Ajker Patrika

নিয়মের তোয়াক্কা করছে না সাত বিমা কোম্পানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিয়মের তোয়াক্কা করছে না সাত বিমা কোম্পানি

নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় নিয়ম না মানার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তদন্তে দেখা গেছে, সাতটি নন-লাইফ বিমা কোম্পানি সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করেনি। আইন অনুযায়ী, এসব কোম্পানির মোট সম্পদের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশই এ নিয়মের তোয়াক্কা করেনি।

কোম্পানিগুলো হলো ইস্টার্ন ইনস্যুরেন্স, নর্দার্ন জেনারেল ইনস্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স, পিপলস ইনস্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স, ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স ও এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স লিমিটেড।

২০২৩ সালে পরিচালিত তদন্তে উঠে আসে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে আইন লঙ্ঘন করলেও কার্যকর নজরদারি এবং শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় তারা নিয়ম ভঙ্গ অব্যাহত রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদাসীনতার জন্য যেমন কোম্পানিগুলো দায়ী, তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বল ব্যবস্থাপনারও দায় রয়েছে।

আইডিআরএর ২০১৯ সালের ‘নন-লাইফ বিমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ প্রবিধানমালা’ অনুযায়ী, প্রতিটি নন-লাইফ বিমা কোম্পানিকে তাদের সম্পদের ন্যূনতম ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজ বা বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের পর কোম্পানিগুলোর সম্পদের বাকি অংশ ৯টি খাতে নির্ধারিত হারে বিনিয়োগ করা যাবে।

চারটি বিমা কোম্পানি—মেঘনা ইনস্যুরেন্স, ঢাকা ইনস্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স ও অগ্রণী ইনস্যুরেন্সকে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে আইডিআরএ। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আইডিআরএর শুনানি শেষে ২০২৪ সালের বিভিন্ন সময় এই জরিমানা করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন মতে, সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে কোনো বিনিয়োগ করেনি ইস্টার্ন ইনস্যুরেন্স; যা সম্পূর্ণভাবে বিধিমালার লঙ্ঘন। এ বিষয়ে ইস্টার্ন ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান তারেক বলেন, তদন্তের সময় সরকারি সিকিউরিটিজে কোনো বিনিয়োগ ছিল না। কিন্তু এখন আইন অনুসারে বিনিয়োগ করেছি। প্রবিধানে নির্ধারিত বিনিয়োগ সীমার চেয়ে এখন বেশিই বিনিয়োগ রয়েছে।

পিপলস ইনস্যুরেন্স সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছে ১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা; যা শতাংশের হিসাবে মোট সম্পদের ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা; যা বিনিয়োগের ২ দশমিক ০২ শতাংশ। ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা; যা কোম্পানিটির বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্সের সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে বিনিয়োগ ৫০ লাখ টাকা; যা সম্পদের দশমিক ৫৯ শতাংশ।

নর্দার্ন জেনারেল ইনস্যুরেন্স সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ১৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা; যা শতাংশের হিসাবে ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

এ ছাড়াও ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা; যা মোট বিনিয়োগের ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো কোম্পানিই বন্ডে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করেনি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাজী মোকাররম দস্তগীর বলেন, এখন আইডিআরএর নির্দেশনা অনুসারে বিনিয়োগ বিধির শর্তাদি পূর্ণ করতে সরকারি সিকিউরিটিজে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করেছি। তবে ইসলামি বিমা কোম্পানি হিসেবে আমাদের অবশ্যই শরিয়াহ বোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে বিনিয়োগ করতে হবে। আর শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগই আমাদের জন্য লাভজনক।

মোকাররম দস্তগীর বলেন, ইসলামি বিমা কোম্পানি হিসেবে আমাদের সুদভিত্তিক বিনিয়োগে যাওয়ার সুযোগ নেই। অথচ বর্তমান বিনিয়োগ বিধি আমাদের সুদি বিনিয়োগে বাধ্য করছে। বিষয়টি আইডিআরএকে জানিয়েছি, কিন্তু ইসলামি বিমার আইন না থাকায় তারাও আমাদের কোনো নির্দেশনা দিতে পারছে না।

বিমা খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পদ সুরক্ষা থাকলেও সরকারি বন্ডে দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানিগুলো এ খাতে বিনিয়োগ করতে চায় না। তাই বছরের পর বছর কোম্পানিগুলো আইনের লঙ্ঘন করে আসছে। কোম্পানিগুলোকে বড় ধরনের শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে এই অনিয়ম দিন দিন বাড়বে। এটার জন্য দায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএর পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ সঠিক আছে কি না জানতে ২০২৩ সালে কোম্পানিগুলার অফিস পরিদর্শন করে পরিদর্শক দল। পরিদর্শনে কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের প্রকৃত চিত্র দেখা হয়। এতে দেখা গেছে, সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের নিয়ম ভঙ্গসহ নানা অনিয়ম করছে কোম্পানিগুলো। অনিয়মের বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিনিয়োগের বিধান লঙ্ঘনের অপরাধে জরিমানা করা হয়, কোম্পানিগুলো জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত