Ajker Patrika

ওজন কমানোর ওষুধের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা বাড়ছে

সারা বিশ্বেই স্থূলতা ক্রমেই অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠছে। ছবি: পিক্সাবে
সারা বিশ্বেই স্থূলতা ক্রমেই অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠছে। ছবি: পিক্সাবে

সারা বিশ্বেই এখন ওজন কমানোর ওষুধের ব্যবহার বাড়ছে। মরগ্যান স্ট্যানলি রিসার্চের হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালে এই বাজার ১০৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। যেখানে ২০২৩ সালে স্থূলতা নিরাময়ের ওষুধের বিক্রি ছিল ৬ বিলিয়ন ডলার।

তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পেটেন্ট সুবিধা এবং সস্তায় উৎপাদন সক্ষমতার কারণে এই সুবিধা নিচ্ছে বাংলাদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। এ ছাড়া জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সামান্য পরিমাণে এসব ওষুধ প্রস্তুত ও রপ্তানি করে থাকে।

এসব ওষুধের অন্যতম প্রধান উপাদান ‘সেমাগ্লুটাইড’। এই সেমাগ্লুটাইড মূলত রক্তে শর্করার পরিমাণ ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া এটি নভো নরডিস্কের বিখ্যাত ওষুধ ‘উইগভি’ ও ‘ওজেমপিকের’ মূল উপাদান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইনসেপ্টার যেসব ওষুধ রপ্তানি করে সেগুলো মূলত এশিয়াভিত্তিক একটি সরবরাহ শৃঙ্খলের অংশ। এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে ‘ওজেমপিকের’ সুলভ ‘কপি’ উৎপাদন ও রপ্তানি করছে। কারণ বিশ্বব্যাপী এই ওষুধের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ওজেমপিক টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এর সক্রিয় উপাদান সেমাগ্লুটাইড ওজন কমানোর জন্যও কার্যকর। নভো নরডিস্ক এ কারণে স্থূলতার চিকিৎসা হিসেবে ‘উইগভি’ নিয়ে কাজ করছে।

রয়টার্সের বিশ্লেষণ অনুসারে, ইনসেপ্টার তৈরি করা অন্তত ১ লাখ ৬ হাজার প্যাক সেমাগ্লুটাইডভিত্তিক ওষুধ বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশও আছে। এসব দেশে ‘ওজেমপিক’–এর পেটেন্ট সুরক্ষিত থাকলেও এসব দেশে ইনসেপ্টার ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ইনসেপ্টার স্থূলতা কমানোর ওষুধ বাংলাদেশে বিক্রির জন্য অনুমোদিত। বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ইনসেপ্টাকে ফিটারো বা ওরসেমা রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। তবে, এটি কেবল তখনই তারা করতে পারবে যখন আমদানিকারক দেশগুলোর পক্ষ থেকে অনুমোদন পাওয়া যাবে।

অনুমোদনের জটিলতা থাকার কারণে এ ধরনের ওষুধ অবৈধভাবেও বিভিন্ন দেশে যায়। ব্যক্তিগত ব্যবহারের নাম করে এসব ওষুধ নেওয়া হয়।

রয়টার্সের আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে তৈরি সেমাগ্লুটাইড ওষুধ ভারতভিত্তিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইন্ডিয়া মার্টে বিক্রি হচ্ছে। সর্বশেষ অনুসন্ধান থেকে দেখা গেছে যে, নভো নরডিস্কের বাইরেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তৈরি ‘সেমাগ্লুটাইড’ ওষুধ বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে।

রয়টার্স অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, কেনিয়া, উজবেকিস্তান, ভেনেজুয়েলা, হংকং এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাস্টমস বিভাগ এবং ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড থেকে জব্দ করা ওষুধের সরকারি রেকর্ডের ভিত্তিতে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।

এদিকে, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, এশিয়াভিত্তিক চারটিসহ মোট ৬টি কম পরিচিত কোম্পানি সেমাগ্লুটাইডভিত্তিক ওষুধ তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করে।

এর মধ্যে অন্তত তিনটি কোম্পানি ওষুধ তৈরির মূল উপাদান চীন থেকে আমদানি করেছে। এ ছাড়া, এসব কোম্পানি উৎপাদক দেশের বাইরে অন্য দেশে এসব ওষুধের বিজ্ঞাপন অন্তত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ব্যক্তিগতভাবে প্রচার করেছে। রয়টার্স বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখেছে, এই কোম্পানিগুলো স্বল্প উন্নত দেশগুলোর জন্য অনুমোদিত বৈশ্বিক পেটেন্ট সুবিধার ছাড় এবং চীনসহ অন্যান্য দেশগুলোতে পেটেন্ট প্রয়োগের শিথিল নীতিমালার সুযোগ নেয়।

নভো নরডিস্ক রয়টার্সকে জানিয়েছে, তাদের তৈরি সেমাগ্লুটাইড উৎপাদনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক লাইসেন্সের মাধ্যমে সুরক্ষিত হলেও বাংলাদেশ–লাওসের মতো দেশগুলো জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশে তালিকায় থাকার কারণে এর থেকে অব্যাহতির সুযোগ ভোগ করে।

নভো নরডিস্কের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তারা কম উন্নত দেশগুলোতে পেটেন্ট লাইসেন্সের প্রয়োগ করে না। ওজেমপিকের ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নভো নরডিস্কের সম্ভাব্য পেটেন্ট লঙ্ঘনের আর্থিক প্রভাব বর্তমানে খুব বেশি নয়।

তবে পেটেন্ট ছাড়াই সেমাগ্লুটাইডভিত্তিক ওষুধের কপি বা ‘অনুলিপি’ স্বাস্থ্যসেবায় উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এ কারণে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডসহ ছয়টি দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রকেরা ব্যক্তিগত ব্যবহারের নামে আনা সেমাগ্লুটাইডভিত্তিক কিছু ওষুধ জব্দ, ধ্বংস বা বাজেয়াপ্ত করেছে।

তবে রয়টার্স এমন কোনো প্রমাণ পায়নি যে, এই ওষুধগুলো রোগীদের কোনো ক্ষতি করেছে। তবে ব্যাপক আকারে এসব ওষুধের ছড়িয়ে পড়া বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সমান্তরাল সরবরাহ শৃঙ্খল

বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইনসেপ্টার ওরসেমা বাংলাদেশে অনুমোদিত এবং নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়েছে। তাদের ফিটারোও বিক্রির জন্য অনুমোদিত। ঢাকার একটি ক্লিনিকে ইনসেপ্টার তৈরি ফিটারো ইনজেক্টর পেন ২০ জন রোগীকে প্রেসক্রাইব করা হয়েছে। যাদের প্রেসক্রাইব করা হয়েছে, তাঁরা সবাই বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিক।

ক্লিনিকটির এক ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে রোগীরা এই চিকিৎসার বিষয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় ক্লিনিকটির নাম উল্লেখ করতে চাননি তিনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যখন রোগীরা জানতে পারেন যে, বাংলাদেশে ফিটারো গ্রহণের মাসিক খরচ প্রায় মাত্র ৬০ ডলার (যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে উইগভির জন্য প্রতি মাসে খরচ করতে হয় সাড়ে ৬০০ ডলার), তখন তাঁরা ওষুধ প্রস্তুতকারকের নাম-পরিচয় নিয়ে খুব একটি উদ্বিগ্ন ছিলেন না।’

কেবল বাংলাদেশেই নয়, লাওসেও এই সেমাগ্লুটাইডভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুত হচ্ছে। এই বিষয়ে লাওসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ড্রাগ ও মেডিকেল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক দাভোনে দুয়াংদানি রয়টার্সকে জানান, লাওসে সেমাগ্লুটাইডভিত্তিক ওষুধগুলো কেবল দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য বৈধভাবে উৎপাদন ও বিতরণ করা যেতে পারে।

তবে কিছু চীনা কোম্পানি লাওসে উৎপাদিত সেমাগ্লুটাইড ট্যাবলেটের পক্ষে চীনে প্রচারণা চালাচ্ছে। চীনে নভো নরডিস্কের পেটেন্টের মেয়াদ ২০২৬ সালে মেয়াদ শেষ হবে। চলতি বছরের জুনে সাংহাইতে অনুষ্ঠিত একটি প্রদর্শনীতে সেমাগ্লুটাইড প্রস্তুতকারী নানজিং হানজিন ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি লাওসের বোটেন এলিমেন্টো ফার্মার প্রস্তুত করা ‘সেমাগকেয়ার’ ট্যাবলেট প্রদর্শন করে।

নানজিং হানজিনের পরিচালক অ্যাবদু জোগবি রয়টার্সকে বলেছেন, তাঁর কোম্পানি লাওসের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে সেমাগ্লুটাইড সরবরাহ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না (সেমাগকেয়ার কোন দেশগুলোতে বিক্রি হয়), তবে আমরা এর প্রচারণা চালাচ্ছি। কারণ, তারা যত বেশি বিক্রি করবে, আমরা তাদের কাছে তত বেশি অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান (এপিআই) সরবরাহ করতে পারব।

ইনসেপ্টাকে সেমাগ্লুটাইড সরবরাহকারীর তালিকায় রয়েছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ঝেজিয়াং পেপটাইডস বায়োটেক। বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী এই প্রতিষ্ঠান ২০২০–২৪ সালের মধ্যে চীন ও হংকং থেকে অন্তত ৮৯২ গ্রাম সেমাগ্লুটাইড আমদানি করেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার ডলার। ঝেজিয়াং পেপটাইডস বায়োটেক ২০২৩–২৪ সালে রাশিয়ার ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেরোফার্মকে অন্তত ২৫ দশমিক ৬ কেজি সেমাগ্লুটাইড সরবরাহ করেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৮ লাখ ডলার।

চীনা কাস্টমসের তথ্য বলছে, ইনসেপ্টা কেবল চীন থেকে নয় সুইজারল্যান্ডের জেনেরিক ড্রাগ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্যাচেমের কাছ থেকেও উপাদানটি আমদানি করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল আরও এক মাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৩
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল আরও এক মাস

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা দ্বিতীয় দফায় আরও এক মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, করদাতারা কোনো জরিমানা ছাড়াই আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এর আগে দুই দফা সময় বাড়িয়ে শেষ সময় নির্ধারিত ছিল ৩১ ডিসেম্বর।

আজ রোববার এনবিআরের সচিব মো. একরামুল হক স্বাক্ষরিত এক জরুরি আদেশে এই সময়সীমা বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে। এনবিআর সূত্র বলছে, মূলত করদাতাদের সুবিধার্থে এবং অনলাইন সিস্টেমে চাপ সামলাতে এই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু চলতি বছর থেকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তাই অনেক নতুন ব্যবহারকারী কারিগরি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলেন। সেই জটিলতা নিরসনেই এই বাড়তি সময় দেওয়া হলো।

সময় বাড়ানোর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো অনলাইন ব্যবস্থাকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করেছি। এটি একটি বড় ধরনের সংস্কার। আমরা চাই না কোনো করদাতা পদ্ধতিগত কারণে ঝামেলার মুখে পড়ুক। সরকার করদাতাদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করেই এই সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দেবেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী বিলম্ব জরিমানা আরোপ হতে পারে।

এনবিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ডিজিটাল কর ব্যবস্থার প্রতি জনগণের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। এ পর্যন্ত ২৬ লাখের বেশি করদাতা সফলভাবে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্ট থেকে সরকারি কর্মকর্তা, বড় কোম্পানি এবং নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার পর থেকেই ই-রিটার্ন পোর্টালে ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে করদাতারা ঘরে বসেই যেকোনো সময় রিটার্ন সাবমিট করতে পারবেন। রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র (Acknowledgment) এবং ট্যাক্স সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা যাবে। বিকাশ, নগদ বা রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে কর পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।

যেকোনো যান্ত্রিক ত্রুটি বা আইনি জটিলতা এড়াতে করদাতাদের সহায়তার জন্য এনবিআর একটি কল সেন্টারও চালু রেখেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ফুটি কার্পাসে নতুন সম্ভাবনা

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)  
বাংলার ঐতিহ্য মসলিনের প্রধান কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলাগাছে ফুল ফুটেছে। গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলার ঐতিহ্য মসলিনের প্রধান কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলাগাছে ফুল ফুটেছে। গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় বিশ্বজুড়ে বাংলার গর্ব ছিল মসলিন। এর অতুলনীয় সূক্ষ্মতা, মসৃণতা ও আরামদায়ক বৈশিষ্ট্যের কারণে রাজা-বাদশাহ থেকে ইউরোপীয় অভিজাত শ্রেণির কাছে মসলিন ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। মসলিনের প্রাণ ফুটি কার্পাস তুলা ইংরেজ শাসনামলে ঔপনিবেশিক বাণিজ্যনীতির বলি হয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। দীর্ঘ বছর পর সে হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র।

ফুটি কার্পাসের পুনর্জাগরণকে ঘিরে গবেষক, ঐতিহ্য অনুরাগী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্দীপনা। এটি শুধু একটি বিপন্ন উদ্ভিদের পুনরুদ্ধার নয়; বরং বাংলার হারানো শিল্প-ঐতিহ্য ও সম্ভাব্য উচ্চমূল্যের টেক্সটাইল খাত পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা।

শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এবং গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছে। গবেষণার মূল লক্ষ্য—ফুটি কার্পাস তুলা কীভাবে বাণিজ্যিকভাবে চাষযোগ্য করা যায়, উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে সাধারণ মানুষের নাগালে আনা যায় এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মসলিনকে আবার পরিচিত করা যায়। গবেষকদের প্রত্যাশা, সঠিক নীতিগত সহায়তা ও বিনিয়োগ পেলে আগামী দিনে মসলিন আবার বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করবে।

সম্প্রতি তুলা গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা যায়, সারি সারি ফুটি কার্পাস তুলাগাছ। প্রায় সব গাছেই প্রচুর ফুল এসেছে, যেগুলোর অনেক ফলেও পরিণত হয়েছে। গবেষকদের তথ্যমতে, পুনরুদ্ধার করা ফুটি কার্পাস গাছের উচ্চতা ১৩ থেকে ১৪ ফুট পর্যন্ত। বীজের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হলেও আঁশ সূক্ষ্ম ও স্বল্প, যা মসলিন তৈরির জন্য উপযোগী।

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ফুটি কার্পাসের অস্তিত্বের সূত্র প্রথম পাওয়া যায় দৃক গ্যালারি ও জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে। সাংস্কৃতিককর্মী সাইফুল ইসলাম এর খোঁজ পান। কার্পাস তুলা থেকেই ‘কাপাসিয়া’ নামের উৎপত্তি।

ব্রিটিশ আলবার্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত মোগল আমলের মসলিন শাড়ির অংশবিশেষ পরীক্ষা করে গবেষকেরা নিশ্চিত হয়েছেন, সে সময়ে ফুটি কার্পাস থেকেই এসব বস্ত্র তৈরি হতো। ইতিহাস বলছে, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এই তুলার চাষ হতো এবং ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মসলিন রপ্তানি করা হতো।

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল আমিন বলেন, ‘ফুটি কার্পাস শুধু একটি তুলা নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক। ইংরেজ শাসনামলে নিজস্ব শিল্প রক্ষার জন্য ব্রিটিশরা পরিকল্পিতভাবে মসলিনশিল্প ধ্বংস করেছিল। আমরা এখন সে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১ জানুয়ারি কার্যকর: দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল বাড়ল ৫ শতাংশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
১ জানুয়ারি কার্যকর: দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল বাড়ল ৫ শতাংশ

দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের সেবা, কর ও টোলহারের ক্ষেত্রে এই বর্ধিত মাশুল প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বলেছে, এই মাশুলই বন্দরের আয়ের প্রধান উৎস। প্রতিবছরের মতো এবারও মাশুল বাড়ানো হয়েছে, যা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তবে অন্যান্য বন্দরের তুলনায় মাশুল বেশি হওয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দরের জন্য বর্ধিত মাশুলের আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বেনাপোল বন্দরে যাত্রীদের জন্য ২০২৫ সালের মাশুল ছিল ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা, যা ২০২৬ সালে বেড়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা হয়েছে। আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির মাশুল নতুন বছরে ১৮৪ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগের তুলনায় প্রায় ৯ টাকা বেশি। মোটর কার, জিপ ও পিকআপের জন্য এখন নতুন মাশুল ১১০ টাকা ৮২ পয়সা এবং মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের জন্য ৩৬ টাকা ৯৫ পয়সা।

বেনাপোল বন্দরে ট্রাক ও লরির জন্য ওজন মাপার যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে ৮৮ টাকা ৬৫ পয়সা দিতে হবে। কাগজপত্র প্রক্রিয়ার মাশুল এখন ১৯৫ টাকা ০৭ পয়সা। কোনো যানবাহন যদি রাতভর বন্দরে থাকে, তবে মাশুল ১১১ টাকা ৪৯ পয়সা। গুদামে পণ্য রাখার মাশুলও পণ্যের সময় অনুযায়ী বাড়ানো হয়েছে।

বেনাপোল ছাড়াও অন্যান্য স্থলবন্দরে মাশুল ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য বন্দরে যাত্রীদের মাশুল ২০২৫ সালে ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা ছিল, যা ২০২৬ সালে বেড়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা হয়েছে। আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির জন্য নতুন মাশুল ১৫৯ টাকা ২২ পয়সা, মোটর কার ও জিপের জন্য ৯৫ টাকা ৫২ পয়সা এবং মোটরসাইকেল, স্কুটার ও থ্রি-হুইলারের জন্য ৪৭ টাকা ৮৩ পয়সা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর: ফসল ব্যবস্থাপনায় উত্তরের চার জেলায় কৃষির নতুন প্রকল্প

  • ২৫২ কোটির প্রকল্পে বিতরণ হবে ৩,১৮৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি
  • উৎপাদন ৫% বৃদ্ধি ও শস্য নিবিড়তা ২৪১ শতাংশে উন্নীত হবে
  • ২০০টি পেঁয়াজ ও ৩টি সবজির সংরক্ষণাগার স্থাপন
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি খাতে টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের ২৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। চার বছরের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য প্রকল্পের আওতাধীন চার জেলায় আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানো এবং কৃষিকে আরও লাভজনক পেশায় রূপান্তর করা।

বগুড়া কৃষি অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন নামের এই প্রকল্প ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়িত হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং পুরো ব্যয়ভার বহন করবে সরকার। আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনা, পানিসাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন—এসবের সমন্বয়ে প্রকল্পের কাঠামো তৈরি হয়েছে।

ডিএই মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, যমুনা-করতোয়া-পদ্মা-বাঙ্গালীবিধৌত বগুড়া অঞ্চলের কৃষি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, কম বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন্যা ও নদীভাঙন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে আবাদি জমি কমছে। অপর দিকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। সার্বিক বাস্তবতা বিবেচনায় এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রকল্পসংশ্লিষ্ট নথিপত্রে দাবি করা হয়েছে, আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন ৫ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি শস্য নিবিড়তা ২৩৬ শতাংশ থেকে ২৪১ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এক হাজার নতুন দক্ষ কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি এবং ৩৫ হাজার কৃষি মানবসম্পদকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন ব্যয় কমানোও প্রকল্পের লক্ষ্য।

এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে থাকছে বগুড়ায় উপপরিচালকের কার্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ, ২০০টি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার, তিনটি আধুনিক ফল-সবজি ও কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার স্থাপন এবং ৩ হাজার ১৮৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ। কৃষকদের জন্য মোট ৪ হাজার ৮৪০ ব্যাচ প্রশিক্ষণ আয়োজনের পাশাপাশি ৪১ হাজারের বেশি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী এবং ৭০০টি মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনাসচিব এস এম শাকিল আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, টেকসই কৃষি উন্নয়নের স্বার্থে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। তবে নির্ধারিত কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় কি না, সেটাই প্রকল্পের সাফল্য নির্ধারণ করবে।

একই বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান আজকের পত্রিকাকে জানান, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার আবাদি জমির সঠিক ফসল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণব্যবস্থা উন্নত হলে কৃষকের ক্ষতি কমবে এবং আয়ের সুযোগ বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত