Ajker Patrika

দেশেই তৈরি হবে ইভির বড় বাজার

আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ৩৫
দেশেই তৈরি হবে ইভির বড় বাজার

ইঞ্জিন ও তেলচালিত গাড়ির পরিবর্তে বিশ্বখ্যাত চীনের বিওয়াইডির বৈদ্যুতিক যন্ত্রের গাড়ি বা ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) দেশে এনেছে অটোমোবাইল খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান রানার। পেয়েছে জনপ্রিয়তাও। এখন ইভির বাজার সম্প্রসারণ ও ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে খাতটি কীভাবে দাঁড় করানো সম্ভব, এ নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন রানার গ্রুপের পরিচালক মার্কেটিং আমিদ সাকিফ খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাণিজ্য সম্পাদক শাহ আলম খান। 

আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশের বাজারে ইভি ইন্ডাস্ট্রি বিকাশের সুযোগ কীভাবে গ্রহণ করা যায়? 
আমিদ সাকিফ খান: বাংলাদেশের বাজারে ইভি ইন্ডাস্ট্রি বিকাশের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এর জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং সেখানে বেসরকারি খাতের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে আমরা যদি ফুল কমার্শিয়াল ফ্লিট, যেমন বাস-ট্রাক—এগুলো ধীরে ধীরে ইভিতে পরিবর্তন করতে পারি, অথবা প্লাগ-ইন হাইব্রিড বা পিএইচইভি করতে পারি, তা হলেও দেশে অনেক বড় একটি ইভির বাজার সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, তখন জ্বালানি খরচ অনেক কমে আসবে। বর্তমানে বিপুল পরিমাণে ডিজেল বা ক্রুড অয়েল আমদানি করতে হয়, যার পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়। তাই ইভির বাজার দেশে যত বড় হবে, জ্বালানির খরচে তত বড় প্রভাব দেখা যাবে। তখন এত জ্বালানি আমাদের আমদানি করতে হবে না। এর সুফল যেমন আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে দেখতে পাব, তেমনি আমাদের অর্থনীতিতেও দেখতে পাব। তখন জ্বালানি আমদানির যে পরিমাণ অর্থ কম খরচ হবে, তা আমরা অন্যান্য খাতে ব্যয় করতে পারব।

আজকের পত্রিকা: ইভি কীভাবে জলবায়ু অবনতি ঠেকাতে কাজ করে, একটু ব্যাখ্যা করে বলবেন কি? 
আমিদ সাকিফ খান: অবশ্যই। ধরুন, একটি সাধারণ গাড়ি যখন চলে, তখন কার্বন নির্গমন হয়, যা পরিবেশ নষ্ট করে। এখন খুব সহজেই বায়ুর গুণগতমান পরিমাপ করা যায় ও জানা যায় বায়ুদূষণ কোন পর্যায়ে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব হওয়ায় ইভি চলার সময় কোনো ধরনের কার্বনই নির্গমন করে না, তাই ইভিকে বলা হয় জিরো অ্যামিশন ভেহিকল। তা ছাড়া ইভির ব্যাটারিও এখন বেশ উন্নত মানের। সাধারণত, অনবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর গাড়িতে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, তা লেড এসিড ব্যাটারি। সেখানে বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারি, যার উৎপাদন থেকে শুরু করে নিষ্পত্তি করা পর্যন্ত গোটা জীবনচক্র লেড এসিড ব্যাটারি থেকে অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। তাই, একটি গাড়ির সম্পূর্ণ জীবনচক্র বিবেচনা করলে দেখা যায়, দেশে জলবায়ু বিপর্যয় ঠেকাতে ইভির ব্যবহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

আজকের পত্রিকা: দেশের বাজারে ইভি সরবরাহ করছে বিওয়াইডি। যার স্থানীয় পরিবেশক হিসেবে রয়েছে রানার গ্রুপ। বিওয়াইডির ইভিতে কী ধরনের সুবিধা রয়েছে গ্রাহকদের জন্য? 
আমিদ সাকিফ খান: আমরা আমাদের গাড়িতে দিচ্ছি ৮ বছরের ওয়ারেন্টি। ফলে ৮ বছরের জন্য গাড়ির ব্যাটারি নিয়ে ইভি ব্যবহারকারীকে কোনো দুশ্চিন্তাই করতে হবে না। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, আমরা বাংলাদেশের গ্রাহকের সক্ষমতাও বিবেচনায় রাখছি। তাই প্রায় কোটি টাকার গাড়ির পাশাপাশি মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ৫৫ লাখ টাকার মধ্যেও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন লেটেস্ট মডেলের ইভি রয়েছে বিওয়াইডির শোরুমে।

আজকের পত্রিকা: বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় নিউ এনার্জি ভেহিকল (এনইভি) প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ নিয়ে বিওয়াইডির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 
আমিদ সাকিফ খান: বিওয়াইডি বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় নিউ এনার্জি ভেহিকল প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে বিওয়াইডি কাজ করে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রায় অনেক পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশকে নিয়ে। বিশেষ করে ঢাকার বায়ুর গুণগতমান খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। দিন দিন এ দূষণের তীব্রতা বাড়ছে। এ বায়ুদূষণের তীব্রতা কমাতে আমরা বিশেষ অবদান রাখতে চাই। তাই আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, আরও অনেক ইভি নিয়ে আসার, ইভিশিল্পকে উন্নত করার এবং সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে একত্রে কাজ করার।

আজকের পত্রিকা: দেশে ইভির ব্যবহার বাড়াতে বাধাগুলো কোথায়? 
আমিদ সাকিফ খান: বাধা আসলে খুব বেশি কিছু নেই, যা আছে প্রক্রিয়াগত। যেহেতু ইভি বাংলাদেশে এখনো নতুন। এ কারণে পর্যাপ্ত ইভি চার্জিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার এখনো সম্পূর্ণরূপে গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে প্রচার-প্রচারণার অভাব ও জানার সীমাবদ্ধতাও কিছুটা আছে। এ কারণে সবার মধ্যে এখনো ‘চার্জিং অ্যাংজাইটি’ বা চার্জিং নিয়ে ভয় কাজ করছে। আমি বিশ্বাস করি, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে যখন দেশে এ নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু হবে, তখন এ ভয় কেটে যাবে। আশার খবর হচ্ছে, দেশে ইতিমধ্যে বেশ কিছু চার্জিং স্টেশন স্থাপনের কাজ হচ্ছে, ইতিমধ্যে কয়েকটির কাজ শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বাসায় বসেও ইভিতে চার্জ দেওয়ার সুবিধা রয়েছে; তাই চার্জিং নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

আজকের পত্রিকা: ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে দেশে ইভির বিকাশে উৎপাদক এবং গ্রাহকদের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি কতটা সহায়ক? 
আমিদ সাকিফ খান: নীতি-সহায়তার ইস্যুটি বিচেনায় নিলে বলব, বাংলাদেশ এখনো বেশ পিছিয়ে। কারণ, দেশে ইভি এবং প্লাগ-ইন হাইব্রিড বা পিএইচইভির ওপর ৮৯ শতাংশ করভার রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় সেই করভার মাত্র ১০-২০ শতাংশের মধ্যে। নরওয়ে এবং কিছু উন্নত দেশে তো ইভির ওপর কোনো করভারই নেই। বিভিন্ন দেশে সরকার জনগণকে ইভি ব্যাবহারে উদ্বুদ্ধ করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, ইভি পরিবেশবান্ধব ও অনেক কম এনার্জি খরচেই চলে। আমরা বলছি না ইভির করভার সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া হোক, কিন্তু আমরা বিদ্যমান করহার অবশ্যই কমানোর আশা করছি। এ ছাড়া সম্প্রতি এনবিআর একাধিক গাড়ির মালিকদের জন্য পরিবেশগত সারচার্জ বা কার্বন ট্যাক্স চালু করেছে, যা তেলচালিত গাড়ি ও ইভি উভয়ের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে। আমি মনে করি, ইভির ক্ষেত্রে এ ট্যাক্স রাখা উচিত নয়। কেননা, ইভি কার্বন নির্গমন করে না। উল্টো পরিবেশের সুরক্ষা দেয়।

তাই গ্রাহকপর্যায়ে যদি ইভি ব্যবহারের সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে দেশে ইভিশিল্প অনেক অগ্রসর হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, দেশে এ মুহূর্তে ইভি উৎপাদনের কোনো নীতিমালা নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

ডলার এখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই বাজারে ডলার হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সবাই চুপ। এই ডলারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পুরো বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে ডলার কিনছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বর মাসে কেনা ডলারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছর ধরে মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে প্রথম ডলার কেনা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগস্টে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে ৯২ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে অবশ্য অনেকটাই কমে ১৪ কোটি ২০ লাখ এবং ৫ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসে। ডিসেম্বরেই তার বড় উল্লম্ফন ঘটে, কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালীকরণ এবং অনলাইনে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ হওয়ায় ব্যবসার আড়ালে ডলার পাচার কমেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেতার ভূমিকায়, যেখানে অতীতের বছরগুলোতে বড় অঙ্কে বিক্রি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ এ ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন, ২০২৩-২৪ এ ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ এ ১ দশমিক ১২৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবর্তন বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ১৩১ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। অনলাইনে বাজার নজরদারি এবং ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসায় পণ্যের আড়াল থেকে ডলার পাচারও অনেক কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে আমদানি, বিনিয়োগ ও বাজার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।’

সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, পাচার কমে আসা—সব মিলিয়ে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার বিক্রেতা নয়; বরং ক্রেতার ভূমিকায়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত