Ajker Patrika

জিএসপি প্লাস চাইলে মানবাধিকার পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে: ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
জিএসপি প্লাস চাইলে মানবাধিকার পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে: ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকার (জিএসপি প্লাস) সুবিধা পেতে চাইলে অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার পরিস্থিতি ঠিক করার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা সফররত ইউরোপীয় সংসদের বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিনিধি দলের প্রধান হেইদি হাওতালা। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নাগরিক সমাজের স্থান সংকুচিত করাসহ বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলোতে তাঁদের উদ্বেগ রয়েছে বলেও জানান তিনি। আর ‘রানা প্লাজা’ দুর্ঘটনার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কর্মপরিবেশের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়নি বলেও মন্তব্য করেন হেইদি হাওতালা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাবের সঙ্গে ‘ডিক্যাব টক’ এ অংশ নেন বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় সংসদীয় কমিটি। এতে উপস্থিত হয়ে ইউরোপীয় সংসদের বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিনিধি দলের প্রধান হেইদি হাওতালা এবং রেপোর্টিয়ার ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি উপস্থিত ছিলেন। ডিক্যাব টক পরিচালনা করেন সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস। 

জিএসপি প্লাস পেতে বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে? এর উত্তরে হেইদি হাওতালা বলেন, ‘বাংলাদেশ ৫০ বছরে এমন পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে, যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও সংসদকে শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিকে আমলে নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা ছাড়া সম্ভব হবে না। ইইউ এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’ আর বাংলাদেশই একমাত্র দেশ নয় যাদের এ চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে। ইইউতেও এ সমস্যাগুলো রয়েছে। হাঙ্গেরি, পোল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ তাদের বিচার বিভাগের স্বাধীনতাতে হস্তক্ষেপ করছে বলে উল্লেখ করেন হেইদি।

হেইদি হাওতালা বলেন, ‘জিএসপি প্লাস পেতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘে ৩০টিরও অধিক সনদে সই করতে হবে। এর মধ্যে জাতিসংঘের দুর্নীতি বিরোধী সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নে আমি জোর দিচ্ছি। জিএসপি প্লাস পেতে বাংলাদেশকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ইইউ।’

জিএসপি পর্যালোচনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হেইদি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা এটি পর্যালোচনার মধ্যেই রয়েছি। এবারের পর্যালোচনার পর ২০২৯ পর্যন্ত জিএসপির পর্যালোচনা আর হবে না।’

প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রতিনিধি দলের প্রধান বলেন, ‘শ্রম আইনের পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রয়োজন। সম্প্রতি করা শ্রম আদালত সেই পদক্ষেপের একটি অংশ। শ্রম আইনের জন্য একটি সত্যিকারের স্বাধীন ও কার্যকরী বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলার অর্থ হচ্ছে দেশের সার্বিক বিচারকদের স্বাধীনতা ও দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের মানুষের সমৃদ্ধির জন্য একটি পদক্ষেপ।’

বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ পরিস্থিতির মূল্যায়ন জানতে চাইলে হেইদি হাওতালা বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরে কর্মপরিবেশের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়নি। ভবন ও অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি সংশোধন করা হয়েছে। তবে কর্মপরিবেশের নিরাপত্তার বিষয়টিতে ক্রমাগত গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।’ 

বাংলাদেশের শ্রম আইনের পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রম অধিকারের পর্যাপ্ত সুরক্ষা তখনই নিশ্চিত করা যাবে যখন মৌলিক মানবাধিকারকে নিশ্চিত করা যাবে। জিএসপি প্লাসের মৌলিক শর্তের মধ্যে অন্যমত হচ্ছে মানবাধিকার নিশ্চিত করা।’

হেইদি হাওতালা বলেন, ‘নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ থাকতে হবে। এ ছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং জোরপূর্বক গুম নিয়ে আমাদের যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, যার সঙ্গে সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অন্যতম। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় জানা গেছে যে, ডিএসএ সংশোধনের একটি প্রক্রিয়া চলছে।’

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, ইইউ বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো প্রস্তাব করেনি। আর রাশিয়া ইস্যুতে যে পরিস্থিতি বিশ্বে সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য পশ্চিমাদের দোষ দেওয়া হয়, এটি একটি ভুল ধারণা। এ পরিস্থিতির মূল কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক বিষয়গুলো রক্ষা করা। একটি শান্তিপূর্ণ সার্বভৌম দেশে আগ্রাসন চালানো হয়েছে। দিন শেষে নিষেধাজ্ঞা একটি মাধ্যম, যা দিয়ে এ সংঘাত বন্ধ করা সম্ভব। আর হয়তো দখলকারী তার স্থান থেকে সরে আসবে।’

গত ১৭ই জুলাই ঢাকা আসে ইউরোপীয় সংসদের ছয় সদস্যের বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিনিধি দল। এ সফরে তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ, শ্রম সংগঠন, নাগরিক সমাজ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তাঁরা। ২০ জুলাই টেক্সটাইল ও ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানা পরিদর্শনে যাবে এ সংসদীয় প্রতিনিধি দল। ২০ জুলাই সন্ধ্যায় প্রতিনিধি দলের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত