Ajker Patrika

পাঁচ মাসে গাজীপুরে বন্ধ ৫১ কারখানা, বেকার অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, গাজীপুর
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৪৮
গাজীপুরে বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা খূলে দেয়ার দাবীতে শ্রমিকদের গণ সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরে বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা খূলে দেয়ার দাবীতে শ্রমিকদের গণ সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সূত্র ধরে অভ্যুত্থানের মুখে সরকার পরিবর্তনের পর গত পাঁচ মাসে গাজীপুরের ৫১টি শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসবের মধ্যে ৪১টি কারখানা স্থায়ীভাবে এবং ১০টি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। আর নানা সমস্যার কথা জানিয়ে আগামী মে মাস থেকে আরো সাতটি কারখানা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে কেয়া গ্রুপ। একের পর কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক। নিদারুন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে সপরিবারে মানবেতর দিনযাপন করছেন তাঁরা।

এসব বন্ধ কারখানা খুলে দেয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়কে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন হাজারো কর্মহীন শ্রমিক। একারণে প্রায়ই মহানগরীর কোনো না কোনো সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ থাকছে। শ্রমিকদের বিক্ষোভ সামাল দিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মত নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে। সর্বশেষ গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট্রের মালিকানাধীন গ্রামীণ ফেব্রিক্স অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেডে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

শিল্প নগরী হিসাবে পরিচিত রাজধানীর লাগোয়া গাজীপুর বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত হয়েছে। সস্তা আবাসন ও সহজলভ্য কাজের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কয়েক লাখ শ্রমিকের আবাস গাজীপুর। মহানগর, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর এলাকায় গড়ে ওঠা হাজার হাজার কারখানায় কাজ করেন তাঁরা। তাঁদের উপর নির্ভর করে ছোট-বড় অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সড়ক পরিবহন খাতে নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠেছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে মোট নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ১৫৪টি। গত নভেম্বর থেকে ৩৫টি তৈরি পোশাক কারখানা কর্মীদের বেতন দিতে পারেনি, যা মোট কারখানার ২ শতাংশ। ডিসেম্বর থেকে ৪৫ শতাংশ কারখানায় বেতন বকেয়া পড়েছে। নানা কারণে গাজীপুরের ৫ শতাংশ কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজমান। ৯ শতাংশ কারখানায় ইনক্রিমেন্ট নিয়ে জটিলতা চলছে। এমন বাস্তবতায় ১ হাজার ১৫৪টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে ৪১টি এবং অস্থায়ীভাবে ১০টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।

গাজীপুরে বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা খূলে দেয়ার দাবীতে গণ সমাবেশ
গাজীপুরে বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা খূলে দেয়ার দাবীতে গণ সমাবেশ

বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে মহানগরীর সারাবো এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি, টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার টিএমএস অ্যাপারেলস, কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইল ও মাহমুদ জিনস অন্যতম। প্রধানত ব্যাংকিং ও আর্থিক জটিলতায় এসব কারখানা বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছেন বেকার হয়ে যাওয়া অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক। কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা।

গাজীপুর নগরের জরুন এলাকার কেয়া গ্রুপ দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে। এখানে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের মধ্যে হাজারের বেশি শ্রমিক বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। চলতি মাসে এই গ্রুপের চারটি কারখানা ১ মে থেকে ও চারটি কারখানা ২৭ মে থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধের নোটিস দিয়েছে। এগুলো হলো- কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড (নিট কম্পোজিট গার্মেন্টস ডিভিশন, নিটিং বিভাগ, স্পিনিং ডিভিশন, কটন ডিভিশন) ও কেয়া ইয়ার্ন মিলস।

নোটিশে কেয়া গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামাল অপর্যাপ্ততা ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার জন্য কারখানাগুলোর সব কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিধি অনুযায়ী সব পাওনা কারখানা বন্ধের পরবর্তী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।

কেয়া গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে বিগত সরকারের সময় থেকে মালিকের বিরুদ্ধে দুদক ৭টি মিথ্যা মামলা করেছে। এর মধ্যে ৫টি থেকে মালিক এর মধ্যে খালাস পেয়েছেন। তাছাড়া একটি ব্যাংক হিসাব নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করছে। এসব কারণে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি ধাপে শ্রমিকদের সব পাওনা শ্রম আইন অনুযায়ী পরিশোধ করা হবে।

কেয়া গ্রুপের আরও দুই প্রতিষ্ঠান স্থায়ী বন্ধ ঘোষণা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কেয়া গ্রুপের আরও দুই প্রতিষ্ঠান স্থায়ী বন্ধ ঘোষণা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এগুলো বন্ধের কারণ হিসেবে সরকার বলছে, কারখানাগুলোতে অর্ডার না থাকায় ও ব্যাংকে খেলাপি ঋণ থাকায় কারখানা পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। বন্ধ ঘোষিত এসব কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে সড়কে নেমে আন্দোলন করছে কাজ হারানো ৪২ হাজার শ্রমিক।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) এস এম আব্দুল লতিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের (বেক্সিমকো) কারখানায় ৪২ হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বেকার হয়েছে। শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা লে-অফ তুলে নিয়ে সরকারের সহযোগিতা চাইছি। ব্যাক টু ব্যাক এলসি ওপেন করে সকল ব্যাংকিং সুবিধাসহ লে-অফ তুলে নেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাসহ সকলের কাছে আমরা অনুরোধ করছি।’

কেয়া গ্রুপের আরও দুই প্রতিষ্ঠান স্থায়ী বন্ধ ঘোষণা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কেয়া গ্রুপের আরও দুই প্রতিষ্ঠান স্থায়ী বন্ধ ঘোষণা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগরীর সভাপতি শফিউল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৫ আগস্টের পর গাজীপুরের বেশকিছু কারখানা বকেয়া বেতনের কারণে বন্ধ হয়েছে। কিছু কারখানার মালিক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা নানা কারণে অনুপস্থিত থাকায় কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে। কিছু রুগ্ন কারখানা ছিল, এগুলো বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছেন বেকার হয়ে যাওয়া অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক। কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা।

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের আশা ছিল, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। এখানে অনেকগুলো কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ চলমান। অসন্তোষ নিরসনে ত্রিপক্ষীয় যেসব পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন ছিল, সরকার তা করেনি। যে কোনো অসন্তোষ নিরসনে সরকারের উচিত শ্রমিকদেরকে সড়ক থেকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা। আলোচনার মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত সমাধানে শ্রমিকদের পাশে থাকা।’

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় বিভিন্ন কারণে ৫১টি শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তার মধ্যে ১০টি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব কারখানা মালিক চাইলে যে কোনো সময় খুলে দিতে পারে। ব্যাংকিং সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আমরা আরো বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘কর্মহীন শ্রমিকদের অনেকেই কারখানা খুলে দেয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই বন্ধ থাকছে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক। এসব শ্রমিককে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোনার দাম ভরিতে ১৪৭০ টাকা বাড়ল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের বাজারে সোনার দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা। এতে এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৪৪২ টাকা এবং ১২ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ১ হাজার ৫০ টাকা। এই দাম বাড়ানোর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে এখন আবার দাম বাড়ানো হলো।

এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৪১১ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ২১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৬৩ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা।

বিষয়:

দামসোনা
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেভরনের সহায়তায় সিলেটে ৬০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনে ফেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

শেভরন বাংলাদেশের সহায়তায় বাস্তবায়িত এসএমআইএল (SMILE) প্রকল্পের আওতায় ‘রিস্টোরিং মোবিলিটি: আর্টিফিশিয়াল লিম্ব সাপোর্ট’ উদ্যোগের সমাপনী অনুষ্ঠান সম্প্রতি গ্র্যান্ড সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সিলেট ও নবীগঞ্জ উপজেলার ৬০ শারীরিক প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ (প্রোস্থেটিক) ও অর্থোটিক ডিভাইস বিতরণ করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পুনর্বাসন ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকা এই উপকারভোগীরা কৃত্রিম অঙ্গ পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেলেন। জালালাবাদ ডিজেবল্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের (জেডিআরসিএইচ) সহযোগিতায় এই উদ্যোগ পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সমন্বয় ও মনিটরিং উইংয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট প্রধান এ কে এম আরিফ আক্তার, সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন এবং জেডিআরসিএইচ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রোটারিয়ান পিপি ইঞ্জিনিয়ার শোয়াইব আহমেদ মতিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘কৃত্রিম অঙ্গ সহায়তা শুধু চিকিৎসা নয়, এটি প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনযাত্রায় মৌলিক পরিবর্তন আনে। শেভরন বাংলাদেশ, সুইসকন্টাক্ট ও জেডিআরসিএইচের যৌথ উদ্যোগ চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে এনে উপকারভোগীদের জীবনে নতুন আশার দ্বার খুলে দিয়েছে।’

শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এ ধরনের বিশেষায়িত পুনর্বাসন সেবার পর্যাপ্ত সুযোগ পায় না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা পৌঁছে দিতে পারা আমাদের জন্য গর্বের। উপকারভোগীদের প্রতিটি অগ্রযাত্রাই একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ।’

সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন বলেন, ‘এই প্রকল্প কেবল চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়নি; এটি উপকারভোগীদের কর্মজীবনে ফেরা, শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে—যা সমাজে অন্তর্ভুক্তি আরও সুদৃঢ় করেছে।’

করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির বলেন, ‘শেভরন তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত জ্বালানি অংশীদার। আমাদের অঙ্গীকার কেবল জ্বালানি সরবরাহেই সীমাবদ্ধ নয়। এসএমআইএল প্রকল্পের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা চলাচল সক্ষমতা ও মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারে কাজ করছি। বাংলাদেশে আমাদের সামাজিক বিনিয়োগ কার্যক্রম জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে ৯টির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে উপকারভোগীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, কৃত্রিম অঙ্গ পাওয়ার ফলে তাঁরা আবার স্বাভাবিক চলাচল, আত্মনির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাব পরিবার ও সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে।

গৃহস্থালি আয় স্থিতিশীল হওয়া ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পরিবার ও সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে—যা কমিউনিটির স্থিতিশীলতা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় শেভরন বাংলাদেশ ও সুইসকন্টাক্ট এসএমআইএল প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই ও প্রভাবশালী উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা অর্থোটিক ও প্রোস্থেটিক সহায়তা প্রয়োজন, এমন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন নিশ্চিত করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও ১৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার কিনল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করেছে। আজ সোমবার ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার (১৪১.৫ মিলিয়ন) কেনা হয়েছে। ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ দশমিক ২৯ থেকে ১২২ দশমিক ৩০ টাকা আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ দশমিক ৩০ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, ১১ ডিসেম্বর ১৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ কোটি ডলার (১৪৯ মিলিয়ন) কেনা হয়েছিল। এ সময় প্রতি ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ২৯ পয়সা। আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ টাকা ৯ পয়সা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত নিলামপদ্ধতিতে মোট ২৮০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার (২.৮০ বিলিয়ন) সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, আজ ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার কেনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনে ১৭২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিল সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাজার সহনীয় করতে পেঁয়াজের আমদানি আরও বাড়িয়েছে সরকার। আজ সোমবার থেকে দৈনিক ১৭ হাজার ২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে; যা আগে ছিল ৬ হাজার টন করে।

আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা যায়, চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। তিন দিনের ব্যবধানে ১২০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়। শুরুতে প্রতিদিন ৫০ জন আমদানিকারককে ৩০ টন করে মোট ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘ তিন মাস পর এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে এরপরও বাজারে দাম না কমলে আমদানির অনুমতির পরিমাণ বাড়ানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি আরও বাড়ানো হয়। ১৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন ২০০ জনকে ৩০ টন করে ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়, যা আজ থেকে আরও বাড়িয়ে ১৭ হাজার ২৫০ টন করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আজ বলা হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর দুই দিনের জন্য প্রতিদিন ৫৭৫টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রতিটি আইপিতে আগের ন্যায় সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে। আবেদনের বিষয় আগের ন্যায় বলবৎ থাকবে। অর্থাৎ গত ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আমদানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরাই কেবল এই দুই দিন আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর আজ আমরা ৫৭৫ জনকে আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। অনুমোদন নিয়ে এ দিন আমদানিকারকেরা ঋণপত্র খুলতে পেরেছেন। যদিও দুই দিনের কথা বলা হয়েছে, তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে সময় আরও বাড়বে। এর আগে গত শনিবার থেকে প্রতিদিন ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়ে আসছিলাম আমরা।’

দেশে সাধারণত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। সে হিসাবে যেদিন ঋণপত্র খোলেন, সেদিনই আমদানি করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত