Ajker Patrika

সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়

কামরুল হাসান
আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ১৩: ৪৩
সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়

কুমিল্লা শহরতলির নেউরা গ্রামের লোকজন খবরটি শুনে খুবই হতবাক হয়েছিলেন। তাঁরা কস্মিনকালেও জানতে পারেননি, তাঁদের গ্রামের ভালো মানুষটি ‘সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়’। তা-ও যেনতেন নয়, রীতিমতো ‘পুলিশের তালিকাভুক্ত’ তকমা আঁটা সন্ত্রাসী। এত দিন যে লোকটি দুহাতে দান-খয়রাত করেছেন, মসজিদ-এতিমখানা বানিয়েছেন, বিপদগ্রস্ত মানুষের কান্ডারি হয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেই লোক কী করে সন্ত্রাসী হতে পারেন, তার হিসাব মেলাতে পারছিলেন না গ্রামবাসী।

সেদিন নেউরা গ্রামের মানুষের মতো আমরাও ধন্দে পড়েছিলাম। এমন একজন সন্ত্রাসী কী করে সরকারের অনুমোদিত সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে বিদেশে যাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি মকসুদে পৌঁছাতে পারেননি।

২০০২ সালের নভেম্বর মাস। সেনাবাহিনীর অপারেশন ক্লিন হার্ট সবে তিন সপ্তাহ পেরিয়েছে। অভিযানের ভয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা ডেরা ছেড়ে যে যেদিকে পারছিল পালাচ্ছিল। সে সময় বেশির ভাগ সন্ত্রাসীর গন্তব্য ছিল ভারতের কলকাতা। কয়েকজন ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও পাড়ি জমান। তবে ইউরোপ-আমেরিকায় কেউ যেতে পারেন, তা তখন পর্যন্ত শুনিনি। হঠাৎ সেই খবর এল বিমানবন্দর থেকে।

২০০২ সালের ৪ নভেম্বর ছিল সোমবার। সকালের দিকে এক পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করে বললেন, বিদেশে পালানোর সময় এক শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী বিমানবন্দরে ধরা পড়েছেন। লন্ডনগামী উড়োজাহাজ থেকে তাঁকে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর একটু হলেই উড়াল দিত উড়োজাহাজটি। তিনি সেই সন্ত্রাসীর নাম জানেন না, অথবা বলতে চাইলেন না।

বিমানবন্দরের রাস্তা সেদিন ফাঁকাই ছিল। বন্দরে পৌঁছাতে খুব বেশি সময়ও লাগল না। ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা জানালেন, উড়োজাহাজ থেকে যাঁকে নামিয়ে আনা হয়েছে, তিনি এখন আর বিমানবন্দরের ভেতরে নেই। সেনা সদস্যরা তাঁকে নিয়ে গেছেন। কোথায় নিয়ে গেছেন, তা তাঁরা জানেন না।

বিমানবন্দর নামে তখনো কোনো থানা হয়নি। উত্তরা থানা এসব দেখভাল করত। মনে হলো, উত্তরা থানায় গেলে সন্ত্রাসীর হদিস পাওয়া যাবে। সেখানে গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড! থানার সামনের রাস্তা সেনাবাহিনী আর পুলিশের গাড়িতে ঠাসা। ভেতরে বড় কর্মকর্তারা সেই ব্যক্তিকে জেরা করছেন। আমরা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক থানার ভেতরে ঢুকে দেখি, ওসির চেয়ারে পুলিশের এক কর্মকর্তা বসা; তাঁর সামনে গোয়েন্দা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা। তাঁরা খুব ছোট করে একটি ব্রিফ দিলেন।

এক কর্মকর্তা বললেন, যে লোকটি পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর নাম আবদুর রশিদ, পিতার নাম তাজুল ইসলাম, মায়ের নাম রোজিয়া বেগম, বাড়ি কুমিল্লা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে, নেউরা গ্রামে। তিনি নোট দেখে দেখে বললেন, এই লোকটি সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে লন্ডন হয়ে ইউরোপ যাচ্ছিলেন।ফ্লাইটটির সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তিনি উড়োজাহাজে উঠে বসেছিলেন।

উড়োজাহাজটি ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন খবর পেয়ে তাঁকে নামিয়ে আনেন। আমাদের কেউ একজন জানতে চাইলেন, কীভাবে খবর পেলেন? ওই কর্মকর্তা বললেন, সেই সন্ত্রাসী এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিছুদিন আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছিলেন। উড়োজাহাজে সেই ব্যবসায়ীও ছিলেন। তিনি তাঁকে চিনতে পেরে পুলিশকে ফোন করে জানান। আমরা জানতে চাইলাম, তাঁর সঙ্গে আর কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন? এবার কর্মকর্তা একটু ভেবে বললেন, হ্যাঁ, আরও একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর নাম নজরুল কোরেশি। তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রোডাকশন ডিরেক্টর।

এতটুকু শুনে আমরা কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না, আবদুর রশিদের সঙ্গে চ্যানেলের কর্মকর্তারই-বা কী সম্পর্ক। এর মধ্যে আমাদের এক সাংবাদিক বলে ওঠেন, তিনি কি সন্ত্রাসী কালা ফারুক? এবার সেই কর্মকর্তা মুখে কিছু না বলে মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক জবাব দিয়ে বলেন, ‘এবার আপনারা আসতে পারেন।’

কালা ফারুকের নাম শুনেই সাংবাদিকদের কেউ কেউ তাঁর ফিরিস্তি বলা শুরু করলেন। একজন বললেন, তিনি তো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভিপি রিয়াদ খুনের আসামি। আরেকজন বললেন, কিছুদিন আগে হা-মীম গ্রুপের যে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই হলো, সেই মামলায় কালা ফারুকের নাম ছিল। থানার ভেতরে তখনো জেরা চলছে। আমরা থানা থেকে বেরিয়ে এলাম।

বেশির ভাগ খবরের শুরুতে কোনো কিছু জানা না গেলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে ডালপালা ছড়াতে থাকে, কালা ফারুকের ঘটনাও সেভাবে মোটাতাজা হতে শুরু করল। বিকেলের আগেই অনেক কিছু প্রকাশ হয়ে গেল। আমরা জানতে পারলাম, কালা ফারুক আসলে সুইডেনে যাচ্ছিলেন একটি সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে।

তাঁকে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুইডেনের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণে ১০ জন সাংস্কৃতিক কর্মীর একটি দলকে সেখানে পাঠানোর জন্য নির্ধারণ করেছিল শিল্পকলা একাডেমি। সেই দলের প্রধান ছিলেন গায়ক শুভ্র দেব। ওই দলে গায়িকা শাকিলা জাফর ও অভিনেত্রী আরিফা জামান মৌসুমীর যাওয়ার কথা ছিল। শিল্পকলা একাডেমির তালিকা অনুযায়ী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের বিদেশে যাওয়ার ব্যাপার অনাপত্তি দেয়।

এরপরই তাঁরা ভিসা নেন। তবে সেদিন প্রথম দফায় যাচ্ছিলেন দলের মাত্র দুজন সদস্য। তাঁদের একজন কালা ফারুক, অন্যজন হলেন নজরুল কোরেশি। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, কালা ফারুকের জন্য যাবতীয় কাগজপত্র জোগাড়ের কাজ করে দিয়েছিলেন নজরুল কোরেশি। অবশ্য ধরা পড়ার দিন রাতে চ্যানেলটি থেকে বলা হয়েছিল, এটা নজরুল কোরেশির ব্যক্তিগত সফর। এর সঙ্গে চ্যানেলের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

সে সময় সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সেলিমা রহমান। একদিন ফলোআপের সময় তিনি আমাকে বলেছিলেন, একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কালা ফারুকের জন্য তদবির করেছিলেন। সেদিন তিনি আমাকে সেই ব্যবসায়ীর নামও বলেছিলেন ‘অব দ্য রেকর্ড’। আমি সেই নাম আর লিখতে পারিনি।

পরদিন সকালে চমকে ওঠার মতো খবর পেলাম। কালা ফারুক নিহত হয়েছেন রাতে। তাঁর লাশ হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। কী হয়েছিল রাতে? উত্তরা থানার এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, কালা ফারুক ছিলেন কাফরুল থানার একটি অস্ত্র মামলার আসামি। তাঁকে নিয়ে অভিযানে বেরিয়েছিল পুলিশ। তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় অভিযানের সময় তাঁকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এতে পুলিশও গুলি চালায়।

সে সময় কালা ফারুক পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ গুলি করে। সেই গুলিতে ফারুক নিহত হন। কাফরুল থানার সেকেন্ড অফিসার মোস্তাছিন আহমেদ আমাকে বলেছিলেন, দারোগা হানিফ মাহমুদ বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করেছেন। দুপুরের দিকে মর্গে গিয়ে পেলাম ফরেনসিকের প্রভাষক নুর হোসেনকে। ময়নাতদন্ত শেষে তিনি বললেন, গায়ে শটগানের অসংখ্য গুলি আছে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এটা বলতে আর কিছুই লাগবে না যে এটা ছিল ‘ক্রসফায়ার’ বা বন্দুকযুদ্ধের আদি সংস্করণ।

কালা ফারুকের লাশ দুই দিন মর্গে পড়ে ছিল। কেউ নিতে আসেনি। পরে তাঁর লাশ পাঠানো হয় গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। গতকাল কথা হলো কুমিল্লার সাংবাদিক আবুল কাশেম হৃদয়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, কুমিল্লা বিমানবন্দরের রাস্তায় যেতে কালা ফারুকের কবর দেখা যায়।

কালা ফারুক নিহত হওয়ার ১০-১২ দিন পর লালমাটিয়া থেকে আমার অফিসে এলেন কালা ফারুকের দ্বিতীয় স্ত্রী শুক্লা। তিনি ছিলেন কালা ফারুকের ব্যবসায়িক পার্টনারের স্ত্রী। পরে তাঁকে বিয়ে করেন ফারুক। কুমিল্লায় স্বপ্না নামে তাঁর প্রথম স্ত্রী থাকেন। সেই ঘরে দুটি সন্তান ছিল। শুক্লা আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে বললেন, এক ব্যবসায়ী পুলিশকে টাকা দিয়ে তাঁর স্বামীকে খুন করিয়েছেন।

শুক্লার কথা শুনে আমার মনে পড়ে গেল প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমানের কথা। তিনিও একই ব্যক্তির নাম বলেছিলেন। আমি জানি না, তাঁর সঙ্গে কালা ফারুকের কিসের বিরোধ ছিল। তবে এটুকু বুঝি, এসব প্রভাবশালী নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন, এরপর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলেন। কালা ফারুকের ভাগ্যে হয়তো সেটাই জুটেছিল।

তবে প্রিয় পাঠক, এত দিন পরেও সেই প্রভাবশালীর নাম বলতে না পারার ব্যর্থতাকে নিশ্চয় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ, নামটি যে অব দ্য রেকর্ড।

আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ: জেএমবির সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে পরিচালক গ্রেপ্তার হন দুবার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৪
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।

আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।

আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’

গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’

মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’

ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’

ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’

ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’

পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’

পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

বিষয়:

অপরাধ
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত