Ajker Patrika

পুঁজিবাজারে ৫ বছরে সোয়া ৬ লাখ বিনিয়োগকারী উধাও

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৬: ৪৪
পুঁজিবাজারে ৫ বছরে সোয়া ৬ লাখ বিনিয়োগকারী উধাও

গত পাঁচ বছরে দেশের পুঁজিবাজার থেকে উধাও হয়ে গেছেন প্রায় সোয়া ৬ লাখ বিনিয়োগকারী। এর মধ্যে অনাবাসী বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ৭৬ হাজার ৪৯২ এবং দেশি বিও হিসাবধারী ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭৫টি। বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁরা এসব বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খুলেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরও এই বিনিয়োগ থেকে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁরা পুঁজিবাজার ত্যাগ করেছেন। 

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) মাধ্যমে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীর সব বিও হিসাবের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা থেকেই বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার ছাড়ার এমন তথ্য মিলেছে। সিডিবিএল বলছে, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে অনাবাসী বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৫৭। এটি ক্রমেই কমে চলতি বছর ৯ অক্টোবর এসে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৯৬৫। অর্থাৎ, গত পাঁচ বছরের মধ্যে আড়াই গুণের বেশি (২.৬২) অনাবাসী পুঁজিবাজার থেকে উধাও হয়ে গেছেন, যা মোট অনাবাসী বিও হিসাবধারীর ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। 

শুধু অনাবাসীই নয়, এই সময় দেশি বিনিয়োগকারীদেরও বিও সংখ্যা কমেছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭৫টি। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে এই বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ২১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৪টি থেকে ১৬ লাখ ১১ হাজার ২৯টিতে এসে ঠেকেছে। এর মানে হচ্ছে, মোট দেশি বিও হিসাবের ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ পুঁজিবাজার ত্যাগ করেছে। 

এতে পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই কমে গেছে। গত ৫ বছরে সব মিলিয়ে ৬ লাখ ২১ হাজার ৫৪টি বিও হিসাব কমেছে। ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর বিও হিসাব ছিল ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৩, যা ৯ অক্টোবর দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩১৯টি। অর্থাৎ এই সময়ে ২৭ শতাংশ বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়েছেন। 

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বিনিয়োগকারীর পুঁজিবাজার ত্যাগ কিংবা বিও হিসাবের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে বাস্তবিক হরেক রকম কারণ সামনে এনেছেন। তাঁরা বলছেন, বিদ্যমান পুঁজিবাজার দেশি কিংবা অনাবাসী কারোরই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। উল্টো কষ্টার্জিত টাকা বিনিয়োগের পর জুয়াড়িদের ব্যাপক কারসাজি, গুজব, দুর্বল নজরদারি এবং সুশাসনের বিরাট ঘাটতির বিপরীতে ধারাবাহিক দরপতনের যন্ত্রণা সইতে হচ্ছে। তদুপরি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির পদ্ধতিগত জটিলতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বহুমুখী প্রভাব মুনাফা তো দূরের কথা, তাঁদের মূল বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখাই অনিশ্চিত করে তুলেছে। উপায়ান্তর না পেয়ে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার ছাড়ছেন। এতে মোট বিও হিসাবের সংখ্যাও আনুপাতিক হারে কমে গেছে। 

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা অভিমত দিয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিও হিসাব কমে যাওয়া মানে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা চলে যাওয়া। গত ৫ বছরে যাঁরাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরাই খারাপ অবস্থানে আছেন। এ অবস্থায় ছেড়ে না যাওয়ার তো কোনো কারণ দেখি না। 

অনাবাসী বিনিয়োগকারী কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে অধ্যাপক মুসা বলেন, ‘বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস অনাবাসীদের নিয়ে আসে একটা সুনির্দিষ্ট মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর দিতে পারে না। আমাদের দেশে শেয়ারবাজারের বিকল্প তো শুধু ব্যাংকে টাকা রাখা, কিন্তু ওদের তো আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যেমন বিনিয়োগ করতে পারেন, তেমনি তাঁরা অন্য দেশের বাজারেও যেতে পারেন। তাঁরা হয়তো সেটাই করেছেন।’ 

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ফ্লোর প্রাইসের কারণে প্রায় ২ বছর শেয়ার লেনদেন করা যেত না। বিনিয়োগ আটকে ছিল। এই অবস্থায় আবার ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে সুদের হার বেড়ে গেছে। এর বিপরীতে ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ ভালো মুনাফা দিচ্ছে। ফলে শেয়ারবাজার ছেড়ে যেখানে বিনিয়োগ নিরাপদ ও ভালো মুনাফা দেয়, সেখানেই যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। 

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজার হলো অর্থনীতির প্রতিবিম্ব। সুদের হার বাড়লে বুঝতে হবে অর্থনীতি চাপের মুখে আছে। তখন পুঁজিবাজার চাপের মধ্যে থাকে। এই অবস্থায় রিটার্ন যেখানে, সেখানে তারা বিনিয়োগ করে। দেশে ডলার-সংকট আছে, বাড়ছে দামও। অনাবাসীরা শেয়ার বিক্রি করে এখন ডলার রাখছে। কিছু বিনিয়োগকারী রয়েছেন আইপিওশিকারি। তাঁরাও বাজার ছেড়ে চলে গেছেন। সেকেন্ডারি বাজারেও অনেকে লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে তাঁরাও শেয়ার বিক্রি করে চলে গেছেন। জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে সঞ্চয়ও হচ্ছে না। এতে উদ্বৃত্ত টাকা নিয়ে মানুষের শেয়ারবাজারে আসার প্রবণতাও কমে গেছে। ফলে বিও হিসাব কমেছে। 

তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৪টি, পরের বছরের একই দিনে দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭৫টিতে। এরপর ২০২২ সালের ৭ অক্টোবরে বিও নেমে আসে ১৭ লাখ ৭০ হাজার ২৯৮টিতে এবং ২০২৩ সালের একই দিনে বিও কমে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৮০ লাখ ৩০৬টিতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত