Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধ: অস্ত্র বাণিজ্যে ফিরছে ইউরোপের দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলো

ইউক্রেন যুদ্ধ: অস্ত্র বাণিজ্যে ফিরছে ইউরোপের দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলো

ডেনমার্কের সর্বোচ্চ উত্তরে অবস্থিত ক্রুডটেনে গোলাবারুদের কারখানা প্রায় কয়েক বছর ধরেই বন্ধ পড়ে ছিল। ড্যানিশ সামরিক বাহিনীর জন্য বুলেট, গোলা ও বিস্ফোরক বানানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এই কারখানার। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরেই অকেজো পড়ে আছে।

তবে এ চিত্র বদলাতে যাচ্ছে। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের কারণে দেশটিতে পশ্চিমা অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। সম্প্রতি গোলাবারুদের বাণিজ্যে পুরোনো ভূমিকায় নতুন করে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডেনমার্কের সরকার।

২০০৮ সালে ইউরোপজুড়ে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় কমানোর উদ্যোগে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ডেনমার্ক ক্রুডটেন অস্ত্র কারখানা বিক্রি করে দেয়। তখন ক্রুডটেন ড্যানিশ সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের প্রধান কারখানা। গত অক্টোবর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার হাত বদল হওয়ার পর সরকার এটি আবার অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার দ্রুত সম্প্রসারণশীল অস্ত্র কারখানাকে টক্কর দেওয়ার জন্য অনেক দেশই এখন অস্ত্র তৈরিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ কারখানা আবারও অধিগ্রহণের মাধ্যমে ডেনমার্কও এ প্রতিযোগিতার সর্বশেষ খেলোয়াড় হিসেবে নাম লিখিয়েছে।

গত ডিসেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রোয়েলস লান্ড পোউলসেন বলেন, ‘এ কারখানা হাতে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।’ তিনি এ সময় ইউরোপজুড়ে গোলাবারুদের চাহিদা বাড়ার কথা উল্লেখ করেন।

পোউলসেন বলেন, ‘আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, কারণ রাশিয়া গোলাবারুদ এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের উৎপাদন বাড়াচ্ছে। এ কারণেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইউরোপীয় ইউনিয়নে যেসব দেশ অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে তাদের সাহায্য করা হবে।’

চলতি বছর ইউক্রেনে অস্ত্রের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এ আশঙ্কায় চিন্তিত ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর কর্মকর্তারা। ইউক্রেনের জন্য কংগ্রেসে বাড়তি মার্কিন সামরিক সহায়তা আটকে দিয়েছে রিপাবলিকানেরা। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও আরেকটি অর্থনৈতিক প্যাকেজের ক্ষেত্রে ভেটো দিয়েছে হাঙ্গেরি।

বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার বিস্তৃত অস্ত্র বাণিজ্য ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ কারণেই ইউরোপীয় দেশগুলো নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় খুঁজছে। এ জন্য অস্ত্র তৈরি কেন্দ্রিক বিধি–নিষেধগুলো শিথিল করা হচ্ছে এবং এ খাতে বিনিয়োগেও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বারুদকেই ড্যানিশ ভাষায় ক্রুডটেন বলা হয়। পুরোনো ইটের ভবনে স্থাপিত ক্রুডটেন কারখানা বিস্তীর্ণ গ্রামীণ এলাকাজুড়ে রয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কারখানাটিতে কর্মকর্তারা গোলাবারুদ তৈরির জন্য বেসরকারি কোম্পানিকে নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সামরিক গোলাবারুদের কারখানা দেখা যায়, যেখানে কারখানাগুলো সরকারের মালিকানাধীন থাকলেও পরিচালনা করে বেসরকারি কোম্পানি। বাজার চাহিদার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারিভাবে এতে অর্থায়ন করা হয়। ২০২২ সালে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে তখন যুক্তরাষ্ট্রের ১৫৫ মিলিমিটার ক্যালিবার রাউন্ডের মাসিক উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৪ হাজার। চলতি বছর উৎপাদন দ্বিগুণের চেয়েও বেড়ে ৩৬ হাজার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ইউরোপের দেশগুলোর বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি, বাজেটের সীমাবদ্ধতা ও সরকারের প্রতিরক্ষা খাতে বহুবিধ বিধি–নিষেধের মধ্যে অস্ত্র উৎপাদনের সুযোগ খুব কমই। অনুমোদনের গতি বাড়ানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই সব দেশের জন্য আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করছে যারা যৌথভাবে প্রচুর পরিমাণে গোলাবারুদ তৈরি করছে। এ ছাড়া বিধি–নিষেধগুলো শিথিল করা হচ্ছে যার কারণে অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আগামী ১২ মাসের মধ্যেই ইউক্রেনে ১৫৫ মিলিমিটার ক্যালিবারের ১০ লাখ শেল সরবরাহ করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ উদ্যোগে সফলতা নিশ্চিত করতে সরকার ও অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই এই পরিমাণ শেল সরবরাহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও এখনো অর্ধেক পরিমাণও মজুত করা সম্ভব হয়নি। অস্ত্র বাণিজ্য খাতে ইউরোপীয় দেশগুলোর বিনিয়োগের দ্বিধার কারণে মূলত এমনটা হচ্ছে।

প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লিয়েন। গত নভেম্বরে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা সংস্থার বার্ষিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সহায়তা করার জন্য এখনো আমাদের কাছে যথেষ্ট সরঞ্জাম নেই।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার কারণে যেসব দেশের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হবে, যদি তারা প্রতিরক্ষা খাতে উন্নয়নের জন্য ব্য়য় করে থাকে। নজিরবিহীন এ সময়ে ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা এবং এর প্রতিরক্ষা শিল্পনীতির জন্য এটি একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে।’

তবে একই সময়ে এটি সরকার ও অস্ত্রবাণিজ্যের জন্য অস্বস্তিকর একটি সমন্বয়ও হতে পারে। ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা শিল্প সমিতির মহাপরিচালক জোয়াকিম ফিনকিয়েলম্যান বলেন, ‘আমি সরকার নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র উৎপাদনের পক্ষে নই, তবে আমার জন্য যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এ মুহূর্তে বিপুল চাহিদা রয়েছে কিন্তু যথেষ্ট উৎপাদন সক্ষমতা নেই।’

জোয়াকিম বলেন, বর্তমানে ডেনমার্ক সামরিক গোলাবারুদ সংগ্রহ করে বিদেশি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে। ক্রুডটেন কারখানা একবার চালু হয়ে যাওয়ার পর সামরিক বাহিনীকে সরবরাহ ও রপ্তানির মতো যথেষ্ট গোলাবারুদ তৈরি নিশ্চিত করতে সরকারকে এতে যথেষ্ট বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এটিকে বাণিজ্যের বিশেষ এক সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কারখানাটির কার্যক্রম শুরু হতে আরও দুই বছরের মতো লাগতে পারে।

সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ বাজার তৈরির রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য কারখানা উন্মুক্ত করারই ইঙ্গিত বলে উল্লেখ করেন জোয়াকিম।

গত ডিসেম্বরে ফিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে, ২০২৭ সাল শেষ হওয়ার আগেই তারা ভারী গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক তৈরির সক্ষমতা দ্বিগুণ করবে। এক বিবৃতিতে ফিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনতি হাক্কানেন বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা ইউক্রেনকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে চাই।’

এদিকে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলোর মধ্যে অস্ত্র বাণিজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করার ইচ্ছা প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, রোমানিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশই জাতীয় গোলাবারুদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অন্তত একটি অংশের মালিক।

দুই বছর ধরেই দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছে রাশিয়া। প্রতি মাসে রাশিয়া ১০০ টিরও বেশি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে।

এস্তোনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লরি লানেমেৎস বলেন, ‘তাদের (রাশিয়া) সমগ্র অর্থনীতিই এখন অস্ত্র তৈরি করছে। এমনকি যেসব কারখানা আগে কৌটাজাত পণ্য তৈরি করত তারাও আজকাল বুলেট তৈরি করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোনার দাম ভরিতে ১৪৭০ টাকা বাড়ল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের বাজারে সোনার দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা। এতে এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৪৪২ টাকা এবং ১২ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ১ হাজার ৫০ টাকা। এই দাম বাড়ানোর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে এখন আবার দাম বাড়ানো হলো।

এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৪১১ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ২১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৬৩ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা।

বিষয়:

দামসোনা
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেভরনের সহায়তায় সিলেটে ৬০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনে ফেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

শেভরন বাংলাদেশের সহায়তায় বাস্তবায়িত এসএমআইএল (SMILE) প্রকল্পের আওতায় ‘রিস্টোরিং মোবিলিটি: আর্টিফিশিয়াল লিম্ব সাপোর্ট’ উদ্যোগের সমাপনী অনুষ্ঠান সম্প্রতি গ্র্যান্ড সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সিলেট ও নবীগঞ্জ উপজেলার ৬০ শারীরিক প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ (প্রোস্থেটিক) ও অর্থোটিক ডিভাইস বিতরণ করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পুনর্বাসন ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকা এই উপকারভোগীরা কৃত্রিম অঙ্গ পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেলেন। জালালাবাদ ডিজেবল্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের (জেডিআরসিএইচ) সহযোগিতায় এই উদ্যোগ পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সমন্বয় ও মনিটরিং উইংয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট প্রধান এ কে এম আরিফ আক্তার, সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন এবং জেডিআরসিএইচ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রোটারিয়ান পিপি ইঞ্জিনিয়ার শোয়াইব আহমেদ মতিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘কৃত্রিম অঙ্গ সহায়তা শুধু চিকিৎসা নয়, এটি প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনযাত্রায় মৌলিক পরিবর্তন আনে। শেভরন বাংলাদেশ, সুইসকন্টাক্ট ও জেডিআরসিএইচের যৌথ উদ্যোগ চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে এনে উপকারভোগীদের জীবনে নতুন আশার দ্বার খুলে দিয়েছে।’

শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এ ধরনের বিশেষায়িত পুনর্বাসন সেবার পর্যাপ্ত সুযোগ পায় না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা পৌঁছে দিতে পারা আমাদের জন্য গর্বের। উপকারভোগীদের প্রতিটি অগ্রযাত্রাই একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ।’

সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন বলেন, ‘এই প্রকল্প কেবল চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়নি; এটি উপকারভোগীদের কর্মজীবনে ফেরা, শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে—যা সমাজে অন্তর্ভুক্তি আরও সুদৃঢ় করেছে।’

করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির বলেন, ‘শেভরন তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত জ্বালানি অংশীদার। আমাদের অঙ্গীকার কেবল জ্বালানি সরবরাহেই সীমাবদ্ধ নয়। এসএমআইএল প্রকল্পের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা চলাচল সক্ষমতা ও মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারে কাজ করছি। বাংলাদেশে আমাদের সামাজিক বিনিয়োগ কার্যক্রম জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে ৯টির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে উপকারভোগীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, কৃত্রিম অঙ্গ পাওয়ার ফলে তাঁরা আবার স্বাভাবিক চলাচল, আত্মনির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাব পরিবার ও সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে।

গৃহস্থালি আয় স্থিতিশীল হওয়া ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পরিবার ও সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে—যা কমিউনিটির স্থিতিশীলতা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় শেভরন বাংলাদেশ ও সুইসকন্টাক্ট এসএমআইএল প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই ও প্রভাবশালী উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা অর্থোটিক ও প্রোস্থেটিক সহায়তা প্রয়োজন, এমন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন নিশ্চিত করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও ১৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার কিনল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করেছে। আজ সোমবার ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার (১৪১.৫ মিলিয়ন) কেনা হয়েছে। ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ দশমিক ২৯ থেকে ১২২ দশমিক ৩০ টাকা আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ দশমিক ৩০ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, ১১ ডিসেম্বর ১৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ কোটি ডলার (১৪৯ মিলিয়ন) কেনা হয়েছিল। এ সময় প্রতি ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ২৯ পয়সা। আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ টাকা ৯ পয়সা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত নিলামপদ্ধতিতে মোট ২৮০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার (২.৮০ বিলিয়ন) সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, আজ ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার কেনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনে ১৭২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিল সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাজার সহনীয় করতে পেঁয়াজের আমদানি আরও বাড়িয়েছে সরকার। আজ সোমবার থেকে দৈনিক ১৭ হাজার ২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে; যা আগে ছিল ৬ হাজার টন করে।

আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা যায়, চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। তিন দিনের ব্যবধানে ১২০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়। শুরুতে প্রতিদিন ৫০ জন আমদানিকারককে ৩০ টন করে মোট ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘ তিন মাস পর এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে এরপরও বাজারে দাম না কমলে আমদানির অনুমতির পরিমাণ বাড়ানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি আরও বাড়ানো হয়। ১৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন ২০০ জনকে ৩০ টন করে ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়, যা আজ থেকে আরও বাড়িয়ে ১৭ হাজার ২৫০ টন করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আজ বলা হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর দুই দিনের জন্য প্রতিদিন ৫৭৫টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রতিটি আইপিতে আগের ন্যায় সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে। আবেদনের বিষয় আগের ন্যায় বলবৎ থাকবে। অর্থাৎ গত ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আমদানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরাই কেবল এই দুই দিন আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর আজ আমরা ৫৭৫ জনকে আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। অনুমোদন নিয়ে এ দিন আমদানিকারকেরা ঋণপত্র খুলতে পেরেছেন। যদিও দুই দিনের কথা বলা হয়েছে, তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে সময় আরও বাড়বে। এর আগে গত শনিবার থেকে প্রতিদিন ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়ে আসছিলাম আমরা।’

দেশে সাধারণত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। সে হিসাবে যেদিন ঋণপত্র খোলেন, সেদিনই আমদানি করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত