Ajker Patrika

রাজনৈতিক অস্থিরতায় নজর কম অর্থনীতিতে, সব সূচক নিম্নমুখী

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১২: ৩৪
রাজনৈতিক অস্থিরতায় নজর কম অর্থনীতিতে, সব সূচক নিম্নমুখী

মাস দেড়েক পর জাতীয় নির্বাচন। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ব্যস্ত নির্বাচন নিয়ে, বিএনপিসহ অন্য বিরোধীরা আছে আন্দোলনে। একদিকে হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও; অন্যদিকে নির্বাচনী ডামাডোল। প্রার্থী মনোনয়ন, ধরপাকড়, হামলা-মামলা যখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’, তখন নীতিনির্ধারকদের মনোযোগের বাইরে চলে যাচ্ছে অর্থনীতির সংকটগুলো। 

ডলার-সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে রিজার্ভে অশনি সংকেত জানান দিচ্ছে, কিন্তু রিজার্ভ বাড়াতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। কমছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, গতি ফিরছে না রেমিট্যান্সে, বাড়ছে হুন্ডির দৌরাত্ম্য। এসব ইস্যু অনেকটাই চাপা পড়ে যাচ্ছে রাজনীতির ডামাডোলে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সব অর্থনৈতিক ইস্যু একসঙ্গে সামাল দেওয়ার পরিস্থিতি নেই বলেই হয়তো রাজনীতিটা গুরুত্ব পাচ্ছে। আর অজুহাত তো আছেই। যেমন ধরুন ডলার নেই, এলসি খোলা যাচ্ছে না, বিনিময় হারের সংস্কার, নিত্যপণ্যের দামে মানুষ অতিষ্ঠ–এসব তো ভোটের জন্য রেখে দেওয়ার বিষয় নয়। চাইলেই করা যায়, কিন্তু করা হচ্ছে না।  মনোযোগ নেই; কারণ, সুবিধা নেওয়ার বিষয় আছে।’ 

অর্থনীতির যে বিষয় এই সময়ে জনজীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে, তা হলো দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। সংসারে চাল-ডাল-নুন-তেল জোগাতে স্বল্প আয়ের মানুষের পকেট প্রায় ফাঁকা। মাছ-মাংসের বাজার থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নেওয়া এসব মানুষ এখন ডিম, সবজি কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিটি পণ্যের আকাশ-ছোঁয়া দামে হু হু করে বেড়ে ওপরে উঠছে মূল্যস্ফীতির গ্রাফ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে চলতি বছরের অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বর্তমানে একটি পরিবারে যে খরচ হয়, তার প্রায় ৪৮ শতাংশই যায় খাবার কিনতে। সম্প্রতি এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ১০ হাজার মানুষের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। জরিপের অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাঁদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার স্বল্প আয়ের একটি শ্রেণিকে লক্ষ্য করে টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বিভিন্ন অজুহাতে যে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে প্রায় প্রতিটি পণ্যে অতিমুনাফা করছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া বা বাজারকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। 

ডলার-সংকট তীব্র 
ডলার-সংকটের শুরুটা হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। এখন এই সংকট তীব্র। একসময় ৪৮ বিলিয়নে উঠে যাওয়া রিজার্ভ এসে ঠেকেছে সরকারি হিসাবে ১৯ বিলিয়ন আর আইএমএফের হিসাবে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। 

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, অর্থনীতিকে প্রাণসঞ্চারকারী এই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে স্তরে এসে ঠেকেছে, তা রীতিমতো ভয়ের। কারণ, ১৫ বিলিয়নের নিচে নামলেই তা চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। তখন জ্বালানি তেল, নিত্যপণ্য, জরুরি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির দায় শোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ গত দুই বছর অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, ডলারের দর ধরে না রেখে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ছেড়ে দিতে এবং হুন্ডি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমদানি-রপ্তানি শ্লথ
ডলার সাশ্রয়ে আমদানি কড়াকড়ির কারণে অত্যাবশ্যক পণ্যের এলসি বা ঋণপত্র খুলতে গিয়েও হোঁচট খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বড় বড় শিল্পগ্রুপের উদ্যোক্তারাও এখন এলসি খুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। এলসি খুলতে বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এই অবস্থায় কমে এসেছে সার্বিক আমদানি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য, বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে, আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আমদানি কমেছে ১৮ শতাংশ। কিন্তু খাতভিত্তিক ঋণপত্র খোলার হার কমেছে আরও বেশি। ভোগ্যপণ্যে ৩৯ শতাংশ, শিল্পের কাঁচামালে ২৮ শতাংশ, মূলধনি যন্ত্রপাতি ২২ শতাংশ আর জ্বালানি পণ্যে ২২ শতাংশ কমেছে এলসি। 

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে রপ্তানি আয়ের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরতা রয়েছে। অথচ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের মধ্যে ইউরোপের একক বৃহত্তম বাজার জার্মানিতে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। শীর্ষ বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩-২৪ সালের জুলাই-অক্টোবরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দার আভাসে সেখানকার মানুষ খরচ কমিয়ে এনেছে।

বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাওয়ার এটি একটি বড় কারণ। পাশাপাশি মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের হুমকিও রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় রপ্তানি বাজারের প্রসার বা বিকল্প বাজার তৈরি করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।

প্রবাসী আয়ে সুখবর নেই
রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রেও গতানুগতিক পদক্ষেপ ছাড়া অভিনব বা কার্যকর কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। তথ্য বলছে, গত তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শ্রমিকের অভিবাসন প্রায় চার গুণ বেড়েছে। কিন্তু সৌদি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ শতাংশের বেশি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ গত আগস্ট মাসে জুলাইয়ের চেয়ে ২১ শতাংশ কম এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ শতাংশ কমে যাওয়ার চিত্র উদ্বেগের বিষয়। অক্টোবরে সামান্য বাড়লেও তা শিগগির অনেক বেড়ে যাবে—এমনটি মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা বাড়ানো আর ব্যাংকগুলোকে সুপরামর্শ দেওয়া ছাড়া সৃজনশীল বা কঠোর আইনি উদ্যোগ নিতে পারেনি। 

পুঁজিবাজারে পতন
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আশার স্থল পুঁজিবাজার এখন বেদনার কারণ হয়ে উঠেছে। কয়েক মাস ধরে কেবল পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাজারটি। ফ্লোর প্রাইসের কৃত্রিম নিয়ন্ত্রণে কিছু শেয়ারের দর ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে ঠিকই, তবে বাস্তবে পুঁজিবাজার এখন নীরবে প্রায় ডুবছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকেরা। একসময় সাড়ে ৭ হাজার পয়েন্টে উঠে যাওয়া সূচক এখন ৬ হাজার ২০০ পয়েন্টের ঘরে। লেনদেন প্রায় ৩ হাজার কোটির ঘর ছুঁই ছুঁই অবস্থা থেকে নেমে এসে ঠেকেছে ৩৫০ কোটির ঘরে। বিএসইসি সূত্র থেকে জানা যায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির রুটিন তদারকি ছাড়া বাজারে তহবিল জোগান দেওয়া, আস্থা ফেরানোসহ একে টেকসই করার তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। 

বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর ) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, অর্থবছরের গত চার মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি পড়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের চেয়ারম্যান সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিদ্যমান সময়ে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। রাজস্ব আয় ঠিকমতো না হওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার গত আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সরকারের তহবিল-সংকটের কারণেই মূলত এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়ানো যাচ্ছে না।

সার্বিক বিষয়ে সাবেক আমলা ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আজিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন সবাই ঢিলেমি দিয়েছে। নির্বাচনী ডামাডোলে প্রশাসনে কিছুটা গা-ছাড়া ভাব থাকা অস্বাভাবিক নয়। এ সময়ে রাজস্ব আয়, রেমিট্যান্স বা উন্নয়নকাজ নিয়ে সরকারের ভেতরে যতটা উদ্বেগ থাকার কথা, তার চেয়ে নজর বেশি ভোটের দিকে। মাত্র দেড় মাস তো। এরপর নতুন সরকার এসে ওই বিষয়ে নজর দেবে বলে আমার ধারণা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত