্কৃতিক সংগঠন করছি, তারা সংগঠনের জন্য সদস্য পাই না। স্কুলের ছেলেমেয়েদের কোচিং আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের বিসিএস প্রস্তুতি এবং নানা রকম স্কিল ডেভেলপমেন্টের প্রশিক্ষণের হিড়িকে সাংস্কৃতিক কর্মীর উৎসের জায়গায় শুষ্ক বিরানভূমি তৈরি হয়েছে। মানবিক ও সাংগঠনিক কাজের কিছুই তাদের শেখা হচ্ছে না। অথচ এগুলো সুশিক্ষার পরিপূরক।

সম্ভবত স্বামী বিবেকানন্দের কথা—শিক্ষা মানে অন্তর্নিহিত গুণাবলির বহিঃপ্রকাশ। কারিগরি শিক্ষায় মানবিক বিষয় পড়ানো হয় না। কোথাও কোথাও মানবিক বিষয় সিলেবাসে থাকলেও তার উদ্দেশ্য এবং চেতনা সম্পর্কে সচেতন না থেকেই শুধু পরীক্ষায় পাসের জন্য পড়ে যাওয়া হয়। তাহলে কীভাবে মানবিক মানুষ সৃষ্টি হবে? কীভাবে আলোকিত মানুষ পাওয়া যাবে? অতএব অন্তর্নিহিত গুণাবলি অপ্রকাশিতই থেকে যাচ্ছে।

যথার্থ শিক্ষা না হলে স্বাধীন চিন্তা করা যায় না। একজন শিক্ষককে জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান হতে হবে। রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে আমরা জানি, রুচির পরিবর্তন না হলে সে শিক্ষা কোনো শিক্ষা নয়। শিক্ষক হিসেবে মনোযোগ থাকতে হবে সত্যে, অবশ্যই তোষামোদে নয়। ফল কী হচ্ছে? আজকাল অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি, শিক্ষক নন্দিত না হয়ে নিন্দিত হচ্ছেন। এতে ব্যক্তিগতভাবে যেমন কষ্ট পাচ্ছি, তেমনি সামগ্রিকভাবে সমাজ নিয়েও আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ক্ষুদ্র দলাদলি, ভোট পলিটিকস, অর্থলিপ্সা—এসব কখনো চিত্তের বিকাশ ঘটাতে পারে না।

গত শতাব্দীর আশির দশকে দেখেছি, এমনকি নব্বইয়ের দশকেও, বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন অনুষ্ঠানে ভরপুর থাকত। গান, আবৃত্তি, নৃত্য, ছবি আঁকা, নাটক যেমন নিয়মিত হতো, তেমনি তার দর্শকসংখ্যাও ছিল প্রচুর। এখন সেসব আর নেই। নেই বলেই চিত্তের সংকট দেখা দিচ্ছে। আবার সেই চর্চা ফিরিয়ে আনা জরুরি। আরেকটি কথা। ছেলেমেয়েরা শুধু পারফর্ম করে তাদের দায়িত্ব শেষ করুক, এটাও কাম্য নয়। প্রকৃতপক্ষে সংগঠন করুক। দায়িত্ববোধসম্পন্ন মুক্তচিন্তার মানুষ হতে তা ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করছে? আলোচ্য ভিডিওটির লাখ লাখ ভিউয়ার এবং হাজার হাজার শেয়ার দেখে এটা অনুভব করা যাচ্ছে যে মানুষের মধ্যে ভালো কিছু পাওয়ার অধিকারবোধ এখনো যথেষ্ট প্রখর। আপাতত আমরা যে বলি, মানুষ নষ্ট হয়ে গেছে, সেই ধারণাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা পরিণত করে আমাদের প্রচণ্ডভাবে জাগ্রত হতে নির্দেশ করছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। অথচ যোগ্য-অযোগ্যনির্বিশেষে উপাচার্য হওয়ার জন্য শিক্ষকেরা (অবশ্যই সবাই নন) লাইন দিচ্ছেন রাজনীতির নাম ধরে। দেখা যায়, আদর্শবাদ, জ্ঞানচর্চা, স্বচ্ছতাবোধ, সততা ও প্রজ্ঞার অভাব আছে এমন অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন অথবা হওয়ার দৌড়ে শামিল রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নির্বাচন হচ্ছে অথচ শিক্ষার্থীদের নির্বাচন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘকাল।

এ অবস্থায় কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমে প্রাণ ফিরিয়ে আনা যায়, কীভাবে ‘চিত্তের বিকাশ’ ঘটানো যায়, তা গভীরভাবে অত্যন্ত দ্রততার সঙ্গে ভেবে কাজ শুরু করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি এই দায়িত্ব প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধারদের এবং বলা যেতেই পারে এখন পর্যন্ত শিক্ষককুলই কর্ণধার।

তাপস মজুমদার, সাংস্কৃতিক সংগঠক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ: জেএমবির সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে পরিচালক গ্রেপ্তার হন দুবার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৪
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।

আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।

আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’

গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’

মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’

ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’

ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’

ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’

পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’

পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

বিষয়:

অপরাধ
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত