Ajker Patrika

৪ দাবি নিয়ে মার্কিন চাপ, বাংলাদেশের সায় ৩ শর্তে

শাহ আলম খান, ঢাকা 
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ১৯
৪ দাবি নিয়ে মার্কিন চাপ, বাংলাদেশের সায় ৩ শর্তে

আলোচিত ঢাকা-ওয়াশিংটন শুল্ক আলোচনার আনুষ্ঠানিক পর্ব আপাতত শেষ হলেও একটি প্রশ্ন এখন অনেক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে, এই চুক্তি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? হিসাব-নিকাশের পর এ থেকে বাংলাদেশের আসলে কতটা লাভ বা ক্ষতি হবে? আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশ ট্রাম্পের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের বিপরীতে ছাড় পেয়েছে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। এতে ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি প্রকাশ করলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা এত সহজভাবে দেখছেন না। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা নানা উদ্বেগ জানিয়েছেন।

আজকের পত্রিকা একাধিক দেশি-বিদেশি সূত্র এবং চুক্তির প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীলদের সঙ্গে সরাসরি আলাপ ও বিভিন্ন ফোরামে তাঁদের আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক মন্তব্যের ভিত্তিতে একটি ধারণা তৈরির চেষ্টা করেছে। এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার মূল লক্ষ্য, দর-কষাকষির ধরন ও বিষয়বস্তু, কার স্বার্থ কতটা থাকল ইত্যাদি কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে।

বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এই চুক্তির মূল চালিকাশক্তি ছিল চারটি লক্ষ্য:

১. বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের প্রবেশ আরও সহজ করতে বাংলাদেশের আরোপিত উচ্চ শুল্কহার কমানো এবং অশুল্ক বাধাগুলো দূর করা।

২. বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ওয়াশিংটনের প্রতিকূলে যে ঘাটতি রয়েছে, তার সমাধান করা।

৩. লক্ষ্য নিজেদের কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি। বিশেষ করে সয়াবিন, গম, ডাল, তুলা ও ভুট্টার মতো মার্কিন কৃষিপণ্য যাতে নগদ অর্থে আমদানি হয়, সে বিষয়ে চাপ স্পষ্ট।

৪. যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার চাপ থেকে সুরক্ষা দিতে চায়। এ জন্য চুক্তির মাধ্যমে বিশ্ববাজারের প্রতিযোগী পণ্যের বিরুদ্ধে সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা তাদের অন্যতম লক্ষ্য।

অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই চার চাওয়া মেনে নিয়েছে। একই সঙ্গে কৌশলগত উপায়ে তা সাধ্যমতো মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, দেশে গম বা সয়াবিনের মতো পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বিপুল বলে বাণিজ্যের ব্যবধান কমাতে মার্কিন কৃষিপণ্য হতে পারে বড় হাতিয়ার।

মূলত এই চার দফার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনায় বসে, যার অন্যতম পূর্বশর্ত ছিল ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ), অর্থাৎ চুক্তির আলোচনার কোনো অংশই প্রকাশযোগ্য নয়।

সীমা আরোপ করে বাংলাদেশ দিয়েছে তিন পাল্টা শর্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৌশলী অবস্থান থেকে তিনটি মৌলিক সীমা নির্ধারণ করে আলোচনা এগিয়ে নিয়েছে।

১. শুরুতে বলা হয়, তারা একটি অন্তর্বর্তী সরকার, তাই এই চুক্তি ভবিষ্যৎ সরকারের ওপর বাধ্যতামূলক হতে পারে না। এ কারণে চুক্তিতে একটি পর্যালোচনার ধারা (রিভিউ ক্লজ) যুক্ত করা হয়েছে।

২. বাংলাদেশ তার বাস্তব সক্ষমতার বাইরে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্রকে তা মেনে নিতে হয়েছে।

৩. চুক্তিটি পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয় হওয়ার জোরালো শর্ত দিয়েছিল বাংলাদেশ। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৯টি দেশের জন্য নতুন শুল্কহার ঘোষণা করার পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যে বক্তব্য দেন, তা আজকের পত্রিকার পাওয়া অন্যান্য সূত্রের তথ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘চুক্তির প্রাথমিক খসড়ায় যেসব প্রস্তাব পরোক্ষভাবে দেশের স্বার্থবিরোধী হতে পারত, সেসব ইস্যু থেকে আলোচনার মাধ্যমে আমরা বের হয়ে এসেছি। চূড়ান্ত খসড়ায় যা রয়েছে, তার কোনো কিছুই পালনের অযোগ্য বা ক্ষতিকর নয়।’

গোপনীয়তার প্রশ্নে অবস্থান

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘মার্কিনিদের সঙ্গে যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে, তার জন্য যে এনডিএ করতে হয়েছে, তা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশকে করতে হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক চর্চা।’

তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। খলিলুর রহমান বলেন, ‘চুক্তিটি সম্পাদিত হলে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হবে এবং পরে স্বচ্ছতার স্বার্থে আমরা তা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ করতে অনুরোধ করব।’

বিমান কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ

চুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র বোয়িং কোম্পানির ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার চাপ দিয়েছে কি না, এই গুঞ্জনের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা একে ‘একতরফা গুজব’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিমান কেনার বিষয়টি তুলেছে বাংলাদেশ। বোয়িং গত বছর মাত্র ১২টি উড়োজাহাজ বানিয়েছে। এই সক্ষমতায় বাংলাদেশ চাইলেও তারা ২০৩৭ সালের আগে প্রথম উড়োজাহাজটি সরবরাহ করতে পারবে না।

বাস্তবায়ন এখন আসল প্রশ্ন

কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তিটি বাস্তবায়নযোগ্য কি না, তা নির্ভর করবে বাংলাদেশের নিজেদের সক্ষমতার ওপর। ‘২০ শতাংশ শুল্ক সুবিধা নেওয়া কি কেবল কাগজেই থাকবে, নাকি বাংলাদেশ তা কাজে লাগাতে পারবে, এটাই এখন প্রশ্ন।’ বলেছেন এক জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য কর্মকর্তা।

এই চুক্তির সুফল পেতে হলে বাংলাদেশকে নিজের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং নীতিগত কাঠামোয় স্থায়িত্ব বজায় রাখতে হবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত