Ajker Patrika

রপ্তানির নতুন দিগন্ত

ইউরোপের পথে কাঠের ঘর

  • বেলজিয়ামের বিখ্যাত চিড়িয়াখানা ‘পাইরি ডাইজারে’ স্থান হচ্ছে বোড টিইনি হাউসের।
  • ন্যাচারাল ফাইবার নামের প্রতিষ্ঠান এ বাড়ির নির্মাতা ও রপ্তানিকারক
  • একটি বাড়ি তৈরিতে শতাধিক কারিগরের সময় লেগেছে ১৫ দিন, অর্ডার মিলেছে ১২০টির
  • বাড়িতে থাকছে শোয়ার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম, ব্যালকনি ও এসির ব্যবস্থা
এস. এস শোহান, বাগেরহাট 
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ৫৬
বাগেরহাট সদর উপজেলার করোরি গ্রামে তৈরি হয় কাঠের দৃষ্টিনন্দন এসব ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাগেরহাট সদর উপজেলার করোরি গ্রামে তৈরি হয় কাঠের দৃষ্টিনন্দন এসব ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় কাঠের কারুকাজ শুধু আসবাব বা গৃহসজ্জায় সীমাবদ্ধ ছিল। সময় বদলেছে। এখন কারুকার্যখচিত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পুরো বাড়ি। শুধু শহরে নয়, গ্রামেও। বাগেরহাট সদর উপজেলার করোরি এমনই এক গ্রাম। সেখানকার দক্ষ কারিগরেরা গড়ে চলেছেন একের পর এক দৃষ্টিনন্দন কাঠের বাড়ি। নাম ‘বোড টিইনি হাউস’। এটি শুধু একটি বাড়ি নয়; বরং সৃজনশীলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। পুরো কাঠের কারুকার্যে তৈরি পরিবেশবান্ধব এ বাড়ি বাংলাদেশের দক্ষতা আর শিল্পনৈপুণ্যের বার্তা দিচ্ছে বিশ্ববাজারে। আর বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, এটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশেও।

ইতিমধ্যে ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম দেখিয়েছে কেনার আগ্রহ। শিগগির বাংলাদেশের এই শতাধিক কাঠের বাড়ি স্থান পেতে যাচ্ছে দেশটির বিখ্যাত চিড়িয়াখানা ‘পাইরি ডাইজার’-এ। অর্থাৎ এটি শুধু একটি ব্যবসা নয়; বরং বাংলাদেশের রপ্তানি-বাণিজ্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা।

গ্রামেই কারখানা, কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শতাধিক শ্রমিক

বাগেরহাট সদর উপজেলার করোরি গ্রামে গড়ে উঠেছে ন্যাচারাল ফাইবারের কারখানা। কাঠের বাড়ি তৈরির এ কর্মযজ্ঞ দেখতে এলেই বোঝা যায়—এটি শুধু ব্যবসাই নয়; বরং এক নতুন সম্ভাবনার জগৎ। কেউ কাঠ কাটছেন, কেউ দরজা-জানালা বানাচ্ছেন, কেউ আবার নিখুঁত হাতে কাঠ পলিশ করছেন। একেকটি কাঠের ঘর তৈরি হতে সময় লাগছে মাত্র ১৫ দিন। প্রতিটি ঘরেই থাকছে শোয়ার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম, বেলকনি, এমনকি এসির ব্যবস্থাও। ইউরোপীয় ধাঁচে বানানো এ ঘরগুলো সম্পূর্ণ কাঠের।

শ্রমিকদের চোখে স্বপ্ন

এ প্রকল্পে কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক। তাঁরা যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। শ্রমিকদেরই একজন শহিদুল ইসলাম বললেন, ‘আমাদের তৈরি ঘর বিদেশে যাবে, এটি ভাবতেই ভালো লাগে। আরও ভালো লাগছে, আমাদের কয়েকজনকে ঘর সংযোজনের জন্য ইউরোপে পাঠানো হতে পারে। এটি আমাদের জীবনের বড় সুযোগ।’

আরেক কাঠমিস্ত্রি মোজাহিদ বললেন, ‘আমি অনেক ঘর বানিয়েছি। কিন্তু কাঠের চাল বা ছাদওয়ালা এমন নিখুঁত ডিজাইনের ঘর আগে কখনো বানাইনি। এখানে সামান্য ভুলেরও জায়গা নেই। সবকিছু মেপে, বুঝে করতে হয়।’

কারখানার নারী শ্রমিক পূজার কণ্ঠেও উচ্ছ্বাস, ‘আমরা সবাই মিলে কাজ করি, খুব ভালো লাগে। শুনেছি, এ ঘর বসানোর জন্য কয়েকজনকে ইউরোপে নিয়ে যাওয়া হবে। এ রকম কাজ আরও থাকলে আমাদের জীবন অনেক উন্নত হতো।’

স্থানীয় কাঠ, আন্তর্জাতিক মান

এই কাঠের ঘর তৈরিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মেহগনি কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে ঘরের ছাদ যাতে টেকসই হয়, সে জন্য বিশেষভাবে আমদানি করা আইপিই কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে থাকবে পানিপ্রতিরোধী প্রলেপ। কোনো রং করা হবে না, সম্পূর্ণ কাঠের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় থাকবে। প্রতিটি কাঠামো আলাদা অংশে ভাগ করে পাঠানো হবে বেলজিয়ামে, যেখানে তা সংযোজন করা হবে।

পুরোনো অভিজ্ঞতা, নতুন উদ্যোগ

ন্যাচারাল ফাইবার দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবান্ধব পণ্য রপ্তানি করছে। তাদের তৈরি কাঠের সাইকেল, সানবেড, হোটেলবেড, কুকুর-বিড়ালের খেলনা, কোকো ম্যাট, ডিসপোজেবল স্লিপারসহ নানা পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি ১২০টি বোড টিইনি হাউস তৈরির অর্ডার পায়। এরপরই শুরু হয় কাঠের বাড়ি বানানোর এ যাত্রা।

ইউরোপিয়ান পার্টনারদের আস্থা

বেলজিয়ামের ‘নোই বিল্ডার্স’ এবং গ্রিসের ‘কোকো ম্যাট’ এই প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। সরেজমিনে ঘর তৈরির কারখানায় দেখা হয় কোকো ম্যাটের সহপ্রতিষ্ঠাতা পল এফমরফিডিসের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমরা চাই বিশ্বকে দেখাতে, পরিবেশবান্ধব উপায়েও কাঠের বাড়ি তৈরি করা সম্ভব। বাংলাদেশের মেহগনি কাঠ এ প্রকল্পের জন্য পারফেক্ট। এই উদ্যোগ আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করবে।’

মোংলা বন্দর ব্যবহারের দাবি

ন্যাচারাল ফাইবারের কনসালট্যান্ট মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা শাহিন জানালেন, ‘আমরা সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পাঠাই। কিন্তু এ ঘরগুলো যদি মোংলা বন্দর দিয়ে পাঠাতে পারতাম, তাহলে সময় ও খরচ অনেক কমে আসত।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ন্যাচারাল ফাইবারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ আহমেদ বললেন, ‘আমরা এর আগে ব্রিটেন, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দরপত্রে অংশ নিয়ে কাজ পেয়েছি। এর অংশ হিসেবে প্রথম নমুনা ঘর বানাতে হয়েছে। এর আগে বেলজিয়ামের সেই পার্কে হাতি চলাচলের করিডর বানানোর কাজও আমরা করেছি। সেই কাজ ভালো হওয়ায় এবার তারা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে।’

মোস্তাফিজ আহমেদ আরও যোগ করলেন, ‘আমাদের এই কাঠের বাড়ি বিশ্ববাজারে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। সরকার যদি সহায়তা দেয়, তাহলে আরও বড় পরিসরে কাজ করা সম্ভব হবে। এটি শুধু আমাদের জন্য নয়, দেশের জন্যও বড় অর্জন হবে।’

বিসিকের প্রতিক্রিয়া

বাগেরহাট বিসিকের কর্মকর্তা ইউনুস আর রাফি বললেন, ‘ন্যাচারাল ফাইবার দীর্ঘদিন ধরেই পরিবেশবান্ধব পণ্য রপ্তানি করছে। এবার কাঠের বাড়ি পাঠানোর মাধ্যমে দেশের সুনাম আরও বাড়বে। এ ধরনের উদ্যোগ যদি বাড়ে, তাহলে আমরা আরও সহযোগিতা করব।’

সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

এই কাঠের বাড়ির রপ্তানি শুধু একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগই নয়, বরং বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। একদিকে স্থানীয় শ্রমিকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে। কাঠের বাড়ির বাজার যদি সম্প্রসারিত হয়, তাহলে বাংলাদেশ আরও বড় সুযোগের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত