Ajker Patrika

নির্বাচন-প্রতিযোগিতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন হয় না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

বিগত সময়ে যত ব্যবসায়ী সংগঠন ছিল, তারা দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেনি। তখন দেশের ভেতরে নির্বাচন হয়নি, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও নির্বাচন হয়নি। যেখানে নির্বাচন নাই, প্রতিযোগিতা নাই, সেখানে আমরা টেকসই উন্নয়ন করব—এটা তো হবে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা তৈরি করতে হলে উদ্যোক্তা এবং সৎ প্রতিষ্ঠান দরকার বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা একই সঙ্গে দুর্নীতি করেছেন, আবার টেকসই উন্নয়নের কথাও বলেছেন। এটা অনেকটা ফাঁকা বুলির মতন।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘বেসরকারি গবেষণা জাতীয় এসডিজি প্রতিবেদন ও ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ও সিটিজেনস প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, টেকসই অর্থনীতির জন্য প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি ও প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা একটা টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার মধ্যে নিহিত রয়েছে। তবে দেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি টেকসই উন্নয়নের ধারণার প্রসার ঘটেছে এবং গভীরতাও বেড়েছে। এই অর্জন বেসরকারি খাতের অর্জন। তবে এই অর্জন সব সময় সঠিকভাবে মূল্যায়িত হয় না, এটাও ঠিক। কেননা, বাংলাদেশে টেকসই ব্যবস্থার প্রসার এবং এর অর্জনের যথেষ্ট স্বীকৃতি নেই। অনেক ক্ষেত্রে আমরা এটিকে বিশ্বের কাছে এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরতে পারিনি। ফলে এর ব্যবসায়িক অর্জনও অনেকটা সীমিত রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের জন্য উপযুক্ত ব্যবসার পরিবেশ না থাকলে টেকসই ব্যবসা মডেলও তৈরি হবে না। টেকসই ব্যবস্থার মডেল (সাসটেইনেবল মডেল) আরও প্রসারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নত করতে হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকেও সমর্থন বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থায়ন সমস্যা, জ্বালানি সরবরাহ, সরকারি সংস্থায় হয়রানি ও শ্রম পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলো সমাধান করা প্রয়োজন। সরকারের নীতিপ্রণেতারা সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না। সিএসআর সম্পর্কে সরকারি লোকজনেরও ধারণা হওয়া দরকার।

সিটিজেনস প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি-বেসরকারি উভয় জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের বড় ভূমিকা রয়েছে। বলা যায়, ব্যক্তি খাতের উন্নয়ন ছাড়া এসডিজি অর্জন সম্ভবপর হবে না। আর শুধু তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্য খাতের টেকসই উৎপাদনে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের (এসএমই) সচেতন করা প্রয়োজন।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য রেসপনসিবল প্রোডাকশন ও কনজাম্পশন (দায়িত্বশীল উৎপাদন ও ভোগ) ইস্যুতে বলেন, ‘দেশের প্রায় সব কটি তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে। শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশ নয়, নিরাপদ কর্মপরিবেশও নিশ্চিত করা হচ্ছে কারখানাগুলোতে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে এটার তেমন স্বীকৃতি নেই। এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রেতারা দায়িত্বশীল উৎপাদনের বিষয়ে খুবই সচেতন। তারা এর জন্য উপযুক্ত মূল্য পরিশোধেও আগ্রহী। কিন্তু যথাযথ ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে আমরা দায়িত্বশীল উৎপাদনের বাণিজ্যিক সুবিধা তথা প্রকৃত বাজারমূল্য ধরতে পারছি না।’

ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের এখনো রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনস নিয়ে নেতিবাচক কথা শুনতে হয়। অথচ দেশে আড়াই শর বেশি সনদপ্রাপ্ত পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজন।’

জাতিসংঘ গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহামিন জামান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, প্রধানমন্ত্রীর তহবিলসহ বিভিন্ন খাতে সিএসআরের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু এসডিজি বাস্তবায়নে এসব অর্থ কতটা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের অবদানকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে।’

সিটিজেনস প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ মেম্বার ও নিউ এজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, তিনভাবে ব্যক্তি খাত এসডিজি অর্থায়নে যুক্ত হতে পারে। সিএসআর থেকে অর্থায়ন, সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ এবং গ্রিন বন্ডের মতো টেকসই অর্থায়নের ব্যবস্থা করা।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক বলেন, ‘উন্নয়ন বাজেট দিয়ে এসডিজি পূরণ হবে না, এখানে সবার অংশগ্রহণ লাগবে। আমাদের দেশে সামাজিক ব্যবসার জন্য এখনো আইনি কাঠামো তৈরি হয়নি। আর্থিক সুযোগ, দায়িত্বপূর্ণ উৎপাদন, শোভন কাজ নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে।’

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, দেশের শ্রমবাজারের ৮৫ শতাংশ মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। অর্থাৎ, শুধু ১৫ শতাংশ মানুষের জন্য সব ধরনের নিয়মকানুন প্রয়োগ করা হয়। প্রতিবছর ২০-২৫ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছেন। অথচ তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। আবার বিদেশেও দক্ষ শ্রমিক পাঠানো যাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে আমাদের কাজ করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক (এসডিজি-বিষয়ক) শিহাব কাদের বলেন, তরুণদের একটা শক্তি আছে, যা দ্বারা তাঁরা পরিবর্তন আনতে পারেন। তাঁদের মাধ্যমেই আগামী দিনের বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। এসব বিষয় গুরুত্বসহ আমলে নিতে হবে।’

ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ এবং কমিউনিকেশন পরিচালক শামীমা আক্তার বলেন, বাংলাদেশকে বিদেশি বিনিয়োগের গন্তব্য বানাতে হলে টেকসই ব্যবস্থার বিকল্প নেই। কোনো বহুজাতিক কোম্পানি যদি এখানে আসে, তারা অবশ্যই দেখতে চায় যে এখানে ব্যবসা করার টেকসই ব্যবস্থা আছে কি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত